১৯।৭ ঊনবিংশ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক

দিলীপ মুখোপাধ্যায়

সপ্তম অনুবাক
প্রথম
সূক্ত : রায়স্পোষপ্রাপ্তি
[ঋষি : ভৃগু দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, উষ্ণিক]

রাত্রিংরাত্রিমপ্রয়াতং ভরন্তোহশ্বায়েব তিষ্ঠতে ঘাসুমস্মৈ। রায়ম্পোষেণ সমিষা মদন্তো মা তে অগ্নে প্রতিবেশা রিষাম॥১৷৷ যা তে বসোর্বাত ইমুঃ সা ত এষা তয়া নো মৃড়। রায়ম্পোষেণ সমিষা মদন্তো মা তে অগ্নে প্রতিবেশা রিষাম। ২। সায়ংসায়ং গৃহপতিনো অগ্নিঃ প্রাতঃপ্রাতঃ সৌমনসস্য দাতা। বসোর্বসোর্বসুদান এধি বয়ং ত্বেন্ধানাস্তং পুষেম৷৩৷ প্রাতঃপ্রাতগৃহপতিনো অগ্নিঃ সায়ংসায়ং সৌমনসস্য দাতা। বসোর্বসোর্বষুদান এধীন্ধানাস্তা শতংহিমা ঋধেম ॥ ৪৷৷ অপশ্চা দগ্ধান্নস্য ভূয়াস। অন্নাদায়ান্নপতয়ে রুদ্রায় নমো অগ্নয়ে। সভ্যঃ সভাং মে পাহি যে চ সভ্যাঃ সভাসদঃ ॥৫বৃমিন্দ্রা পুরুহুত বিশ্বমায়ুৰ্য্যশ্নবৎ। অহরহলিমিত্তে হরন্তোহায়েব তিতে ঘাসমগ্নে ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! গার্হপত্য ইত্যাদি আয়তনে বর্তমান তোমার উদ্দেশে, অশ্বকে তৃণ ইত্যাদি প্রদানের মতো, সর্বকালে অর্থাৎ অবিরত (রাত্রিংরাত্রিং) হবিঃ প্রদান পূর্বক, আমরা ধনের পোষণের দ্বারা (রায়ঃ পোষেণ) ও অন্নের দ্বারা (ইষা) সম্যক্ আমোদিত হয়ে (সং মদন্তঃ) তোমার সন্নিহিত গৃহে (তে প্রতিবেশাঃ) যেন কারও দ্বারা হিংসিত না হই (মা রিষাম)। (যেহেতু রক্ষকের সান্নিধ্যে আমরা অবস্থান করছি, অতএব আকাঙ্ক্ষিত ফলসমূহ প্রাপ্ত হবো এবং নিরুপদ্রব হবো এমনই আশা করা হচ্ছে)। ১।

হে অগ্নি! ধনদাতারূপে তোমার যে অনুগ্রহবুদ্ধি, অন্নপ্রদাতারূপে তোমার যে অনুগ্রহবুদ্ধি, সেগুলির দ্বারা আমাদের সুখ প্রদান করো। আমরা ধনের পোষণের দ্বারা ও অন্নের দ্বারা সম্যক আমোদিত হয়ে তোমার সান্নিধ্যে অবস্থান পূর্বক যেন কারও দ্বারা হিংসিত না হই। ২।

 যজমানরূপ আমরা গৃহপতি, আমাদের গৃহে পূজনীয় অগ্নি অর্থাৎ গার্হপত্য অগ্নি প্রতি সায়ংকালে ও প্রতি প্রাতঃকালে (সায়ায় প্রাতঃপ্রাতঃ) সুখের প্রদাতা হোন (সৌমনসস্য দাতা ভবতি)। হে অগ্নি! তুমি সর্বস্ব অর্থাৎ প্রভূত ধনের (বসসার্বসোঃ) ধনদাতা হও (বসুদানঃ এধি)। আমরা (বয়ম) তোমাকে (ত্বাং) হবির দ্বারা উদ্দীপিত করে (ত্বা ইন্ধানাঃ) সকল পুত্র-মিত্র ইত্যাদির শরীরসমূহ পুষ্ট করবো (তন্বম্ পুষেম)। ৩৷

[ পূর্বৰ্মন্ত্রে শরীরপুষ্টি প্রার্থিত হয়েছে। এইবার জীবন প্রার্থনা করা হচ্ছে ]-যজমানরূপ গৃহস্বামী আমরা, আমাদের দ্বারা আহিত অগ্নি বা গৃহস্বামীরূপে পূজিত গার্হপত্য অগ্নি প্রতি প্রাতে ও প্রতি সায়ংকালে আমাদের সুখের প্রদাতা হোন। হে অগ্নি! তুমি আমাদের দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে প্রভূত ধনের ধনদাতা হও। শতসংখ্যক হেমন্ত (শতং হিমা), অর্থাৎ শত সম্বৎসরকাল ব্যাপী, তোমার পরিচর‍্যা করে আমরা বৃদ্ধ হবো (ঋধেম), অর্থাৎ অগ্নিপরিচর্যার দ্বারা আমরা শত সম্বৎসর জীবনবান থাকবো। ৪

অন্নের পশ্চাদ্ভাগে অদগ্ধা (অন্নস্য অপশ্চা দগ্ধ) অর্থাৎ স্থালীর পশ্চাৎ বা পৃষ্ঠভাগে দগ্ধান্নরহিত হবো (ভূয়াস)। (অন্ন অল্প হলে স্থালীপৃষ্ঠভাগে দুঃসৃত অর্থাৎ অপক্ক বা দগ্ধ হওয়া সম্ভব, কিন্তু অধিক হলে সেই সম্ভাবনা থাকে না; এই নিমিত্ত এমন অধিক অন্ন প্রার্থনা করা হচ্ছে)। অন্নের ভোক্তা বা ভোজক (অন্নাদায়), অন্নের স্বামী বা অধিকারী (অন্নপতয়ে), রোদয়িতা বা রুদ্ৰাত্মক (রুদ্রায়) অগ্নিকে নমস্কার (অগ্নয়ে নমঃ); অর্থাৎ অগ্নিপরিচর্যায় অন্নলাভ হয়–এটাই বক্তব্য। অগ্নিদেব আমাদের সভ্যং অর্থাৎ পুত্রমিত্র-পশু ইত্যাদি সঙ্ রক্ষা করুন এবং যারা সমাজের সভাসদ (সভ্যাঃ সভাসদঃ), তারাও; অর্থাৎ তারাও আমাদের পুত্র-মিত্র ইত্যাদিকে রক্ষা করুন।৫৷৷

 হে (পুরুত) বহু জনের দ্বারা আহূত, ঐশ্বর্যসম্পন্ন (ইন্দ্র) অগ্নি! তুমি আমাদের সম্পূর্ণ আয়ু, অর্থাৎ অন্ন বা জীবন, প্রদান করো (বিশ্বম্ আয়ুঃ অশ্নবৎ)। অবস্থানকারী অশ্বকে তৃণ ইত্যাদি (ঘাসং) প্রদানের মতো (ইত্যে), গৃহে বিরাজমান অগ্নিকে যারা প্রতিদিবসে (অহরহঃ) পূজোপহার (বলিং) প্রদান করে (হরন্তঃ) তাদের আয়ু প্রাপ্ত করাও ৬

টীকা –সপ্তম অনুবাকের চতুর্দশটি সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত প্রথম সূক্তটির বিনিয়োগ প্রাতঃকালে অগ্নির উপস্থাপনে অর্থপ্রকাশনসামর্থ্যানুসারে অবগন্তব্য ॥ (১৯কা, ৭অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : দুঃস্বপ্ননাশনম

[ঋষি : যম দেবতা : দুঃস্বপ্ননাশনম ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

যমস্য লোকাদধ্যা বভূবিথ প্রমদা মান্ প্র যুনক্ষি ধীরঃ। একাকিনা সরথং যাসি বিদ্বাস্বপ্নং মিমানো অসুরস্য যোনৌ ॥১৷৷ বন্ধস্যাগ্রে বিশ্বচয়া অপশ্যৎ পুরা রাা জনিততরেকে অহ্নি। ততঃ স্বপ্নেদমধ্যা বভূবিথ ভিষগুভ্যো রূপমপগৃহমানঃ ॥ ২॥ বৃহঙ্গাবাবাসুরেডভ্যাধি দেবানুপাবর্তত মহিমামিচ্ছ। তস্মৈ স্বপ্নয় দধুরাধিপত্যং ত্রয়স্ত্রিংশাসঃ স্বরানশানাঃ ॥৩॥ নৈতাং বিদুঃ পিতরো নোত দেবা যেষাং জল্পিশ্চরত্যন্তরেদ। ত্রিতে স্বপ্নমধুরাপ্ত্যে নর আদিত্যাসো বরুণেনানশিষ্টাঃ ॥৪॥ যস্য ক্রমভজন্ত দুষ্কৃতোহস্বপ্নেন সুকৃতঃ পুণ্যমায়ুঃ। স্বৰ্মদসি পরমেণ বন্ধুনা তপ্যমানস্য মনসোহধি জজ্ঞিষে ॥ ৫৷৷ বিপ্ন তে সর্বাঃ পরিজাঃ পুরস্তাৎ বিপ্ন স্বপ্ন যো অধিপা ইহা তে। যশস্বিনো নো যশসেহ পাহারা দ্বিষেভিরপ যাহি দূর ৷৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –[এই সূক্তে দুঃস্বপ্নের প্রভার বর্ণিত হচ্ছে ]–হে দুঃস্বপ্নাভিমানী ক্রুর পিশাচ! তুমি যমলোক হতে (যমস্য লোকাৎ) পৃথিবীতে আগত হয়েছে (আ বভুবিথ), এবং ভীত না হয়ে (ধীরঃ) স্ত্রী (প্রমদা) ও পুরুষগণের (মা) প্রতি আপন স্বরূপ সন্দর্শন করাচ্ছো (প্র যুনক্ষি), অর্থাৎ মৃত্যুসূচক দুঃস্বপ্ন প্রদান করছে। অনন্তর দেহধারীবর্গের আয়ুবৃদ্ধি ও অবৃদ্ধি বিদিত হয়ে (বিদ্বান), তুমি তাদের প্রাণবত উপলব্ধিস্থানে (অসুরস্য যোনৌ) অর্থাৎ হৃদয়ে কষ্টকর অনিষ্টফলদায়ক স্বপ্ন সৃষ্টি করে (মিমানঃ) একাকী (একাকিনা) অর্থাৎ পুত্র-কলত্র ইত্যাদির বন্ধন ত্যাগ করিয়ে ম্রিয়মাণ অসহায় পুরুষের সাথে সরথে অর্থাৎ একই রথে গমন করছো (সরথম যাসি), অর্থাৎ দুঃস্বপ্নদর্শী এক পুরুষকে যমলোক-প্রাপ্তি করাচ্ছো ॥১॥

[অহোরাত্র সৃষ্টির পূর্বেই দুঃস্বপ্ন উৎপন্ন হয়েছিল? এখানে সেই কথাই বলা হচ্ছে ]–হে দুঃস্বপ্নভিমানী! তোমাকে সৃষ্টির প্রাক্কালে (ত্বা অগ্রে) সকলের স্রষ্টা, (বিশ্বয়ো), সকল প্রাণীর বিধাতা (বন্ধঃ), মানসসৃষ্ট প্রজাপতিগণ (একে) অহোরাত্রকাল প্রাদুর্ভাবের পূর্বে (পুরা রাত্রা অহ্নি জনিতোঃ) দর্শন করেছিলেন। তারপর, হে স্বপ্ন! তুমি সকল জগতে ব্যাপ্ত হয়ে (ইদম্ অধি আ বভূবিথ) চিকিৎসগণের নিকট হতে (ভিষ্য ) আপন আকৃতি বা স্বরূপ (রূপ) আচ্ছাদিত করে (অপগৃহমানঃ) রয়েছে। (স্বরূপ আচ্ছাদনের অভিপ্রায় এই যে, ভিষগণ যেন দুঃস্বপ্ন রোগের স্বরূপ ও তার নিদান জ্ঞাত হয়ে ঔষধ ইত্যাদির দ্বারা তার প্রতীকার করতে অক্ষম হন)। ২৷৷

দুষ্পধর্ষ বা দুর্ধর্ষ পুরুষগণের অধিক গমনকারী বা ব্যাপ্তকারী (বৃহঙ্গাবা) তথাবিধ স্বপ্ন অসুরগণের নিকট হতে অর্থাৎ স্বয়ং অসুরপক্ষীয় হয়ে তাদের নিকট হতে দেবতবর্গের সমীপে গমন করে। (কি জন্য?–না) মহিমানং ইচ্ছন অর্থাৎ মহত্বের প্রভাবের কামনায়। (পূর্বে অসুরদের মধ্যে যারা সাধারণ পুরুষত্ব সম্পন্ন, তারা অসুরগণের নিকট হতে তাদের অপেক্ষাও অধিক সৌভাগ্য লাভের কামনায় দেবতাগণকে প্রাপ্ত হয়। যেমন লোকে কোন বলবান পুরুষ আপন রাজার নিকট প্রভূত সম্মান প্রাপ্ত না হয়ে পররাষ্ট্র-রাজার কিংবা আপন রাজার শত্ৰুভূত রাজার সমীপে গমন করে), দুঃস্বপ্নও তেমনই ভাবে অসুররাজ্য হতে স্বর্গ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়েছিল (স্বঃ আনশানাঃ)। তেত্রিশসংখ্যক (ত্রয়স্ত্রিংশাসঃ) স্বর্গদেবতা (অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য, প্রজাপতি ও বষট্‌কার) সেই স্বপ্নকে অর্থাৎ দুঃস্বপ্নকে সর্বলোকের অনিষ্টকর লক্ষণযুক্ত আধিপত্য (আধিপত্যম) বা অধিকার প্রদান করেছেন (দধুঃ) ৷৷ ৩৷

তেত্রিশসংখ্যক দেবগণের সেই জল্পনা (যা জল্পিঃ) অর্থাৎ প্রাণীগণ আপন আপন কর্ম অনুসারে দুঃস্বপ্নদর্শননিবন্ধন অনিষ্টফলকারিত্ব-লক্ষণরূপ যে দুঃস্বপ্নের অধিকারভুক্ত–সেই জল্পনা, পিতৃগণ জানেন না (পিতরঃ ন বিদুঃ), অধিকন্তু (উত) ঐ তেত্রিশসংখ্যক দেবতা ব্যতিরিক্ত অন্য দেবগণও জানেন না। আধিপত্য প্রদানরূপ এই বাক্য (যৎ) জগতের মধ্যে (অন্তরা) ভক্ষিত হচ্ছে (চরতি)। (এইরূপে দেবগণের দ্বারা লাধিপত্য হয়ে, প্রবল। হয়ে, দুঃস্বপ্ন আপন আধিপত্যদাতা দেবগণের অন্যতম আদিত্য নামক দেবগণকে গ্রহণ করলো। তখন আদিত্যবর্গ পরস্পর বিচার করে বরুণ দেবতাকে বললেন–আমাদের দ্বারা লব্ধপ্রভাব হয়ে দুঃস্বপ্ন আমাদেরই গ্রহণ করলো, অতএব কি করা যায়? দেবতাগণ কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়ে বরুণ এই স্বপ্নপ্রতীকারেরও উপদেশ দিয়েছিলেন।–কি সেই উপদেশ? এবার সেই কথা বলা হচ্ছে)–নেতা (নরঃ) অদিত্যগণ পাপনিবারক বরুণদেবের দ্বারা সম্যক উপদিষ্ট হয়ে (অনুশিষ্টাঃ) জলের পুত্র (আপ্ত্যে) মহর্ষি ত্রিতের সকাশে অনিষ্টফলসূচক দুঃস্বপ্নকে স্থাপিত করেছিলেন (অদধুঃ)। ৪

দুষ্কর্মকারী পাপী পুরুষগণ (দুষ্কৃতঃ) দুঃস্বপ্নের (যস্য) ভয়ঙ্কর অনিষ্ট ফল (রং) প্রাপ্ত হয় (অভজন্ত), সুকর্মকারীগণ (সুকৃতঃ) দুঃস্বপ্নদর্শন না করে (অস্বপ্নেন) পুণ্যকর্ম-নিমিত্ত (পুণ্যং) জীবন (আয়ু) লাভ করে। (হে) দুঃস্বপ্ন! স্বর্গলোকে (স্বঃ) সৃষ্টির প্রাক্কালে তোমাকে দৃষ্টিবন্ত সর্বোত্তর (পরমেণ) বন্ধু (বন্ধুনা) বিধাতার সাথে তুমি আনন্দজনিত সম্মোহ প্রাপ্ত হয়েছিল (মদসি)। মৃত্যুপাশে সন্তপ্তমান দুষ্কর্মকারী পুরুষের (তপ্যমানস্য) মন হতে (মনসঃ অধি) মৃত্যুসূচনার নিমিত্ত তুমি প্রাদুর্ভূত হয়েছে (জজ্ঞিসে) ৫

হে স্বপ্ন! তোমার অগ্রগামী অর্থাৎ পূর্ববর্তী (পুরস্তাৎ) সকল পরিজনবৃন্দকে (পরিজাঃ) আমি জ্ঞাত আছি (বিদ্ম)। এইরকমে তোমার ইদানীন্তন (ইহ) যে স্বামী বা পালক, তাকেও আমি জ্ঞাত আছি। তোমার স্বরূপ সম্পর্কে বিদিত আমরা, আমাদের অন্নের বা যশের নিমিত্ত সমীপবর্তী হয়ে রক্ষা করো (আরাৎ পাহি) এবং দ্বেষকারীগণের সাথে (দ্বিষেভিঃ)। আমাদের নিকট হতে দূরদেশে (দূর) অপসারিত হয়ে যাও (অপ যাহি) ৷ ৬ ৷৷

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির দ্বারা দুঃস্বপ্ননাশকর্মে লৈঙ্গিকবিনিয়োগ অবগন্তব্য। (১৯কা, ৭অ, ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : দুঃস্বপ্ননাশনম্

[ঋষি : যম দেবতা : দুঃস্বপ্ননাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, জগতী]

যথা কলাং যথা শফং যথর্ণং সন্নয়ন্তি। এবা দুম্বপ্নং সর্বৰ্মপ্রিয়ে সং নয়ামসি ॥১॥ সং রাজানো অগুঃ সমৃণান্যগু সঃ কুণ্ঠা অগুঃ সং কলা অগুঃ। সমস্মাসু যদুম্বপ্নং নির্দিষতে দুম্বপ্ন্যং সুবাম ॥ ২॥ দেবানাং পত্নীনাং গর্ভ যমস্য কর যো ভদ্রঃ স্বপ্ন। স মম যঃ পাপস্তদ্বিষতে প্র হিন্মঃ। মা তৃষ্টানামসি কৃষ্ণশকুনের্মুখম্ ॥৩৷৷ তং ত্বা স্বপ্ন তথা সং বিদ্ম স ত্বং স্বপ্না ইব কায়মশ্ব ইব নীনাহ। অনাম্মাকং দেবপীয়ুং পিয়ারুং বপ যদম্মাসু দুম্বপ্নং যদ গোষু যচ্চ নো গৃহে ॥৪॥ অনাস্মাকস্তদ্বেপীয়ুঃ পিয়ারুনিষ্কমিব প্রতি মুঞ্চতা। নবরত্নীনপময়া অস্মাকং ততঃ পরি। দুম্বপ্ন্যং সর্ব দ্বিষতে নির্দয়ামসি ॥ ৫৷৷

বঙ্গানুবাদ –যেমন অবদানার্থে বা সংস্কার কর্মে ঋত্বিকবৃন্দ হত পশুর কলা (স্নায়ু দ্বারা আচ্ছাদিত, জরায়ু দ্বারা পরিব্যাপ্ত এবং শ্লেষ্ম দ্বারা পরিবেষ্টিত দেহখণ্ড), খুর (শফ) ইত্যাদি অন-অবদানীয় অঙ্গগুলি অন্যত্র উঠিয়ে নেন (সন্নয়ন্তি), বা যেমন প্রবৃদ্ধ ঋণ অর্থাৎ অতিশয় প্রাচীন ঋণ উত্তমর্ণকে প্রত্যর্পণ করা হয়, সেইরকম এই কষ্টস্বপ্ননিমিত্তক সকল অনর্থ (দুঃস্বপ্নম্ সর্ব অপ্রিয়ে) জলের পুত্র ত্রিত নামক মহর্ষিতে প্রমার্জিত বা স্থাপিত করছি (সম্ নয়ামসি) ॥১॥

রাজন্যবৃন্দ যেমন পররাষ্ট্র বিনাশের নিমিত্ত সংহত হন (রাজানঃ সম্ অগু); ঋণসমূহ যেমন বহুভাবে বৃদ্ধি লাভ করে (ঋণানি সম্ অগুঃ); অর্থাৎ একটি ঋণ পরিশোধ হতে না হতেই উপর্যুপরি ঋণ গ্রহণের ফলে ঋণের যেমন ক্রমিক বৃদ্ধি ঘটে; কুষ্ঠ নামক ত্বক-ব্যাধি উপলক্ষ করে যেমন বহু রোগের সৃষ্টি হয় (কুষ্ঠাঃ সম্ অগুঃ), অর্থাৎ একটি কুষ্ঠরোগ অচিকিৎসিত থাকলে তার উপরে পিটক-ব্রণ ইত্যাদির উদ্ভব হয়ে থাকে; অনুপাদেয়-অবয়ব (কলাঃ) অর্থাৎ পশুর বর্জনীয় অবয়বসমূহ যেমন জীর্ণ কূপ ইত্যাদিতে সংহত বা পুঞ্জিত হয় (সম্ অগুঃ); সেই রকমে আমাদের দুঃস্বপ্ননিমিত্তক যে অনর্থগুলি আছে, তা অর্থাৎ সেই সংহত দুঃস্বপ্নের অনিষ্ট সমুদায় আমাদের দ্বেষকারীগণের (দ্বিষতে) নিকট প্রেরণ করছি (নিঃ সুবাম)। ২৷৷

হে দেবগণের ও পত্নীবর্গের গর্ভ ১ অর্থাৎ দেব গন্ধর্ব ও পত্নী অপ্সরাগণের পুত্র (গর্ভ); হে প্রেতাধিপতি যমের হস্তস্বরূপ (যমস্য কর)! অর্থাৎ দুঃস্বপ্ন ব্যপদেশে উন্মাদনগ্রস্ত পুরুষকে যম গ্রহণ পূর্বক বধ করেন, সুতরাং দুঃস্বপ্ন তাঁর হস্তস্বরূপ; এই হেন হে স্বপ্ন! তোমার মঙ্গলকারী (ভদ্রঃ) যে অংশ আছে, সেই অংশ আমার হোক (সে মমাস্তু)। যে পাপ অর্থাৎ ক্রুর অনিষ্টকরী অংশ আছে, তা শত্রুদের নিকট প্রেরণ করছি (তৎ দ্বিষতে প্র হিম্মঃ)। কৃষ্ণবর্ণ শকুন অর্থাৎ বায়স বা কাকের মুখের ন্যায় মুখসম্পন্ন স্বপ্ন যেন আমাদের বাধক না হয় (মা তৃষ্টানা অসি) ৷ ৩৷৷

 হে স্বপ্ন! সেই হেন তোমাকে (তং ত্বা) যে প্রকারে বা যে জন্য তুমি উৎপন্ন বা আগত হয়েছে, তার সবই আমরা জ্ঞাত আছি (সং বিদ্ম)। হে স্বপ্ন! অশ্ব যেমন স্বকীয় ধূলিধূসর অঙ্গ (কায়) ধূনন করে, অর্থাৎ ঝাড়তে থাকে, এবং কবচ ইত্যাদি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত করে, সেইরকম কেবল আমাদের বাধকগণই (পিয়ারুঃ) নয়, দেবতাগণের যজ্ঞবিঘাতক শত্রুগণও (দেবপীয়ুঃ) তোমার অর্থাৎ দুঃস্বপ্নফল প্রাপ্ত হোক; আমাদের বপুতে অর্থাৎ শরীরে যে দুঃস্বপ্ন বর্তমান, গাভীগণের যে অনর্থসূচক দুঃস্বপ্ন বর্তমান, আমাদের গৃহে যে দুঃস্বপ্নজনিত অনিষ্টসমূহ বর্তমান, সেইগুলি সবই উৎপাটিত করে দাও। ৪।

সেই দুঃস্বপ্নজাত অনিষ্টসমূহ দেবতাগণের যজ্ঞবিঘাতক শত্রুগণ (দেবপীয়ুঃ) ও আমাদের বাধকগণ (পিয়ারুঃ) সুবর্ণনির্মিত আভরণের মতো (নিষ্কমিব) আপন শরীরে ধারণ করুক (প্রতি মুঞ্চতাৎ)। আমাদের সম্বন্ধীয় দুঃস্বপ্ন আমাদের নিকট হতে নয় অররি পর্যন্ত অর্থাৎ কনুই হতে বিস্তৃত কনিষ্ঠাঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত যে হস্তপরিমাণ তার নয় গুণ পরিমিত দূরে অপসারিত করে দাও, অর্থাৎ যাতে তাদের সংস্পর্শ না ঘটে তেমন করো। অনন্তর (ততঃ) সেই দুঃস্বপ্ন হতে উৎপন্ন সকল কুফল বিদ্বেষপরায়ণ শত্রুদের নিকট প্রেরণ করবো ৷৷ ৫

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির দ্বারা পুরোহিত কর্তৃক দুঃস্বপ্নদর্শনকারী রাজার অভিমন্ত্রণ করণীয়। পরিশিষ্টে এর বিশদ নির্দেশ আছে ৷ (১৯কা, ৭অ, ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : যজ্ঞঃ

[ঋষি : ব্রহ্ম দেবতা : বহুর্দেবতা ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, শক্করী]

 ঘৃতস্য জুতিঃ সমনা সদেবা সম্বৎসরং হবিষা বর্ধয়ন্তী। শ্রোত্রং চক্ষুঃ প্রাণোচ্ছিন্নো নো অস্তৃচ্ছিন্না বয়মায়ুযো বচসঃ ॥১॥ উপাস্মন্ প্রাণো হয়তামুপ বয়ং প্রাণং হবামহে৷ বর্চো জগ্রাহ পৃথিব্যন্তরিক্ষং বর্চঃ সোয়মা বৃহস্পতির্বিত্তা ৷ ২৷৷ বসো দ্যাবাপৃথিবী সংগ্ৰহণী বভূবথুবর্চো গৃহীত্বা পৃথিবীমনু সং চরেম। যশসং গাবোগোপতিমূপ তিন্ত্যায়তীর্যশো গৃহীত্বা পৃথিবীমনু সং চরেম ৷ ৩৷৷ ব্ৰজং কৃণুধ্বং স হি বো নৃপাণো বর্মা সীব্যধ্বং বহুলা পৃথুনি। পুরঃ কৃণুধ্বমায়সীরপৃষ্টা মা বঃ সুস্রোচ্চমসো দৃংহতা তম্ ॥৪॥ যজ্ঞস্য চক্ষুঃ প্রভৃতিমুখং চ বাঁচা শ্রোত্রেণ মনসা জুহোমি। ইমং যজ্ঞং বিততং বিশ্বকর্মণা দেবা যন্তু সুমনস্যমানাঃ ॥৫॥ যে দেবানামৃত্বিজো যে চ যজ্ঞিয়া যেভভ্যা হব্যং ক্রিয়তে ভাগধেয়। ইমং যজ্ঞং সহ পত্নীভিরেত্য যাবন্তো দেবাস্তবিষা মাদয়স্তাম্ ॥৬॥

 বঙ্গানুবাদ –[এই সূক্তে মনের দ্বারা নিম্পাদিত যজ্ঞের অর্থাৎ মানসযজ্ঞের স্তুতি করা হয়েছে। পরমাত্ম-বিষয়ক বুদ্ধি অর্থাৎ স্বরূপবিষয়ক জ্ঞান, যা সমানমনস্ক সকল প্রাণীর প্রজ্ঞানে সমাশ্রিত, তা সর্বপ্রাণীসম্বন্ধিনী সম্বৎসরাত্মক ঈশ্বরকে শব্দ, স্পর্শ ইত্যাদিরূপ প্রপঞ্চের দ্বারা হৃয়মান হয়ে বর্ধিত করে। এই হেন জ্ঞানযজ্ঞের প্রবর্তক আমাদের শ্রোত্র, চক্ষু, প্রাণ (অর্থাৎ শরীরধারক বায়ু) ইত্যাদি উপলক্ষণরূপ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয় অবিনশ্বর (অচ্ছিন্ন) হোক; এবং আমরা জীবন। (আয়ুযো) ও তেজের দ্বারা (বৰ্চসঃ) অচ্ছিন্ন অর্থাৎ ছেদ বা বিনাশরহিত হবো। [ইন্দ্রিয় ইত্যাদির বাহ্যবিষয় প্রবর্তন-পরিহারের মাধ্যমে আত্মবিষয়ত্ব করণের দ্বারা সেগুলির বিচ্ছেদাভাব আশা করা হচ্ছে ]। ১।

মানসযজ্ঞের প্রবর্তক আমাদের প্রাণ অর্থাৎ প্রাণ-অপান-সমান-উদান-ব্যান শরীরধারক এই পঞ্চকবৃত্তিক বায়ু চিরকাল জীবিত থাকার নিমিত্ত অনুজ্ঞা প্রদান করুক (উপ হুয়তাং); এবং আমরাও প্রাণকে আমাদের শরীরে চিরকাল অবস্থানের নিমিত্ত প্রার্থনা করছি (উপ হবামহে)। পৃথিবী ও অন্তরিক্ষ আমাদের প্রদানের উদ্দেশ্যে বৰ্চঃ বা তেজঃ অর্থাৎ শরীরধারক ওজঃ নামক অষ্টম ধাতু স্বীকৃতবতী হয়েছে অর্থাৎ গ্রহণ বা ধারণ করেছে (জগ্রাহ)। তথা সোম, বৃহস্পতি ও বিশেষভাবে ধারণকর্তা (বিধস্তা) অর্থাৎ অগ্নি বা সূর্যও আমাদের প্রদানের উদ্দেশ্যে ওজঃ গ্রহণ বা ধারণ করেছেন। ২৷৷

হে দ্যুলোক ও ভূলোক (দ্যাবাপৃথিবী)! তোমরা আমাদের নিমিত্ত তেজঃ (বৰ্চসঃ) সংগ্রহকারিণী হও (সংগ্ৰহণী বভূবথুঃ) অর্থাৎ আমাদের তেজঃ-প্রদাত্রী হও। আমরা তোমাদের প্রদত্ত তেজঃ (বৰ্চঃ) অবলম্বন করে (গৃহীত্ব) ভূলোক ও দ্যুলোক লক্ষ্যীকৃত পূর্বক (অনু) সঞ্চরণ করবো (সং চরেম)। তারপর ধেনু বা গাভীগণ গো-স্বামী আমাদের সমীপে অন্নের বা কীর্তির (যশস্য) সাথে আগত্মন পূর্বক অবস্থান করুক (উপ তিষ্ঠন্তি)। তার ফলে আমরা আগমনকারী ধেনু (আয়তীঃ) ও যশ অবলম্বন পূর্বক উভয়লোকে অর্থাৎ পৃথিবী ও দ্যুলোকে কিংবা ভূলোকে সঞ্চরণ করবো (সং চরেম)। ৩

[এইটি এবং এর পরবর্তী ঋগুলি তিন রকম অর্থে নীত হয়েছে–যথা ইন্দ্রিয়পরত্ব, ঋত্বিরত্ব ও যোদ্ধাপরত্ব ]-হে ইন্দ্রিয় সমুদয়! তোমরা এই মানসযজ্ঞের প্রবর্তনাধিষ্ঠানভূত শরীরে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে অবস্থান করো (ব্রজং কৃণুধ্বং); যে কারণে (হি) সেই দেহই (স) আপন আপন বিষয়ে প্রবর্তমান তোমাদের রক্ষক (বঃ নৃপাণঃ), অর্থাৎ শরীরের স্থিতিতেই তোমাদের অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সকলের অবস্থান; অথবা–আপন আপন বিষয়ে প্রবর্তনই তোমাদের অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সমূহের পানস্থান। বর্ম অর্থাৎ প্রতিবন্ধকরূপ বিষয়াখ্য বস্তুসমূহকে  সম্বন্ধিত করো, অর্থাৎ শব্দ ইত্যাদিকে আপন আপন ব্যাপারের বিষয়ীভূত করো; (কিরকম বস্তুসমূহ? না– বহুলা পৃথুনি অর্থাৎ অধিক বিস্তীর্ণ। তথা তাদের লৌহবৎ সারভূত (আয়সীঃ), পরের দ্বারা অধৃষ্যমান অর্থাৎ অপরাজেয় (অধৃষ্টাঃ) এবং আপন আপন বিষয়গ্রহণে সমর্থ করো (পুরঃ কৃণুধ্বং)। তোমাদের (বঃ) চমসবৎ ভাগসাধনভূত দেহ (চমসঃ) যেন বিনাশপ্রাপ্ত না হয় (মা সুস্রেৎ); সেই দেহ (তং) দৃঢ় করো। [ইন্দ্রিয়পরত্ব রূপে এই মন্ত্রের উপযুক্ত ব্যাখ্যার পর। ঋত্বিপরত্বরূপে এর ব্যাখ্যা আছে। যথা–হে ঋত্বিজঃ ব্রজং কৃণুধ্বং গোষ্ঠং কুরুত…ইত্যাদি। আবার যোদ্ধাপরত্বরূপে এর ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে–হে যোদ্ধারঃ ব্রজং সঙ্ঘাতাত্মকং গ্রামং কুরুত… ইত্যাদি] ৪

[এই ঋকটি ২য় কাণ্ডের ৬ষ্ঠ অনুবাকের ৪র্থ সূক্তের ৫ম মন্ত্রে ব্যাখ্যাত হয়েছে ] মনোযজ্ঞের সমন্ধী চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয় সমুদায়ের দ্বারা যাগ করছি; অর্থাৎ তিনি অগ্নি- যজ্ঞের চক্ষুস্বরূপ আদিভূত মুখের ন্যায় মুখ্য। মনের দ্বারা যাগযোগ্য ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের ধ্যান পূর্বক শ্রোত্র ইত্যাদি যুক্ত অন্তঃকরণের দ্বারা সেই অগ্নিতে ঘৃত ইত্যাদি আহুতি প্রদান করছি। বিশ্বস্রষ্টা দেবের দ্বারা অনুষ্ঠীয়মান এই যজ্ঞে ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ অনুগ্রহ বুদ্ধিতে অর্থাৎ শোভন মনঃসম্পন্ন হয়ে আগমন করুন ৫

দেবগণের মধ্যে যাঁরা ঋত্বিক (দেবানাং যে ঋত্বিজঃ) অর্থাৎ ঋতু-যজ্ঞে যাঁরা ঋত্বিভূত যজমানরূপে বিদ্যমান; এবং যাঁরা যজ্ঞাহ (যে চ যজ্ঞিয়া) অর্থাৎ যে দেবগণ যাগের উপযুক্ত; উভয়প্রকার যে দেবগণের উদ্দেশে ভাগরূপ হবিঃ প্রদত্ত হয় (যেভ্যো হব্যম্ ক্রিয়তে ভাগধেয়); যে পরিমাণ দেবগণ আছেন (যাবন্তঃ দেবাঃ); সেই মহান দেবগণ সকলে (তাবন্তস্তবিষা) পত্নীগণ সমভিব্যাহারে (পত্নীভিঃ সহ), অর্থাৎ আপন আপন নারীগণ সহ; এই যজ্ঞে আগমন পূর্বক (ইম যজ্ঞং আইত্য) হবিঃ স্বীকারপূর্বক প্রসন্ন বা তৃপ্ত হোন (মাদয়ন্তাং)। ৬।

টীকা— এই সূক্তের বিনিয়োগ অর্থপ্রকাশনসামর্থ্যানুসারে অবগন্তব্য। সেই অনুযায়ী দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞে রাজ্যভাগ হোমের পূর্বে উপযুক্ত ৪র্থ ঋকটি আজহোমে বিনিয়োগ কর্তব্য। (কৌ. ১/৩)। মানসযজ্ঞে শব্দাদি বিষয়ে জ্ঞানাগ্নিতে হোম-নিষ্পন্ন সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উল্লেখ আছে–নৈষ্ঠিকব্রহ্মচারিগণ সেই সেই ইন্দ্রিয়সংযমরূপ অগ্নিতে চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়কে আহুতি দান করেন–প্ৰলীন করেন, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সকলকে নিরোধ করে সংযমপ্রধান হয়ে অবস্থান করেন। অপরে–গৃহস্থগণ ইন্দ্রিয়গণরূপ অগ্নিসমূহে শব্দ ইত্যাদি আহুতি দান করেন অর্থাৎ বিষয়ভোগসময়েও অনাসক্তভাবে অবস্থানপূর্বক অগ্নিরূপে চিন্তিত ইন্দ্রিয়সকলে ঘৃতরূপে ভাবিত শব্দাদি বিষয়সমূহ আহুতিরূপে নিক্ষেপ করেন। (শ্লোক-৪/২৬)। অপরে–ধ্যাননিষ্ঠগণ, [ইন্দ্রিয়কর্মসকল ]–জ্ঞানেন্দ্রিয়গণের-শ্রবণাদি ইন্দ্রিয়ের কর্ম–শ্রবণদর্শনাদি এবং বাপাণিপ্রভৃতি কর্মেন্দ্রিয় সমূহের বচন-উপাদানাদি কর্মসকল, [প্রাণ-কর্মসকল ]–দশ প্রাণের কর্ম সকল, যথা প্রাণে বহির্গমন, অপানের অধোগমন, ব্যানের! আকুঞ্চন-প্রসারণাদি (শ্বাস-প্রশ্বাসাদি), সমানের ভক্ষিত ও পীত পদার্থের সমুন্নয়ন, উদানের ঊধ্বনয়ন। উগ্লারে নাগ নামক বায়ু, প্রসিদ্ধ, উন্মীলনে কূর্ম কথিত, ক্ষুকর বায়ু কৃকর নামে জ্ঞাতব্য, বিজ্বম্ভণে (হাইতোলা-সময়ে) বায়ু বেদত্ত নামে কথিত। সর্বব্যাপী ধনঞ্জয় নামক বায়ু মৃতব্যক্তিকেও পরিত্যাগ করে না। এইরকম প্রাণবায়ুসকলকে আহুতি দান করে। [আত্মসংযম-যোগাগ্নিতে] –আত্মাতে সংযম-ধ্যানে একাগ্রতা, তাই-ই যোগ, সেইরকম অগ্নি তাতে, [ জ্ঞানদীপিত জ্ঞান দ্বারা ধ্যেয়বিষয়দ্বারা দীপিত প্রজ্বলিত হলে তাতে ধ্যেয় বস্তুকে সম্যক অবগত হয়ে তাতে মনঃসংযত করে সকল কর্ম উপরত করেন। (শ্লোক-৪/২৭)। (১৯কা, ৭অ, ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : যজ্ঞঃ

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

ত্বমগ্নে ব্রতপা অসি দেব আ মর্তে। ত্বং যজ্ঞেম্বিড্যঃ ॥১॥ যদ বো বয়ং প্রমিনাম ব্ৰতানি বিদুষাং দেবা অবিদুষ্টরাসঃ। অগ্নিষ্টদ বিশ্বাদা পৃণাতু বিদ্বাৎসোমস্য যো ব্রাহ্মণা আবিবেশ ॥ ২॥ আ দেবানামপি পন্থামগন্ম যচ্ছরুবাম তদনুপ্রবোম। অগ্নির্বিদ্বাৎস যজাৎ স ইদ্ধোতা সোহধ্বরাৎস ঋতুন কল্পয়াতি ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তুমি ব্রতের অর্থাৎ কর্মসমূহের পালকরূপে বিদ্যামান আছো (ত্বম অগ্নে ব্রতপা অসি)। তুমি মরণধর্মাগণের অর্থাৎ মনুষ্যগণের মধ্যে দ্যোতমান জঠরাগ্নিরূপে সব কিছু ব্যেপে বিরাজমান (মর্তে্যু দেবঃ আ); এবং তুমি দর্শপূর্ণমাস ইত্যাদি সকল যজ্ঞে (যজ্ঞে্যু) স্তোতব্য অর্থাৎ কীর্তিত হয়ে থাকে (তম ঈড্যঃ)। ১।

 হে দেবগণ তোমরা বিদ্বান, তোমাদের কর্মসমূহ (ব্ৰতানি) অর্থাৎ কর্মমার্গ জ্ঞাত না হয়ে (অবিদুঃতরসি) আমরা (বয়ং) (যৎ) যা প্রকর্ষের সাথে বিনাশ। করেছি (প্রমিনাম), সেই লুপ্তকর্ম (তৎ বিশ্বৎ) জ্ঞাত হয়ে (বিদ্বান) অগ্নি তা আপূরণ করুন (আ পৃণাতি)। (কোন্ অগ্নি? না–) যে অগ্নি সোমের উদ্দেশে যাগকারী ব্রাহ্মণগণের মধ্যে আবিষ্ট রয়েছেন, অর্থাৎ তাদের অভিমুখে গতবান্ হয়েছেন। ২।

 যজ্ঞার্হ দেবগণকে যে পথে প্রাপ্ত হওয়া যায়, সেই পথেও আমরা প্রবেশ করছি (আ আগন্ম)। (কি জন্য? না–) আমরা যে অনুষ্ঠান করছি (শকুয়াম), সেই অনুষ্ঠানে অনুক্রমে উপনীত হওয়ার নিমিত্ত (প্রবোহ্লাং) আমরা দেবগণের পথের অর্থাৎ দেবযান মার্গের অনুগত হয়েছি। অনন্তর সেই অগ্নি সেই পথ বিদিত হয়ে (সঃ অগ্নি তৎ পন্থানং বিদ্বা) দেবগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করুন (যজাৎ)। তিনিই অর্থাৎ সেই অগ্নিই (সে) হোতা, অর্থাৎ মনুষ্যগণের বা দেবগণের আহ্বায়ক; তিনিই অর্থাৎ সেই অগ্নিই অধ্বর (অধ্বরা) অর্থাৎ হিংসারহিত যজ্ঞ, এবং তিনিই (সঃ) যজ্ঞকাম উদ্ভাবিত করুন (ঋতুন কল্পয়াতি), অর্থাৎ অহিংসিত যজ্ঞের সময় নিশ্চিত করুন ৷ ৩৷৷

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি দর্শ বা পূর্ণমাস যজ্ঞের ব্যতিক্রমে আজহোমে বা শান্তসমিদাধানে বিনিযুক্ত হয়। কৌশিক সংহিতায় এর বিধি সূত্রিত আছে। (কৌ. ১/৬)। (১৯কা, ৭অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : অঙ্গানি

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : বাক্ অঙ্গসমূহ ছন্দ : বৃহতী, উষ্ণি]

বাঘ আসন্নসোঃ প্রাণশ্চক্ষুরক্ষোঃ শ্ৰোত্ৰং কৰ্ণয়োর। অপলিতাঃ কেশা অশোণা দন্তা বহু বার্বেলম্ ॥ ১। ঊর্বোরোজো জঘয়োর্জবঃ পাদয়োঃ। প্রতিষ্ঠা অরিষ্টানি মে সর্বাত্মনিভৃষ্টঃ ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –(অগ্নির কৃপায়) আমার মুখে বাণী, নাসিকাদ্বয়ে প্রাণ (বায়ু), নেত্রদ্বয়ে দর্শনশক্তি, কর্ণযুগলে শ্রবণশক্তি, কেশে অপলিততা অর্থাৎ কৃষ্ণকেশ বা অবার্ধক্য, দন্তের শুভ্রতা বা অক্ষুণ্ণতা, ও প্রভূত বাহুবল লাভ করবো ১

সেইরকম (অগ্নির কৃপায়) আমি ঊরুদেশে অর্থাৎ জানুর উপরিভাগে ও জঙ্ঘায় অর্থাৎ জানু হতে পাদগ্রন্থি বা গোড়ালি পর্যন্ত অংশে ওজঃ অর্থাৎ বল এবং পাদযুগলে ঋজুতা (আর্জবঃ) অর্থাৎ গমন-বেগ লাভ করবো। আমার আত্মা অহিংসিত এবং অঙ্গ সর্বাত্মক পাপ হতে মুক্ত হোক অর্থাৎ সকল অনিষ্ট শূন্য হোক। ২।

টীকা –মূল পুঁথি অবলম্বনে ৭ম অনুবাকের ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম সূক্ত যথাযথ বিভাজিত হয়ে উল্লেখিত। কিন্তু স্বর্গীয় দুর্গাদাস এই পাঁচটি সূক্তকে একটি সূক্তের অন্তর্গত করেছেন। সুতরাং এইটি এবং এর পরবর্তী চারটি সূক্তের বিনিয়োগ একসঙ্গে ১০ম সূক্তের টীকায় উল্লেখ করা হয়েছে ৷ (১৯কা. ৭অ. ৬সূ.)।

.

সপ্তম সূক্ত : পূর্ণায়ুঃ

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ব্ৰহ্মণস্পতি ছন্দ : বৃহতী]

তনুশুম্বা মে সহে দতঃ সর্বময়ুরশীয় স্যোনং মে সীদ পুরুঃ পৃণস্ব পবমান্বঃ স্বর্গে ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –(অগ্নির কৃপায়) আমি আমার আপন শারীরিক বলে শত্রু-শরীরকে অবদমিত করবো এবং সমগ্র জীবনব্যাপী আমি আমার আপন দন্তের দ্বারা খাদ্য চর্বণপূর্বক গ্রহণ করে আয়ু লাভ করবো। হে অগ্নি! তুমি আমাকে এখানে অর্থাৎ এই ভূলোকে সুখে প্রতিষ্ঠিত রাখো; অথবা তুমি আমাদের এই ভূলোকে সুখে অধিষ্ঠিত থাকো, এবং স্বর্গলোকে আমাকে শোধকরূপে গ্রহণ পূর্বক সুখসম্পন্ন করো ॥১॥

.

অষ্টম সূক্ত : সর্বপ্ৰিয়ত্বম

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ব্ৰহ্মণস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 প্রিয়ং মা কৃণু দেবেষু প্রিয়ং রাজসু মা কৃণু।। প্রিয়ং সর্বস্য পশ্যত উত শূদ্র উর্যে ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –(হে অগ্নিঃ!) আমাকে দেবগণের প্রীতিভাজন করে দাও; সেই ভাবে আমাকে রাজন্যবৃন্দেরও প্রিয়পাত্র করে ভোলো। আরও, আমাকে পরিদৃশ্যমান সকলেরই প্রিয় করে দাও; আমি যেন শূদ্র অর্থাৎ অনার্যগণের প্রিয় হই, তেমনই আর্য অর্থাৎ ব্রাহ্মণ বৈশ্য ইত্যাদিগণেরও প্রিয় হই। (রাজন্যগণের প্রিয়ত্ব প্রার্থনার মধ্যেই ক্ষত্রিয়গণের প্রিয়ত্ব প্রার্থনা করা হয়েছে; অর্থাৎ দেবগণের সাথে সাথে চতুর্বর্ণেরও প্ৰিয়ত্ব প্রার্থনা পূর্ণ হলো) ॥১॥

.

নবম সূক্ত : আয়ুর্বর্ধনম

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ব্ৰহ্মণস্পতি ছন্দ : বৃহতী]

উৎ তিষ্ঠ ব্ৰহ্মণস্পতে দেবান যজ্ঞেন বোধয়। আয়ুঃ প্রাণং প্রজাং পশূন্ কীর্তিং যজমানং চ বর্ধয় ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে ব্ৰহ্মণস্পতি (অর্থাৎ মন্ত্রের পালক দেব–অগ্নি)! তুমি উত্থিত হও, অর্থাৎ বর্ধিতরূপে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠো; যজ্ঞের মাধ্যমে দেবতাগণের নিকটে আমাদের বোধিত করো। আমাদের আয়ু, প্রাণ, প্রজা অর্থাৎ সন্তান ইত্যাদি অধিকারস্থ জন, পশু, কীর্তি অর্থাৎ যশ এবং যজ্ঞের অথবা যজমানের বৃদ্ধি সাধিত করো ৷ ১৷৷

.

দশম সূক্ত : দীর্ঘায়ুত্বম

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 অগ্নে সমিধমাহাং বৃহতে জাতবেদসে। স মে শ্রদ্ধাং চ মেধাং চ জাতবেদাঃ প্র যচ্ছতু।১৷৷ ইখেন ত্ব জাতবেদঃ সমিধা বধয়ামসি। তথা মম্মান বর্ধয় প্রজয়া চ ধনেন চ ॥ ২॥ যদগ্নে যানি কানি চিদা তে দারূণি দখসি। সর্বং তদস্তু মে শিবং তজুষ যবিষ্ঠ্য ৷৷ ৩৷৷ এস্তে অগ্নে সমিধস্কৃমিদ্ধঃ সমিদ ভব। আয়ুরম্মাসু ধেহ্যমৃতত্বমাচার্যায় ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ— মহান সেই দেবতা, যিনি জাতমাত্র প্রাণীবর্গকে বিদিত হন অথবা জাতমাত্রই প্রাণীবর্গ যাঁকে জঠরে প্রাপ্ত হন অথবা যিনি.জাতধন অর্থাৎ সকল ধনই যাঁর কৃপায় সৃষ্ট হয়ে থাকে (বৃহতে জাতবেদসে) সেই অগ্নির উদ্দেশে আমরা সমিন্ধনসাধন কাষ্ঠ (সমিধং) আহরণ (আহাষং) করছি। সেই সমিধের দ্বারা প্রজ্বালিত অগ্নি (জাতবেদাঃ) আমাদের শ্রদ্ধা ও মেধা অর্থাৎ অধীত বেদের ধারণাবতী বুদ্ধি বা স্মৃতিশক্তি প্রদান করুন ৷ ১৷

 হে জাতবেদা! তোমাকে ইন্ধনসাধন (ইখেন) কাষ্ঠের দ্বারা (সমিধা) প্রবর্ধিত করছি। তথা, তুমি সেই প্রকারে, আমাদের, অর্থাৎ তোমাকে সমি-প্রদাতাগণের, প্রজা অর্থাৎ সন্তান ইত্যাদি অধিকারস্থ জন ও ধন অর্থাৎ সম্পদ ইত্যাদির দ্বারা বৃদ্ধি সাধন করো, এবং সেইসঙ্গে আমাদের দীর্ঘ আয়ু প্রদান করো। ২।

হে অগ্নি! তোমার উদ্দেশে যজ্ঞীয় বা অজ্ঞীয় যে যে কাষ্ঠ (দারূণি) সংগ্রহ করে রক্ষা করেছি, তা আমাদের শ্রেয়ঃপ্রদ (শিবং) হোক। হ্যেবিষ্ঠ অর্থাৎ অতিশয় বলিষ্ঠ অগ্নি! সেই আহিত কাষ্ঠসামগ্রী (তৎ) তুমি উপভোগ করো (জুষস্ব) ৷৷ ৩৷

 হে অগ্নি! তোমার নিমিত্ত এই যে সমিধ অর্থাৎ কাষ্ঠসামগ্রী আহিত হয়েছে, সেগুলির দ্বারা প্রজ্বলিত হয়ে ওঠো; এবং আমাদের, অর্থাৎ সমিধাহরণকারীদের, আয়ু প্রদান করো ও আচার্যদের অর্থাৎ আমাদের উপনয়নকর্তা বা গায়ত্ৰীমন্ত্র-প্রদাতা বা বেদাধ্যাপকদের অমৃতত্ব অর্থাৎ অমরত্ব প্রদান করো। ৪

টীকা –উপযুক্ত পাঁচটি (৬ষ্ঠ-১০ম) সূক্তের দ্বারা ব্রহ্মচারির কর্তব্য অনুসারে অগ্নিকার্যে প্রতিটি ঋকের দ্বারা চারটি করে সমিধ অর্পণীয়। সংহিতাতে এর সূত্র আছে। (কৌ. ৭/৮) ৷ (১৯কা, ৭অ. ৬-১০সূ.)।

.

একাদশ সূক্ত : অবনম্

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : সূর্য জাতবেদা ছন্দ : জগতী]

 হরিঃ সুপর্ণো দিবমারুহোহর্ষিা যে ত্ব দিন্তি দিবমুৎপতন্ত। অব তাং জহি হরসা জাতবেদোহবিভ্যদুগ্ৰোহর্ষিা দিবমা রোহ সূর্য ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ –হে হরি, অর্থাৎ অন্ধকার হরণকারী সূর্যদেব! তুমি সুপর্ণ অর্থাৎ শোভন পতনত্বসম্পন্ন বা চলনক্ষম। তুমি তেজঃপ্রভাবে দ্যুলোকে আরোহণ করে থাকো (অর্চিষা দিবম্ আ অরুহঃ)। দ্যুলোকে উদ্গমনকারী (দিবম্ উৎপতন্তং) তোমার যে শত্রুবর্গ প্রতিরোধ করতে ইচ্ছা করে (ত্বা দিন্তি), সেই প্রতিবন্ধক শত্রুগণকে (তান) হে জাতবেদা, অর্থাৎ জাত প্রাণীবর্গের জ্ঞায়মান বা জাত প্রাণীবর্গের কর্ম ও কর্মফলের জ্ঞাতা সূর্যদেব! সেই হেতু তোমার শত্রু উৎপাটনকরী তেজের দ্বারা (ত্বং হরসা) তাদের এমনভাবে আঘাত করো, যাতে তারা পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয় (অব জহি)। সেই রকম, শত্রুর নিকট ভীতি না করে (অবিভ্যৎ) উদগ্রবলশালী হয়ে (উগ্রঃ), হে সূর্য! তেজের সাথে লোকে প্রতিষ্ঠিত হও (অর্চিষা দিবং আ রোহ)। ১।

 টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি এবং এর পরবর্তী দুটি (১২শ ও ১৩শ) সূক্ত এক ঋবিশিষ্ট। এই তিনটি সূক্তই সূর্যোপস্থানে অর্থপ্রকাশক সামর্থ্যানুসারে বিনিযুক্ত হয়। উপযুক্ত সূক্তে সূর্য প্রসঙ্গে জাবেদা শব্দটির ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ।–অর্থাৎ সন্ধ্যাকালে সূর্য অগ্নিতে অনুপ্রবেশ করে বলে সূর্যকে জাতবেদা বলে অভিহিত করা হয়েছে ৷ (১৯কা, ৭অ. ১১সূ.)।

.

দ্বাদশ সূক্ত : অসুরক্ষয়ণম্

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : সূর্য, জাতবেদা বজ্র ছন্দ : জগতী]

 অয়োজালা অসুরা মায়িনোহয়স্ময়ৈঃ পাশৈরঙ্কিননা যে চরন্তি। তাংস্তে রন্ধয়ামি হরসা জাতবেদঃ সহস্রঋষ্টিঃ সপপ্তান্ প্ৰমৃণ পাহি বজ্রঃ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –লৌহময় বাগুরাবন্ত অর্থাৎ লৌহপাশযুক্ত (অয়োজালা) যে মায়াবী বা কুটিল (মায়িনঃ) সুরবিদ্বেষীগণ অর্থাৎ অসুরগণ সৎকর্মকারীগণের প্রতি লক্ষ্য করে অর্থাৎ হিংসাভাবাপন্ন। হয়ে পাশহস্তে বিচরণ করছে, সেই হেন অসুরগণকে, হে জাতবেদা সূর্য! তোমার তেজঃপ্রভাবে (হরসা) আমি বশীভূত করবো (রন্ধয়ামি)। এবং তুমিও তাদের বশীভূত করে সহস্ৰসংখ্যক দুই-ধারবিশিষ্ট খঙ্গ সদৃশ (সহস্রঋষ্টিঃ) আয়ুধযুক্ত হয়ে অর্থাৎ বজ্র-সম্পন্ন হয়ে শত্রুদের প্রকর্ষের সাথে হিংসন অর্থাৎ বিনাশ পূর্বক (মৃণ) উপাসক আমাদের রক্ষা করুন ॥ ১।

.

ত্রয়োদশ সূক্ত : দীর্ঘায়ুত্বম

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : সূর্য ছন্দ : প্রাজাপত্যা গায়ত্রী]

পশ্যেম শরদঃ শতম্ ॥১॥ জীবেম শরদঃ শতম্ ॥ ২॥ বুধ্যেম শরদঃ শতম্ ৷৩৷৷ রোহেম শরদঃ শতম্ ॥ ৪ পূষেম শরদঃ শতম ॥৫ভবেম শরদঃ শত ৷ ৬ ৷৷ ভূয়েম শরদঃ শতম্ ॥ ৭৷৷ ভূয়সীঃ শরদঃ শতম্ ॥৮॥

 বঙ্গানুবাদ –(হে সূর্য!) আমরা তোমাকে শত সম্বৎসর (শতম শরদঃ) দর্শন করবো (পশ্যেম)। ১। (অতএব) শত সম্বৎসর জীবিত থাকবো (জীবেম)। ২।

 (এরই জন্য) শত সম্বৎসর ধরে সকল কার্যজাত সম্পর্কে জ্ঞাত হবো (বুধ্যেম) ৷ ৩৷৷

(এরই ফলস্বরূপ) আমরা শত সম্বৎসর ব্যাপী উত্তরোত্তর বৃদ্ধিসম্পন্ন হবো (রোহেম) ৪

(সেইসঙ্গে) শত সম্বৎসর-পরিমিত কাল পর্যন্ত (নানা ভাবে) পুষ্টি লাভ করবো (পূষেম)। ৫৷৷

(অর্থাৎ) শত সম্বৎসরকাল পুত্রপৌত্র ইত্যাদি প্রবাহে উদ্ভূত হবো (ভবেম) ৷৷ ৬ ৷৷

 কেবল শত সম্বৎসর-পরিমিত কালই নয়, আমরা তারও অধিক সম্বৎসর কাল অর্থাৎ অনেক অনেক কাল পর্যন্ত জীবিত থাকবো (ভূয়েম/ভূয়সীঃ শতাৎ)। ৭-৮ ৷৷

.

চতুর্দশ সূক্ত : বেদোক্তং কর্মং

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : মন্ত্রোক্ত কর্ম ছন্দ : অনুষ্টুপ]

অব্যসশ্চ ব্যচসশ্চ বিলং বি ষ্যামি মায়য়া। অভ্যামুদ্ধৃত্য বেদমথ কর্মাণি কৃহে৷১।

বঙ্গানুবাদ –সর্বশরীরব্যাপক সমষ্টিরূপ ব্যানবায়ু এবং ব্যষ্টিরূপ অর্থাৎ পৃথক পৃথক ভাবরূপ প্রাণবায়ুর ছিদ্রের ন্যায় মূলাধার (গুহ্য ও লিঙ্গের মধ্যবর্তী অঙ্গুলিদ্বয় পরিমিত স্থান, যেখানে কুলকুণ্ডলিনী বাস করেন) কর্মের দ্বারা অর্থাৎ দমনাত্মক ক্রিয়ার দ্বারা বিবৃত করছি (বি ফ্যামি)। (বিবক্ষু অর্থাৎ কিছু বলতে ইচ্ছুক পুরুষের প্রয়াসজনিত বায়ুর চাপে মূলাধারে যে স্পন্দন হয়, তা-ই দমনাত্মক ক্রিয়া)। ব্যান ও প্রাণবায়ুর দ্বারা অক্ষরাত্মকমন্ত্রসঙ্ঘ (বেদং) উদ্ধারণ পূর্বক (উদ্ধৃত্য), অর্থাৎ বিবররূপ মূলাধার হতে উত্থিত করে, অতঃপর কর্মসমূহ অর্থাৎ তিসিদ্ধ ও স্মৃতিসম্মত কর্মসমূহ অনুষ্ঠিত করববা (কৃশ্মহে) ॥১॥

টীকা –পূর্বের উল্লেখানুসারে ত্রয়োদশ সূক্তটি সূর্যোপস্থানে অর্থপ্রকাশক সামর্থ্যানুযায়ী বিনিযুক্ত হয়। উপযুক্ত (১৪শ) সূক্তটির দ্বারা শ্রৌত, স্মার্ত সকল কর্মের আদিতে (কর্মাদৌ) জপ ও উপকৰ্মসমূহ করণীয়। (কৌ. ১৪৩) এই সূক্তটি অন্যভাবেও বাখ্যাত হয়েছে। সেখানে মূলাধারের পরিবর্তে পরমাত্মার উপলব্ধির স্থানভূত হৃদয়কে ধরা হয়েছে ৷ (১৯কা, ৭অ, ১৪সূ)।

.

পঞ্চদশ সূক্ত : আপঃ

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আপ ছন্দ : অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, উষ্ণিক]

জীবা স্থ জীব্যাসং সর্বমায়ুৰ্জীব্যাসম্ ॥১॥ উপজীবা ছোপ জীব্যাসং সর্বমায়ুজীব্যাসম্ ॥ ২॥ সঞ্জীৰা স্থ সং জীব্যাসং সর্বমায়ুজীব্যাসম্ ॥৩৷৷ জীবলা স্থ জীব্যাসং সর্বমায়ুজীব্যাস ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –[এখানে কথা বা শব্দ ব্যাখ্যাত হচ্ছে। এই সূক্তটির অর্থোপলব্ধির জন্য পরবর্তী সূক্তার্থের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ ঐ সূক্তে ইন্দ্র, সূর্য অগ্নি ইত্যাদি দেবগণকে একে একে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে সেই দেবগণকেই সম্মিলিতভাবে সম্বোধন রয়েছে ]-হে ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ! তোমরা আয়ুষ্মন্ত হও (জীবাঃ স্থ)। তোমাদের অনুগ্রহে আমিও আয়ুষ্মন হবো (জীব্যাসং)। (এই আয়ু সর্বং অর্থাৎ সম্পূর্ণ শতসম্বৎসরপরিমিত)–অর্থাৎ আমি শতসম্বৎসর পরিমিত কালব্যাপী প্রাণ ধারণ করবো (আয়ুঃ জীব্যাস) ॥১॥

তোমরা তোমাদের সন্নিহিত ভজনাকারীদের (উপজীবা) আয়ুস্মান করো, আমিও উপজীব্যগণকে আয়ুস্মান করবো শত-সম্বৎসর পরিমিত কালব্যাপী প্রাণ ধারণ করবো (আয়ুঃ জীব্যাস) ॥ ২॥

 সমীচীনজীবনবন্ত (সঞ্জীব্যা) হও অর্থাৎ জীবনকালে একটিমাত্র ক্ষণও যেন বৃথা না যায়, কিন্তু পরোপকারিত্বেই যেন অতিবাহিত হয়; আমিও তোমাদের অনুগ্রহে সেই হেন সমীচীন জীবন লাভ করে (সম্ জীব্যাস) শতসম্বৎসর পরিমিত কালব্যাপী প্রাণ ধারণ করবো (আয়ুঃ জীব্যাস) ৩

তোমরা প্রাণধারণ করো (জীবলাঃ), তাহলে তোমাদের কৃপায় আমিও শত শত সম্বৎসরকাল প্রাণধারণ করবো (সর্বং আয়ুঃ জীব্যাস)। ৪

.

ষোড় সূক্ত : পূর্ণায়ুঃ

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ইন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি ছন্দ : গায়ত্রী]

ইন্দ্র জীব সূর্য জীব দেবা সর্ব জীব্যাসমহম। সর্বমায়ুজীব্যাসম্ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –হে পরমৈশ্বর্যসম্পন্ন সর্বেন্দ্রিয়প্রকাশক ইন্দ্র! তুমি জীবিত থাকো (জীব), অর্থাৎ আয়ুষ্মন্ হও। হে সকলের প্রসবিতা সূর্য! তুমি আয়ুষ্মন্ হও। হে ইন্দ্র-সূর্য-ব্যতিরিক্ত অগ্নি ইত্যাদি সকল দেবতা! তোমরা আয়ুষ্মন্ হও (জীব্যাসম)। তোমাদের প্রসাদে আমি (অহ) হেন আচমনকর্মকর্তা চিরকালপর্যন্ত প্রাণ ধারণ করবো (সর্বং আয়ুঃ জীব্যাস) ॥১॥

টীকা –১৫শ সূক্তের ৪টি মন্ত্র ও ১টি মন্ত্র সম্বলিত উপযুক্ত সূক্তের দ্বারা আয়ুষ্কামী জনের পক্ষে জলের দ্বারা আচমনকর্ম সাধন পূর্বক নিজের অনুমন্ত্রণ করণীয়। (কৌ. ৭৯)। (১৯কা, ৭অ. ১৬সূ)।

.

সপ্তদশ সূক্ত : বেদমাতা

[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : গায়ত্রী। ছন্দ : জগতী।]

স্তুতা ময়া বরদা বেদমাতা প্রচোদ্দয়াং পাবমানী দ্বিজানাম। আয়ুঃ প্রাণং প্রজাং পশুং কীর্তি দ্রবিণং ব্রহ্মবৰ্চস। মহ্যং দত্ত্বা ব্ৰজত ব্ৰহ্মলোক ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –বেদাভ্যাসকারী (অর্থাৎ অধ্যয়ন-বিচার-অনুশীলন-জপ ও অধ্যাপনে আত্মনিয়োগকারী) অথবা সাবিত্রীমন্ত্রের জপকারী আমার দ্বারা (ময়া) সু-কণ্ঠস্থা (স্তুতা), ইষ্টকামপ্রদাত্রী (বরদা), পাপ হতে পরিশোধনকারিণী (পাবমানী), বেদমাতা (অর্থাৎ ঋক ইত্যাদি বেদের মাতা বা সর্ববেদের সারত্বস্বরূপিণী মাতৃবৎ প্রধানভূতা সাবিত্রী অথবা মাতৃসমা (হিতকারিণী) দ্বিজগণকে (দ্বিজানা) অর্থাৎ ব্রাহ্মণবর্গকে বা ব্রাক্ষণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যোৎপন্ন জনগণকে আয়ু, প্রাণ, প্রজা, পশু, যশ (কীর্তি), পরাক্রম বা ধন (দ্রবিণং) ও ব্রহ্মতেজ প্রেরণ করুন (প্র চোদ্দয়ন্তাম) অর্থাৎ প্রদান করুন। অতঃপর সকলের নিমিত্ত ফলপ্রার্থক আমাকে আয়ু ইত্যাদি ফল প্রদান করে (দত্ত্বা) ব্রহ্মলোকে অর্থাৎ সত্যলোকে বা জ্ঞানিবর্গের অনুভূয়মান পরতত্ত্বে গমন করুন (ব্রজত)। (মন্ত্ৰদৰ্শী ঋষিগণ সাক্ষাকৃত পরত্বের দ্বারা বলছেন-শব্দের অবগম্য ব্ৰহ্মকার পরিত্যাগ পূর্বক বাক্য ও মনের অতীতার্থ ব্ৰহ্মরূপ হও) ১

টীকা –উপযুক্ত এক-ঋক্‌-বিশিষ্ট সূক্ত বেদাভ্যাসী বা গায়ত্রী জপকারীর উপাসনায় অর্থপ্রকাশক সামর্থ্যানুসারে বিনিযুক্ত হয়। এই সূক্তের মূল বক্তব্য–বেদ এক দ্বিজাতীনাং নিঃশ্রেয়সকরঃ পরঃ। দ্বিজ অর্থে দ্বিজাতি–ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন বর্ণীয় মনুষ্য বোঝায়। এই তিন বর্ণের শাস্ত্রানুসারে সংস্কারের পর দ্বিতীয় জন্ম লব্ধ হয়ে থাকে। (১৯কা, ৭অ. ১৭সূ)।

.

অষ্টাদশ সূক্ত : পরমাত্মা

[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা ব্ৰহ্মা দেবতা : পরমাত্মা দেবগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

যম্মাৎ কোশাদুদভরাম বেদং তস্মিন্নন্তরব দখ এন। কৃতমিষ্টং ব্ৰহ্মণো বীর্ষেণ। তেন মা দেবাস্তপসাবতেহ ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ –যেমন ধনরত্ন ইত্যাদি-পূর্ণ কোশাগার হতে আকাঙ্ক্ষিত বস্তুরাজি আনীত হয়, তেমনই (পূর্বোক্ত অব্যসশ্চ ব্যচসশ্চ ইত্যাদি মন্ত্রে) প্রতিপাদিত বা মূলাধাররূপ কোশ হতে শ্রৌত অর্থাৎ বেদসম্মত ও স্মার্ত অর্থাৎ মনু ইত্যাদি প্রণীত শাস্ত্রসম্বন্ধীয় সকল প্রতিপাদক মন্ত্র অর্থাৎ সর্ববর্ণমন্ত্ৰায়ণত্ব ব্রাহ্মণরূপ অর্থাৎ বেদাংশবিশেষরূপ কর্মানুষ্ঠানের নিমিত্ত আমরা উদ্ধৃত বা উচ্চারিত করেছি (কোশাৎ উৎ-অভরাম বেদম)। সেই অম্বাদিষ্ট অর্থাৎ কথিত-কথন বেদকে (এনং) পুনরায় পূর্বোক্ত স্থানে (তস্মিন) মধ্যে (অন্তঃ) স্থাপন করছি (অব দঃ)। (কর্মপ্রয়োগার্থে আপন মুখ হতে উচ্চারিত বর্ণরূপ মন্ত্র যদি যথাযথ নিঃসরিত না হয়, তবে পরবর্তীকালে মন্ত্রের অভাবের নিমিত্ত কর্মানুষ্ঠান হতে পারবে না; সেই হেতু এইভাবে পূর্বোক্ত বেদোদ্ধরণাপাদান স্থানে বেদের নিধান বা স্থাপন উক্ত হয়েছে)। ব্ৰহ্মণঃ অর্থাৎ দেশকালবস্তু-পরিচ্ছেদশূন্য পরমাত্মার বীর্যরূপের দ্বারা (বীর্যেণ) বা বীর্যরূপ কর্মপ্রতিপাদক বেদের দ্বারা কৃত যে কর্ম, অর্থাৎ ব্রহ্মযজ্ঞ ইত্যাদি, নিম্পাদিত হয়েছে এবং যে স্বাহাবৌষ ইত্যাদি শব্দে দেবতার উদ্দেশে যে হবিঃ প্রদত্ত করা হয়েছে (ইষ্টং), সেই কর্মের দ্বারা, হে দেববর্গ! তোমরা ইহ অর্থাৎ এই কর্মলোকে কর্মফলের দ্বারা (তপসা) আমি হেন কর্মানুষ্ঠাতাকে (মা) রক্ষা করো (অবত)।–[মূল বক্তব্য–আমরা যে কোশ হতে বেদকে নিষ্কাসিত করে যে স্থানে কর্ম করে থাকি, সেই স্থানেই তাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করছি। ব্রহ্মের কর্ম প্রতিপাদক বীর্যের দ্বারা যে কর্ম সাধিত হয়েছে, সেই অভীষ্ট কর্মের ফলের দ্বারা দেবতাগণ যেন আমাদের পালন করেন। ১।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি সকল শ্ৰেীত ও স্মার্তকর্মে ব্রহ্মোত্থাপনের পর জপনীয়; এবং সেইসঙ্গে স্বাধ্যায় উৎসর্জনের পরেও এই মন্ত্রের জপবিধি আছে।–আচার্য সায়ণ বেদের স্বরূপ প্রসঙ্গে একটি শ্লোক উল্লেখ করেছেন–প্রত্যক্ষেণানুমিত্যা বা যপায়ো ন বুধ্যতে। এবং বিদন্তি বেদেন তস্মাৎ বেদস্য বেদতা। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বা অনুমানের দ্বারা যে উপায় জ্ঞাত হওয়া যায় না, তা বেদের দ্বারা জানা যায়, সেই জন্যই বেদের বেদতা।–সেইসঙ্গে তাঁর আরও উক্তি–বেদং বিদ্যনেন প্রত্যক্ষান্তবিষয়ং উপায়ং ইতি বেদঃ। অর্থাৎ যার দ্বারা প্রত্যক্ষ ইত্যাদির অবিষয় উপায় জ্ঞাত হওয়া যায়, তা-ই হলো বেদ ৷ (১৯কা, ৭অ. ১৮সূ.)। [ইতি একোনবিংশং কাণ্ডং সমাপ্তম।]

সকল অধ্যায়

১. ০০. সম্পাদকের নিবেদন / ভূমিকা
২. ০১।১ প্রথম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৩. ০১।২ প্রথম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৪. ০১।৩ প্রথম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৫. ০১।৪ প্রথম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৬. ০১।৫ প্রথম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৭. ০১।৬ প্রথম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৮. ০২।১ দ্বিতীয় কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯. ০২।২ দ্বিতীয় কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
১০. ০২।৩ দ্বিতীয় কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১১. ০২।৪ দ্বিতীয় কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১২. ০২।৫ দ্বিতীয় কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১৩. ০২।৬ দ্বিতীয় কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
১৪. ০৩।১ তৃতীয় কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
১৫. ০৩।২ তৃতীয় কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
১৬. ০৩।৩ তৃতীয় কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১৭. ০৩।৪ তৃতীয় কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১৮. ০৩।৫ তৃতীয় কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১৯. ০৩।৬ তৃতীয় কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
২০. ০৪।১ চতুর্থ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
২১. ০৪।২ চতুর্থ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
২২. ০৪।৩ চতুর্থ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
২৩. ০৪।৪ চতুর্থ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
২৪. ০৪।৫ চতুর্থ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
২৫. ০৪।৬ চতুর্থ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
২৬. ০৪।৭ চতুর্থ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
২৭. ০৪।৮ চতুর্থ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
২৮. ০৫।১ পঞ্চম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
২৯. ০৫।২ পঞ্চম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৩০. ০৫।৩ পঞ্চম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৩১. ০৫।৪ পঞ্চম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৩২. ০৫।৫ পঞ্চম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৩৩. ০৫।৬ পঞ্চম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৩৪. ০৬।০১ ষষ্ঠ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৩৫. ০৬।০২ ষষ্ঠ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৩৬. ০৬।০৩ ষষ্ঠ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৩৭. ০৬।০৪ ষষ্ঠ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৩৮. ০৬।০৫ ষষ্ঠ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৩৯. ০৬।০৬ ষষ্ঠ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৪০. ০৬।০৭ ষষ্ঠ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
৪১. ০৬।০৮ ষষ্ঠ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
৪২. ০৬।০৯ ষষ্ঠ কাণ্ড : নবম অনুবাক
৪৩. ০৬।১০ ষষ্ঠ কাণ্ড : দশম অনুবাক
৪৪. ০৬।১১ ষষ্ঠ কাণ্ড : একাদশ অনুবাক
৪৫. ০৬।১২ ষষ্ঠ কাণ্ড : দ্বাদশ অনুবাক
৪৬. ০৬।১৩ ষষ্ঠ কাণ্ড : ত্রয়োদশ অনুবাক
৪৭. ০৭।০১ সপ্তম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৪৮. ০৭।০২ সপ্তম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৪৯. ০৭।০৩ সপ্তম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৫০. ০৭।০৪ সপ্তম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৫১. ০৭।০৫ সপ্তম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৫২. ০৭।০৬ সপ্তম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৫৩. ০৭।০৭ সপ্তম কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
৫৪. ০৭।০৮ সপ্তম কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
৫৫. ০৭।০৯ সপ্তম কাণ্ড : নবম অনুবাক
৫৬. ০৭।১০ সপ্তম কাণ্ড : দশম অনুবাক
৫৭. ০৮।১ অষ্টম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৫৮. ০৮।২ অষ্টম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৫৯. ০৮।৩ অষ্টম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৬০. ০৮।৪ অষ্টম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৬১. ০৮।৫ অষ্টম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৬২. ০৯।১ নবম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৬৩. ০৯।২ নবম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৬৪. ০৯।৩ নবম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৬৫. ০৯।৪ নবম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৬৬. ০৯।৫ নবম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৬৭. ১০।১ দশম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৬৮. ১০।২ দশম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৬৯. ১০।৩ দশম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৭০. ১০।৪ দশম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৭১. ১০।৫ দশম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৭২. ১১।১ একাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৭৩. ১১।২ একাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৭৪. ১১।৩ একাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৭৫. ১১।৪ একাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৭৬. ১১।৫ একাদশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৭৭. ১২।১ দ্বাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৭৮. ১২।২ দ্বাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৭৯. ১২।৩ দ্বাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৮০. ১২।৪ দ্বাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৮১. ১২।৫ দ্বাদশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৮২. ১৩।১ ত্রয়োদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৮৩. ১৩।২ ত্রয়োদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৮৪. ১৩।৩ ত্রয়োদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৮৫. ১৩।৪ ত্রয়োদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৮৬. ১৪।১ চতুর্দশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৮৭. ১৪।২ চতুর্দশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৮৮. ১৫।১ পঞ্চদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৮৯. ১৫।২ পঞ্চদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯০. ১৬।১ ষোড়শ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯১. ১৬।২ ষোড়শ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯২. ১৭।১ সপ্তদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯৩. ১৮।১ অষ্টাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯৪. ১৮।২ অষ্টাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯৫. ১৮।৩ অষ্টাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৯৬. ১৮।৪ অষ্টাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৯৭. ১৯।১ ঊনবিংশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯৮. ১৯।২ ঊনবিংশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯৯. ১৯।৩ ঊনবিংশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১০০. ১৯।৪ ঊনবিংশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১০১. ১৯।৫ ঊনবিংশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১০২. ১৯।৬ ঊনবিংশ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
১০৩. ১৯।৭ ঊনবিংশ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
১০৪. ২০।১ বিংশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
১০৫. ২০।২ বিংশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
১০৬. ২০।৩ বিংশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১০৭. ২০।৪ বিংশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১০৮. ২০।৫ বিংশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১০৯. ২০।৬ বিংশ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
১১০. ২০।৭ বিংশ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
১১১. ২০।৮ বিংশ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
১১২. ২০।৯ বিংশ কাণ্ড : নবম অনুবাক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন