লোটা

হেমেন্দ্রকুমার রায়

[হায়দ্রাবাদ নিজাম কলেজের প্রাক্তন সর্বাধ্যক্ষ ডবলিউ টার্নার সাহেব কথিত সত্যকাহিনি অবলম্বনে নীচের গল্পটি লিখিত। ]

এক

অনন্ত রেড্ডি ফতুর।

গোদাবরীর বন্যা তার খেত-খামারের সমস্ত শস্য ধ্বংস করেছে, তার দুটো মহিষ ও চারটে গোরু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং তার চারটে ছাগল এখনও আছে বটে, কিন্তু বিশ-বিশটা ছাগলের কোনোই পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না।

উঁচু জায়গায় ছিল বলে অনন্তর কুটিরখানা রক্ষা পেয়েছে, কিন্তু চতুর্দিক ঘিরে দুর্দম বন্যার ফেনায়িত জলরাশি তাণ্ডবে মেতে ছুটে চলেছে এবং তার মধ্যে সাঁতার কাটছে দলে দলে ক্ষুধাতুর কুমির।

বাড়ির সুমুখে কর্দমাক্ত জমির উপরে বসে পড়ে অনন্ত কপালে করাঘাত ও হাহাকার করতে লাগল।

লক্ষ্মী তার বউ। সে এত বিপদেও মুষড়ে পড়েনি। লক্ষ্মী এসে বললে, ‘হ্যাঁগা, ছেলেমানুষের মতো কেঁদে কোনো লাভ আছে কি? কান্না থামাও, আবার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করো। আমার গায়ের রুপোর গয়নাগুলো তো আছে, তাই বেচে ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করো।’

অনন্ত বললে, ‘তোমার মাথা খারাপ গিন্নি, তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ! তোমার খান কয়েক তুচ্ছ রুপার গয়না বেচে যে টাকাগুলো উঠবে, তাতে আমার ক্ষতিপূরণ হওয়া অসম্ভব। তারপর তুমি কি সুদখোর মহাজন দুর্গাদাসের কথা ভুলে গিয়েছ? আসলের তো কথাই নেই, তার সুদও বাকি পড়েছে। শর্ত অনুসারে সে যদি এখন দাবি করে, আমার জমিজমাও তার হাতে তুলে দিতে হবে। গিন্নি, আমার আর বাঁচবার উপায় নেই— আমার সর্বনাশ হয়েছে!’

লক্ষ্মী বললে, ‘তুমি একবার ভাঙা মন্দিরের সাধুবাবার কাছে গিয়ে দেখো না, তিনি কী বলেন জেনে এসো।’

অনন্ত বললে, ‘এসব ব্যাপারে তিনি কী বলতে পারেন?’

লক্ষ্মী বললে, ‘সাধুবাবার কথা শুনে আমাদের মরণাপন্ন খোকার জীবনরক্ষা হয়েছিল, তা কি তোমার মনে নেই? এ ব্যাপারেও নিশ্চয়ই তিনি সৎপরামর্শ দিতে পারবেন। হাল ছেড়ে দিয়ে এমন করে বসে থেকো না— যাও সাধুবাবার কাছে।’

দুই

মাইল তিনেক দূরে সেই মান্ধাতার আমলের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে ভাস্করের হাতে-গড়া খণ্ডবিখণ্ড দেবদেবীর মূর্তি— অখণ্ড অবস্থায় যাদের দেখতে ছিল পরমসুন্দর।

সেই পোড়ো জঙ্গলাকীর্ণ দেবস্থানের একপ্রান্তে ছোটো একখানা চালাঘরের ভিতরে নিজের উপাস্য দেবতার মূর্তি নিয়ে বাস করেন সাধুবাবা। দেখলেই বোঝা যায় সাধুবাবার বয়সের গাছপাথর নেই— মাথার ও দাড়ি-গোঁফের সব চুল সাদা ধবধব করছে তুলোর মতো। মৃগচর্মাসনে আসন পিঁড়ি হয়ে তিনি বসেছিলেন। এখনও বেশ শক্তসমর্থ।

অনন্ত মাটির উপরে লম্বা হয়ে পড়ে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলে।

সাধুবাবা নরম স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী খবর অনন্ত? বুঝেছি, এবারে আর ছেলের কথা নয়, বানের জলে ভেসে তুমি এখানে এসে পড়েছ! তোমার সর্বনাশ হয়েছে, কেমন, এই তো!’

অনন্ত অবাক! সাধুবাবা অন্তর্যামী! সে আর বলবার কোনো কথা খুঁজে পেলে না। তার যা বলবার সে তো সাধুবাবা নিজেই বলে দিলেন!

সাধু বললেন, ‘যদি ভগবানের প্রতি বিশ্বাস থাকে তাহলে তোমার কোনো ভাবনাই নেই। এইখানে একটু অপেক্ষা করো।’ তিনি চালা ঘরে ঢুকে এককোণে ছড়ানো কতকগুলো টুকরো-টাকরা আজেবাজে জিনিসের ভিতর থেকে একটা কালিঝুলিমাখা লোটা তুলে নিয়ে আবার বাইরে বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘এই লোটাটা তুমি লক্ষ্মীর হাতে দিও। এখন এগিয়ে চলো, আমিও তোমার সঙ্গে খানিকটা যাব— আমার এক চ্যালা গাঁয়ের ভিতরে গিয়েছে, কিন্তু সে এখনও এল না কেন?’

বেশ বড়ো আর ভারী লোটা। কিন্তু অনন্ত ভেবেই পেলে না এই কালচে-পড়া পুরোনো লোটাটা কী করে তার মুশকিল আসান করবে?

তিন

গাঁয়ের পথে ভারি গোলমাল। লোকজনের ভিড়। জনৈক পুলিশের জমাদার একটা গোরুর দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে কাকুতিমিনমি করছে গাঁয়ের এক গরিব বাসিন্দা।

জমাদার চোখ রাঙিয়ে বললে, ‘এইবার নিয়ে তিন বার তোমার গোরু বংশীলালের ফসলের খেতে ঢুকেছে, এবারে আমি ছাড়ব না, ওকে খোঁয়াড়ে নিয়ে যাবই। কিন্তু মনে রেখো, খোঁয়াড়ে নিয়ে গেলে তোমার পাঁচ টাকা জরিমানা হবে। তবে ভালোয়-ভালোয় এখনি তুমি যদি আমাকে দুটো টাকা দাও তাহলে আর কোনো গোলমালই হবে না।’

জনতার ভিতর থেকে এক ছোকরা বেরিয়ে এসে জমাদারকে বলে, ‘এই ডাকু! আমি স্বচক্ষে দেখেছি গোরুটাকে তুমিই টেনে-হিঁচড়ে জোর করে বংশীলালের খেতের ভিতরে নিয়ে গিয়েছ! এখন আবার গরিব-বেচারার কাছ থেকে ঘুস আদায়ের ফিকিরে আছ?’

ছোকরার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে অনন্তকে ডেকে সাধু বললেন, ‘ওই তো আমার চ্যালা! দেখো, এখন ব্যাপার কী হয়?’

জমাদার রুখে উঠে বললে, ‘চোপরাও বদমাইস ছোকরা, আমাকে অপমান?’ বলেই সে সাধুর চ্যালাকে এত জোরে ধাক্কা মারলে যে, সে বেচারা ঘুরে সটান পপাত-ধরণীতলে এবং তার হাতের মাটির ভাঁড় ভেঙে সব দুধ মাটির উপরে পড়ে এদিকে-ওদিকে গড়িয়ে গেল।

সাধু চ্যালার দিকে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলে, কিন্তু ক্রোধে অন্ধ জমাদার তাঁকেও মারলে সজোরে এক ধাক্কা!

সাধুবাবার গায়ে হাত! সমস্ত জনতা ক্ষেপে মারমুখো হয়ে উঠল।

জমাদার তখন বুঝতে পারলে, কী অন্যায় করেছে সে।

সাধু হাত তুলে জনতাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘শান্ত হও বাছারা, শান্ত হও!’

তারপর জমাদারের দিকে ফিরে বললেন, ‘জমাদার, তুমি থানার লোক থানায় যাও— এখানে কারুর কাছ থেকে ঘুস পাবে না। কিন্তু আজ তুমি যে অন্যায়টা করলে তার জন্যে শাস্তি পাবে অবিলম্বেই— ঠিক জেনো, আমার কথা মিথ্যা হবে না!’

অভিশপ্ত জমাদার মুখ চুন করে থানামুখো হল, অপরাধীর মতো।

চার

লক্ষ্মী বললে, ‘মাগো, লোটাটা কী ভারী! ওর গায়ে কত ময়লা জমেছে গো! রও, আগে এটা মেজে আনি।’

অনন্ত মনে মনে বললে, ‘লক্ষ্মী, যতই মাজো আর যতই ঘষো, ও লোটা আমার দুঃখ দূর করতে পারবে না!’

দুর্ভাবনার অতলে তলিয়ে সে ভাবতে লাগল, এখন সুদখোর দুর্গাদাসের খপ্পর থেকে আমার জমিজমা বাঁচাই কেমন করে?

একটু পরেই লক্ষ্মীর ডাক শুনে অনন্ত অন্দরে ঢুকে দেখে, সে তেঁতুল, ছাই আর ন্যাকড়া দিয়ে সেই লোটাটা মাজছে আর আনন্দে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলছে, ‘ওগো দেখ দেখ, সাধুবাবার দানের মহিমা দেখ! এ লোটা কী দিয়ে গড়া এখন বুঝতে পারছ কি? জয় হোক সাধুবাবার, জয় হোক!’

নিজের চোখকেই অনন্ত যেন বিশ্বাস করতে পারলে না— এ যে চকচকে সোনার লোটা!

থেমে থেমে সে বললে, ‘এই ভারী লোটা সত্যিই যদি সোনায় গড়া হয় তাহলে অদৃষ্ট আমাদের ফিরে যাবে।’

লক্ষ্মী বললে, ‘লোটা নিয়ে এখনি বাজারে যাও, জেনে এসো লোটার দাম কত হবে!’

বলা বাহুল্য, অনন্ত তৎক্ষণাৎ লোটা নিয়ে স্বর্ণকার সোনারীলালের দোকানের দিকে দৌড় মারতে বিলম্ব করলে না। লোটা ওজন করে ও কষ্টিপাথরে ঘষে সোনারীলাল বিস্মিত কণ্ঠে বললে, ‘ওহে অনন্ত, তুমি কি আজকাল চুরি-ডাকাতি করছ?’

অনন্ত বললে, ‘এ লোটা দান হিসেবে সৎপথেই আমি পেয়েছি। এর কত দাম হতে পারে?’

সোনারীলাল বললে, ‘তিন হাজার টাকার বেশি তো কম নয়। আমার এখন অত টাকা নেই, নইলে আমিই লোটাটা কিনে নিতুম।’

মহা উৎসাহে অনন্ত বললে, ‘তাহলে লোটাটা এখনি সুদখোর দুর্গাদাসের কাছে বিক্রি করে দেনার দায় থেকে আমি নিষ্কৃতি পেতে চাই। কিন্তু তুমিও আমার সঙ্গে এসো, দুর্গাদাস আমার কথা বিশ্বাস করবে না। আমি তোমাকে দালালি দেব।’

পাঁচ

সুদঘোর মহাজন দুর্গাদাসের সঙ্গে কি পারবার জো আছে? অনেক প্রশ্নোত্তর, অনেক কথা কাটাকাটি ও অনেক দরকষাকষির পর অবশেষে সাব্যস্ত হল যে, দুর্গাদাস লোটাটা নিয়ে দেবে দুই হাজার ছয়শত টাকা।

অনন্ত বললে, ‘তুমি আমার কাছ থেকে পাবে দুই শো দশ টাকা। ওই টাকাগুলো কেটে বাকি টাকা এখনি আমাকে ফিরিয়ে দাও।’

এইসব কথাবার্তা হচ্ছে, এমন সময়ে সেই ঘুসখোর জমাদারটাও সেখানে এসে হাজির হয়ে বললে, ‘মহাজন, আপনি আমাকে ডেকেছেন কেন?’

দুর্গাদাস বললে, ‘জমাদারজি, আজ তিনদিন ধরে দেখছি, একটা দুশমন চেহারার লোক রোজ রাত্রে আমার বাড়ির চারপাশে ঘোরাফেরা করে। তার মতলব নিশ্চয়ই ভালো নয়— হয়তো আমার বাড়ির উপরে হানা দিতে চায়।’

জমাদার বললে, ‘হুঁ, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তা আপনি এক কাজ করুন। আপনার দুজন চাকরকে রোজ রাত্রে লাঠি নিয়ে পাহারায় মোতায়েন রাখবেন। তারপর যা হয় দেখা যাবে।’

বিদায় নেবার আগে জমাদার সেই সোনার লোটা দেখে ও তার ইতিহাসও শুনে গেল।

ছয়

সেই রাত্রে বেশ খানিকটা সিদ্ধির শরবত খেয়ে জমাদার তার চারপাইয়ের উপরে শুয়ে পড়ল। তারপর ঘুমোতে ঘুমোতে বিচিত্র এক স্বপ্ন দেখলে—

প্রথম দৃশ্য সেই সমুজ্জ্বল খাঁটি সোনার লোটা। তার গায়ের উপর দিয়ে ঠিকরে পড়ছে যেন চাঁদের আলো।

দ্বিতীয় দৃশ্য কাপড়ের ভিতরে কী যেন লুকিয়ে দুর্গাদাস সন্তর্পণে খিড়কির জমির উপরে এসে দাঁড়াল। কাপড়ের ভিতর থেকে বার করলে সেই আলো ঝলমল সোনার লোটা।

তৃতীয় দৃশ্য একটা গাছের তলায় গিয়ে দুর্গাদাস মাটি খুঁড়ে সোনার লোটা পুঁতে রাখলে। স্বপ্নঘোরেই জমাদার বললে, ‘দুর্গাদাসটা কী বোকা! চোর এলে আগে তো ওইরকম সব জায়গাই খুঁজে দেখবে। হুঁ, দুর্গাদাসকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার।’

স্বপ্নঘোরেই জমাদার যেন নিজের চারপাই ছেড়ে উঠল। তারপর সে নিজেকে দেখলে দুর্গাদাসের বাড়ির পিছনে। তারপর পাঁচিল ডিঙিয়ে লাফিয়ে পড়ল সে খিড়কির জমির উপরে। তারপর সেই গাছের তলায়। তারপর—

দমাদ্দম লাঠির চোটে জমাদারের ঘুমের ঘোর ছুটে গেল। সচমকে দেখলে, সে আর নিজের চারপাইয়ের উপরে শুয়ে নেই— উপুড় হয়ে পড়ে আছে দুর্গাদাসের বাড়ির পিছনকার জমির উপরে দুর্গাদাসের দুই চাকর তার পিঠে লাঠি মারতে মারতে চীৎকার করছে— ‘চোর! চোর!…’

লণ্ঠন হাতে দুর্গাদাস ছুটে এল— তারপর এল এক চৌকিদার। সারা পাড়ার ঘুম গেল ছুটে— চারিদিক লোকে-লোকারণ্য!

জমাদার বুঝলে, সাধুবাবার অভিশাপের মহিমা।

সকল অধ্যায়

১. মূর্তি
২. কী?
৩. ওলাইতলার বাগানবাড়ি
৪. বাঁদরের পা
৫. বাড়ি
৬. বন্দি আত্মার কাহিনি
৭. জ্বলন্ত চক্ষু
৮. কোর্তা
৯. জীবন্ত মৃতদেহ
১০. অভিশপ্ত মূর্তি
১১. ভূতের রাজা
১২. অদৃশ্যের কীর্তি
১৩. ছায়া-কায়া-মায়া
১৪. কঙ্কাল-সারথি
১৫. এক রাতের ইতিহাস
১৬. কিসমৎ
১৭. ডাকবাংলো
১৮. দিঘির মাঠে বাংলো
১৯. পিশাচ
২০. ভীমে-ডাকাতের বট
২১. রুদ্রনারায়ণের বাগানবাড়ি
২২. কে?
২৩. মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি
২৪. চিলের ছাতের ঘর
২৫. খামেনের মমি
২৬. ক্ষুধিত জীবন
২৭. শয়তান
২৮. ভেলকির হুমকি
২৯. শয়তানী-জুয়া
৩০. বাঘের চোখ
৩১. জাগ্রত হৃৎপিণ্ড
৩২. টেলিফোন
৩৩. সূর্যদেবতার পুরোহিত
৩৪. ভৌতিক, না ভেলকি?
৩৫. ‘বাজলে বাঁশি কাছে আসি’!
৩৬. মাঝরাতের ‘কল’
৩৭. পেপির দক্ষিণ পদ
৩৮. নবাব কুঠির নর্তকী
৩৯. মামূর্তের দানব-দেবতা
৪০. মুক্তি
৪১. নবাবগঞ্জের সমাধি
৪২. কলকাতার বিজন দ্বীপে
৪৩. বাদশার সমাধি
৪৪. অভিশপ্ত নীলকান্ত
৪৫. পোড়ো মন্দিরের আতঙ্ক
৪৬. আয়নার ইতিহাস
৪৭. রামস্বামীর উপল মণি
৪৮. বাড়ি, বুড়ো, বুট
৪৯. আধ খাওয়া মড়া
৫০. আজও যা রহস্য
৫১. রহস্যময় বাড়ি
৫২. মানুষ, না পিশাচ?
৫৩. ঐন্দ্রজালিক
৫৪. অভিশপ্তা
৫৫. নসিবের খেলা
৫৬. বিছানা
৫৭. লোটা
৫৮. কিন্তু
৫৯. কায়া কি ছায়া কি মায়া
৬০. তবে
৬১. নবাব বাহাদুরের বংশধর
৬২. মৃতদেহ
৬৩. নরকের রাজা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন