৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে

ইমাম আহমদ ওয়াকী সূত্ৰে….. হযরত আইশা (রা) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন। হযরত আইশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) শাওয়াল মাসে আমাকে বিবাহ করেন এবং শাওয়াল মাসে আমাকে ঘরে তুলে আনেন। তাই রাসূল (সা)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে কে তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিকতর প্রিয় ছিলেন? আর এজন্যেই হযরত আইশা পসন্দ করতেন যে, স্ত্রীরা শাওয়াল মাসেই স্বামীগৃহে গমন করুক। মুসলিম, তিরমিয়ী, নাসাঈ ও ইবন মাজা সুফিয়ান ছাওৱী সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেন এবং ইমাম তিরমিয়ী হাদীছটিকে হাসান-সহীহ বলে অভিহিত করে মন্তব্য করেন যে, সুফিয়ান ছাওরীর সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্ৰ হাদীছটি সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এ হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নবী করীম (সা)-এর সঙ্গে হযরত আইশা (রা)-এর বাসর হিজরতের সাত বা আট মাস পরে হয়েছিল। ইবন জারীর তাবারী এ দু’টি উক্তিই উল্লেখ করেছেন। ইতোপূর্বে হযরত সাওদার সঙ্গে নবী (সা)-এর বিবাহের বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং কিভাবে এ বিবাহ সংঘটিত হয়েছে এবং হযরত আইশার সঙ্গে তার বাসরের বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ বাসর হয় মদীনা আগমনের পর লোকজনের বর্তমানকালের অভ্যাসের বিপরীতে ‘সুনেহ’ নামক স্থানে দিনের বেলা। নবী করীম (সা) কর্তৃক শাওয়াল মাসে হযরত আইশা (রা)-এর সঙ্গে সংগত হওয়ার মধ্যে কিছু লোকের এ ধারণার প্রতিবাদ রয়েছে যে, দুই ঈদের মধ্যবর্তী কালে (অর্থাৎ শাওয়াল মাসে) নববধূর সঙ্গে সংগত হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার আশংকা থাকে। এ কারণে কেউ কেউ এ সময়ের মিলনকে না-পসন্দ করতেন। এ কথার কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের উক্তির” প্রতিবাদ করেই হযরত আইশা (রা) বলেন, : নবী (সা) আমাকে শাওয়াল মাসে বিবাহ করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার সঙ্গে সংগত হয়েছেন। সুতরাং তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে কে তার নিকট আমার চেয়ে প্রিয়তর? এ থেকে বুঝা যায় যে, হযরত আইশা (রা) বুঝতে পেরেছেন যে, নবী (সা)-এর স্ত্রীদের মধ্যে তিনি তার নিকট সবচেয়ে বেশী প্ৰিয়। তাঁর এ উপলব্ধি যথার্থ। কারণ, এর পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। প্রমাণ হিসাবে সহীহ বুখারীতে আমর ইবন আস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীছ দুটিই যথেষ্ট। উক্ত হাদীছে আছে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নিকট প্রিয়তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আইশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে বেশী প্রিয়? তিনি বললেন, আইশার পিতা।

১. আবু আসিম বলেন, : অতীতকালে শাওয়াল মাসে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে লোকেরা এ মাসে স্ত্রী সংগমকে অশুভ কর্ম মনে করতো। তাঁর এ উক্তি ঠিক হয়ে থাকলে এ ধারণা দূর করার জন্যই তিনি শাওয়াল মাসে স্ত্রীদের সঙ্গে সংগত হন। ইবন সাআদ— তাৰকাত খ ৮, পৃ. ৬০

ইবন জারীর বলেন, ঃ কথিত আছে, এ বছর অর্থাৎ হিজরতের প্রথম বর্ষে মুকীম অবস্থার নামাযে দু’ রাকাআত করে বাড়িয়ে দেয়া হয়। ইতোপূর্বে মুকীম অবস্থায় ও সফরে নামায ছিল দু’ রাকাআত । আর এ ঘটনা ঘটে নবী করীম (সা)-এর মদীনায় আগমনের এক মাস পর রবিউছ-ছানী মাসের ১২ তারিখে। ইবন জারীর বলেন, ঃ ওয়াকিদীর ধারণা মতে হিজাযবাসীদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই।

আমার মতে, মামার সূত্রে হযরত আইশা থেকে বর্ণিত বুখারীর হাদীছ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আইশ বলেন, ঃ প্ৰথমে নামায প্রতি ওয়াকত দুরাকাআত ফরয করা হয়। সফরকালে দু’ রাকাআত বহাল রাখা হয় এবং মুকীম অবস্থায় আরো দুই রাকাআত যোগ করা হয়। শা’বী সূত্রেও তিনি এ মর্মে হযরত আইশা (রা) থেকে হাদীছ বৰ্ণনা করেন। ইমাম বায়হাকী হাসান বসরী সূত্রে বর্ণনা করেন যে, মুকীম অবস্থায় শুরুতে চার রাকাআত নামায ফরয করা হয়। আল্লাহই ভাল জানেন। সূরা নিসা আয়াত—

واذا ضربنم فی الار ضد فلیس علی گم جناح آن تقصر و امن الصلوة. যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর কর, তখন নামায কসর করায় তোমাদের কোন দােষ নেই। (৪ ঃ ১০১) এ আয়াতের তাফসীরে আমরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা এবং প্রথম ওহী
২. ০২. ওহী প্ৰাপ্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
৩. ০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
৪. ০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?
৫. ০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম
৬. ০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৭. ০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ
৮. ০৮. ইরাশী-এর বর্ণনা
৯. ০৯. দুর্বল ও অসহায় মুসলমানদের প্রতি বিধর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনের বিবরণ
১০. ১০. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জব্দ করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা যে সব নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবী জানিয়েছিল
১১. ১১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের তর্ক-বিতর্ক
১২. ১২. সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজরত
১৩. ১৩. কুরায়শদের বয়কট
১৪. ১৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে হযরত আবু বকর (রা)-এর সিদ্ধান্ত
১৫. ১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ
১৬. ১৬. আ’শা ইবন কায়সের ঘটনা
১৭. ১৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে রুকানার কুস্তি এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আহবানে বৃক্ষের আগমন
১৮. ১৮. মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রাত্রিভ্রমণ
১৯. ১৯. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া
২০. ২০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিবের ইনতিকাল
২১. ২১. হযরত খাদীজা (রা) বিনত খুওয়াইলিদ-এর ওফাত
২২. ২২. হযরত খাদীজা (রা)-এর মৃত্যু-উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিবাহ
২৩. ২৩. দীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তাইফ গমন
২৪. ২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ
২৫. ২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন
২৬. ২৬. আকাবার দ্বিতীয় শপথ
২৭. ২৭. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত
২৮. ২৮. নবী (সা)-এর মদীনায় প্রবেশ ও তাঁর অবস্থান-স্থল
২৯. ২৯. মদীনা মুনাওওয়ারায় প্রথম জুমুআর নামায
৩০. ৩০. ইবন ইসহাকের আরো একটা বৰ্ণনা
৩১. ৩১. আনসারদের শ্রেষ্ঠত্ব
৩২. ৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত
৩৩. ৩৩. হিজরী প্ৰথম সনের ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. কুবায় অবস্থানের বিবরণ
৩৫. ৩৫. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৩৬. ৩৬. প্রথম জুমুআর নামায
৩৭. ৩৭. মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
৩৮. ৩৮. মুহাজির-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি
৩৯. ৩৯. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
৪০. ৪০. মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা)-এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৪১. ৪১. আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার ইনতিকাল
৪২. ৪২. হিজরী সনের শাওয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর জন্ম প্রসঙ্গে
৪৩. ৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
৪৪. ৪৪. আযান ও আযানের বিধিবদ্ধতা প্রসঙ্গে
৪৫. ৪৫. হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৬. ৪৬. উবায়দা ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৭. ৪৭. সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর অভিযান
৪৮. ৪৮. দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোচনা
৪৯. ৪৯. কিতাবুল মাগাযী
৫০. ৫০. কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
৫১. ৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান
৫২. ৫২. উবায়দা ইবন হারিছের অভিযান
৫৩. ৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
৫৪. ৫৪. বুওয়াতের যুদ্ধ
৫৫. ৫৫. আশীরার যুদ্ধ
৫৬. ৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ
৫৭. ৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া
৫৮. ৫৮. হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে
৫৯. ৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
৬০. ৬০. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
৬১. ৬১. আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
৬২. ৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা
৬৩. ৬৩. অভিশপ্ত আবু জাহলের হত্যার ঘটনা
৬৪. ৬৪. কাতাদার চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা
৬৫. ৬৫. অনুরূপ আরেকটি ঘটনা
৬৬. ৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ
৬৭. ৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
৬৮. ৬৮. বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্ৰকাশ
৬৯. ৬৯. বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছল
৭০. ৭০. কুরায়শ যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ আদায়
৭১. ৭১. বদরী সাহাবীদের নাম
৭২. ৭২. কুনিয়াত বিশিষ্ট বদরী সাহাবীগণের নাম
৭৩. ৭৩. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা
৭৪. ৭৪. যারা বদর যুদ্ধে না গিয়েও গনীমত পেয়েছিলেন
৭৫. ৭৫. বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন
৭৬. ৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ
৭৭. ৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা
৭৮. ৭৮. মক্কা থেকে হযরত যয়নবের মদীনায় হিজরত
৭৯. ৭৯. বদর যুদ্ধ সম্পর্কে রচিত বিভিন্ন কবিতা
৮০. ৮০. বনু সুলায়মের যুদ্ধ
৮১. ৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ
৮২. ৮২. হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
৮৩. ৮৩. হিজরী দ্বিতীয় সালে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন