১৮।১ অষ্টাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

দিলীপ মুখোপাধ্যায়

অথর্ববেদসংহিতা অষ্টাদশ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, রুদ্র, সরস্বতী, পিতৃগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী]

 ও চিৎ সখায়ং সখ্যা ববৃত্যাং তিরঃ পুরু চিদৰ্ণবং জগন্থান। পিতুর্নপাতমা দধীত বেধা অধি ক্ষমি প্রতরং দীধ্যানঃ ১। ন তে সখা সখ্যং বষ্ট্যেতৎ সলক্ষ্মা যদ বিষুরূপা ভবাতি। মহম্পুত্ৰাসো অসুরস্য বীরা দিবো ধর্তার উর্বিয়া পরি খ্য। ২ উশান্ত ঘা তে অমৃতাস এতদেস্য চিৎ ত্যজসং মর্ত্যস্য। নি তে মনো মনসি ধাষ্যস্মে জন্যঃ পতিস্তমা বিবিশ্যাঃ ৷ ৩৷৷ ন যৎ পুরা চকৃমা কদ্ধ নূনমৃতং বন্তো অমৃতং রপেম। গন্ধর্বো অপস্বপ্যা, চ যোষ সা নৌ নাভিঃ পরমং জামি তন্নৌ। ৪। গর্ভে নু নৌ জনিতা দম্পতী কর্দেৰ্বস্তৃষ্টা সবিতা বিশ্বরূপঃ। নকিরস্য প্র মিনন্তি ব্ৰতানি বেদ নাবস্য পৃথিবী উত দ্যৌঃ ॥ ৫৷৷ কো অদ্য যুঙক্তে ধুরি গা ঋতস্য শিমীবতো ভামিনো দুৰ্হৰ্ণায়ু। আসন্নিমূন্ হৃৎস্বসসা ময়োভূন্য এষাং ভৃত্যাণধৎ স জীবাৎ৷৷ ৬ ৷৷ কো অস্য বেদ প্রথমস্যাঃ ক ঈং দদর্শ ইহ প্ৰ বোচৎ। বৃহন্মিত্রস্য বরুণস্য ধাম কদু ব্ৰব আহনো বীচ্যা নৃ৷ ৭৷ যমস্য মা যম্যং কাম আগৎসমানে যোনৌ সহশেয্যায়। জায়েব পত্যে তন্বং রিরিচ্যাং বি চিদ বৃহেব রথ্যেব চক্রা৷ ৮ ৷৷ ন তিষ্ঠন্তি ন নি মিষন্ত্যেতে দেবানাং স্পশ ইহ যে চরন্তি। অন্যেন মদাহনো যাহি ভূয়ং তেন বি বৃহ রথ্যেব চক্রা ৷৷ ৯। রাত্রীভিরম্মা অহভিশস্যেৎ সূর্যস্য চক্ষুর্মুহুরুন্মিমীয়াৎ। দিবা পৃথিব্যা মিথুনা সবন্ধু যমীর্যস্য বিবৃহাদজামি৷ ১০

বঙ্গানুবাদ –(যমীর বচন)–আমি আমার সমান প্রসিদ্ধিশালী, (গর্ভস প্রভৃতিতে যুগলভাবে অবস্থান-জনিত কারণে) সখা বা মিত্ররূপ যমকে সম্ভোগের নিমিত্ত অনুকূল করছি। তারপর সমুদ্র তটবর্তী দ্বীপে গমন পূর্বক যম (আমাদের পিতা বিবস্বানের পৌত্রকে, অর্থাৎ আমাদের) পুত্রকে আমার গর্ভে উৎপাদিত করুক। সেই যমের খ্যাতি কেবল তার নিজ লোকে (যমলোকে) প্রকৃষ্টতর ভাবে দীপ্যমান, এমন নয়; ভূলোকেও সর্বপ্রাণীর সংহারকত্বের অধিকারে বর্তমান ॥১॥

(যমের বচন)–আমি সহোদরে উৎপন্ন হওয়ায় তোমার সখা বটে। কিন্তু আমি ভ্রাতা-ভগ্নীর (সম্ভোগাত্মক) সখ্য কামনা করি না। এক-উদরত্বলক্ষণ ভগ্নীরূপ সম্বন্ধ পরিত্যাগ পূর্বক কোন ভগ্নী কখনও ভাৰ্যাত্ব প্রাপ্ত হয় না। দ্যুলোকের ধারক, প্রকৃষ্টরূপে সর্বত্র ব্যাপ্ত, শত্রুকে দমনশীল, মহাবলী রুদ্রের পুত্র মরুত্বর্গও তা নিরাকরণ করবেন ॥ ২॥

(যমীর বচন)–হে যম! রুদ্রের পুত্রগণ নিরাকরণ করবেন–এমন বলো না। পরন্তু অমৃতলোকবাসী মরুৎগণ আমার প্রাথ্যমান কর্ম ইচ্ছা করেন। অসাধারণ মনুষ্যের গর্ভ হতে নির্গমন তারা বাসনা করেন (উশন্তি)। অতএব আপন মনকে আমার দিকে বিলগ্ন করো; তারপর সন্তানোৎপত্তি করণশালী পতি হয়ে ভ্ৰাতৃভাব পরিত্যাগ পূর্বক আমার তনুতে তোমার তনু প্রবেশ করাও। (অর্থাৎ সম্ভোগ করো)। ৩।

(যমের বচন)–হে যমী! যে কারণে পূর্বে এতাদৃশ (ভগিনীসম্ভোগরূপ) নিন্দাহ্ কর্ম করিনি, এখন তা কি কারণে করবো? আমরা সত্য কথনশীল হয়ে এই অসত্য (অযথার্থ) আচরণ কেমন করে করবো? জলধারক গন্ধর্ব সূর্যও অন্তরিক্ষে আপন ভার্যার সাথে স্থিত আছেন। অতএব অভিন্ন মাতা-পিতাশালী আমরা দুজনে তাদের সম্মুখে তোমার ইচ্ছিত বিষয় পূর্ণ করতে সমর্থ হবো না ৷৷ ৪৷

(যমীর বচন)–হে যম! সন্তানোৎপাদক দেবই আমাদের দুজনকে মাতার উদরের মধ্যেই দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন; সেই সবিতাদেবের কর্মফলকে কে নিষ্ফল করতে সক্ষম? বিশ্বকর্মা বিশ্বস্রষ্টা ত্বষ্টাদেবের এই (গর্ভের মধ্যেই আমাদের দম্পতিকরণরূপ) কর্ম আকাশ ও পৃথিবী উভয়েই জ্ঞাত আছেন। এই কারণে এটি অসত্য নয়। ৫।

(যমের বচন)–সত্যের ভার-বহনের নিমিত্ত বাণীরূপ বৃষভকে ইদানীং কে নিযুক্ত করে থাকে? (সত্যমেব জয়তি নামৃতং এই শ্রুতিবচনানুসারে) সত্য বচনই জয়লাভ করে; সত্য বদনে ক্রোধ-লজ্জা থাকে না। সর্বদা সত্যবিষয়ে সঙ্কল্পযুক্ত পুরুষের মুখ বা কণ্ঠ হতে নির্গত শব্দ শ্রোতার হৃদয়ে সুখসঞ্চার করে থাকে, অসত্য বাক্য নয়–এ কথা লোকে সুপ্রসিদ্ধ। মহান্ বিশেষণযুক্ত পুরুষ সত্য বচনের বৃদ্ধি সাধন করেন এবং তার ফলে দীর্ঘজীবী হয়ে থাকেন ৷ ৬ ৷

(যমীর বচন)–হে যম! আমাদের প্রথম (সঙ্গম) দিনটি কে জ্ঞাত হবে? আমাদের এই ইদানীং কর্ম কে প্রত্যক্ষ করবে? প্রত্যক্ষ করেই বা কে অন্য কার নিকট ব্যক্ত করবে? এর কোন জ্ঞাতা, দ্রষ্টা ও কথয়িতা নেই। মিত্রদেবের স্থান দিবায় এবং তমোবারক বরুণদেবের স্থান রাত্রে। (তাহলে অহোরাত্রির মধ্যে কোন সময়টি সম্ভোগের জন্য নির্ধারিত–এই-ই প্রশ্নের উদ্দেশ্য)। হে ক্লেশকারী (অর্থাৎ আমার অভিমত কর্ম অকরণের নিমিত্ত আমাকে কষ্টদানকারী)! বিবিধ সঞ্চরণশীল মনুষ্যগণের উপস্থিতি সম্পর্কে উক্তি করছো কেন?। ৭ ৷৷

(যমীর পুনঃ-বচন)–যমের বিষয়ে আমার (কাম)-অভিলাষ আগত (সঞ্জাত) হয়েছে। জায়া যেমন আপন ভর্তার নিকট (কামার্থিনী হয়ে শয়ন-শয্যায়) আপন তনু বিস্তার করে (অর্থাৎ মেলে ধরে), তেমন ভাবেই আমি যমের নিকট (কামোভোগের নিমিত্ত) তনু সমর্পণ করছি। রথচক্র যেমন অক্ষের সাথে মিলিত হয়ে বিবর্তিত হয়, সেইরকমে আমরাও মিলিত হবো ॥ ৮৷

(যমের বচন)–হে যমী! এই লোকে দেবতার যে চর সকল ভ্রমণ করে, তারা কেউই একত্রে স্থিত হয় না; তারা নিমেষও পাতিত করে। না (অর্থাৎ তাদের চক্ষের পলকও পড়ে না–সর্বদা জাগরূক থাকে–সদা সতর্ক থাকে)। অতএব, হে ক্লেশদানকারিণী (অর্থাৎ আমার ধর্ম-মতিকে নষ্ট-করণের ইচ্ছাশালিনী)! তুমি আমাকে পরিত্যাগ করে অন্য কোন জনের পত্নী হয়ে তার সাথে রমণ করো। সেই নিমিত্ত শীঘ্র গমন পূর্বক তার সাথে। সংশ্লিষ্ট হও, যেমন রথচক্র অক্ষের সাথে মিলিত হয়। ৯।

(যমীর বচন)–এই যমের নিমিত্ত যজমান দিবা-রাত্র আহুতি (হবিঃ) প্রদান করুন। তথা সূর্যদেবের চক্ষু (অর্থাৎ প্রকাশক তেজঃ) ঊর্ধ্বে। গমন করুক (অর্থাৎ সূর্যোদয়ও এর ভোগের নিমিত্তভাগী হোক)। পৃথিবীর সাথে দ্যুলোকের পরস্পর মিথুনভাবে অবিশ্লিষ্ট (অবিচ্ছিন্ন) থাকার মতো, আমি (যমী) ভ্রাতা যমের ভগ্নীত্ব হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে (অর্থাৎ অবন্ধুরূপে) সংশ্লিষ্ট হবো। ১০

টীকা –এই অষ্টাদশ কাণ্ডের চারিটি অনুবাকের সকল মন্ত্রই পিতৃমেধে অর্থাৎ পিতৃযজ্ঞে (অর্থাৎ পিতার উদ্দেশে অনুষ্ঠিত যজ্ঞে) চিতায় অগ্নি সংযোগের পর সাত বা একাদশ ইত্যাদি বিষম সংখ্যক ব্রাহ্মণগণের দ্বারা পূৰ্বাভিমুখে উপবিষ্ট হয়ে এই মন্ত্রগুলি জপনীয়।…এই কর্মে সারস্বত হোমের পর সকল বান্ধবের পক্ষে প্রেতের উপাসনা করণীয়। (কৌশিক ১১/২)।–প্রথম কাণ্ডের উপযুক্ত প্রথম ও পরবর্তী দ্বিতীয় সূক্তে বৈবস্বত যম ও যমীর সম্ভোগার্থ সংবাদ প্রতিপাদিত। সেখানে যমী মিথুনার্থে আপন ভ্রাতা যমের নিকট বহুপ্রকারে প্রার্থিতবতী হয়েছেন। এবং যম স্বভগিনীগমন অত্যন্ত অনুচিত বলে নানাবিধ যুক্তি দেখিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই অনুবাকের ষষ্ঠ সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রটি থেকে সরণু-বিবস্বান সম্পর্কিত পৌরাণিক আখ্যায়িকার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম চারটি সূক্তের বিনিয়োগ কাণ্ডানুসারী ॥ (১৮কা, ১অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, রুদ্র, সরস্বতী, পিতৃগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী]

 আ ঘা তা গচ্ছানুত্তরা যুগানি যত্র জাময়ঃ কৃণবন্নজামি। উপ বহি বৃষভায় বাহুমন্যমিচ্ছ সুভগে পতিং মৎ॥১৷ কিং ভ্রাতাস যদনাথং ভবাতি কিমু স্বসা যন্নিঋতির্নির্গচ্ছা। কামমূতা বহূত রপামি তন্বা মে তন্বং সং পিপৃদ্ধি ॥ ২॥ ন তে নাথং যম্যত্ৰাহমশ্মি ন তে তনুং তা সং পপৃচ্যাম। অন্যেন মৎ প্রমুদঃ কল্পয়স্ব ন তে ভ্রাতা সুভগে বষ্ট্যেতৎ ॥ ৩॥ নবা উ তে তনুং তা সং পপৃচ্যাং পাপমাহুৰ্যঃ স্বসারং নিগচ্ছা। অসংযদেতন্মনসো হৃদো মে ভ্রাতা স্বসুঃ শয়নে যচ্ছয়ীয় ॥৪॥ বতো বতাসি যম নৈব তে মনো হৃদয়ং চাবিদাম। অন্যা কিল ত্বাং কক্ষ্যেব যুক্তং পরি স্বজাতৈ লিবুজেব বৃক্ষম ॥৫৷৷ অন্যমূ যু যম্যন্য উ ত্বং পরি স্বজাতৈ লিবুজেব বৃক্ষম। তস্য বা ত্বং মন ইচ্ছা স বা তবাধা কৃণুম্ব সম্বিদং সুভদ্রা ৷৬৷৷ ত্রীণি ছন্দাংসি কবয়ো বি যেতিরে পুরুরূপং দর্শতং বিশ্বচক্ষণ। আপো বাতা ওষধয়স্তান্যেকস্মিন্ ভুবন আর্পিতানি॥৭॥ বৃষা বৃষ্ণে দুদুহে দোহসা দিবঃ পয়াংসি যো অদিতেরদাভ্যঃ। বিশ্বং স বেদ বরুণো যথা ধিয়া স যজ্ঞিয়ো যজতি যজ্ঞিয়া ঋতু৷ ৮ রপদ গন্ধবীরপ্যা চ যোষণা নদস্য নাদে পরি পাতু নো মনঃ। ইষ্টস্য মধ্যে অদিতির্নি ধাতু নো ভ্রাতা নো জ্যেষ্ঠঃ প্রথমে বি বোচতি।৯৷৷ সো চিনু ভদ্রা ক্ষুমতী যশস্বত্যুষা উবাস মনবে স্বর্বতী। যদীমুশমুশতামনু ক্রতুমগ্নিং হোতরং বিদথায় জীজন৷ ১০৷

বঙ্গানুবাদ –(যমের বচন)–সম্ভবতঃ উত্তরকালে দিবা ও রাত্রির এমন দিনগুলি আসবে যখন ভগ্নীগণ অবন্ধুত্বের বা ভার্যাত্বের দ্বারা (ভ্রাতৃগণের) প্রাপ্যা হতে থাকবে। হে যমী! (যতদিন তা না হয়, ততদিন) তুমি বৃষভসদৃশ (রেতঃসেক্তা) অন্য কারো প্রতি সম্ভোগের নিমিত্ত তোমার বাহু বিস্তারিত করো। হে সুভগে কামিনী! আমাকে পরিত্যাগ করে তাকেই পতিরূপে কামনা করো ॥১॥

 (যমীর বচন)–সেই নিন্দিত ভ্রাতার বিদ্যমানতা অবিদ্যমানতারই পরিচায়ক, যার বিদ্যমানতায় ভগ্নী। নাথরহিত হয় (অর্থাৎ অপূর্ণকামা হয়ে যায়)। সেই ভগ্নীও নিন্দাহ, যার বিদ্যমানতা সত্ত্বেও তার ভ্রাতা। (কাম-অপূর্তিজনিত কারণে) দুঃখ প্রাপ্ত হয়। যেহেতু আমি সনাথা (যতোহং সনাথা), সেই হেতু কামের দ্বারা মূচ্ছিতা (অর্থাৎ বহুবিধ কমোপেতা) হয়ে এই হেন প্রলপন করছি। অতএব আমার প্রলাপের সার্থকত্বে আমার শরীরের সাথে, (হে ভ্রাতঃ) তোমার শরীরের সম্পর্ক সূচীত করো। ২৷৷

 (যমের বচন)–হে যমী! এই বিষয়ে অমি তোমার নাথ (অর্থাৎ তোমার অভিমতার্থ-সম্পাদক ভ্রাতা) নই; এবং তোমার শরীরের সঙ্গে নিশ্চয়ই সম্পর্ক সূচীত করবো না। তুমি আমা ব্যতিরিক্ত অন্য পুরুষের সাথে মিলিত হয়ে (সম্ভোগজনিত) প্রমোদ লাভ করো। হে সুভগে! আমি তোমার ভ্রাতা হয়ে কখনও (জায়াপতি লক্ষণ) এই হেন কর্ম কামনা করি না ৷ ৩৷৷

(পূর্বমন্ত্রোক্ত অত্যন্ত পাপাত্মক কর্মের নিষেধ সম্পর্কে পুনরায় দৃঢ়তা প্রকাশের উদ্দেশ্যে যমের পুনর্বচন)–হে যমী! তোমার তনুর সাথে আমার তনুর সংসর্গ কখনও করতে পারি না। ভ্রাতা কর্তৃক আপন ভগ্নীকে সম্ভোগ করা পাপ–এই হেন কর্ম ধর্মরহস্যবিদগণ কর্তৃক নিষিদ্ধ আছে। ভ্রাতা হয়ে ভগ্নীর সাথে একশয্যায় শয়নরূপ এই অসংযত কর্ম করলে তা আমার মন ও হৃদয়কে অথবা মন ও হৃদয়ের সাথে প্রাণকেও অপহরণ করবে। ৪।

(যমীর বচন)–হে যম! তুমি বলের অতীত (অর্থাৎ দুর্বল), আমার প্রতি তোমার মন নেই (অর্থাৎ আমার প্রতি তুমি উদাসীন)। কিন্তু তোমার হৃদয়কে আমি বা (পূজার্থে) আমরা জ্ঞাত হয়েছি। (হৃদয়ের স্বাধীনতার অভাব দেখিয়ে খেদের সাথে উক্ত)। অপরা কোন কামিনী তোমাকে আলিঙ্গন (পরিঙ্গ) করেছে, সেই জন্য তুমি আমাকে অবমানা করছে। (অতএব তুমি পরাধীন ও দুর্বল)। (এর দুটি দৃষ্টান্ত)–কক্ষ্যার (অর্থাৎ অশ্বের বগল-প্রদেশে বদ্ধ রঞ্জুর) সাথে সম্বন্ধযুক্ত (দুর্দান্ত) অশ্বও যেমন ঐ কক্ষ্যার দ্বারা আবদ্ধ হয়ে (স্বাচ্ছন্দ হারিয়ে) থাকে, কিংবা লিবুজা (অর্থাৎ ব্রততী বা লতানিয়া গাছ) যেমন বৃক্ষকে গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে (অর্থাৎ গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত বেষ্টন করে থাকে), সেইরকম তুমিও অন্য কোন কামিনীর দ্বারা আত্মহারা হয়ে গিয়েছো ॥ ৫॥

(যমের বচন)–হে যমী! ব্রততীর বৃক্ষালিঙ্গনের মতো তুমিও অন্য পুরুষকে (এবং সে-ও তোমাকে) আলিঙ্গন করুক। (অর্থাৎ তোমরা পরস্পরে আলিঙ্গনাবদ্ধ হও)। (এর ফলে) তোমাদের মন একে অপরকে ভজনা করুক। (এইভাবে পরস্পরে অনুকূলান্তর হয়ে) অত্যন্ত কল্যাণপ্রদ (সুভদ্রাং) সুখানুভব (সম্বিদং) করো ৷ ৬

 ৷৷ পূর্বকালে, জ্ঞানী মহর্ষিগণ বা দেবগণ জগৎ-সংসারকে আচ্ছাদিত করার নিমিত্ত (অর্থাৎ জগৎ-নির্বাহের জন্য) শ্ৰবণ-মনের প্রীতিপ্রদ তিনটি ছন্দ (আবাদী) গ্রহণ করেছিলেন। (আচ্ছাদন হতে ব্যুৎপত্তি হওয়ায় তা ছন্দ নামে অভিহিত)। সেই তিনটি ছন্দের মধ্যে প্রথম জল নানারূপ অবিকারত্বের কারণে সর্বরূপে সকলের দর্শতং অর্থাৎ দর্শনীয়, স্পৃহণীয়ত্যের দ্বারা প্রিয়দর্শন, বিশ্বচক্ষণ অর্থাৎ বিশ্বের দ্রষ্ট। দ্বিতীয় বায়ুও প্রাণাত্মরূপে বর্তমান ও দর্শনীয় এবং, সূত্রাত্মারূপে বিশ্বের দ্রষ্ট। তৃতীয় ঔষধিগুলিও এই রূপে দ্রষ্টব্য। এই আবাদীত্রয় ভুবনাচ্ছাদকত্বের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ ॥ ৭৷

কাম ও জলের বর্ষক মহান্ (যঃ মহন্নামৈতৎ) অগ্নি অখণ্ডনীয় দ্যুলোক হতে (যজমানকে আপন ভোগাৰ্থে অর্থাৎ আজ্য প্রাপ্তির অভিলাষে দোহনসাধনের দ্বারা) যজ্ঞীয় ঘৃতও বর্ষণ করেন। তিনি অদভ্য (অর্থাৎ রক্ষ প্রভৃতির দ্বারা অহিংসিত। এই অগ্নি আপন প্রজ্ঞানের দ্বারা সব কিছুই সাক্ষাৎ করে থাকেন। (দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়। যেমন বরুণদেব আপন ধিষণায় সব জ্ঞাত হয়ে থাকেন। সেই যজ্ঞাহ অগ্নি যজ্ঞের যথাযথ ঋতুতে যাগের যথোপযুক্ত দেবতাগণের উদ্দেশে যজন করেন। ৮

জলধারক (গন্ধর্ব) আদিত্যের স্বভূতা ভারতী ও অম্বন্ধিনী অর্থাৎ জলস্থায়িনী যুবতী সরস্বতী রুপৎ অর্থাৎ স্পষ্ট বক্তা আমার দ্বারা অগ্নিকে স্তুত করুন (অগ্নিং স্তৌতু)। স্তোতা আমার স্তোত্ররূপে নাদে (ধ্বনিতে) আমার মনকে সর্বতোভাবে রক্ষা করুন। অনন্তর অদিতি (দেবমাতা দেবী) ইষ্টফলের মধ্যে বা যজ্ঞে আমাদের আত্মাদের স্থাপন করুন। ভ্রাতা (অর্থাৎ ভরণকর্তা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতৃবৎ হিতকরী) মুখ্য (প্রথমো) অগ্নি আমাকে বলুন–এই জন নিপুণ যাগকর্তা যজমান (সাধু যষ্টা) ॥৯॥৷

 সেই বন্দনীয়া (ভদ্রা), মন্ত্ররূপ-শব্দবতী (ক্ষুমতী), অন্নবতী (যশস্বতী অর্থাৎ মনুষ্যের উপভোগাৰ্থে হবিলক্ষণ অন্নযুতা) ও স্ববর্তী (অর্থাৎ আদিত্যবতী) উষা মনুষ্যের ব্যবহারের নিমিত্ত বা (অগ্নিহোত্র ইত্যাদি যজ্ঞার্থে) যজমানের নিমিত্ত (অন্ধকার দূরীভূত করে) প্রাদুর্ভূত হয়েছেন। সেই উষাকালে কাময়মান (উশন্তং), দেবগণের আহ্বায়ক বা হোমনিস্পাদক অগ্নিকে যজ্ঞার্থে কাময়মান (উশতাং) যজমানগণের প্রদত্ত হবিঃ দেবগণের প্রাপ্তি করণের নিমিত্ত (অর্থাৎ দেবতাগণের নিকট বহন করার নিমিত্ত অধ্বর্যগণ উৎপাদন করে থাকেন)। ১০।

.

তৃতীয় সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, রুদ্র, সরস্বতী, পিতৃগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী]

অধ ত্যং দ্ৰন্সং বিভূং বিচক্ষণং বিরাভরদিষিরঃ শ্যেনো অধ্বরে। যদী বিশশা বৃণতে দস্মমাৰ্যা অগ্নিং হোতারমধ ধীরজায়ত ॥১॥ সদাসি রয্যে যবসেব পুষ্যতে হোত্রাভিরগ্নে মনুষঃ স্বধ্বরঃ। বিপ্রস্য বা যচ্ছশমান উথ্যো বাজং সসাঁ উপযাসি ভূরিভিঃ ॥২৷৷ উদীরয় পিতরা জার আ ভগমিয়ক্ষতি হর্ষতো হৃত্ত ইষ্যতি। বিবক্তি বহ্নিঃ স্বপস্যতে মখস্তবিষ্যতে অসুররা বেপতে মতী ॥৩৷৷ যস্তে অগ্নে সুমতিং মর্তো অখ্যৎ সহসঃ সূনো অতি স প্র শৃথে। ইষং দধানো বহমাননা অশ্বৈরা স দ্যুম। অমবান ভূষতি দূ॥ ৪৷ শ্রুধী নো অগ্নে সদনে সধস্থে যুম্ফা রথমমৃতস্য দ্রবিকুম। আ নো বহ রোদসী দেবপুত্রে মাকিদোনামপ ভূরিহ স্যাঃ ॥৫॥ যদগ্ন এষা সমিতিৰ্ভবাতি দেবী দেবেষু যজতা যজত্র। রত্না চ য বিভজাসি স্বধাবো ভাগং নো অত্র বসুমন্তং বীতাৎ৷৬৷ অগ্নিরুষসামগ্রমখ্যদন্থহানি প্রথমো জাতবেদাঃ। অনু সূর্য উষসো অনু রশ্মীননু দ্যাবাপৃথিবী আ বিবেশ ॥৭॥ প্রত্যগ্নিরুষসামগ্ৰমখ্যৎ প্রত্যহানি প্রথমো জাতবেদাঃ। প্রতি সুর্যস্য পুরুধা চ রশ্মী প্রতি দ্যাবাপৃথিবী আততান ॥ ৮ দ্যাবা হ ক্ষামা প্রথমে ঋতেনাভিশ্রাবে ভবতঃ সত্যবাচা। দেবো যন্মর্তা যজথায় কৃৎসীদদ্ধোতা প্রত্যঙ অমসুং যন্ ॥৯॥ দেবে দেবা পরিভূঋতেন বহা নো হব্যং প্রথমশ্চিকিত্বা। ধূমকেতুঃ সমিধা ভাঋজীকো মন্দ্রো হোত নিহত্যা বাঁচা যজীয়ান্ ॥১০৷

বঙ্গানুবাদ–(পূর্বে) শ্যেনের দ্বারা মহান্ত বিচক্ষণ সোম যজ্ঞের নিমিত্ত আহৃত হয়েছিল। সোম আহৃত হলে যজমানগণ (আর্যা) হোমনিম্পাদক অগ্নিকে বরণ করেন। এবং সোম ও অগ্নির সিদ্ধত্বের পর অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি কর্মও সম্পূর্ণ হয়। (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ও তৈত্তিরীয় সংহিতায় আছে যে, গায়ত্রী সুপর্ণরূপ ধারণ পূর্বক দ্যুলোক হতে সোম আহরণ করে এনেছিলেন) ॥১॥

 হে অগ্নি! তুমি যজ্ঞকে সুষ্ঠুভাবে নিবর্তন করে থাকো। যেমন হরিত্বর্ণের তৃণ ইত্যাদি ভোজনকারী পশু আপন পালকের নিকট সুন্দররূপে প্রতিভাত হয়, তেমনই আজ্য ইত্যাদির দ্বারা তোমাকে পুষ্ট করণশালী যজমানের নিকট তুমি দর্শনীয় হয়ে থাকো। এমন কি তুমি স্তুত্য তুল্য হয়ে বিপ্রস্য অর্থাৎ মেধাবী যজমানের প্রশংসা পূর্বক তার নিবেদিত হবিঃ ভক্ষণ করে বহু কাম বা দেববর্গ সমভিব্যাহারে আগমন করে থাকো। (এইরকম করায় তুমি যজমানের সাথে সদা রমণীয় সম্বন্ধযুক্ত)। ২।

হে অগ্নি! তুমি (দ্যাব-পৃথিবীরূপ) পিতা-মাতার নিকট তোমার তেজুঃ উদীরিত (প্রেরিত) করো, যেমন রাত্রির জার (অর্থাৎ উপপতি) স্বরূপ আদিত্য দ্যাবাপৃথিবীতে আপন ভজনীয় আলোক (প্রকাশ) প্রেরণ করেন। যজমান যে দেবগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানের ইচ্ছা করেন, কমনীয় (হর্যতো) অগ্নি হৃদয় হতেই (অর্থাৎ স্বেচ্ছান্বিত হয়ে বা স্বতঃপ্রবৃত্ত ভাবে) তাদের যাগানুষ্ঠানে ইচ্ছা করেন। হবিঃবহনকারী (বহ্নি–হবিষাং বোঢ়াগ্নি), যজ্ঞসাধনকারী (মখসাধন) বা পূজনীয় অগ্নি শোভন কর্ম-সাধনে অভিলাষী যজমানকে বলে থাকেন যে, তিনি সেই তাঁকে তার অভিলষিত ফল দান করবেন। বৃদ্ধিশীল (ভবিষ্যতে) বলবান্ (অসুরঃ) অগ্নি যাগের নিমিত্ত আগমন করে থাকেন ৷ ৩৷৷

হে অগ্নি! তোমার (অনুগ্রহলক্ষণ) শোভনা বুদ্ধি সম্পর্কে মরণধর্মা মনুষ্য (অর্থাৎ যজমান) অন্যকে বলে থাকেন। (অর্থাৎ স্বয়ং প্রাপ্ত হয়–এটাই বক্তব্য)। হে বলের পুত্র (অর্থাৎ বলের দ্বারা মথ্যমান হয়ে জাত) অগ্নি! তোমার অনুগ্রহপ্রাপ্ত যজমান সর্বতঃ প্রকর্ষের দ্বারা শ্রুত হন (অর্থাৎ প্রসিদ্ধি লাভ করেন)। তিনি অন্ন, অশ্ব ইত্যাদির দ্বারা সংযুক্ত হয়ে চিরকাল ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকেন। ৪।

 হে অগ্নি! তুমি এই দেব-স্থানে অর্থাৎ যজ্ঞ-গৃহে আমাদের আহ্বান শ্রবণ করো। তার নিমিত্ত অমৃতের (অর্থাৎ জলের) দ্রাবক রথকে সেই দেবতাগণের নিমিত্ত সংযোজিত করে। এবং আমাদের নিমিত্ত দেবপুত্রগণের পিতামাতারূপী আকাশ ও পৃথিবীর (রোদসীর) অধিষ্ঠাত্ দেব-দেবীকে যজ্ঞার্থে আনয়ন করো। কিন্তু সেই দেবসঘের সাথে তুমি যেন অপগত হয়ো না, পরন্তু আমাদের এই যাগগৃহে এমনই অবস্থান করো। (অর্থাৎ সর্বকর্মার্থে সর্বদা সন্নিহিত থাকো)। ৫৷৷

 হে যজত্র (অর্থাৎ যাগযোগ্য) অগ্নি! যখন দেবগণের মধ্যে (দেবেষু মধ্যে) পূজনীয়া দেবসম্বন্ধিনী বা দীপ্তা সংহতি (সমিতি) হয় (অর্থাৎ দেবগণ যখন সকলে সম্মিলিত হন), এবং হে অন্নবান্ (স্বধাবঃ) অগ্নি! যখন তুমি স্তোতৃগণের মধ্যে রমণীয় ধনসমূহ (রত্ন) বিভাজিত করে দাও, সেই কালে আমাদেরও প্রভূত ধনযুক্ত (বসুমন্তং) ভাগ প্রদান করো। ৬।

 নিত্যে উষাকালের পূর্বেই প্রথম (মুখ্য) এই জাতবেদা অগ্নি সূর্য, উষা (উষসসা), রশ্মিরাশি (রশ্মীননু) ও দ্যাব-পৃথিবীতে প্রবিষ্ট হন (আ বিবেশ) ৭

সর্ব দেবতা ও মনুষ্যের আশ্ৰয়ত্ব ও সকলের উপকারত্বের নিমিত্ত স্তুতিরূপা সত্যস্বরূপা বাণী (বাক)-র দ্বারা দ্যাবাপৃথিবী সকলের শ্রবণযোগ্য হন; যখন দ্যোতমান অগ্নি মনুষ্যগণ কর্তৃক অনুষ্ঠিতব্য যাগের হোতা অর্থাৎ হোমনিস্পাদক দেববৃন্দের আহ্বাতা হয়ে যজমানের অভিমুখে আপন প্রজ্ঞা অর্থাৎ যাগসম্পর্কিত বল বা জ্বালালক্ষণ দীপ্তি প্রকাশ পূর্বক অবস্থান করে থাকেন। ৮-৯।

 হে অগ্নিদেব! তুমি দ্যোতমান (প্রকৃষ্টজ্বালস্তং) হয়ে ঋত অর্থাৎ যজ্ঞের দ্বারা যাগযোগ্য দেবতাগণকে আপন অধীন করে (পরিভূঃ), মুখ্যরূপে (প্রধানরূপে), এঁদের মধ্যে যাঁরা যাগের যোগ্য, সেই কথা জ্ঞাত হয়ে আমাদের নির্বপিত হবিঃ সেই দেবগণের নিকট উপস্থাপিত করো। (এই অগ্নি বহুধা প্রশংসিত হয়ে থাকেন, যেমন–) তুমি ধূমকেতু অর্থাৎ ধূমের দ্বারা প্রজ্ঞায়মান, সমিধা অর্থাৎ সমিন্ধন সাধনের দ্বারা ভাসমানদীপ্তি, মন্দ্র অর্থাৎ মন্দ্র (স্বয়ং) আনন্দপূর্ণ বা (অপরকে) আনন্দিতকারী, হোতা অর্থাৎ দেবগণের আহ্বা, নিত্য অর্থাৎ অবিনাশী বাঁচা অর্থাৎ স্তুতিরূপ বাক্যে যজীয়া বা অতিশয় যষ্টা। (তুমিই যজ্ঞে আহুত দেবতা, আবার তুমিই যজ্ঞে আহুত দেবগণের যাগকারী)। ১০।

.

চতুর্থ সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, রুদ্র, সরস্বতী, পিতৃগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী]

 অৰ্চামি বাং বধায়াপো ঘৃতক্ষু দ্যাবাভূমী শৃণুতং রোদসী মে। অহা যদ দেবা অসুনীতিমায় মধ্ব নো অত্র পিতরা শিশীতাম্ ॥১॥ স্বাবৃগ দেবস্যামৃতং যদী গোরতো জাতাসো ধারয়ন্ত উবী। বিশ্বে দেবা অনু তৎ তে যজুর্গহে যদেনী দিব্যং ঘৃতং বাঃ৷৷২৷৷ কিং স্বিনো রাজা জগৃহে কদস্যাতি ব্ৰতং চকৃমা কো বি বেদ। মিত্রশ্চিদ্ধি স্মা জুহুরাণো দেবাংজাকো ন যাতামপি বাজো অস্তি ॥৩॥ দুর্মত্রামৃতস্য নাম সলক্ষ্মা যদ বিষুরূপা ভবাতি। যমস্য যো মনবতে সুমদ্ভূগ্নে মৃধ পাহ্যপ্রযুচ্ছ। ৪ যস্মিন্ দেবা বিদথে মাদয়ন্তে বিবস্বতঃ সদনে ধারয়ন্তে। র্যে জ্যোতিরদধুর্মাস্য পরি দ্যোতনিং চরতো অজষা ॥৫॥ যস্মিন্ দেবা মন্মনি সঞ্চরত্যপীচ্যে ন বয়মস্য বিন্দু। মিত্রো নো অত্রাদিতিরনাগাৎসবিতা দেবো বরুণায় বোচৎ ॥৬॥ সখায় আ শিষামহে ব্ৰহ্মেন্দ্রায় বত্রিণে। ঔষ ঊ যু নৃতমায় ধৃষ্ণবে৷ ৭৷ শবসা হ্যসি তো বৃহত্যেন বৃত্ৰহা। মঘৈর্মযোনো অতি শূর দাশসি৷ ৮স্তেগো ন ক্ষামত্যেষি পৃথিবীং মহী নো বাতা ইহ বান্তু ভূমৌ। মিত্রো নো অত্র বরুণো যুজ্যমাননা অগ্নিৰ্বনে ন ব্যসৃষ্ট শোক৷৷৷৷ স্তুহি শ্রুতং গর্তসদং জনানাং রাজানং ভীমমুপহতুমু। মৃড়া জরিত্রে রুদ্র স্তবানো অন্যমস্মৎ তে নি বপন্তু সেন্য৷ ১০৷

বঙ্গানুবাদ –হে ধৃত (অর্থাৎ উদকের সারভূত) দ্যাবাপৃথিবী! আমি তোমাদের কর্মের অভিবৃদ্ধির নিমিত্ত স্তুতি করছি (অৰ্চামি)। হে রোদসী (পিতা আকাশ ও মাতা পৃথিবী)! সকল প্রাণীকে নিরোধ করার নিমিত্ত (রোধয়িত্ৰেী) অথবা বৃষ্টিফলগুলি প্রতিবন্ধ করে সকল প্রাণীকে রোদন করানোর কারণে (রোদয়িত্মেী) তোমরা আমার স্তুতিবাক্য শ্রবণ করো। যখন ঋত্বিকগণ (স্তোতাগণ) যজ্ঞের নিমিত্ত স্বকীয় বল অর্জনে অগ্রসর হবেন, তখন তোমরা (পিতা-মাতা স্বরূপ দ্যাবাপৃথিবী) মধুময় জল প্রদান পূর্বক আমাদের বৃদ্ধিসাধন বা সংস্কার কোরো (শিশীতাং) ॥১॥

 দ্যোতমান অগ্নির রশ্মি হতে যখন অমৃতবৎ উপকারক জল সকল প্রাণীর নিমিত্ত সুষ্ঠুভাবে আবর্জিত (আহৃত) হয়, তখন সেই অমৃতময় বৃষ্টিজলের দ্বারা উৎপাদিত (তিল-ব্রীহি ইত্যাদি) ঔষধিসমূহকে দুলোক ও ভূলোক ধারণ করে থাকে। অধিকন্তু, হে অগ্নি! তোমার শ্বেত-দ্বীপ্তি (এনি) দিবিলোক হতে ক্ষরিত হয়ে সর্বলোকের আচ্ছাদক জল দোহন করে, তখন সকল দেবতা তোমার যজুঃ নামে অভিহিত সেই কর্মজনিত জলের অনুগমন করে থাকেন। (অথবা–যজুঃ শব্দের অর্থ এই স্থানে দান ধরলে–তোমার সেই উদকবিষয়ক দান সকল দেবগণের স্তোতা ঋত্বিকগণকে অনুগমন করে)॥ ২॥

দেবতাগণের (দেবেযু) মধ্যে ক্ষত্রিয়জাতি (অর্থাৎ ক্ষত্রিয়বলসম্পন্ন) (রাজা) যম কি কখনও আমাদের হবিঃ গ্রহণ করেন? কে জানে, (কো বি বেদ), কখন (কদা) যমের প্রীতিকর নিত্যনৈমিত্তিকরূপ কর্ম (যমস্য প্রীণনং ব্রতং) আমরা অতিক্রম করে ফেলেছি (অতিক্ৰমং কৃতবন্ত স্মঃ)। যম-বিষয়ক অপরাধ পরিহারের নিমিত্ত দেবতাগণের আহ্বানকারী (জুহুরাণঃ), মিত্রবৎ হিতকরী অগ্নি বিদ্যমান আছেন (অগ্নির্বিদ্যতে)। আমাদের রক্ষার নিমিত্ত স্তুতি (শ্লোকঃ) ও হবিও (বাজঃ অর্থাৎ হবিলক্ষণ অন্নও) বিদ্যমান আছে। (তার দ্বারা অগ্নিকে পরিতোষিত করে যমের নিকট আমাদের অপরাধ পরিহার করবো–এটাই অভিপ্রায়) ॥ ৩৷৷

 (পূর্ববর্তী ১ম ও ২য় সূক্তে উল্লেখ মতো) যমের নিকট যমীর সম্ভোগ প্রার্থনা-বিষয়ে যে নিন্দাসূচক কথা (দুর্মন্তু) আছে এবং যে ব্যক্তি (তা নিরাকরণের নিমিত্ত) যমরাজের উদ্দেশে স্তুতিবাক্য প্রয়োগ করে (সুমন্তু), হে দর্শনীয় অগ্নি (ঋ)! তুমি সেই হেন স্তোতাকে বিস্মৃত হয়ো না (অপ্রযুচ্ছ); তাকে রক্ষা করো (পাহি) ॥ ৪।

 যজ্ঞনিবৰ্ত্তকত্বের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ যে অগ্নির বিদ্যমানে (ইন্দ্র ইত্যাদি) দেবগণ যজ্ঞে প্রমোদ লাভ। করেন (মাদয়ন্তে) এবং যার কারণে মনুষ্যগণ সূর্যলোকে (বিবস্বতঃ সদনে) কর্মফল উপভোগ পূর্বক সুখে অবস্থান করে (অবতিষ্ঠন্তে), বা যে অগ্নির দ্বারা দেবগণ সূর্যে (ত্রিলোককে প্রকাশকারী) তেজঃ (জ্যোতিঃ) স্থাপিত করেন (অদধুঃ) এবং তমোনিবর্তক রশ্মিগুলিকে (যে অগ্নির নিকট হতে আহরণ পূর্বক) চন্দ্রে স্থাপন করেন, সেই দ্যোতমানের (অগ্নির) চতুর্দিকে (চন্দ্র-সূর্য) সতত পরিভ্রমণ করছেন (অর্থাৎ পূজা করছেন)। ৫৷

বরুণ নামক দেবতার যে অন্তর্হিত স্থানে (অপীচ্যে) দেবগণ সঞ্চরণ করে থাকেন, তা আমরা বিদিত নই (ন বয়ং বিদ্য)। হে অগ্নি! অন্তর্হিতস্থানে স্থিত (সেই দেবসঞ্চারাস্পদে) বরুণের নিকটে সবিতাদেব, দেবমাতা অদিতি, ও মিত্রদেব–এঁরা প্রত্যেকে তোমার অনুগ্রহে আমাদের নির্দোষিতা সম্পর্কে (অস্মন্ অনাগা বলুন (বোচৎ)। ৬।

হে সখাগণ (পরস্পর প্রেমবন্ত আমরা)! (অতিশয় বীর্যত্বের নিমিত্ত) বজ্ৰী নামে অভিহিত ইন্দ্রের সমর্থ কর্ম সম্পাদনের আশা করি। সকল দেবগণের মধ্যে মুখ্য (নৃতমায়), শত্রুবর্গের ধর্ষক (ধৃষ্ণবে) ইন্দ্রদেবের প্রীতির উদ্দেশে আমরা স্তুতি করছি (স্তষে)। ৭৷৷

(পূর্ব মন্ত্রে বজ্রধারী ইন্দ্রের উল্লেখ করা হয়েছে, এইবার তার মহত্ত্ব বর্ণনা প্রসঙ্গে আপন অভিমত প্রার্থনা করা হচ্ছে)।–হে ইন্দ্র! তুমি বৃত্রের হন্তা (বৃত্ৰহা)। তুমি বলবান্ অসুরগণের বিনাশ-করণরূপ সামর্থ্যের নিমিত্ত বিখ্যাত (তঃ)। হে শূর (বিক্রান্ত)! তুমি বহু রকমের ধনে ধনবান; তুমি আমাদের সেই ধন অতিরিক্ত প্রদান করো। (অর্থাৎ সেই ধন-প্রার্থনায় আমরা তোমার উদ্দেশে যাগ করছি–এটাই বক্তব্য)। ৮।

বর্ষাকালে মণ্ডুক (স্তেগঃ) যেমন সমগ্র পৃথিবীব্যাপী (লম্ফ প্রদান পূর্বক) ভ্রমণ করে, সেইভাবে মহান্ বায়ু (বাতা) (অগ্নির সহায়তায় আমাদের সুখের নিমিত্ত) এই ভূমিতে প্রবাহিত হোন। মিত্র (অর্থাৎ সকল প্রাণীর মিত্রভূত) দেবতা এবং বরুণ দেবতাও অগ্নি যেমন বনে তৃণগুল্ম ইত্যাদি দহন করে, সেই রকমে এই কর্মে যুক্ত হয়ে (অস্মিন্ কর্মণি যুজ্যমানঃ সন) আমাদের শোক নাশ করুন (ব্যসৃষ্ট) ॥৯॥

 (এই স্থানে স্তোতা নিজেকে নিজেই অগ্নিরূপধারী রুদ্রের স্তুতি করণের নিমিত্ত উদ্বোধিত করছেন)–হে স্তোতা! তুমি সেই শ্মশানসঞ্চারী (নিরুক্ত মতে গর্ত অর্থে শবদাহপ্রদেশ, সুতরাং গর্তসদ অর্থে শ্মশানবাসী বা শ্মশানবিহারী), (কিরাত-পিশাচ ইত্যাদি) জনগণের স্বামী (রাজানং), ভয়জনক (ভীমং), হন্তারক (উপহতুম), উদঘূর্ণ-বলশালী (উগ্রং), মহানুভাব রুদ্রের স্তুব করো। স্বসেবক আমাদের দুঃখ বা দুঃখহেতুভূত পাপসমূহকে বিতাড়নকারী, হে রুদ্র! আমাদের দ্বারা স্কৃয়মান হয়ে আমাদের সুখ (মৃড়) প্রদান করো। তোমার সেনাগণ আমাদের ব্যতিরেকে তোমার অন্য দ্বেষকারীগণের প্রতি গমন করুক ॥ ১০

.

পঞ্চম সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, রুদ্র, সরস্বতী, পিতৃগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী]

 সরস্বতী দেবয়ন্তো হবন্তে সরস্বতীমধ্বরে তায়মানে। সরস্বতীং সুকৃতত হবন্তে সরস্বতী দাশুষে বাৰ্যং দাৎ ॥১॥ সরস্বতীং পিতরো হবন্তে দক্ষিণা যজ্ঞমভিনক্ষমাণাঃ। আসদ্যস্মিন বহির্ষি মাদয়ধ্বমনমীবা ইষ আ ধেহ্যম্মে॥ ২॥ সরস্বতি যা সরথং যয়াথোকথৈঃ স্বধাভির্দেবি পিতৃভিমর্দন্তী। সহস্রার্ঘমিড়ো অত্র ভাগং রায়ম্পোষং যজমানায় ধেহি ৷৩৷৷ উদীরতামবর উৎ পরাস উন্মধ্যমাঃ পিতরঃ সোম্যাসঃ। অসুং য ঈয়ুরবৃকা ঋতজ্ঞান্তে নোহবন্তু পিতরো হবে ॥৪॥ আহং পিতৃসুবিদত্রা অবিসি নপাতং চ বিক্রমণং চ বিষ্ণোঃ। বহিষদো যে স্বধয়া সুতস্য ভজন্ত পিত্বস্ত ইহাগমিষ্ঠাঃ ॥ ৫৷৷ ইদং পিতৃভ্যো নমো অদ্য যে পূর্বাসো যে অপরাস ঈয়ুঃ। যে পার্থিবে রজস্যা নিষত্তা যে বা নূনং সুবৃজনাসু দিক্ষু ৷৬৷৷ মাতলী কব্যৈৰ্যমে অঙ্গিবোভিবৃহস্পতিঋভিবাবৃধানঃ। যাংশ্চ দেবা বাবৃধুর্যে চ দেবাংস্তে নোহবন্তু পিতরো হবে ॥৭॥ স্বাদুদ্ধিলায়ং মধুমাঁ উতায়ং তীব্রঃ কিলায়ং রসবাঁ উতায়। উতত স্বস্য পপিবাংসমিং ন কশ্চন সহত আহবে ॥৮পরেয়িংসং প্রবতো মহীরিতি বহুভ্যঃ পন্থমনুপম্পশান। বৈবস্বতং সঙ্গমনং জনানাং যমং রাজানাং হবিষা সপৰ্ষত ॥৯॥ যমো নো গাতুং প্রথমো বিবেদ নৈষা গন্যূতিরপভর্তবা উ। যত্রা নঃ পূর্বে পিতরঃ পরেতা এনা জজ্ঞানাঃ পথ্যা অনু স্বাঃ ॥ ১০

বঙ্গানুবাদ –মৃতদেহের সংস্কার-করণশালী পুরুষ অগ্নির (অর্থাৎ চিতাগ্নির বা যমের) নিমিত্ত অভিলাষী হয়ে বাগদেবতা সরস্বতীর আহ্বান করে থাকেন (অর্থাৎ প্রীত করে থাকেন) এবং (জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি) যজ্ঞেও সরস্বতী দেবীকে আহূত করে থাকেন। সেই দেবী সরস্বতী সুকর্মশীল হবিদাতা যজমানকে অভিলষিত পদার্থ প্রদান করুন ॥১॥

বেদীর দক্ষিণভাগে ব্যাপ্ত (বা প্রতিষ্ঠিত) পিতৃগণও দেবী সরস্বতাঁকে আহ্বান করেন। হে পিতৃগণ! তোমরা এই যজ্ঞস্থলে উপবেশন পূর্বক (আমাদের প্রদত্ত স্বধায়) তৃপ্তি লাভ করো। হে সরস্বতী! তুমি পিতৃগণ কর্তৃক আহূত হয়ে (রাক্ষস ইত্যাদি বর্জিত বা) ব্যধিরহিত অন্নসমূহ আমাদের প্রদান করো (বা আমাদের মধ্যে স্থাপন করো)। ২৷৷

হে সরস্বতী দেবী! তুমি উথ-রূপ শস্ত্র ও পিতৃগণের উদ্দেশে নিবেদিত স্বাধা-রূপ অন্নে নিজেকে তৃপ্ত করে পিতৃগণ সমভিব্যাহারে একই রথে আগমন করছো। তুমি অনেক ব্যক্তি ও পুত্র ইত্যাদিকে তৃপ্ত করণশালী অন্নের ভজনীয় অংশ এবং (গো-ইত্যাদি লক্ষণ) ধনের পুষ্টি আমি হেন যজমানকে প্রদান করো ৷ ৩৷৷

অবরে অর্থাৎ (বয়সোচিত কারণে নিকৃষ্ট বা কনিষ্ঠ) পুত্র-পৌত্র-প্রপৌত্র ইত্যাদি, পরাস অর্থাৎ (বয়সোচিত কারণে পর বা শ্রেষ্ঠ) বৃদ্ধপ্রপিতামহ ইত্যাদি এবং মধ্যম অর্থাৎ (কনিষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠের মধ্যবর্তী) পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতামহ ইত্যাদি,-সোমযাগের যোগ্য বা সম্পাদক তোমরা সকলে উত্তিষ্ঠিত হও। (তপঃ ইত্যাদির তারতম্যের দ্বারা অবর-পর-মধ্যমত্ব লক্ষণে. পুরুষগণের বিভাগ করা হয়েছে)। যাঁরা প্রাণোপলক্ষিত লিঙ্গশরীর প্রাপ্ত হয়েছেন, যাঁরা অহিংসক, যাঁরা সত্যবিদ, সেই পিতৃগণ এই আহ্বানে আমাদের রক্ষা করুন। ৪

আমি সুবিদত্রান অর্থাৎ কল্যাণরূপ ধনে ধনী পিতৃগণকে অভিমুখে প্রাপ্ত হয়েছি বা জ্ঞাত হয়েছি, যজ্ঞ-নির্বাহক অগ্নিকে প্রাপ্ত হয়েছি বা জ্ঞাত হয়েছি এবং সবন-ত্রয়ের ক্রম (সবনত্রয়াক্রমণং) প্রাপ্ত হয়েছি বা জ্ঞাত হয়েছি। (সবন অর্থে যস্নান বা সোমরস-পান)। বহিষদ নামক যে পিতৃবর্গ স্বধার সাথে অভিযুত সোম পানের অভিলাষী, তারা (আমাদের এই যজ্ঞে বা আমাদের নিকটে) আগমন করুন। ৫৷৷

যাঁরা পূর্বে (অর্থাৎ প্রথমে) পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়েছেন এবং যাঁরা পরে (পিতৃলোকে) গমন করেছেন, যাঁরা পৃথ্বীলোকে স্থিত (নিষত্তা) আছেন এবং যারা ইদানীং সুষ্ঠুভাবে বিভক্ত হয়ে (পূর্ব ইত্যাদি) দিকে স্থিত আছেন–সেই সকল পিতৃগণের উদ্দেশে এই নমস্কার জ্ঞাপিত হচ্ছে। (তেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পিতৃভ্যঃ ইদং নমোস্ত) ৷৷ ৬ ৷৷

মাতলী নামক দেবতা, যিনি পিতৃগণের নেতা, তিনি পিতৃগণের সাথে যজমান কর্তৃক প্রদত্ত এই হবির দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছেন। যম নামক দেবতা, যিনি পিতৃগণের নেতা, তিনি অঙ্গিরা ইত্যাদি পিতৃগণের সাথে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছেন। বৃহস্পতি দেবতা, যিনি দেবগণের নেতা, তিনিও ঋক নামক অর্চনীয় পিতৃগণের সাথে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছেন। মাতলী প্রমুখ যে দেবগণ যজ্ঞে পিতৃবর্গের বর্ধন সাধন করছেন এবং যে পিতৃগণ কব্য বা স্বধা প্রদানের দ্বারা দেবগণের বৃদ্ধি সাধন করছেন, সেই নির্দিষ্ট পিতৃগণ (সকলে) আমাদের আহ্বানে আমাদের রক্ষা করুন। (অস্মন্ হবে অবন্তু)। ৭

এই অভিযুত সোম স্বাদু (অর্থাৎ সুখের সাথে আস্বাদ্য); এই সোম মধুমান (অর্থাৎ মাধুর্যোপেত); এই সোম আশু (তীব্র) মদয়িতা (অর্থাৎ বহু মদকর রসোপেত)। এই সোম-পীতবন্ত ইন্দ্রকে (পরস্পর আহ্বানবৎ) সংগ্রামে কেউ (অর্থাৎ কোন অসুর ইত্যাদি) অভিভব করতে পারে না (ন সহতে)। ৮৷

 অত্যন্ত বিপ্রকৃষ্ট দেশে গতবন্ত (অর্থাৎ সকল ভূমি অতিক্রম পূর্বক বর্তমান), পিতৃলোকে গমনের বহু মার্গ অবগতশীল, মৃত-জনগণের প্রাপ্তিস্থানভূত বৈবস্বত (বিবস্বানের পুত্র) রাজা যমকে হবির দ্বারা পূজা করো (হবিষা সপত)। ৯৷

যমদেব আমাদের সম্বন্ধীয় মৃতজনের গমন মার্গ প্রথমে জ্ঞাত হয়ে থাকেন; যমের পদ্ধতি (গন্যূতি), মৃতের গন্তব্য মার্গ দেবতা বা মনুষ্য পরিহার করতে সক্ষম হন না। (কারণ অত্মসাক্ষাত্রহিত অর্থাৎ পরমাত্মজ্ঞানহীন পুরুষের পক্ষে আপন কর্মফল ভোগের নিমিত্ত পিতৃলোক অবশ্য প্ৰাপণীয়)। যে মার্গে আমাদের পূর্বভাবী পিতৃগণ গমন করেছেন, এবং পরে যে মার্গে পুনরায় প্রত্যাগমন করে (অর্থাৎ পুনরায় জাত হয়ে) আপন আপন কর্মানুরোধিণী হিতকরী (পথ্য) ভূমি লাভ করেছেন, সেই সবই যমরাজ জ্ঞাত থাকেন ৷৷ ১০৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— পিতৃমেধর্মাণ সরস্বতীং দেবয়ন্তঃ ইতি তিসৃভিঃ অগ্নিদাতা কনিষ্ঠপুত্ৰশ্চিতৌ দক্ষিণত আজ্যেন সারস্বতহোমান কুর্যাৎ। তত্রৈব কর্মণি শব্দহনস্থানং উদীরতাং ইত্চা কাস্পীলশাখয়া উধৃত্য অভ্যুক্ষ্য লক্ষণং কুর্যাৎ (কৌ. ১১/১)।…ইত্যাদি৷ (১৮কা, ১অ. ৫সূ.)

টীকা –পুর্বেই উল্লিখিত হয়েছে–অষ্টাদশ কাণ্ডের চারটি অনুবাকের সকল মন্ত্রই পিতৃমেধে নানাভাবে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই প্রথম অনুবাকের প্রথম চারটির বিনিয়োগ পুর্বেই উক্ত হয়েছে। উপযুক্ত পঞ্চম সূক্তের প্রথম তিনটি মন্ত্রের দ্বারা পিতৃমেধকর্মে অগ্নিদাতা কনিষ্ঠ পুত্র কর্তৃক চিতার দক্ষিণ পার্শ্বে আজ্যের দ্বারা সারস্বত হোম করণীয়। চতুর্থ (উদীরং) মন্ত্রে শব্দহন স্থানে কাস্পীল্যশাখা উধৃত পূর্বক প্রেক্ষণ করণীয়। (কৌ. ১১/১)। পিণ্ডপিতৃযজ্ঞেও এই মন্ত্রে গর্ত খননীয়। (কৌ. ১১/৮)।…ইত্যাদি ॥ (১৮কা, ১অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি; অথর্বা দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, রুদ্র, সরস্বতী, পিতৃগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, জগতী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী]

বহির্ষদঃ পিতর উত্যর্বাগিমা বো হব্যা চক্‌মা জুষধ্বম্। ত আ গতাবসা শম্ভমেনাধা নঃ শং যোররপো দধাত ॥১॥ আচ্যা জানু দক্ষিণততা নিষদ্যেদং নো হবিরভি ঘৃণন্তু বিশ্বে। মা হিংসিষ্ট পিতরঃ কেন চিন্নে যদ ব আগঃ পুরুষতা করা৷ ২ত্বষ্টা দুহিত্রে বহতুং কৃণোতি তেনেদং বিশ্বং ভুবনং সমেতি। যমস্য মাতা পযুহ্যমানা মহো জায়া বিবস্বতো ননাশ ৷৷ ৩৷৷ প্রেহি প্রেহি পথিভিঃ পূর্যাণৈৰ্যেনা তে পূর্বে পিতরঋ পরেতাঃ। উভা রাজানৌ স্বধয়া মদন্তৌ যমং পশ্যাসি বরুণং চ দেবম্ ॥৪॥ অপেত বীত বি চ সৰ্পৰ্তাতোহম্মা এতং পিতরো লোকম৷ অহোভিরদ্ভিরক্তভিৰ্য্যক্তং যমো দদাত্যবসানমস্মৈ ॥ ৫৷৷ উশন্তস্কৃধীমহুশন্তঃ সমিধীমহি। উশনুশত আবহ পিতৃন্ হবিষে অত্তবে ॥৬॥. মন্তত্ত্বেধীমহি দ্যুমন্তঃ সমিধীমহি। দ্যুমান্ দ্যুমত আ বহ পিতৃন্ হবিষে অত্তবে। ৭ অঙ্গিরসো নঃ পিতরো নবদ্যা অর্থবাণো ভৃগবঃ সোম্যাসঃ। তেষাং বয়ং সুমতৌ যজ্ঞিয়ানামপি ভদ্রে সৌমনসে স্যাম ॥ ৮অঙ্গিরেভিজ্ঞিয়ৈরা গহীহ যমবৈরূপৈরিহ মাদয়স্ব। বিবস্বন্তং হুবে যঃ পিতা তেহস্মিন বহিষ্যা নিষদ॥৯ ইমং যম প্রস্তরমা হি লোহাঙ্গিরোভিঃ পিতৃভিঃ সম্বিদানঃ। আ ত্বা মন্ত্রাঃ কবিশস্তা বহনো রাজন হবিষো মাদয়স্ক ॥১০৷ ইত এত উদারুন দিবসৃষ্ঠান্যারুহ। প্র ভূর্জয়ো যথা পথা দ্যামঙ্গিরসো যমুঃ ॥১১৷

বঙ্গানুবাদ –যজ্ঞে সমাগত হে বহিষদ (অর্থাৎ দুর্ভে বা কুশে আসীন) পিতৃগণ! আমাদের রক্ষার নিমিত্ত আমাদের সম্মুখে আগমন করো। এই হবিঃ তোমাদের নিমিত্ত আমরা প্রস্তুত করেছি, তোমরা এটি সেবন করো (জুষধ্বং)। এবং আমাদের সুখতম রক্ষার সাথে আগমন করে (অর্থাৎ আমাদের ক্লেশলেশরহিত করে) ব্যাধি ও শমনের ভয় হতে (অর্থাৎ পাপ হতে) রক্ষা করো। (অপাপং যথা ভবতি তথা দধাত)। ১।

 হে পিতৃগণ! তোমরা সকলে জানুপ্রদেশ আকুঞ্চিত করে (অর্থাৎ ভোজনের উপযুক্ত হাঁটু মুড়ে) বেদীর দক্ষিণ ভাগে উপবিষ্ট হয়ে আমাদের দীয়মান এই পুরোবর্তী হব (হবিঃ) গ্রহণ করো। হে পিতৃবর্গ! আমাদের অল্প বা বিরাট কোনও অপরাধের (অর্থাৎ কর্তব্য বিষয়ের অতিক্রম জনিত ত্রুটির কারণে আমাদের হিংসা করো না; কারণ মনুষ্য স্বভাব বশতঃ আমাদের অপরাধ হওয়া অসম্ভব নয়। ২

ত্বষ্টাদেব (যিনি সিঞ্চিত বীর্যকে পুরুষ ইত্যাদি আকৃতিতে রূপান্তরিত করণশালী, তিনি) আপন দুহিতা সরণুর সাথে বিবস্বানের বিবাহ দিয়েছিলেন, এবং তা দর্শনের নিমিত্ত সকল ভূতজাত (ভুবনং) সমবেত (সমেতি অর্থাৎ সঙ্গীত) হয়েছিল। যমদেবের মাতা সরণু (যমের জন্মের পরেই) (বিবস্বানের অতিশয়িত প্রভা বা তেজঃ সহ্য করতে অপারগ হয়ে) বিবস্বানের নিকট হতে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন (ননাশ)৷ ৩৷৷

(এই মন্ত্রের বিনিয়োগে যেন প্রেতকে শকটের প্রতি অথবা যমলোকের প্রতি গমন করানো বা প্রেরণ করা হচ্ছে)–হে প্রেত (মৃতের আত্মা)! তুমি গমন করো গমন করো (প্রেহি প্রেহি)। (শকটের দিকে অথবা যমলোকের প্রতি গমন করো–বোঝানোর নিমিত্ত দুবার প্রেহি)। যে যানে বা যে মার্গে মনুষ্য বা তোমার পিতৃপিতামহ ইত্যাদি পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়েছেন (পরেতাঃ), সেই পথে বা যানে গমন করো। তথায় দেবগণের মধ্যে উভয় (উভা) অর্থাৎ দুজন ক্ষত্রিয় জাতীয় রাজা আমাদের প্রদত্ত স্বধায় (অর্থাৎ স্বধা গ্রহণ করে) হৃষ্ট হয়ে বিরাজমান আছেন (মদন্তৌ বিদ্যেতে)। সেই লোকে যমদেব ও বরুণদেবকে প্রত্যক্ষ করবে; (অতএব প্রেহি প্রেহি)। (উল্লেখ্য–তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে, ৩১।২।১১ ও ৩৭/৭/৬, বলা হয়েছে–যমো রাজা, বরুণণা রাজা)। ৪

হে রাক্ষস-পিশাচ ইত্যাদি! তোমরা এই (দহন)-স্থান হতে বিশেষ ভাবে দূরে গমন করো (রি সর্পত)। এই স্থলে তোমরা যারা পূর্বতন (অর্থাৎ পূর্বস্থ) এবং যারা ইদানীন্তন (অর্থাৎ সাম্প্রতিক স্থিত) তারা সকলে অপগত হও। (তে সর্বে অপেতেতি সম্বন্ধঃ)। এই প্রেতকে ক্ষালনসাধন উদকের দ্বারা (অদ্ভিঃ) দিবায় এবং অভিব্যক্তিসাধন উদকের দ্বারা রাত্রিকালে যমদেব সুবিশদ (ব্যক্তং) অবসান প্রদান করেছেন; সেই জন্য তোমরা অপগমন করো। (তদর্থং অপেতেতি সম্বন্ধঃ)। ৫।

 হে অগ্নি! এই পিতৃযজ্ঞকে নির্বাহ করণের নিমিত্ত (উশন্তঃ) তোমার প্রতি কাময়মান হয়ে তোমাকে আহ্বান করছি। কাময়মান হয়ে আমরা তোমাকে সম্যক্ প্রজ্বলিত করছি (সমিধীমহি)। এবং যজ্ঞ (উশন) (বা স্বধা) কামনা পূর্বক তুমি হবিঃ স্বীকার করে তা ভক্ষণের নিমিত্ত স্বধা-কামনাকারী (উশতঃ) পিতৃপুরুষগণ সমভিব্যাহারে আগত হও ৷ ৬ ৷

হে অগ্নি! তোমার অনুগ্রহে দীপ্তিমন্ত (দ্যুমন্ত, অর্থাৎ অতিশয় তেজস্বী) আমরা তোমাকে আহ্বান করছি। দ্যুতিমান্ (দ্যুমা) তুমি, স্বয়ং হবিঃ স্বীকার করো এবং সেই হবিঃ ভক্ষণের নিমিত্ত স্বধা-কামনাকারী আমাদের দীপিত (দ্যুমত) পিতৃপুরুষগণ সমভিব্যাহারে আগত হও॥৭॥

 প্রাচীন অঙ্গিরা প্রভৃতি (অঙ্গারাত্মক) মহর্ষিগণ ও নূতন স্তোত্রশালী (নবঘা) অথবা ও ভৃগুগণ আমাদের পিতৃপুরুষ (অথবাণশ্চ নঃ পিতরঃ ভৃগবশ্চ নঃ পিতরঃ)। এঁরা সকলে সোম সম্পাদক (সোম্যাসঃ সোমাই)। (এই অঙ্গিরা প্রভৃতি ঋষিগণের মধ্যে প্রাধান্যবশতঃ ইদানীন্তন অথবা, ভৃগু প্রভৃতিও তাদের গোত্রত্বের কারণে পিতৃপুরুষ-রূপে গৃহীত)। যজ্ঞাহ (যজ্ঞিয়ানাং) তাঁদের অনুগ্রহরূপ বুদ্ধি (সুমতৌ, শোভন মতি) আমরা স্থিত হববা (স্যাম)। তাদের কল্যাণে (ভদ্রে) তাদের প্রসন্নতা (সৌমনসে) আমরা লাভ করবো॥ ৮

হে যম! আমাদের এই কর্মে অঙ্গিরা ইত্যাদি যজ্ঞায় পিতৃগণ সহ আগত হও এবং বিরূপ নামে আখ্যাত (বৈরূপৈঃ) মহর্ষির। গোত্রসস্তৃতগণের সাথে (এই যজ্ঞে আগত হয়ে) সন্তোষ লাভ করো (মাদয়স্ব)। অধিকন্তু (শুধু তোমাকেই নয়) তোমার যে পিতা বিবস্বান (আদিত্য, বিবস্বন্তং), তাঁকেওঁ আহ্বান করছি (হুবে)। তিনি এই কুশের আসনে (বহিষ্যা) উপবেশন করুন। (অর্থাৎ আমাদের প্রদত্ত হবিঃ স্বীকার করুন। ৯।

হে যম! অঙ্গিরা প্রভৃতি পিতৃগণের সাথে সহমত হয়ে সম্মুখে বিস্তারিত এই কুশ রচিত আস্তরণে (প্রস্তরমা) উপবেশন করো (আ সীদ)। হে রাজন্ (যম)! ক্রান্তপ্রজ্ঞ মহর্ষিগণের (কবিশস্তা) স্তুত মন্ত্রসমূহ তোমার আগমনের নিমিত্ত আহ্বান করুক (আ বহন্তু)। তুমি আমাদের হবিঃ প্রাপ্ত হয়ে সন্তুষ্ট হও। (হবিষা অস্মাভিদত্তেন মাদয়স্ব)। ১০।

শবসংস্কার-কতা পুরুষগণ এই মৃতশরীর (এতৎ) ভূপ্রদেশের পৃষ্ঠ হতে (ভূমি থেকে) উর্ধ্বে শকটে বা শয়নে স্থাপন করেছে। অনন্তর দ্যুলোকের পৃষ্ঠস্থ উপরিতন ভোগ্যস্থানসমূহের পথে আরোহণ করাবে (আরোহয়ন্নিতি, তাহ), যে পথে ভরণবন্ত অর্থাৎ পোষণকারী (ভূর্জয়ঃ) বা ভুবন-জয়কারী (ভুবং জিতবন্ত) অঙ্গিরাগণ যে পথে গমন করে দ্যুলোক (স্বর্গ) প্রাপ্ত (যযুঃ) হয়েছেন। ১১

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে বহিষদঃ পিতরঃ ইত্চা বৰ্হি স্থাণীয়াৎ। সূত্রিতং হি। কৌ, ১১৮)।..ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ১অ. ৬সূ.)।

টীকা— এই সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা পিণ্ডপিতৃযজে কুশ আস্তীর্ণ করণ, প্রেস্থিকে ত্রিপাদ শিকায় উপবিষ্ট করণ, প্রেতকে শকটে স্থাপন, প্রেত-দহনস্থান কাস্পীল-শাখার দ্বারা সন্দ্রেক্ষণ, দুটি কাষ্ঠ গ্রহণ পূর্বক অগ্নি প্রজ্বলন, প্রেতশরীরে অগ্নিদাতা পুত্র কর্তৃক আজ্য-যাগকরণ, বপাহুতি যাগ-করণ ইত্যাদি বহু বিনিয়োগ হয়ে থাকে। (১৮কা, ১অ. ৬সূ.)।

সকল অধ্যায়

১. ০০. সম্পাদকের নিবেদন / ভূমিকা
২. ০১।১ প্রথম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৩. ০১।২ প্রথম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৪. ০১।৩ প্রথম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৫. ০১।৪ প্রথম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৬. ০১।৫ প্রথম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৭. ০১।৬ প্রথম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৮. ০২।১ দ্বিতীয় কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯. ০২।২ দ্বিতীয় কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
১০. ০২।৩ দ্বিতীয় কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১১. ০২।৪ দ্বিতীয় কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১২. ০২।৫ দ্বিতীয় কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১৩. ০২।৬ দ্বিতীয় কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
১৪. ০৩।১ তৃতীয় কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
১৫. ০৩।২ তৃতীয় কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
১৬. ০৩।৩ তৃতীয় কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১৭. ০৩।৪ তৃতীয় কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১৮. ০৩।৫ তৃতীয় কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১৯. ০৩।৬ তৃতীয় কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
২০. ০৪।১ চতুর্থ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
২১. ০৪।২ চতুর্থ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
২২. ০৪।৩ চতুর্থ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
২৩. ০৪।৪ চতুর্থ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
২৪. ০৪।৫ চতুর্থ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
২৫. ০৪।৬ চতুর্থ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
২৬. ০৪।৭ চতুর্থ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
২৭. ০৪।৮ চতুর্থ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
২৮. ০৫।১ পঞ্চম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
২৯. ০৫।২ পঞ্চম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৩০. ০৫।৩ পঞ্চম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৩১. ০৫।৪ পঞ্চম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৩২. ০৫।৫ পঞ্চম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৩৩. ০৫।৬ পঞ্চম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৩৪. ০৬।০১ ষষ্ঠ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৩৫. ০৬।০২ ষষ্ঠ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৩৬. ০৬।০৩ ষষ্ঠ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৩৭. ০৬।০৪ ষষ্ঠ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৩৮. ০৬।০৫ ষষ্ঠ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৩৯. ০৬।০৬ ষষ্ঠ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৪০. ০৬।০৭ ষষ্ঠ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
৪১. ০৬।০৮ ষষ্ঠ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
৪২. ০৬।০৯ ষষ্ঠ কাণ্ড : নবম অনুবাক
৪৩. ০৬।১০ ষষ্ঠ কাণ্ড : দশম অনুবাক
৪৪. ০৬।১১ ষষ্ঠ কাণ্ড : একাদশ অনুবাক
৪৫. ০৬।১২ ষষ্ঠ কাণ্ড : দ্বাদশ অনুবাক
৪৬. ০৬।১৩ ষষ্ঠ কাণ্ড : ত্রয়োদশ অনুবাক
৪৭. ০৭।০১ সপ্তম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৪৮. ০৭।০২ সপ্তম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৪৯. ০৭।০৩ সপ্তম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৫০. ০৭।০৪ সপ্তম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৫১. ০৭।০৫ সপ্তম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৫২. ০৭।০৬ সপ্তম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
৫৩. ০৭।০৭ সপ্তম কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
৫৪. ০৭।০৮ সপ্তম কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
৫৫. ০৭।০৯ সপ্তম কাণ্ড : নবম অনুবাক
৫৬. ০৭।১০ সপ্তম কাণ্ড : দশম অনুবাক
৫৭. ০৮।১ অষ্টম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৫৮. ০৮।২ অষ্টম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৫৯. ০৮।৩ অষ্টম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৬০. ০৮।৪ অষ্টম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৬১. ০৮।৫ অষ্টম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৬২. ০৯।১ নবম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৬৩. ০৯।২ নবম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৬৪. ০৯।৩ নবম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৬৫. ০৯।৪ নবম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৬৬. ০৯।৫ নবম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৬৭. ১০।১ দশম কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৬৮. ১০।২ দশম কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৬৯. ১০।৩ দশম কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৭০. ১০।৪ দশম কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৭১. ১০।৫ দশম কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৭২. ১১।১ একাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৭৩. ১১।২ একাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৭৪. ১১।৩ একাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৭৫. ১১।৪ একাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৭৬. ১১।৫ একাদশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৭৭. ১২।১ দ্বাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৭৮. ১২।২ দ্বাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৭৯. ১২।৩ দ্বাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৮০. ১২।৪ দ্বাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৮১. ১২।৫ দ্বাদশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
৮২. ১৩।১ ত্রয়োদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৮৩. ১৩।২ ত্রয়োদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৮৪. ১৩।৩ ত্রয়োদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৮৫. ১৩।৪ ত্রয়োদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৮৬. ১৪।১ চতুর্দশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৮৭. ১৪।২ চতুর্দশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৮৮. ১৫।১ পঞ্চদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৮৯. ১৫।২ পঞ্চদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯০. ১৬।১ ষোড়শ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯১. ১৬।২ ষোড়শ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯২. ১৭।১ সপ্তদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯৩. ১৮।১ অষ্টাদশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯৪. ১৮।২ অষ্টাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯৫. ১৮।৩ অষ্টাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
৯৬. ১৮।৪ অষ্টাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
৯৭. ১৯।১ ঊনবিংশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
৯৮. ১৯।২ ঊনবিংশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
৯৯. ১৯।৩ ঊনবিংশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১০০. ১৯।৪ ঊনবিংশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১০১. ১৯।৫ ঊনবিংশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১০২. ১৯।৬ ঊনবিংশ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
১০৩. ১৯।৭ ঊনবিংশ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
১০৪. ২০।১ বিংশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক
১০৫. ২০।২ বিংশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক
১০৬. ২০।৩ বিংশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক
১০৭. ২০।৪ বিংশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক
১০৮. ২০।৫ বিংশ কাণ্ড : পঞ্চম অনুবাক
১০৯. ২০।৬ বিংশ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক
১১০. ২০।৭ বিংশ কাণ্ড : সপ্তম অনুবাক
১১১. ২০।৮ বিংশ কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক
১১২. ২০।৯ বিংশ কাণ্ড : নবম অনুবাক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন