কবীরা গুনাহ – ১

১. শিরক

আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ। এই শিরক দুই প্রকারেরঃ (১) আকীদাগত শিরক। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদাত করা। গাছ, পাথর, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, ফিরিশতা, নবী, ওলী ইত্যাদি যাই হোক না কেন, তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা ও তার ইবাদাত করা শিরক। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

“নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে কাউকে শরীক করার গুনাহ মাফ করেন না। এর চেয়ে ছোট যে কোন গুনাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করেন।” (সূরা আন নিসা)

“নিশ্চয় শিরক একটা বিরাট জুলুম।” (সূরা লুকমান)

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।” (সূরা আল মায়েদা)

এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত রয়েছে।

বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে বা কোন বস্তুকে শরীক করবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে নির্ঘাত জাহান্নামে যাবে। যেমন কেউ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে এবং ঈমানদার অবস্থায় মারা গেলে জান্নাতবাসী হবে, চাই সে জাহান্নামে যতই আযাব ভোগ করুক না কেন। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) একদিন তিনবার বললেন আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবোনা? সবাই বললোঃ “জি হাঁ, হে রাসূল”! তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতাপিতাকে কষ্ট দেয়।” অতঃপর তিনি হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বললেনঃ “মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া থেকে সাবধান!” এই শেষোক্ত কথাটা তিনি এতবার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন যে, হাদীসের বর্ণনাকারী বলেনঃ আমরা মনে মনে বলছিলাম, রাসূল (সা) যদি চুপ করতেন তবে ভালো হতো।

বুখারী ও আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে : “রাসূল (সা) বললেনঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক ও সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক। অতঃপর শিরকের উল্লেখ করলেন। অতঃপর বললেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে (অর্থাৎ ইসলামকে ত্যাগ করে) তাকে হত্যা কর।”

দ্বিতীয় প্রকারের শিরক হচ্ছে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা। আল্লাহ বলেনঃ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে তার সৎ কাজ করা উচিত এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদাতে আর কাউকে শরীক করা উচিত নয়।” অর্থাৎ নিজের সৎ কাজ কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা উচিত নয়। রাসূল (সা) বলেছেনঃ তোমরা ছোট শিরক থেকে দূরে থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন; ছোট শিরক কী? তিনি বললেনঃ রিয়া অর্থাৎ লোক দেখিয়ে সৎ কাজ করা। যেদিন আল্লাহ  তার বান্দাদেরকে কর্মফল দেবেন সেদিন তাদেরকে বলবেন, যাদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে দুনিয়ায় তোমরা নেক আমল করতে, তাদের কাছে চলে যাও। দেখ, তারা তোমাদেরকে কোন প্রতিদান দেয় কিনা।” (আহমাদ, বায়হাকী, তাবরানী) অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কাজ করে এবং তাতে আমি ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করে, তার কাজযাকে শরীক করেছে তার। সে কাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।” (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষকে শুনায়, আল্লাহও তার বেলায় মানুষকে শুনান, আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখায়, আল্লাহও তার সাথে লোক দেখানো আচরণ করেন।” (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল (সা) বলেন, “অনেক রোযাদার এমন আছে, যার রোযা থেকে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কিছু অর্জিত হয়না। আর অনেক রাত জেগে নামায পড়া লোক আছে, যাদের রাত জাগাই সার হয়। অর্থাৎ নামায ও রোযা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না করা হলে তার কোন সওয়াব হবেনা। (ইবনে মাজাহ, আহমাদ, তাবরানী) আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ “তাদের কৃতকর্মের কাছে আমি উপস্থিত হব এবং তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা বানিয়ে দেব।” অর্থাৎ আল্লাহর সন্তোষ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে মানুষ যে কাজ করবে, আল্লাহ তার সওয়াব নষ্ট করে দেবেন।

আদী বিন হাতেম বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “কিছু সংখ্যক লোককে কেয়ামতের দিন জান্নাতে পাঠানোর আদেশ দেয়া হবে। তারা যখন জান্নাতের খুব কাছাকাছি চলে যাবে, তার ঘ্রাণও পাবে, এবং তার ভেতরের প্রাসাদগুলো ও অন্যান্য অনুপম নিয়ামতগুলো দেখবে, তখন ফেরেশতাদেরকে বলা হবে যে, “ওদেরকে ওখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা জান্নাতের ঐ সব নিয়ামতে ওদের কোন অধিকার নেই।”অতপর তারা চরম হতাশা ও অনুশোচনা নিয়ে ফিরে যাবে। তারপর তারা বলবেঃ “হে আল্লাহ! তোমার প্রিয়জনদের জন্য যে নিয়ামত নির্দিষ্ট করে রেখেছ, তা দেখানোর আগে যদি আমাদেরকে জাহান্নামে পাঠাতে, তাহলে তা আমাদের জন্য অনেকটা সহজ হতো।”আল্লাহ বলবেনঃ “আমি তোমাদের সাথে এই আচরণই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। তোমরা যখন একাকী থাকতে, আমার প্রতি চরম অবাধ্যতার আচরণ করতে। আর যখন মানুষের সাথে মেলামেশা করতে, তখন তাদের সাথে খোদাভীরু লোকদের মত আচরণ করতে। নিজেদের কার্যকলাপ দ্বারা মানুষের কাছে যে মানসিকতা তোমরা প্রকাশ করতে, আমার প্রতি তোমরা আন্তরিকতার সাথে সেই মানসিকতা পোষণ করতেনা। তোমরা মানুষকে ভয় করতে, আমাকে ভয় করতেনা। তোমরা মানুষকে গুরুত্ব দিতে, আমাকে গুরুত্ব দিতেনা। মানুষের জন্য তোমরা ত্যাগ স্বীকার করতে, আমার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেনা। তাই আজ আমি তোমাদেরকে আমার অগাধ প্রতিদান থেকে বঞ্চিতও করবো, আর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিও দেবো।”

অপর এক হাদীসে আছে যে, এক ব্যক্তি রাসূল (সা) কে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, মুক্তি কিভাবে পাওয়া যাবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহকে যদি ধোকা না দাও তাহলে মুক্তি পাবে। লোকটি বললোঃ আল্লাহকে ধোকা দেয়ার অর্থ কী? তিনি বললেনঃ যে কাজ তোমাকে আল্লাহ ও তার রাসূল করতে বলেছেন, সে কাজ যদি তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে খুশী করার জন্য কর, তাহলে সেটাই হবে আল্লাহকে ধোকা দেয়ার শামিল। রাসূল (সা) আরো বললেনঃ তুমি রিয়াকারী (লোক দেখানো কাজ) থেকে বিরত থাক। কেননা রিয়া হচ্ছে ছোট শিরক। যে ব্যক্তি রিয়াকারীতে লিপ্ত থাকবে, কিয়ামতের দিন সমাবেত জনতার সামনে তাকে চারটে বিশেষণে ভূষিত করে ডাকা হবে, যথাঃ হে রিয়াকার, হে বিশ্বাসঘাতক, হে অবাধ্য, হে ক্ষতিগ্রস্ত! তোমার আমল বাতিল হয়ে গেছে, তোমার প্রতিদান নষ্ট হয়ে গেছে, আমার কাছে তোমার কোন পারিশ্রমিক পাওনা নেই। হে ধোকাবাজ, তুমি যার জন্য কাজ করেছ তার কাছ থেকে পারিশ্রমিক নাও গে।”

কথিত আছে যে, জনৈক মুসলিম মনীষীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা (ইখলাস) কাকে বলে? তিনি জবাব দিলেনঃ মানুষ নিজের পাপ কাজকে যেমন লুকায়, তেমনি তার ভালো কাজকেও লুকাবে। এটাই নিষ্ঠা বা ইখলাস। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ ইখলাস বা আন্তরিকতার উদ্দেশ্য কী? তিনি বললেনঃ লোকে তোমার প্রশংসা করুক- এটা কামনা না করা। হযরত ফযীল বিন ইয়ায বলেনঃ লোকের ভয়ে খারাপ কাজ ত্যাগ করা রিয়াকারী, আর মানুষকে খুশী করার জন্য ভালো কাজ করা শিরক। আর ইখলাস হচ্ছে এই উভয় রোগ থেকে মুক্ত থাকার নাম।

.

২. হত্যা বা খুন করা

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার পরিণাম জাহান্নাম। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হন, অভিসম্পাত করেন এবং তার জন্য ভয়ংকর আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সূরা আন নিসা) “আর যারা বৈধ কারণ ছাড়া আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা (তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা) আর যারা ওসব অপকর্ম করে তারা হয় মহাপাপী। তার জন্য আযাব দ্বিগুণ করা হবে এবং সে অপমানিত হয়ে সেখানে চিরদিন অবস্থান করবে। অবশ্য যে ব্যক্তি তওবা করে ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তার কথা ভিন্ন।” সূরা আল মায়েদায় একটি হত্যাকান্ডকে গেটা মানব জাতির হত্যার শামিল বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ”এ কারণেই আমি বনী ইসরাইলকে লিখে দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন হত্যার বিনিময়ে ছাড়া কাউকে হত্যা করলো সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করলো, আর যে একটা প্রাণকে বাঁচালো সে যেন গেটা মানবজাতিকে বাঁচালো।” হাদীসে হত্যা ও হত্যার ইচ্ছাকেও সমান অপরাধ গণ্য করা হয়েছে। রাসূল (সা) বলেনঃ যখন দুজন মুসলমান তরবারী নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামী হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, হত্যাকারীর কথা তো বুঝলাম। কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কি? রাসূল (স) বললেনঃ সে তার প্রতিপক্ষকে খুন করতে চেয়েছিল।” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ)

ইমামগণ ও মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেছেন যে, কোন অবৈধ স্বার্থ, শত্রুতা বা বিদ্বেষবশতঃ পরস্পরে সংঘর্ষ হলেই এ হাদীস প্রযোজ্য। নচেত আত্মরক্ষা ও বৈধ ধনসম্পদের হেফাজতের উদ্দেশ্যে অস্ত্র ধারণ করলে এ হাদীস প্রযোজ্য হবেনা। কেননা আত্মরক্ষাকারীর উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষকে খুন করা হয়না বরং আক্রমণ প্রতিহত করাই তার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আক্রমণকারীকে হত্যা না করে যদি আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয় তবে সেটা করাই শ্রেয়।

রাসূল (সা) আরো বলেছেন: আমার পরে তোমরা পরস্পরকে হত্যাকারী কাফেরদের মত হয়ে যেওনা। তিনি আরো বলেছেনঃ অবৈধ হত্যাকান্ড না ঘটানো পর্যন্ত বান্দার আর সকল গুনাহ মাফ হওয়ার অবকাশ থাকে। তিনি আরো বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সবার আগে হত্যার বিচার হবে। তিনি আরো বলেছেন: আমার নিকট কোন মুমিনের হত্যাকান্ড সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা। এক হাদীসে আল্লাহর সাথে শরীক করা, নরহত্যা ও মিথ্যা শপথ করাকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ বলা হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন : পৃথিবীতে যত অন্যায় হত্যাকান্ড হবে, আদম (আ) এর প্রথম পুত্র তার অংশ পাবে। কারণ সে-ই সর্বপ্রথম এই অপরাধের প্রচলন করেছে। রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ কোন অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ বেহেস্তের ঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে।

.

৩. জাদু করা

জাদুর কবীরা গুনাহ হওয়ার কারণ এই যে, এ কাজ করতে হলে কাফের না হয়ে করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “শয়তানরা কুফরীতে লিপ্ত হয়ে মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত। বস্তুত: অভিশপ্ত শয়তানের মানুষকে জাদু শিক্ষা দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সাথে শিরক করা। হারুত ও মারুত নামক দু’জন ফিরিশতার কাহিনী বর্ণনা প্রসংগে আল্লাহ বলেনঃ

“তারা উভয়ে কাউকে জাদু শিক্ষা দেয়ার আগে এ কথা বলে দিত যে, আমরা পরীক্ষা স্বরূপ। কাজেই তোমরা কুফরীতে লিপ্ত হয়োনা। তারপর তাদের কাছ থেকে লোকেরা এমন জাদু শিখতো, যা দ্বারা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যায়। অথচ তারা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারতো না। তারা যে জাদু শিখতো তা তাদের শুধু ক্ষতি করতো, উপকার করতোনা। আর তারা এ কথাও জানতো যে, যে ব্যক্তি জাদু আয়ত্ব করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ প্রাপ্য নেই।”(সূরা বাকারা)।

এ জন্য বহু গুমরাহ মানুষকে জাদুর আশ্রয় নিতে দেখা যায়। কেননা তারা একে শুধু একটা হারাম কাজ মনে করে। অথচ আসলে তা যে কুফরীও তা তারা জানেনা। স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটানো, বেগানা পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে প্রেম প্রণয় সৃষ্টির কাজে এমন সব মন্ত্র পড়ে জাদু করা হয়, যার বেশীর ভাগ শিরক ও কুফরীতে পরিপূর্ণ।

জাদুকরের শরীয়ত বিহিত শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড। কেননা তা আল্লাহর সাথে কুফরী অথবা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত। রাসূল (সা) যে হাদীসে “সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ” পরিহার করতে বলেছেন, তাতে জাদুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা উচিত এবং দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় ক্ষতিকর এমন কাজের ধারে কাছে যাওয়া চাইনা। হাদীসে আছেঃ “জাদুকরের শাস্তি তরবারীর আঘাতে তাকে খতম করে দেয়া।”(আল জামে আত্ তিরমিযী) বুখারী শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “ইবনে আবদা বলেছেন। হযরত উমরের (রা) ইন্তিকালের এক বছর আগে আমাদের কাছে এই মর্মে চিঠি আসে যে, জাদুকর স্ত্রী বা পুরুষ যে-ই হোক, তাকে হত্যা কর।”এক হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। যে জাদু করে, যার জন্য জাদু করা হয়, যে ভবিষ্যদ্বাণী করে, যার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যে শুভ বা অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে বা কাউকে বিশ্বাস করতে উপদেশ দেয়, তারা কেউ আমার পছন্দনীয় নয়।”হযরত আলী (রা) বর্ণনা করেন যে, রসুল (সা) বলেছেনঃ “তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবেনা : (১) মদ্যপায়ী, (২) রক্তসম্পৰ্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী ও (৩) জাদুতে আস্থা স্থাপনকারী।”(মুসনাদে আহমাদ) হযরত ইবনে মাসউদ বর্ণিত হাদীসে আছেঃ তাবীজ ও ঝাড়ফুকে বিশ্বাস করা শিরক। অবশ্য আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুগ্রহ ছাড়া এসবের কোন উপকারিতা নেই এরূপ বিশ্বাস করলে তাবীজ তুমার ও ঝাড়ফুঁকে দোষ নেই, যদি তা অনৈসলামিক ভাষায় লিখিত না হয়। ইমাম খত্তাবী বলেছেন: কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম লেখা তাবীজ বৈধ। কেননা রাসূল (সা) স্বয়ং হাসান ও হুসাইনকে (রা) তাবীজ লিখে দিয়েছিলেন।

.

৪. নামাযে শৈথিল্য প্রদর্শন

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “অতঃপর (সেই সব নবীর পর) এমন উত্তরাধিকারীরা এল, যারা নামাযকে নষ্ট করলো ও প্রবৃত্তির কামনা বাসনা অনুসারে কাজ করলো। তারা অবশ্যই “গায়”তে পতিত হবে। তবে যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও নেক আমল করে তাদের কথা স্বতন্ত্র।” (মারিয়াম) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ “নামাযকে নষ্ট করার অর্থ পুরোপুরি তরক করা বা বর্জন করা নয়, এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট সময়ের পরে পড়া বা কাযা করা। হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়া বলেনঃ এর অর্থ পরবর্তী নামাযের সময় না এসে পড়া পর্যন্ত নামায বিলম্বিত করা। এটা করতে যে অভ্যস্থ হয়ে যায় এবং এই অভ্যাসের ওপর তওবা না করেই মারা যায় আল্লাহ তাকে “গায়”নামক স্থানে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। এটি দোজখের অত্যন্ত নিচ ও নোংরা একটি গহবরের নাম।

আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ সেই সকল নামাযীর জন্য ‘ওয়েল’, যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে শিথিল। অর্থাৎ আলসেমী ও গড়িমসি করে। হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস বলেনঃ আমি রাসূলকে (সা) জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এই শিথিলতা কি? তিনি বললেনঃ নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বিত করা। তাদেরকে নামাযী বলা হয়েছে। কিন্তু উদাসীনতা ও বিলম্বের কারণে তাদেরকে “ওয়েল”এর হুমকি দেয়া হয়েছে। ওয়েল অর্থ আযাবের কঠোরতা। কারো কারো মতে ওয়েল হচ্ছে জাহান্নামের এমন উত্তপ্ত একটি জায়গা, যেখানে পৃথিবীর সমস্ত পাহাড় পর্বত ফেলে দিলেও তা তীব্র দহনে গলে যাবে। তওবা ও অনুতাপসহকারে ক্ষমা না চাইলে নামায কাযাকারী ও নামাযে আলস্যকারীর জন্য এই জায়গা বাসস্থান হিসাবে নির্ধারিত রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে না দেয়। যে ব্যক্তি তা করবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তাফসীরকারগণ বলেছেনঃ উক্ত আয়াতে “আল্লাহর স্মরণ” দ্বারা পাঁচ ওয়াক্তের নামাযকে বুঝানো হয়েছে। কাজেই কেউ যদি নিজের অর্থ উপার্জন সংক্রান্ত কর্মকান্ডে যথা ব্যবসায় বাণিজ্য ও সন্তানাদি সংক্রান্ত ব্যস্ততায় সময় মত নামায না পড়ে তবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন বান্দার যে কাজ সম্পর্কে সর্বপ্রথম হিসাব নিকাশ নেয়া হবে তা হচ্ছে নামায। হিসাব দিতে সক্ষম হলে মুক্তি নচেত ব্যর্থতা অবধারিত।”

জাহান্নামবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “জান্নাতবাসী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, কোন্ কারণে তোমরা দোজখে গেলে তারা জবাব দেবে ? আমরা নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না,……

“রাসূল (সা) বলেছেনঃ “অমুসলিমদের ও আমাদের মাঝে যে অংগীকার, তা হচ্ছে নামায সংক্রান্ত। নামাযকে যে ত্যাগ করলো, সে কাফের। “তিনি আরো বলেছেনঃ ‘বান্দার ও তার কাফের হওয়ার মাঝে কেবল নামায তরকের ব্যবধান।”

সহীহ বুখারীতে আছে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “যার আসরের নামায ছুটে যায়, তার সমস্ত সৎ কাজ বৃথা হয়ে যায়। অপর হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে, আল্লাহ তার দায়িত্ব থেকে মুক্ত।” সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম উমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ”মানুষ যতক্ষণ এক আল্লাহকে মা’বুদ হিসাবে মেনে না নেবে, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় না করবে, ততক্ষণ তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আমি আদিষ্ট। এ কাজগুলো যারা করবে, তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার হাত থেকে নিরাপদ। তবে ন্যায়সংগত কারণ থাকলে ভিন্ন কথা। তাদের হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার।” এ হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসংগে উমর (রা) বলেনঃ”নামায ত্যাগকারী ইসলামের প্রদত্ত কোন সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা ভোগ করতে পারবেনা।”

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি যথারীতি নামায আদায় করবে, তা কিয়ামতের দিন তার জন্য মুক্তির ওসীলা, আলোকবর্তিকা ও যুক্তিপ্রমাণ হবে। আর যে যথারীতি নামায আদায় করবে না, তার জন্য তা আলোকবর্তিকাও হবেনা, যুক্তিপ্রমাণও হবেনা, মুক্তির ওসীলাও হবেনা। অধিকন্তু সে কিয়ামতের দিন ফিরাউন, কারূন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সংগী হবে।”

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় কোন কোন মুসলিম মনীষী বলেছেন যে, উল্লেখিত চারজন কুখ্যাত কাফেরের সাথে বেনামাযীর হাশর হওয়ার কারণ এই যে, নামায তরকের কারণ চার রকমের হয়ে থাকে। অর্থসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততা, প্রশাসনিক ব্যস্ততা ও বাণিজ্যিক ব্যস্ততা। নামায পরিত্যাগের কারণ প্রথমটি হলে কারূনের সাথে, দ্বিতীয়টি হলে ফেরাউনের সাথে, তৃতীয়টি হলে হামানের সাথে এবং চতুর্থটি হলে মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী উবাই বিন খালাফের সাথে তার হাশর হবে।

বায়হাকী কর্তৃক উমর (রা) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর নিকট এসে বললোঃ “হে রাসূল ইসলামের কোন্ কাজ আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয়। রাসূল (সা) বললেনঃ যথা সময়ে নামায পড়া। যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল তার ধর্ম নেই। নামায ইসলামের খুঁটি।”

উমর (রা) যখন আততায়ীর আঘাতে আহত হলেন, তখন তাঁকে জানানো হলো। যে, “হে আমীরুল মুমিনীন! নামাযের সময় উপস্থিত।” তিনি বললেনঃ “হাঁ, আমি নামায পড়বো। নামায যে ছেড়ে দেয় ইসলামের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।” অতঃপর তিনি নামায পড়লেন, তখনো তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল।

“বিশিষ্ট তাবেয়ী [যিনি রাসূলকে (সা) দেখেননি, কিন্তু সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তাকে তাবেয়ী বলা হয়] আব্দুল্লাহ বিন শাকীফ (রহ) বলেনঃ রাসূল (সা) এর সাহাবীগণ নামায ছাড়া আর কোন কাজকে ছেড়ে দিলে মানুষ কাফের হয়ে যায় বলে মনে করতেন না। আলী (রা) ও ইবনে মাসউদ (রা) বেনামাযীকে সুস্পষ্টভাবে যথাক্রমে কাফের ও বেদ্বীন বলেছেন। ইবনে আব্বাস বলেছেন: ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামায তরক করলেও আল্লাহর সাথে যখন সাক্ষাত হবে তিনি ক্রুদ্ধ থাকবেন।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বেনামাযী হয়ে আল্লাহর কাছে যাবে, তার অন্যান্য সৎ কাজকে আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। (তাবরানী) ইমাম ইবনে হাযম বলেছেন : আল্লাহর সাথে শরীক করা ও অন্যায়ভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করার পরেই সবচেয়ে বড় গুনাহর কাজ হলো নামায তরক করা। রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন প্রথম ওয়াক্তে নামায পড়ে তখন সেই নামায একটি আলোকরশি ছুড়তে ছুড়তে আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে যে, তুমি যেমন আমাকে রক্ষা করেছ, আল্লাহ তেমন তোমাকে রক্ষা করুন! (তাবরানী)।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়ালা তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন না। (১) যাকে জনগণ অপছন্দ করা সত্ত্বেও তাদের নেতা হয়ে জেঁকে বসে, (২) যে কোন স্বাধীন ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করে (৩) যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় অতীত হওয়ার পর নামায পড়ে।” (আবু দাউদ) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ “যে ব্যক্তি বিনা ওযরে দুই নামায একত্রে পড়ে সে এক মস্ত বড় কবীরা গুনাহ করে।”(হাকেম)

আবু দাউদে বর্ণিত যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “কোন বালকের সাত বছর বয়স হলেই তাকে নামায পড়তে আদেশ দাও। আর দশ বছর হলে তাকে সে জন্য প্রহার কর ও বিছানা আলাদা করে দাও।”

ইমাম খাত্তাবী বলেনঃ এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, প্রাপ্ত বয়স্কের নামায তরকের জন্য আরো কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য। শাফেয়ী মাযহাবের কারো কারো মতে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায তরককারী প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড দেয়া যাবে। ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদের মতে সে হত্যাযোগ্য।

ইবরাহীম নাখয়ী, আইয়ুব সাখতিয়ানী, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইসহাক বিন রাহওয়ের মতে বিনা ওযরে স্বেচ্ছায় নামায তরককারীকে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর কাফের গণ্য করতে হবে।

একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায যথারীতি আদায় করবে, আল্লাহ তাকে পাঁচটি মর্যাদা দান করবেন। প্রথমঃ তার দারিদ্র দূর করবেন, দ্বিতীয়তঃ তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন, তৃতীয়তঃ তার আমলনামা ডান হাতে দেবেন, চতুর্থতঃ বিদ্যুতবেগে তাকে পুলসিরাত পার করাবেন, পঞ্চমতঃ তাকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে শৈথিল্য দেখাবে, আল্লাহ তাকে ১৪টি শাস্তি দেবেন। এর মধ্যে পাঁচটি দুনিয়ার জীবনে, ৩টি মৃত্যুর সময়ে, তিনটি কবরে, এবং তিনটি কবর থেকে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সময়ে। দুনিয়ার পাঁচটি হলো, তার জীবন থেকে বরকত উঠে যাবে, তার মুখমন্ডল থেকে সৎ লোকসুলভ ঔজ্জ্বল্য দূর হয়ে যাবে। তার কোন নেক আমলের প্রতিদান দেয়া হবেনা।

তার কোন দোয়া কবুল হবেনা এবং নেককার লোকদের দোয়া থেকে সে বঞ্চিত হবে। আর মৃত্যুর সময়ের তিনটি শাস্তি হলো, সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে, ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যাবে, এত পিপাসিত অবস্থায় মারা যাবে যে, সারা দুনিয়ার সমুদ্রের পানি পান করলেও তার পিপাসা মিটবেনা। কবরে থাকাকালে যে তিনটি শান্তি সে ভোগ করবে, তাহলো তার কবর সংকুচিত হয়ে তাকে এত জোরে পিষ্ট করবে যে, এক পাশের পাঁজরের হাড় ভেংগে অপুর পার্শ্বে চলে যাবে, তার কবর এমনভাবে আগুন দিয়ে ভরে দেয়া হবে যে, রাত দিন তা জ্বলতে থাকবে, এবং তাকে কিয়ামত পর্যন্ত একটি বিষধর সাপ দংশন করতে থাকবে। আর কবর থেকে বেরুবার সময় যে তিনটি শাস্তি সে ভোগ করবে তা হলো, তার হিসাব কঠিন হবে, আল্লাহকে সে কুদ্ধ দেখতে পাবে এবং সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে যে, কিয়ামতের দিন তার কপালে তিনটে কথা অংকিত থাকবে। একটি কথা হবেঃ “হে আল্লাহর হক বিনষ্টকারী”, দ্বিতীয় কথাটি হবেঃ “হে আল্লাহর গযবের উপযুক্ত ব্যক্তি”। তৃতীয় কথাটি হবেঃ “তুমি পৃথিবীতে যেমন আল্লাহর অধিকার দাওনি, আজ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত যে, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে যাওয়ার আদেশ দেয়া হবে। সে জিজ্ঞাসা করবেঃ হে আমার প্রতিপালক! কি কারণে? আল্লাহ বলবেনঃ নামায নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া ও আমার নামে মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে।

একবার রাসূল (সা) বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে কাউকে বঞ্চিত হতভাগা বানিওনা, তারপর উপস্থিত সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কি জান বঞ্চিত হতভাগা কে? সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল? কে? তিনি বললেনঃ নামায তরককারী।

অপর এক হাদীসে আছে যে, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের মুখ কালো হবে, তারা হলো নামায তরককারী। জাহান্নামে ‘মালহাম’ নামক একটা অঞ্চল আছে। সেখানে বহু সাপ থাকে। তার প্রতিটি সাপ উটের ঘাড়ের মত মোটা এবং প্রায় এক মাসের পথের সমান লম্বা। এই সাপ নামায তরককারীকে দংশন করবে। তর বিষ তার শরীরে ৭০ বছর ধরে যন্ত্রণা দিতে থাকবে অবশেষে তার গেশত খসে খসে পড়বে।

বর্ণিত আছে যে, বনী ইসরাইলের এক মহিলা একবার মূসার (আ) কাছে এল। সে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি ভীষণ পাপের কাজ করেছি। পরে তওবাও করেছি। আপনি দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন। মুসা (আ) বললেনঃ তুমি কী শুনাহ করেছ? সে বললোঃ আমি ব্যভিচার করেছিলাম। অতঃপর একটি অবৈধ সন্তান প্রসব করি এবং তাকে হত্যা করে ফেলি। মূসা (আ) বললেনঃ “হে মহাপাতকিনী! এক্ষুণি বেরিয়ে যাও। আমার আশংকা, আকাশ থেকে এক্ষুণি আগুন নামবে এবং তাতে আমরা সবাই ভস্মীভূত হবো।” মহিলাটি ভগ্ন হৃদয়ে বেরিয়ে গেল। অল্পক্ষণ পরেই জিবরীল (আ) এলেন। তিনি বললেনঃ “হে মূসা! আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছেন কী কারণে এই তওবাকারিনীকে তাড়িয়ে দিলেন। তার চেয়েও কি কোন অধম মানুষকে আপনি দেখেননি?” মূসা বললেনঃ “হে জিবরীল! এর চেয়ে পাপিষ্ঠ কে আছে!” জিবরীল (আ) বললেনঃ “ইচ্ছাকৃতভাবে নামায তরককারী।”

অপর একটি ঘটনায় বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি তার বোনের দাফন কাফন সম্পন্ন করে বাড়ী ফিরে গিয়ে দেখলো, তার মানিব্যাগটি নেই। পরে তার মনে হলো, ওটা কবরের ভেতরে পড়ে গেছে। তাই সে ফিরে গিয়ে কবর খুড়লো। দেখলো, সমস্ত কবর জুড়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সে পুনরায় মাটি চাপা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী গেল। তার মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা জানালে তিনি বললেন, মেয়েটি নামাযের ব্যাপারে আলসেমী করতো এবং সময় গড়িয়ে গেলে নামায পড়তো। বিনা ওজরে নামায কাযা করলে যদি এরূপ পরিণতি হতে পারে, তাহলে বেনামাযীর পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।

শুধু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামায পড়াই যথেষ্ট নয়, নামাযকে সুষ্ঠুভাবে ও বিশুদ্ধভাবে পড়াও জরুরী। নচেত অশুদ্ধ নামায পড়া নামায না পড়ারই সমতুল্য। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, “একদিন এক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলো। রাসূল (সা) তখন মসজিদেই বসে ছিলেন। লোকটি নামায পড়লো। অতঃপর রাসূল (সা) এর কাছে এসে সালাম করলো। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং নামায পড়। কারণ তুমি নামায পড়নি। সে চলে গেল এবং আগের মত আবার নামায পড়ে রাসূল (সা) এর কাছে এসে সালাম করলো। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আবার বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং নামায পড়। কেননা তুমি নামায পড়নি। এরূপ তিনবার নামায পড়ার পর লোকটি বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি এর চেয়ে ভালোভাবে নামায পড়তে পারিনা। আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন। প্রথমে নামাযে দাঁড়িয়ে তাকবীর বল। অতঃপর যতটুকু পার কুরআন পাঠ কর। অতঃপর রুকু কর এবং রুকুতে গিয়ে স্থির হও। অতঃপর উঠে সোজা হয়ে দাড়াও। তারপর সিজদা দাও এবং সিজদায় গিয়ে স্থির হও। তারপর স্থির হয়ে বস। অতঃপর আবার সিজদা দাও এবং সিজদায় স্থির হও। এভাবে নামায শেষ কর।

পবিত্র কুরআনে আছেঃ “সেই সব নামাযীর জন্য ‘ওয়েল’ নির্ধারিত, যারা নামাযে শৈথিল্য প্রদর্শন করে।”এর তাফসীরে হাদীসে আছে যে, যারা রুকু ও সিজদা ঠিকমত করেনা এবং কেবল ঠোকাঠুকি করে, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে।

একটি হাদীসে আছে যে, সবচেয়ে বড় চোর হলো সেই ব্যক্তি যে নামাযে চুরি করে। জিজ্ঞাসা করা হলোঃ কীভাবে নামাযে চুরি করা হয়? রাসূল (সা) বললেনঃ যথাযথভাবে রুকু সিজদা না করা ও বিশুদ্ধভাবে কুরআন না পড়া। (আহমাদ) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদার মধ্যবর্তী স্থানে পিঠটান করে দাঁড়ায়না, আল্লাহ তার দিকে দৃষ্টি দেবেন না। (আহমাদ) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ সেই ব্যক্তির নামায মুনাফিকের নামায, যে বসে বসে সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে থাকে, আর যেই সূর্য শয়তানের দুই শিং-এর মাঝে পৌছে যায় (অর্থাৎ অস্ত যাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে) অমনি উঠে দাঁড়ায় এবং চার বার মাথা ঠোকে। ঐ সময়ে আল্লাহকে সে খুব কমই স্মরণ করতে পারে। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূল (সা) তার সংগীদের নিয়ে নামায পড়ে বসলেন। এই সময়ে এক ব্যক্তি এসে তাড়াতাড়ি রুকু সিজদা করে নামায পড়লো। রাসূল (সা) বললেনঃ তোমরা ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছো? সে যদি এই অবস্থায় মারা যায় তবে মুহাম্মদ (সা) এর উম্মাতের বহির্ভূত অবস্থায় মারা যাবে। কাক যেমন তার চক্ষু দিয়ে রক্তে ঠোকর মারে, সে সেই রকম ঠোকর মেরে নামায সারলো। (সহীহে আবু বকর বিন খুযাইমা)

রাসূল (স) আরো বলেছেন : “যখনই কেউ নামায পড়ে তখন একজন ফিরিশতা তার ডানে এবং একজন ফিরিশতা তার বামে থাকে। সে যদি সুষ্ঠভাবে নামায শেষ করে তবে তারা উভয়ে সেই নামাযকে নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। নচেত তারা তা তার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারে।”(দারকুনী)

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুষ্ঠুভাবে ওযু করে, অতঃপর নামাযে দাড়ায়, সুষ্ঠুভাবে রুকু সিজদা ও কুরআন পাঠ দ্বারা নামায সম্পন্ন করে, তার নামায তাকে বলে তুমি যেমন আমাকে সংরক্ষণ করেছ, তেমনি আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করুন। অতঃপর তা আলোক রশ্মি ছড়াতে ছড়াতে আকাশের দিকে উঠে যায়। অতঃপর তার জন্য আকাশের দুয়ার খুলে যায় এবং আল্লাহর নিকট পৌঁছে গিয়ে উক্ত নামাযীর পক্ষে সুপারিশ করে। আর যখন রুকু সিজদা ও কুরআন পাঠ সুষ্ঠুভাবে করেনা তখন নামায তাকে বলে তুমি যেমন আমাকে নষ্ট কর, আল্লাহও তেমনি তোমাকে নষ্ট করুক। অতঃপর তা অন্ধকারে আচ্ছন্ন অবস্থায় “আকাশে উঠে যায়। তার জন্য আকাশের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর তাকে পুরানো কাপড়ের মত গুটিয়ে নামাযীর মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হয়।

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ নামায একটি দাঁড়িপাল্লা স্বরূপ। যে ব্যক্তি এই দাঁড়িপাল্লা পুরোপুরিভাবে মেপে দেয়, তাকে তার পুরস্কারও পুরোপুরিভাবে দেয়া হবে। আর যে কম মেপে দেবে, তার সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে যে, যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য ‘ওয়েল’ নির্দিষ্ট রয়েছে। মাপে কম দেয়া যেমন অন্যান্য জিনিসে হতে পারে, তেমনি নামাযেও হতে পারে। আর “ওয়েল’ হচ্ছে জাহান্নামের এমন উত্তপ্ত জায়গা, যার উত্তাপ থেকে জাহান্নাম নিজেও আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। (মুসনাদে আহমাদ)।

রাসূল (সা) বলেছেন : সিজদার সময় তোমরা মুখমন্ডল, নাক ও দুই হাত “মাটিতে রাখবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাতটি অংগ দিয়ে সিজদা করতে আদেশ দিয়েছেন : কপাল, নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাটু ও দুই পায়ের পিঠ। সিজদার সময়ে কাপড় ও চুল সামলাতে নিষেধ করেছেন। যে ব্যক্তি প্রতিটি অংগপ্রত্যংগকে তার অধিকার না দিয়ে নামায পড়ে, তাকে সংশ্লিষ্ট অংগ পুরো নামাযের সময়টা ধরে অভিশাপ দিতে থাকে। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

হযরত হুযায়ফা এক ব্যক্তিকে দেখলেন ভালোভাবে রুকু সিজদা না করে নামায পড়ছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এভাবে কতদিন যাবত নামায পড়ছ। সে বললোঃ চল্লিশ বছর। তিনি বললেনঃ তুমি চল্লিশ বছর যাবত কোন নামাযই পড়নি। এ অবস্থায় মারা গেলে তুমি অমুসলিম অবস্থায় মারা যাবে।

ইমাম হাসান বরসী বলতেনঃ “হে আদম সন্তান! নামায় যদি তোমার কাছে গুরুত্বহীন কাজ হয়, তাহলে ইসলামের আর কোন্ কাজটি তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে? অথচ রাসূল (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন বান্দা সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হবে। যদি সঠিকভাবে নামায পড়ে থাকে তাহলে সে মুক্তি পাবে। আর যদি নামায সুষ্ঠুভাবে না পড়ে থাকে তাহলে সে ব্যর্থকাম ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি ফরয নামাযে অসম্পূর্ণতা ধরা পড়ে, তবে আল্লাহ বলবেন, “দেখতো, আমার বান্দার কোন নফল কাজ আছে কিনা। যদি থাকে, তবে তা দিয়ে ফরযের ক্রটি পূর্ণ করা হবে। অনুরূপভাবে সকল কাজের বিচার অনুষ্ঠিত হবে।”(তিরমিযী)।

অতএব প্রত্যেক মুমিনের উচিত যতটা বেশী সম্ভব নফল আদায় করা, যাতে ফরযের ক্ষতি পূরণ করা যায়।

জামায়াতে নামায না পড়ার শাস্তি প্রসংগে

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “যেদিন কঠিন সময় উপস্থিত হবে, এবং লোকদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হবে, তখন তারা সিজদা করতে পারবেনা। তাদের দৃষ্টি নিচু হবে, লাঞ্ছনা-অপমান তাদের ওপর চেপে বসবে। তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল, তখন তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হচ্ছিল।” (কিন্তু তারা তা অস্বীকার করতো।) (সূরা আল-কলম) এ আয়াতের প্রথমাংশে কিয়ামতের দিনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তাদের ওপর অবমাননার ছাপ থাকবে। অথচ দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে সিজদা করতে ডাকা হতো। ইবরাহীম তাইমী এর ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেনঃ অর্থাৎ আযান ও ইকামাত দ্বারা তাদেরকে ফরয নামাযের দিকে ডাকা হতো। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়া বলেনঃ তারা আযান শুনতো, অথচ সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে হাজির হতোনা।

কা’ব আল আহবার (রা) বলেনঃ এ আয়াত কেবলমাত্র নামাযের জামায়াতে অনুপস্থিত থাকা লোকদের প্রসংগে নাযিল হয়েছিল। এ থেকে বিনা ওযরে জামায়াতে উপস্থিত না হওয়ার কী ভয়ংকর পরিণাম, তা জানা যায়। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ “আমার ইচ্ছা হয়, নামাজের জামায়াত অনুষ্ঠিত হোক, তাতে আমি একজন ইমাম নিয়োগ করি, অতঃপর এখনো কাঠ বহনকারী একদল লোক সাথে নিয়ে যারা জামায়াতে আসেনি তাদের বাড়ীতে গিয়ে তাদের বাড়ী জ্বালিয়ে দিই।”

মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে যে, এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূল (সা) এর কাছে এসে বললোঃ হে রাসূল, আমাকে মসজিদে নিয়ে যেতে পারে এমন কেউ নেই। আমাকে বাড়ীতে নামায পড়ার অনুমতি দিন। রাসূল (সা) তাকে অনুমতি দিলেন। সে চলে যেতে উদ্যত হলে তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বললোঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে মসজিদে যাবে। এই হাদীসটি আবু দাউদ শরীফে এভাবে এসেছে যে, “আমর ইবনে উম্মে মাকতুম রাসূল (সা) এর কাছে এলেন। তিনি বললেনঃ হে রাসূল! মদীনা অনেক হিংস্র জীবজন্তুতে পূর্ণ শহর। আমি চোখে দেখিনা। বাড়ীও অনেক দূরে। আমাকে মসজিদে নিয়ে যেতে পারে এমন একজন আছে বটে। তবে সে আমার উপযুক্ত নয়। আমি কি বাড়ীতে নামায পড়তে পারি? রাসূল (সা) বললেনঃ তুমি কি আযান শুনতে পাও? তিনি বললেনঃ হাঁ, পাই। রাসূল (সা) বললেনঃ তাহলে তুমি মসজিদে যাবে। আমি তোমাকে বাড়ীতে নামায পড়ার অনুমতি দিতে পারিনা।”

এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে জামায়াতে হাজির না হওয়া কোন ক্রমেই বৈধ হতে পারে না। কেননা রাসূল (সা) একজন অন্ধ ব্যক্তিকেও বাড়ীতে নামায পড়ার অনুমতি দেননি। এজন্য ইবনে আব্বাসকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো যে, এক ব্যক্তি সব সময় দিনে রোযা রাখে ও রাতে নামায পড়ে, কিন্তু জামায়াতে নামায পড়ে না। তার কি হবে? তিনি বললেনঃ এরূপ করতে থাকা অবস্থায় মারা গেলে সে জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযী)

রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযের ডাক শুনলো কিন্তু কোন ওজর না থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে হাজির হলোনা, তার একাকী পড়া নামায কবুল হবেনা। জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কি ধরনের ওযর? রাসূল (সা) বললেনঃ রোগ অথবা বিপদের আশংকা। (আবু দাউদ)

রাসূল (সা) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেনঃ (১) যে ব্যক্তি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নেতা হয়। (২) যে নারীর ওপর স্বামী অসন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় রাত অতিবাহিত হয়ে যায়। (৩) যে আযান শুনেও জামায়াতে যায়না।

আলী (রা) বলেনঃ “মসজিদের প্রতিবেশীর নামায মসজিদে ছাড়া জায়েজ নয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেনঃ যে বাড়ীতে বসে আযান শুনতে পায়।”

বুখারী শরীফের এক হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেনঃ “আমরা নামাযের জামায়াতে অনুপস্থিত ব্যক্তিকে মুনাফিক অথবা রোগী ছাড়া আর কিছু ভাবতামনা।”

ইবনে উমর (রা) জানান যে, একবার উমর (রা) তাঁর খেজুরের বাগান দেখতে গিয়েছিলেন। এসে দেখেন আসরের জামায়াত শেষ হয়ে গেছে। তিনি তৎক্ষনাত ঐ খেজুরের বাগান দরিদ্র লোকদের নামে সদকা করে দিলেন, যাতে তা জামায়াত ছুটে যাওয়ার ক্ষতি পূরণ করে দেয়।

জামায়াত নামায পড়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত ইশা ও ফজরের নামাযকে। কেননা রাসূল (সা) বলেছেনঃ এই দুটি নামায অর্থাৎ ফজর ও ঈশা মুনাফিকের জন্য সবচেয়ে কঠিন। এ দুটি নামায জামায়াতে পড়ার সওয়াব কত তা জানলে লোকেরা কিছুতেই তা ত্যাগ করতোনা। (সহীহ আল বুখারী)

ইবনে উমর (রা) বলেনঃযখন কেউ ফজর ও ইশার জামায়াতে অনুপস্থিত থাকতো, তখন আমরা মনে করতাম সে মুনাফিক হয়ে গেছে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ উবাইদুল্লাহ বিন উমার কাওয়ারীরী বলেন যে, আমি কখনো ইশার নামায জামায়াতে পড়তে ভুলতাম না। কিন্তু একদিন আমার বাড়ীতে এক মেহমান আসায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কারণে ইশার জামায়াত ধরতে পারলামনা। পরে ইশার নামায ২৭ বার পড়লাম। কারণ হাদীসে আছে, জামায়াতে নামাযের সওয়াব ২৭ গুণ বেশী। কিন্তু রাত্রে স্বপ্নে দেখলাম, আমি এক দল ঘোড় সওয়ারের সাথে দৌড়ে পাল্লা দিচ্ছি। কিন্তু আমি পেছনে পড়ে যাচ্ছি। যারা আগে ছিল তারা বললো, তুমি কখনো আমাদেরকে ধরতে পারবেনা। কারণ আমরা ইশার নামায জামায়াতে পড়েছি আর তুমি পড়েছু একাকী।

.

৫. যাকাত না দেয়া

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ”যারা আল্লাহর দেয়া সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করে, তাদের এই কাজকে তাদের জন্য কল্যাণজনক মনে করনা। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদ নিয়ে তারা কার্পণ্য করতো তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় ঝুলানো হবে।”(আল-ইমরান )

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “সেই মুশরিকদের জন্য ধ্বংস যারা যাকাত দেয়না। এখানে আল্লাহ তাদেরকে মুশরিক নামে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “যারা সোনা রূপাকে গেলাজাত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও। যেদিন এই সোনারূপা দোজখের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পিঠে ও পার্শে সেক দেয়া হবে আর বলা হবে, এই হলো তোমরা যা নিজেদের জন্য গেলাজাত করে রাখতে সেই সম্পদ। অতএব তোমরা তোমাদের গেলাজাত করা সম্পদের মজা ভোগ কর।”(আত্ তাওবাহ)

সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত সোনা রূপার মালিক, অথচ তা থেকে শরিয়ত সম্মত প্রাপ্য দেয়না তাকে কিয়ামতের দিন আগুনে উত্তপ্ত লোহার পাত দিয়ে কপালে, পিঠে ও দুই পার্শে ছাপ দেয়া হবে। যখনই ঐ স্থানগুলো ঠান্ডা হবে, অমনি পুনরায় ছাপ দেয়া হবে। এভাবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ এক এক দিন পর্যন্ত তার দহনক্রিয়া চলবে। বিচার অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে ছাপ দেয়া চলতে থাকবে। তারপর সে বেহেশত অথবা দোজখে যাবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করেন, “হে রাসূল! উট, গরু, ছাগল, প্রভৃতির যাকাত না দিলেও কি এরূপ আযাব হবে? “রাসূল (সা) জবাব দিলেনঃ “হ্যাঁ।”

হযরত আবু হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃসর্ব প্রথম যে তিন ব্যক্তি দোজখে প্রবেশ করবে, তারা হচ্ছেঃ গায়ের জোরে ক্ষমতা দখলকারী (অর্থাৎ স্বৈরাচারী শাসক, যাকাত দেয়না এমন ধনী ব্যক্তি এবং অহংকারী দরিদ্র। (সহীহ ইবনে খুযাইমা ও সহীহ ইবনে হাব্বান)

হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেনঃ যার হজ্জ করার মত সম্পদ আছে কিন্তু হজ্জ করলোনা কিংবা যাকাত দেয়ার মত সম্পদ আছে কিন্তু যাকাত দিলনা, সে মৃত্যুর সময় আরো একটু দীর্ঘ আয়ু পেলে আল্লাহর হক দিতে পারতো বলে আফসোস করবে। এ সময় জনৈক শ্রোতা বললোঃ হে ইবনে আব্বাস ! আল্লাহকে ভয় করুন। মৃত্যুর সময় এরূপ অফসোস তো কেবল কাফিররা করবে। হযরত ইবনে আব্বাস বললেনঃ আমি যা বলেছি তার প্রমাণ হিসাবে আমি এক্ষুনি তোমাকে আল কুরআনের আয়াত পড়ে শোনাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা আমার দেয়া সম্পদ থেকে সৎপথে ব্যয় কর মৃত্যু ঘনিয়ে আসার আগে, যখন তোমাদের মনোরোম্মুখ ব্যক্তি বলবে, হে আমার প্রভু! আমার মৃত্যু যদি সামান্য একটু বিলম্বিত করতেন, তাহলে আমি ‘সদকা দিতাম। এবং “সৎ কর্মশীল হতাম।’ (আল-মুনাফিকুন) এখানে “সদকা দিতাম’ অর্থ হজ্জ করতাম। এরপর হযরত ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞাসা করা হয়ঃ যাকাত কথন ফরয হয়? তিনি বললেনঃ যখন দুইশো দিরহাম পরিমাণ সম্পদ জমা হয়। (আনুমানিক দশ হাজার টাকার সমপরিমাণ) অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হজ্জ কিসে ফরয হয়? তিনি জবাব দিলেন পাথেয় ও পরিবহন খরচ সংগৃহীত হলে।

ব্যবহারের জন্য বানানো বৈধ গহনা পত্রে যাকাত দিতে হয়না। তবে সঞ্চয়ের জন্য বা ভাড়া দেয়ার জন্য বানানো গহনার যাকাত দিতে হবে। বাণিজ্যিক পণ্যদ্রব্যের জন্য যাকাত দিতে হবে।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে তার যাকাত দিলনা, কিয়ামতের দিন তার সম্পদ একটি বিষধর সাপে পরিণত হয়ে গলা পেচিয়ে থাকবে এবং তার দুই চোয়ালে কামড়িয়ে ধরে বলবে “আমি তোর সম্পদ, আমি তোর পুঁজি।” অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াত তিলাওয়াত করলেন। “আল্লাহর দেয়া সম্পদ নিয়ে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন ঐ কৃপণতাকে নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে না করে। ওটা বরঞ্চ তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদকে কেন্দ্র করে তারা কৃপণতা করতো, তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় পেঁচিয়ে থাকবে।”(সহীহ আল-বুখারী)

তাবারানীতে বর্ণিত হাদীসে আছেঃ “কিয়ামতের দিন সোনা রূপাকে আগুনে পুড়িয়ে তাদের কপালে, পিঠে ও পার্শে সেঁক দেয়া হবে”-আল কুরআনের এই উক্তির ব্যাখ্যা প্রসংগে হযরত ইবনে মাসউদ বলেন যে, তার দিনার ও দিরহামগুলো পুড়িয়ে একটার ওপর অপরটি সেঁক দেয়া হবেনা, বরং মানুষটির দেহের চামড়া এত সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে প্রত্যেকটি দিনার ও দিরহামকে (অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট যুগের প্রচলিত মুদ্রা) পুড়িয়ে আলাদা আলাদাভাবে সেঁক দেয়া সম্ভব হয়।

প্রশ্ন হতে পারে যে, সেঁক দেয়ার জন্য পিঠ, কপাল ও পার্শদেশকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে কেন? এর জবাব এই যে কৃপণ বিত্তশালীরা দরিদ্র ব্যক্তিকে দেখলে বিরক্তির সাথে কপাল কুঁচকে ফেলে ও মুখ কালো করে। অতঃপর পার্শ-দেশ ঘুরিয়ে দেহ বাঁকা করে দাঁড়ায়। তারপর দরিদ্র লোকটি কোন কিছু চাইতে কাছে এলে তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। তাই এই অংগগুলোতে সেঁক দিয়ে কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শান্তি দেয়া হবে।

তাবারানীতে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (রা) বলেনঃ পাঁচটি পাপের পাঁচটি শান্তি। সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন পাঁচটি অপরাধের কোন্ পাঁচটি শাস্তি? রাসূল (সা) বললেনঃ যখনই কোন জাতি অংগীকার ভংগ করবে, আল্লাহ তাদের শত্রুকে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। যখনই কোন জাতি আল্লাহর নাযিল করা বিধান ছাড়া অন্য কিছু অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করবে, আল্লাহ তাদের ভেতরে দারিদ্রকে সর্বব্যাপী করে দেবেন। যখনই কোন জাতির ভেতর অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও ব্যভিচারের প্রচলন ঘটবে, আল্লাহ তাদের মধ্যে মৃত্যু (অর্থাৎ অস্বাভাবিক ও অপরিণত বয়সে মৃত্যু) ব্যাপক করে দেবেন। (কোন কোন বর্ণনায় মৃত্যুর পরিবর্তে মস্তিষ্ক বিকৃতির উল্লেখ আছে) যখনই কোন জাতি মাপে ও ওজনে কমবেশী করবে আল্লাহ তাদেরকে দুর্ভিক্ষ ও অজন্মার কবলে ফেলবেন। যখনই কোন জাতি যাকাত দেয়া বন্ধ করবে আল্লাহ তাদেরকে অনাবৃষ্টির কবলিত করবেন।

উপদেশঃ সম্পদের গর্বে যারা গর্বিত, তাদের মনে রাখা উচিত যে, অচিরেই তাদের এ দুনিয়া ও তার সকল সহায় সম্পদ ছেড়ে চলে যেতে হবে। যখন সঞ্চিত সম্পদকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে কপালে, পিঠে ও পার্শে সেঁক দেয়া হবে, তখন তা তাদের কোন উপকারে আসবেনা। এ আয়াতটি কখনো ভুলে যাওয়া চাইনা। দরিদ্র ও ভিক্ষুকদের দেখে বিরক্তি প্রকাশ করা উচিত নয়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে দরিদ্র লোককে ধনী বানিয়ে দিতে পারেন এবং ধনীকে এক মুহূর্তে দরিদ্রে পরিণত করতে পারেন। কাউকে দরিদ্র বানানো ও কাউকে বিত্তশালী বানানোর পেছনে আল্লাহর যে গভীর ও মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

বিশিষ্ট তাবেয়ী মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আল-ফিরিয়াবী বলেনঃ একবার আমি ও আমার সংগীরা হযরত আবু সিনান (র) এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম। কিছুক্ষণ পর হযরত আবু সিনান (র) আমাদেরকে সাথে নিয়ে তার এক প্রতিবেশীকে দেখতে গেলেন। ঐ প্রতিবেশীর এক ভাই সম্প্রতি মারা গেছে। তাই তাকে সান্ত্বনা দেয়াই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। তার কাছে গিয়ে দেখলাম, তিনি খুবই অস্থিরভাবে কান্নাকাটি করছেন। আমাদের কোন সান্ত্বনা বাক্যই তাকে শান্ত করতে পারছিলনা। অবশেষে আমরা বললামঃ আপনি কি জানেন না যে, মৃত্যু একটা অবধারিত ব্যাপার? তিনি বললেনঃ তাতো জানি ভাই, কিন্তু আমি কাঁদছি শুধু এজন্য যে, আমার ভাই কবরে ভয়ংকর আযাব ভোগ করছে। আমরা বললামঃ আল্লাহ কি আপনাকে অদৃশ্যের খবর জানিয়েছেন? তিনি বললেনঃ দাফন সম্পন্ন করার পর যখন সবাই চলে গেল, তখন আমি কবরের কাছে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। সহসা কবর থেকে একটি আওয়ায শুনতে পেলামঃ “আহ, আমাকে একা থাকতে দাও। আমি আযাব ভোগ করতে থাকি। আমি নামাযও পড়তাম, রোযাও রাখতাম। তার এই কথায় আমার কান্না আসতে লাগলো। আমি তার অবস্থা দেখার জন্য কবর খুঁড়লাম। দেখলাম, কবরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে এবং আমার ভাই এর গলায় আগুনের শেকল লটকানো রয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম আপনার ভাই দুনিয়ায় থাকাকালে কি করছে? তিনি বললেনঃ সে যাকাত দিতনা। আমরা তখন বললামঃ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন : “যারা আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদে কার্পণ্য করে, তাদের এ কাজকে তোমরা ভালো মনে করনা। এটা তাদের জন্য অশুভ। যে সম্পদ নিয়ে তারা কার্পণ্য করতো তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। আপনার ভাইকে হয়তো এ আযাব আগাম দেয়া হচ্ছে। অতঃপর আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে জনৈক সাহাবীর নিকট পেলাম, যিনি তখনো জীবিত। আমরা তাকে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে বললামঃ “কত ইহুদী ও খৃস্টান মারা যায়। তাদের তো এমনটি হতে দেখিনা।”তিনি বললেনঃ তারা নিঃসন্দেহে দোজখে যাবে। তবে আল্লাহ মুমিনদের ভেতরেই দৃষ্টান্ত দেখান, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।

.

৬. বিনা ওজরে রমযানের রোযা ভংগ করা

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ”হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন পূর্ববর্তীদের ওপরে ফরয করা হয়েছিল। আশা করা যায় যে, তোমরা মুত্তাকী হবে। কতিপয় দিন, এ সময় যদি কেউ রোগাক্রান্ত হয় কিংবা প্রবাসে থাকে, তা হলে অন্য দিনগুলোতে রোযা রাখবে।

“সহী আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিস। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) তাঁর রাসূল এই মর্মে সাক্ষ্য দেয়া, নামায কায়েম করা, যাকাত দেয়া, হজ্জ করা ও রমযানের রোযা রাখা।

“রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিনা ওজরে রমযানের একটি রোযাও পরিত্যাগ করবে, সে যদি এরপর সারা জীবন রোযা রাখে তথাপি তার ক্ষতিপূরণ হবেনা।” (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)

বস্তুত কাফফারা দ্বারা রোযা ভাংগার গুনাহ মাফ হলেও রমযানের রোযার সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করা সম্ভব হবেনা।

.

৭. সামর্থ থাকা সত্বেও হজ্জ না করা

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “যে ব্যক্তি হজ্জ করার সামর্থ রাখে, তার ওপর হজ্জ করা ফরয।” রাসূল (সা) বলেনঃ “আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌছে হজ্জ করার জন্য প্রয়োজনীয় বাহন ও পাথেয় যার রয়েছে, সে যদি হজ্জ না করে, তবে সে ইহুদী হয়ে মরুক কিংবা খৃষ্টান হয়ে, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায়না।”

হযরত উমর (রা) বলেনঃ যারা ক্ষমতা থাকা সত্বেও হজ্জ করেনা, আমার ইচ্ছা হয় তাদের ওপর জিযিয়া বসিয়ে দেই। কারণ তারা মুসলমান নয়।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যাকাত দেয়না ও হজ্জ করেনা, এমন ব্যক্তি মৃত্যুর সময় নিজের আয়ু বৃদ্ধির জন্য আক্ষেপ করবে। তাকে প্রশ্ন করা হলো যে, এরূপ আক্ষেপ তো কাফিরদের করার কথা। তিনি বললেনঃ আমি যে কথা বলেছি তা কুরআনে রয়েছে। এই বলে তিনি নিম্নের আয়াত কয়টি পড়লেনঃ

“হে মুমিনগণঃ তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে না দেয়। আর যারা উদাসীন হবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তোমরা সেই সময়টি ঘনিয়ে আসার আগে আমার দেয়া সম্পদ থেকে দান কর, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু এসে যাবে তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, তুমি কেন আমাকে আর অল্প কিছু সময় বাড়িয়ে দিলে না, তাহলে আমি সদকা করতাম (অর্থাৎ যাকাত দিতাম) এবং সকর্মশীলদের (অর্থাৎ হজ্জ আদায়কারীদের) অন্তর্ভুক্ত হতাম।” তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, যাকাত কিসে ফরয হয়? তিনি বললেনঃ দুইশত দিরহাম অথবা অনুরূপ মূল্যের স্বর্ণ থাকলে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হলো : হজ্জ কিসে ফরয হয়। তিনি বললেন, আসা যাওয়ার পথ খরচ ও যানবাহন সংগৃহীত হলেই হজ্জ ফরয হয়। হযরত সাঈদ বিন জুবাইর (রা) বলেনঃ”আমার এক ধনী প্রতিবেশী হজ্জ না করে মারা গেলে আমি তার জানাযার নামায পড়িনি।”

.

৮. আত্মহত্যা করা

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করোনা। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু। আর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি ও জুলমের মাধ্যমে এ কাজ করবে, তাকে আমি আগুনে পোড়াবো। এ কাজ আল্লাহর পক্ষে সহজ।”(সূরা আন নিসা)

ইমাম ওয়াহেদী ও ইবনে আব্বাস প্রমুখ এ আয়াতের তাফসীর প্রসংগে বলেছেন যে, এর অর্থ তোমরা একে অপরকে হত্যা করোনা। কেননা তোমরা একই ধর্মের অনুসারী। তাই তোমরা যেন একই ব্যক্তি। কিন্তু অন্যরা বলেছেন যে, এ আয়াতে আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই শেষোক্ত মতটিই সঠিক। কেননা অন্য মানুষকে হত্যার ব্যাপারে আল কুরআন ও হাদীসে আরো স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং তা স্বতন্ত্রভাবে আলোচিত হয়েছে। তা ছাড়া আবু দাউদ শরীফে উদ্ধৃত হযরত আমর ইবনুল আসের বর্ণিত হাদীসও এই মতের বিশুদ্ধতার অন্যতম প্রমাণ। হযরত আমর ইবনুল আ’স বলেনঃ রাসূল (সা) এর নেতৃত্বে পরিচালিত যাতুস সালাসিল যুদ্ধ চলাকালে এক হিমেল রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। সেই রাতে গেসল করলে ঠান্ডায় আমার মারা যাওয়ার আশংকা ছিল। তাই আমি তায়াম্মুম করলাম এবং আমার সংগীদের নিয়ে ফজরের নামায পড়লাম। পরে রাসূলকে (সা) ঘটনাটা জানালাম। তিনি বললেনঃ “ওহে আমর। তুমি তোমার সাথীদের নিয়ে নাপাক শরীরে নামায পড়লে? আমি কী কারণে গেসল করিনি তা তাকে অবহিত করলাম। সেই সাথে বললামঃ আমি কুরআনে আল্লাহর এই বানী পড়েছি যে, “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করোনা, আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু।” এ কথা শুনে রাসূল (সা) হেসে দিলেন এবং আর কিছুই বললেন না। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আমর এই আয়াত দ্বারা আত্মহত্যা বুঝেছেন, অন্যকে হত্যা করা নয়। অথচ রাসূল (সা) তার এই ব্যাখ্যায় আপত্তি করেননি।

অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃতোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আহত হয়ে কষ্ট পাচ্ছিল। তাই সে একখানা ছুরি দ্বারা নিজের দেহে আঘাত করলো। ফলে রক্তপাত হয়ে সে মারা গেল। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন। “আমার বান্দা আমাকে ডিংগিয়ে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।”(সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃযে ব্যক্তি কোন লোহার অস্ত্র দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে বসে অনন্তকাল ধরে সেই অস্ত্র দিয়েই নিজেকে কোপাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের মধ্যে বসেও সে অনন্তকাল ধরে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে, দোযখে বসেও সে অনবরত উচ্চ স্থান থেকে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। এভাবে অনন্তকাল ধরে সে নিজেকে কষ্ট দিতে থাকবে। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

অপর হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ “কোন মুমিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার শামিল। কোন মুমিনকে মিথ্যামিথ্যি কাফির বলা তাকে হত্যা করার শামিল। আর যে ব্যক্তি কোন জিনিস দ্বারা নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিনও তাকে সেই জিনিস দ্বারাই শাস্তি দেয়া হবে।”(সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম, নাসায়ী, তিরমিযী)

অপর একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি নিজের ক্ষত স্থানের যন্ত্রণা সইতে না পেরে নিজ তরবারী দ্বারা আত্মহত্যা করে। রাসূল (সা) তার কথা শুনে বলেন, সে জাহান্নামী।

বস্তুত আল্লাহর দেয়া প্রাণ ও আয়ুষ্কাল একটি মস্ত বড় নিয়ামত এবং আখিরাতের জন্য নেক কাজ করার সীমিত অবকাশ। একে যারা স্বহস্তে খতম করে, তাদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ আমাদেরকে এই ভয়ংকর কবীরা গুনাহ থেকে রক্ষা করুন।

.

৯. পিতামাতার অবাধ্য হওয়া ও তাদের কষ্ট দেয়া

আল্লাহ তায়ালা সূরা বনী ইসরাইলে এরশাদ করেনঃ “তোমার প্রতিপালক ফায়সালা করেছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবেনা এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।” অর্থাৎ তাদের উভয়ের সেবাযত্ন করবে ও তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করবে।” তোমার কাছে তাদের দু’জনের কেউ বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে উহ্ বলোনা এবং ধমক দিওনা।” অর্থাৎ কোন রূঢ় ও কর্কশ ভাষা প্রয়োগ করোনা। বস্তুত তারা উভয়ে যখন তোমার সেবাযত্ন করেছে, তখন তোমারও তাদের সেবাযত্ন করা উচিত। স্মরণ রাখা উচিত যে, তারা প্রথমে তোমার সেবাযত্ন করে চরম নিঃস্বার্থতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে এবং তুমি সেবাযত্ন করলেও তাদের সমকক্ষ হতে পারবেনা। পরিতাপের বিষয় যে, শৈশবে পিতামাতা সন্তানের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েও সেবাযত্ন করে সন্তানের সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করতো। আর সস্তান বৃদ্ধ পিতামাতার কাছ থেকে একটু কষ্ট পেলেই তার তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করে। এরপর আল্লাহ বলেনঃ “তাদের উভয়ের সাথে কোমল ভাষায় কথা বল।” অর্থাৎ বিনয়ের সাথে ও আন্তরিক সহানুভূতির সাথে কথা বল। তাদের ওপর মমতাপূর্ণ ডানা বিস্তার করে দাও এবং বল, হে আমার প্রতিপালক, আমার পিতামাতা শৈশবে আমাকে যেরূপ স্নেহ মমতা সহকারে লালন পালন করেছেন, আপনিও তাদেরকে দ্রুপ করুণা ও দয়া সহকারে লালন পালন করুন।”

সূরা লুকমানে আল্লাহ বলেনঃ “তুমি আমার কাছে কৃতজ্ঞ হও এবং তোমার পিতামাতার কাছেও কৃতজ্ঞ হও।” লক্ষণীয় যে, আল্লাহ তায়ালা কীভাবে নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতার সাথে পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাকে যুক্ত করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ তিনটি আয়াত তিনটি জিনিসের সাথে যুক্ত হয়ে নাযিল হয়েছে। এর একটি বাদে অপরটি কবুল হয়না। প্রথমটিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : “আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর।” যে ব্যক্তি আল্লাহকে মানবে ও রাসূলকে মানবেনা, তার আল্লাহকে মানা কবুল হবেনা। দ্বিতীয়টিতে আল্লাহ বলেনঃ”তোমরা নামায কায়েম কর ও যাকাত দাও।” যে ব্যক্তি নামায পড়বে ও যাকাত দেবেনা, তার নামায কবুল হবেনা। তৃতীয়টিতে আল্লাহ বলেনঃ ‘তুমি আমার প্রতি কতৃক্ত হও এবং তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হবেনা, তার আল্লাহর কৃতজ্ঞতা অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য। এ জন্যই রাসূল (সা) বলেছেনঃ “পিতামাতার সন্তোষে আল্লাহর সন্তোষ নিহিত এবং পিতামাতার অসন্তোষে আল্লাহর অসন্তোষ নিহিত।” (আল জামে’ আত্ মিরমিযী)

হযরত ইবনে উমার (রা) বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূল (সা) এর সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। রাসূল (সা) তাকে বললেনঃ তোমার পিতামাতা কি বেঁচে আছেন? সে বললো জ্বি। রাসূল (সা) বললেনঃ “তাহলে তাদেরকে নিয়েই তুমি জিহাদ কর।” অর্থাৎ তাদের সেবাই তোমার জন্য জিহাদ। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম) লক্ষণীয় যে, পিতামাতার সেবাকে জিহাদের ওপর অগ্রগণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত অপর হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ কী, তা কি আমি তোমাদেরকে জানাবো? তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা ও পিতামাতার সাথে অসদাচরণ।” এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, পিতামাতার সাথে দুর্ব্যবহার, অযত্ন ও অবহেলাকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সমান্তরালে রাখা হয়েছে। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অপর হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ “পিতামাতার সাথে অসদাচরণকারী, দান করে খোটা দানকারী ও মদ পানকারী জান্নাতে যাবে না।” রাসূল (সা) আরো বলেনঃ উহ্ করার চেয়েও ক্ষুদ্র কোন কষ্টদায়ক আচরণ যদি থাকতো, তবে আল্লাহ তাও নিষিদ্ধ করতেন। সুতরাং পিতামাতার সাথে অসদাচরণকারী যা ইচ্ছে তাই করুক। সে জান্নাতে কখনো যাবেনা। আর সদাচরণকারী যা খুশী করুক। সে কখনো জাহান্নামে যাবেনা।” (দায়লামী) তিনি আরো বলেছেনঃ পিতামাতার সাথে অসদাচরণকারীকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ “যে ব্যক্তি তার পিতাকে গাল দেয় ও তিরস্কার করে তাকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যে ব্যক্তি তার মাতাকে গাল দেয় ও তিরস্কার করে, আল্লাহ তাকেও অভিসম্পাত করেছেন। হযরত আবু বকর (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ সকল গুনাহের শান্তি যত দিন ইচ্ছা বিলম্বে কার্যকর করেন, এমনকি তা কিয়ামত পর্যন্ত বিলম্বিত করে থাকেন। কেবল পিতামাতার প্রতি অসদাচরণ এর ব্যতিক্রম। আল্লাহ এর শান্তি অবিলম্বেই কার্যকর করেন। অর্থাৎ কিয়ামতের আগে দুনিয়ার জীবনেই সে শান্তি পায়।

হযরত কা’ব আল-আহবার (র) বলেনঃকোন বান্দা যখন তার পিতামাতার প্রতি অসদাচরণ করে, তখন তার শান্তি ত্বরান্বিত করার জন্য আল্লাহ তার আয়ু কমিয়ে দেন। আর যখন কোন বান্দা তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করে, তখন আল্লাহ তার আয়ু বাড়িয়ে দেন, যাতে সে আরো সৎ কাজ করতে পারে এবং সুখশান্তি ও কল্যাণ লাভ করতে পারে। পিতামাতার সাথে সদাচরণ এভাবেও করা যায় যে, তারা যখন কোন জিনিসের অভাব অনুভব করেন, তখন সন্তান তা পূরণ করবে। এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর কাছে এসে বললোঃ হে রাসূল! আমার পিতা আমার ধনসম্পদ নষ্ট করে দিতে চান। রাসূল (সা) বললেনঃ “তুমি ও তোমার ধনসম্পদ তোমার পিতার।” হযরত কা’ব আল-আহবারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, পিতামাতার সাথে অসদাচরণ বলতে কি বুঝায়? তিনি জবাব দিলেনঃ পিতামাতা যদি সন্তানের জন্য কোন কসম খায় বা মানত মানে, তবে সন্তান কর্তৃক তা পুরা না করা, তারা কোন আদেশ দিলে তা না মানা, তারা কোন কিছু চাইলে তা না দেয়া (ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও) এবং তারা সন্তানের কাছে কোন জিনিস গচ্ছিত রাখলে সন্তান কর্তৃক তা আত্মসাত করা। (ইবনে মাজাহ)

ইবনে মাজাহসহ একাধিক হাদীস গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আ’রাফ কী এবং কারা তাতে বাস করবে? হযরত ইবনে আব্বাস জবাব দিলেন যে, আ’রাফ হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে অবস্থিত একটি পাহাড়। এই পাহাড় থেকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখা যায় এবং এর ওপর বহু ফলবান গাছপালা ও ঝর্ণা রয়েছে বলে এর নাম আ’রাফ রাখা হয়েছে। যারা পিতামাতার সম্মতি ছাড়া জিহাদে গিয়ে শহীদ হয় তারা সাময়িকভাবে এইখানে থাকবে। কেননা আল্লাহর পথে শাহাদাত লাভ তাদের জাহান্নামে প্রবেশের পথ বন্ধ করবে। আর পিতামাতার অসন্তুষ্টি তাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ আগলে রাখবে। কিছুকাল এখানে থাকার পর আল্লাহ তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসে আছে যে, এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো যে, হে রাসূলুল্লাহ! কোন ব্যক্তি আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী? তিনি বললেনঃ তোমার মাতা। সে বললোঃ তার পর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মাতা। সে পুনরায় বললোঃ তারপর কে? রাসূল (সা) বললেনঃ তোমার মাতা। সে বললোঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তোমার সর্বাধিক আপন ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগণ।” এভাবে তিনি মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারে তিনবার এবং পিতার সাথে সদ্ব্যবহারে একবার তাকিদ দিলেন। এর একমাত্র কারণ এই যে, মাতা সন্তানের জন্য সর্বাধিক উদ্বিগ্ন থাকে এবং তাকে সর্বাধিক স্নেহ ও আদর যত্ন করে। সন্তান ধারণ, দুধ খাওয়ানো, লালন-পালন এবং রাত জেগে তত্ত্বাবধান – এই কষ্টকর কাজগুলো একমাত্র মা-ই সন্তানের জন্য করে থাকেন।

একবার হযরত ইবনে উমার (রা) দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি নিজের মাকে কাঁধের ওপর বহন করে কা’বা শরীফের তওয়াফ করছে। সে বললোঃ ওহে ইবনে উমার, আপনি কি মনে করেন যে, এভাবে আমি নিজের মাকে কাঁধে বহন করে তওয়াফ করার মাধ্যমে তাঁর কিছু ঋণ পরিশোধ করতে পেয়েছি। ইবনে উমার বললেনঃ কখখনো না। এমনকি তোমাকে পেটে বহন করে যতগুলো দিন তিনি কষ্ট সহ্য করেছেন, তার একটি দিনেরও ঋণ শোধ করতে পারনি। তবে তুমি যেটুকু করেছ, ভালই করেছ। আল্লাহ তোমাকে এই অল্প কাজে বেশী প্রতিদান দেবেন।”

রাসূল (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহ দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ যে, চার ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করতেও দেবেন না, তার নিয়ামতসমূহের স্বাদ গ্রহণেরও সুযোগ দেবেননা; মদ্য পানকারী, সুদখোর, ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাকারী এবং পিতামাতার প্রতি দুর্ব্যবহারকারী। অবশ্য এরা তাওবাহ করলে সে কথা স্বতন্ত্র।” (হাকেম) রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে অবস্থিত।” (ইবনে মাজাহ, নাসায়ী) এক ব্যক্তি হযরত আবু দারদার (রা) কাছে এসে বললোঃ “আমি এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমার মা তাকে তালাক দিতে বলছেন। হযরত আবুদ দারদা বললেনঃ “মা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। তুমি ইচ্ছা করলে টা নষ্ট করে দাও, অথবা রক্ষা কর।”(আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)

রাসূল (সা) বলেছেনঃ তিন জনের দোয়া যে কবুল হয়, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রবাসী বা পথিকের দোয়া, উৎপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া। (তিরমিযী, আবু দাউদ)

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ খালা মায়ের মর্যাদা সম্পন্ন। অর্থাৎ তার সাথে মায়ের মতই সদ্ব্যবহার, সমানজনক আচরণ ও উপঢৌকনালি প্রদান করা কর্তব্য। হযরত ওহব বিন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহ তা’য়ালা হযরত মুসা (আ) এর নিকট এই মর্মে ওহী পাঠিয়েছিলেন যে, হে মূসা! তুমি তোমার পিতামাতাকে সম্মান কর। কেননা যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতাকে সম্মান করে, আমি তাকে দীর্ঘজীবী করি এবং তাকে এমন সন্তান দেই, যে তাকে সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতার সাথে দুর্ব্যবহার করে, আমি তার আয়ু কমিয়ে দেই এবং তাকে বেআদব ও অবাধ্য সন্তান দান করি।

হযরত আবু বকর বিন আবু মরিয়ম (রা) বলেনঃ “আমি তাওরাতে পড়েছি , যে ব্যক্তি তার পিতাকে প্রহার করে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড।” হযরত ওহব বলেনঃ “আমি তাওরাতে পড়েছি যে, যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে চপেটাঘাত করে, তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।”

হযরত আমর বিন মুররা আল জুহানী (রা) বলেনঃ “এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর নিকট এসে বললোঃ হে রাসূল, আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি, রমযানের রোযা রাখি, যাকাত দেই এবং হজ্জ করি, তাহলে আমার কী লাভ হবে। তিনি বললেনঃ এসব কাজ যে ব্যক্তি ঠিকমত সম্পন্ন করবে, সে নবীপণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মশীল বান্দাহগণের সংগী হবে। তবে পিতামাতার সাথে দুর্ব্যবহার করলে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।”(আহমাদ, তাবারানী, ইবনে হাব্বান, ইবনে খুযাইমা) রাসূল (সা) আরো বলেছেন : “পিতামাতার প্রতি অসদাচরণকারীকে আল্লাহ অভিসম্পাত দিয়েছেন। রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি কিছু লোককে আগুনের স্তম্ভে ঝুলন্ত দেখেছি। জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলামঃ এরা কারা? তিনি জবাব দিলেনঃ যারা দুনিয়ায় নিজেদের পিতামাতাকে তিরস্কার করতো।”

বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে এও জানা যায় যে, যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতাকে বকাঝকা করে, তার কবরে জাহান্নাম থেকে এত বিপুল সংখ্যক আগুনের জ্বলন্ত অংগার নেমে আসবে, যত বারিবিন্দু আকাশ থেকে নেমে থাকে। আরো বর্ণিত আছে যে, পিতামাতার সাথে অসদাচরণকারী সমাহিত হওয়ার পর তার কবর তাকে এত জোরে চাপ দেয় যে, তার পাজরের হাড়গেড় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগকারী হচ্ছে মুশরিক, ব্যভিচারী ও পিতামাতার প্রতি দুর্ব্যবহারকারী।

হযরত বিশর (রা) বলেনঃ মায়ের গলার আওয়ায় শোনা যায় এত নিকটে যে ব্যক্তি অবস্থান করে, সে তরবারী নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদকারীর চেয়ে উত্তম। মায়ের প্রতি ভক্তিপূর্ণ দৃষ্টি দানের চেয়ে মহৎ কাজ আর কিছু নেই।

ইমাম আহমাদ ও আবু দাউদ বর্ণিত হাদীসে আছে যে, জনৈক পুরুষ ও জনৈক মহিলা তাদের সন্তান সম্পর্কে ঝগড়া করাতে রাসূল (সা) এর দরবারে হাজির হলো। পুরুষটি বললোঃ হে রাসূল, আমি এই সন্তানের জনক। মহিলাটি বললোঃ হে রাসূল! এই সন্তানের বীজ বহনে ওর কোনই কষ্ট হয়নি, উপরন্তু একে জন্ম দিতে গিয়ে সে কেবল আনন্দই উপভোগ করেছে। আর আমি সন্তানটিকে গর্ভে ধারণও করেছি কষ্টের মধ্য দিয়ে, প্রসবও করেছি কষ্টের মধ্য দিয়ে, আর তাকে দু’বছর ব্যাপী দুধও খাইয়েছি।’ এ কথা শোনার পর রাসূল (সা) রায় দিলেন যে, শিশুটি তার মায়ের কাছেই থাকবে।

ইমাম তাবারানী ও ইমাম আহমাদ একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা) এর যুগে আলকামা নামে মদীনায় এক যুবক বাস করতো। সে নামায, রোযা ও সদকার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীতে অতিশয় অধ্যবসায় সহকারে লিপ্ত থাকতো। একবার সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হলো। তার স্ত্রী রাসূল (সা)-এর কাছে খবর পাঠালো যে, “আমার স্বামী আলকামা মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। হে রাসূল, আমি আপনাকে তার অবস্থা জানানো জরুরী মনে করছি।” রাসূল (সা) তৎক্ষণতি হযরত আম্মার, সুহাইব ও বিলাল (রা) কে তার কাছে পাঠালেন। তাদেরকে বলে দিলেন যে, “তোমরা তার কাছে গিয়ে তাকে কলেমায়ে শাহাদাত পড়াও।” তারা গিয়ে দেখলেন, আলকামা মুমূর্ষ অবস্থায় রয়েছে। তাই তারা তাকে “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ”পড়াতে চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু সে কোনমতেই কলেমা উচ্চারণ করতে পারছিলনা। অগত্যা তারা রাসূলকে (সা) খবর পাঠালেন যে, আলকামার মুখে কলেমা উচ্চারিত হচ্ছেনা। যে ব্যক্তি এই সংবাদ নিয়ে গিয়েছিল। তার কাছে রাসূল (সা) জিজ্ঞাসা করলেনঃ আলকামার পিতামাতার মধ্যেই কেউ কি জীবিত আছে? সে বললোঃ “হে রাসূল, তার কেবল বৃদ্ধা মা বেঁচে আছে।” রাসূল (সা) তৎক্ষণতি তাকে আলকামার মায়ের কাছে পাঠালেন এবং বললেনঃ “তাকে গিয়ে বল যে, তুমি যদি রাসূল (সা) এর কাছে যেতে পার তবে চল, নচেত অপেক্ষা কর। তিনি তোমার সাথে সাক্ষাত করতে আসছেন।” দূত আলকামার মায়ের কাছে উপস্থি হয়ে রাসূল (সা) যা বলেছিলেন তা জানালো। আলকামার মা বললেনঃ “রাসূল (সা) এর জন্য আমার প্রাণ উৎসর্গ হোক। তাঁর কাছে বরং আমিই যাবো।” বৃদ্ধা লাঠি ভর দিয়ে রাসূল (সা) এর কাছে এসে সালাম করলেন। রাসূল (সা) সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ ওহে আলকামার মা, আমাকে আপনি সত্য কথা বলবেন। আর যদি মিথ্যা বলেন, তবে আল্লাহর কাছ থেকে আমার কাছে ওহি আসবে। বলুন তো, আপনার ছেলে আলকামার স্বভাব চরিত্র কেমন ছিল? বৃদ্ধা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল, সে প্রচুর পরিমাণে নামায, রোযা ও সদকা আদায় করতো।” রাসূল (সা) বললেনঃ তার প্রতি আপনার মনোভাব কী? বৃদ্ধ বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল, আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট।” রাসূল (সা) বললেনঃ কেন? বৃদ্ধা বললেনঃ “সে তার স্ত্রীকে আমার ওপর অগ্রাধিকার দিত এবং আমার আদেশ অমান্য করতো।” রাসূল (সা) বললেনঃ “আলকামার মায়ের অসন্তোষ হেতু কলেমা উচ্চারণে আলকামার জিহবা আড়ষ্ট হয়ে গেছে। তারপর রাসূল (সা) বললেনঃ “হে বিলাল, যাও, আমার জন্য প্রচুর পরিমাণে কাষ্ঠ যোগাড় করে নিয়ে আস।”

বৃদ্ধা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, কাষ্ঠ দিয়ে কী করবেন? রাসূল (সা) বললেনঃ “আমি ওকে আপনার সামনেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেব।” বৃদ্ধা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল, আমার সামনেই আমার ছেলেকে আগুন দিয়ে পোড়াবেন তা আমি সহ্য করতে পারবোনা।” রাসূল (সা) বললেনঃ “ওহে আলকামার মা, আল্লাহর আযাব এর চেয়েও কঠোর এবং দীর্ঘস্থায়ী। এখন আপনি যদি চান যে, আল্লাহ আপনার ছেলেকে মাফ করে দিক, তা হলে তাকে আপনি মাফ করে দিন এবং তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। নচেত যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ তার কসম, যতক্ষণ আপনি তার ওপর অসন্তুষ্ট থাকবেন, ততক্ষণ নামায রোযা ও সদকা দিয়ে আলকামার কোন লাভ হবেনা।” এ কথা শুনে আলকামার মা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমি আল্লাহকে, আল্লাহর ফেরেশতাদেরকে এবং এখানে যে সকল মুসলমান উপস্থিত, তাদের সকলকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি আমার ছেলে আলকামার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছি।” রাসূল (সা) বললেনঃ “ওহে বিলাল, এবার আলফামার কাছে যাও। দেখ, সে লাইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে পারে কিনা। কেননা আমার মনে হয়, আলকামার মা আমার কাছে কোন লাজলজ্জা না রেখে যথার্থ কথাই বলেছে।” হযরত বিলাল (রা) তৎক্ষণাত গেলেন। শুনতে পেলেন, ঘরের ভেতর থেকে আলকামা উচ্চস্বরে উচ্চারণ করতে “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ”। অতঃপর বিলাল গৃহে প্রবেশ করে উপস্থিত জনতাকে বললেনঃ শুনে রাখ, আলকামার মা অসন্তুষ্ট থাকার কারণে সে প্রথমে কলেমা উচ্চারণ করতে পারেনি। পরে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার জিহ্বা কলেমা উচ্চারণে সক্ষম হয়েছে। অতঃপর আলকামা সেই দিনই মারা যায় এবং রাসূল (সা) নিজে উপস্থিত হয়ে তার গেসল ও কাফনের নির্দেশ দেন, জানাজার নামায পড়ান এবং দাফনে শরীক হন। অতঃপর তার কবরে দাঁড়িয়ে রাসূল (সা) বলেনঃ হে আনসার ও মুহাজিরগণ! যে ব্যক্তি মায়ের ওপর স্ত্রীকে অগ্রাধিকার দেয়, তার ওপর আল্লাহ, ফিরিশতাগণ ও সকল মানুষের অভিসম্পাত! আল্লাহ তার পক্ষে কোন সুপারিশ কবুল করবেন না। কেবল তাওবাহ করে ও মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করে তাকে সন্তুষ্ট করলেই নিস্তার পাওয়া যাবে। মনে রাখবে, মায়ের সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তোষ এবং মায়ের অসন্তোষেই আল্লাহর অসন্তোষ।”

অধ্যায় ১ / ১০

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন