যে সভ্যতার ফল আজ আমরা অতি স্বাভাবিকভাবেই ভোগ করে চলেছি, তার যথার্থ মূল্যকে প্রায়ই আমরা অনুভব করি না। অনুভব করি না কারণ, পূর্বপুরুষদের তার জন্য কি পরিমাণ স্বার্থত্যাগ করতে হয়েছে তা আমরা স্মরণ রাখি না।
বর্তমান কালে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে মানুষের অভূতপূর্ব বিভিন্ন চাহিদার শর্তকে মেনে নেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U. N. O.) “বিশ্বজনীন মানব অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা”র (Universal Declaration of Human Rights) মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকারকে স্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সম্মিলিত বিবেক মানব-অধিকারকে নীতিগতভাবে সমর্থন করলেও বাস্তবে তার অধিকার সর্বত্রই যে সংরক্ষিত হচ্ছে, তা আদপেই নয়। এই সভ্যজগতে এখনো এমন অনেক দেশ আছে যেখানকার এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে যে অপর এক শ্রেণীর মানুষ অপেক্ষা তাদের উত্তম বস্তু-সামগ্রী ভোগের অধিকার অধিকতর। অবশ্য আজ আর সেই যুগ নেই, যখন বে-আইনিভাবে অস্ত্র উঁচিয়ে বলা যায়, “তোমার বাঁচার অধিকার নেই।” আধুনিক জগৎ মানুষের কেবল বেঁচে থাকার অধিকার মাত্রই নয়, সেই সঙ্গে স্বীকৃতি জানায় তার অন্যান্য প্রয়োজনের অধিকারকেও।
কিন্তু আজকের সভ্য জগৎ মানুষের অন্যান্য প্রয়োজনকে স্বীকার করলেও, তার বৃহত্তম প্রয়োজনটিকে—আধ্যাত্মিক প্রয়োজনটিকে, খুব কম ভাবেই স্বীকার করেছে। মানুষের মনে তার ঈশ্বর-প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বটি ক্রমশই হ্রাস পেয়ে চলেছে। খুব কম করেও পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, অনুমান করা যায়, নিরীশ্বরবাদী। অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশের এক-তৃতীয়াংশ ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন, যদিও তারা নিজেদের অ-ধার্মিক বলে কখনো ঘোষণা করে না। সমগ্র জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ সম্ভবতঃ কোন-না-কোনভাবে নিজেদের ধার্মিক বলে জাহির করে থাকে। অবশ্য মানবগোষ্ঠির এই শ্রেণী বিন্যাস নিখুঁত পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের অনুসারী নয়, তবে মোটামুটিভাবে বর্তমান জগতের অবস্থা পর্যালোচনা করে এমনটা অনুমান করা যায়।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন