৩.১৪ বাংলার সংকট ও কলকাতা

অম্লান দত্ত

৩.১৪ বাংলার সংকট ও কলকাতা

নগর কলকাতা ও পল্লী বাংলার ভিতর অসামঞ্জস্য আমাদের সংকটের প্রধান কারণ। নাগরিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে গ্রাম্যতার যোগে আমরা এক উদ্ভট সংস্কৃতি ও রাজনীতির অধিকারী হয়েছি। এর পরিবর্তন ছাড়া বাংলার সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

কলকাতাকে আমরা ভালবাসি। কলকাতা আমাদের গর্বের বস্তু। আজ যে-চিন্তার উদয় বাংলায় কাল তারই প্রকাশ ভারতে, এই বহু উদ্ধৃত পুরাতন বাক্যটি যতবার শুনেছি ততবারই মনে মনে জেনেছি যে, বাংলা বলতে এখানে কলকাতা মহানগরীকেই স্মরণ করা। হয়েছে। যে-নবজাগরণ ভারতের উনিশ শতকের ইতিহাসে বাঙ্গালীকে বৈশিষ্ট্য দান করেছে, এই কলকাতায় তার উদ্ভব ও উন্মেষ।

অথচ এই কলকাতাই আবার বাংলাদেশের সামাজিক ও আর্থিকভারসাম্য বিপর্যস্ত করে আমাদের ভয়ংকর একটা সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলার সুদূর প্রান্ত থেকে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর উপাসকের দল কলকাতার ভিড় করেছেন। কলকাতার জ্ঞান ও সম্পদ কিন্তু বাংলার দিকে দিকে অজস্র চরিতার্থতায় ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে মহানগরী ও অবশিষ্ট বাংলার ভিতর অতি দ্রুত একটি বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে।

এই বিচ্ছিন্নতা রবীন্দ্রনাথকে ব্যথিত ও শঙ্কিত করেছিল। তাই মহানগরী ত্যাগ করে তিনি বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা করলেন পল্লীবাংলার প্রান্তরে, গ্রামোন্নয়নের জন্য কেন্দ্র স্থাপন করলেন শ্রীনিকেতনে।

এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই যে, তাঁর বিরাট প্রতিভা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় তিনি সেই একক প্রচেষ্টায় ঘোরাতে পারেননি। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, কলকাতা ও গ্রামবাংলার ভিতর বিচ্ছেদ উভয়ের পক্ষেই অতি বড় দুভাগ্যের কারণ হয়েছে। আমরা সবাই এই খণ্ডিত সংস্কৃতির সন্তান।

শহর ও গ্রামের ভিতর কিছুটা অসামঞ্জস্য অনিবার্য; কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটা মাত্রা অতিক্রম করে গেছে। কথাটা আরও একটু ব্যাখ্যা করেই বলি। পাশ্চাত্ত্য অর্থশাস্ত্রের একজন আদি গুরু ছিলেন অ্যাডাম স্মিথ। স্মিথ সাহেবের বিখ্যাত গ্রন্থে একটি অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় হলো, নগর কি করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়ক হয়ে থাকে সেই কথা। পণ্ডিত লেখকের নিজ দেশ স্কটল্যাণ্ড। ইংল্যাণ্ডের আর্থিক ইতিহাসের সঙ্গে তিনি স্বভাবতই সুপরিচিত ছিলেন। ওদেশে বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষির ভিতর পারস্পরিক সহায়তার সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য। স্মিথ সাহেবের গ্রন্থটি যখন প্রকাশিত হয় তার কিছুকাল আগেই স্কটল্যাণ্ডের অপেক্ষাকৃত জনবহুল নিম্নাঞ্চলে শুধু বাণিজ্যেরই নয়, কৃষিরও দ্রুত। উন্নতি শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে একজন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক লিখেছেন ১৭৬০ থেকে ১৮২০, এই সময়টাতে ইংল্যাণ্ডে কৃষির উন্নতি ছিল দ্রুত; কিন্তু স্কটল্যাণ্ডে দ্রুততর। গ্লাসগোর তামাক আর জাহাজের ব্যবসায়ীরা এবং ভারত থেকে প্রত্যাগত কিছু উদ্যোগী স্কুট জমি কিনে উন্নয়নের কাজে অগ্রণী হয়েছিলেন।

এই উদ্ধৃতিটি এখানে টেনে আনবার একটা বিশেষ কারণ আছে। বৈপরীত্যের উদাহরণ তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশেও প্রায় ঐ সময়টাতেই, অথবা সামান্য পরে, রামমোহন, দুরকানাথ ঠাকুর প্রমুখ নেতাদের আমরা পাই। সেদিন কলকাতায় নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। নববঙ্গের নেতারা অনেকেই প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু বাংলার নানা অংশ থেকে রাজধানীতে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা যেন বাকি দেশের সঙ্গে নাড়ীর যোগ ছিন্ন করেই এখানে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। নগর ও পল্লী, বাণিজ্য ও কৃষির ভিতর পারস্পরিক সহায়তার অভাবে বাংলাদেশে সামাজিক ও আর্থিক ভারসাম্য ভেঙ্গে গোল।

এটা বাংলার দুভাগ্য আবার এটাই কলকাতারও সংকটের কারণ। পিছিয়ে-পড়া জেলাগুলিতে কর্ম ও শিক্ষার অভাবে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে কলকাতা নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেনি। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্লিষ্ট ভাগ্যান্বেষীর দল কলকাতায় উপস্থিত হয়েছেন। ক্রমে মহানগরীর সঙ্গতি অতিক্রম করেই ভিড় বেড়েছে। এমনই ভাবে শহর ও দেহাত একই দুষ্ট চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। কলকাতা যেমন বাংলাকে। উপেক্ষা করেছে, বাংলার দুর্দশাও তেমনই মহানগরীকে এক দুরারোগ্য ব্যাধির দিকে ক্রমশ ঠেলে দিয়েছে। দেশ বিভাগের পর অগণিত উদ্বাস্তুর জন্য গ্রামবাংলা অথবা মহানগরী, কোথাও আর সুস্থ স্থান সংকুলান হয়নি।

কোনো জাতির জীবনে আর্থিক ব্যাধি দুরারোগ্য হয় না, যদি তার সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সাংস্কৃতিক ব্যাধি ও অন্যান্য জটিলতা। আমরা গ্রাম বর্জন করেছি, নাগরিক বোধ অর্জন করিনি।

আমাদের অভ্যাস ও সংস্কৃতিতে কয়েকটি বড় দোষ আছে। আমরা কিছুতেই নিজে দায়িত্ব নিতে চাই না। যদি কোনো বস্তুর অভাব ঘটে তবে কারও শরণাপন্ন হয়ে সেটা লাভ করা যায় কিনা সেটাই প্রথমে আমাদের চিন্তার বিষয় হয়। কারণ আমরা অত্যন্ত চালাক অন্যের কৃপায় যা লাভ করা যায়, নিজের চেষ্টায় তা অর্জন করা আমাদের মূর্খত বোধ হয়। যদি কোনো দায়িত্ব আমাদের ওপর এসে পড়ে তবে কী উপায়ে সেটা অন্য। কারও ওপর চালনা করা সম্ভব, আমাদের ভাবনা স্বভাবতই সেদিকে যেতে চায়। এদেশে যাঁরা ক্ষমতালি, তাঁরাই সাধারণত নিজ দায়িত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন; আর সবাই দায়িত্ব এড়াতে ব্যস্ত।

দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে আরও একটি কথা স্পষ্ট। এদেশে যুক্তি অথবা অধিকারবোধের ভিত্তিতে কিছু লাভ করা কঠিন। যদি কিছু পেতে হয় তো অপর ব্যক্তিকে ‘দাদা’ সম্বোধন করে অনুনয়ের ভাষায় কথা বলা ভালো। নয় তত ভয় দেখালে কাজ হয়। আমরা দয়া করি অথবা গোলমাল এড়াবার জন্য অপরপক্ষের দাবি মেনে নিই; কিন্তু ব্যক্তির অধিকার বলে কিছু আমরা সচরাষর স্বীকার করি না। এর ফল অনেক সময় যেমন শোচনীয় তেমনই হাস্যকর। যে-দাবিতে আমরা পূর্ব মুহূর্ত অবধি কোনো যুক্তি লক্ষ করিনি, হঠাৎ যখন তার সমর্থনে পেশীবলের সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখন আমাদের ভিতর কপট ঔদার্যের উদ্রেক হয় এবং সেই দাবি মেনে নিতে আর কোনো আপত্তি থাকে। না। যাঁরা যুক্তি, নিয়ম ইত্যাদির ভিত্তিতে আলোচনা দাবি করেন তাঁদের সেই উৎপাত কিন্তু আমাদের বড়ই অসহ্য বোধ হয়।

অর্থাৎ, একদিকে আমরা দায়িত্ব গ্রহণে অনভ্যস্ত, অপরদিকে আমাদের যুক্তিসঙ্গত অধিকারও অস্বীকৃত। মহানগরী আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সীমানাকে বিস্তৃত করেছে; অথচ নাগরিক সভ্যতার গুণ আমাদের জীবনে প্রবেশ করেনি। এটাই হয়ে উঠেছে। আমাদের সামাজিক সংকটের মূল কারণ। সাধ যখন সাধ্যকে অতিক্রম করে যায়, তখন পরিণামে অক্ষম ক্রোধ অনিবার্য। আমরা যেমন ব্যক্তিবিশেষের কাছে ছোট ছোট চাওয়া ও পাওয়ার জন্য কখনও হাত জোড় করি, আবার কখনও করি আস্ফালন, তেমনই বৃহত্তর সমস্যার সমাধানে এই মুহূর্তে ঠাকুর অথবা নিয়তির শরণাপন্ন হই, আবার পরমুহুতে সমাজকে হিংসার আঘাতে ভাঙতে চাই। এই অস্থিরতাকে আমরা যতই বৈপ্লবিক আখ্যা। দিই না কেন, আমাদের একটি প্রাচীন মানসিকতার সঙ্গেই এর নাড়ীর যোগ। যে-ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত এবং আত্মনির্ভর হয়নি, মায়ের প্রতি তার আবদার ও আক্ষেপে আমাদের আচরণের উপমা মেলে। বাংলাদেশে আন্দোলনকে যতদিন না আমরা গঠনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত করছি, ততদিন এই আক্ষেপ-বিক্ষোভের রাজনীতি কাটবে না।

সমাজ ও সংস্কৃতির কথা বলতে গিয়ে শিক্ষা-ব্যবস্থার উল্লেখ করতে হয়। যে-আত্মনির্ভরতার অভাব আমাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, এখানেও আছে তারই প্রতিফলন। আমাদের শিক্ষা স্বাধীন চিন্তাশক্তিকে জাগ্রত করে না সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে শেখায় না। আমাদের যেন ধারণা এই যে, কিছু বাঁধাধরা বাক্য অভ্যস্ত ভুলসহ মোটামুটি মুখস্থ করার যে-শক্তি, তারই নাম বিদ্যা। এই বিদ্যায় আমরা আজ আর আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি না, আবার একে অতিক্রম করে কোনো নতুন প্রত্যয়েও আমরা পৌঁছতে পারিনি। বলা বাহুল্য, এই বিদ্যার সঙ্গে সামাজিক প্রয়োজনের যোগ যৎসামান্য।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ আজও নিরক্ষর। এই নিরক্ষরতা দূর করবার জন্য ছাত্র এবং শিক্ষিত সমাজে কোনো প্রবল প্রচেষ্টা নেই। অথচ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়াবার জন্য আন্দোলন শক্তিশালী। একদিকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর কোনো মূল্য নেই এমন একটা ধিক্কার ছাত্রদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে; অন্যদিকে সকল প্রকার অসদুপায়ে এই ডিগ্রীলাভের জন্য আপ্রাণ চেষ্টাও চলেছে।

শিক্ষার প্রসারে আমরা ভুল নীতি অনুসরণ করছি। প্রাথমিক শিক্ষাকে সারা দেশে যথাসম্ভব শীঘ্র ছড়িয়ে দেবার প্রতি আমাদের প্রধান লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষিত বেকারের সমস্যা কিছুটা লাঘব না হওয়া পর্যন্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো নিরর্থক; তাতে ছাত্র ও বৃহত্তর সমাজ কারোরই কোনো লাভ হবে না। শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চাই, এ কথাটা আজ সবাই বলছেন; কিন্তু কার্যত অনেকে কোনো পরিবর্তনেই সম্মত নন। জ্ঞানচচায় শ্রবণ ও স্মৃতির তুলনায় আলোচনাকে প্রাধান্য। দেওয়া এবং বৎসরান্তে একটি বড় পরীক্ষার বদলে সারা বছর ধরে ছোট ছোট পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। পরীক্ষার নামে আজ যে প্রহসন চলেছে তার সমাপ্তি ঘটাবার এই একমাত্র পথ। এরই সাথে চাই নানা প্রকার প্রযুক্তি বিদ্যা ও ব্যবহারিক শিক্ষার দ্রুত প্রসার।

এ সবকিছুই ব্যর্থ হবে যদি না বাংলার অর্থনীতিকে আমরা সেই সঙ্গে ঢেলে সাজাতে পারি।

এজন্য প্রথম প্রয়োজন পশ্চিম বাংলার ওপর কলকাতার একাধিপত্যের অবসান। বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র দেশময় এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে যে, কৃষির সঙ্গে শিল্পবাণিজ্যের যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কথা আগে বলেছি, সেটা বেড়ে ওঠে। এই নতুন শিল্পকেন্দ্রগুলি ভেবেচিন্তে স্থাপন করতে হবে সেইসব স্থানে, যেখানে আছে একাধিক বড় রাস্তা অথবা রেলপথের সংযোগস্থল। স্থানীয় কাঁচামাল ও কৃষিজাত দ্রব্য সংগ্রহ ও কেনাবেচার সুবিধা, বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবস্থা ইত্যাদি যেখানে নেই, সেখানে প্রয়োজন মতো নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে হবে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে রাজ্যব্যাপী পরিকল্পনার ব্যবস্থা চাই।

ভারতের কোনো কোনো অংশে ইতিমধ্যে কৃষির দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার উন্নয়ন এশিয়ার কোনো দেশের তুলনায়ই নগণ্য নয়। পশ্চিমবঙ্গেও পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কি করে ফসল বাড়ানো যায় এটাই আগামী কয়েক বছরে আমাদের কৃষিচিন্তার প্রধান কথা হওয়া উচত। যদি বলি যে, গ্রামে গ্রামে চাই নলকূপ ও বৈদ্যুতিক শক্তি, স্কুল, সমবায় সমিতি ও বিজ্ঞান আলোচনার কেন্দ্র, তবে কেউ হয়তো বলবেন যে এ সবই কল্পনা। অথচ এই কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব, তার ইঙ্গিত এ দেশেই আছে, এই মুহূর্তেই।

এটা সবাঙ্গীণ পরিকল্পনার রূপরেখা নয়; কোন্ পথে চলতে হবে তার দিগনির্দেশের চেষ্টা মাত্র। বাংলার রাজনীতি কি আমাদের এ পথে এগোতে দেবে? দলীয় রাজনীতির চেয়ে দেশ যদি আমাদের কাছে প্রিয়তর হয় তো চলবার শ্রেয় পথ তৈরী করে নেওয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এই পরিবর্তন রাজনীতিক দলগুলির ভিতর প্রথমে আশা করা যায় না; বরং দলের বাইরে থেকে যাঁরা দেশ গড়ার কাজে আগ্রহী অথবা দলের ভিতর থেকেও যাঁরা নিজের চিন্তাকে দলীয়ার উর্ধ্বে তুলতে সক্ষম তাঁদের ভিতরই নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর উজ্জ্বল প্রকাশ আগে সম্ভব।

আমাদের অভ্যস্ত রাজনীতিতে ‘বামপন্থী’ ‘দক্ষিণপন্থী’ এই দুটি শব্দের অর্থহীন প্রয়োগ লক্ষ করস যায়। আপনি ‘বিপ্লবে’ বিশ্বাসী, তবে আপনি বামপন্থী। সেই সঙ্গে আপনি, হয়তো কালীর কাছে মানত করতে অভ্যস্ত, বাড়ির হিন্দু মেয়ে মুসলমানকে বিয়ে করলে আপনার ক্রোধের সীমা থাকে না, পরিবার পরিকল্পনার আপনি প্রচণ্ড বিরোধী, অর্থাৎ সাংস্কৃতিক অর্থে আপনি রক্ষণশীল; কিন্তু তাতে আপনার বামপন্থী পরিচয় ম্লান হবে না। অপর পক্ষে, আপনি সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থেকে যতই মুক্ত থাকুন না কেন, যুক্তিবাদে আপনার বিশ্বাস যতই সুস্পষ্ট হোক না কেন, আপনি যদি না হিংসার রাজনীতিকে হাততালি দিতে রাজী থাকেন, তবে আপনি দক্ষিণপন্থী। আমাদের রাজনীতিতে যদি শব্দার্থের এই বিকার ঘটে থাকে তবে আর্থিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনের কাজে এই অভ্যস্ত ধ্বনিগুলি বিভ্রান্তিকর মাত্র। এইসব ধ্বনিগত বিড়ম্বনার উর্ধ্বে উঠেই আমাদের দেশের জন্য নতুন পথ বেছে নিতে হবে। বাংলার নবজাগরণের এমন একটা সদর্থ আমাদের খুঁজে নিতে হবে যেটা আজকের রাজনীতির ব্যর্থ কোলাহলকে অতিক্রম করে যায়। পল্লী ও নগর (১৯৭৩)

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ গণতন্ত্রের আধ্যাত্মিক ভিত্তি
২. ১.০২ সত্যাসত্য
৩. ১.০৩ গণযুগ ও গণতন্ত্র
৪. ১.০৪ শ্রমিক ও গণতন্ত্র
৫. ১.০৫ সাধারণ নির্বাচন ও গণতন্ত্র
৬. ১.০৬ আটষট্টির সন্ধিক্ষণে
৭. ১.০৭ গণতন্ত্র ও সমাজবিবর্তন
৮. ১.০৮ ব্যক্তি ও গণসমাজ
৯. ১.০৯ সাম্যবাদ ও প্রগতির পথ
১০. ১.১০ জাতীয় সংহতি
১১. ১.১১ জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে
১২. ১.১২ মাতৃভাষা, ইংরেজী ও হিন্দী
১৩. ১.১৩ এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে
১৪. ১.১৪ সীমান্ত চিন্তা
১৫. ১.১৫ বাংলাদেশ দেখে এলাম
১৬. ১.১৬ গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের সংকট
১৭. ১.১৭ চীনের ছাত্র আন্দোলন
১৮. ১.১৮ পূর্ব ইউরোপ মার্ক্সবাদ সাম্যবাদ
১৯. ১.১৯ ঐক্য ও শান্তি
২০. ১.২০ ঐক্য নিয়ে আরো কিছু চিন্তাভাবনা
২১. ২.১ খাদ্য ও কৃষি সমস্যা
২২. ২.২ আমরা দেশ গড়বো কবে?
২৩. ২.৩ শ্লোগান বনাম সত্য
২৪. ২.৪ আর্থিক উন্নতির শর্ত
২৫. ২.৫ কর্মসংস্থান ও আর্থিক পুনর্গঠন
২৬. ২.৬ উন্নয়নের তত্ত্ব ও ভবিষ্যৎ
২৭. ৩.০১ বিজ্ঞান ও প্রগতির পথ
২৮. ৩.০২ স্বজন ও সজ্জন
২৯. ৩.০৩ পঞ্চপ্রীতি
৩০. ৩.০৪ ধর্ম, যুক্তিবাদ ও স্বাধীন সমাজ
৩১. ৩.০৫ সনাতন ও আধুনিক
৩২. ৩.০৬ সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রসঙ্গে
৩৩. ৩.০৭ পল্লী ও নগর
৩৪. ৩.০৮ প্রেম ও নিয়ম
৩৫. ৩.০৯ তিন দিগন্ত
৩৬. ৩.১০ যুক্তি ও প্রতিষ্ঠান
৩৭. ৩.১১ আচার বিচার আনন্দ
৩৮. ৩.১২ দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ মঙ্গলবোধ
৩৯. ৩.১৩ সমাজ সংগঠনের পথের সন্ধানে
৪০. ৩.১৪ বাংলার সংকট ও কলকাতা
৪১. ৩.১৫ বাংলার নবজাগরণ ও আজকের সংকট
৪২. ৩.১৬ উনিশশতকী বাংলা নবজাগরণের গৌরব ও অপূর্ণতা
৪৩. ৩.১৭ নারী মুক্তি
৪৪. ৩.১৮ দ্বন্দ্ব
৪৫. ৩.১৯ দ্বন্দ্বের রূপভেদ
৪৬. ৩.২০ মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ
৪৭. ৩.২১ ইতিহাস চিন্তা
৪৮. ৩.২২ ইতিহাস ও দর্শন
৪৯. ৩.২৩ দুর্নীতি
৫০. ৪.১ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার সমস্যা
৫১. ৪.২ শিক্ষা ও ভাষা সমস্যা
৫২. ৪.৩ রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ
৫৩. ৪.৪ শিক্ষার সমস্যা – ১
৫৪. ৪.৫ শিক্ষার সমস্যা – ২
৫৫. ৪.৬ শান্তিনিকেতন ও শিক্ষার দ্বন্দ্ব
৫৬. ৫.০১ মার্ক্সের মূল্যায়ন
৫৭. ৫.০২ গান্ধীবাদ কি অচল?
৫৮. ৫.০৩ গান্ধী ও মাও
৫৯. ৫.০৪ গান্ধী ও সংসদীয় গণতন্ত্র
৬০. ৫.০৫ গান্ধী ও ঈশ্বর
৬১. ৫.০৬ গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ
৬২. ৫.০৭ রবীন্দ্রনাথ ও যুক্তিবাদ
৬৩. ৫.০৮ আনন্দের সন্ধানে রাসেল
৬৪. ৫.০৯ রামমোহন রায়
৬৫. ৫.১০ মানবেন্দ্রনাথের চিন্তাধারা প্রসঙ্গে
৬৬. ৫.১১ মানবেন্দ্রনাথ রায় জাতীয়তাবাদ থেকে মার্ক্সবাদ
৬৭. ৫.১২ মানবেন্দ্রনাথ ও নবমানবতাবাদ
৬৮. ৫.১৩ বিনয় কুমার সরকার : দ্বন্দ্ব ও “শক্তিযোগ”
৬৯. ৫.১৪ ভীমরাও রামজী আম্বেডকর
৭০. ৬.১ কানুদা
৭১. ৬.২ অরুণকুমার সরকার
৭২. ৬.৩ এযুগের বুদ্ধদেব
৭৩. ৭.১ মানুষ! মানুষ!!
৭৪. ৭.২ ধর্ম
৭৫. ৭.৩ ধর্ম ও যুক্তি
৭৬. ৭.৪ শিল্পচিন্তা
৭৭. ৭.৫ উত্তরণের শর্ত
৭৮. ৭.৬ প্রেম ও পূজা
৭৯. ৭.৭ হে মহাজীবন! হে মহামরণ!
৮০. ৮.০১ তৃতীয় চরণ (কমলা বক্তৃতা)
৮১. ৮.০২ বর্তমান সংকটে কর্তব্য
৮২. ৮.০৩ বাংলার সংকট ও সমাধানের পথ
৮৩. ৮.০৪ শান্তিনিকেতন : উপাসনা ও ভাষণ
৮৪. ৮.০৫ মূল বইগুলির ভূমিকা ও পরিশিষ্ট
৮৫. ৮.০৬ ভারতে ও চীনে খাদ্যোৎপাদন
৮৬. ৮.০৭ “সাম্যবাদ ও প্রগতির পথ”
৮৭. ৮.০৮ “মার্ক্সের মূল্যায়ন”
৮৮. ৮.০৯ “গান্ধীবাদ কি অচল?”
৮৯. ৮.১০ “মানুষ! মানুষ!!”

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন