০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ

যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ

ইমাম মুসলিম ও রায়হাকী (র) দাউদ ইবন আবী হিন্দ… ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এক সময় যেমাদ মক্কায় উপস্থিত হন। তিনি ছিলেন আযাদ শানুআ গোত্রের লোক। তিনি জিনগ্রস্ত লোকদের ঝাড়ফুক করতেন। মক্কার কতক মূখ ব্যক্তিকে তিনি বলতে শুনলেন যে, তারা বলছে, “মুহাম্মদ (সা) নিশ্চয়ই জিনগ্রস্ত লোক” যেমাদ বললেন, ওই লোকটি কোথায়? আল্লাহ তা’আলা হয়ত আমার মাধ্যমে তাকে আরোগ্য করবেন। তিনি বলেন, একদিন আমি মুহাম্মদ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত করি এবং তাকে বলি যে, আমি তো জিনগ্রস্তাদেরকে ঝাড়ফুক করে থাকি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন আমার হাতে সুস্থ করেন। সুতরাং আপনিও আমার নিকট আসুন। তখন মুহাম্মদ (সা) বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমি তার প্রশংসা করছি এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। তিনি যাকে হিদায়াত দেন অন্য কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন। অন্য কেউ

তাকে সৎপথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত মা’বুদ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তিনবার এরূপ ঘোষণা দিলেন।

যেমাদ বলেন, আল্লাহর কসম, আমি তো গণকদের কথা শুনেছি, জাদুকরদের কথা শুনেছি এবং কবিদের কবিতাও শুনেছি। কিন্তু এ ধরনের কথা তো কোন দিন শুনিনি!! হে রাসূল (সা)! আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিন, আমি ইসলাম গ্রহণের বায়আত করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর বায়আত গ্ৰহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের পক্ষেও কি তুমি বায়আত করবে? তিনি বললেন, হঁয়া আমার সম্প্রদায়ের পক্ষেও আমি বায়আতি করছি। এদিকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) একদল সৈনিক প্রেরণ করেছিলেন। তারা যেমাদের সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেনাধ্যক্ষ তার লোকজনকে বললেন, তোমরা কি এই সম্প্রদায়ের কোন কিছু কেড়ে নিয়েছ? একজন বলল, হ্যা ওদের একটি পানিপাত্ৰ আমি নিয়েছি। সেনাধ্যক্ষ বললেন, ওটা ফেরত দিয়ে দাও! কারণ, এরা যেমাদের সম্প্রদায়।

অপর বর্ণনায় আছে যে, যেমাদ রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলেছিলেন, আপনার ওই বাক্যগুলো আমাকে শুনিয়ে দিন। ওগুলোর প্রভাব তো গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

আবু নুআয়ম তাঁর দালাইলুন নবুওয়াত গ্রন্থে মহান ব্যক্তিদের ইসলাম গ্ৰহণ শিরোনামে একটি বিরাট অধ্যায় রচনা করেছেন। এ বিষয়ে সেখানে তিনি ব্যাপক ও বিস্তারিত ভাবে তথ্যগুলো সন্নিবেশিত করেছেন। আল্লাহ তাকে দয়া করুন এবং তার পুরস্কার দিন। যে সকল সাহাবী প্রথম ধাপে ঈমান আনয়ন করেছেন, তাদের নাম” শিরোনামে ইসহাক (র) একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তারপর ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন আবু

বিনত আবু বকর, তিনি তখন ছােট ছিলেন বটে, কুদামা ইবন মাযউন, আবদুল্লাহ ইবন

মাখরমা তায়মী, খুনায়স ইবন হুযাফা, আমির ইবন রাবীআ, আবদুল্লাহ ইবন জাহশ, আবু

হারিছ, তাঁর স্ত্রী ফুকায়হা বিনত ইয়াসার, মা’মার ইবন হারিছ ইবন মামার জুমাহী, সাইব ইবন

আওফ ইবন সুয়ায়রাহ ইবন সাঈদ ইবন সাহম নুহাম, তার নাম নুআয়ম ইবন আবদুল্লাহ ইবন উসায়দ, আমির ইবন ফুহায়রা—হযরত আবু বকর (রা)-এর আযাদকৃত দাস, খালিদ ইবন

ইবন আরীন ইবন ছ’লাবা তামীমী, ইনি বনী আব্দী গোত্রের মিত্র, খালিদ ইবন বুকােয়র আমির

ইবন গায়রা-ইনি বনী সাআদ ইবন লায়ছ, আকিল-এর নাম ছিল গাফিল রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নাম রাখেন আকিল তাঁরা বনী আব্দী ইবন কাআব গোত্রের মিত্র, আম্মার ইবন ইয়াসির এবং সুহায়ব ইবন সিনান (রা)-এর পর দলে দলে নারী ও পুরুষ ইসলামে দীক্ষিত হন। অবশেষে মক্কায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে এবং এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে থাকে।

ইবন ইসহাক বলেন নবুওয়াতপ্ৰাপ্তির তিন বছর পর আল্লাহ তা’আলা তার নবী (সা)-কে নির্দেশ দিলেন যাতে তাঁর প্রতি আদিষ্ট বিষয়গুলো তিনি প্রচার করেন এবং মুশরিকদের জুলুম নির্যাতনের মুখে ধৈর্যধারণ করেন। ইবন ইসহাক বলেন, তখন সাহাবায়ে কিরাম নামায আদায়ের জন্যে পাহাড়ী এলাকায় চলে যেতেন এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজন থেকে লুকিয়ে নামায আদায় করতেন।

এক দিনের ঘটনা। হযরত সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) কয়েকজন লোক নিয়ে মক্কার পার্বত্য এলাকায় নামায আদায় করছিলেন। হঠাৎ কতক মুশরিক লোক তাদের নিকট গিয়ে পৌঁছে। তারা নামায আদায় করা নিয়ে দোষারোপ করে। শেষ পর্যন্ত তারা মুসলমানদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়। হযরত সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) তখন মুশরিকদের এক লোককে উটের চোয়ালের হাড় দিয়ে প্রহার করেন। এতে তার শরীরের চামড়া কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। ইসলামের পথে এ হল প্রথম রক্তপাত। উমাবী (র) তার মাগাষী গ্রন্থে আলওয়াক কাসী আমির ইবন সাআদ সূত্রে তার পিতা থেকে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। ওই বর্ণনায় আছে যে, যে মুশরিক লোকের রক্ত ঝরেছিল তার নাম আবদুল্লাহ ইবন খাতল। তার প্রতি আল্লাহর লা’নত।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা এবং প্রথম ওহী
২. ০২. ওহী প্ৰাপ্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
৩. ০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
৪. ০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?
৫. ০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম
৬. ০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৭. ০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ
৮. ০৮. ইরাশী-এর বর্ণনা
৯. ০৯. দুর্বল ও অসহায় মুসলমানদের প্রতি বিধর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনের বিবরণ
১০. ১০. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জব্দ করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা যে সব নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবী জানিয়েছিল
১১. ১১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের তর্ক-বিতর্ক
১২. ১২. সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজরত
১৩. ১৩. কুরায়শদের বয়কট
১৪. ১৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে হযরত আবু বকর (রা)-এর সিদ্ধান্ত
১৫. ১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ
১৬. ১৬. আ’শা ইবন কায়সের ঘটনা
১৭. ১৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে রুকানার কুস্তি এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আহবানে বৃক্ষের আগমন
১৮. ১৮. মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রাত্রিভ্রমণ
১৯. ১৯. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া
২০. ২০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিবের ইনতিকাল
২১. ২১. হযরত খাদীজা (রা) বিনত খুওয়াইলিদ-এর ওফাত
২২. ২২. হযরত খাদীজা (রা)-এর মৃত্যু-উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিবাহ
২৩. ২৩. দীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তাইফ গমন
২৪. ২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ
২৫. ২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন
২৬. ২৬. আকাবার দ্বিতীয় শপথ
২৭. ২৭. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত
২৮. ২৮. নবী (সা)-এর মদীনায় প্রবেশ ও তাঁর অবস্থান-স্থল
২৯. ২৯. মদীনা মুনাওওয়ারায় প্রথম জুমুআর নামায
৩০. ৩০. ইবন ইসহাকের আরো একটা বৰ্ণনা
৩১. ৩১. আনসারদের শ্রেষ্ঠত্ব
৩২. ৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত
৩৩. ৩৩. হিজরী প্ৰথম সনের ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. কুবায় অবস্থানের বিবরণ
৩৫. ৩৫. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৩৬. ৩৬. প্রথম জুমুআর নামায
৩৭. ৩৭. মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
৩৮. ৩৮. মুহাজির-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি
৩৯. ৩৯. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
৪০. ৪০. মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা)-এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৪১. ৪১. আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার ইনতিকাল
৪২. ৪২. হিজরী সনের শাওয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর জন্ম প্রসঙ্গে
৪৩. ৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
৪৪. ৪৪. আযান ও আযানের বিধিবদ্ধতা প্রসঙ্গে
৪৫. ৪৫. হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৬. ৪৬. উবায়দা ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৭. ৪৭. সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর অভিযান
৪৮. ৪৮. দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোচনা
৪৯. ৪৯. কিতাবুল মাগাযী
৫০. ৫০. কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
৫১. ৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান
৫২. ৫২. উবায়দা ইবন হারিছের অভিযান
৫৩. ৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
৫৪. ৫৪. বুওয়াতের যুদ্ধ
৫৫. ৫৫. আশীরার যুদ্ধ
৫৬. ৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ
৫৭. ৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া
৫৮. ৫৮. হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে
৫৯. ৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
৬০. ৬০. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
৬১. ৬১. আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
৬২. ৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা
৬৩. ৬৩. অভিশপ্ত আবু জাহলের হত্যার ঘটনা
৬৪. ৬৪. কাতাদার চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা
৬৫. ৬৫. অনুরূপ আরেকটি ঘটনা
৬৬. ৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ
৬৭. ৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
৬৮. ৬৮. বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্ৰকাশ
৬৯. ৬৯. বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছল
৭০. ৭০. কুরায়শ যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ আদায়
৭১. ৭১. বদরী সাহাবীদের নাম
৭২. ৭২. কুনিয়াত বিশিষ্ট বদরী সাহাবীগণের নাম
৭৩. ৭৩. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা
৭৪. ৭৪. যারা বদর যুদ্ধে না গিয়েও গনীমত পেয়েছিলেন
৭৫. ৭৫. বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন
৭৬. ৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ
৭৭. ৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা
৭৮. ৭৮. মক্কা থেকে হযরত যয়নবের মদীনায় হিজরত
৭৯. ৭৯. বদর যুদ্ধ সম্পর্কে রচিত বিভিন্ন কবিতা
৮০. ৮০. বনু সুলায়মের যুদ্ধ
৮১. ৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ
৮২. ৮২. হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
৮৩. ৮৩. হিজরী দ্বিতীয় সালে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন