৪৩. পরদিন ভাইবোনে অফিসে বেরোল

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

পরদিন ভাইবোনে অফিসে বেরোল একসঙ্গে। ভিড়ের বাসে রড ধরে দাঁড়িয়ে তোতির মধ্যেও দীপনাথ লেডিজ সিটে বসা বিলুকে লক্ষ করে। আজ সকালে বিলুর মুখে একটু বিষণ্ণতা এসেছে, একটু অন্যমনস্কতা। দুইয়ে মিলে ওর কাঠ কাঠ মুখটাকে কোমল লাবণ্যে মেখেছে বুঝি। চোখদুটো ভার ভার। রাতে হয়তো কেঁদেছে।

খুব ভাল, খুব ভাল।–মনে মনে বলে দীপনাথ।

বিলুকে ব্যাংকে পৌঁছে দিয়ে সে অফিসে যায়। মনটা আজ খুব গভীর এবং স্থির। দুঃখ নেই, আনন্দও নেই। তবু কী একটা গভীরতর ভাব থানা গেড়ে আছে।

অনেকক্ষণ সে কাজে মন দিতে পারল না। টেবিলে বসে রইল চুপচাপ। বোস সাহেব একটা ঘোট কাজে দিল্লি গেছেন। কার্যত এখন অফিস চালাতে হচ্ছে দীপনাথকে। অফিসকে অবশ্য চালানোর কিছু নেই। আপনি চলে। কিন্তু বিস্তর কাজ জমে আছে।

মনটাকে জড়ো করতে সময় লাগল একটু। দুপুর পর্যন্ত একটানা কাজ করে গেল সে।

লাঞ্চে ফোন এল।

দীপনাথবাবু!-মণিদীপার গলা।

বলছি। কী খবর? সেদিন শেষ পর্যন্ত কীভাবে বাড়ি ফিরলেন?

থাক। জানতে যে চাইলেন সেটাই ভাগ্যি।

দীপনাথ হাসল। বলল, সেদিন কিছু করার ছিল না।

জানি। কিন্তু তা বলে একটু সিমপ্যাথিও দেখাতে নেই?

কেন? দেখাইনি?

আমি অবশ্য সিমপ্যাথির কাঙাল নই।

সেটা আর বলতে হবে না। হাড়ে হাড়ে জানি।

শুনুন, আমি একটু মুশকিলে পড়েছি।

কী মুশকিল?

হাতে টাকা নেই। মিস্টার বোসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যে এত ফাঁকা তা জানতাম না।

কত টাকা?

পাঁচশো হলেই চলবে। অ্যারেঞ্জ করা যাবে অফিস থেকে?

দীপনাথ বলল, আপনি কিছু ভাববেন না। ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনার কবে দরকার?

আজই। এক্ষুনি।

এক্ষুনি কী করে হবে? আমি বরং বিকেলে–

না, অত দেরি করা অসম্ভব। আমি এসপ্ল্যানেড থেকে ফোন করছি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমি। আপনাদের অফিসে যাচ্ছি।

ঠিক আছে। আসুন।

কেমন আছেন? ভাল?

আপনি কেমন?

চমৎকার। ফ্রি লাইক এ বাটারফ্লাই।

ফ্রিডম ফ্রম হোয়াট?

এভরিথিং। হাজব্যান্ড হাউজহোল্ড অ্যান্ড হেডেক।

অনেকটা আমার মতোই, তাই না?

তার মানে?

আমি যেমন ফ্রি ফ্রম ওয়াইফ ওয়েলথ অ্যান্ড ওরিজ।

এটাও কি রং নাম্বার?

কেন বলুন তো!

আমি দীপনাথ চ্যাটার্জির সঙ্গে কথা বলছি, না অন্য কারও সঙ্গে?

নম্বর ঠিকই আছে।

আপনি এত স্মার্ট হলেন কবে থেকে? খুব বোল ফুটছে দেখছি। দিব্যি তো সরল সোজা পেঁয়ো লোকটি ছিলেন। বোল ফোটাচ্ছে কে?

কেউ হবে।—দীপনাথ হাসছিল না। ভ্রু কোঁচকানো। চিন্তিত মুখ। একটু সময়ের ফাঁক দিয়ে বলল, বোস সাহেবের সঙ্গে আপনার একটা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ছিল না?

হ্যাঁ। একমাত্র সেটাই আমার অ্যাকসেসিবল অ্যাকাউন্ট।

আপনার নিজের অ্যাকাউন্টও তো আছে!

আছে। কিন্তু তাতে বহুকাল টাকা নেই।

বোস সাহেবের বেতন, যতদূর জানি, জয়েন্ট অ্যাকাউন্টেই জমা হয়।

মণিদীপা একটু চুপ করে থাকে। তারপর একটু ঝাঁঝালো গলায় বলে, জেরা করার মানে কী?

জেরা নয় মিসেস বোস। কেবল সেফ-সাইডে থাকা। বোস সাহেব ফিরে এলে হয়তো কৈফিয়তটা আমাকেই দিতে হবে।

আমার কথা বলবেন। কৈফিয়ত যেন আমার কাছেই চায়।

রাগ করলেন? আসলে টাকা-পয়সার ব্যাপারটাই এত বিচ্ছিরি যে, এই একটা ব্যাপারে কিছুতেই আব্রু রাখা চলে না।

আপনি আজকাল খুব প্র্যাকটিক্যাল হয়েছেন। এত প্র্যাকটিক্যাল যে আমার আবার মনে হচ্ছে এটা রং নাম্বার।

একদিক দিয়ে বিচার করলে এটা তো রং নাম্বারই, মিসেস বোস।

তার মানে?

সেদিন বৃষ্টিতে বাগবাজারে আটকে পড়ে আপনার ফোন করা উচিত ছিল মিস্টার বোসকে। আপনি তা না করে একটা রং নাম্বারে ডায়াল করেছিলেন। মনে আছে?

মণিদীপা একটু সময় নেয়। এত সময় নেয় যে, দীপনাথের একবার সন্দেহ হয় লাইনটা কেটে গেছে। মণিদীপা অবশ্য লাইন ছাড়েনি। খানিক বাদে একটু গম্ভীর গলায় বলে, আপনি মাইন্ড করবেন জানলে আপনাকে ফোন করতাম না।

মাইন্ড করিনি। বরং আনন্দে শিহরিত হয়েছিলাম। তবু সেটা কিন্তু রং নাম্বার।

আমি রং নাম্বার বলে ভাবি না। ভাবলে এত সহজে আপনার কাছে আজ টাকার কথা বলতে পারতাম না।

একটা কপট শ্বাস ছেড়ে দীপনাথ বলল, আমার মেজোবউদি ঠিকই বলে।

কী বলে?

সে আপনাকে বলা যাবে না।

মেজোবউদি মানে রতনপুরের সেই বউদি?

হ্যাঁ। এই সেদিনও মেজোবউদি বলছিল—

থামলেন কেন?

থামাই ভাল। সে বলা যায় না।

তবু শুনি!

কী শুনবেন? শোনার মতো নয়। টাকাটা রেডি রাখছি, এলেই পেয়ে যাবেন।

শুনুন। টাকাটা যখন পাওয়া যাচ্ছেই তখন মেক ইট এ থাউজ্যান্ড।

আপনার সঙ্গে ফোনে বেশিক্ষণ কথা বলা দেখছি বিপজ্জনক।

কেন?

আর পাঁচ মিনিট পরে তো আরও পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে দেবেন।

খুব অসুবিধে হবে নাকি?—গলাটা একটু করুণ শোনায় মণিদীপার। বলে, বোস কবে ফিরবে কিছুই বলে যায়নি। অথচ আমাকে তো এস্টাব্লিশমেন্টটা চালাতে হবে!

এস্টাব্লিশমেন্ট যে মণিদীপা চালায় না তা দীপনাথ ভালই জানে। তবুবুঝদারের মতো ভালমানুষি গলায় বলল, অলরাইট। ইট উইল বি এ থাউজ্যান্ড।

ছাড়ছি তা হলে?

ঠিক আছে।

ফোন রেখে দীপনাথ ওঠে। বুড়ো অ্যাকাউন্ট্যান্ট অবনীবাবুর টেবিলে গিয়ে বোস সাহেবের পে-অর্ডারগুলো উলটে-পালটে দেখে। পৃথিবীতে উচ্চতম হারে ট্যাক্স কেটে নেওয়া হয় একমাত্র ভারতবর্ষেই। তা ছাড়া অফিস থেকে বোস সাহেবের প্রচুর টাকা অ্যাডভান্স নেওয়া আছে। সেইসব বকেয়া কর এবং অ্যাডভান্স কেটে নেওয়ার পরও বোস সাহেবের অ্যাকাউন্টে বড় কম জমা হয় না। তবু নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে টেবিলে ফিরে এসে বোস সাহেবের ব্যক্তিগত আয়করের রিটার্ন যে জমা দেয় সেই মিত্রকে ফোন করল। আর-একটু কুঁচকে গেল তার।

খুব কম করেও জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে হাজার দশেক টাকা থাকার কথা। মাস এখনও শেষ হয়নি। দীপনাথ ক্ষান্ত হল না। ফোন করল ব্যাংকে। দীপনাথের খুবই পরিচিত ব্যাংক। বোস সাহেবের হরেক চেক বহুবার জমা দিতে এসেছে। কাজেই সে অনায়াসে জেনে নিতে পারল, বোস সাহেব দিল্লি যাওয়ার পর মণিদীপা কম করেও তিন হাজার টাকা তুলেছে। মাত্র দু-তিন দিনে। এবং আজই আবার টাকা চাইছে?

দীপনাথ সমস্যাটা সরিয়ে রেখে অফিসের কাজ টেনে বসল। বোস সাহেবের অনুপস্থিতিতে কার্যত সে-ই কর্তা।

কাজ করতে করতে হুঁশ ছিল না দীপনাথের। হঠাৎ হাতঘড়ি দেখে অবাক হল। বেলা পৌনে পাঁচটা। মণিদীপা এখনও আসেনি। অ্যাকাউন্ট্যান্টকে বলে টাকার ব্যবস্থা করে রেখেছে দীপনাথ। সাড়ে পাঁচটায় অফিস ছুটি।

ক্যাশিয়ারকে ডেকে ভাউচারে সই করে টাকাটা নিজের টেবিলের টানায় রেখে চাবি দিল দীপনাথ। আগে তার এত ক্ষমতা ছিল না, এত স্বাধীনতাও নয়। আজকাল সে নিজের নামে অনেক টাকা অফিস থেকে নিতে পারে। মাইনের সঙ্গে হিসেব করে কেটে নেবে।

মণিদীপার কথা কয়েক মিনিট ভাবল দীপনাথ। তারপর আবার কাজ টেনে বসল।

অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ারও প্রায় পনেরো মিনিট বাদে বেয়ারা এসে বলল, মেমসাহেব এসেছেন।

কোথায়?

করিডোরে।

ভিতরে নিয়ে এস।

পৌনে ছটা ছাড়িয়ে ছ’টার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঘড়ির কাঁটা। দীপনাথ টেবিলের কাগুজে জঞ্জাল সরিয়ে দরজার দিকে চেয়ে অপেক্ষা করছিল। বুক কাঁপছে, গলা শুকোচ্ছে।

খুব ছাপছক্করওলা রাজস্থানি ঘাঘরা আর কামিজে রঙের একটা ঘূর্ণি তুলে মণিদীপা শূন্য অফিসঘরটায় ঢোকে। চারদিকে মরা টেবিল, প্রাণহীন ক্যাবিনেট, বিশুষ্ক কাগজের ক্রুপের ভিতর বসন্তের হাওয়া এল। সঙ্গে সুগন্ধ।

আমার জন্যই বসে আছেন? না কি কাজ ছিল?

কাজ ছিল।

যাক তা হলে বসিয়ে রাখিনি। রাখলে তো দোষ ধরতেন।

ধরতাম। কিন্তু তার চেয়েও খারাপ হত, আমি চলে গেলে আপনি টাকাটা আজ আর পেতেন না।

পেতাম।

কী করে?

আপনি পৌঁছে দিতেন।

তাই নাকি? কী করে বুঝলেন?

আই নো ইউ। ইউ আর ফেথফুল লাইক এ—

ডগ?–বলে হাসে দীপনাথ।

কুটি করে মণিদীপা বলে, তাই বলছি?

বললেও দোষ হত না। কুকুরের কিছু গুণ পেলে মানুষও বর্তে যেত।

এখনও বসতে বলেননি। বসুন।

মণিদীপা বসে। চোখেমুখে সামান্য টেনশন। চনমন করছে। রোজ যেমন দেখায় তেমনি ভাল দেখাচ্ছে তাকে। মুখে খুব একটা রং মাখেনি। স্নিগ্ধ কোমল মুখশ্রী। একটু গম্ভীর, একটু করুণ।

চা খাবেন? সামনেই একটা ভাল দোকান আছে। বেয়ারা এনে দেবে।

আমার চায়ের নেশা নেই।

তা হলে কী দিয়ে আপ্যায়ন করি আপনাকে?

আপ্যায়ন-টন এখন থাক। আপনি এখন এই অফিসের একজন বস, তাই না?

ছোট মাপের।

বস হতে কেমন লাগে?

মন্দ না।

মণিদীপা সুযোগ পেয়েও কোনও চিমটি কাটল না। এমনকী সেই বিষ-হাসিটাও হাসল না। বলতে পারত, একজন বিপ্লবীর মৃত্যু ঘটেছে। জন্ম নিয়েছে একজন শশাষণকারী বা ওই গোছের কিছু।

আপনাকে একটু ডিসটার্বড দেখাচ্ছে।

মণিদীপা চোখ না তুলে বলল, না তো। আপনার বউদি কী বলেছে, এবার বলুন।

বউদি!–বলে একটু অবাক হয় দীপনাথ, বউদি কী বলবে?

ওই যে তখন ফোনে বললেন, বউদি ঠিকই বলে!

বলেছি? ও হ্যাঁ। কিন্তু সে তো বলা যাবে না।

কেন বলা যাবে না?

কথাটা টপ সিক্রেট।

আমি শুনতে চাই।

কেন শুনতে চান?

নাই যদি বলবেন তবে বউদির রেফারেন্স দিলেন কেন?

সাধারণ মেয়েদের গোপন কথা শোনার অনভিপ্রেত কৌতূহল থাকে। কিন্তু আপনি তো সাধারণ

নন।

মণিদীপা একটা কাচের পেপারওয়েট গ্লাসটপ টেবিলের ওপর কাত করে গড়িয়ে দেয়। ধরে। আবার গড়িয়ে দিয়ে একটু খেলা করে। গোমড়া মুখে বলে, কারও আড়ালে তাকে নিয়ে আলোচনা করাটাও তো উচিত নয়।

যারা আলোচনার যোগ্য তাদের নিয়েই আলোচনা হয়। সাধারণ মানুষকে নিয়ে কে আলোচনা করে বলুন!

উঃ। বলুন না বউদি কী বলেছেন।

দীপনাথ টেবিলের ড্রয়ার খুলে টাকাটা একটা লম্বা খামে ভরে এগিয়ে দেয়। বলে, নিন।

নেব না। আগে বলুন।

দীপনাথ মৃদু হেসে বলে, বউদি বলেছে, তোমার বসের বউয়ের মাথায় একটু ছিট আছে, ঠাকুরপো।

মোটেই না। আপনার বউদি আপনাকে ঠাকুরপো বলে ডাকেন না, নাম ধরে ডাকেন।

এতও মনে রেখেছেন।

মেয়েরা রাখে।

আপনি কি মেয়ে?

তবে কী?

না, না, ঠিক তা বলিনি।–দীপনাথ হেসে ফেলে বলে, আমি বলছিলাম, আপনি তো সাধারণ মেয়ে নন। ওসব খুঁটিনাটি লক্ষ করে অতি সাধারণ মেয়েরা, যাদের আই কিউ ভীষণ লো।

বারবার আমাকে অসাধারণ বলছেন কেন? আমি কিছু অসাধারণ নই।

আপনি মনে-প্রাণে প্রোলেতারিয়েত তা জানি। কিন্তু ঈশ্বর তো সবাইকে সমান গুণ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাননি। ওরকম অ্যান্টিকমিউনিস্ট দুনিয়ায় দুটো হয় না। আর বোধ হয় তাই কমিউনিস্টরাও অ্যান্টিগড।

কমিউনিস্টরা অ্যান্টিগড নয়। অ্যান্টিগড হচ্ছে ডেভিল। আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাসই করি না, তাই তার অ্যান্টিও হতে পারি না। ঈশ্বরের বিরুদ্ধতা করতে গেলেও তার অস্তিত্ব মানতে হয়।

ঠিক আছে, ঠিক আছে। বুঝেছি। দীপনাথ হাত তুলে বলে, কিন্তু এটা তো মানবেন দুনিয়ার সবাই সমান নয়। সাধারণ আছে, অসাধারণ আছে।

মানি। কমিউনিস্টরা তো গাধা নয়।

আমি সেইটিই বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম আপনাকে।

ঠিক করে বলুন তো, বউদি কী বলেছেন!

আমার বউদি অতি সাধারণ। তিনি তার মতো করে বলেছেন, ওসব আপনার শুনে কাজ নেই।

মণিদীপা মাথা নেড়ে বলে, আপনার বউদি খুব কমন মহিলা নন। শি নোজ হোয়াট ইজ হোয়াট।

দীপনাথ বিজ্ঞের মতো হেসে বলে, তা হলে বলছেন বউদি যা বলেছে তা সত্যি?

না জেনে বলি কী করে?

অ্যাসাম্পশন থেকে! বউদি নোজ হোয়াট ইজ হোয়াট!

মণিদীপা ঠোঁট কামড়ে একটু ভেবে বলো, মে বি। আগে তো শুনি।

টাকাটা নিন।

আগে বলুন।

বড় জ্বালাচ্ছেন তো! বউদি কিছু বলেনি। আমি আপনাকে টিজ করছিলাম।

মণিদীপা গাঢ় তীক্ষ্ণ চোখে দীপনাথের দিকে সরাসরি চেয়ে থাকে একটুক্ষণ। তারপর ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে এক প্যাকেট দামি বিদেশি সিগারেট আর একটা লাইটার বের করে। সিগারেট ধরিয়ে রাজস্থানি পোশাকের কোমরে একটা ডোরে বাঁধা দুটো চাকতি আয়নার একটা তুলে নিজের মুখটা মন দিয়ে দেখে।

দীপনাথ সামান্য অবাক হয়। মণিদীপাকে সে সিগারেট খেতে আগে দেখেনি। কী বলবে তা ভেবে না পেয়ে একটু চুপ করে থাকে সে। তারপর বলে, এটা কবে থেকে ধরলেন?

অবান্তর প্রশ্ন।

মেয়েদের সিগারেট খেতে দেখলে আমার রিঅ্যাকশন হয়।

আমি মদও খাই।

ভাল করেন না।

বেশ করি।

বউদি ঠিক বলে।

মণিদীপ জ্বালাতন হয়ে চোখ ছোট করে তাকিয়ে থাকে একটুক্ষণ। তারপর বলে, ইয়ারকি হচ্ছে? আজ আমার কিন্তু ইয়ারকির মুড নেই।

বসের বউ ইয়ারকির পাত্রী নয়। ইয়ারকি করছি না।

আমি কারও বউ-টউ নই। বউদি কী বলেন?

বউদি বলেন—

বলে দীপনাথ একটু থামে। তারপর আচমকা বলে, বলব। ঠিকই বলব। তার আগে সিগারেটটা ফেলে দিন।

মণিদীপা প্রায় আস্ত সিগারেটটা মেঝেয় ফেলে স্যান্ডালে পিষে দিল। যেন সিগারেটটা ফেলে দেওয়ার একটা ছুতো সে নিজেও খুঁজছিল।

এবারে বলুন।

বলছি, বলছি। আর-একটা কথা।

কী?

প্রমিস করতে হবে, মদও খাবেন না।

মণিদীপা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে, আমাকে কী পেয়েছেন বলুন তো! অ্যানাদার স্লেভ লাইক ইউ?

ভালবাসা জিনিসটা তো স্লেভারি। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে, আপনি আমার না হলেও নিশ্চয়ই আর-কারও স্লেভ।

অনেক জানেন তো! বলুন তবে কার?

ধরুন স্নিগ্ধদেব!

স্নিগ্ধদেবের কথায় হঠাৎ মণিদীপা নাক কোঁচকায়। তারপর কয়েকটা ঘন শ্বাস ছেড়ে বলে, স্নিগ্ধর কথা আমি ভুলে যেতে চাই। ও নামটা আর আমার সামনে প্লিজ উচ্চারণ করবেন না।

বিস্মিত দীপনাথ বলে, সে কী? স্নিগ্ধদেব কী করলেন হঠাৎ?

হি ইজ নাউ এ ফলেন গাই।

তার মানে?

বিশ্বাস করবেন? স্নিগ্ধদেব আমেরিকায় যাচ্ছে!

দীপনাথ ব্যাপারটা ধরতে পারল না। বলল, তাতে কী?

তাতে কিছুনয় বুঝি? আমেরিকান গভর্নমেন্টের টাকায় তাদের স্কলারশিপ নিয়ে ও চলে যাচ্ছে। মুখে বলছে, ওখানে গিয়ে মার্কিন ট্রেড ইউনিয়ন মুভমেন্ট নিয়ে রিসার্চ করবে। কিন্তু আমি জানি, তা নয়।

আপনি কী জানেন?

আমি জানি, হি হ্যাজ অ্যাবানডনড দি রিভলিউশন। ও যাচ্ছে সুখে থাকবে বলে।

কী করে বুঝলেন?

স্নিগ্ধদেবকে আমি যত গভীরভাবে বুঝি আর-কেউ তা বোঝে না। হি হ্যাজ এ চামিং পার্সোনালিটি। সবাইকে হিপনোটাইজ করে রাখতে পারে। এ বর্ন-লিডার। আমেরিকান এজেন্টরা ওকে সেই কারণেই পিকআপ করেছে।

সি আই এ?

মে বি। কিন্তু ও এখন সম্পূর্ণ ওদের ট্র্যাপে।

বুদ্ধিমান লোকেরা সহজে ট্র্যাপে পড়ে না মিসেস বোস।

আমি ইডিয়ট নই। জানি, স্নিগ্ধকে কেউ ট্র্যাপে ফেলেনি। বরং ও নিজেই একটা সোনার খাঁচা খুঁজছিল। পেয়ে গেছে।

তা হলে আমাদের কী হবে, মিসেস বোস?

তার মানে?

দীপনাথ হতাশার গলায় বলল, আপনার কাছে শুনে শুনে আমিও যে মনে মনে স্নিগ্ধদেবকে আমার লিডার বানিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই দুর্ভাগা দেশে একদিন লেনিন, মাও বা হো চি মিনের মতোই স্নিগ্ধদেব উঠে দাঁড়াবেন।

আবার ইয়ারকি?

বলে মণিদীপা দীপনাথের দিকে চেয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারল হয়তো। দীপনাথ ইয়ারকি করছে না। তার মুখে সত্যিকারের এক গভীর হতাশার কালিমা মাখানো। মণিদীপা ঝুঁকে বসে ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞেস করে, আপনার কী হল বলুন তো হঠাৎ? আর ইউ সিরিয়াস!

দীপনাথ খানিকক্ষণ শুন্যচোখে মণিদীপার দিকে চেয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বলে, অতটা না হলেও স্নিগ্ধদেব যে একজন মহৎ মানুষ ছিলেন তা আপনার ডিভোশন দেখেই মনে হয়েছিল। ওঁর যদি পতন হয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের সকলের কাছেই দুঃখের ব্যাপার। বিশেষত আপনার কিছুই রইল না।

আমার কেন কিছুই থাকবে না! স্নিগ্ধ আমার কে?

হয়তো লিডার। হয়তো লিডারের চেয়েও বেশি কিছু। অন্তত ওই একটা জায়গায় আপনার ডিভোশনের কোনও খাঁকতি ছিল না।

ঠোঁট উলটে মণিদীপা বলল, আমরা ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাসী নই। এক স্নিগ্ধ মার্কিনদের দালাল হয়ে গেল তো কী! আরও হাজার স্নিগ্ধদেব আসবে।

মাথা নেড়ে দীপনাথ বলে, অত সোজা নয়। আপনিও সেটা জানেন।

বলেছি তো আমি ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাসী নই। ব্যক্তিগত মেধা বা ব্যক্তিত্বেরও কোনও মূল্য নেই যদি তা বিপ্লবের কাজে না লাগে। স্নিগ্ধদেব এখন আমার কাছে নন-এনটিটি।

উনি কবে রওনা হচ্ছেন?

আসছে সপ্তাহে।

ওঁর সঙ্গে একবার দেখা হতে পারে?

কী জানি! শুনেছি দিল্লি গেছে। সেখান থেকে ফিরে এসেই বউ-বাচ্চা নিয়ে পোঁটলা-পুঁটলি বেঁধে রওনা হবে।

স্নিগ্ধদেব কি ইদানীং আপনার কাছে টাকা চাইতেন?

একটু অবাক হয়ে মণিদীপা বলে, চাইত। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?

এমনি কৌতূহল।

মণিদীপা গম্ভীর হয়ে টেবিলের কাচে আঙুল দিয়ে নকশা আঁকার চেষ্টা করতে করতে বলে, চাইত অবশ্য ধার হিসেবে। ওর কিছু গরম জামাকাপড় দরকার বিদেশে যাওয়ার জন্য।

পার্টি-ফান্ডেও আপনার কিছু কনট্রিবিউশন আছে বোধ হয়?

হঠাৎ এ সব কথা কেন?

এমনি, মিসেস বোস।

আপনার কৌতূহল ঠিক মেয়েদের মতোই।

তা হবে। ইচ্ছে না হলে জবাব দেবেন না।

এ সব প্রসঙ্গ ভাল লাগে না। আই হেট টু টক অ্যাবাউট মানি। টাকা শুধু আমার কিছু পারপাস সারভ করবে, তা বলে আমার ইনটেলেক্টকে দখল করবে না!

তা ঠিক।

এবার বলুন বউদি কী বলেছেন?

বউদি বলেছে, আপনি একজন চমৎকার মানুষ।

মিথ্যে কথা।

বউদি বলেছে, আপনি তোক তত ভাল নন।

এটাও বাজে কথা।

দীপনাথ মুখ বিকৃত করে বলে, তা হলে একদিন বউদিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়!

কবে নিয়ে যাবেন বলুন? আমি এক্ষুনিই যেতে রাজি।–বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়েছিল মণিদীপা।

দীপনাথ অবাক হয়ে বলে, এক্ষুনি যাবেন? পাগল নাকি!

মণিদীপা আবার বসে পড়ে। হতাশার গলায় বলে, কলকাতায় এখন একা আমার অসহ্য লাগছে। ইট বার্নস। বিশেষত আফটার স্নিগ্ধ’জ বিট্রেয়াল।

আমেরিকায় গেলেই কি বিপ্লবী মরে যায়? বরং তার বেস অনেক ব্ৰড হয়।

কিন্তু স্নিগ্ধ সেভাবে যাচ্ছে না। হি হ্যাজ সোলড হিমসেলফ, আই নো। স্নিগ্ধর অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার ছিল অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট। ইচ্ছে করলে ও এমনিতেও সুখে জীবন কাটাতে পারত।

দীপনাথ একটা সত্যিকারের দুঃখের দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারও কি মনে মনে আশা ছিল না, স্নিগ্ধদেবই একদিন সাধারণের অরণ্য থেকে মহীরূহের মতো মাথা তুলবে! সে বলল, আমরা আর-একজন স্নিগ্ধদেবকে বানিয়ে নেব মিসেস বোস। ভাববেন না।

মণিদীপা মাথা নত রেখেই বলল, সেটা আমি জানি।

তা হলে জ্বলছেন কেন?

মানুষ বিট্রে করলে রাগ হবে না?–বলে হঠাৎ একটু হেসে মণিদীপা বলে, আপনি এরকম অদ্ভুত লোক কেন বলুন তো!

কেন? কী করলাম?

আমার মুখে শুনে আপনি স্নিগ্ধকে আপনার লিডার বানিয়েছিলেন? সত্যি?

ভীষণ সত্যি।

যাঃ। প্লিজ আপনি আর কখনও ওরকম করবেন না।

কেন?

আপনাকে মানায় না। একটু মাথা উঁচু করে থাকতে শিখুন তো! যাকে-তাকে নেতা বানাবেন কেন?

স্নিগ্ধদেব কি যে-সে?

একদম যে-সে। আপনি আপনার মতো থাকবেন।

কেন? স্নিগ্ধকে নেতা বলে মানলে কি আমি ছোট হয়ে যাব মিসেস বোস?

হ্যাঁ, যাবেন।

আমি তো এমনিতেই ছোট। স্লেভ।

মোটেই না।

আপনিই তো বলতেন।

ঠাট্টা করতাম। আই নো ইউ টু বি এ ভেরি গুড ম্যান। বোস সাহেবকে আপনি ছাড়েননি কেবল মায়া করে।

এটা কি কমপ্লিমেন্ট?

তাই মনে করুন। বউদির কাছে কবে নিয়ে যাবেন?

বোস সাহেব আসুন, তারপর।

কেন?

ভারচুয়ালি আমিই এখন অফিস চালাচ্ছি। তা ছাড়া বোস সাহেবের অনুমতি না নিয়ে তার বউকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেলে লোকে কী বলবে?

আর-একদিনও তো নিয়ে গিয়েছিলেন। অনুমতি নিয়েছিলেন কি?

তখন ছিল অন্য রকম।–দীপনাথ হাসিমুখে বলে।

সকল অধ্যায়

১. ০১. পুতুলরাণী হাপিস হয়ে যাওয়াতে
২. ০২. দাওয়াতে দাঁড়িয়েই ঘটিভরা জলে
৩. ০৩. শিলিগুড়ির হোটেল সিনক্লেয়ার
৪. ০৪. এই শীতে অন্ধকার বারান্দায়
৫. ০৫. তৃষা বিছানা ছাড়ে শেষ রাতে
৬. ০৬. মালদা থেকে গভীর রাতে দার্জিলিং মেল
৭. ০৭. প্রীতমের ঘুম ভাঙে খুব ভোরবেলায়
৮. ০৮. বিয়ের পর যখন অরুণ এ বাড়িতে আসত
৯. ০৯. দীপের ঘুম ভাঙল
১০. ১০. রেসের মাঠে
১১. ১১. এখানে দু’কাঠা চার ছটাক জমি
১২. ১২. কুয়াশামাখা জ্যোৎস্নায় নদীর ধারে
১৩. ১৩. বদ্রীর ইনফ্লুয়েনজা হয়েছিল
১৪. ১৪. চাবিটার কথা
১৫. ১৫. শ্রীনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
১৬. ১৬. রবিবার দিনটা দীপনাথের নিরঙ্কুশ ছুটি
১৭. ১৭. সজল এসে প্রণাম করে
১৮. ১৮. তৃষা দীপনাথকে বসিয়ে রেখে
১৯. ১৯. তুমি বেলুন ফোলাবে
২০. ২০. হাসিমুখে, স্নিগ্ধ মনে
২১. ২১. কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে
২২. ২২. রতনপুরে পাঁচখানা নতুন সাইকেল রিকশা
২৩. ২৩. আমি যদি এই কোম্পানি ছেড়ে দিই
২৪. ২৪. পরদিন অফিসে এসেই দীপনাথ শুনল
২৫. ২৫. দীপ একটু থতমত খেয়েছিল
২৬. ২৬. গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে দীপনাথ
২৭. ২৭. বেজি জাতটা কিছুতেই পোষ মানে না
২৮. ২৮. আড়াল থেকে দেখতে পাচ্ছিল সজল
২৯. ২৯. শ্রীনাথ বাড়ির ফটক পেরিয়ে
৩০. ৩০. বোসোহেবের মুখে খুব ছেলেমানুষি হাসি
৩১. ৩১. হুইলচেয়ারে
৩২. ৩২. টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে নামবার মুখে
৩৩. ৩৩. ট্রেনের কথা একদম খেয়াল থাকে না
৩৪. ৩৪. দৈহিক দিক থেকে পঙ্গু
৩৫. ৩৫. চেম্বারে ঢুকতেই বোস সাহেব
৩৬. ৩৬. ওপরে আজকের তারিখ
৩৭. ৩৭. অন্ধকার উঠোন ভরতি জোনাকি
৩৮. ৩৮. রাতের নিস্তব্ধতায় নানা গ্রামীণ শব্দ
৩৯. ৩৯. শ্রীনাথ অবাক হয়ে বলে
৪০. ৪০. প্রীতম কখনও দুরে কোথাও যায়নি
৪১. ৪১. কলকাতায় এবার খুব বৃষ্টি হচ্ছে
৪২. ৪২. কতকাল পরে রেলগাড়ি দেখছে প্রীতম
৪৩. ৪৩. পরদিন ভাইবোনে অফিসে বেরোল
৪৪. ৪৪. বেয়ারাকে কিছু বলতে হয়নি
৪৫. ৪৫. পুরনো গোয়ালঘরটা ফাঁকা পড়ে থাকে
৪৬. ৪৬. মরা বা জ্যান্ত
৪৭. ৪৭. নিজের ঘরে দু’জনকে বসাল তৃষা
৪৮. ৪৮. এ বাড়িটা অভিশপ্ত কি না
৪৯. ৪৯. ঝোপড়ার দরজায় দীপনাথ
৫০. ৫০. কথা শুনে একটু গম্ভীর হতে গিয়ে
৫১. ৫১. প্রীতম জিজ্ঞেস করে
৫২. ৫২. দক্ষিণের খোলা বারান্দায়
৫৩. ৫৩. বিলু কোনওদিনই খুব সুন্দরী ছিল না
৫৪. ৫৪. টেলিফোন রেখে মণিদীপা
৫৫. ৫৫. সাড়ে তিন ভরি আছে
৫৬. ৫৬. তৃষা তার ঘরের উত্তরের জানালা দিয়ে দেখছিল
৫৭. ৫৭. একদিন বিকেলে দুই বুড়োর দেখা
৫৮. ৫৮. কুঠে সামন্তর বাড়িটা
৫৯. ৫৯. ফেয়ারলি প্লেসে ব্ল্যাকারদের সঙ্গে হাতাহাতি
৬০. ৬০. সাতসকালে কে যেন
৬১. ৬১. কোনও মহিলা যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চায়
৬২. ৬২. মণিদীপা অনেক পুরুষকে পার হয়ে
৬৩. ৬৩. নিজের টেবিলে এসে অপেক্ষা
৬৪. ৬৪. এই ফ্ল্যাটে ঢুকতে আজ ভারী লজ্জা আর অস্বস্তি
৬৫. ৬৫. শরীরে আবদ্ধ এই জীবন
৬৬. ৬৬. গীতা পড়তে পড়তে
৬৭. ৬৭. চিত্রার বিয়ে কেমন হল
৬৮. ৬৮. তৃষা যখন তার জন্য চা করতে গেল
৬৯. ৬৯. দীপনাথ কিছুক্ষণ হাঁ করে থেকে
৭০. ৭০. অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল বিকেলে
৭১. ৭১. বহুদিন বাদে ছবির কাছে
৭২. ৭২. প্রীতম নিজে থেকেই মাস দুই আগে
৭৩. ৭৩. এক-একটা সর্বনাশের সময় আসে
৭৪. ৭৪. প্রীতমের বাবা-মা আরও বুড়ো
৭৫. ৭৫. আকাশে অনেক ওপরে
৭৬. ৭৬. অন্ধকারে জল ভেঙে
৭৭. ৭৭. মালটিন্যাশনাল কোম্পানির যত দোষ
৭৮. ৭৮. সানফ্লাওয়ারের শীততাপনিয়ন্ত্রিত বিশাল রিসেপশন
৭৯. ৭৯. শমিতা চিৎকার করেই অজ্ঞান
৮০. ৮০. ঘুম থেকে উঠে বিলুর হাতে
৮১. ৮১. পৃথিবীর রং অনেকটাই পালটে গেছে
৮২. ৮২. কী খাচ্ছে, রান্না কেমন হয়েছে
৮৩. ৮৩. সুখেনের সঙ্গে সন্ধেটা কাটল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন