২. ভাগের রাজনীতি–১ম পৰ্ব

দীনেশচন্দ্র সিংহ

দ্বিতীয় অধ্যায় – ভাগের রাজনীতি – ১ম পর্ব : মানুষ ভাগ।। ভাজ্য—হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, ভাজক—ইংরেজ, ভাগফল – মুসলিম লীগ, অবশিষ্ট—তফশিলী হিন্দু : তাদের বিয়োগের ব্যবস্থা

ধর্মগত বিভেদকে রাজনৈতিক রূপদানের সূচনা : হিন্দু-মুসলমানে পৃথক নির্বাচন

বাংলার হিন্দুদের প্রভাব খর্ব করার এবং হিন্দু-মুসলমানে বিভেদ সৃষ্টির সাফল্যে উল্লসিত ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী এবার সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সে বিভেদ নীতি প্রয়োগে মনোনিবেশ করে। কেমন করে সেই দুষ্টবুদ্ধি-প্রণোদিত প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে তুঙ্গে তোলা হল, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া গেল।

১৯০৯ : ১৯০৬ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকায় All India Muslim League প্রতিষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে। সেদিন থেকে জাতিধর্ম নির্বিশেষে কংগ্রেসের সমগ্র ভারতবাসীর একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দাবি নস্যাৎ হয়ে যায়। ১৯০৯ সালে Indian Councils Act অনুযায়ী প্রথম মুসলমানদের স্বতন্ত্র নির্বাচন অধিকার দেওয়া হয়। ফলে মুসলমানদের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান ও আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থা করে হিন্দুদের থেকে রাজনৈতিক প্রশ্নে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হল। এই দল স্বদেশী আন্দোলনের বিরোধী হয়ে ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের প্ররোচনায় বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে তোলে। বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের তথাকথিত সুসম্পর্কের উপর সাম্প্রদায়িক কালনাগিনীর ছোবল পড়ে।

১৯১৬ : ইংরেজের মুসলিম লীগ পোষণের পর এবার কংগ্রেসের মুসলিম লীগ তোষণ শুরু। লীগকে স্বাধীনতা আন্দোলনে সামিল করার দুরাশায় উভয়ের মধ্যে ‘লক্ষ্ণৌ চুক্তি’ নামে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঐ চুক্তিতে কংগ্রেস নিজের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হিন্দু-মুসলমানের পৃথক নির্বাচনব্যবস্থা মেনে নেয়। তাছাড়া যে সমস্ত প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, সে-সব প্রদেশে মুসলমানদের জনসংখ্যার অনুপাতের চেয়ে বেশি আসন দেওয়ার-নীতিও মেনে নেওয়া হয়। এক কথায়, কংগ্রেস ইংরেজের পক্ষপাতমূলক বিভাজন নীতিই মেনে নিল। অথচ হিন্দু সংখ্যালঘু প্রদেশের হিন্দুদের জন্য এরকম কোনও বিধানই রাখা হল না। কিন্তু যে অলীক আশার ছলনায় কংগ্রেস হিন্দুদের স্বার্থহানিকর এই ব্যবস্থা মেনে নিল, তা কখনও পূর্ণ হয়নি।

১৯১৯ : এই সালের শাসন ব্যবস্থায় লক্ষ্ণৌ চুক্তির সারবত্তা পুরোপুরি মেনে নেওয়া হল। হিন্দু-মুসলমানে পৃথক ভোটদান ব্যবস্থাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হল। মুসলমান সংখ্যালঘু প্রদেশে মুসলমানদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হল। মুসলমানরা যেসব প্রদেশে সংখ্যাগুরু সেসব প্রদেশেও মুসলমানদের অর্ধেকের বেশি আসন দেওয়ার পাকাপাকি ব্যবস্থা রাখা হল।

মুসলমানদের তখন পোয়া বারো। তারা ব্রিটিশের কোলে উঠবে কি কংগ্রেসের কাঁধে চড়বে সেটাই তাদের কাছে সমস্যা। বাংলার আইন পরিষদে ১৪৪ জন সদস্যের মধ্যে সাধারণ আসন (হিন্দু)-সংখ্যা ছিল ৩৯, সংরক্ষিত মুসলিম আসন ছিল ৪৬।

বাংলা যে অনতিকাল মধ্যে পুরোপুরি মুসলিম শাসনাধীনে যাবে, তার বীজ নিহিত রয়েছে লক্ষ্ণৌ চুক্তি ও ১৯১৯ সালের শাসন ব্যবস্থায়। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অনতিকাল মধ্যে সূচিত হল দেশবন্ধুর আশীর্বাদধন্য বেঙ্গল প্যাক্ট (Bengal Pact)। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।

আন্দোলন-বিমুখ মুসলমান সম্প্রদায় : মুসলিম তোয়াজে গান্ধীজী

লক্ষৌ চুক্তি ও ১৯১৯-এর ভারত শাসন আইন বলে মুসলিম লীগ নেতারা জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্য ন্যায্য হিস্যার চেয়েও বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে খুব খুশি হলেন; কিন্তু ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় কোনও আন্দোলনেই তাদের তেমন গা দেখা গেল না।

১৯২১ : এবার আসরে আবির্ভাব গান্ধীজীর। তিনি মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের তোষণের রাস্তা ধরলেন। মিস্টারদের ছেড়ে মৌলানাদের খপ্পরে পড়লেন। ইংরেজের বিরুদ্ধে তাঁর অসহযোগ আন্দোলনে মুসলিম জনতাকে টানবার উদ্দেশ্যে তিনি ভারতের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কহীন খিলাফৎ আন্দোলনে ভারতীয় রাজনীতির গাঁটছড়া বাঁধলেন। কয়েকদিন হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই বলে মাতামাতি চলল। হিন্দুরা গলা ছেড়ে আল্লা-হু-আকবর ডাকতে লাগল; কিন্তু মুসলমানদের কন্ঠ থেকে বন্দে মাতরম্ বলে চিঁ চিঁ শব্দ বের হল কি হল না। গান্ধীজী খিলাফৎকে ‘কামধেনু’র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। “Gandhiji called Khilafat “The Kamdhenu” as it was for him “an opportunity of uniting Hindus and Musalmans, which would not arise in a hundred years.”

মুসলমানদের ব্রিটিশ-বিরোধিতা হিন্দু বিদ্বেষে পর্যবসিত

কিন্তু কার্যকালে দেখা গেল খিলাফতী কামধেনু থেকে হিন্দু-মুসলিম প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার অমৃতধারা নিঃসরিত হয়নি। হিংসা ও বিদ্বেষের গরলধারায় ভাণ্ড পূর্ণ হয়েছে। ইংরেজ শাসনব্যবস্থার উপর ক্রোধবশে হিন্দুরা আক্রমণ করল থানা-পুলিশকে। চৌরিচরায় ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারা হল। আর মুসলমানরা ব্রিটিশদের ছেড়ে হিন্দুদের উপর তাদের রোষ ঝাড়ল। মালাবার অঞ্চলে মোপলা মুসলমানদের হাতে সরকারী হিসাবমতে প্রায় ৬০০ হিন্দু নিহত হল; ২৫০০ হিন্দুকে বলপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হল। এতাবধি ইংরেজ শাসনকালে এক-তরফা মুসলমান আক্রমণে হিন্দুহত্যা ও ধর্মান্তরকরণের এমন বীভৎস রূপ আর দেখা যায়নি। আধুনিক ভারতীয় রাজনীতিতে ছোরা ও অসির আমদানি হল বলা যায় মোপলা-আক্রমণ থেকেই। গান্ধীজী অত্যাচারী ও নৃশংস মোপলাদের ধর্মানুরাগ, সাহস ও বীরত্বের প্রশংসা করে সার্টিফিকেট দিলেন। বললেন—”আহা ওরা উত্তেজনাবশে ওটা করে ফেলেছে, যৌনক্ষুধা মিটিয়েছে?”

মুসলমানদের ব্রিটিশ-বিরোধিতা : শুরু না হতেই শেষ

ইতিমধ্যে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শিকেয় উঠেছে। দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কংগ্রেসীদের একদল স্বরাজী হয়ে কাউন্সিলে ঢুকল; আরেক দল নারাজী হয়ে কারাবরণ কৃচ্ছ্রসাধন ও চরকার ঠকঠকে ব্যস্ত রইল। সুচতুর ইংরেজ মুসলিম নেতাদের গায়ে হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে তাদের আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে নিল। হিন্দু-মুসলমানে কৃত্রিম ও ফস্কা মিলনগ্রন্থি ছিঁড়তে দেরি হল না

এবার মুসলিম তোষণে নামলেন দেশবন্ধু : বেঙ্গল প্যাক্ট

১৯২৩ : বেঙ্গল প্যাক্ট। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রয়াসে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গান্ধীজীর ব্যর্থতার পর এবার বাংলার সীমিত ক্ষেত্রে সে সাধনায় নামলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। পদ্ধতি সেই একই। মুসলিম তোয়াজ ও তোষণ। কিন্তু মিষ্টি কথায় মুসলমানদের চিঁড়া ভিজানো যায় না। আগে ভাগ চাই, ভোগ চাই। তাও সিংহভাগ। কিন্তু ত্যাগের নামে অষ্টরম্ভা। জেল-খাটা ‘ফাঁসি-যাওয়া—তার জন্য তো হিন্দু যুবকেরা আছে। তাদের ধরিয়ে দিয়ে ইনাম লাভের আশায় মুসলিম সি.আই.ডি. ও আই.বি. কর্মীরা তো একপায়ে খাড়া।

তা হোক, তবু ঐক্য চাই। না হলে স্বাধীনতা আসবে না। তাই হিন্দুদের অগ্রগতি ব্যাহত করে মুসলমানদের এগিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই সাধু উদ্দেশ্য নিয়ে দেশবন্ধু সম্পাদন করলেন ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ (১৮ই ডিসেম্বর, ১৯২৩)। তিনি কথা দিলেন—”স্বরাজ লাভের পর আইন পরিষদে সংখ্যানুপাতে মুসলমানদের আসনসংখ্যা নির্দিষ্ট হবে ও স্বতন্ত্র নির্বাচন বহাল থাকবে। মিউনিসিপ্যালিটি, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রভৃতিতে তারা পাবে ৬০% আসন (যদিও কলকাতা ও ঢাকা সমেত প্রায় সব মিউনিসিপ্যালিটিতেই মুসলমানরা সংখ্যালঘু)। চাকুরির ৫৫% তাদের জন্য সংরক্ষিত হবে ও যতদিন সে হার না আসে তাদের ৮০% পর্যন্ত চাকুরি দেওয়া যেতে পারে। আপাতত কলকাতা কর্পোরেশনে তাদের অধিকতর সংখ্যায় নিয়োগ করা হবে, মসজিদের সামনে গানবাজনা বন্ধ করা হবে ও ঈদের সময় গোহত্যায় বাধা দেওয়া হবে না।”

এই অশুভ ও অসম চুক্তির পরিণতিও সুখকর হয়নি। না হওয়াই স্বাভাবিক। ঘুষ ও উৎকোচ প্রদানে কাউকে কোনও শুভ কাজে অনুপ্রাণিত করা যায় না, যদি না তার সঙ্গে হৃদয়ের যোগ থাকে। কীর্তন গানে ধামা বয়ে যে চাল কুড়োয় তার মুখে হরিনাম আসে না। ফল যা হবার তাই হল। দেশবন্ধুর অকালমৃত্যুতে তাঁর বেঙ্গল প্যাক্টও বানচাল হয়ে গেল। আর তার ফলশ্রুতি হল ভয়াবহ।

মুসলিম নেতাদের সঙ্গে গুণ্ডাদের আঁতাত : ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা

“হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক চিড় খেল ……। প্যাক্ট পরিত্যক্ত হওয়ায় সুরাবর্দীরা ইনডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি গড়েন। হিন্দু-মুসলিম বিরোধের ফলে চক্রবর্তী-গজনভি ও মশারফ হোসেন-মিত্র মন্ত্রিসভা স্বল্পস্থায়ী হয়। স্যার আবদার রহিম (সুরাবর্দীর শ্বশুর) সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ইন্ধন দেন। লিটনের ইঙ্গিতে জেলার আমলারা মুসলিমদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে এমন কি মুসলিম-নমঃশূদ্র রায়তদের ঐক্য গড়তে তৎপর হয়। লোক্যাল বোর্ড ও ম্যুনিসিপ্যালিটির নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ে। নানা কারণে বাংলার বাইরেও উত্তেজনা বাড়ছিল। শেষে ১৯২৩-এ কোহাটে ও ১৯২৬ সালের এপ্রিলে কলকাতার ভয়াবহ দাঙ্গায় তা ফেটে পড়ে।

১৯২৫-এ সবসুদ্ধু ১৬টি ও ১৯২৬-এ ২৫টি দাঙ্গা হয়, যার মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা বাধে কলকাতায়। মসজিদের সামনে আর্যসমাজী শোভাযাত্রা কালে বাদ্যভাণ্ড ২–১৫ এপ্রিলের দাঙ্গার তাৎক্ষণিক কারণ। ‘মোহাম্মদী’র মাধ্যমে ফজলুল হকের সাম্প্রদায়িকতা প্রচার যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী দারোয়ান ও জমাদারদের ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে মালব্যের ডাক। সুরাবর্দীর পাঠান গুণ্ডা আল্লাবক্স পেশওয়ারি (মীনা পেশোয়ারি?) ১৫ জুলাই-এর দাঙ্গা বাধায়। কলকাতা ডকে আবার দাঙ্গা হয় সেপ্টেম্বরে। দাঙ্গা পরে মফঃস্বলে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে জন্মাষ্টমীর সময় ঢাকার দাঙ্গা কুখ্যাত। মৈমনসিংহের হিন্দু জমিদার ও মুসলিম তালুকদার-জোতদারদের প্রতিযোগিতা, বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী বিলে হিন্দু-বিরোধিতা, মুসলিমদের সংখ্যাবৃদ্ধি, আর্থিক সচ্ছলতা ও শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের বর্ধমান আগ্রহ প্রভৃতিকে দায়ী করেছেন। কিন্তু তিনিও মুসলিম মৌলবাদকে ছেড়ে কথা বলেননি। ১৯২৬-এর সর্বাপেক্ষা দুঃখবহ ঘটনা শ্রদ্ধানন্দ হত্যা।

কংগ্রেসে দলাদলি : মৌলানা আজাদের কুপরামর্শে গান্ধীজীর ভুল সিদ্ধান্ত

সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক ক্ষেত্রে এই অশান্তির আগুন জ্বলার মাঝে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রবল বিরোধ-বিবাদ-বিসংবাদের সৃষ্টি হল। দেশবন্ধুর শূন্যস্থান কে পূরণ করবে তা নিয়ে দারুণ মতভেদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হল। অবশেষে গান্ধীজীর উপর ভার পড়ল দেশবন্ধুর উত্তরাধিকারী নির্বাচনের। ……আজাদের পরামর্শে, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মস্তকে স্বরাজ দলের নেতৃত্ব, কলিকাতা করপোরেশনের মেয়র পদ ও প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতিত্ব রূপ ‘ত্রিমুকুট’ পরিয়ে দেন। বলা বাহুল্য বিভেদপ্রবণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাঙালীদের অনেকেই এটা পছন্দ করেননি। সেই থেকে বাংলার কংগ্রেসী রাজনীতিতে যে দলাদলির বীজ রোপিত হল, আজ তা বিষবৃক্ষে পরিণত।

মৌলানা আজাদের এই দুর্বুদ্ধি-প্রণোদিত পরামর্শ এবং গান্ধীজীর বিনাবিচারে তা গ্রহণ ও রূপদান, শুধু যে বাংলার কংগ্রেসের ক্ষতিসাধন করেছে তাই নয় এবং যেহেতু বলতে গেলে কংগ্রেসই হিন্দুদের স্বার্থরক্ষার একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, তাই বাঙালী হিন্দুর রাজনীতিকেও পঙ্গু করে তোলে এবং প্রকারান্তরে মুসলিম রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। আবার প্রায় ১০ বছর পরে আজাদের আর এক দুর্বুদ্ধি-প্রসূত পরামর্শে গান্ধীজী বাংলার ও বাঙালী হিন্দুর যে ক্ষতিসাধন করেছেন, সে প্রসঙ্গ যথাস্থানে আলোচিত হবে।

পূর্ণস্বরাজ – বনাম – পৃথক বাসভূমি

১৯২৯-এর লাহোর কংগ্রেসে পূর্ণ স্বরাজের প্রস্তাব গৃহীত হল। “১৯২৯ -এর ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত্রে বন্দে মাতরম্ ধ্বনিতে ইরাবতীর তীর প্রকম্পিত করে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজের প্রস্তাব নিল। …. ১৯৩০-এর ২৬শে জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস পালিত হল এবং স্বাধীনতার শপথ নিল কোটি কোটি ভারতবাসী।”

আর এই কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন ও সাধনাকে ব্যর্থ করতে বিলাত-ফেরত ব্যারিস্টার কবি স্যার মহম্মদ ইকবালের সভাপতিত্বে এলাহাবাদ শহরে মুসলিম লীগ মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র-বাসভূমি (homeland) দাবি করে ঠিক এক বছর পর ২৯শে ডিসেম্বর, ১৯৩০। ভারতে মুসলমানদের বৃহৎ রাজনৈতিক দল সর্বপ্রথম ধর্মের ভিত্তিতে দেশের সীমানা চিহ্নিতকরণের দাবি উত্থাপন করে :

“I would like to see the Punjab, North -West Frontier Prov -ince, Sind and Baluchistan amalgamated into a single State. Self-government within the British Empire or without the Brit-ish Empire, the formation of a consolidated North-West Indian Muslim State appears to me to be the final destiny of the Mus-lims, at least of North -West India. “ ( A Homeland for Muslims–Muhammad Iqbal, 29.12.1930, Allahabad).

হিন্দু-মুসলমানে ভাগের পর হিন্দুসমাজকে ভাগ : গোল টেবিল বৈঠক থেকে খালি হাতে গান্ধীজী

ইত্যবসরে বিলাতে গোল টেবিল বৈঠকী রাজনীতি শুরু হয়েছে সাইমন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে শাসনসংস্কার প্রশ্ন বিবেচনার জন্য। ইকবালের উপরিউক্ত মুসলিম ভারত বা মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র বাসভূমি (সারা ভারত যেন তাদের বাসভূমি নয়) পরিকল্পনা প্রকাশের এক মাস আগে প্রথম গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একে কি কাকতালীয় বলা হবে, না পূর্বকল্পিত কূট কৌশলী চাল, তা অবশ্যই ভেবে দেখার প্রশ্ন। “শাসন সংস্কারের জন্য ব্রিটিশ সরকার তিনটি গোল টেবিল কনফারেন্স করে, নভেম্বর ১৯৩০, সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৩১, আর নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৩২। প্রথম ও তৃতীয় কনফারেন্স কংগ্রেস বয়কট করেছিল। দ্বিতীয় কনফারেন্সে গান্ধী গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর প্রস্তাব মুসলিম লীগ, হিন্দু অস্পৃশ্য এবং ভারতীয় রাজন্যবর্গ প্রত্যাখ্যান করে।”

একদিকে মুসলিম লীগের ভারতভূমি খণ্ডীকরণের আভাস, অপরপক্ষে হিন্দুসমাজকেও রাজনৈতিক ভাবে খণ্ডিতকরণের ছক কষা হয়ে গেছে। প্রথমে আগা খাঁ-সলিমুল্লাদের দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে জাতিভাগ সারা হল; তারপর ইকবালের মারফতে মাটি ভাগের দাবি পেশ করে রাখা হল। তারপর হিন্দু সমাজকে বিভাজনের কাজে হাত দিল—স্পৃশ্যতা-অস্পৃশ্যতার ভিত্তিতে। বৈঠকে হিন্দু মহাসভা নেতাদের ডাকা হল; ডাকা হল দলিত নেতা ডঃ বি. আর. আম্বেদকরকে। এসব চালের উদ্দেশ্য হল এটা দেখান যে হিন্দু-মুসলমান একজাতি তো নয়ই, হিন্দুরাও একজাতি নয়। তারা নানা জাতিতে বিভক্ত। একা কংগ্রেসের পক্ষে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নেই। এক কথায় বলতে গেলে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক ভাষ্যের উপর ব্রিটিশ সরকারের সরকারী ছাপ বা অনুমোদন।

মুসলমানদের লাভের উপর উপরি-পাওনা : অবৈধ সুযোগের চিরস্থায়ী ব্যবস্থা

গোল টেবিল বৈঠকে নেতারা যখন কোনও বিষয়ে একমত হতে পারেনি (বিড়ালের পিঠা ভাগের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ সরকার তা চায়ও নি), তখন ব্রিটিশ সরকার ঝুলি থেকে বেড়াল বের করল –Communal Award বা সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা। তাতে সামগ্রিকভাবে হিন্দুজাতির ক্ষতিসাধন করে মুসলমানদের অতিরিক্ত লভ্যাংশের উপরও ফাও দেওয়ার ব্যবস্থা হল; আর হিন্দু সমাজকে বর্ণহিন্দু ও বিবর্ণ হিন্দুতে ভাগ করে চিরস্থায়ীভাবে দুর্বল করে দেবার সিদ্ধান্ত হল। সোজা কথায় বলতে গেলে হিন্দু-মুসলমানে তো কখনোই একসঙ্গে ভোট দিতে পারবে না, এমন কি বর্ণহিন্দু ও তফশিলী হিন্দুরাও মুসলমানদের মতোই আলাদাভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। কোন্ সম্প্রদায় কোন্ প্রদেশে কত সংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচন করবে তাও স্থির করে দেওয়া হল। তাতে দেখা যায় মুসলমান নেতারা আশার অতিরিক্ত আসন পেয়ে বেজায় খুশি, বৰ্ণ হিন্দু নেতারা ন্যায্য প্রাপ্য তো পেলেনই না বরং -হিন্দু সমাজকে দ্বিধা-বিভক্তকরণের শয়তানি চাল জেনে বিমর্ষ মুখে ফিরে এলেন। তফশিলী হিন্দু নেতারাও স্বতন্ত্র নির্বাচনের লাড্ডু পেয়ে বেশ খুশি মনে ফিরলেন।

বাংলার হিন্দু সমাজকে চিরতরে পঙ্গু করার ব্যবস্থা : বাংলার রাজনীতি থেকে হিন্দুদের নির্বাসন

বর্ণ হিন্দু ও তফশিলী হিন্দুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গান্ধীজী পুনায় আমরণ অনশন শুরু করেন (২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৩২)। কংগ্রেস নেতারা তফশিলী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। চারদিন ধরে দর কষাকষির পর তফশিলী নেতা ডঃ আম্বেদকরের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটা পুনা চুক্তি নামে খ্যাত। এর শর্তানুসারে বর্ণহিন্দু কোটা থেকে ৬৭টি আসন বেশি পেয়ে তফশিলী নেতারা সংরক্ষিত আসন সহ যৌথ নির্বাচনে রাজি হলেন। গান্ধীজী রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে গান শুনে ও কবির হাতে লেবুর রস পান করে অনশন ভঙ্গ করেন। কিন্তু বাঙালী হিন্দুর কাটা ঘায়ে যে লেবুর রস সিঞ্চিত হল সে খেয়াল করলেন না। অন্যান্য প্রদেশের ক্ষেত্রে যাই হোক, বাংলার ক্ষেত্রে এই পুনা চুক্তি হিন্দুদের ভবিষ্যৎ সর্বনাশের পথ পরিষ্কার করে। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারাতেই হিন্দুদের কিরকম নির্লজ্জভাবে বঞ্চিত করা হয়েছিল তার প্রমাণ মেলে আসন বণ্টনের নিম্নোক্ত চিত্র থেকে :

মোট আসন 250

 জনসংখ্যা শতকরাআসন শতকরাআসনসংখ্যা
মুসলমান৫৫%৪৮%১১৯
হিন্দু৪৫%৩২%৮০
(তফশিলীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি সমেত)
ইউরোপিয়ান০.১%১০%২৫
অন্যান্য২৬
   মোট ২৫০

মুসলিম লীগ ও তফশিলী নেতাদের মিলনের পথ প্রশস্ত

পুনা চুক্তির শর্তানুসারে বর্ণহিন্দু কোটা থেকে যে ৬৭টি আসন তফশিলী সম্প্রদায়কে ছাড়া হল তার মধ্যে ২০টিই বাংলার বর্ণহিন্দু কোটা থেকে। ফলে বাংলায় তফশিলী হিন্দুদের আসনসংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে ৩০-এ দাঁড়াল। পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যেই বাঙালী বর্ণ হিন্দুদের শাসনযন্ত্রের চৌহদ্দি থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত অত্যন্ত নগ্নভাবে প্রকটিত। ১১৯ জন মুসলমান সদস্যের সঙ্গে ২৫ জন ইউরোপীয় সদস্য যোগ দিলেই বা বাইর থেকে সমর্থন করলেই বাংলায় চিরস্থায়ী মুসলিম শাসন কায়েমের পথ পরিষ্কার। ইউরোপীয় সদস্যগণ যদি নিরপেক্ষও থাকে, তাহলে ১১৯ জন মুসলমান সদস্য একজোট হয়ে এবং ৩০ জন তফশিলী সদস্যের মধ্যে ৮/১০ জনকে মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়ে দলভুক্ত করতে পারলেও একচ্ছত্র মুসলিম শাসন কায়েম করা যাবে। শতাব্দীর চতুর্থ দশকে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের দলকে এভাবে হাত করেই মুসলিম লীগ তার উদ্দেশ্য সফল করে। এক কথায় ১৯৩৫ সালের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে রচিত শাসনতন্ত্রে বাঙালী বর্ণহিন্দুকে সম্প্রদায়গতভাবে প্রশাসনিক স্তরে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দেওয়া হল। বাংলার হিন্দুদের প্রতি নির্লজ্জ অবিচার : ব্রিটিশ রাজপুরুষদেরও লজ্জানুভব

বাংলার হিন্দুদের প্রতি এমন নির্লজ্জ অবিচার স্থানীয় কোন কোন রাজ-পুরুষেরও অভিপ্রেত ছিল না। “বাংলার লাট স্যার জন অ্যান্ডারসনের (যিনি বিপ্লবী আন্দোলন দমনের জন্য ধিকৃত) মতে ২৫০ জনের আইন পরিষদে হিন্দুদের ভাগে ১০৭ ও মুসলিমদের ভাগে ১১১ হওয়া উচিত। ভারত সরকার কিন্তু বাংলার হিন্দুদের ৯৬টির বেশি আসন দিতে চাননি। এর মধ্যে তাঁরা মাত্র ১০টি আসন হরিজনদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে চেয়েছিলেন। উইলিংডন জানান বাংলার হিন্দুদের প্রতি বেশি সদয় হলে ইউ. পি. ও পাঞ্জাবের মুসলিমরা বিরক্ত হবে। “We Shall have the whole forces of the country against us, Hindus and Mus-lims…. We cannot afford wholly to be without friends.”

অর্থাৎ মুসলিম বন্ধুদের মন খুশি রাখার জন্য বাংলার হিন্দুর সর্বনাশ যদি করতে হয় তাই হোক! প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা অনুযায়ী সারা ভারতে অনুন্নত শ্রেণী সারা ভারতে প্রাদেশিক আইন পরিষদে পেত ৮১টি আসন। বাংলায় তারা পেয়েছিল ১০টি আসন। গান্ধীজীর প্রাণরক্ষার বিনিময়ে সে সংখ্যা বেড়ে হল ১৪৮টি আসন। তার মধ্যে একমাত্র বাংলার কোটা থেকেই দেওয়া হল অতিরিক্ত ২০টি আসন। ফলে বাংলায় অনুন্নত শ্রেণীর আসনসংখ্যা হল ১০ + ২০ = ৩০। আর বর্ণহিন্দুদের জন্য রইল মাত্র ৫০টি আসন। ব্রিটিশ রাজপুরুষরা অনুন্নত শ্রেণীর নেতাদের বোঝাল যে, “মুসলমানও সংখ্যালঘু, তারাও সংখ্যালঘু; মুসলমানদের সঙ্গে চললে তাদের স্বার্থ বেশি সংরক্ষিত হবে। এখন থেকে বাংলার রাজনীতিতে মুসলিম ও হরিজন এক গাঁটছড়ায় বাঁধা পড়ল।” এর পর থেকেই মুসলিম লীগ ও জিন্না অনুন্নতশ্রেণীর জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন শুরু করেন। পূর্ববঙ্গের তফশিলী নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল মুসলিম লীগের এই ফাঁদে পা দেন। তাঁতে ব্রিটিশ সরকারের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব ও পুনা চুক্তির দৌলতে বর্ণহিন্দুদের যা সর্বনাশ হবার তো হয়েই গেছে। কিন্তু যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ও তাঁর সহযোগীরা মুসলিম লীগের সঙ্গে কদম কদম বাড়িয়ে ও খুশিসে গীত গেয়ে স্ব-সম্প্রদায়ের কতটুকু উপকার করেছেন পরবর্তী ইতিহাস রক্তের অক্ষরে তা লিখে গেছে।

যা করেছি, বেশ করেছি, কৈফিয়ত দেব না : স্যামুয়েল হোর

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারায় কংগ্রেস পড়ল দোটানায়। এই বাঁটোয়ারার বিরোধিতা করলে মুসলমানরা বেশ হবে; আবার গ্রহণ করলে হিন্দুরা অসন্তুষ্ট হবে। সুতরাং গ্রহণও নয় প্রত্যাখ্যানও নয় (না-গ্রহণ না-বর্জন) এই এক হিজড়া নীতি গ্রহণ করল কংগ্রেস। তাতে মুসলমানরা খুশি হল বটে, কিন্তু হিন্দুদের ক্ষতির কোনও পূরণ হল না। যে ‘weightage’ মুসলমানরা সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু সকল প্রদেশেই পেল, সে সুবিধা হিন্দুরা সংখ্যালঘু প্রদেশেও পেল না। অন্যান্য হিন্দু নেতাদের সমালোচনা ও প্রতিবাদে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করা প্রয়োজন মনে করেনি। বরং তাদের এই পক্ষপাতমূলক নীতির সমর্থনে যুৎসই জবাব দিতে না পেরে ভারত সচিব স্যার স্যামুয়েল হোর বললেন, ‘যা করেছি বেশ করেছি, কৈফিয়ত দেব না’ :

“We were left completely free to take what decision we thought fair; I am not prepared to go into the reasons for this decision. “

কৈফিয়ত দেবার দরকার নেই; তবে হিন্দু-মুসলমানে চিরস্থায়ী সাম্প্রদায়িক গুঁতোগুঁতি বজায় রাখাই যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মুখ্য উদ্দেশ্য তা ১৯২৯ সালের সাইমন কমিশনের রিপোর্টে তো পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে :

“We are clearly convinced that separate communal electorate serve to perpetuate political division on purely communal lines.”

এবং এই বিভাজন নীতি যে ভারতবাসীর মধ্যে সমনাগরিকত্ব বোধ জাগরণের পরিপন্থী an undoubted obstacle in the way of the growth of a sense of common citizenship — জ্ঞানপাপীরা সেকথা কবুল করতেও লজ্জাবোধ করেনি। কারণ সেটাই তো তাদের আন্তরিক অভিপ্রায়।

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারাতেই দেশ ভাগের বীজ নিহিত ছিল

পাঞ্জাবেও একই পদ্ধতিতে হিন্দুদের আসনসংখ্যা কমিয়ে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস করে মুসলমানদের হাত শক্ত করা হয়েছে।

এই দুটি প্রদেশের হিন্দু ও শিখদের উপর ইংরেজদের জাতক্রোধ। এদের হাতে সহিংস ও অহিংস পন্থায় ব্রিটিশ প্রশাসন যে নাকানিচোবানি খেয়েছিল তারই প্রতিদান তারা দিয়েছিল দুই প্রদেশের হিন্দুদের রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করে। ব্রিটিশ জাতি যে তার অপমান ও অহমিকার উপর আক্রমণ কখনও ভোলে না, তার প্রমাণ তারা হাতে হাতে দিয়ে গেল। বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য করা, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকীর সশস্ত্র আক্রমণ, কয়েকগণ্ডা সাহেব কর্মচারী হত্যা, বুড়ী বালামের তীরে যতীন মুখার্জীর লড়াই, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগ্রার লুণ্ঠন, রাইটার্সে অলিন্দ যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে আমরা যতই গলা ফাটাই বা ঢাক বাজাই না কেন, ব্রিটিশ সরকার সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার এক খোঁচায় বাঙালী হিন্দুদের ক্ষমতার অলিন্দ থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ১৯০৫ সালের ভৌগোলিক খণ্ডীকরণ বানচাল করার শোধ তুলল তারা ১৯৩৫ সালের ভারতশাসন আইনে ধর্মীয় ও জাতভিত্তিক খণ্ডীকরণ নীতি প্রচলন করে। এবং আরও ১২ বছর পর শুধু বাংলা নয় ভারতকে তিন টুকরা করার বীজও পুঁতে রাখল সেই সঙ্গে

সকল অধ্যায়

১. ভূমিকা (শ্যামাপ্রসাদ ও বঙ্গবিভাগ)
২. ১. বাংলার সীমা চৌহদ্দী
৩. ২. ভাগের রাজনীতি–১ম পৰ্ব
৪. ৩. ভাগের রাজনীতি—২য় পর্ব
৫. ৪. ভাগের রাজনীতি–৩য় পর্ব
৬. ৫. অরাজনৈতিক ৭৭নং বাড়িটি
৭. ৬. ‘অখণ্ড ভারত অমর রহে’
৮. ৭. প্রত্যক্ষ সংগ্রাম : নৃশংস ১৬ আগস্ট
৯. ৮. বিভীষিকাময় ১০ অক্টোবর
১০. ৯. আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি
১১. ১০. পৈশাচিক বর্বরতা : পাঞ্জাবের দাঙ্গা
১২. ১১. বিভক্ত ভারত, অবিভক্ত বাংলা
১৩. ১২. যুক্ত বঙ্গ পরিকল্পনা বানচালে শ্যামাপ্রসাদের মরণপণ সংগ্রাম
১৪. ১৩. বিভাগ-পরবর্তী পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু-শিখ নরমেধ যজ্ঞ
১৫. পরিশিষ্ট – বাংলা ভাগ না হলে বাঙালী হিন্দু যেত কোথায়?
১৬. শ্যামাপ্রসাদের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী
১৭. তথ্যসূত্র ও স্বীকৃতি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন