২৬. গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে দীপনাথ

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

এই এখন নিজের মনের ভিতরে একটা গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে দীপনাথ। কিছুতেই উঠতে পারছে। অনেক চোড়-পাঁচোড় করে যাচ্ছে। কিন্তু মনটা একবার হেঁচড়ে গেলে খুব সহজে তাকে আবার দু’পায়ে দাঁড় করানো যায় না। এই পৃথিবীতে সে কি সবচেয়ে বোকাদের দলে? যদি বা সে বোকাই, তবে কেন মণিদীপার মতো অমন চনমনে চালাক তুখোড় এক মহিলার সঙ্গে তার একটা হোক-না-হোক সম্পর্ক হল?

এক সময়ে বকুলের প্রেমে পড়েছিল দীপনাথ। কলকাতার জল বছরখানেক পেটে যেতে না যেতেই কৌটোর কারখানায় সব রস নিংড়ে নিল। তখন নারীদেহ মনে পড়লেও নারীপ্রেম কথাটা ভসকা লাগত। এই কিছুদিন আগেও তার নারীপ্রেম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা আসত না। এখনও কি আসে? বলা যায় না ঠিক। তবে মণিদীপা যখন এসেছে, তখন ওগুলো আসতেই বা বাধা কী? ব্যাপারটা কতদূর গড়াবে তাও জানা নেই। কিন্তু ইতিমধ্যেই মনে একটা তেতো স্বাদ আসছে। একটা কিছু বদলাবে। একটা কিছুর বদল দরকার। কখনও প্রেমিকা, কখনও চাকরি।

মনটা আজ আরও বিগড়ে গেছে বিলুকে দেখে। বিলুর সঙ্গে অরুণের একটা খুব আধুনিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। দীপনাথ সম্পর্কটার ওপরসা চেহারাটা মানে না। তলে তলে কী হচ্ছে সেটাই তার জিজ্ঞাসা। প্রীতম কিছু টের পায় হয়তো। কিন্তু কেটে ফেললেও বলবে না।

গোঁয়ার দীপনাথ তাই বিলুর অফিস থেকে বেরিয়ে খানিক দূর গিয়েও আবার ফিরে এল। অফিসে ঢুকল না। তবে উল্টোদিকের ফুটপাথে একটা দোকানের শেডের তলায় দাঁড়িয়ে রইল। দাঁড়াতে হল বহুক্ষণ। খামোখা এতক্ষণ দাঁড়ানোরও মানে হয় না বলে সে খানিক চিনেবাদাম, কাটা পেঁপে আর আখের রস খেল, এক বিষহরি ওষুধওলার বক্তৃতা শুনল। দোকানে দোকানে শো-কেস দেখে বেড়াল। চারটের কিছু বাদে একখানা টয়োটা লাল রঙের মোটরে চড়ে এল অরুণ। দোষের কিছু নয়, আসতেই পারে।

তারপর বিলু আর অরুণ মিলে ভোকাট্টা হয়ে গেল।

বিলু তার আপন বোন হলেও ওর স্বভাবচরিত্র রুচি সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না দীপনাথ। তারা একসঙ্গে মানুষ হয়নি। ফলে বিলুকে তাব ধাধার মতো লাগে।

গরমে রোদে প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছিল দীপনাথের। ক্লান্তি লাগছিল। ট্রাম ধরে সে বোর্ডিং-এ ফিরে আসে। ঘরে কেউ নেই। দুটো তালায় ইন্টারলক করা। দরজা খুলে ঘরে ঢুকল। জানালা দরজা বন্ধ ছিল বলে ঘরটা সহনীয় রকমের ঠান্ডা। দীপনাথ পাজামা পরে খালি গায়ে ফ্যানের নীচে শুতে না শুতেই ঘুমিয়ে পড়ে। বহুকাল পরে এই অসময়ের ঘুম।

সন্ধেবেলা ঘুম ভাঙতে দেখল, ফুড ইন্সপেক্টর ভদ্রলোক তার বিছানায় বসে খুব চোর-চোর চোখে তাকে দেখছে। রুমমেটদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় প্রায় নেই বললেই হয় দীপনাথের। তিনজন অচেনা লোক একটা ঘরে রাত কাটায় মাত্র। সারা দিন যে যার ধান্দায় ব্যস্ত থাকে। দীপনাথের মনে পড়ল, ফুড ইন্সপেক্টরের নাম সুখেনবাবু। একটু খাপছাড়া গোছের লোক। চল্লিশ-টল্লিশ বয়স হবে, এখনও বিয়ে করেননি। মোটাসোটা লম্বা ফর্সা আলিসান চেহারা। কিন্তু খুবই নম্র ও লাজুক। গুন গুন করে মাঝে মাঝেই রবীন্দ্রসংগীত ও অতুলপ্রসাদী বা রজনীকান্তের গান করেন। গলা যে সুরে বাঁধা তা গুন গুন থেকেই বোঝা যায়। বিছানার ওপর লম্বালম্বি একটা নাইলনের দড়িতে ঝোলানো সুখেনবাবুর রাজ্যের জামা-কাপড় পাহাড় হয়ে থাকে। জামা-কাপড় ময়লা হলে সেগুলো কাচাকাচির হাঙ্গামায় না গিয়ে উনি নতুন জামা প্যান্ট কিনে আনেন। পুরোনোগুলো ওইভাবে জমে যাচ্ছে। এরকমভাবে কত জামা হবে তা একবার জানতে ইচ্ছে হয় দীপনাপের। সুখেনবাবু রাতের দিকে সামান্য মদ খেয়ে আসেন, সেটা গন্ধেই টের পায় দীপনাথ। এ ছাড়া ভদ্রলোকের আর কোনও দোষের কথা তার জানা নেই।

আজ ঘুম ভেঙে দীপনাথ সূখেনবাবুর সুরেলা গুন গুন শুনতে পেল। ও চাঁদ চোখের জলে…

দীপনাথ টপ করে উঠে বসে বলল, বেশ গলা আপনার। শিখতেন নাকি?

সুখেনবাবু ভারী লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়ে একটু হাসেন। চোখে ভারী চশমা, যেটা স্নানের সময়েও খোলেন না। খালি গায়ে রং ফেটে পড়ছে, কিন্তু বুক পিঠ, কাঁধ, এমনকী কানে পর্যন্ত প্রচুর লোম। মুখে প্রায় সর্বদাই পান। হেসে বললেন, এখনও শিখি।

একটু জোরে করুন। শুনি।

ভদ্রলোক আপত্তি করলেন না। আর একটু গুন গুন করে সুর এবং কথা ঝালিয়ে নিয়ে অনুচ্চস্বরে হঠাৎ গাইতে শুরু করলেন, ও চাঁদ চোখের জলে লাগল জোয়ার…

বড় প্রিয় গান দীপনাথের। চোখে জল এসে যাচ্ছিল। লোকটা গায় ভাল।

গোটা চার-পাঁচ গানের পর পাড়ার দোকানে চা আর টোস্টের কথা চাকরটাকে দিয়ে বলে পাঠাল দীপনাথ। জুত করে বসে বলল, বাড়িতে কে কে আছে?

বাবা আছেন। মা, মানে সৎমা আছেন।

বাড়ি কোথায়?

এই তো জয়নগর। যেখানকার মোয়া বিখ্যাত।

জানি। যাইনি কখনও।

কাছেই।

আপনি নিজে বাড়ি যান না?

কখনও-সখনও। খুব কম।

ভাই-টাইরা কী করে?

নিজের ভাই নেই। তবে সৎ ভাই-বোন আছে। তারা এন্ডিগেন্ডি অনেক। ছোট ছোট সব। এখনও কিছু কাজ-টাজ করার মতো বয়স হয়নি।

তা হলে তো আপনার লায়াবিলিটিজও আছে।

তা আছে। মাসে মাসে টাকা পাঠাতে হয়।

বাবা কী করেন?

কিছুই নয়। আগে কিছু জমিজমা ছিল। তা সে সব প্রায় সবই বেচে দিতে হয়েছে। এখন মেরেকেটে দু’-চার বিঘে আছে হয়তো।

আপনার টাকাতেই চলে?

চলে কি না কে খোঁজ নিচ্ছে? তবে চলে যায় নিশ্চয়ই কোনওরকমে। দেশের অবস্থা খুব খারাপ। লোকের যে কী করে চলছে সেটা একটা রহস্য।

দীপনাথ একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলে, তা ঠিক।

সুখেন গম্ভীর হয়ে বলেন, মাসে তিরিশ-চল্লিশ টাকা আয় করে এমন লোকও যে কী করে বেঁচে আছে সেটা ভেবে পাই না। কিন্তু আছে।

আপনি বিয়ে করেননি?

সময়ই পেলাম না। আঠেরো বছর বয়স থেকে রোজগারের ধান্দায় বেরিয়ে পড়তে হল। বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সংসার নইলে কে টানত বলুন?

সুখোবাবু এমনিতে লাজুক হলেও বোধ হয় নিজের কিছু কথা কাউকে বলতে চান। আজকাল লোকে প্রাণ খোলসা করে প্রাণের কথা বলার মতো লোক পায় না। কাউকে হঠাৎ পেয়ে গেলে পাকা ফোড়া ফেটে গেলে যেমন গলগল করে পুঁজ রক্ত বেরিয়ে আসে। দীপনাথ ঠিক করল লোকটার সঙ্গে ভাব করবে। বলল, আপনার বোধহয় বাবার সঙ্গে বনিবনা নেই!

সুখেন একটু লজ্জা পেয়ে বলেন, আমার কয়েকটা অ্যামবিশন ছিল। বাবা যদি বুড়ো বয়সে বিয়েটা না করত তা হলে আমার পক্ষে লেখাপড়া বা গানবাজনার শখ মেটানো অসম্ভব হত না।

আপনার তো এমন কিছু বয়স হয়নি। এখনও পারেন।

মনটাই বুড়ো হয়ে গেছে।

সৎ-মা’র সঙ্গে বনিবনা কেমন?

সুখেন একটু চুপ করে থেকে বলেন, বনিবনার প্রশ্ন নেই। বাবা যখন বিয়ে করেন তখন আমি বড় হয়ে গেছি। কাজেই সৎ-মা’র পক্ষে অত্যাচার করা সম্ভব ছিল না। বরং সৎ-মাই উলটে আমাকে ভয় পায়। তার বয়স বোধ হয় আমার মতোই। লোক খারাপ নয়। কিন্তু এই মহিলাকে মায়ের জায়গাটা দিতে পারিনি আর কী।

ভাইবোন ক’জন?

তিন বোন, দুই ভাই।

তারা আপনাকে মানে?

মানে। না মেনে উপায় কী? বয়সের তফাতটা তো বিরাট। কিন্তু কেবল আমাকেই মানে, আর কাউকে নয়। আমি বাড়িতে না থাকায় সেগুলি তেমন ভালভাবে মানুষ হচ্ছে না। অভাবও খুব।

আপনি তো আরও দিতে পারেন ইচ্ছে করলে।

দিয়ে লাভ নেই। বাবার দারুণ খরচের হাত। তার ওপর অভাবে থেকে থেকে এমন হয়েছে, টাকা পেলেই কাছা খুলে খরচাপাতি শুরু করে দেন। মাছ মাংস পোলাও লাগিয়ে দেন। দুদিনে হাত ফাঁকা।

মা’র নামে পাঠালে পারেন।

তাতে বাবার প্রেস্টিজে লাগে।

দীপনাথ হাসছিল। দেখাদেখি সুখেনও হাসলেন। আসনপিড়ি হয়ে নিজের চৌকিতে জুত করে বসে ছিলেন, এবার একটা বালিশ কোলে টেনে নিয়ে আরও আরামে বসলেন। বালিশ বিছানা সবই অবশ্য তেলচিটে নোংরা। বললেন, আপনি খুব বড় চাকরি করেন শুনেছি।

দীপনাথ ম্লান হেসে বলল, বড় চাকরি কিছু নয়। কোনও রকম একটা।

কেন, বড় সায়েবের নাকি ডান হাত? ম্যানেজার বলছিল, দীপনাথবাবু মাসে আড়াই হাজার টাকা বেতন পান। ইচ্ছে করলে যাকে খুশি চাকরি দিতে পারেন।

দীপনাথ সত্যি কথাটা বলতে একটু ইতস্তত করে। অনেক সময়ে মানুষকে তার ভুল ভাবনা নিয়ে থাকতে দেওয়াটা স্ট্র্যাটেজির দিক দিয়েও দরকার। তবে আবার একেবারে নির্জলা মিথ্যেটাও স্বীকার করতে বাধে। সে বলল, ম্যানেজার বাড়িয়ে বলেছে।

তবু আমার মতো উঞ্ছবৃত্তি তো নয়।

উঞ্ছবৃত্তি কেন? আপনারও তো ভাল চাকরি।

কোন দিক দিয়ে? গালভরা নামের সরকারি চাকরি, এইমাত্র। যা পাই তাতে দশ দিনও চলে না।

তা হলে চালান কী করে?

এদিক সেদিক করতে হয়। ডান হাত বাঁ হাত।

দীপনাথের একটা ব্যাপার আছে। সে কখনও ঘুম-টুষের কথা ভাবতেই পারে না। সে বোসের কাছে উঞ্ছবৃত্তি করে বটে, তবু কখনও হিসেবের বাইরের টাকা ছায়নি। সে যে সচেতনভাবে সৎ তা নয়, ডান হাত বাঁ হাতের কথা তার মনেই আসে না আসলে। তার চারপাশের বেশির ভাগ লোকই যে এই অপকর্মটি করে তা জেনেও তার নিজের কখনও ইচ্ছে হয়নি।

দীপনাথ একটু হেসে বলল, সবাই আজকাল করছে।

সুখেনও বিনা জবাবে একটু হাসলেন। প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, আপনাকে তো এ সময়ে বড় একটা দেখতে পাই না। শুনি নাকি অফিসে আপনার অনেক রাত পর্যন্ত কাজ থাকে।

প্রায়ই থাকে। কাজ না হোক, পার্টি-ফার্টি থাকেই।

আজ কি সেসব নেই?

না, আজ একটু ছুটি পেয়েছি।

সন্ধেবেলাটা কী করবেন?

কিছু করার নেই। ভাবছি বই-টই পড়ব।

দূর। বই পড়ে কী হয়? আমি লাস্ট বইটই পড়েছি সেই কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে। এখন শুধু খবরের কাগজখানা সকালে একবার দেখি।

দীপনাথ বইয়ের পোকা। আজকাল অবশ্য বোস সাহেবের হ্যাপা সামলে বোর্ডিং-এ রাত করে ফিরে পড়তে ইচ্ছে করে না। রাতে বাতি জ্বেলে রাখলে রুমমেটদেরও অসুবিধে।

কথাটা শুনে একটু বিরক্ত হল দীপনাথ। তবে কিছু বলল না।

সুখেন বললেন, আজ আমার সঙ্গে চলুন। একটু খাওয়াদাওয়া করে আসি। আমি খাওয়াব।

দীপনাথ একটু ইতস্তত করে। সুখেনকে সে প্রায় চেনেই না। এত অল্প পরিচয়ে এ লোকটার পয়সায় খাওয়া কি উচিত?

তার দ্বিধা দেখে সুখেন একটু করুণ মুখ করে বললেন, আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল তো, তাই। বলছিলাম। কলকাতায় ফ্র্যাংকলি স্পিকিং আমার কোনও বন্ধু নেই। বলতে কী আপনিই আমার প্রথম বন্ধু।

এত চট করে বন্ধুত্ব পাতাতে দীপনাথের আপত্তি আছে। তবে সুখেন লোকটা বোধহয় বাস্তবিকই একা এবং বন্ধুহীন। নইলে দু-চারটে কথাবার্তার পরই কেউ অত হ্যাংলার মতো বন্ধুত্ব পাতাতে চায় না। তাই দীপনাথ বলল, ঠিক আছে। তবে আমি কিন্তু মদ-টদ বেশি খাই না।

বেশি নয়। একটুখানি। জাস্ট ফুর্তি করা আর কী!

চলুন।

তা হলে আর দেরি নয়। উঠে পড়ুন।

দীপনাথ ওঠে।

এ কথা ঠিক যে কলকাতা শহরটা দীপনাথের নখদর্পণে নয়। এখনও এর অনেক কানাগলি, গোলকধাঁধা তার চেনা নেই। সুখেন একটা টানা রিকশা ডেকে ঘরের দরজায় পঁড় করিয়ে বলল, ট্যাক্সি পাওয়ার বহুত ঝামেলা। যেখানে যাব সেখানে ট্যাক্সি ঢোকেও না।

সুখেনের সঙ্গে টানা রিকশায় খুবই চাপাচাপি বোধ করছিল দীপনাথ। সুখেন বেশ স্বাস্থ্যবান। দীপনাথও নেহাত কম যায় না। ফলে চাণে মাজা ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। সুখেন তার মধ্যে বসেই মহানন্দে গুন গুন করে ‘দুঃখ আমার প্রাণের সখা…’ গাইতে লাগলেন।

রিকশা হ্যারিসন রোড ধরে গিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউতে পড়ল। খানিক এগিয়ে ডান হাতে যে গলিতে ঢুকল সেটায় কস্মিনকালে আসেনি দীপনাথ। তারপর আরও গলি। আরও সরু ও অন্ধকার গলির পর গলি। সুখেন হাপসে-পড়া রিকশাওয়ালাকে এমনভাবে পথ চেনাচ্ছিলেন যে, মনে হয় উনি চোখ বুজে সব দেখতে পান। পশ্চিমা রিকশাওয়ালাটির ন্যাড়া মাথায় পর্যন্ত ঘাম জমে গেছে। কষ্ট হচ্ছিল দীপনাথের। বলল, চলুন না বাকি পথটা হেঁটে যাই?

দরকার কী! প্রায় এসে গেছি।

রিকশাওয়ালাটার জন্য মায়া হচ্ছে।

মায়া করবেন না। ওরা খুব হার্ডি। আমাদের মতো নয়।

এই নিষ্ঠুরতা ভাল লাগল না দীপনাথের। চুপ করে রইল।

রিকশাকে অবশেষে থামালেন সুখেন। সামনে একটা এঁদো বাড়ি। সেটা কত উঁচু তা এই সরু গলিতে সন্ধের আবছা আলোয় ঠাহর করা মুশকিল।

সুখেন নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে রিকশাওয়ালার সঙ্গে একটু বচসা বাধালেন। তারপর দীপনাথকে বললেন, আসুন।

এখানে কি কোনও রেস্টুরেন্ট আছে?— দীপনাথ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল। বলতে কী বাড়িটার চেহারা দেখে সে একটু হতাশও হয়েছে। একেবারে অবাঙালি পাড়া। নর্দমা আর রোদহীন বাতাসের ভ্যাপসা গন্ধ আসছে। কম আলোর ভুতুড়ে গলি।

আমি ফুড ইন্সপেক্টর। সব ঘাঁটি চিনি। নিশ্চিন্তে আসুন।

সরু সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির দোতলায় সুখেনের পিছু পিছু উঠে এল দীপনাথ। সুখেন একটা ফ্ল্যাটের দরজার পর্দা সরিয়ে গট গট করে ঢুকলেন।

কোনও রেস্টুরেন্ট বলে মনেই হয় না। সামনের ঘরটা ঠিক যেন কারও বাড়ির খাওয়ার ঘর। একটা মাত্র ডাইনিং টেবিল ঘিরে গোটাছয়েক চেয়ার। স্টিক লাইট জ্বলছে। চারিদিকে ফানুসের মতো আকৃতির আরও কয়েকটা ঘর-সাজানোর বাতি ঝুলছে সিলিং থেকে। দেয়ালে মুখোশ, তির-ধনুক, বিদ্ধ এবং মরা প্রজাপতি সাজানো। বাড়িটা চুপচাপ। শুধু ভিতরের কোনও ঘর থেকে ক্ষীণ রেডিয়োয় বিবিধ ভারতীর শব্দ আসছে! কেউ তাদের রিসিভ করল না। সুখেন গিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বললেন, বসুন। ওই কৈাণে বেসিন আছে, হাত ধুয়ে আসতে পারেন।

এটা তো কারও বাড়ি বলে মনে হচ্ছে।

বাড়িই তো। কিন্তু কাম রেস্টুরেন্ট। পাবলিকের জন্য নয়। বাঁধা খদ্দের। যারা চেনে তারাই আসে।

লোক কই?

আসবে। খেতে হলে এসব জায়গাই ভাল। এরা ঠিক প্রফেশনাল নয়, তাই যত্ন করে খাওয়ায়।

পুরনো বাড়ি বলেই বোধহয় ঘরটায় তেমন গরম নেই। একটা আদ্যিকালের ডি সি পাখা ঘুরছে ওপরে। একটু ধূপকাঠির গন্ধও রয়েছে।

দীপনাথ জিজ্ঞেস করল, এরা কি চিনে?

দো-আঁশলা। খাঁটি চিনেম্যান এখানে পাবেন কোথায়?

কথা বলতে বলতেই এক বয়স্কা চিনে মহিলা এসে নিঃশব্দে দাঁড়ায়। মোটাসোটা, হাসিখুশি, স্তনহীন, স্বর্ণদন্তী। পরনে কামিজ আর ঢোলা পাজামা। পায়ে রবারসেলের খড়ম! সুখেন অল্প কথায় অর্ডার দিলেন।

মহিলা চলে গেলে দীপনাথকে জিজ্ঞেস করলেন, শুয়োরের মাংস খান তো?

দীপনাথ খায়। একটু ঘেন্না হলেও খায়। হেসে মাথা নাড়ল।

সুখেন বলেন, এর ওইটে ভাল করে।

খাবার এল একটু বাদেই। প্ৰন-চাউমিন আর পর্ক চপ। পরিমাণে প্রচুর এবং অত্যন্ত সুন্দর গন্ধ। ও স্বাদ। সঙ্গে দু’ বোতল বিয়ার। কাঁচা পেঁয়াজ এবং স্যালাড। দীপনাথ খেয়ে বুঝল, বহুকাল সে এত ভাল খাবার খায়নি।

সুখেন ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করেন, ভাল নয়?

দারুণ।

ভাল খেতে চাইলে আমাকে বলবেন। এরকম আরও বহু খাওয়ার জায়গা আছে কলকাতায়।

আমার জানা ছিল না।

অনেকেই জানে না।

দীপনাথ হাসল।

সুখেন খেতে খেতেই বলেন, আমার বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন না? তখন আপনাকে সত্যি কথাটা বলিনি।

কী কথা?

আমার একজন মহিলা আছেন।

দীপনাথ ভ্র তুলে বলে, মহিলা?

বিবাহিতা। ছেলেমেয়েও আছে।

সে কী?

সুখেন একটু হাসলেন। ঠোঁট চাউমিনের তেলে মাখা। চকচক করছে। চোখে বিয়ারের উজ্জ্বলতা। এতক্ষণে লোকটাকে হঠাৎ বদমাশের মতো দেখাল। শান্ত লাজুক নিরেট মুখ-চোখে একটা পাপবোধের আবিলতাও ফুটে উঠল। বললেন, বিয়েতে একটু আটকাচ্ছে। সামাজিকতাই বাধা।

দীপনাথ অল্প ভড়কে গিয়ে বলে, বিবাহিতা মহিলা মানে তো স্বামী আছে।

সে ব্যাটা এক নম্বরের পাজি। বদমাশ দি গ্রেট। এখন জেল খাটছে। বউটাকে দেখার কেউ নেই। ছেলেমেয়েগুলো একেবারে অনাথ।

ছেলেমেয়ে ক’জন?

তিনটে।

ভদ্রমহিলার বয়স?

বয়স আছে।

এ ব্যাপারটা সুখেন ভাঙতে চান না বুঝে দীপনাথ আর প্রশ্ন করে না। শুধু বলে, ও।

আপনার সঙ্গে এ ব্যাপারে একটু পরামর্শ করতে চাই।

দীপনাথ সতর্ক হয়ে বলে, ওটা আপনার পার্সোনাল ব্যাপার। থাক না।

আরে গোপনীয়তা কিছু নেই। আপনি তো আমার বন্ধু, আপনাকে বলতে বাধা কী?

বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে?

ঠিক কিছুই নয়। আমি তেমন ইন্টারেস্টেডও নই। তবে একটু ফেঁসে গেছি। ওই মহিলার কাছে আমি ইনডেটেড। অসময়ে আমার অনেক উপকার করেছে। এখন ওর একটা পার্মানেন্ট আশ্রয় দরকার।

তা হলে আর আমি কী বলব বলুন!

চলুন না একবার মহিলাটির কাছে নিয়ে যাই আপনাকে এখন।

এখন!—বলে দীপনাথ ভড়কায়। একদিনে এত ঘনিষ্ঠতায় হাঁফ ধরে যাচ্ছে তার। বলল, আজ থাক।

বেশি দূর নয়। রিকশায় মিনিট দশেক।

আবার রিকশা!—আঁতকে ওঠে দীপনাথ।

সুখেন হেসে বলেন, আপনার টানা রিকশা ভাল লাগে না, না? আমার কিন্তু বেশ লাগে। মনে হয়, কলকাতার ভিড়ের ওপর দিয়ে যেন নৌকোয় ভেসে ভেসে চলেছি।

সে তো বুঝলাম। কিন্তু আমি গিয়ে করবটা কী?

কিছুই নয়। একটু বসবেন, চা-টা খাবেন। বীথি খুশি হবে।

ভারী অস্বস্তি বোধ করে দীপনাথ। রবি ঠাকুর জীবনে জীবন যোগ করার কথা বলেছেন বটে, কিন্তু বেমক্কা এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়তে তার একদম ইচ্ছে করছিল না। ভয়-ভয় করছিল। সে বলল, কোথায় বাড়ি?

গড়পাড়। আমাদের বোর্ডিং থেকে বেশি দূরও নয়।

খাওয়া হতেই টক করে উঠে পড়লেন সুখেন। চিনে মহিলার সঙ্গে পাশের রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে গুনগুন করে কী একটু কথা বলে এলেন।

চলুন।

দীপনাথ জড়তা কাটিয়ে উঠল। লোকটা খাইয়েছে, বন্ধু হতে চেয়েছে, একটু রিটার্ন সার্ভিস দেওয়া উচিত। তবে সে মনে মনে স্থির করে ফেলল এরপর থেকে সুখেনকে আর বেশি পাত্তা দেবে না।

রিকশায় উঠে আবার দীর্ঘ রাস্তা পেরিয়ে নিজেদের বোর্ডিং-এর সামনে দিয়েই গড়পাড়ের দিকে চলল তারা। সুখেন গুনগুন করে একটা নজরুলগীতি গাইছিলেন। শেষ পর্যন্ত সুখেন দু’ বোতল বিয়ার টেনেছেন, দীপনাথ কষ্টেসৃষ্টে এক বোতল। বেশ ঝিম ঝিম করছে শরীর।

গড়পাড় দীপনাথের অচেনা নয়। তবু আজ কেন যেন গা ছমছম করছিল।

সুখেন একটা নতুন দোতলা ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে রিকশা থামালেন। আবার রিকশাওয়ালার সঙ্গে একটু বচসা। এবং আবার দোতলায় ওঠা। তবে এ বাড়িটা ঝকঝকে নতুন। চওড়া সিঁড়ি।.উজ্জ্বল আলো। দোতলার বাঁদিকে ফ্ল্যাটের দরজায় বোম টিপতে ভিতরে পিয়ানোর মতো আওয়াজ হল। দরজা খুলল একটি উনিশ-কুড়ি বছরের মারকাট যুবা। তার চোখ-মুখে ছমছমে স্মার্টনেস। শরীরখানা বেতের মতো মেদহীন এবং শক্তসমর্থ, কিন্তু মোটাসোটা নয়। গায়ে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি, পরনে গাঢ় খয়েবি রঙের বেলবট, মাথায় লম্বা চুল, গালে কোমল দাড়ি-গোঁফ, চোখে চশমা। খুব ভদ্র ও নরম গলায় বলল, আসুন, আসুন। মা এইমাত্র ফিরল।

সুখেন বললেন, তুমি বেরোচ্ছ নাকি?

হ্যাঁ।

এই ইনি হচ্ছেন দীপনাথ চ্যাটার্জি। আমার বন্ধু।—বলে দীপনাথের দিকে ফিরে বললেন, বীথির বড় ছেলে স্বস্তি। সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়ে।

দীপনাথ খুবই হতভম্ব হয়ে গেছে। বীথির ছেলে এত বড়? তবে বীথির বয়স কত?

ঘরদোর বেশ বড়লোকদের মতো সাজানো গোছানো। ভাল সোফাসেট, বুক-কেস, রেডিয়োগ্রাম সবই আছে। মেঝেয় একটা উলের ছোট কার্পেট পর্যন্ত। দীপনাথ আরও হাঁ হয়ে গেল। এরা তবে মোটেই গরিব নয়।

সুখেন তাকে বাইরের ঘরে বসিয়ে রেখে চট করে ভিতরের ঘরে চলে গেলেন। অনেকক্ষণ কেউ এল না। শুধু একটু বাদে স্বস্তি একটা হাওয়াই শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেল, বসুন, চা আসছে।

একটু বাদেই সুখেনের পিছু পিছু চায়ের ট্রে হাতে এলেন বীথি। এবং দীপনাথের যা কখনও হয়, সে প্রথম দর্শনেই এই তিন ছেলেপুলের বয়স্কা মায়ের প্রেমে পড়ে গেল।

বীথির যে বয়স হয়েছে তা তার অদ্ভুত সৌন্দর্য ভেদ করেও বোঝা যায়। চল্লিশের কাছাকাছি বয়স হবে, লাগে সাতাশ–আঠাশ। বেশ লম্বা, দারুণ ফর্সা, সবচেয়ে চোখে পড়ে দু’খানা মায়াবি একটু পুরু ঠোঁট। টসটস করছে আহ্লাদে। এত সুন্দর ঠোঁট খুব কমই দেখেছে দীপনাথ। তাছাড়া মুখখানায় সৌন্দর্য যতটা তার চেয়ে ঢের বেশি কমনীয় নরম একরকম সহৃদয় ভাব। শরীরটা একটু মেদভারে আক্রান্ত। তবু মানিয়ে গেছে। জংলা ছাপা শাড়ি পরে আছেন, খাটো ব্লাউজ, দু হাতে সোনার দুটি বালা। সামনের দিকে চুল এমনভাবে ছাটা যে কপালের দু’পাশে দুটো চুলের ঝুমকো দোল খায়। কপালে টিপ, ভ্রু প্লাক করা।

দীপনাথ কোনও মেয়ের দিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে না। লজ্জা করে। আজ বীথির সুন্দর চেহারা এবং হয়তো বিয়ারের প্রভাবে সে প্রায় চোখের পাতা ফেলতে পারছিল না। সুখেনের মাথা কি সাধে খারাপ হয়েছে?

বীথি বেশি আদব কায়দার ধার না ধেরে প্রথমেই বলে ফেললেন, দেখুন তো ভাই, আপনাকে নিয়ে আসবে যদি ফোনেও একবার জানিয়ে দিত, তা হলে একটু যত্ন-আত্তির ব্যবস্থা করতাম। এই তো আধঘণ্টা আগে রান্নার লোকটাকে ছুটি দিয়ে দিলাম।

আমরা খেয়ে এসেছি।—দীপনাথ বলল, এবং তার নিজের কানেই নিজের গলা অনারকম শোনাল।

সুখেনের মুখে একটা আহ্লাদের হাসি লেগে আছে তো আছেই। এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হচ্ছে। উনি বললেন, সেকথা কি বলতে বাকি রেখেছি! কিন্তু বীথি না খাইয়ে ছাড়বে না।

বীথি চা এগিয়ে দিয়ে উলটোদিকে বসে বললেন, ফ্রিজে মাংসের ঘুগনি আছে। একটু বসুন, গরম করে দেব।

পেটে জায়গা নেই। পারব না।—দীপনাথ কাতর স্বরে বলে।

জায়গা হয়ে যাবে। বসুন না, খিদে পেয়ে যাবে খন। হোটেলে মেসে থাকেন, ওরা কী খাওয়ায় তা তো জানি।

হাতের আঙুলগুলো লক্ষ করছিল দীপনাথ। বীথির মতো এত সুন্দর লম্বাটে ললিত আঙুল সে জীবনে দেখেনি।

চায়ে নিঃশব্দে ছোট একটা চুমুক দিয়ে বীথি বললেন, আজ অফিস থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেল। রান্নার গ্যাসও ফুরিয়েছে দুদিন হল। স্টোভ জ্বেলেই সব করতে হবে।

কষ্ট করবেন কেন? কোনও দরকার নেই।

সৌন্দর্যের সঙ্গে একটা আত্মসচেতনতাও মিশে আছে কি না, ভাবছিল দীপনাথ। কয়েকটা কথাতেই বীথি জানিয়ে দিলেন যে, তাঁর বাসায় টেলিফোন, ফ্রিজ এবং গ্যাস উনুন আছে। আজকাল মধ্যবিত্তদের ঘরে এসব থাকে এবং তারা এই নিয়ে খুব আত্মপ্রসাদও বোধ করে। বীথির আত্মসচেতনতার কথা ভেবে একটু খারাপ লাগল দীপনাথের।

বীথি ভারী সুন্দর হাসেন। দাঁত ঝকঝকে এবং হাসলে মাত্র অর্ধেক দেখা যায়, বাকি অর্ধেক ঠোঁটে ঢাকা থাকে। সব মিলিয়ে বীথি অতীব কাম-উত্তেজক। তাকিয়ে থেকে দীপনাথ নিজের অসহনীয় উত্তেজনা টের পায়। ভিতরে গর্জন করছে এক ঘুম-ভাঙা বাঘ। আশ্চর্য। কোনওদিন মণিদীপাকে দেখে ঠিক এরকমটা হয়নি। অথচ বীথির বয়স মণিদীপার চেয়ে অনেক বেশি।

বাড়িতে আর কারও সাড়াশব্দ নেই। বীথি বললেন, এ সময়ে কেউ বাড়িতে থাকে না। ছোট ছেলে টিউটোরিয়ালে যায়। মেয়ে এখন লখনউতে-ওদের স্কুলের এক্সকারশনে গেছে।

আপনি হয়তো বিশ্রাম করতেন, অসময়ে আমরা এলাম।—ভদ্রতা করে দীপনাথ বলে।

ওমা! বিশ্রামই তো করছি। কারও কারও সঙ্গে বসে কথা বলাটাও বিশ্রাম।

কথাগুলোর তেমন মানে নেই, শুধু শুনতে ভাল। দীপনাথকে এখানে সুখেন আনলেন কেন তা সে বুঝতে পারছিল না এখন পর্যন্ত। তবে অপেক্ষা করছিল।

ঘণ্টাখানেক গেলে বীথি বললেন, যা গরম পড়েছে, একটু ঠান্ডা বিয়ার খান। ফ্রিজে আছে। ঘুগনিটাও গরম করে আনি।

না-না, করল দীপনাথ। বীথি শুনলেন না। ফলে আবার বিয়ার এবং মাংসের ঘুগনি পেটে চালান হল।

মাঝপথে হঠাৎ সুখেন উঠে বললেন, কাছেই একজন লোকের সঙ্গে দেখা করে আসছি। একটু বসুন দীপনাথবাবু, মিনিট চল্লিশ।

আমিও বরং উঠি।

না। বসুন না, গল্প করি।–বীথি বললেন।

খুবই ভয়-ভয় করল দীপনাথের। সেই সঙ্গে জেগে উঠল ঘুমন্ত লোভ, কাম, সবকিছু। সদর দরজা বন্ধ করে এসে বীথি বললেন, চলুন আমার বাসাটা আপনাকে ঘুরে দেখাই।

কী হবে বা হতে পারে তা যেন জানত দীপনাথ। একটা চমৎকার মধুর ফাঁদের মতো ব্যবস্থা। সে যে ফাঁদে পা দিচ্ছে তাও জলের মতো পরিষ্কার। সুখেনটা রাসকেল। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটারও যেন দরকার ছিল দীপনাথের।

বীথি তাকে শোওয়ার ঘরে নিয়ে এলেন। চমৎকার ঘর। মস্ত খাটে নরম বিছানা। মৃদু সবুজ আলো জ্বলছে।

আলোটা কি থাকবে?–বীথি ব্যবসায়িক গলায় জিজ্ঞেস করেন।

থাক।

বীথি সাবধানে জানালার পরদাগুলো টেনে দিলেন।

ঘরের মাঝখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে দীপনাথ ভাবল, এত সহজ! এত সহজ! অথচ এত সুন্দরী!

সকল অধ্যায়

১. ০১. পুতুলরাণী হাপিস হয়ে যাওয়াতে
২. ০২. দাওয়াতে দাঁড়িয়েই ঘটিভরা জলে
৩. ০৩. শিলিগুড়ির হোটেল সিনক্লেয়ার
৪. ০৪. এই শীতে অন্ধকার বারান্দায়
৫. ০৫. তৃষা বিছানা ছাড়ে শেষ রাতে
৬. ০৬. মালদা থেকে গভীর রাতে দার্জিলিং মেল
৭. ০৭. প্রীতমের ঘুম ভাঙে খুব ভোরবেলায়
৮. ০৮. বিয়ের পর যখন অরুণ এ বাড়িতে আসত
৯. ০৯. দীপের ঘুম ভাঙল
১০. ১০. রেসের মাঠে
১১. ১১. এখানে দু’কাঠা চার ছটাক জমি
১২. ১২. কুয়াশামাখা জ্যোৎস্নায় নদীর ধারে
১৩. ১৩. বদ্রীর ইনফ্লুয়েনজা হয়েছিল
১৪. ১৪. চাবিটার কথা
১৫. ১৫. শ্রীনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
১৬. ১৬. রবিবার দিনটা দীপনাথের নিরঙ্কুশ ছুটি
১৭. ১৭. সজল এসে প্রণাম করে
১৮. ১৮. তৃষা দীপনাথকে বসিয়ে রেখে
১৯. ১৯. তুমি বেলুন ফোলাবে
২০. ২০. হাসিমুখে, স্নিগ্ধ মনে
২১. ২১. কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে
২২. ২২. রতনপুরে পাঁচখানা নতুন সাইকেল রিকশা
২৩. ২৩. আমি যদি এই কোম্পানি ছেড়ে দিই
২৪. ২৪. পরদিন অফিসে এসেই দীপনাথ শুনল
২৫. ২৫. দীপ একটু থতমত খেয়েছিল
২৬. ২৬. গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে দীপনাথ
২৭. ২৭. বেজি জাতটা কিছুতেই পোষ মানে না
২৮. ২৮. আড়াল থেকে দেখতে পাচ্ছিল সজল
২৯. ২৯. শ্রীনাথ বাড়ির ফটক পেরিয়ে
৩০. ৩০. বোসোহেবের মুখে খুব ছেলেমানুষি হাসি
৩১. ৩১. হুইলচেয়ারে
৩২. ৩২. টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে নামবার মুখে
৩৩. ৩৩. ট্রেনের কথা একদম খেয়াল থাকে না
৩৪. ৩৪. দৈহিক দিক থেকে পঙ্গু
৩৫. ৩৫. চেম্বারে ঢুকতেই বোস সাহেব
৩৬. ৩৬. ওপরে আজকের তারিখ
৩৭. ৩৭. অন্ধকার উঠোন ভরতি জোনাকি
৩৮. ৩৮. রাতের নিস্তব্ধতায় নানা গ্রামীণ শব্দ
৩৯. ৩৯. শ্রীনাথ অবাক হয়ে বলে
৪০. ৪০. প্রীতম কখনও দুরে কোথাও যায়নি
৪১. ৪১. কলকাতায় এবার খুব বৃষ্টি হচ্ছে
৪২. ৪২. কতকাল পরে রেলগাড়ি দেখছে প্রীতম
৪৩. ৪৩. পরদিন ভাইবোনে অফিসে বেরোল
৪৪. ৪৪. বেয়ারাকে কিছু বলতে হয়নি
৪৫. ৪৫. পুরনো গোয়ালঘরটা ফাঁকা পড়ে থাকে
৪৬. ৪৬. মরা বা জ্যান্ত
৪৭. ৪৭. নিজের ঘরে দু’জনকে বসাল তৃষা
৪৮. ৪৮. এ বাড়িটা অভিশপ্ত কি না
৪৯. ৪৯. ঝোপড়ার দরজায় দীপনাথ
৫০. ৫০. কথা শুনে একটু গম্ভীর হতে গিয়ে
৫১. ৫১. প্রীতম জিজ্ঞেস করে
৫২. ৫২. দক্ষিণের খোলা বারান্দায়
৫৩. ৫৩. বিলু কোনওদিনই খুব সুন্দরী ছিল না
৫৪. ৫৪. টেলিফোন রেখে মণিদীপা
৫৫. ৫৫. সাড়ে তিন ভরি আছে
৫৬. ৫৬. তৃষা তার ঘরের উত্তরের জানালা দিয়ে দেখছিল
৫৭. ৫৭. একদিন বিকেলে দুই বুড়োর দেখা
৫৮. ৫৮. কুঠে সামন্তর বাড়িটা
৫৯. ৫৯. ফেয়ারলি প্লেসে ব্ল্যাকারদের সঙ্গে হাতাহাতি
৬০. ৬০. সাতসকালে কে যেন
৬১. ৬১. কোনও মহিলা যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চায়
৬২. ৬২. মণিদীপা অনেক পুরুষকে পার হয়ে
৬৩. ৬৩. নিজের টেবিলে এসে অপেক্ষা
৬৪. ৬৪. এই ফ্ল্যাটে ঢুকতে আজ ভারী লজ্জা আর অস্বস্তি
৬৫. ৬৫. শরীরে আবদ্ধ এই জীবন
৬৬. ৬৬. গীতা পড়তে পড়তে
৬৭. ৬৭. চিত্রার বিয়ে কেমন হল
৬৮. ৬৮. তৃষা যখন তার জন্য চা করতে গেল
৬৯. ৬৯. দীপনাথ কিছুক্ষণ হাঁ করে থেকে
৭০. ৭০. অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল বিকেলে
৭১. ৭১. বহুদিন বাদে ছবির কাছে
৭২. ৭২. প্রীতম নিজে থেকেই মাস দুই আগে
৭৩. ৭৩. এক-একটা সর্বনাশের সময় আসে
৭৪. ৭৪. প্রীতমের বাবা-মা আরও বুড়ো
৭৫. ৭৫. আকাশে অনেক ওপরে
৭৬. ৭৬. অন্ধকারে জল ভেঙে
৭৭. ৭৭. মালটিন্যাশনাল কোম্পানির যত দোষ
৭৮. ৭৮. সানফ্লাওয়ারের শীততাপনিয়ন্ত্রিত বিশাল রিসেপশন
৭৯. ৭৯. শমিতা চিৎকার করেই অজ্ঞান
৮০. ৮০. ঘুম থেকে উঠে বিলুর হাতে
৮১. ৮১. পৃথিবীর রং অনেকটাই পালটে গেছে
৮২. ৮২. কী খাচ্ছে, রান্না কেমন হয়েছে
৮৩. ৮৩. সুখেনের সঙ্গে সন্ধেটা কাটল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন