অর্ধবৃত্ত – ৩

সাদাত হোসাইন

টুমরো’স গ্লোরি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাফি। তার ছোটবোন রথি এই স্কুলে পড়ে। সে ঋদ্ধির ক্লাসমেট। ভালো বন্ধুও তারা। ক্লাস শেষে রথিকে স্কুল থেকে নিয়ে যাবে রাফি। কিন্তু কী এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কারণে স্কুল ছুটি হতে দেরী হচ্ছে। রাফি ভেবেছিল এই ফাঁকে যদি মুনিয়ার সাথে খানিক দেখা করা যেত! সে বার কয়েক ফোনও করেছে মুনিয়াকে। মুনিয়া অবশ্য রাফির ফোন ধরেনি। টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে জরুরি মিটিং চলছে তার। মুনিয়া বসে আছে স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আকবর আলীর সামনে। সে বলল, ‘আমাদের একটা বড় অডিটরিয়াম খুব জরুরি হয়ে গেছে স্যার।

আকবর আলী গম্ভীর গলায় বললেন, ‘আমিতো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু গভর্নিং বডির অন্য সদস্যরাতো কেউ সেটা বুঝতে চাইছেন না। তারা নিজেদের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ভাবছেন। আর এ কারণে কমিটিতে ফজলে নূরের দল ক্রমশই ভারী হচ্ছে। আমি হচ্ছি দুর্বল। তারা চাইছেন আগের অডিটরিয়ামটাই সংস্কার করা হোক।’

‘কিন্তু স্যার, আমাদের স্টুডেন্ট বাড়ছে, একটিভিটিজ বাড়ছে। আগের অডিটরিয়াম সংস্কার করলে হয়তো ভেতরের ডেকোরেশন বা ফ্যাসিলিটিজ বদলানো যাবে, কিন্তু স্পেস বাড়ানোরতো আর সুযোগ নেই। অথচ আমরা আগের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি স্টুডেন্ট ভর্তি করব সামনে। অ্যানুয়াল কোনো কম্বাইন প্রোগ্রামতো তখন আর এখানে করা যাবে না। বাইরের কোনো অডিটরিয়াম ভাড়া করে করতে হবে। সেটাও রেগুলার করতে গেলে কিন্তু খুব এক্সপেন্সিভ হয়ে যাবে।’

‘হুম।’ আকবর আলী আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। ‘সমস্যা হচ্ছে অন্যরা এই মুহূর্তেই অত টাকা খরচ করতে চাইছেন না।’

কিন্তু স্যার, এই মুহূর্তে আমাদের ফান্ডেরতো কোনো সমস্যা নেই। ইভেন আমরা চাইলে অনেক ডোনেশনও ম্যানেজ করতে পারি।’

আকবর আলী এবার হাসলেন, ‘তা পারি। কিন্তু সবাই কি আর চায় সেই ফান্ড বা ডোনেশনের সবটাই কেবল স্কুলের কাজেই খরচ হোক?’

মুনিয়া জবাব দিল না। সাম্প্রতিক সময়ে ভেতরে ভেতরে স্কুলের নানান বিষয়ে যে একটা অস্বস্তিকর আবহাওয়া তৈরি হয়েছে তা সে জানে। ফলে সব বিষয়ে নিজের মতামত সে দিতে চায় না। যতটা সম্ভব সতর্ক হয়েই চলার চেষ্টা করে।

আকবর আলী বললেন, ‘এমন একটা প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলতো আর সবার কাছে কেবলই ওয়েলফেয়ার বা চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন না। বেশির ভাগের কাছেই এটা স্রেফ একটা বিজনেস। তাই না? সবাইতো আর আমার মতো করে ভাববে না। তা ছাড়া এতবছর পর যখন স্কুলের ফান্ড ফুলে ফেঁপে উঠেছে, তখন সবাইতো পারসোনাল প্রফিটের কথা ভাববেই। আমি একা কী করব বলুন? কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারার হিসেব চলছে। আপনি জানেন, ফজলে নূর কোনোভাবেই চান না এই মুহূর্তে নতুন আর কোনো কন্সট্রাকশনের কাজ স্কুলে হোক। হলেও সেটার টেন্ডার নিয়ে ঝামেলা। আমিতো পাশের খালি জমিটাও কিনে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার দল দিনকে দিন ভারী হচ্ছে। সবাই লাভের গুড় দেখে পিঁপড়ে হয়ে গেছে, বুঝলেন? ফজলে নূরতো সেদিন মিটিংয়ে আমাকে একভাবে থ্রেটই করে বসলেন! কত বড় সাহস একবার ভাবেন, আমি সরকারি দলের পলিটিকস করি, অথচ সে বিরোধী দলের পলিটিকস করেও আমাকে থ্রেট করে!’

একটু থেমে আকবর আলী বললেন, ‘আমি নেহাতই একজন নিরীহ মানুষ বলে এখনো চুপচাপ রয়েছি। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতদিনে কী হয়ে যেত বলুনতো!’

মুনিয়া এবারও জবাব দিল না। সে এ সব বিষয়ে কথা বলতে চায় না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সে। তার কাজ স্কুলের সুবিধা-অসুবিধার কথা গভর্নিং বডির কাছে জানানো। কিন্তু সিদ্ধান্ত তাদের। উল্টাপাল্টা কিছু বলে কারো বিরাগভাজন হতে চায় না সে। তবে এটি স্পষ্ট যে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। তারা প্রায়ই মুখোমুখি দ্বন্ধেও জড়িয়ে পড়ছে। ফলে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। স্কুল মাঠের দক্ষিণ দিকের চারতলা ও কলেজের একটি ভবনের কাজও অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে এখন অসমাপ্ত অবস্থায় বন্ধ হয়ে আছে। কাজটি যাদের দেয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে গভর্নিং বড়িরই একটা অংশ। ভেতরে ভেতরে এই দুই দলের মধ্যে একটা তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। কখনো কখনো তা বিস্ফারিতও হচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এই দু পক্ষই রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর। যদিও দু পক্ষেই সরকারি ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক লোকজন রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি সবসময়ই উত্তপ্ত। এই নিয়ে মুনিয়ার মাঝে মাঝেই খুব ভয় হয়। কে জানে, কতদিন আর সে দুই পক্ষের কাছেই নিজের নিরপেক্ষ অবস্থান আর গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারবে! এমনিতেই এক পক্ষ মনে করে মুনিয়া অন্য পক্ষের বিশেষ সুবিধা পেয়ে সিনিয়র অনেক শিক্ষককে টপকে অল্পদিনেই প্রধান শিক্ষক হয়ে গেছে। তাদের এই অসন্তোষটাও মুনিয়া টের পায়।

আকবর আলী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ঘরে ঢুকলেন গভর্নিং বডির সেক্রেটারি ফজলে নূর। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘তা কী ফিসফাস হচ্ছে?’

মুনিয়াও হাসল, ‘আজকের মিটিংয়ে খাবারের মেন্যু কী হবে, তাই নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

‘দেখেন, খাবারে আবার বিষ টিষ মিশিয়ে দিয়েন না।’ ফজলে নূর হাসলেন। ‘কই, আরতো কাউকে দেখছি না?’

খুব বেশি অবশ্য কেউ এলোও না। এটি নিয়েও মুনিয়া বিরক্ত। জরুরি মিটিংগুলোতে কেউই আসতে চায় না। ফলে নানা বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হয়। আবার যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তা নিয়ে পরে শুরু হয় অসন্তোষ। রফিকুল আলম এসেছেন। স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে তিনি প্রভাবশালী মানুষ। সরকারি দলের স্থানীয় রাজনীতিতেও তার ভূমিকা রয়েছে। প্রথম দিকে মুনিয়ার সাথে তার সম্পর্কটাও বেশ ভালোই ছিল। যদিও নানা কারণে পরবর্তীতে তা আর ততটা মসৃণ থাকেনি।

রফিকুল আলমকে দেখে অবশ্য ফজলে নূরের চেহারা কঠিন হয়ে গেল। দুজনের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। বার কয়েক মিটিংয়ে প্রায় হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিলেন তারা। মুনিয়া প্রমাদ গুনলো। রফিকুল আলমের চেহারা থমথমে। তিনি বসতে বসতে বললেন, ‘আপনি যা শুরু করেছেন, তাতেতো আর বেশিদিন আপনাকে স্কুল কমিটিতে থাকতে দেয়া হবে না।’

ফজলে নূর ঝট করে ঘুরে তাকালেন, ‘কী করবেন আপনি?’

‘কী করব সেটি সময় হলেই দেখতে পাবেন।

‘পাওয়ারের ভয় দেখাচ্ছেন?’

‘তা আর পারলাম কই? আমাদের কাউকে ভয় দেখাতে পাওয়ার লাগে না। ওটা আপনা আপনিই হয়ে যায়।’

ফজলে নূর মৃদু হাসলেন, ‘এখন আছেন বলেই যে চিরকাল পাওয়ারে থাকবেন এটা ভাববেন না। অবশ্য আপনি পাওয়ারে থাকলেই কী, না থাকলেই কী! নিজের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও সামান্য কমিশনার ইলেকশনেই জিততে পারলেন না। আবার বড় বড় কথা বলেন। সাধারণ মানুষের কাছেইতো আপনার গ্রহণযোগ্যতা নেই। ম্যাস পিপলের একসেপটেন্স ছাড়া পলিটিকস করা আর ক্যাডার পলিটিকস করা একই জিনিস।’

রফিকুল আলম তেঁতে ওঠা গলায় বললেন, ‘কে কী পলিটিকস করে, সেটা আপনাকে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াব। ‘

ফজলে নূর ক্ষেপলেন না। শান্ত গলায় বললেন, ‘আপনি কী পারেন, সেটা আমরা জানি। আর আমরা আপনার মতো কথায় কথায় গর্জাই না, সময় মতো বর্ষাই। বুঝলেন?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে সময় লাগল না। মুনিয়া যথাসম্ভব চেষ্টা করল দুজনকেই শান্ত করার। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হলো না। মিটিংও শেষ অবধি হলো না। আকবর আলীসহ আরো যে কজন ছিলেন তারাও রেগে মেগে বেরিয়ে গেলেন। রফিকুল আলম অবশ্য চুপচাপ বসে রইলেন। মুনিয়া বেরিয়ে যাচ্ছিল। রফিকুল আলম আচমকা ডাকলেন, ‘মুনিয়া!’

মুনিয়া ফিরে তাকাল না। তবে থমকে দাঁড়াল। তার মুখ থমথমে। রফিকুল আলম আরো কিছু বলতে চাইছিলেন, কিন্তু তার আগেই মুনিয়া বলল, ‘আমার একটু তাড়া আছে স্যার, নেক্সট মিটিংয়ে কথা হবে।’

রফিকুল আলম একা একা বসে রইলেন। মুনিয়ার সাথে তার আলাদা করে কী কথা ছিল কে জানে! তবে ফজলে নূরের ওপর তিনি যারপর নাই ক্রুদ্ধ। বারবার চেষ্টা করছেন নিজের এই ক্রোধটাকে সংবরণ করতে, কিন্তু পারছেন না। ফজলে নূরকে দেখলেই তার মাথাটা দপ করে জ্বলে ওঠে। সেই আগুন আর তিনি নেভাতে পারেন না। মানসিকভাবে ভয়াবহ অস্থির সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এই অস্থিরতার কারণে কোনো কাজ ঠিক মতো করতেও পারছেন না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নিজের দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কমিশনার ইলেকশনে তিনি ফজলে নূরের বড় ভাইয়ের কাছে হেরেছেন। এই নিয়ে দলের মধ্যেও একভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অনেকেই চাইছেন দলের নীতিনির্ধারকরা যেন তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন। বিষয়গুলো নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপ যাচ্ছে রফিকুল আলমের। হয়তো এ কারণেই আজকাল অল্পতেই রেগে যান। যখন তখন ক্রোধোন্মত্ত হয়ে পড়েন। যে করেই হোক এই মানসিক অস্থিরতা তাকে কাটিয়ে উঠতেই হবে।

.

স্কুল ছুটি হয়েছে। ঋদ্ধি ছুটে এসে বলল, ‘মা একটা কথা বলি?’

মুনিয়া বলল, ‘কী কথা?’

‘আগে বলো বকবে না।’

‘বকব কেন?’

‘আমি জানি তুমি বকবে।

‘যদি জানোই আমি বকব, তাহলে তেমন কথা বলবে কেন?’

এই কথায় চুপ হয়ে গেল ঋদ্ধি। সে জানে মা যখন তাকে তুমি করে সম্বোধন করে, তখন হয় মায়ের মেজাজ খারাপ, কিংবা মন ভালো নেই। এই সময়ে তেমন কিছু না বলাই ভালো। খানিক আগে যে উচ্ছ্বাস নিয়ে সে মায়ের কাছে এসেছিল, ‘সেই উচ্ছ্বাস মুহূর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মুনিয়ারও মুখ থমথমে। সে গম্ভীর গলায় বলল, ‘তোমার ব্যাগ কই?’

‘রথির কাছে।’

‘রথির কাছে কেন তোমার ব্যাগ?’

ঋদ্ধি কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। স্কুলের গেটের বাইরে রথি আর রাফি দাঁড়িয়ে আছে। মুনিয়াকে দেখে রাফি সালাম দিল। মুনিয়া স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই সালামের জবাব দিল। রথি চট করে কথাটা বলল, ‘ম্যাম, ঋদ্ধি বলছিল আমাদের বাসায় যাবে। ভাইয়া নাহয় সন্ধ্যায় পৌঁছে দিয়ে আসবে।’

মুনিয়া জানে না কেন, দপ করে তার মাথার ভেতরটা জ্বলে উঠল। সে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করেও পারল না। ঝাঁজালো গলায় বলল, ‘সন্ধ্যায় আর বাড়ি ফেরার কী দরকার? তোমাদের বাসায়ই না হয় থেকে যাক। যেহেতু তার আর পড়াশোনা করার দরকার নেই, সো বন্ধু, আড্ডা-গল্প, কবিতা, নোভেল, টেলিভিশন এসব নিয়েই না হয় সে থাকুক।’ বলে ঋদ্ধির দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘যাও, আজ আর ফেরারই দরকার নেই। ওখানেই থাকো।’

ঋদ্ধি অবশ্য গেল না। সে রথির হাত থেকে তার স্কুল ব্যাগটা নিতে নিতে বলল, ‘না, আজ থাক।’

রথিও অবশ্য আর জোর করল না। মুনিয়ার মেজাজ যে ভালো নেই তা সে বুঝতে পারছে। বুঝতে পারছে রাফিও। মুনিয়ার সাথে আলাদা করে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল তার। কিন্তু সে জানে, ঋদ্ধি এবং রথির সামনে কোনোভাবেই বিশেষ কোনো কথা বলা সম্ভব নয়। রথির শিক্ষক এবং দিপুর ভাবি হিসেবেই যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক কথাবার্তাই চালিয়ে গেল রাফি। তবে সে স্পষ্টই বুঝতে পারছে মুনিয়ার মন ভালো নেই। হয় সে ঋদ্ধির ওপর কোনো কারণে রেগে আছে। কিংবা অন্য কোনো কারণ রয়েছে। সেই কারণটা এই মুহূর্তে জানার কোনো উপায় নেই। তাকে অপেক্ষা করতে হবে গভীর রাত অবধি। ঋদ্ধি এবং জাফর ঘুমিয়ে যাওয়ার পরই কেবল সে মুনিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে পারবে। তারপর ওই ফুটপাতে বসে সে মুনিয়াকে কবিতা পড়ে শোনাবে। মুনিয়া চুপচাপ কানে ফোন চেপে ধরে বারান্দা থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। তারপর তার বুক চিড়ে নেমে আসবে এক সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস। সেই দীর্ঘশ্বাস মিশে যাবে শহুরে বাতাসে।

কে জানে, সেই বাতাসে আর কত শত সহস্র মানুষের দীর্ঘশ্বাস মিশে আছে!

.

বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঋদ্ধি বলল, ‘তোমার মন খারাপ মা?’

‘মন খারাপ কেন হবে?’

‘এই যে আমি হুট করে রথিদের বাড়িতে যেতে চাইছিলাম।’

‘তোমার কি মনে হয়, এই কারণে আমার মন খারাপ করা উচিত?’ মুনিয়া পাল্টা প্রশ্ন করল।

ঋদ্ধি চুপ করে রইল। মুনিয়া বলল, ‘তুমি বড় হয়েছো না?’

‘হুম।’

‘এখন কি তোমার যখন-তখন যেখানে সেখানে যাওয়ার বায়না ধরা ঠিক?’

‘উহু।’

‘তাহলে?’

ঋদ্ধি কিছু একটা বলতে গিয়েও আর বলল না। মুনিয়া ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, ‘তুমি বড় হয়েছো, তারপরও তোমাকে আমি সব ধরনের স্বাধীনতা দিয়েছি। কখনো কিছু করতে বাধা দিইনি। বাট এর মানে এই নয় যে তোমার কোনো বিবেচনা বোধও থাকবে না।’

‘কিন্তু মা, ওখানেতো রথি, আঙ্কেল, আন্টি আর রাফি ভাইয়া ছাড়া…।’

ঋদ্ধিকে কথাটা শেষ করতে দিল না মুনিয়া। তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সে বলল, ‘তুমি যতটা বড় হয়ে গেছো বলে ভাবছো, ততটা বড় আসলে তুমি হওনি তোমাকে আরো অনেক কিছু বুঝতে হবে। তুমি আর কখনো রথিদের বাসায় যাওয়ার কথা বলবে না।’ কথাটা বলেই মুনিয়ার মনে হলো এভাবে কথাটা বলা তার ঠিক হয়নি। ঋদ্ধি হয়তো অন্য কিছুও ভাবতে পারে। সে সাথে সাথেই আবার বলল, ‘তোমার সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়, এ সময়টাতে তোমাকে পড়াশোনায় আরো মনোযোগী হতে হবে। আপাতত কোনো বন্ধুর বাসায়ই যাওয়া যাবে না।’

ঋদ্ধি আর কোনো কথা বলল না। কিন্তু বাড়ি ফেরার বাকিটা সময় একটা তীব্র অস্বস্তিকর অনুভূতি খোঁচাতে লাগল মুনিয়াকে। সে পরিষ্কার বুঝতে পারছে, ঋদ্ধির আর কোনো বন্ধুর বাসায় যাওয়া নিয়ে তার সমস্যা নেই। তার সমস্যা কেবল রথির বাসা নিয়ে। কারণ সেখানে রাফি রয়েছে। মুনিয়ার আচমকা মনে হলো, সে অবচেতনেই তীব্র এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। তার এই নিরাপত্তাহীনতা রাফিকে কেন্দ্র করে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ, বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে তার সেই নিরাপত্তাহীনতা সে অনুভব করছে ঋদ্ধির কারণে! ঋদ্ধি তার কন্যা। সে মা। অথচ সময় ও সম্পর্ক কী এক বিভৎস, দুর্বিষহ সমীকরণের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে তাকে!

সকল অধ্যায়

১. অর্ধবৃত্ত – ১
২. অর্ধবৃত্ত – ২
৩. অর্ধবৃত্ত – ৩
৪. অর্ধবৃত্ত – ৪
৫. অর্ধবৃত্ত – ৫
৬. অর্ধবৃত্ত – ৬
৭. অর্ধবৃত্ত – ৭
৮. অর্ধবৃত্ত – ৮
৯. অর্ধবৃত্ত – ৯
১০. অর্ধবৃত্ত – ১০
১১. অর্ধবৃত্ত – ১১
১২. অর্ধবৃত্ত – ১২
১৩. অর্ধবৃত্ত – ১৩
১৪. অর্ধবৃত্ত – ১৪
১৫. অর্ধবৃত্ত – ১৫
১৬. অর্ধবৃত্ত – ১৬
১৭. অর্ধবৃত্ত – ১৭
১৮. অর্ধবৃত্ত – ১৮
১৯. অর্ধবৃত্ত – ১৯
২০. অর্ধবৃত্ত – ২০
২১. অর্ধবৃত্ত – ২১
২২. অর্ধবৃত্ত – ২২
২৩. অর্ধবৃত্ত – ২৩
২৪. অর্ধবৃত্ত – ২৪
২৫. অর্ধবৃত্ত – ২৫
২৬. অর্ধবৃত্ত – ২৬
২৭. অর্ধবৃত্ত – ২৭
২৮. অর্ধবৃত্ত – ২৮
২৯. অর্ধবৃত্ত – ২৯
৩০. অর্ধবৃত্ত – ৩০
৩১. অর্ধবৃত্ত – ৩১
৩২. অর্ধবৃত্ত – ৩২
৩৩. অর্ধবৃত্ত – ৩৩
৩৪. অর্ধবৃত্ত – ৩৪
৩৫. অর্ধবৃত্ত – ৩৫
৩৬. অর্ধবৃত্ত – ৩৬
৩৭. অর্ধবৃত্ত – ৩৭
৩৮. অর্ধবৃত্ত – ৩৮
৩৯. অর্ধবৃত্ত – ৩৯
৪০. অর্ধবৃত্ত – ৪০
৪১. অর্ধবৃত্ত – ৪১
৪২. অর্ধবৃত্ত – ৪২
৪৩. অর্ধবৃত্ত – ৪৩
৪৪. অর্ধবৃত্ত – ৪৪
৪৫. অর্ধবৃত্ত – ৪৫
৪৬. অর্ধবৃত্ত – ৪৬
৪৭. অর্ধবৃত্ত – ৪৭
৪৮. অর্ধবৃত্ত – ৪৮
৪৯. অর্ধবৃত্ত – ৪৯
৫০. অর্ধবৃত্ত – ৫০
৫১. অর্ধবৃত্ত – ৫১
৫২. অর্ধবৃত্ত – ৫২
৫৩. অর্ধবৃত্ত – ৫৩

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন