সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত এ হাদীসে ইতিপূর্বেও আলোচিত হয়েছে যে, “আল্লাহ বলেনঃ (হাদীসে কুদসী) “যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুসুলভ আচরণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছি। রাসূল (সা) বলেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিওনা। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ করে বলছি, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড়ের সমান স্বর্ণ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তবুও সে কোন সাহাবীর সমান বা অর্ধেক মর্যাদার অধিকারী হতে পারবেনা। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
রাসূল (সা) আরো বলেছেন : আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার তিরোধানের পর তাদেরকে গালি দেয়ার লক্ষ্য বানিওনা। তাদেরকে যে ভালোবাসবে, সে আমার ভালো বাসায় উদ্বুদ্ধ হয়েই ভালোবাসবে। আর যে তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ বশতঃই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। তাদেরকে যে কষ্ট দেবে, সে আমাকে কষ্ট দেবে। আর আমাকে যে কষ্ট দেবে, সে আল্লাহকে কষ্ট দেবে। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে, তাকে তিনি অচিরে পাকড়াও করবেন।” (জামে তিরমিযী)
সাহাবায়ে কেরামের গুরুত্ব ও মর্যাদার মূল কারণ এই যে, তারা রাসূল (সা) এর কাছে সরাসরি ঈমান এনেছেন, তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন, আর তার সাথে জিহাদ এবং দীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ করেছেন। তাঁরাই এ উম্মাতের শ্রেষ্ঠ ও প্রথম প্রজন্ম। তারা না থাকলে আমরা আল কুরআন, আল হাদীস ও শরীয়তের কিছুই পেতামনা। কাজেই তাদেরকে গালি দেয়া ও তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ স্বয়ং আল্লাহ, রাসূল ও দীনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ ও ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার নামান্তর।
সকল সাহাবীর মধ্যে দশজন সাহাবী হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ। এরা আশারায়ে মুবাশশারা। অর্থাৎ জীবিত থাকতেই তারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আবার চার খলিফা শ্রেষ্ঠতম। তাদের সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেনঃ “তোমরা আমার নীতি আকড়ে ধর, আর আমার পর হেদায়াত প্রাপ্ত খলিফাগণের নীতি অনুসরণ কর। তাদেরকে দৃঢ়ভাবে অনুসরণ কর এবং নতুন উদ্ভাবিত শরীয়ত বহির্ভূত নীতি প্রত্যাখ্যান কর।”
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যে সব বিষয়ে মতভেদ হয়েছে। সে সব বিষয় নিয়ে কিছু সমস্যায় পড়তে হয় বটে। তবে এ ক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বন করাই নিরাপদ। একান্তই যদি মতামত ব্যক্ত করা অপরিহার্য হয় তাহলে অধিকাংশ সাহাবীর মতের পক্ষে ও খোলাফায়ে রাশেদীনের নীতির পক্ষে মত দিতে হবে। আর আল কুরআন ও সুন্নাহর মতকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে হবে। কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বী সাহাবীদের ব্যাপারে কোন বিরূপ মন্তব্য করা কখনো বৈধ হবেনা। তাদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সততা ও সত্যবাদিতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা যাবেনা। সামগ্রিকভাবে তাদের সম্পর্কে আমাদের সেই আকীদাই পোষণ করতে হবে যা আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। সেটি হলো, “আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট।” সুতরাং তারা উম্মাতের সকল মতভেদের ঊর্ধ্বে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক কিছু মতভেদ থাকা সত্ত্বেও এমনকি তাদের মধ্যে উষ্ট্র যুদ্ধ ও সিফফীন যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও তারা সকলেই সন্দেহাতীতভাবে জান্নাতী। আমাদের তাদের কার্যকলাপ নিয়ে মাথা ঘামানোর পরিবর্তে নিজেদের পরিণাম নিয়ে মাথা ঘামানো কর্তব্য।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন