৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ

প্রথম বদর যুদ্ধ

ইবন ইসহাক বলেন, : গাযওয়া আশীরা থেকে প্রত্যাবর্তন করে রাসূলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় কয়েক দিন মাত্র অবস্থান করেন, যা দশ পর্যন্তও পৌঁছেনি। এসময় কুরয ইবন জাবির আল-ফিত্রী মদীনার চারণভূমিতে হামলা চালায়। তখন রাসূল (সা) তার তালাশে বের হয়ে বদর-এর উপকণ্ঠে অবস্থিত সাফওয়ান নামক স্থানে উপস্থিত হন। আর এটাই হল গাযওয়া বদর আল উলা— প্রথম বদর যুদ্ধ। কিন্তু কুরব্য সে স্থান অতিক্রম করে চলে যায়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার নাগাল পাননি। ঐতিহাসিক ওয়াকিদী বলেন, রাসূল (সা)-এর পতাকাবাহী ছিলেন আলী (রা)। ইবন হিশাম এবং ওয়াকিদী বলেন, : এসময় মদীনায় যায়দ ইবন হারিসাকে তিনি স্থলাভিষিক্ত করে যান।

ইবন ইসহাক বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সা) ফিরে আসেন এবং সেখানে জুমাদাছ ছানী, রজব ও শাবান— এ তিন মাস অবস্থান করেন। আর এসময় তিনি সাআদ (রা)-এর নেতৃত্বে ৮ জন মুহাজিরের একটা দলকে প্রেরণ করেন। কোন কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির মতে সাআদকে প্রেরণ করা হয়। হামযার পর। তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। কোন সংঘর্ষ হয়নি। সংক্ষেপে ইবন ইসহাক এতটুকু উল্লেখ করেছেন। এ তিনটি বাহিনী সম্পর্কে ওয়াকিদীর বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ রমযান মাসে হামযার সারিয়া, শাওয়াল মাসে উবায়দার সারিয়া এবং যিলকাদ মাসে সাআদের সারিয়া। আর এসবই সংঘটিত হয় হিজরী প্ৰথম সনে।

ইমাম আহমদ আবদুল মুতাআল ইবন আবদুল ওয়াহহাব… সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করলে জুহায়না তার নিকট আগমন করে বলে, আপনি তো আমাদের এলাকায় অবস্থান করছেন, তাই আমাদেরকে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন যে, আমরা এবং আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার নিকট নিৰ্ভয়ে যাতায়াত করতে পারবাে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের সঙ্গে এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলে তারা ইসলাম গ্রহণ করে। রাবী বলেন, রজব মাসে রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে প্রেরণ করেন।

সংখ্যায় আমরা ছিলাম একশ’রও কম। জুহায়নার পড়শী গোত্ৰ বনু কিনানার উপর হামলা করার জন্য রাসূল আমাদেরকে নির্দেশ দেন। আমরা তাদের উপর হামলা চালালাম। সংখ্যায়। তারা ছিল অনেক বেশী। তাই আমরা জুহায়না গোত্রের নিকট আশ্রয় চাইলে তারা আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে। তারা বলে, তোমরা কেন পবিত্র হারাম মাসে লড়াই করছি? তখন আমরা একে অপরকে বললাম, এখন কী করা যায়? এ সময় আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বললো— আমরা নবী (সা)-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁকে বিষয়টা জানাই! আবার কিছু লোক বললো–না, বরং আমরা এখানেই অবস্থান করবো। আমার সঙ্গের লোকজনকে আমি বললাম, না, বরং আমরা অগ্রসর হয়ে কুরায়শ কাফেলার উপর হামলা চালাই। তখন গনীমতের বিধান ছিল এই যে, যে যা সামনে পেতো সেটা তারই হবে। একথা বলে আমরা চললাম, কাফেলা অভিমুখে আর আমাদের অন্য সঙ্গীরা নবী করীম (সা)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে বিষয়টা অবহিত করলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়ান। তার চেহারা মুবারক রক্তবর্ণ ধারণ করে। তিনি বললেন, : তোমরা আমার কাছ থেকে গেলে তো দলবদ্ধ ভাবে আর ফিরে এলে বিচ্ছিন্ন ভাবে। এই বিচ্ছিন্নতা তোমাদের পূর্ববতীদেরকে ধ্বংস করেছে। এখন আমি তোমাদের উপর এমন ব্যক্তিকে নেতা নিযুক্ত করবো, যে তোমাদের মধ্যকারী সবোত্তম ব্যক্তি হবে না, তবে ক্ষুৎ-পিপাসায় ধৈর্য ধারণের ক্ষেত্রে সে হবে তোমাদের মধ্যকার সর্বাধিক ধৈর্যশীল ব্যক্তি।

এরপর তিনি আমাদের উপর আবদুল্লাহ ইবন জাহান্শ আল-আসাদীকে নেতা নিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আমীর। ইমাম বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল” গ্রন্থে ইয়াহইয়া ইবন আবু যায়েদা সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করে তাদের উক্তির পর যোগ করেন : তোমরা

আমাদেরকে ‘বালাদুল হারাম’ তথা পবিত্র নগরী থেকে বহিষ্কার করেছে। এরপর সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। তিনি সাআদ এবং যিয়াদের মধ্যস্থলে কুতুবা ইবন মালিক নামে একজন রাবীর নামও উল্লেখ করেন। আর এটাই অধিক সমীচীন। আল্লাহই ভাল জানেন।

এ হাদীসের দাবী অনুযায়ী প্রথম সারিয়া হলো আবদুল্লাহ ইবন জাহান্শ আল-আসাদীর সারিয়া। আর এটা ইবন ইসহাকের উক্তির বিপরীত। ইবন ইসহাকের মতে সর্বপ্রথম পতাকা বঁধা হয় উবায়দা ইবন হারিছ ইবন মুত্তালিবের জন্য। আর ওয়াকিদীর এক বর্ণনা মতে তাঁর ধারণা সর্বপ্রথম পতাকা বাধা হয়। হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিবের জন্য।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা এবং প্রথম ওহী
২. ০২. ওহী প্ৰাপ্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
৩. ০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
৪. ০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?
৫. ০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম
৬. ০৬. যিমাদ-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৭. ০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ
৮. ০৮. ইরাশী-এর বর্ণনা
৯. ০৯. দুর্বল ও অসহায় মুসলমানদের প্রতি বিধর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনের বিবরণ
১০. ১০. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জব্দ করার উদ্দেশ্যে মুশরিকরা যে সব নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবী জানিয়েছিল
১১. ১১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের তর্ক-বিতর্ক
১২. ১২. সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজরত
১৩. ১৩. কুরায়শদের বয়কট
১৪. ১৪. আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে হযরত আবু বকর (রা)-এর সিদ্ধান্ত
১৫. ১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ
১৬. ১৬. আ’শা ইবন কায়সের ঘটনা
১৭. ১৭. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে রুকানার কুস্তি এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আহবানে বৃক্ষের আগমন
১৮. ১৮. মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রাত্রিভ্রমণ
১৯. ১৯. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া
২০. ২০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিবের ইনতিকাল
২১. ২১. হযরত খাদীজা (রা) বিনত খুওয়াইলিদ-এর ওফাত
২২. ২২. হযরত খাদীজা (রা)-এর মৃত্যু-উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিবাহ
২৩. ২৩. দীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তাইফ গমন
২৪. ২৪. জিনদের রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ
২৫. ২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন
২৬. ২৬. আকাবার দ্বিতীয় শপথ
২৭. ২৭. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত
২৮. ২৮. নবী (সা)-এর মদীনায় প্রবেশ ও তাঁর অবস্থান-স্থল
২৯. ২৯. মদীনা মুনাওওয়ারায় প্রথম জুমুআর নামায
৩০. ৩০. ইবন ইসহাকের আরো একটা বৰ্ণনা
৩১. ৩১. আনসারদের শ্রেষ্ঠত্ব
৩২. ৩২. মক্কা-মদীনার ফযীলত
৩৩. ৩৩. হিজরী প্ৰথম সনের ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. কুবায় অবস্থানের বিবরণ
৩৫. ৩৫. আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ
৩৬. ৩৬. প্রথম জুমুআর নামায
৩৭. ৩৭. মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
৩৮. ৩৮. মুহাজির-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি
৩৯. ৩৯. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
৪০. ৪০. মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা)-এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৪১. ৪১. আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার ইনতিকাল
৪২. ৪২. হিজরী সনের শাওয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর জন্ম প্রসঙ্গে
৪৩. ৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
৪৪. ৪৪. আযান ও আযানের বিধিবদ্ধতা প্রসঙ্গে
৪৫. ৪৫. হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৬. ৪৬. উবায়দা ইবন হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা)-এর অভিযান
৪৭. ৪৭. সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর অভিযান
৪৮. ৪৮. দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোচনা
৪৯. ৪৯. কিতাবুল মাগাযী
৫০. ৫০. কোন কোন ইয়াহুদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসলামগ্ৰহণ প্রসঙ্গে
৫১. ৫১. রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রথম যুদ্ধাভিযান
৫২. ৫২. উবায়দা ইবন হারিছের অভিযান
৫৩. ৫৩. সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
৫৪. ৫৪. বুওয়াতের যুদ্ধ
৫৫. ৫৫. আশীরার যুদ্ধ
৫৬. ৫৬. প্রথম বদর যুদ্ধ
৫৭. ৫৭. আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর সারিয়া
৫৮. ৫৮. হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে
৫৯. ৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
৬০. ৬০. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
৬১. ৬১. আবুল বুখতারী ইবন হিশামের হত্যার ঘটনা
৬২. ৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা
৬৩. ৬৩. অভিশপ্ত আবু জাহলের হত্যার ঘটনা
৬৪. ৬৪. কাতাদার চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা
৬৫. ৬৫. অনুরূপ আরেকটি ঘটনা
৬৬. ৬৬. বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ
৬৭. ৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
৬৮. ৬৮. বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্ৰকাশ
৬৯. ৬৯. বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছল
৭০. ৭০. কুরায়শ যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ আদায়
৭১. ৭১. বদরী সাহাবীদের নাম
৭২. ৭২. কুনিয়াত বিশিষ্ট বদরী সাহাবীগণের নাম
৭৩. ৭৩. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা
৭৪. ৭৪. যারা বদর যুদ্ধে না গিয়েও গনীমত পেয়েছিলেন
৭৫. ৭৫. বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন
৭৬. ৭৬. কুরায়শদের সৈন্য, নিহত, বন্দী সংখ্যা ও মুক্তিপণ
৭৭. ৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা
৭৮. ৭৮. মক্কা থেকে হযরত যয়নবের মদীনায় হিজরত
৭৯. ৭৯. বদর যুদ্ধ সম্পর্কে রচিত বিভিন্ন কবিতা
৮০. ৮০. বনু সুলায়মের যুদ্ধ
৮১. ৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ
৮২. ৮২. হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
৮৩. ৮৩. হিজরী দ্বিতীয় সালে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন