৮.০৮ “মার্ক্সের মূল্যায়ন”

অম্লান দত্ত

৮.৮ “মার্ক্সের মূল্যায়ন”

পরিশিষ্ট

মানবসমাজের ইতিহাস মার্ক্সের দৃষ্টিতে মূলতঃ শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস। ধনিকশ্রেণীকে উৎখাত করে শ্রমিকশ্রেণী ইতিহাসের এই দীর্ঘ ও তিক্ত অধ্যায়টির অবসান ঘটাবে ও আদর্শ সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত করবে, এই ছিল মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণী। উনিশ শতকের গোড়ার বহু “স্বপ্নবিলাসী” সাম্যবাদীকে মার্ক্স ব্যঙ্গ করেছিলেন এই বলে যে, তাঁরা শুধু স্বপ্নই দেখেছেন, আদর্শ সমাজে পৌঁছবার পথ দেখাতে পারেননি। তিনি নিজে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সাহায্যে পথের সন্ধান দিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ ঘটালেই আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় ও মানুষ তার বাঞ্ছিত মুক্তি লাভ করে এ ধারণা “বৈজ্ঞানিক নয়। স্বপ্নও নিদোষ হয় যদি তাকে স্বপ্ন বলে জানা যায়। যে-কোনো উপায়ে সাম্যবাদী দলের নামে রাষ্ট্রযন্ত্র করায়ত্ত করে মূলধনে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটাতে পারলেই আমরা ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব মহৎ অধ্যায়ে পৌঁছব, এই অবৈজ্ঞানিক আশা বিপজ্জনক হতে পারে। এই আশায় বিশ্বাস স্থাপনের পর এত চমকপ্রদ একটা ফলোভের জন্য কোনো মিথ্যাচার অথবা হীন উপায়কেই মিথ্যা অথবা হীন বলে পরিত্যজ্য মনে হয় না। যে-অপরাধকে আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হই, একটি কল্পিত ঐতিহাসিক কীর্তির প্রলোভনে তাকেও আর অপরাধ বলে মনে করি না। আদর্শের নামে একটা নীতিবর্জিত সংগ্রাম বরণীয় মনে হয়।

অথচ মানুষের উৎপাদিকা শক্তির বৃদ্ধিই যদি প্রগতির ভিত্তি হয় তো ইতিহাসকেও মূলতঃ শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস বলে না-জেনে উৎপাদিকা শক্তির ক্রমবিকাশের ইতিহাস রূপে জানাই ভালো। মার্ক্সবাদীর দৃষ্টিতে এই দুই বস্তু এক হয়ে গেছে; কিন্তু এটা দৃষ্টির বিভ্রম। শ্রেণীসংগ্রাম ইতিহাসের অন্যতম উপাদান মাত্র। গত দু’শ বৎসরের ইতিহাসে ইংল্যাণ্ড অথবা সুইডেনের তুলনায় ফরাসী দেশে শ্রেণীসংগ্রাম তীব্র। কিন্তু শ্রেণীসংগ্রাম তীব্র হলেই দেশের অগ্রগতি দ্রুত হয় না। সমাজ ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির মূল নির্ধারক

শিক্ষা ও সংগঠন, শ্রমে নিষ্ঠা ও বিজ্ঞানে ক্রমোন্নতি, এবং স্বাধীনতার প্রসারের জন্য ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এযুগে কোনো সমাজের পক্ষেই প্রগতি সম্ভব নয়। এইসব গুণের নামে হয়তো আমাদের চিত্ত চমৎকৃত হয় না, কারণ এতে সহসা চাঞ্চল্যকর ফলোভের প্রতিশ্রুতি নেই। কিন্তু প্রগতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যাদুতেও নয়, চালাকিতেও নয়, নীতিহীন শ্রেণীসংগ্রামেও নয়।

প্রগতির পথ (প্রথম প্রকাশ, ১৯৬৮)

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ গণতন্ত্রের আধ্যাত্মিক ভিত্তি
২. ১.০২ সত্যাসত্য
৩. ১.০৩ গণযুগ ও গণতন্ত্র
৪. ১.০৪ শ্রমিক ও গণতন্ত্র
৫. ১.০৫ সাধারণ নির্বাচন ও গণতন্ত্র
৬. ১.০৬ আটষট্টির সন্ধিক্ষণে
৭. ১.০৭ গণতন্ত্র ও সমাজবিবর্তন
৮. ১.০৮ ব্যক্তি ও গণসমাজ
৯. ১.০৯ সাম্যবাদ ও প্রগতির পথ
১০. ১.১০ জাতীয় সংহতি
১১. ১.১১ জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে
১২. ১.১২ মাতৃভাষা, ইংরেজী ও হিন্দী
১৩. ১.১৩ এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে
১৪. ১.১৪ সীমান্ত চিন্তা
১৫. ১.১৫ বাংলাদেশ দেখে এলাম
১৬. ১.১৬ গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের সংকট
১৭. ১.১৭ চীনের ছাত্র আন্দোলন
১৮. ১.১৮ পূর্ব ইউরোপ মার্ক্সবাদ সাম্যবাদ
১৯. ১.১৯ ঐক্য ও শান্তি
২০. ১.২০ ঐক্য নিয়ে আরো কিছু চিন্তাভাবনা
২১. ২.১ খাদ্য ও কৃষি সমস্যা
২২. ২.২ আমরা দেশ গড়বো কবে?
২৩. ২.৩ শ্লোগান বনাম সত্য
২৪. ২.৪ আর্থিক উন্নতির শর্ত
২৫. ২.৫ কর্মসংস্থান ও আর্থিক পুনর্গঠন
২৬. ২.৬ উন্নয়নের তত্ত্ব ও ভবিষ্যৎ
২৭. ৩.০১ বিজ্ঞান ও প্রগতির পথ
২৮. ৩.০২ স্বজন ও সজ্জন
২৯. ৩.০৩ পঞ্চপ্রীতি
৩০. ৩.০৪ ধর্ম, যুক্তিবাদ ও স্বাধীন সমাজ
৩১. ৩.০৫ সনাতন ও আধুনিক
৩২. ৩.০৬ সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রসঙ্গে
৩৩. ৩.০৭ পল্লী ও নগর
৩৪. ৩.০৮ প্রেম ও নিয়ম
৩৫. ৩.০৯ তিন দিগন্ত
৩৬. ৩.১০ যুক্তি ও প্রতিষ্ঠান
৩৭. ৩.১১ আচার বিচার আনন্দ
৩৮. ৩.১২ দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ মঙ্গলবোধ
৩৯. ৩.১৩ সমাজ সংগঠনের পথের সন্ধানে
৪০. ৩.১৪ বাংলার সংকট ও কলকাতা
৪১. ৩.১৫ বাংলার নবজাগরণ ও আজকের সংকট
৪২. ৩.১৬ উনিশশতকী বাংলা নবজাগরণের গৌরব ও অপূর্ণতা
৪৩. ৩.১৭ নারী মুক্তি
৪৪. ৩.১৮ দ্বন্দ্ব
৪৫. ৩.১৯ দ্বন্দ্বের রূপভেদ
৪৬. ৩.২০ মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ
৪৭. ৩.২১ ইতিহাস চিন্তা
৪৮. ৩.২২ ইতিহাস ও দর্শন
৪৯. ৩.২৩ দুর্নীতি
৫০. ৪.১ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার সমস্যা
৫১. ৪.২ শিক্ষা ও ভাষা সমস্যা
৫২. ৪.৩ রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ
৫৩. ৪.৪ শিক্ষার সমস্যা – ১
৫৪. ৪.৫ শিক্ষার সমস্যা – ২
৫৫. ৪.৬ শান্তিনিকেতন ও শিক্ষার দ্বন্দ্ব
৫৬. ৫.০১ মার্ক্সের মূল্যায়ন
৫৭. ৫.০২ গান্ধীবাদ কি অচল?
৫৮. ৫.০৩ গান্ধী ও মাও
৫৯. ৫.০৪ গান্ধী ও সংসদীয় গণতন্ত্র
৬০. ৫.০৫ গান্ধী ও ঈশ্বর
৬১. ৫.০৬ গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ
৬২. ৫.০৭ রবীন্দ্রনাথ ও যুক্তিবাদ
৬৩. ৫.০৮ আনন্দের সন্ধানে রাসেল
৬৪. ৫.০৯ রামমোহন রায়
৬৫. ৫.১০ মানবেন্দ্রনাথের চিন্তাধারা প্রসঙ্গে
৬৬. ৫.১১ মানবেন্দ্রনাথ রায় জাতীয়তাবাদ থেকে মার্ক্সবাদ
৬৭. ৫.১২ মানবেন্দ্রনাথ ও নবমানবতাবাদ
৬৮. ৫.১৩ বিনয় কুমার সরকার : দ্বন্দ্ব ও “শক্তিযোগ”
৬৯. ৫.১৪ ভীমরাও রামজী আম্বেডকর
৭০. ৬.১ কানুদা
৭১. ৬.২ অরুণকুমার সরকার
৭২. ৬.৩ এযুগের বুদ্ধদেব
৭৩. ৭.১ মানুষ! মানুষ!!
৭৪. ৭.২ ধর্ম
৭৫. ৭.৩ ধর্ম ও যুক্তি
৭৬. ৭.৪ শিল্পচিন্তা
৭৭. ৭.৫ উত্তরণের শর্ত
৭৮. ৭.৬ প্রেম ও পূজা
৭৯. ৭.৭ হে মহাজীবন! হে মহামরণ!
৮০. ৮.০১ তৃতীয় চরণ (কমলা বক্তৃতা)
৮১. ৮.০২ বর্তমান সংকটে কর্তব্য
৮২. ৮.০৩ বাংলার সংকট ও সমাধানের পথ
৮৩. ৮.০৪ শান্তিনিকেতন : উপাসনা ও ভাষণ
৮৪. ৮.০৫ মূল বইগুলির ভূমিকা ও পরিশিষ্ট
৮৫. ৮.০৬ ভারতে ও চীনে খাদ্যোৎপাদন
৮৬. ৮.০৭ “সাম্যবাদ ও প্রগতির পথ”
৮৭. ৮.০৮ “মার্ক্সের মূল্যায়ন”
৮৮. ৮.০৯ “গান্ধীবাদ কি অচল?”
৮৯. ৮.১০ “মানুষ! মানুষ!!”

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন