কবীরা গুনাহ – ১০

১০. রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় স্বজনকে পরিত্যাগ করা

আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ”তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সম্পর্কে সতর্ক হও।” অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করোনা। (সূরা আননিসা) আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেনঃ”তোমরা রাসূলের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি এবং রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তাগুলোকে ছিন্ন করতে চাও নাকি? এসব অপকর্ম যারা করে, তাদের ওপরই তো আল্লাহ তা’য়ালা অভিশাপ বর্ষণ করেছেন এবং তাদেরকে বধির ও অন্ধ করে দিয়েছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ) আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেনঃ”আর যারা আল্লাহর অংগীকার পূরণ করে এবং প্রতিশ্রুতি ভংগ করেনা এবং আল্লাহ যেসব সম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলিকে রক্ষা করে, তাদের প্রভুকে ভয় করে এবং খারাপ প্রতিফলকে ভয় করে, (তারাই বুদ্ধিমান)। (সূরা আর-রা’দ)

আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেনঃ”আল্লাহ এ দ্বারা (অর্থাৎ কুরআন দ্বারা) অনেককে বিভ্রান্ত করেন এবং অনেককে সুপথগামী করেন। তিনি বিপথগামী করেন কেবল সেই সব অন্ধ লোককে, যারা আল্লাহর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভংগ করে, আল্লাহ যেসব সম্পর্ককে রক্ষা করার আদেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। বস্তুত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।”

বস্তুত আল্লাহ যেসব সম্পর্ককে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।” যে ব্যক্তি নিজের দুর্বল ও দরিদ্র নিকট-আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাদেরকে ত্যাগ করে, তাদের ওপর অহংকার ও দম্ভ প্রকাশ করে, নিজে ধনী এবং তারা দরিদ্র এরূপ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি দয়া দক্ষিণ ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করেনা, উপরোক্ত হুমকি ও হুশিয়ারী তার ওপর প্রযোজ্য এবং সে জান্নাতে প্রবেশের অধিকার পাবে না। কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে তাওবাহ ও উক্ত আত্মীয়দের প্রতি সদাচরণ করা দ্বারাই এ পরিণাম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তারাবানীতে বিশ্বস্ত সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “দরিদ্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন থাকতে যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বদান্যতা প্রদর্শন করেনা এবং নিজের দান সদকা তাদেরকে না দিয়ে অন্যদেরকে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার সদকা কবুল করেনা এবং কিয়ামতের দিন তার দিকে তাকাবেন না। আর যদি সে নিজে দরিদ্র হয়, তবে তাদের কাছে বেড়াতে এবং তাদের অবস্থা পরিদর্শন করতে যাওয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে সচেষ্ট হওয়া উচিত। কেননা রাসূল (সা) বলেছেনঃ “নিকট আত্মীয়দের সাথে সালাম দেয়ার মাধ্যমে হলেও আত্মীয়তা ঘনিষ্ঠ কর।”

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা রক্ষা করে।” (সহীহ আল বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী) অন্য হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ প্রতিশোধ গ্রহণকারী সম্পর্ক রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেনা। সম্পর্ক রক্ষাকারী হলো সেই ব্যক্তি, যে আত্মীয়তা ছিন্নকারীর সাথে আত্মীয়তা রক্ষা বা বহাল করে।

এক হাদীসে কুদসীতে রাসূল (সা) বলেনঃ”আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, আমি পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি রক্ত সম্পৰ্কীয় আত্মীয়তা রক্ষা করে, আমি তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করি আর যে ব্যক্তি তা ছিন্ন করে তার সাথে আমিও সম্পর্ক ছিন্ন করি।” হযরত আলী (রা) তার ছেলেকে বলেছিলেন : “হে বৎস! কখনো রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারীর সহচর হয়োনা। কেননা আমি আল্লাহর কিতাবে তিন জায়গায় এরূপ ব্যক্তিকে অভিশপ্ত আখ্যায়িত হতে দেখেছি।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)

হযরত আবু হুরাইরা (রা) একবার এক বৈঠকে রাসূল (সা) এর হাদীস বর্ণনা করার সময় বললেনঃ কোন রক্তসম্পৰ্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারীর সাথে একত্রে বসতে আমি বিরক্ত বোধ করি, যতক্ষণ সে উঠে না যায়। এ কথা শুনে বৈঠকের শেষ প্রান্ত থেকে এক যুবক উঠে গেল। সে তার ফুফুর কাছে গেল। এই ফুফুর সাথে সে বহু বছর যাবত সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। পরে আবার সম্পর্ক বহাল করে। তার ফুফু জিজ্ঞাসা করলোঃ তুমি কেন এসেছ? সে বললোঃ আমি রাসূল (সা) এর সহচর আবু হুরাইরার কাছে বসেছিলাম। তিনি বললেনঃ রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে বসতে আমি বিরক্ত বোধ করি, যতক্ষণ না সে উঠে যায়। তার ফুফু বললোঃ ওহে ভাতিজা, তুমি আবু হুরাইরার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর যে, এর কারণ কি? সে আবু হুরাইরার কাছে ফিরে গিয়ে তার ফুফুর বক্তব্য তাকে জানালো এবং জিজ্ঞাসা করলো আপনার কাছে কোন আত্মীয়তা ছিন্নকারী বসতে পারেনা কেন? হযরত আবু হুরাইরা বললেনঃ “আমি রাসূলকে (সা) বলতে শুনেছি যে, কোন দলের ভেতর রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী কোন ব্যক্তি থাকলে তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়না।” (তারগীর ও তারহীব)

কথিত আছে যে, একবার এক ধনাঢ্য ব্যক্তি হজ্জ করতে গিয়েছিল। মক্কায় পৌছে সে নিজের এক হাজার দীনার খুবই সৎ ও আমানতদার বলে পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত রাখলো। পরে আরাফাত থেকে ফিরে এসে দেখলো লোকটি মারা গেছে। সে মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো যে, তারা ঐ এক হাজার দীনার সম্পর্কে কিছুই জানেনা। অতঃপর সে মক্কার বিশিষ্ট আলেমগণের কাছে গিয়ে পরামর্শ চাইল। তারা তাকে বললেন যে, তুমি রাত দুপুরের সময় যমযম কুপের নিকট গিয়ে তার নাম ধরে ডাক দিও। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে, তাহলে সে তোমার প্রথম ডাকেই সাড়া দেবে এবং তোমার টাকার কথা জানাবে। লোকটি রাত দুপুরে যমযম কুয়ার কাছে গিয়ে অনেক ডাকাডাকি করলো। কিন্তু কোন সাড়া পেলনা। অবশেষে উক্ত আলেমগণের নিকট ফিরে গেল। তারা বললেনঃ আমাদের আশংকা, তোমার বন্ধু হয়তো জাহান্নামবাসী হয়েছে। তুমি ইয়ামানে যাও। সেখানে বারহুত নামে একটি কুয়া আছে। জনশ্রুতি আছে যে, ঐ কুয়াটা জাহান্নামের সাথে সংযুক্ত এবং ওতে পাপী লোকদের আত্মা অবস্থান করে। তুমি গভীর রাতে ওখানে গিয়ে তার নাম ধরে ডাক দিও। সে জাহান্নামী হয়ে থাকলে তোমার ডাকে সাড়া দেবে।

অতঃপর লোকটি ইয়ামানের উল্লেখিত কয়াটির কাছে গেল এবং মৃত ব্যক্তির নাম ধরে ডাকলো। মৃত ব্যক্তি তৎক্ষণাত সাড়া দিল। সে জিজ্ঞাসা করলোঃ আমার এক হাজার দীনার কোথায় রেখেছ? সে বললোঃ ওটা আমার বাড়ীর অমুক স্থানে মাটিতে পোতা আছে। আমার ছেলে বিশ্বস্ত নয় বলে তার কাছে রাখিনি। তুমি আমার বাড়ীতে গিয়ে মাটি খুড়ে তোমার দীনারগুলো নিয়ে নাও।” সে বললোঃ আমরা তো তোমাকে সৎলোক মনে করতাম। কিন্তু তোমার এখানে আসার কারণ কি? সে বললো আমার এক দরিদ্র বোন ছিল। তার কোন খোঁজখবর নিতামনা। তাই আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিয়েছেন।

দ্রষ্টব্যঃ এই কাহিনীর বিশদ বিবরণ হুবহু গ্রহণযোগ্য কিনা সে ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ রয়েছে এবং ইমাম ইবনে কাইয়েম স্বীয় গ্রন্থ “আর-রূহ”তে যমযম কূপে মুমিনদের আত্মা এবং বারহুত বা যাবিয়ার কূপে পাপীদের আত্মা থাকার বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের পরিপন্থী বিধায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। (গ্রন্থকারের টীকা) কিন্তু “রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবেনা”এই মর্মে রাসূল (সা) এর যে বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে, তার দ্বারা এ কাহিনীর মূল শিক্ষাটি সমর্থিত। – অনুবাদক।

.

১১. ব্যভিচার

অবস্থা ও পাত্রভেদে ব্যভিচারের শুরুত্বের তারতম্য আছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়োনা। ওটা একটা অশ্লীল কাজ এবং খারাপ পন্থা।” (বনী ইসরাইল) “আর যারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহের ইবাদাত করেনা, আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত প্রাণী সংগত কারণ ছাড়া হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা (তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা।) আর যে ব্যক্তি এসব কাজ করবে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় চিরস্থায়ী হবে। কেবল তওবাকারী ব্যতীত।” (সূরা আল ফুরকান) “ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিনী নারী – উভয়কে একশো ঘা করে বেত মার। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে গিয়ে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শান্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা আন নূর)।

আলেমগণ বলেছেনঃ এ হচ্ছে অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর ইহকালীন শাস্তি। তবে তারা যদি বিবাহিত হয়ে থাকে অথবা জীবনে একবার হলেও বিবাহিত হয়েছিল এমন হয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে। এটা হাদীস থেকে প্রমাণিত। এই মৃত্যুদন্ডেও যদি তাদের পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত না হয় এবং তারা উভয়ে বিনা তওবায় মারা যায় তাহলে তাদেরকে দোজখে আগুনে পোড়ানো লৌহদন্ড দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে।

আল্লাহর কিতাব যবুর শরীফে লিখিত ছিলঃ “ব্যভিচারীদেরকে নগ্ন করে দোজখে ঝুলানো হবে এবং লোহার ছড়ি বা লাঠি দিয়ে তাদের জননেন্দ্রিয়ে পেটানো হবে। পিটুনি খেয়ে তারা যখন চিৎকার করবে, তখন দোজখের ফেরেশতারা বলবেঃ দুনিয়াতে যখন তোমরা আনন্দ ফুর্তি করতে, হাসতে এবং আল্লাহর কথা ধ্যান করতে না এবং তাকে লজ্জা পেতেনা, তখন এই চিৎকার কোথায় ছিল?

সহীহ আল্‌-বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ীতে হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেনঃ “কোন ব্যভিচারী ব্যভিচারের সময়ে মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করেনা। কোন চোর চুরির সময়ে মুমিন অবস্থায় চুরি করেনা, কোন মদখোর মদ খাওয়ার সময় মুমিন অবস্থায় মদ পান করেনা, কোন লুণ্ঠনকারী লুণ্ঠন করার সময় মুমিন অবস্থায় লুণ্ঠন করেনা।” আবু দাউদ, তিরমিযী ও বায়হাকীর বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন ব্যভিচার করে, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায়, অতঃপর তা তার মাথার ওপর মেঘের মত ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তওবা করে তখন ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে।”

হযরত আবু হুরাইরা বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে বা মদ খায়, আল্লাহ তার কাছ থেকে ঈমান ঠিক সেইভাবে কেড়ে নেন, যেভাবে কোন মানুষ তার মাথার ওপর দিয়ে জামা খুলে ফেলে। মুসলিম ও নাসায়ীর অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হলোঃ ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী দরিদ্র।”

হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেনঃ আমি বলেছিলাম হে রাসূল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহ কী? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে মনে করা, অথচ তিনি প্রত্যেক প্রাণীর স্রষ্টা। আমি বললাম এটা নিশ্চয়ই ভীষণ গুনাহ। এরপর কী? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তান তোমার সাথে আহার করবে- এই আশংকায় তাকে হত্যা করা। আমি বললামঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচার করা। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করাকে কিভাবে আল্লাহর সাথে শরীক করা ও নিষিদ্ধ প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার সাথে একত্রে স্থান দেয়া হয়েছে।

রাসূলের (সা) স্বপ্নের বিবরণ সম্বলিত যে হাদীসটি হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রা) থেকে সহীহ আল-বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে তাতে রাসূল (সা) বলেনঃ “জিবরীল ও মীকাইল (আ) আমার কাছে এল এবং আমি তাদের সাথে রওনা হলাম। যেতে যেতে আমরা বড় একটা চুল্লীর কাছে এসে পৌছলাম। সেই চুল্লীর উপরিভাগ সংকীর্ণ ও নিম্নভাগ প্রশস্ত। ভেতরে বিরাট চিৎকার ও হৈ চৈ শোনা যাচ্ছিল। আমরা চুল্লীটার ভেতরে উলংগ নারী ও পুরুষদেরকে দেখতে পেলাম। তাদের নিচ থেকে কিছুক্ষণ পর পর আগুনের এক একটা হলকা আসছিল আর তার সাথে সাথে আগুনের তীব্র দহনে তারা জোরে জোরে চিৎকার করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। ওহে জিবরীল, এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ।”(সুহীহ আল বুখারী)।”

দোজখের সাতটি দরজা থাকবে”- পবিত্র কুরআনের সূরা হিজরের এই আয়াতের তাফসীর প্রসংগে আতা (রহ) বলেনঃ “উক্ত সাতটি দরজার মধ্যে সবচেয়ে বেশী উত্তাপময়, সবচেয়ে বেশী দুঃখ বিষাদে পরিপূর্ণ ও সবচেয়ে দুর্গন্ধময় দরজা হবে যারা জেনেশুনে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাদের দরজা।”

মাকহুল দামাস্কী বলেনঃদোজখবাসীদের নাকে একটা উৎকট দুর্গন্ধ ভেসে আসবে। তারা বলবে, এমন সাংঘাতিক দুর্গন্ধ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনো পাইনি। তখন তাদেরকে বলা হবে যে, ব্যভিচারীদের জননেন্দ্রিয় থেকে এ দুর্গন্ধ আসছে। তাফসীরের বিশিষ্ট ইমাম ইবনে যায়েদ বলেন ও ব্যভিচারীদের জননেন্দ্রিয়ের দুর্গন্ধ দোজখবাসীর জন্য বাড়তি কষ্ট বয়ে আনবে। আল্লাহ হযরত মূসাকে (আ) সর্বপ্রথম যে দশটি আয়াত দিয়েছিলেন তার একটি ছিল এরূপঃ “তুমি চুরি করোনা এবং ব্যভিচার করোনা। যদি কর তবে তোমার কাছ থেকে আমার চেহারা ঢেকে ফেলবো। আল্লাহর নবী মূসাকে (আ) যদি এরূপ কথা বলা হয়, তাহলে অন্যদের কী বলা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ ইবলীস তার বাহিনীকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়ার সময় বলে যে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে সবচেয়ে বেশী গেমরাহ করতে পারবে, তার মাথায় আমি মুকুট পরাবো এবং তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেব। দিন শেষে এক একজন করে এসে ইবলীসের কাছে নিজের কৃতিত্বের বর্ণনা দিতে থাকে। কেউ বলেঃ আমি অমুককে কুপ্ররোচনা দিয়ে দিয়ে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং সে তালাক দিয়েছে। ইবলীস বলেঃ “তুমি তেমন কিছু করনি। সে আর এক মহিলাকে বিয়ে করবে।” অতঃপর অপরজন এসে বলেঃ আমি অমুককে ক্রমাগত কুপ্ররোচনা দিয়ে দিয়ে তার সাথে তার ভাই-এর শত্রুতা বাধিয়ে দিয়েছি। ইবলীস বলেঃ “তুমি তেমন কিছু করনি। ওদের ভেতরে অচিরেই আপোষ হয়ে যাবে।” অতঃপর আর একজন এসে বলেঃ আমি অমুককে এক নাগাড়ে প্ররোচনা দিতে দিতে ব্যভিচার করিয়ে ছেড়েছি। এ কথা শুনে ইবলীস তাকে অভিনন্দন জানায় এবং বলেঃ তুমি একটা কাজের মত কাজ করেছ বটে। অতঃপর তাকে কাছে ডেকে নিয়ে তার মাথায় মুকুট পরিয়ে দেয়। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তান ও তার চেলা চামুন্ডার কবল থেকে রক্ষা করুন।

হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সা) বলেনঃ ঈমান একটি উত্তম পোশাক, যা আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা করেন পরিধান করান। কিন্তু কোন বান্দা ব্যভিচার করলে তার কাছ থেকে তিনি ঈমানের পোশাক কেড়ে নেন। অতঃপর তওবা করলে তাকে ঐ পোশাক ফিরিয়ে দেন। (বায়হাকী, তিরমিযী, আবু দাউদ ও হাকেম)।

অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার বর্জন কর। কেননা এর ছয়টি শান্তি রয়েছে। তন্মধ্যে তিনটি ইহকালে ও তিনটি পরকালে প্রকাশ পায়। যে তিনটি শাস্তি ইহকালে হয় তা হলো, তার চেহারার উজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যায়, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং তার দরিদ্র চিরস্থায়ী হয়। আর যে তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পায় তা হলো, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও দোজখের আযাব ভোগ করবে। (বায়হাকী) রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদ খাওয়া অব্যাহত রাখতে রাখতে মারা যায় আল্লাহ তাকে গাওতা নামক ঝর্ণার পানি পান করাবেন। গাওতা হচ্ছে ব্যভিচারনী নারীদের যোনিদেশ থেকে নির্গত পুঁজ ও দূষিত তরল পদার্থের ঝর্ণা যা দোজখে প্রবাহিত থাকবে। (আহমাদ)

রাসূল (সা) আরো বলেছেন : আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার পর নিষিদ্ধ নারীর সাথে সহবাস করার মত বড় গুনাহ আর নাই। (আহমদ, তাবারানী) রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ দোজখে একটা হ্রদ রয়েছে তাতে বহু সংখ্যক সাপ বাস করে। প্রতিটি সাপ উটের ঘাড়ের সমান মোটা। সেই সাপগুলো নামায তরককারীকে দংশন করবে। একবার দংশনেই তার দেহে সত্তর বছর পর্যন্ত বিষক্রিয়া থাকবে। অতঃপর তার গেশত ঝরে পড়বে। এ ছাড়া দোজখে আরো একটা হ্রদ আছে, যাকে দুঃখের হ্রদ বলা হয়। তাতে বহু সাপ ও বিষ্ণু বাস করে। প্রতিটি বিষ্ণু এক একটা খচ্চরের সমান। তার সত্তরটা হুল রয়েছে। প্রত্যেক হুল বিষে পরিপূর্ণ। সেই বিষ্ণু ব্যভিচারীকে দংশন করবে এবং তার সমস্ত বিষ তার দেহে ঢেলে দেবে। ফলে সে এক হাজার বছর পর্যন্ত বিষের যন্ত্রণা ভোগ করবে। অতঃপর তার গেশত খসে পড়বে এবং তার জননেন্দ্রিয় থেকে পুঁজ নোংরা তরল পদার্থ নির্গত হবে।

অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি কোন বিবাহিতা নারীর সাথে ব্যভিচার করবে সে ও উক্ত নারী কবরে সমগ্র মুসলিম উম্মাতের অর্ধেক আযাব ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার স্বামীকে তার সৎ কর্মের বিচারের দায়িত্ব অর্পণ করবেন এবং জিজ্ঞাসা করবেন যে, তার স্ত্রী যে কুকর্ম করেছে, সেটা সে জানতো কিনা। যদি জেনে থাকে এবং ঐ কুকর্ম ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দরজার ওপর এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রেখেছেন যে, দায়ূসের জন্য জান্নাত হারাম। দায়ূস হলো সেই ব্যক্তি, যার পরিবারে অশ্লীল কার্যকলাপ চলতে থাকে, অথচ সে তা জেনেও চুপ থাকে এবং বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ নেয় না।

হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন নিষিদ্ধ নারীকে খারাপ ইচ্ছা নিয়ে স্পর্শ করবে, কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে আসবে যে তার হাত তার ঘাড়ের সাথে যুক্ত থাকবে। সে যদি উক্ত নারীকে চুমু দিয়ে থাকে, তবে তার ঠোট দুটিকে আগুনের কাচি দিয়ে কাটা হবে। আর যদি তার সাথে ব্যভিচার করে থাকে তবে তার দুই উরু সাক্ষ্য দেবে যে, আমি অবৈধ কাজের জন্য আরোহণ করেছিলাম। আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাবেন। এতে সে অপমান বোধ করবে এবং গেয়ার্তুমি করে বলবে আমি করিনি। তখন তার জিহবা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। জিহবা বলবে! “আমি অবৈধ বিষয়ে কথা বলেছিলাম।” তার হাত সাক্ষ্য দেবে যে, “আমি অবৈধ জিনিস ধরেছিলাম।” অতঃপর চক্ষু বলবেঃ “আমি অবৈধ জিনিসের দিকে তাকাতাম।” তার পা দুখানা বলবেঃ “আমি অবৈধ জিনিসের দিকে গমন করতাম।” তার লজ্জাস্থান বলবেঃ “আমি ব্যভিচার করেছি।” প্রহরী ফেরেশতা বলবেঃ “আমি শুনেছি।” অপর ফেরেশতা বলবেঃ “আর আমি লিখেছি।” আর আল্লাহ তায়ালা বলবেন “আমি জেনেছি এবং লুকিয়ে রেখেছি। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা বলবেনঃ “হে ফেরেশতাগণ! ওকে পাকড়াও কর এবং আমার আযাব ভোগ করাও। কেননা যে। ব্যক্তির লজ্জা কমে যায় তার ওপর আমার ক্রোধ বেড়ে যায়।”

উল্লেখিত হাদীসের সত্যতা নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়ঃ

“যেদিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহবা, হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে যে তারা দুনিয়ার জীবনে কী করতো।” (সূরা আন্ নুর)

সবচেয়ে জঘন্য ধরনের ব্যভিচার হলো মুহাররম অর্থাৎ চিরনিষিদ্ধ নারীদের সাথে সংগম করা। এদের মধ্যে রয়েছে মা, খালা, বোন, মেয়ে ইত্যাদি। রাসূল (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মুহাররম নারীর সাথে ব্যভিচার করবে, তাকে তোমরা হত্যা কর।”

হযরত বারা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা) হযরত বারার মামাকে এই নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন যে, অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করে তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে এস। কেননা সে নিজের সৎ মাকে বিয়ে করেছিল।” (হাকেম)

মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই ঘৃণ্য মহাপাপ থেকে রক্ষা করুন। আর যারা এই পাপে লিপ্ত, তাদেরকে তওবা করার তওফীক দিন ও তাদেরকে ক্ষমা করুন।

ব্যভিচার প্রতিরোধে শরীয়তের ব্যবস্থা

মানব সমাজকে মিশ্র প্রজাতি থেকে মুক্ত রেখে সুস্থ ও নির্ভেজাল বংশীয় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য আল্লাহ ব্যভিচারকে হারাম করেছেন। আর এই ব্যভিচার প্রতিরোধে ইসলামী শরীয়ত পর্দা নামক এক বিস্তারিত বিধান দিয়েছে। এই বিধান অনুসারে নারীদেরকে সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে অনাবৃতভাবে ঘরের বাইরে বিচরণ, পুরুষদের সাথে বেপর্দাভাবে একত্রে শিক্ষা গ্রহণ ও কাজ করা, স্বামী স্ত্রী ব্যতীত অন্য যে কোন দুজন বয়স্ক নারী ও পুরুষের একত্রে নির্জনে অবস্থান করা, নারীদের গলার আওয়াজ বিনা-প্রয়োজনে ভিন্ন পুরুষকে গুনতে দেয়া, অশ্লীল গান, বাজনা ও অশ্লীল সাহিত্য, নাটক ও সিনেমা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষতঃ পুরুষ ও নারী উভয়কে পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি সংবরণ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আন নূরে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “মুমিন পুরুষদেরকে বলে দাও, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। … মুমিন নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে।”

এক হাদীসে আছেঃ “কোন বেগানা স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি দিলে কেয়ামতের দিন তার চোখে গলিত শীসা ঢালা হবে।” অপর হাদীসে আছেঃ “দৃষ্টি দেয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহবার যিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা এবং যিনার কল্পনা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয়া অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।” (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)

হাদীসে আরো আছেঃ দৃষ্টি হচ্ছে ইবলীসের একটি বিষাক্ত তীর। যে ব্যক্তি একে সংযত রাখবে, আল্লাহ তার মনকে ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ দান করবেন, যা সে কিয়ামত পর্যন্ত ভোগ করতে থাকবে।

মোদ্দাকথা, যে সব জিনিস ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করে, সেগুলিও ব্যভিচারের ন্যায় কবীরা গুনাহ। – অনুবাদক

.

১২. সমকাম ও যৌন বিকার

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের একাধিক জায়গায় হযরত লুত (আ) এর জাতির ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যেমন সূরা হুদে বলেনঃ

“অতঃপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো তখন আমি তাদের দেশটির উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ ওপরে ওঠালাম এবং তার ওপর পাকা পাথর (যা আগুনে পুড়ে ইটের মত হয়ে গেলো) অবিরাম ধারায় নিক্ষেপ করলাম। পাথরগুলি ছিল সুচিহ্নিত। (অর্থাৎ তাতে এমন অমিত ছিল যে, দেখলেই চেনা যেত যে, তা পৃথিবীর পাথর নয়।) ওগুলো তোমার প্রভুর কাছেই ছিল। (অর্থাৎ তাঁর সেই কোষাগারে ছিল, যার কোন কিছুই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ব্যবহৃত হয়না।) বস্তুতঃ এই শাস্তি অত্যাচারীদের কাছ থেকে দূরে নয়। (অর্থাৎ এই উম্মতের লোকেরাও যদি অনুরূপ ঘৃণ্য কাজ করে তাহলে তাদের যে শোচনীয় পরিণতি হয়েছিল তা এদেরও হবে।) ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ তোমাদের ওপর যে জিনিসটির সবচেয়ে বেশী আশংকা করি, তা হচ্ছে লুত এর জাতির জঘন্য কাজ। অতঃপর তিনি এই কাজে লিপ্তদেরকে তিনবার নিম্নরূপ অভিশাপ দেনঃ “লূতের জাতির কাজ যে করে তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত!” আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ “যাদেরকে তোমরা লূতের জাতির কাজে লিপ্ত পাও, তাদের দুজনকেই হত্যা কর।” হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ এলাকার সবচেয়ে উঁচু বাড়ীর ছাদের ওপর থেকে তাদেরকে ফেলে দিতে হবে এবং ফেলে দেয়ার সংগে সংগে তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করতে হবে, যেমন হযরত লুতের জাতির ওপর নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

মুসলমানদের মধ্যে এই ব্যাপারে ইজমা অর্থাৎ সর্বম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সমকাম একটা হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ। আল্লাহ বলেনঃ

“পৃথিবীতে তোমরা কেবল পুরুষদের কাছেই আস এবং তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালক যে জোড়া সৃষ্টি করেছেন তা ত্যাগ করা আসলে তোমরা সীমা অতিক্রমকারী (অর্থাৎ হালালের সীমা অতিক্রম করে হারামের সীমায় প্রবেশকারী) সূরা আশ শুয়ারা)

আল্লাহ তায়ালা অপর এক আয়াতে স্বীয় নবী হযরত লুত (আ) সম্পর্কে বলেনঃ “আর আমি তাকে সেই জনপদ থেকে রক্ষা করেছি, যে জনপদ অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। ঐ জনপদবাসীরা দুরাচারী পাপিষ্ঠ ছিল।” (সূরা আল আম্বিয়া)

তাদের ঐ জনপদের নাম ছিল সদোম। জনপদের অধিবাসীরা যে সব অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকতো, কুরআনে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারা পুরুষদের মল দ্বারে সংগম করতো এবং প্রকাশ্য সমাবেশ স্থলে নানা রকম পাপাচারে লিপ্ত হতো।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নিম্নোক্ত কাজগুলিকে লুত জাতির কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন ও মহিলাদের পুরুষদের মত ছোট করে এবং পুরুষদের মহিলাদের মত বড় করে চুল রাখা, জামার বোতাম খুলে রাখা, বন্দুক চালানো, পাথর নিক্ষেপ করা, উড়ন্ত কবুতর নিয়ে খেলা করা, আংগুল মুখে দিয়ে শিষ দেয়া, পায়ের গিরে ফোটানো, টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলানো, পোশাকের নিম্নাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে খোলা রাখা, মদ খাওয়া, পুরুষের সাথে পুরুষের এবং নারীর সাথে নারীর সংগম। (উল্লেখ্য যে, হযরত ইবনে আব্বাস এ কাজগুলিকে লূত জাতির কাজ বলে এটাই বুঝিয়েছেন যে, তারাই এগুলির প্রথম উদগাতা। এগুলির মধ্যে বন্দুক চালানো ছাড়া আর সব কয়টি সর্বসম্মতভাবে অবৈধ কিংবা অশালীন কাজ। বন্দুক চালানোর কাজটিও নিয়মিত সরকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিশেষ আত্মরক্ষার প্রয়োজন ব্যতীত অনুমোদনযোগ্য নয়। = অনুবাদক)।

তাবারানীতে উদ্ধৃত এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ নারীদের পারস্পরিক সংগম ব্যভিচারের শামিল। তাবারানী ও বাইহাকীতে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ চার ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর গযব ও আক্রোশের আওতায় থাকে। মহিলাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ব বেশভূষা গ্রহণকারী পুরুষ, পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণকারী মহিলা, জীবজন্তুর সাথে সংগমকারী এবং সমকামী। অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “যখন কোন পুরুষ অপর পুরুষে উপগত হয়, তখন আল্লাহর গযবের ভয়ে আল্লাহর আরশ কাঁপতে থাকে এবং আকাশ পৃথিবীর ওপর ভেংগে পড়ার উপক্রম হয়। ফেরেশতারা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হওয়া পর্যন্ত আকাশকে তার প্রান্তসীমায় ধরে রাখে এবং সূরা ইখলাস পড়তে থাকে।”

রাসূল (সা) বলেনঃ সাত ব্যক্তির ওপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশের আদেশ দেবেনঃ সমকামীদের, জীবজন্তুর সাথে সংগমকারী, কোন মহিলা ও তার কন্যাকে এক সাথে বিবাহকারী, এবং হস্তমৈথুনকারী। তবে তওবা করলে তারা সবাই ক্ষমা পেতে পারে।”

আরো বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন এক শ্রেণীর লোক এমনভাবে উত্থিত হবে যে, তাদের হাত ব্যভিচারের ফলে অন্তসত্তা থাকবে। দুনিয়ার জীবনে তারা হস্তমৈথুন করত।” অপর এক হাদীসে আছে যে, দাবা ও পাশা জাতীয় খেলা, কবুতরের লড়াই, কুকুরের লড়াই, মেষ লড়াই, মোরগ লড়াই, পোশাক না নিয়ে গেসল খানায় প্রবেশ, এবং মাপে কম দেয়া-এ সব লুত এর জাতির কাজ। এ সব কাজ যারা করবে, তাদের কঠোর শাস্তি অবধরিত।”

হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত যে, কোন সমকামী বিনা তওবায় মারা গেলে কবরে শুকরের আকৃতি প্রাপ্ত হবে।

তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে আব্বাসে আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন পুরুষ বা নারীর মল দ্বারে সংগম করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দিকে তাকাবেন না।

কামভাবাপন্ন দৃষ্টিতে কোন স্ত্রীলোকের প্রতি বা কোন সুদর্শন যুবকের প্রতি তাকানোও একইভাবে ব্যভিচারের শামিল। কেননা ইতিপূর্বে এই মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, কু-দৃষ্টি চোখের যিনা। জনৈক আরব কবি বলেছেনঃ

“সকল ঘটনার সূচনা হয় দৃষ্টি থেকেই, যেমন ক্ষুদ্র স্ফুলিংগ থেকে বড় বড় অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকে।”

বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকরের নির্দেশে হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ জনৈক পেশাদার সমকামীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।

আরো বর্ণিত আছে যে, একবার আব্দুল কায়েস গেত্রের একটি প্রতিনিধিদল রাসূল (সা) এর নিকট এলো। তাদের ভেতরে এক দাড়ি গেপহীন কিশোরও ছিল। রাসূল (সা) কিশোরকে নিজের পেছনের দিকে বসালেন এবং বললেনঃ দৃষ্টির কারণেই হযরত দাউদ (আ) দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন।

একবার হযরত সুফিয়ান সাওরীর নিকট এক কিশোর এলো। তিনি চিৎকার করে বললেনঃ একে আমার সামনে থেকে সরাও। কারণ আমি স্ত্রীলোকদের সাথে একজন করে শয়তান দেখি, আর কিশোরদের সাথে দেখি দশজনেরও বেশী সংখ্যক শয়তান।

একবার হযরত ঈসা (আ) কোথাও যাওয়ার সময় পথিমধ্যে এক ব্যক্তিকে আগুনে দগ্ধীভূত হতে দেখলেন। তা দেখে তিনি পানি এনে আগুন নেভাতেই আগুন একটি কিশোরে পরিণত হলো। আর লোকটি পরিণত হলো আগুনে। হযরত ঈসা (আ) দোয়া করলেনঃ হে আল্লাহ! এদের উভয়কে আসল অবস্থায় ফিরিয়ে নাও আমি তাদেরকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করবো। আল্লাহ তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করলে দেখা গেল, একজন এক বয়স্ক পুরুষ এবং অপরজন একটি কিশোর। হযরত ঈসা (আ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাদের কী হয়েছিল? লোকটি বললোঃ হে রুহুল্লাহ! আমি এই কিশোরের প্রেমে পড়ে তার সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয়েছিলাম। পরে আমাদের উভয়ের মৃত্যুর পর আল্লাহ আমাদেরকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছেন যে, আমি কিছুক্ষণ আগুন হয়ে ছেলেটাকে পোড়াই। আবার কিছুক্ষণ পর ছেলেটা আগুন হয়ে আমাকে পোড়ায়। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।”

উল্লেখ্য যে, নিজের স্ত্রীর সাথে মল দ্বারে সংগম করা অথবা ঋতুবতী অবস্থায় সংগম করাও হারাম ব্যভিচারের শামিল। কেননা, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর সাথে ঋতুবর্তী অবস্থায় সংগম করে অথবা পশ্চাদ দ্বারে সংগম করে সে অভিশপ্ত।”

আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে এই মহাপাপ থেকে রক্ষা করুন।

.

১৩. সুদের আদান প্রদান

মহান আল্লাহ বলেনঃ”হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেলনা। আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায় যে, তোমরা সাফল্য লাভ করবে।” (সূরা আলে ইমরান) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “যারা সুদ খায় তারা কেবল সেই ব্যক্তির মত দাঁড়ায় যাকে শয়তান নিজের স্পর্শ দ্বার উন্মাদ বানিয়ে দিয়েছে।” (অর্থাৎ তারা কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠবার সময় শয়তানের স্পর্শে উন্মাদ হয়ে যাওয়া মানুষের মত উঠবে।)” এর কারণ এইযে, তারা বলতো ব্যবসা তো সুদেরই মত! অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা আল-বাকারা)

অর্থাৎ আল্লাহ যে জিনিস হারাম করেছেন তাকে তারা হালাল মনে করে নিয়েছে। অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন মানব জাতিকে পুনরুত্থিত করবেন, তখন সবাই কবর থেকে উঠে দ্রুত বেগে দৌড়াতে থাকবে। কিন্তু সুদখোররা তা পারবেনা। তারা মাতাল ব্যক্তির ন্যায় একবার উঠবে একবার পড়বে। যখনই উঠবে, অমনি পড়ে যাবে। কেননা তারা দুনিয়ায় নিষিদ্ধ সুদ খেয়েছিল। আর সেই হারাম খাদ্যকে আল্লাহ পেটের ভেতর বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এভাবে কিয়ামতের দিন তাদেরকে এত ভারী করে দেবেন যে, তারা যখনই উঠতে যাবে পড়ে যাবে। অন্য সবার সাথে তাল মিলিয়ে তারাও দৌড়াতে চাইবে কিন্তু পারবেনা।

ইমাম কাতাদা (রহ) বলেনঃ সুদখোর কিয়ামতের দিন উন্মাদ অবস্থায় পুনরুথিত হবে। এই উন্মাদ অবস্থা সুদখুরীর আলামত হিসাবে কিয়ামতের মাঠে সকলের কাছে পরিচিত থাকবে।

ইমাম বায়হাকী, ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতেম হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল (সা) বলেছেনঃ মিরাজের রাত্রে আমাকে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এমন একদল লোকের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদের পেট এক একটি ঘরের মত প্রকান্ড। অত বড় পেট নিয়ে তারা ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেনা। ফলে তারা চলতে গিয়ে নিজেদের পথ ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। যে পথ দিয়ে ফেরাউন ও তার দলবলকে সকাল বিকাল দোজখের কাছে নেয়া হয়, ঐ লোকগুলি এক একবার সেই পথের ওপর চলে আসে এবং নির্বোধ ও শ্রবণশক্তিহীন বিপথগামী উটের মত চলতে থাকে। এই বড় ভুড়ি ওয়ালা লোকগুলো যখন টের পায় যে, ফিরাউন ও তার দলবলকে আনা হচ্ছে, তখন তারা উঠি পড়ি করে পালাতে চায়। কিন্তু পেট নিয়ে নড়তে না পারায় তারা রাস্তা ছেড়ে সরে যেতে পারেনা। ফলে ফিরআউন ও তার দলবল এসে তাদের ওপর চড়াও হয় এবং একবার পেছনের দিকে ও আরেকবার সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় ও নিয়ে আসে। কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত তারা এভাবে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। রাসূল (সা) বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওহে জিবরীল, এরা কারা? তিনি বললেনঃ ওরা সুদখোর, যাত্রা শয়তানের স্পর্শে উন্মাদ হয়ে যাওয়া লোকের মত চলে।”

ইমাম আহমাদ বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ মিরাজের রাত্রে আমি আমার মাথার ওপরে সপ্তম আকাশে প্রচন্ড তর্জন গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে তাকালে দেখলাম, সেখানে কিছু লোক রয়েছে, যাদের ভূড়ি তাদের সামনে বেরিয়ে আছে। ভুড়িগুলো বড় বড় এক একটা ঘরের মত। সেই সব ঘরে হাজার হাজার সাপ ও বিন্দু। এ সব পেটের বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জিবরীল বললেনঃ ওরা সুদখোর।

হযরত ইবনে আব্বাস থেকে আবু ইয়ালা ও হাকেম কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ কোন জাতি যখন ব্যভিচার ও সুদে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করার অনুমতি দেন। আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত যে, কোন জাতি যখন কৃপণতা করতে থাকে। সুদের ভিত্তিতে কায়কারবার চালাতে থাকে। ষাড়ের দৌড়ের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করে, তখন আলাহ তায়ালা তাদের ওপর এমন দুর্যোগ নামান যে, তারা দীনের পথে ফিরে না আসা পর্যন্ত তা থেকে আর নিষ্কৃতি পায়না।

ইবনে মাজাহ, বাযয, বায়হাকী ও হাকেম বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “কোন সমাজে সুদের প্রচলন হলে সেখানে পাগলের লংখ্যা বেড়ে যাবে, ব্যভিচারের প্রচলন হলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে এবং মাপে কম দেয়ার প্রথা চালু হলে আল্লাহ তায়ালা সেখানে বৃষ্টি বন্ধ করে দেবেন। এটা অবধারিত।”

সহীহ আল-বুখারীতে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সুদখোর মৃত্যু পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত রক্তে পরিপূর্ণ লাল নদীতে সাঁতার কেটে আযাব ভোগ করতে থাকবে এবং তাকে পাথর গেলানো হতে থাকবে। এ নদী হচ্ছে তার দুনিয়ায় উপার্জিত হারাম সম্পদ যার মধ্যে তাকে হাবুডুবু খেতে বাধ্য করা হবে। আর যে আগুনের পাথর তাকে গেলানো হবে তাহলে তার হারাম খাদ্য খাওয়ার শান্তি। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এই শাস্তি দেয়া হবে এবং সেই সাথে তার ওপর অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকবে। অপর এক বিশুদ্ধ হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ চার ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করতে না দেয়াকে আল্লাহ তায়ালা নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন। তারা হলোঃ মদখোর, সুদখোর, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাতকারী এবং পিতামাতার প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলাকারী- যতক্ষণ না তারা তাওবাহ করে।”

হাদীসে আরো বর্ণিত আছে যে, একদল ইহুদী যেমন শনিবারে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকা সত্তেও চক্রান্ত করে সমুদ্রের কিনারে বড় বড় গর্ত খুড়ে রাখতো, শনিবারে সেই গর্তে মাছ পড়ে থাকতো এবং রবিবারে তারা তা ধরে আনতো এবং এই চক্রান্তের শান্তি স্বরূপ আল্লাহ যেমন তাদেরকে বাঁদর ও শুকর বানিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি সোজা পথে সুদ খেতে না পেরে যারা নানা রকমের ছলছুতো ও ধোকার মাধ্যমে সুদ খায়, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কিয়ামতের দিন বাঁদর ও শুকর বানিয়ে ওঠাবেন। কেননা তাদের কোন ফন্দিফিকির ও ধোকাবাজী আল্লাহ তায়ালার কাছে গেপন থাকবেনা। বিশিষ্ট তারেয়ী আইয়ূব সাখতিয়ানী বলেছেনঃ একটি শিশুকে যেমন ধোকা দেয়া হয়, সুদখোররা তেমনি আল্লাহ তায়ালাকে থোকা দিতে চায়। তা না করে তারা যদি সোজা পথে সুদ খেত, তাহলে হয়তো তাদের আযাব কিছু হালকা হতো।

তাবরানী, ইবনে মাজাহ ও বায়হাকীতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ সুদের ৭০টি গুনাহ। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহটি হলো আপন মাকে বিয়ে করার গুনাহর সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য সুদ হলো, সুদের পাওনা আদায় করতে গিয়ে কোন মুসলমানের সম্ভম নষ্ট করা বা তার সম্পত্তি জবর দখল করা।

বায়হাকী বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ কোন সুদখোর যদি এক দিরহাম পরিমাণও সুদ আদায় করে তবে তার গুনাহ ৩৬ বার ব্যভিচার করার সমান।

ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ সুদের ৭০টি গুনাহ। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ হচ্ছে আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করার সমান। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সা) ৭টি গুনাহকে “সর্বনাশা গুনাহ”নামে আখ্যায়িত করেছেন ও তা থেকে আত্মরক্ষা করতে বলেছেন। এই সাতটির মধ্যে সুদ খাওয়া অন্যতম।

রাসূল (সা) আরো বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সুদখোর, সুদ দাতা, সুদের সাক্ষী, সুদের লেখক-সকলের ওপরই অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম ও সুনানুত্ তিরমিযী)

হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেনঃ কোন ব্যক্তির কাছে যদি তোমার কোন ঋণ প্রাপ্য থেকে থাকে এবং সে যদি কোন উপহার পাঠায় তবে তা গ্রহণ করোনা। কেননা সেটা সুদ। হযরত হাসান বসরী বলেনঃ তোমার কাছে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে যদি তুমি কিছু খাও তবে তা সুদ।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ঋণ থেকে কোন লাভ পাওয়া যায় তা সুদ। সুনানু আবু দাউদে বর্ণিত যে রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করলো, অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাকে কোন উপহার পাঠালো এবং সুপারিশকারী তা গ্রহণ করলো, সে একটি গুরুতর ধরনের সুদের কারবার করলো।

.

১৪. ইয়াতীমের (পিতৃহারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকা) সম্পত্তি আত্মসাত করা ও তার ওপর জুলুম করা

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ “নিশ্চয় যারা ইয়াতীমদের সম্পত্তি অন্যায়াবে খায়, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছু ঢুকায়না। অচিরেই তারা জাহান্নামে জ্বলবে।” আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেনঃ “তোমরা ইয়াতীমের সম্পত্তির কাছেও যেয়না। তবে সর্বোত্তম পন্থায় তাদের বয়োপ্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত তদারকী করতে পার।”

সহীহ মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত যে রাসূল (সা) বলেছেনঃ মিরাজের রাত্রে আমি এমন কিছু লোককে দেখলাম, যাদের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে অপর কতক লোক। যারা তাদের দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা ঐ লোকদের মুখের চোয়াল খুলে হা করাচ্ছে, আর অপর কয়েকজন জাহান্নাম থেকে আস্ত আস্ত পাথরের টুকরো এনে তাদের গলায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সংগে সংগে পাথরগুলো তাদের মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে জিবরীল। এরা কারা? তিনি বললেনঃ যারা ইয়াতীমের সম্পত্তি আত্মসাত করে তারা। তারা কেবল আগুনই খেয়ে থাকে।

হযরত আবু হুরাইরাহ বর্ণনা করেন যে রাসূল (সা) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা কিছু লোককে এমন অবস্থায় কবর থেকে ওঠাবেন যে, তাদের পেট থেকে আগুন বেরুবে এবং তাদের মুখ থেকে আগুনের উলীরন হবে। জিজ্ঞাসা করা হলো যে, হে রাসূল! ওরা কারা? রাসূল (সা) বললেনঃ আল্লাহ তায়ালার এ কথাটা তুমি, পড়নি যে, “যারা ইয়াতীমদের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে আত্মসাত করে তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছু ভক্ষণ করেনা?”

ইমাম সুদ্দী (রহ) বলেনঃ অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পত্তি আত্মসাতকারী যখন কিয়ামতের মাঠে সমবেত হবে, তখন তার মুখ, নাক, কান ও চোখ দিয়ে আগুন বেরুতে থাকবে। তাকে যে-ই দেখবে সে চিনবে যে, এ ব্যক্তি ইয়াতীমের সম্পত্তি গ্রাসকারী।

অভিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেনঃ ইয়াতীমের অভিভাবক যদি দরিদ্র হয় এবং সে তার স্বার্থ দেখাশুনা ও তার সম্পত্তি উন্নতি ও প্রকৃতির কাজে নিয়োজিত থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন এবং যে পরিমাণ গ্রহণ করা সমকালীন সমাজে প্রচলিত ও ন্যায়সংগত ততটুকু গ্রহণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশী গ্রহণ করলেই তা অবৈধ ও হারাম হবে। আল্লাহ তায়ালা ইয়াতীমের অভিভাবক সম্পর্কে বলেনঃ

“যে ধনী, সে যেন সংযত থাকে। আর যে দরিদ্র, সে যেন ন্যাসংগত পরিমাণে ভক্ষণ করে।”

এই ন্যায়সংগত পরিমাণটা কি, সে সম্পর্কে একাধিক মতামত রয়েছে। প্রথম মত এই যে, এটা ঋণ হিসাবে বিবেচিত হবে। দ্বিতীয় মত এইযে, যতটুকু তার জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজন ততটুকু ভক্ষণ করা যাবে এবং মোটেই অপচয় বা অপব্যয় করা চলবেনা। তৃতীয় মত এই যে, অভিভাবক শুধু তখনই পারিশ্রমিক নিতে পারবে যখন সে ইয়াতীমের জন্য কোন কাজ করে এবং ঐ কাজের পরিমাণের সাথে সংগতি রেখেই নিতে পারবে। চতুর্থ মত এই যে, সে যখন তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে কেবল তখনই নিতে পারবে। সচ্ছল হলে নেবে না। আর সচ্ছল না হলে নিতে পারবে। এই চারটি মত আল্লামা ইবনুল জাওযী স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন।

সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “আমি ও ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী জান্নাতে এভাবে থাকবো।” এই বলে তিনি হাতের দুই আঙ্গুল একত্রিত করেন। সহীহ মুসলিমে আছে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ “ইয়াতীম চাই সে আপন হোক বা পর হোক তার ভরণপোষণকারী ও আমি জান্নাতে এই দুই আঙ্গুলের মত থাকবো।” এই বলে তিনি দুটি আঙ্গুল দেখান। ইয়াতীমের ভরণপোষণ বলতে বুঝায় তার দায়দায়িত্ব বহন করা, তার ধনসম্পদ থেকে থাকলে তা থেকে তার খাদ্য ও পোষাক ইত্যাদির ব্যবস্থা করা এবং ঐ সম্পদ যাতে উত্তরোত্তর বাড়ে তার ব্যবস্থা করা। আর যদি তার কোন সম্পদ না থেকে থাকে, তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের সম্পদ থেকে তার ভরণপোষণ করা। হাদীসে যে “আপন ও পর” কথাটা বলা হয়েছে তার অর্থ এই যে, সে আত্মীয় হোক কিংবা কোন অপরিচিত কেউ থোক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অভিভাবক তার দাদা, ভাই, মা, চাচা, মায়ের পরবর্তী স্বামী, মামা, অথবা অন্য কোন আত্মীয় হলে সে তার আপনজন। নচেত সে পর।

তিরমিযী শরীফে আছে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ইয়াতীম শিশুকে নিজের পানাহারের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় এবং উক্ত ইয়াতীমকে আল্লাহ সচ্ছল ও স্বাবলম্বী না করা পর্যন্ত এভাবে রাখে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবধারিত করবেন। তবে ক্ষমার অযোগ্য কোন গুনাহ করলে তার কথা স্বতন্ত্র। মুসনাদে আহমাদে আছে, রাসূল (সা) বলেছেন : আল্লাহ ছাড়া যে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানোর আর কেউ নেই, সেই ইয়াতীমের মাথায় যে হাত বুলায়, তার হাতের পরশ পাওয়া প্রতিটি চুলের বদলায় সে এক একটি পুণ্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি কোন ইয়াতীমের প্রতি সদ্ব্যবহার করে, সে আর আমি এভাবে (একত্রে) জান্নাতে থাকবো।”

এক ব্যক্তি হযরত আবুদারদাকে (রা) বললো আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ ইয়াতীমের প্রতি দয়ার্দ হও, তাকে কাছে টেনে নাও এবং নিজের খাদ্য থেকে তাকে খাওয়াও। কেননা একবার এক ব্যক্তি রাসূলকে (সা) জানালো যে, তার হৃদয় খুবই কঠিন। তখন রাসূল (সা) তাকে বললেন ! তুমি যদি চাও যে তোমার হৃদয় কোমল হোক, তাহলে ইয়াতীমকে নিজের নিকটবর্তী কর, তার মাথায় হাত বুলাও এবং নিজের খাদ্য থেকে তাকে খাওয়াও। এসব করলে তোমার হৃদয় কোমল হয়ে যাবে এবং তোমার সকল প্রয়োজন মিটে যাবে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগের জনৈক মহাপুরুষ বলেনঃ আমি প্রথম যৌবনে মদ্যপান ও নানা ধরনের পাপাচারে লিপ্ত ছিলাম। এই সময়ে একদিন পথিপাশে একটি অনাথ ইয়াতীম বালককে দেখতে পেয়ে তাকে বাড়ীতে নিয়ে এলাম এবং তাকে পুত্রবৎ আদর যত্ন সহকারে গেছল করিয়ে ভালো পোশাক পরিয়ে আহার করালাম।

এরপর রাত্রে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখি যেন কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে এবং আমাকে হিসাব নিকাশের জন্য ডাকা হয়েছে। হিসাব নিকাশের পর আমাকে আমার পাপকর্মের শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যখন জাহান্নামের ফেরেশতারা আমাকে চরম লাঞ্ছিত ও অসহায় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপের জন্য টানাহেচড়া শুরু করেছে, তখন সহসা দেখি, সেই ইয়াতীম ছেলেটি সামনে এসে আমাদের পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। সে বললোঃ হে ফেরেশতাগণ! ওঁকে ছেড়ে দাও। আমি আমার প্রভুর নিকট ঔর জন্য সুপারিশ করবো। কারণ উনি আমার অনেক উপকার করেছেন। ফেরেশতারা বললেনঃ আমাদেরকে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি। এই সময় হঠাৎ একটি গায়েবী আওয়ায় এলো। মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীন বলছেনঃ ওহে ফেরেশতারা! তোমরা ওকে ছেড়ে দাও। কেননা সে ইয়াতীমের প্রতি সদ্ব্যবহার করার কারণে আমি উক্ত ইয়াতীমকে তার জন্য সুপারিশ করার অধিকার দিয়েছি। তিনি বলেন, এই সময় আমার ঘুম ভেংগে গেল। আমি যে সমস্ত পাপকাজে তখনো লিপ্ত ও অভ্যস্ত ছিলাম, সেই সমুদয় পাপাচার থেকে তাওবাহ করলাম। অতঃপর ইয়াতীমদের সেবায় আমার সর্বাত্মক চেষ্টা নিয়োজিত করলাম।

বস্তুতঃ এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম আনাস (রা) মালেক বলেনঃ যে বাড়ীতে ইয়াতীমের যত্ন নেয়া হয় তা সর্বশ্রেষ্ঠ বাড়ী। আর যে বাড়ীতে কোন ইয়াতীমের ওপর উৎপীড়ন চলে, তা সবচেয়ে খারাপ বাড়ী। আর যে বান্দা, কোন ইয়াতীম বা বিধবার উপকার ও সেবা করে সে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়তম বান্দা।

বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা হযরত দাউদকে (আ) ওহির মারফত বলেছিলেন : হে দাউদ ইয়াতীমের জন্য দরদী পিতার মত হয়ে যাও। আর বিধবার জন্য স্নেহময় স্বামীর মত হয়ে যাও। আর জেনে রাখ যে, যেমন বীজ তুমি বপন করবে, তেমনই ফসল পাবে। অর্থাৎ তুমি অন্যের সাথে যেমন আচরণ করবে তোমার মৃত্যুর পর তোমার ইয়াতীম সন্তান ও বিধবা স্ত্রীর সাথেও তেমনি আচরণ করা হবে। দাউদ (আ) মুনাজাতে বলেছিলেনঃ হে আমার মনিব! যে ব্যক্তি তোমার সন্তুষ্টির জন্য ইয়াতীম ও বিধবাকে সাহায্য করে, তার প্রতিদান কিরূপ? আল্লাহ তায়ালা জবাব দিলেনঃ কিয়ামতের দিন যখন আমার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবেনা, সেই দিন তাকে আরশের ছায়ার নিচে রাখবে।

ইয়াতীম ও বিধবার সেবার মাহাত্ম্য সম্পর্কে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে, একবার জনৈক অনারব মুসলমান সপরিবারে হিজরত করে বলখে উপনীত হন। তারা প্রথমে খুবই সচ্ছল ও সুখী ছিলেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে স্বামী মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী ও ইয়াতীম ছেলেমেয়েরা দারিদ্রের কবলে পড়েন। বিধবা মহিলা নিজের দৈন্য দশা ঘুচানো ও শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীদের ব্যংগবিদ্রুপ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অন্য একটি শহরে চলে গেলেন। একটি পরিত্যক্ত মসজিদে ছেলেমেয়েদেরকে রেখে মহিলা তাদের জন্য খাদ্যের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন। এই সময়ে দুইজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাত হয়। একজন ছিলেন স্থানীয় মুসলমান এবং শহরের মেয়র। অপরজন অগ্নি উপাসক এবং শহরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তিনি প্রথমে শহরের মেয়রের কাছে নিজের দুর্দশার নিম্নরূপ বর্ণনা দিলেনঃ আমি একজন মুসলিম বিধবা মহিলা। আমার কয়েকটি ইয়াতীম ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদেরকে একটি পরিত্যক্ত মসজিদে রেখে এসেছি। আজকের রাতের জন্য তাদের খাদ্য অন্বেষণ করছি। মেয়র বললেনঃ তুমি আগে প্রমাণ কর যে, তুমি একজন মুসলিম সতীসাধবী মহিলা। মহিলা বললেনঃ আমি বিদেশিনী। এখানে আমাকে কেউ চেনেনা। এ কথা শুনে মেয়র তাকে উপেক্ষা করে চলে গেল। মহিলা তার কাছ থেকে ভগ্ন মনে বিদায় নিয়ে অগ্নি উপাসক নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত হলেন এবং তাকে তার সমস্ত কথা খুলে বললেন। তিনি মুসলিম মেয়রের সাথে তার সাক্ষাতের বিবরণও তাকে শোনালেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে বাড়ীর ভেতর গিয়ে এক মহিলাকে পাঠালেন এবং উক্ত মহিলার মাধ্যমে আগন্তুক মহিলা ও তার ছেলেমেয়েদেরকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে এলেন। অতঃপর তাদেরকে পরম তৃপ্তি সহকারে আহার করালেন, উত্তম পোশাক পরালেন এবং রাত্রের জন্য সসম্মানে থাকার ব্যবস্থা করলেন।

রাত দুপুরের দিকে মুসলিম মেয়র স্বপ্নে দেখলেন যেন কিয়ামত শুরু হয়েছে এবং সবুজ যমরুদ পাথরের তৈরী একটি প্রাসাদোপম ভবনের সামনে পতাকা হাতে স্বয়ং রাসূল (সা) দাঁড়িয়ে আছেন। মেয়র জিজ্ঞাসা করলোঃ হে রাসূল! এই প্রাসাদটি কার? তিনি বললেনঃ আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী একজন মুসলিম নেতার। সে বললোঃ আমি তো আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী একজন মুসলিম নেতা। রাসূল (সা) বললেনঃ আগে প্রমাণ দাও যে, তুমি একজন তাওহীদবাদী সত্যিকার মুসলমান। এ কথা শুনে সে হতচকিত হয়ে গেল। রাসূল (সা) পুনরায় বললেনঃ রাত্রে জনৈকা মহিলা যখন নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে সাহায্য চেয়েছিল। তুমি বলেছিলে যে, আগে প্রমাণ দাও যে তুমি মুসলমান। তেমনি তোমাকেও এখন প্রমাণ দিতে হবে যে তুমি একজন মুসলমান।

এই স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠে মেয়র অস্থির হয়ে পড়লো এবং চারদিকে লোক পাঠিয়ে উক্ত মহিলার অনুসন্ধান চালাতে লাগলো। অবশেষে সে জানতে পারলো যে, মহিলা উক্ত অগ্নি উপাসক নিরাপত্তা কর্মকর্তার বাড়ীতে আছে। সে সেখানে গিয়ে তাকে বললোঃ যে মুসলিম মহিলা তার সন্তানদের নিয়ে তোমার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে, তাকে পাঠাও। সে বললোঃ আমি তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বিপুল কল্যাণ ও বরকত লাভ করেছি। সুতরাং তাকে আমি বিদায় করতে পারবোনা। মেয়র বললোঃ আমি এক হাজার দীনার দিচ্ছি। তুমি তাদেরকে আমার হাতে সোপর্দ কর। সে বললো : না, সেটা আমার দ্বারা অসম্ভব। সে আরো বললোঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার জন্য বিরাট প্রাসাদ তৈরী হয়ে আছে আমরা তাই সপরিবারে এই মুসলিম মহিলার নিকট ইসলাম গ্রহণ করেছি। এই জন্য সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইয়াতীম ও বিধবাদের কল্যাণের জন্য সচেষ্ট থাকে, সে আল্লাহর পথে জিহাদকারীর সমতুল্য। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে হয়, রাসূল (সা) এ কথাও বলেছেন যে, সে ব্যক্তি অবিরাম নামায ও রোযা পালনকারীর সমতুল্য।

.

১৫. আল্লাহ ও রাসূলের ওপর মিথ্যা আরোপ করা

সূরা আ-যুমারে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ”যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করেছে, তুমি কিয়ামতের দিন তাদের মুখ কালো দেখবে।” হাসান বসরী বলেনঃ আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর মিথ্যা আরোপকারী হচ্ছে তারাই, যারা বলেঃ আমরা ইচ্ছা হলে অমুক কাজ করবে, না হলে করবোনা। এতে আমাদের কোন শাস্তি হবেনা। আল্লামা ইবনুল জাওযী স্বীয় তাফসীরে বলেনঃ আলেমদের একটি দলের অভিমত এইযে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে তো মানুষ পুরোপুরি কাফের ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে আল্লাহর হারাম করা জিনিসকে হালাল এবং হালাল করা জিনিসকে হারাম ঠাওরানো নির্জলা কুফরী কাজ। তাকে নিছক কবীরা গুনাহ বলা চলেনা। কাজেই আল্লাহ ও রাসূলের ওপর মিথ্যা আরোপ করা নিশ্চয়ই এই জাতীয় অপবাদ আরোপ থেকে ভিন্ন ধরনের কিছু হবে।

সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেন যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান করে নেয়। সহীহ মুসলিমের আরেকটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে কোন হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে তা মিথ্যা, সে একজন মিথুক।

সহীহ মুসলিমের অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ আমার ওপর মিথ্যা আরোপ করা অন্যদের ওপর মিথ্যা আরোপ করার মত নয়। আমার ওপর যে মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামে নিজের বাসস্থান করে নেয়। রাসূল (সা) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার উক্তি বলে কোন কথা প্রচার করে অথচ সেই কথাটা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নেয়। রাসূল (সা) আরো বলেনঃ মুমিনের স্বভাবের মধ্যে আর যত দোষই থাক, থাকতে পারে। কিন্তু মিথ্যাচার ও খিয়ানত, বিশ্বসঘাতকতা ও অন্যের গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাত করা তার মধ্যে থাকতে পারেনা।

.

১৬. যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন

“শত্রুবাহিনী যখন মুসলিম বাহিনীর দ্বিগুণের চেয়ে বেশী না হয়, তখন তাদের মুকাবিলা থেকে পলায়ন করা কবীরা গুনাহ। তবে রণকৌশল হিসাবে কিংবা মুজাহিদের কোন দল বা তাদের সমগ্র বাহিনীর সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্যে পলায়ন করলে সেটা কবীরা গুনাহ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

“যে ব্যক্তি যুদ্ধের দিন শত্রুদের মুকাবিলা থেকে পালাবে, সে আল্লাহর গযবে পতিত হবে এবং তার প্রত্যাবর্তন স্থল হবে জাহান্নাম। আর তা বড়ই জঘন্য জায়গা। তবে যদি কেউ রণকৌশল হিসাবে অথবা কোন সেনাদলের সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্যে পলায়ন করে তবে সেটা ভিন্ন কথা। “(আল আনফাল)

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুমলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে যে সাতটি সর্বনাশা কবীরা গুনাহর উল্লেখ করা হয়েছে, রণাংগন থেকে পলায়ন তার অন্যতম।

হযরত ইবনে আব্বাস বলেনঃযখন এই আয়াত নাযিল হলো যে, তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন ধৈর্যশীল ব্যক্তি তৈরী হয়, তবে তারা দুইশো জনের ওপর বিজয়ী হবে” তখন আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিলেন যে, মুসলিম বাহিনীতে যদি বিশজন থাকে এবং শত্রুবাহিনীতে দুইশো জন থাকে, তাহলে মুসলিম বাহিনীর কেউ পালাতে পারবেনা। এরপর এ আয়াত নাযিল হলো যে, “এখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দায়িত্বের বোঝা হালকা করে দিয়েছেন এবং তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কিছু দুর্বল লোক রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি একশো জন ধৈর্যশীল ব্যক্তি থাকে, তবে তারা দুইশো জনের ওপর বিজয়ী হবে আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আল্লাহ তো ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন।” এই শেষোক্ত আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিলেন যে, মুসলিম বাহিনীতে যখন একশো এবং শত্রু বাহিনীতে দুইশো যোদ্ধা থাকবে, তখন মুসলমানদের পলায়ন নিষিদ্ধ। (সহীহ আল বুখারী)

এর অর্থ দাড়ালো এই যে, শক্রদের শক্তি যেখানে মুসলমানদের দ্বিগুণেরও বেশী, সেখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া জরুরী নয় এবং কোন না কোন পন্থায় যুদ্ধ বিরতি বা সন্ধি করা জায়েজ।— অনুবাদক

.

১৭. শাসক কর্তৃক শাসিতের ওপর যুলুম ও প্রতারণা এবং তার সমর্থন ও সহযোগিতা করা

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ একমাত্র সেই সব লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শান্তি।” (সূরা আশ শুরা)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “তুমি কখনো ভেবনা যে, আল্লাহ অত্যাচরীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে উদাসীন। তিনি তো তাদের বিচার শুধুমাত্র এমন একটি দিন পর্যন্ত বিলম্বিত করছেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফারিত হবে, লোকেরা মাথা নত করে ছুটতে থাকবে, নিজেদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরবেনা এবং তাদের হৃদয়গুলো থাকবে শূন্য।” (সূরা ইবরাম)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ”যারা অত্যাচার চালিয়েছে, তারা অচিরেই জানতে পারবে তারা কী পরিণতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।” (আশ শুরা)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “তারা নিজেদের কৃত অপকর্ম থেকে পরস্পরকে নিষেধ করতো না। এটা ছিল তাদের জঘন্যতম আচরণ।” (আল মায়েদা)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”(সহীহ মুসলিম) রাসুল (সা) আরো বলেনঃ কিয়ামতের দিন যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে’আত তিরমিযী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ “তোমাদের প্রত্যেক শাসক এবং প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করা হবে কিভাবে শাসন করেছ।” (সহীহ আল বুখারী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ যে শাসকই তার প্রজাকে ধোকা দেবে সে জাহান্নামবাসী হবে। (তাবরানী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃআল্লাহ যার শাসনাধীন কিছু প্রজাকে ন্যস্ত করেছেন, অতঃপর সে তার হিত কামনা দ্বারা তাদেরকে উপকৃত করেনা, তার ওপর আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দেবেন। (সহীহ আল বুখারী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ “যে ব্যক্তির শাসনে আল্লাহ কিছু প্রজাকে অর্পণ করেছেন অথচ সে তাদের সাথে প্রতারণা করতে থাকে এবং প্রতারণা করতে করতে মারা যায়, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দেবেন।” (সহীহ আল বুখারী)

রাসূল (সা) আরো বলেনঃ “জনগণের ওপর শাসন পরিচালনা করে এমন প্রত্যেক শাসককেই কিয়ামতের দিন আটক করা হবে এবং একজন ফেরেশতা তার ঘাড় ধরে রাখবে। আল্লাহ যদি তাকে বলেন যে, ওকে ফেলে দাও, তবে সেই ফেরেশতা তাকে ফেলে দেবে এবং সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।” (আহমাদ, ইবন মাজাহ) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ ন্যায় বিচারক বিচারপতিও কিয়ামতের দিন এমন একটি মুহূর্তের সম্মুখীন হবে, যখন সে আক্ষেপ করবে যে, দুইজনের মধ্যে কোন একটি খোরমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব মেটাতেও তার না যাওয়া ভাল ছিল। (আহমাদ) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ দশজন মানুষের শাসককেও কিয়ামতের দিন পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে, অতঃপর হয় তার কৃত সুবিচার ও সুশাসন তাকে মুক্ত করবে, নচেত তার কৃত অবিচার ও দুঃশাসন তাকে ধ্বংস করে দেবে। (আহমদ ও ইবনে হাব্বান)

রাসূল (সা) এভাবে দোয়া করতেনঃ হে আল্লাহ! যার ওপর এই উম্মাতের কোন দায়িত্ব অর্পণ করা হয় অতঃপর সে তাদের প্রতি নম্র আচরণ করে, তার প্রতি আপনি সদয় হোন, আর যে তাদের ওপর কঠোরতা করে, তার প্রতি আপনিও কঠোর করুন। (সহী মুসলিম, সুনানু নাসায়ী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ মুসলমানদের কোন দায়িত্ব আল্লাহ যাকে অর্পণ করেন, অতঃপর সে তাদের অভাব ও দৈন্য না মিটিয়ে গা ঢাকা দেয়, আল্লাহ তায়ালাও তার অভাব ও নৈন্য মা মিটিয়ে গা ঢাকা দেবেন। (সুনানু আবু দাউদ, আল জামে আত তিরমিযী)

রাসূল (সা) আরো বলেনঃ পৃথিবীতে অচিরেই পাপিষ্ঠ ও অত্যাচারী শাসকদের প্রাদুর্ভাব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যাচারকে মেনে নেবে এবং তাদের অত্যাচারকে সমর্থন যোগাবে, সেও আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তার দলভুক্ত নই। সে কখনো হাউজ কাউসারে আসার সুযোগ পাবেনা। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ আমার উম্মতের দুই শ্রেণীর মানুষ আমার শাফায়াত কখনো পাবেনা, অত্যাচারী ও ধোকাবাজ শাসক এবং ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়িকারী। এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া হবে এবং এদের ব্যাপারে কেউ কোন দায়দায়িত্ব স্বীকার করবেনা। (তাবারানী) রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী আযাব ভোগ করবে অত্যাচারী শাসক। (তাবারানী) অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ হে মানবমন্ডলী, তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। নচেৎ এমন এক সময় আসবে, যখন তোমরা দোয়া করলেও আল্লাহ তা কবুল করবেন না এবং তোমরা ক্ষমা চাইলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। জেনে রেখ, ইহুদী আলেমরা এবং খৃষ্টান সংসার ত্যাগীরা সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজে নিষেধ করা থেকে বিরত হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর তাদের নবীদের মাধ্যমে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের ওপর সর্বব্যাপী বিপদ মুসিবত নাযিল করেন।

রাসূল (সা) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের ওপর দয়ালু নয়, আল্লাহ তার ওপর দয়া করেন না। (সহীহ আল বুখারী) রাসুল (সা) আরো বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা ন্যায় বিচারক শাসককে কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। (সহীহ আল বুখারী ও সহী মুসলিম) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ সেই সব ন্যায় বিচারক কিয়ামতের দিন জ্যোতির্ময় মিম্বরের ওপর অধিষ্ঠিত থাকবে যারা নিজের অধস্তনদের ওপর পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজনের ওপর এবং জনগণের ওপর শাসন পরিচালনার সময় ন্যায়বিচার করবে। (সহীহ মুসলিম ও নাসায়ী)

হযরত মা’য়াজকে ইয়ামানে প্রেরণ করার সময় রাসূল (সা) তাকে বলেনঃ সাবধান, জনগণের মূল্যবান ধনসম্পদ রক্ষা করবে, আর মাযলুমের দোয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। কেননা আল্লাহর ও মাযলুমের দোয়ার মাঝে কোন পর্দা থাকেনা। (সহীহ আল বুখারী) সহীহ মুসলিমে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেন যে, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের মধ্যে একজন হলো মিথ্যাবাদী শাসক। তিনি আরো বলেনঃ তোমরা নেতৃত্বের প্রতি লোভাতুর থাকবে অথচ নেতৃত্ব তোমাদের জন্য কিয়ামতের দিন অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। (সহীহ আল বুখারী) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ আল্লাহর কসম, আমি এই দায়িত্ব এমন কারো ওপর অর্পণ করবো না, যে তা চাইবে বা তার আকাংখা করবে। (সহীহ আল বুখারী)

রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ হে কা’ব ইবনে আজরা, আল্লাহ তোমাকে মুর্খ ও নির্বোধ লোকদের শাসন থেকে রক্ষা করুন। আমার পরে এমন শাসকরা ক্ষমতাসীন হবে, যারা আমার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করবেনা। (আহমাদ) রাসূল (সা) আরো বলেছেন : যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিচারক হতে চায় অতঃপর সেই পদে নিয়োেগ লাভ করে, অতঃপর তার অবিচারের চেয়ে সুবিচারের মাত্রা বেশী হয়, তার জন্য জান্নাত নির্দিষ্ট রয়েছে। আর যার সুবিচারের চেয়ে অবিচারের মাত্রা বেশী হয় তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত রয়েছে। (সুনানু আবী দাউদ) রাসূল (সা) আরো বলেছেনঃ একজন শাসককে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের পুলের উপর ছুঁড়ে মারা হবে। এর ফলে পুলটি এত জোরে ঝাঁকুনী খাবে যে, তার জোড়গুলো খুলে স্থানচ্যুত হয়ে যাবে। ঐ শাসক যদি আল্লাহর অনুগত হয়, তাহলে এর পরও সে ঐ পুল পার হয়ে যাবে। আর যদি সে আল্লাহর অবাধ্য হয়, তবে তাকে নিয়ে পুলটি ভেংগে পড়বে এবং সে ৫০ বছরের দূরত্বে অবস্থিত জাহান্নামের গহবরে নিক্ষিপ্ত হবে।

আমর ইবনুল মুহাজির বলেনঃ হযরত উমর ইবন আবদুল আযীয আমাকে বলেছিলেনঃ “যখন দেখবে আমি সত্যের পথ থেকে দূরে সরে গেছি, তৎক্ষণাত আমার কলার টেনে ধরে বলবে যে, ওহে উমর, তুমি এ কী করছ?

“অতএব, হে জুলুমবাজ, অত্যাচারী শাসক! মনে রেখ, তোমার কারাগার হচ্ছে জাহান্নাম এবং মহা প্রভু আল্লাহই তোমার চূড়ান্ত বিচারক। সেখানে তুমি কোন ওজর আপত্তি পেশ করতে পারবেনা। ভয়াবহ কবর হবে তোমার হাজতখানা। আর দীর্ঘস্থায়ী হিসাব নিকাশ ও জবাবদিহির জন্য তোমাকে দাড়াতে হবে। সুতরাং নিজেকে সেই শাস্তি থেকে বাঁচাও। আর ওহে মজলুম, মনে রেখ, জালিমকে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেয়া হয়না। যদি দেখ, কোন জালিম এত প্রভাবশালী হয়ে গেছে যে, তাকে আর প্রতিহত করা যাচ্ছেনা, তবে তাকে আল্লাহর ওপর সোপর্দ করে ঘুমিয়ে থাক। দেখবে, হয়তো রাতের মধ্যেই কোন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যাবে, আল্লাহর পাকড়াও থেকে সে কিছুতেই নিস্তার পাবেনা।

.

১৮. অহংকার

নিজেকে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা, অন্যদেরকে নিজের তুলনায় ক্ষুদ্র ও অধম জ্ঞান করতঃ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে ঔদ্ধ্যত প্রকাশ করে তার প্রতি অবাধ্য হওয়া ও আদেশ অমান্য করা – এ সবই অহংকারের লক্ষণ ও তার আওতাভুক্ত। পবিত্র কুরআনে একাধিক জায়গায় অহংকারের নিন্দা ও অহংকারীর প্রতি ধিক্কার ঘোষিত হয়েছে। যেমন সূরা আল মু’মিনে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

“মূসা বললো। আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন প্রত্যেক অহংকারী থেকে, যে হিসাবের দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখেনা।” সূরা আন-নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” সূরা আল-বাকারাতে আল্লাহ বলেনঃ

“আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলামঃ আদমকে সিজদা কর। সকলেই সিজদা করলো। কেবল ইবলিস করলোনা। সে অস্বীকার ও অহংকার করলো। সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। এ দ্বারা বুঝা গেল, আল্লাহর আদেশকে যে অহংকার বশতঃ অমান্য করে, আল্লাহর প্রতি তার ঈমান থাকলেও তাতে কোন লাভ হবে না। ইবলিসের ন্যায় সে কাফের বলে গণ্য হবে। সূরা লুকমানে বলা হয়েছেঃ “মানুষের প্রতি মুখ ভেংচি দিয়েনা, ভ্রুকুটি করোনা এবং যমীনের ওপর অহংকার ভরে চলাফেরা করোনা। আল্লাহ কোন অহংকারী গর্বিত লোককে পছন্দ করেন না।”

একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “অহংকার আমার পোশাক। এই পোশাক যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।”(সহীহ মুসলিম)

রাসূল (সা) বলেন: “অহংকারী স্বৈরাচারীদেরকে কিয়ামতের দিন ক্ষুদ্র কণার আকৃতিতে ওঠানো হবে। লোকেরা তাদেরকে পায়ের তলায় পিষ্ট করবে এবং চারদিক থেকে তাদের ওপর কেবল লাঞ্ছনা ও অপমানই আসতে থাকবে। তাদেরকে জাহান্নামের বোলাস নামক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের মাথার ওপর আগুন জ্বলতে থাকবে এবং তাদেরকে জাহান্নামবাসীর মলমূত্র, ঘাম, কাশি ইত্যাদি খেতে দেয়া হবে।”(সুনানু নাসায়ী, জামেআত তিরমিযী)

রাসূল (সা) আরো বলেনঃ যার অন্তরে কণা পরিমাণও অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। (সহীহ মুসলিম) রাসূল (সা) আরো বলেনঃ “জান্নাত ও জাহান্নাম বিতর্কে লিপ্ত হবে। জান্নাত বলবেঃ আমার এ কী দশা যে, মানব সমাজের দুর্বল ও পতিত শ্রেণীর লোক ছাড়া আর কেউ আমার ভেতরে প্রবেশ করে না? আর জাহান্নাম বলবেঃ আর আমাকে যত সব স্বেচ্ছাচারী ও অহংকারীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ সময় আল্লাহ তাদের বিতর্কের মীমাংসা করে বলবেনঃ হে জান্নাত! তুমি আমার রহমতের প্রতীক। আমি যাকে ইচ্ছা করি, তাকে তোমার মাধ্যমে রহমত দিয়ে থাকি। আর ওহে জাহান্নাম। তুমি আমার আযাবের প্রতীক। তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা আযাব দিয়ে থাকি। তবে তোমাদের উভয়কেই কানায় কানায় পূর্ণ করা হবে।”(সহীহ মুসলিম)

ইতিহাস সাক্ষী যে, সর্বপ্রথম আল্লাহর নাফরমানী করা হয়েছিল যে গুনাহের আশ্রয় নিয়ে সেই গুনাহটি ছিল অহংকার। ইবলিসই এই অপরাধ সংঘটিত করেছিল।

হযরত সালমা ইবন আল-আকওয়া বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর সামনে বাম হাত দিয়ে আহার করলো। তিনি বললেনঃ ডান হাত দিয়ে খাও। সে বললোঃ আমি ডান হাত দিয়ে খেতে পারি না। রাসূল (সা) বললেনঃ তুমি যেন আর পারও না।” তিনি সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তার ডান হাত দিয়ে খেতে না পারার কারণ অহংকার ছাড়া আর কিছু নয়।” অতঃপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত তুলতে সক্ষম হয়নি। (সহীহ মুসলিম)

রাসূল (সা) বলেনঃ কে জাহান্নামবাসী তাকি আমি তোমাদেরকে বলবো না? সবাই এক বাক্যে বললো : হাঁ, বলুন। তখন রাসূল (সা) বললেনঃ অত্যন্ত পাষাণ হৃদয়, কৃপণ ও অর্থগৃধু এবং অহংকারী ব্যক্তি। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম) রাসূল (সা) আরে বলেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে চলাফেরা করে এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, সে যখন আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাত করবে, তখন তাকে তার ওপর ক্রুদ্ধ দেখবে।”(তাবারানী)

রাসূল (সা) আরো বলেনঃ প্রথম যে তিন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে তারা হলো বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখলকারী ও জালিম শাসক, যাকাত আদায়ে অবহেলাকারী বিত্তশালী এবং অহংকারী দরিদ্র। সহীহ আল বুখারীতে আছে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ দৃষ্টি দেবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। এই তিন ব্যক্তি হচ্ছে : পায়ের পিরে বা পাতা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়া পোশাক পরিধানকারী। কাউকে দান করে বা উপকার করে খোটা দানকারী এবং মিথ্যে কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয়কারী। পায়ের পাতা পর্যন্ত পোশাক পড়ানো অহংকারের আলামত বলে গন্য হয়ে থাকে। তাই রাসূল (স) বলেছেনঃ পায়ের গিরের নিচে যে পোশাক পরা হবে তা জাহান্নামে যাবে।

মনে রাখতে হবে যে, জ্ঞান ও বিদ্যার শ্রেষ্ঠত্ব এবং পদমর্যাদার উচ্চতা নিয়ে বড়াই করা খুবই নিকৃষ্ট ধরনের অহংকার। যে ব্যক্তি আখেরাতের উদ্দেশ্যে জ্ঞান বিশেষতঃ ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে, সে অহংকারী হতে পারেনা। সে সব সময় নিজের মনের ওপর পাহারা বসিয়ে রাখে এবং কড়া নজর রাখে। এ ব্যাপারে শৈথিল্য দেখা দিলেই মনে অহংকার আসবে এবং সঠিক পথ থেকে তাকে বিচ্যুত করে ফেলবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ যে অহংকার করে তাকে আমি আমার আয়াতসমূহ থেকে ফিরিয়ে রাখবো। অর্থাৎ অহংকার মানুষের হেদায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। আর যে ব্যক্তি অহংকার করা ও মুসলমানদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে এবং জ্ঞানার্জনের পর তাদেরকে বোকা ঠাওরায়, সে সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের অহংকারে লিপ্ত হয়।

.

১৯. মিথ্যা সাক্ষ্য দান

পবিত্র কুরআনের সূরা ফুরকানে মুমিনদের অপরিহার্য গুণাবলীর মধ্যে একটি বলা হয়েছে “যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না।”সূরা হজ্জে ইরশাদ হয়েছেঃ “তোমরা মিথ্যা থেকে আত্মসংবরণ কর।”হাদীসে বলা হয়েছেঃ “মিথ্যা সাক্ষ্য দান শিরকের সমান।”(আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, তাবারানী)

ইবনে মাজাহ বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার জন্য জাহান্নামের ফায়সালা না হওয়া পর্যন্তু সে পা নাড়াতেও পারবেনা।

মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা আসলে চারটা বড় বড় গুনাহে লিপ্ত হয়। প্রথমতঃ সে মিথ্যা ও মনগড়া কথা বলে। এ সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আল্লাহ তায়ালা অপব্যয়ী মিথ্যাবাদীকে হেদায়াত করেন না।”(সূরা আল মুমিন) দ্বিতীয়তঃ সে যার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় তার ওপর যুলুম করে। কেননা এদ্বারা সে তার জান মাল অথবা সম্মানের ক্ষতি সাধন করে। তৃতীয়তঃ সে যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয় তার ওপরও যুলুম করে। কেননা সে তার জন্য হারাম সম্পদ ভোগের ব্যবস্থা করে দেয়, ফলে তার জন্য জাহান্নাম অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। রাসূল (সা) বলেছেন : “মিথ্যা সাক্ষ্যের প্রভাবে আমি যদি কাউকে অন্য কোন মুমিন ভাই-এর সম্পদ দেয়ার নির্দেশ দেই, তবে সে যেন তা গ্রহণ না করে। কেননা ঐ সম্পদ তার জন্য জাহান্নামের আগুনের একটা টুকরো।”(সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিম) চতুর্থতঃ সে মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে একটি নিষিদ্ধ সম্পদ, প্রাণ বা সম্রমের ওপর অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ বানিয়ে দেয়।

সহীহ আল বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীসে আছে। রাসূল (সা) বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ কী কী বলবোনা? শোনো, তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতাপিতাকে কষ্ট দেয়া, আর সাবধান, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, সাবধান মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।” বর্ণনাকারী বলেন, শেষের কথাটি তিনি এতবার পুনরাবৃত্তি করেন যে, আমরা মনে মনে বলছিলাম যে, আহা, উনি যদি এখন চুপ করতেন, তবে ভালো হতো।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন