৬.৩ এযুগের বুদ্ধদেব

অম্লান দত্ত

৬.৩ এযুগের বুদ্ধদেব

বুদ্ধদেব ও আইয়ুবের ভিতর একটি অপ্রকাশিত তর্ক আছে। পত্রালাপে তর্ক। আমি পড়িনি তবে দু’জনের মুখেই কিছু কিছু শুনেছি। সেখানে আইয়ুবকে পাই, প্রগতিতে। বিশ্বাসী। অর্থাৎ তিনি বিশ্বাস করছেন যে মানুষ ধীরে ধীরে জ্ঞানের বৃহত্তর দিগন্তের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে, অগণিত অন্যায়কে অতিক্রম করে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মূল্যে মানুষের সমাজ তবু বহুতর মানুষের জন্য অধিকতর ন্যায়ের অভিমুখেই চলেছে। এমন ধরনের আশাবাদে বুদ্ধদেবের মন সায় দেয়নি। বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে, মানুষের আয়ু বেড়েছে, ক্রীতদাসপ্রথা আধুনিককালে ধিকৃত, মানুষের অধিকার অন্তত মৌখিকভাবে স্বীকৃতিলাভের পথে, এসব কথা তিনি জানতেন। কিন্তু মানুষের মনে শান্তি কি বেড়েছে?

শান্তি কি সম্ভব? এমন কি কাম্য? বুদ্ধদেব নিবাণ চাননি। রবীন্দ্রনাথের শেষজীবনের কবিতা তাঁকে টানত না। যুবতী স্ত্রী যেমন স্বামীর বৈরাগ্যসাধনাকে ভয় করে, বুদ্ধদেব তেমনই সাধুকবিকে নিঃসংশয়ে গ্রহণ করতে পারতেন না। জীবনকে যিনি অন্তরে পরম মধুময় বলে লাভ করেছেন, কবিতার মধুতে কি তার আর তেমন প্রয়োজন আছে?

আধুনিক যুগ যাকে বিশেষভাবে শিল্প বলে জানে, গান্ধীজীর তাতে প্রয়োজন ছিল না। রাত্রির তারকাখচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে তাঁর মানুষের শিল্পকে নগণ্য মনে হয়েছে। ভজন ও অনাবিল আকাশ, এই তো যথেষ্ট। বুদ্ধদেবের কাছে প্রকৃতি উন্মোচিত করেছে অন্য এক পরিচয়। যদি বা সে জননী তবু অপচয়ে বিবেচনাহীন, রমণীয় হলেও পচনশীল, অতএব বিশ্বাসঘাতক, তিক্ত ও কদর্য; শিল্পে রূপান্তরিত হয়ে তবে সে মধুর ও সুন্দর। শিল্পের জন্যই তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন।

দিবা ও রাত্রি দুই জ্বলন্ত কাষ্ঠ। এতে জীবগণ নিরন্তর দগ্ধ হচ্ছে। সাধু চান চিত্তকে এমন ভাবে তৈরি করতে যাতে এই দাহ তাঁকে স্পর্শ করবে না। শিল্পী রাতদিন দগ্ধ হন। এবং সেই জ্বালাকে শিল্পে প্রকাশ করেন।

এই সাধুসন্তের দেশে এযুগের বুদ্ধদেব নিবাণের চেয়েও সেই তৃষ্ণাকেই বরণীয় বলে গ্রহণ করেছিলেন, কাব্যে যার ফলশ্রুতি।

সমাজ সংস্কৃতি স্মৃতি (১৯৮৭)

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ গণতন্ত্রের আধ্যাত্মিক ভিত্তি
২. ১.০২ সত্যাসত্য
৩. ১.০৩ গণযুগ ও গণতন্ত্র
৪. ১.০৪ শ্রমিক ও গণতন্ত্র
৫. ১.০৫ সাধারণ নির্বাচন ও গণতন্ত্র
৬. ১.০৬ আটষট্টির সন্ধিক্ষণে
৭. ১.০৭ গণতন্ত্র ও সমাজবিবর্তন
৮. ১.০৮ ব্যক্তি ও গণসমাজ
৯. ১.০৯ সাম্যবাদ ও প্রগতির পথ
১০. ১.১০ জাতীয় সংহতি
১১. ১.১১ জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে
১২. ১.১২ মাতৃভাষা, ইংরেজী ও হিন্দী
১৩. ১.১৩ এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে
১৪. ১.১৪ সীমান্ত চিন্তা
১৫. ১.১৫ বাংলাদেশ দেখে এলাম
১৬. ১.১৬ গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের সংকট
১৭. ১.১৭ চীনের ছাত্র আন্দোলন
১৮. ১.১৮ পূর্ব ইউরোপ মার্ক্সবাদ সাম্যবাদ
১৯. ১.১৯ ঐক্য ও শান্তি
২০. ১.২০ ঐক্য নিয়ে আরো কিছু চিন্তাভাবনা
২১. ২.১ খাদ্য ও কৃষি সমস্যা
২২. ২.২ আমরা দেশ গড়বো কবে?
২৩. ২.৩ শ্লোগান বনাম সত্য
২৪. ২.৪ আর্থিক উন্নতির শর্ত
২৫. ২.৫ কর্মসংস্থান ও আর্থিক পুনর্গঠন
২৬. ২.৬ উন্নয়নের তত্ত্ব ও ভবিষ্যৎ
২৭. ৩.০১ বিজ্ঞান ও প্রগতির পথ
২৮. ৩.০২ স্বজন ও সজ্জন
২৯. ৩.০৩ পঞ্চপ্রীতি
৩০. ৩.০৪ ধর্ম, যুক্তিবাদ ও স্বাধীন সমাজ
৩১. ৩.০৫ সনাতন ও আধুনিক
৩২. ৩.০৬ সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রসঙ্গে
৩৩. ৩.০৭ পল্লী ও নগর
৩৪. ৩.০৮ প্রেম ও নিয়ম
৩৫. ৩.০৯ তিন দিগন্ত
৩৬. ৩.১০ যুক্তি ও প্রতিষ্ঠান
৩৭. ৩.১১ আচার বিচার আনন্দ
৩৮. ৩.১২ দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ মঙ্গলবোধ
৩৯. ৩.১৩ সমাজ সংগঠনের পথের সন্ধানে
৪০. ৩.১৪ বাংলার সংকট ও কলকাতা
৪১. ৩.১৫ বাংলার নবজাগরণ ও আজকের সংকট
৪২. ৩.১৬ উনিশশতকী বাংলা নবজাগরণের গৌরব ও অপূর্ণতা
৪৩. ৩.১৭ নারী মুক্তি
৪৪. ৩.১৮ দ্বন্দ্ব
৪৫. ৩.১৯ দ্বন্দ্বের রূপভেদ
৪৬. ৩.২০ মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ
৪৭. ৩.২১ ইতিহাস চিন্তা
৪৮. ৩.২২ ইতিহাস ও দর্শন
৪৯. ৩.২৩ দুর্নীতি
৫০. ৪.১ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার সমস্যা
৫১. ৪.২ শিক্ষা ও ভাষা সমস্যা
৫২. ৪.৩ রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ
৫৩. ৪.৪ শিক্ষার সমস্যা – ১
৫৪. ৪.৫ শিক্ষার সমস্যা – ২
৫৫. ৪.৬ শান্তিনিকেতন ও শিক্ষার দ্বন্দ্ব
৫৬. ৫.০১ মার্ক্সের মূল্যায়ন
৫৭. ৫.০২ গান্ধীবাদ কি অচল?
৫৮. ৫.০৩ গান্ধী ও মাও
৫৯. ৫.০৪ গান্ধী ও সংসদীয় গণতন্ত্র
৬০. ৫.০৫ গান্ধী ও ঈশ্বর
৬১. ৫.০৬ গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ
৬২. ৫.০৭ রবীন্দ্রনাথ ও যুক্তিবাদ
৬৩. ৫.০৮ আনন্দের সন্ধানে রাসেল
৬৪. ৫.০৯ রামমোহন রায়
৬৫. ৫.১০ মানবেন্দ্রনাথের চিন্তাধারা প্রসঙ্গে
৬৬. ৫.১১ মানবেন্দ্রনাথ রায় জাতীয়তাবাদ থেকে মার্ক্সবাদ
৬৭. ৫.১২ মানবেন্দ্রনাথ ও নবমানবতাবাদ
৬৮. ৫.১৩ বিনয় কুমার সরকার : দ্বন্দ্ব ও “শক্তিযোগ”
৬৯. ৫.১৪ ভীমরাও রামজী আম্বেডকর
৭০. ৬.১ কানুদা
৭১. ৬.২ অরুণকুমার সরকার
৭২. ৬.৩ এযুগের বুদ্ধদেব
৭৩. ৭.১ মানুষ! মানুষ!!
৭৪. ৭.২ ধর্ম
৭৫. ৭.৩ ধর্ম ও যুক্তি
৭৬. ৭.৪ শিল্পচিন্তা
৭৭. ৭.৫ উত্তরণের শর্ত
৭৮. ৭.৬ প্রেম ও পূজা
৭৯. ৭.৭ হে মহাজীবন! হে মহামরণ!
৮০. ৮.০১ তৃতীয় চরণ (কমলা বক্তৃতা)
৮১. ৮.০২ বর্তমান সংকটে কর্তব্য
৮২. ৮.০৩ বাংলার সংকট ও সমাধানের পথ
৮৩. ৮.০৪ শান্তিনিকেতন : উপাসনা ও ভাষণ
৮৪. ৮.০৫ মূল বইগুলির ভূমিকা ও পরিশিষ্ট
৮৫. ৮.০৬ ভারতে ও চীনে খাদ্যোৎপাদন
৮৬. ৮.০৭ “সাম্যবাদ ও প্রগতির পথ”
৮৭. ৮.০৮ “মার্ক্সের মূল্যায়ন”
৮৮. ৮.০৯ “গান্ধীবাদ কি অচল?”
৮৯. ৮.১০ “মানুষ! মানুষ!!”

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন