মাঝরাতের ‘কল’

হেমেন্দ্রকুমার রায়

রামের জন্মের বহু আগেই তাঁর জীবনের যাবতীয় ঘটনা— অদূর ভবিষ্যতে যা অবশ্যই ঘটবে, তার কথা পরিষ্কারভাবে রামায়ণে লিখে রেখে গিয়েছিলেন ত্রিকালদর্শী ঋষি, মহামুনি বাল্মীকি।

ঠিক অতটা না হলেও, প্রায় কাছাকাছিই যায়, এমন একটা ঘটনার কথা শোনা গেছে আমেরিকার কালিফোর্নিয়া প্রদেশের রিচমন্ড শহর থেকে। ঘটনাটা এই

একদিন রাত্রে রিচমন্ড শহরের প্রধান পুলিশ স্টেশনের ফোন বেজে উঠল সরবে। বড়োকর্তা ফোন তুলতেই লাইনের ওপার থেকে দ্রুত ধ্বনিত হয়ে উঠল একটি কণ্ঠ— যেমন উত্তেজিত তেমনই ব্যাকুল। পুলিশের বড়োকর্তা শুনলেন ‘সান পাবলো আর ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউর লেভেল ক্রশিং-এ অবিলম্বে আপনাদের রেস্কিউ পার্টি পাঠান ক্যাপ্টেন। বড়ো বিশ্রী আর সাংঘাতিক রকমের এক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে সেখানে। সান্তা-ফে-স্ট্রিম লাইনার ট্রেনটি এইমাত্র ধাক্কা মেরে একটি ট্রাককে একেবারে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। ট্রাক ড্রাইভার বেঁচে আছে কি না সন্দেহ।’ বক্তার কণ্ঠস্বর এত চকিতে নীরব হয়ে গেল যে, পুলিশ প্রধান কোনো হদিশই করতে পারলেন না মাঝরাতের এই আশ্চর্য সংবাদদাতার— আর আশ্চর্য এই সংবাদের।

যাই হোক, অসমর্থিত হলেও সংবাদ যখন— বিশেষ করে এক দুর্ঘটনার, তখন আর চুপ করে বসে থাকা চলে না। ক্যাপ্টেন অবিলম্বে একখানা স্কোয়াড-কার, আর একখানা অ্যাম্বুলেন্স খুব তাড়াতাড়িই রওনা করে দিলেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে।

পুলিশের লোকেরা আর অ্যাম্বুলেন্স-কর্মীরা অকুস্থল পৌঁছে তো অবাক! হা হতোস্মি! কোথায় কী! ট্রেনেরই আসবার সময় হয়নি এখনও, তার আবার অ্যাক্সিডেন্ট! আর ট্রাকের টিকিও তো নজরে পড়ে না কোথাও!

এসব কি কোনো বদলোকের রসিকতা তবে! পুলিশকে শুধু শুধু হয়রানি করার মতলব!

স্কোয়াড-কারের নেতা টেলিফোনে পুলিশ-প্রধানের অভিমত জানতে চাইলেন। তিনি তাঁকে ফিরে আসবার আদেশই দিলেন।

ফরে আসতে উদ্যত হয়েছে তাঁরা, এমন সময়ে অদূরে ইঞ্জিনের সার্চ লাইট দেখা গেল। বিফোর টাইমে রিচ করেছে সান্তা-ফে-স্ট্রিম লাইনার। কেবিনম্যান তাড়াতাড়ি গেট বন্ধ করবার উদ্দেশে হাতল ঘোরাতে লাগল গেটের। বিরাট লম্বা গেট ওপর থেকে নামতে লাগল ধীরে ধীরে। এমন সময়ে, ঠিক যেন মাটি ফুঁড়ে, সেখানে এসে হাজির হল তিন টনি একখানা মোটর ট্রাক; কিছু ভাববার আগেই চলে এল লাইনের ওপর। ওদিকে ট্রেনও এসে পড়েছে বিশ গজের মধ্যে। তারপর যা ঘটবার তাই ঘটল।

মাতাল ট্রাক ড্রাইভার র‌্যানডলফ ব্রুস কোনোগতিকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচালে বটে, কিন্তু দুর্ঘটনার হাত এড়াতে পারলে না। তার মাথা আর বুক গুঁড়ো হয়ে গেল ট্রাক চাপা পড়ে।

আজও জানা যায়নি রহস্যময় কণ্ঠের সেই আগাম রহস্যময় ঘোষণার উৎস কী।

সকল অধ্যায়

১. মূর্তি
২. কী?
৩. ওলাইতলার বাগানবাড়ি
৪. বাঁদরের পা
৫. বাড়ি
৬. বন্দি আত্মার কাহিনি
৭. জ্বলন্ত চক্ষু
৮. কোর্তা
৯. জীবন্ত মৃতদেহ
১০. অভিশপ্ত মূর্তি
১১. ভূতের রাজা
১২. অদৃশ্যের কীর্তি
১৩. ছায়া-কায়া-মায়া
১৪. কঙ্কাল-সারথি
১৫. এক রাতের ইতিহাস
১৬. কিসমৎ
১৭. ডাকবাংলো
১৮. দিঘির মাঠে বাংলো
১৯. পিশাচ
২০. ভীমে-ডাকাতের বট
২১. রুদ্রনারায়ণের বাগানবাড়ি
২২. কে?
২৩. মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি
২৪. চিলের ছাতের ঘর
২৫. খামেনের মমি
২৬. ক্ষুধিত জীবন
২৭. শয়তান
২৮. ভেলকির হুমকি
২৯. শয়তানী-জুয়া
৩০. বাঘের চোখ
৩১. জাগ্রত হৃৎপিণ্ড
৩২. টেলিফোন
৩৩. সূর্যদেবতার পুরোহিত
৩৪. ভৌতিক, না ভেলকি?
৩৫. ‘বাজলে বাঁশি কাছে আসি’!
৩৬. মাঝরাতের ‘কল’
৩৭. পেপির দক্ষিণ পদ
৩৮. নবাব কুঠির নর্তকী
৩৯. মামূর্তের দানব-দেবতা
৪০. মুক্তি
৪১. নবাবগঞ্জের সমাধি
৪২. কলকাতার বিজন দ্বীপে
৪৩. বাদশার সমাধি
৪৪. অভিশপ্ত নীলকান্ত
৪৫. পোড়ো মন্দিরের আতঙ্ক
৪৬. আয়নার ইতিহাস
৪৭. রামস্বামীর উপল মণি
৪৮. বাড়ি, বুড়ো, বুট
৪৯. আধ খাওয়া মড়া
৫০. আজও যা রহস্য
৫১. রহস্যময় বাড়ি
৫২. মানুষ, না পিশাচ?
৫৩. ঐন্দ্রজালিক
৫৪. অভিশপ্তা
৫৫. নসিবের খেলা
৫৬. বিছানা
৫৭. লোটা
৫৮. কিন্তু
৫৯. কায়া কি ছায়া কি মায়া
৬০. তবে
৬১. নবাব বাহাদুরের বংশধর
৬২. মৃতদেহ
৬৩. নরকের রাজা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন