৭৪. প্রীতমের বাবা-মা আরও বুড়ো

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

প্রীতমের বাবা-মা আরও বুড়ো হয়ে গেছেন। ভাইবোনদের চেহারা শ্রীহীন। বাড়িটায় জমাট বেঁধে আছে এক শশাকের শূন্যতা।

দীপনাথকে যা বলবার তা বলল শতম, দাদা নিখোঁজ হওয়ার পর প্রায় একমাস কেটে গেছে। আমরা সম্ভব-অসম্ভব সব জায়গায় খুঁজেছি। এখন আপনিই বলুন আর কী করা যায়?

দীপনাথের মন এখন স্থির হয়েছে। মাথা ঠান্ডা। সে ধীর গলায় বলল, অসুখে প্রীতম বাঁধা পড়েনি। রোগা শরীরেও ও বহুদূর চলে যেতে পারে। কিন্তু বাধা হবে টাকা-পয়সা। কোথাও গিয়ে বেশিদিন থাকতে হলে টাকা চাই। প্রীতম কত টাকা সঙ্গে নিয়ে গেছে জানিস?

না। ওর কাছে কত টাকা ছিল তা জানি না।

দীপনাথ মাথা নাড়ল, জানলে ভাল হত। তবে আমার মনে হয় লুকিয়ে থাকলে একদিন না একদিন হাতের টাকা ফুরোবে। তখন ঠিক খবর দেবে।

কোথায় দাদা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

কোনও চেনা লোকের কাছে নয়। ওর এই রোগা শরীরে কোনও লোকই ওকে লুকিয়ে রাখবে। চেনা লোক হলে খবর দেবেই।

আমাদের কি আর কিছু করার নেই দীপুদা?

দীপনাথ মৃদু একটু হেসে বলে, তোর তো ঠাকুরের ওপর অগাধ বিশ্বাস। তুই কেন তবে ভেঙে পড়ছিস? বিশ্বাসের জোর নেই?

এ কথায় হঠাৎ কেমন হয়ে গেল শতম। মুখের অসহায় ভাবটা আস্তে আস্তে কেটে গেল। চোয়াল শক্ত হল। কপালে কিছু কুঞ্চন দেখা গেল। চোখ দুটো জ্বলে উঠল ধক করে। একটা বড় মাপের শ্বাস ফেলে বলল, মাঝে মাঝে একটু ভেঙে পড়ি ঠিকই। কিন্তু ভেবো না। আমার মন বলছে, দাদার কিছু হবে না।

দীপনাথ এরকম সরল বিশ্বাস আজকাল কারও মধ্যে দেখে না। তার নিজের কোনও বিশ্বাসের জমি নেই। শতমের এই রূপান্তর দেখে সে বুঝি একটু খুশি হল। বলল, আমি একবার বীনাগুড়ি চা বাগানে যাব। সেখানে আমাদের এক পুরনো বন্ধু আছে। দেখি যদি তার কাছে গিয়ে থাকে।

শতম গম্ভীর স্বরে বলল, দেখুন গিয়ে।

বীনাগুড়ি বেশিদুর নয়। পরদিন দুপুরেই সেখানে পৌঁছে গেল দীপনাথ।

শুভব্রত তাকে দেখে খুব অবাক হল না। বলল, আয়। প্রীতমের খোজে তুই যে আসবি তা প্রীতমই বলেছিল। আমার কথা কেউ না জানলেও তুই জানিস।

প্রীতম কোথায়?

তা কে জানে! মাসখানেক আগে দু’জন রাস্তার লোক ওকে পৌঁছে দিয়ে যায়। দিন চারেক ছিল। আমি ওর বাড়ি খবর পাঠাব বলে ঠিক করলাম। পরদিন সকালেই হাওয়া। অনেক খুঁজেও পাইনি। আর পাইনি বলে খবরও পাঠাইনি। কী জানি ওরা হয়তো আমাকে ভুল বুঝবে।

যে চারদিন তোর কাছে ছিল সেই কয়দিন কী করত?

কিছুই না। বারান্দায় বসে থাকত। আমার বউয়ের সঙ্গে গল্প করত।

তোর বউকে ডাক।

শুভব্রতর বউ এল। মিষ্টি দেখতে। দীপনাথের জেরার মুখে পড়ে বলল, কোথায় যেতে পারে কিছু আন্দাজ করতে পারছি না। তবে কলকাতায় যাবে না নিশ্চয়ই। কলকাতার ওপর খুব রাগ।

এখানে থাকার সময় ওর শরীর কেমন ছিল?

যা রোগা! আমি তো ভয়ই পেতাম।

হাঁটাচলা করত?

করত। শরীরে কুলোত না, তবু মনের জোরেই বোধহয় খুব স্বাভাবিক চলাফেরার চেষ্টা করত।

কী নিয়ে কথা বলত?

ধর্ম নিয়ে। সব সময় কেবল ধ্যানের কথা বলত। গীতার অনেক শ্লোক ব্যাখ্যা করত। বেশ লাগত শুনতে। ক’দিন ওর সঙ্গ পেয়ে আমারও একটু ধর্মভাব এসে গিয়েছিল।—বলে শুভব্রতর বউ একটু হাসল। তারপর হঠাৎ খুব নিশ্চিন্তের মতো গলায় বলল, ওরকম মানুষের কোনও ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না আমার।

দীপনাথ দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ক্ষতি ওদেরই সবচেয়ে বেশি হয়। ও কখনও ওর বউ আর বাচ্চার কথা বলত না?

নিজে থেকে নয়। তবে আমি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলে একটু-আধটু বলত।

দীপনাথের আর কিছু করার ছিল না। অসহায়তায় তার সমস্ত শরীর অবশ। একটা রাত সে শুভব্রতর কাছে থেকে পরদিন কুচবিহার রওনা হল। যদি দিলীপের কাছে গিয়ে থাকে। দিলীপ তাদের হারিয়ে যাওয়া এক বন্ধু। এইসব বন্ধুর কথা আর কেউ জানে না। হঠাৎ হঠাৎ বন্ধু হয়ে হারিয়ে গেছে কবে। দিলীপ ছবি আঁকত। কিন্তু যশ প্রতিষ্ঠা কিছুই পায়নি। পাগলা মতো। অনেকদিন যোগাযোগ নেই।

মড়াপোড়াদিঘির কাছে দিলীপের ডেরায় যখন পৌঁছোল দীপনাথ তখন বেলা বেশি হয়নি। দিলীপ বাড়িতে ছিল। ভারী রোগা হয়ে গেছে। চুলগুলো পেকে একশা। আর্টিস্ট হলেই মদ খেতে হয়, এরকম একটা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে সেই স্কুলে থাকতেই মদ ধরেছিল। এখনও ধরে আছে। তবে শিল্প প্রায় ছেড়েই গেছে তাকে।

দিলীপ একটু সময় নিল চিনতে। তারপর বলল, ওঃ দীপু! তাই বল। না রে প্রীতম আসেনি। তবে আসবে বলে বহুকাল আগে একটা চিঠি দিয়েছিল।

কথাটা দীপনাথ বিশ্বাস করল না। কারণ, এতকাল বাদে দেখা হওয়া সত্ত্বেও দিলীপ তাকে ঘরে নিয়ে যেতে চাইছে না। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দীপনাথ ভারী ক্লান্ত। কাজেই কথার মারপ্যাচে গেল না। একটুক্ষণ চেয়ে রইল দিলীপের দিকে। তারপর বলল, তুই আজকাল কী করিস?

বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখাই। একটা স্কুল করেছি।

চলে সেটা?

চলে যায়।

এই বাড়িতে?

এই বাড়ি আর কোথায়! একখানা মোটে ঘর আমার।

বসতে বললি না?

বসবি?—খুব অনিচ্ছার সঙ্গে দিলীপ বলে, আয় তা হলে।

দিলীপ দরজা ছেড়ে ভিতরে সরে যাওয়ায় খুব হতাশ হল দীপনাথ। দরজা যখন ছেড়ে দিল তখন প্রীতম নেই। ঠিকই নেই।

প্রীতম ছিলও না। ঘরে এলোমেলো রঙের পাত্র, তুলি, ভাঙা গ্লাস আর কাপ, ক্যানভাস, ইজেল ছড়ানো। সরু চৌকিতে নোংরা বিছানা। একধারে জনতা স্টোভ, অ্যালুমিনিয়াম আর কলাই করা বাসন। দারিদ্রের গভীর ক্ষতচিহ্নগুলি চারদিকে ছড়ানো। একটা দেশি মদের বোতলের মুখে একটা রক্তজবা গুঁজে রেখেছে দিলীপ। বোধহয় প্রতীক।

কোমরে হাত রেখে আশাহীন চোখে চারদিকে চেয়ে দেখে দীপনাথ। প্রীতম এলেও এখানে বেশিদিন থাকতে পারত না। এই পরিবেশ সহ্য করার সাধ্য প্রীতমের নেই।

ভদ্রতাবশে খানিকক্ষণ বসে উঠে পড়ে দীপনাথ। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিড়ে গেছে কবে। এখন দেখা হলে কথা আসে না। কোনও আবেগ বোধ করে না।

 

দীপনাথ দুপুরে একটা বাস ধরে সন্ধেবেলা শিলিগুড়ি ফিরে এল। প্রীতমের বাড়িতে গেল না। পিসির বাড়িতে ফিরে একটু খেয়ে সন্ধে থেকে ভোর অবধি ঘুমোল। পরদিন একটা জিপ ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ল অফিসের কাজে। দার্জিলিং জলপাইগুড়ি গ্যাংটক ছুটে বেড়াল দিন দুই। কিন্তু সারাক্ষণ মনটা প্রীতম প্রীতম’ করে যায়। একবারও একটুক্ষণের জন্যও ভুলতে পারে না।

রওনা হওয়ার দিন সকালে প্রীতমের বাড়িতে একবার গেল দীপনাথ। বিমর্ষ মুখ। হতাশায় মনটা বড় ভারী।

শতম দরজা খুলে চুপ করে রইল।

দীপনাথ বলল, আজকের ফ্লাইটে চলে যাচ্ছি। কোনও খবর পেলে জানাস।

শতম মাথা নাড়ল। জানাবে।

শতমের মুখ-চোখে বিমর্ষতা ভেদ করে একটা দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছিল। স্নায়ু খুব টান টান। সজাগ।

দীপনাথ বলল বীনাগুড়িতে শুভব্ৰতর বাড়িতে কয়েকদিন ছিল, জানিস?

শুনে চমকে ওঠে শতম, সত্যি?

সত্যি। শুভব্রতর বউ বলল, খুব নাকি ধর্মের কথা বলত।

বলত?–শতমের মুখে ভোরের মতো স্নিগ্ধ প্রসন্নতা।

সেখান থেকে কোথায় গেল?

মাথা নাড়ে দীপনাথ, জানি না। তবে পুলিশকে খবরটা দিলে ওরা হয়তো ট্রেস করতে পারে।

পুলিশ!—শতম বিরক্ত হয়ে বলে, ওরা কিছু করবে না। ওদের অনেক পলিটিক্যাল ঝামেলা সামলাতে হচ্ছে। দাদা তো আমার দাদা, সরকারের কে?

শুভব্রতর ঠিকানাটা সোজা। বীনাগুড়িতে গিয়ে শুভব্রত মজুমদারের নাম বললেই হবে। পারলে তুই একবার যাস।

আজই যাব।

দীপনাথ দুপুরে বাগডোগরা থেকে প্লেন ধরল। বড় শূন্যতা বুক জুড়ে। প্রীতম নেই। পুরনো চাকরি ছেড়ে নতুন কোম্পানিতে চলে যাচ্ছে সে। জীবন থেকে অনেক কিছুই কি হারিয়ে যাচ্ছে না? প্রীতম, মণিদীপা, বোস সাহেব!

প্লেন যখন উড়ছিল তখন উত্তরের মহামহিম পর্বতমালার দিকে নিস্তব্ধ বিস্ময়ে চেয়ে ছিল দীপনাথ। পাহাড় অবিরল তাকে ডাকে। আয় আয় আয় আয়। যাওয়া হয় না যে!

যখন চাকরি ছিল না দীপনথের, তখন বোস সাহেবের ফাইফরমাশ খেটে চাকরি রাখতে হয়েছে। কিন্তু আজকাল এ-বেলা ওবেলা চাকরির টোপ ফেলে বিভিন্ন কোম্পানি। সে কলকাতায় ফেরার পরদিনই অফিসে টেলিফোন এল।

চ্যাটার্জি? আমি সানফ্লাওয়ার এজেন্সির মিত্র বলছি।

আরে বলুন, কী খবর?

অনেকদিন খবর নেন না। কেমন চলছে?

ওই একরকম।

শুনুন, একটু কথা আছে। জরুরি।

ফোনে বলা যাবে?

না। ছুটির পর ক্যালকাটা ক্লাবে চলে আসুন। আই উইল বি দেয়ার।

দীপনাথ জানে কী কথা। আরও ভাল অফার। আরও বেশি দায়-দায়িত্ব। তার বড় ক্লান্তি লাগে।

তবে মিত্র ভারী খুশি হল দীপনাথকে পেয়ে। ডিনারের পর গাড়িতে পৌঁছে দিল এসপ্ল্যানেড অবধি। গাড়িতেই কথা হয়।

আমাদের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল, জানেনই তো।

জানি। সব কোম্পানিকেই জানি।—দীপনাথ ক্লান্ত গলায় বলে।

রজার্স আপনাকে যা দিতে চায় আমরা তাই দেব।

কিন্তু রজার্স আগে কনট্যাক্ট করেছে।

কথাটা আমি শেষ করিনি চ্যাটার্জি। রজার্স যা আপনাকে দিতে পারে না তা হল ছ’মাস নিউইয়র্কে পোস্টিং।

নিউইয়র্ক!—দীপনাথ সত্যিই চমকায়।

নিউইয়র্ক ফর এ নমিনাল ট্রেনিং। অবশ্য তার জন্য একটা বন্ডও সই করতে হবে। তিনবছর কোম্পানিকে সার্ভ করবেন। রাজি?

রজার্সের খবর আপনাকে কে দিল?

মিত্র হাসে, খবর পাওয়া যায়। কিন্তু কথাটা হল, সানফ্লাওয়ার আপনাকে চায়।

ভেবে দেখি।

দেখুন। আমরা একমাস অপেক্ষা করব।

মিস্টার মিত্র, আমি খুব টায়ার্ড ফিল করি আজকাল। আমার মন ভাল নেই। পার্সোনাল কিছু ঘটনার জন্য। গিভ মি সাম মোর টাইম।

মিত্র খুবই ভদ্রলোক। তবু হঠাৎ বলে ফেলল, দ্যাট অ্যাফেয়ার উইথ মিসেস বোস?

আবার চমকায় দীপনাথ। কিন্তু কথা বলতে পারে না কিছুক্ষণ। তারপর মাথা নেড়ে না জানায়।

মিত্র একটু লজ্জা পেয়ে বলে, সরি। কথাটা আনগার্ডেড মোমেন্টে বেরিয়ে গেছে। কিছু মনে করবে না। বাট দ্যাট ইজ দা টক অফ দি টাউন। অল বোগাস স্ক্যান্ডাল। যাকগে, ডিসিশন নিতে আপনার কত সময় লাগবে?

মে বি টুমরো, মে বি টু মানথস। আমার এক প্রিয়জন নিরুদ্দেশ। আমাকে খুঁজতে হবে।

ও বাবা! সে যে ইনডেফিনিট ব্যাপার। কে বলুন তো!

আমার ভগ্নিপতি। হি ওয়াজ ডেডলি সিক।

খবরেব কাগজে দিয়েছেন?

না তো!

সেইটেই সবার আগে দিন। অ্যান্ড মিসিং পার্সনস স্কোয়াড।

মাথায় খেলেনি তো কথাটা!

বাট ইউ হ্যাভ এ ফার্স্ট ক্লাস ব্রেন। ডোন্ট ওয়ারি। খবর পাবেন। বাট ডোন্ট মেক ইট অ্যান ইস্যু।

জয়েন করার ক’দিন পর আপনারা আমাকে আমেরিকায় পাঠাবেন?

ছ’মাসের মধ্যে। মে বি আর্লিয়ার।

দীপনাথ মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে একটু ভাবল। তারপর হঠাৎ চোখ খুলে বলল, দি ডিসিশন ইজ মেড। আমি রাজি।

এসপ্ল্যানেডের মোড়ে গাড়িটা দাড় করিয়ে মিত্র সত্যিকারের খুশির হাসি হেসে হাত বাড়িয়ে দীপনাথের হাত ধরল, ওয়াইজ ম্যান।

দীপনাথ ম্লান একটু হাসে। কথা বলে না।

মিত্র মৃদু স্বরে বলে, রজার্স আপনাকে দিয়ে অনেক নোংরা কাজ করাত। সানফ্লাওয়ার তা করাবে না। বিলিভ মি, ইউ হ্যাভ ডান দি রাইট থিং। কালই অ্যাপয়েন্টমেন্ট চলে যাবে আপনার ঠিকানায়। ঠিক আছে?

আছে।

বাই।

বাজারে কোনও কথাই গোপন থাকে না।

দিন তিনেক বাদে বোস সাহেব তার চেম্বারে ডাকে দীপনাথকে।

আমেরিকায় পাঠাচ্ছে সানফ্লাওয়ার?

দীপনাথ শুধু মাথা নাড়ে।

আপনার রেজিগনেশন নোটিশ পেয়েছি। পাসপোর্টের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন?

করব।

করে আমাকে বলবেন। যাতে তাড়াতাড়ি হয়ে যায় দেখব।

দীপনাথ একটু হাসে। পাসপোর্টের জন্য বোস সাহেবের সাহায্য তার বিশেষ দরকার নেই। তার নিজেরও চেনাজানা এতদিনে কিছু কম হয়নি। তবে সে কিছু বলল না।

বোস সাহেব গম্ভীর মুখে বলে, কাল দীপাকে খবরটা দিলাম।

কোন খবরটা?

আপনার খবর। দীপা খুব রিঅ্যাক্ট করল।

তাই নাকি?—গলাটা নিস্পৃহ রাখার চেষ্টা করে দীপনাথ।

ভীষণ। বলল, সবাই কেন আমেরিকায় যায় বলো তো!

একটু হাসে দীপনাথ। তাই তো! সবাই কেন আমেরিকায় যায়। কী আছে সেখানে?

বোস সাহেব বলে, আপনি চলে গেলে আই শ্যাল ফিল লোনলি। বাট দীপা উইল বি লোনলিয়ার।

প্রসঙ্গটা থাক বোস সাহেব।

বোস মাথা নাড়ে, না চ্যাটার্জি। কথাটা স্পষ্ট করে বলাই ভাল। আমি আপনাকে বলতে চাই, ইউ আর এ গ্রেট ম্যান। বি অলওয়েজ এ গ্রেট ম্যান।

দীপনাথ রাঙা হয়ে ওঠে। অস্ট গলায় বলতে চেষ্টা করে, আমি কেন গ্রেট হব বোস সাহেব?

রিয়েলি ইউ আর গ্রেট। বড় চাকরি অনেকেই করে, সেটা কথা নয়। আপনি একটা বড় চাকরি যে একদিন করবেন তা আমারও জানা ছিল। বাট দেয়ার ইজ সামথিং মোর ইন ইউ।

দীপনাথ মাথা নিচু করে থাকে।

বোস একতরফাই বলে, আপনি নাকি মাঝে মাঝে একটা পাহাড়ের কথা বলেন। দীপা বলছিল। আপনি বোধহয় একটা পাহাড়ে চলে যেতে চান, তাই না?

ও একটা চাইল্ডিশ ফ্যান্টাসি।

বোস মাথা নাড়ে, মে বি। মে বি নট। কে জানে? আমার তো মনে হয়, আপনি সত্যিই একদিন একটা মস্ত পাহাড়ে একা উঠে যাবেন। উই উইল রিমেন বিহাইন্ড উইথ আওয়ার লিটল পেট থিংস। আই উইশ ইউ ক্লাইম্ব দ্যাট হিল। ক্লাইম্ব ইট।

থ্যাংক ইউ।–বলে দীপনাথ উঠে পড়ে।

সকল অধ্যায়

১. ০১. পুতুলরাণী হাপিস হয়ে যাওয়াতে
২. ০২. দাওয়াতে দাঁড়িয়েই ঘটিভরা জলে
৩. ০৩. শিলিগুড়ির হোটেল সিনক্লেয়ার
৪. ০৪. এই শীতে অন্ধকার বারান্দায়
৫. ০৫. তৃষা বিছানা ছাড়ে শেষ রাতে
৬. ০৬. মালদা থেকে গভীর রাতে দার্জিলিং মেল
৭. ০৭. প্রীতমের ঘুম ভাঙে খুব ভোরবেলায়
৮. ০৮. বিয়ের পর যখন অরুণ এ বাড়িতে আসত
৯. ০৯. দীপের ঘুম ভাঙল
১০. ১০. রেসের মাঠে
১১. ১১. এখানে দু’কাঠা চার ছটাক জমি
১২. ১২. কুয়াশামাখা জ্যোৎস্নায় নদীর ধারে
১৩. ১৩. বদ্রীর ইনফ্লুয়েনজা হয়েছিল
১৪. ১৪. চাবিটার কথা
১৫. ১৫. শ্রীনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
১৬. ১৬. রবিবার দিনটা দীপনাথের নিরঙ্কুশ ছুটি
১৭. ১৭. সজল এসে প্রণাম করে
১৮. ১৮. তৃষা দীপনাথকে বসিয়ে রেখে
১৯. ১৯. তুমি বেলুন ফোলাবে
২০. ২০. হাসিমুখে, স্নিগ্ধ মনে
২১. ২১. কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে
২২. ২২. রতনপুরে পাঁচখানা নতুন সাইকেল রিকশা
২৩. ২৩. আমি যদি এই কোম্পানি ছেড়ে দিই
২৪. ২৪. পরদিন অফিসে এসেই দীপনাথ শুনল
২৫. ২৫. দীপ একটু থতমত খেয়েছিল
২৬. ২৬. গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে দীপনাথ
২৭. ২৭. বেজি জাতটা কিছুতেই পোষ মানে না
২৮. ২৮. আড়াল থেকে দেখতে পাচ্ছিল সজল
২৯. ২৯. শ্রীনাথ বাড়ির ফটক পেরিয়ে
৩০. ৩০. বোসোহেবের মুখে খুব ছেলেমানুষি হাসি
৩১. ৩১. হুইলচেয়ারে
৩২. ৩২. টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে নামবার মুখে
৩৩. ৩৩. ট্রেনের কথা একদম খেয়াল থাকে না
৩৪. ৩৪. দৈহিক দিক থেকে পঙ্গু
৩৫. ৩৫. চেম্বারে ঢুকতেই বোস সাহেব
৩৬. ৩৬. ওপরে আজকের তারিখ
৩৭. ৩৭. অন্ধকার উঠোন ভরতি জোনাকি
৩৮. ৩৮. রাতের নিস্তব্ধতায় নানা গ্রামীণ শব্দ
৩৯. ৩৯. শ্রীনাথ অবাক হয়ে বলে
৪০. ৪০. প্রীতম কখনও দুরে কোথাও যায়নি
৪১. ৪১. কলকাতায় এবার খুব বৃষ্টি হচ্ছে
৪২. ৪২. কতকাল পরে রেলগাড়ি দেখছে প্রীতম
৪৩. ৪৩. পরদিন ভাইবোনে অফিসে বেরোল
৪৪. ৪৪. বেয়ারাকে কিছু বলতে হয়নি
৪৫. ৪৫. পুরনো গোয়ালঘরটা ফাঁকা পড়ে থাকে
৪৬. ৪৬. মরা বা জ্যান্ত
৪৭. ৪৭. নিজের ঘরে দু’জনকে বসাল তৃষা
৪৮. ৪৮. এ বাড়িটা অভিশপ্ত কি না
৪৯. ৪৯. ঝোপড়ার দরজায় দীপনাথ
৫০. ৫০. কথা শুনে একটু গম্ভীর হতে গিয়ে
৫১. ৫১. প্রীতম জিজ্ঞেস করে
৫২. ৫২. দক্ষিণের খোলা বারান্দায়
৫৩. ৫৩. বিলু কোনওদিনই খুব সুন্দরী ছিল না
৫৪. ৫৪. টেলিফোন রেখে মণিদীপা
৫৫. ৫৫. সাড়ে তিন ভরি আছে
৫৬. ৫৬. তৃষা তার ঘরের উত্তরের জানালা দিয়ে দেখছিল
৫৭. ৫৭. একদিন বিকেলে দুই বুড়োর দেখা
৫৮. ৫৮. কুঠে সামন্তর বাড়িটা
৫৯. ৫৯. ফেয়ারলি প্লেসে ব্ল্যাকারদের সঙ্গে হাতাহাতি
৬০. ৬০. সাতসকালে কে যেন
৬১. ৬১. কোনও মহিলা যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চায়
৬২. ৬২. মণিদীপা অনেক পুরুষকে পার হয়ে
৬৩. ৬৩. নিজের টেবিলে এসে অপেক্ষা
৬৪. ৬৪. এই ফ্ল্যাটে ঢুকতে আজ ভারী লজ্জা আর অস্বস্তি
৬৫. ৬৫. শরীরে আবদ্ধ এই জীবন
৬৬. ৬৬. গীতা পড়তে পড়তে
৬৭. ৬৭. চিত্রার বিয়ে কেমন হল
৬৮. ৬৮. তৃষা যখন তার জন্য চা করতে গেল
৬৯. ৬৯. দীপনাথ কিছুক্ষণ হাঁ করে থেকে
৭০. ৭০. অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল বিকেলে
৭১. ৭১. বহুদিন বাদে ছবির কাছে
৭২. ৭২. প্রীতম নিজে থেকেই মাস দুই আগে
৭৩. ৭৩. এক-একটা সর্বনাশের সময় আসে
৭৪. ৭৪. প্রীতমের বাবা-মা আরও বুড়ো
৭৫. ৭৫. আকাশে অনেক ওপরে
৭৬. ৭৬. অন্ধকারে জল ভেঙে
৭৭. ৭৭. মালটিন্যাশনাল কোম্পানির যত দোষ
৭৮. ৭৮. সানফ্লাওয়ারের শীততাপনিয়ন্ত্রিত বিশাল রিসেপশন
৭৯. ৭৯. শমিতা চিৎকার করেই অজ্ঞান
৮০. ৮০. ঘুম থেকে উঠে বিলুর হাতে
৮১. ৮১. পৃথিবীর রং অনেকটাই পালটে গেছে
৮২. ৮২. কী খাচ্ছে, রান্না কেমন হয়েছে
৮৩. ৮৩. সুখেনের সঙ্গে সন্ধেটা কাটল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন