দ্য স্ফিংস

অ্যাডগার অ্যালান পো

নিউ ইয়র্কে যে বছর কলেরা ভয়ঙ্কর মহামারীর রূপ নিয়েছিল, সে সময় আমার এক আত্মীয় হাওখন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল। তার সেখানকার চমৎকার কুঁড়ে ঘরটায় একপক্ষকালের জন্য তার অবসর জীবনযাপনে সঙ্গদান করার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলাম।

হাতের মুঠোয় চলে-আসা একেবারে অপ্রত্যাশিত সুযোগটা হাতছাড়া করা নিছকই বোকামি ভেবে আমি সানন্দে তার আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে পারলাম না।

এক সকালে আমি সে আত্মীয়ের মনোরম কুটিরে হাজির হলাম। সে আমাকে সত্যিকারের সানন্দেই গ্রহণ করেছিল।

তখন মনোরম গ্রীষ্মকাল চলছে। সেখানে আমাদের বাসস্থানের চারদিকে গ্রীষ্মকালীন সাধারণ আমোদ প্রমোদের যাবতীয় সুব্যবস্থাই ছিল। যাবতীয় ব্যবস্থা বলতে, সকাল-বিকেল মনের খেয়ালে হৃদের পানিতে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, বনের ছায়া-ছায়া পথে যত খুশি হেঁটে বেড়ানো, হ্রদের পানিতে ছিপ ফেলে মাছ ধরা, গোসল করা আর যত খুশি সাঁতার কাটা, গাছের ছায়ায় ইজেল পেতে ছবি আঁকা, ঘাসের বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে মনের সুখে বই পড়া–এসবে যদি নেহাৎ-ই মন না ভরে তবে গলা ছেড়ে গান গাওয়াতেও কোনো অসুবিধা ছিল না। এসব তো ছিলই। এছাড়া আবার বিনোদনের আরও কত রকম ব্যবস্থা ছিল তার ইয়ত্তা ছিল না। সব মিলিয়ে সেখানকার মনোলোভা গ্রাম্য পরিবেশে আমাদের দিনগুলো নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের মধ্য দিয়েই চলছিল।

কিন্তু আমাদের একমাত্র বিস্ময় ও বিষণ্ণতার কারণ ছিল শহর থেকে প্রতি সকালে আসা ভয়াবহ খবরগুলো।

এমন একটা দিনের কথা আমাদের স্মৃতিতে নেই, যে দিন আমাদের কোনো কোনো আত্মীয়ের মৃত্যু সংবাদ আসত না। ফলে রোজ সকালেই কোনো-না-কোনো আত্মীয়ের মৃত্যুসংবাদে মন-প্রাণ বিষিয়ে থাকত।

ক্রমে পরিস্থিতি যখন আরও অনেক, অনেক বেশি করে ভয়াবহ রূপ নিল, তখন আমরা পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কোনো-না-কোনো বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ শোনার প্রত্যাশায়। শেষপর্যন্ত ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল, কোনো সকালে আত্মীয় পরিজনের মৃত্যু সংবাদ না পাওয়াটাই যেন অস্বাভাবিক ব্যাপার।

শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াল যে, দক্ষিণের কোনো পত্র বাহককে দেখলে বা এমন কারো উপস্থিতির কথা শুনলেই আমাদের বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যেত, অজ্ঞাত ও অনিশ্চিত আতঙ্কে রীতিমত মুষড়ে পড়তাম। শুধু কি এ-ই? এমনকি দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত বাতাসেই যেন মৃত্যুগন্ধ পেতে লাগলাম। সে যে কী দুঃসহ যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার, তা কাউকে ভাষার মাধ্যমে তো নয়ই, কোনোভাবেই বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। এরকম চিত্ত দুর্বল করা চিন্তা আমাদের পেয়ে বসল, সর্বক্ষণের সঙ্গি হয়ে দাঁড়াল। প্রতিটা মুহূর্ত একই যন্ত্রণাদায়ক চিন্তা আমাদের মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেতে লাগল। যার ফলে অন্য কোনো ব্যাপার স্যাপার সম্বন্ধে ভাববার অবসর তো ছিলই না, কোনো ভাবনা কাছে পর্যন্ত ঘেঁষতে পারত না। পথে-ঘাটে কারো সঙ্গে দেখা হলে ওই একমাত্র মৃত্যুর আতঙ্ক ছাড়া অন্য কোনো প্রসঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে পারতাম না। মোদ্দা কথা, অন্য কোনো প্রসঙ্গ ভাবতে পারতাম না, এমনকি স্বপ্ন পর্যন্ত দেখতে পেতাম না।

এবার আমাদের গৃহকর্তার প্রসঙ্গে কিছু বলা দরকার। সে ভদ্রলোকের মেজাজটা কিন্তু অন্য ধরনের, আমাদের মতো সন্দেহপ্রবণ অবশ্যই নয়। আর একটা ব্যাপার খুবই নজরে পড়ত, নিজের মনটা বিষণ্ণতায় ভরপুর হলেও আমাদের সে বিষণ্ণতার ভাগিদার করতে মোটেই উৎসাহি তো হতোই না, বরং আমরা যাতে মৃত্যুর নিতান্ত অবাঞ্ছিত আতঙ্কটাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারি, তার জন্য সাধ্যমত সবদিক থেকে প্রয়াস চালিয়ে যেতেন।

আমাদের আতঙ্কের কারণ সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন থাকা সত্ত্বেও আমাদের গৃহকর্তা ভদ্রলোক কিন্তু তার ছায়াকে আদৌ ভয় করতেন না বরং মনকে শক্ত করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পক্ষপাতি ছিলেন।

আমি সে অভাবনীয় ভয়ঙ্কর বিষণ্ণতার অন্ধকার অতল গহ্বরে ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছিলাম যেখান থেকে আমাকে তুলে এনে শান্তি-স্বস্তিদানের সব প্রয়াসই তার নির্মমভাবে ব্যর্থ হয়ে যেতে লাগল। কেন? কীভাবে? কীসের প্রভাবে? তার লাইব্রেরির কয়েকটা বইয়ের প্রভাবের কথাই সবার আগে বলতে হয়।

আমাদের গৃহকর্তা ভদ্রলোকের লাইব্রেরির যে কয়েকটা বইয়ের কথা বললাম সেগুলোর বিষয়বস্তু এমন যে, আমাদের বুকের ভেতরের ঘাপটি মেরে থাকা বংশপরম্পরায় চলে-আসা কুসংস্কারগুলো নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠতে আরম্ভ করল।

গৃহকর্তার অনুমতি নেওয়া তো দূরের ব্যাপার, তার অজ্ঞাতে, একেবারেই গোপনে লাইব্রেরির বইগুলো আমি পড়তে আরম্ভ করলাম। তাই আমাকে অর্থহীন অস্বাভাবিক কল্পনায় বিভোর হয়ে থাকতে, আতঙ্কে মিইয়ে থাকতে দেখে তিনি প্রায়ই কিছু বুঝতে না পেরে মুখে কুলুপ এঁটে থাকাকেই শ্ৰেয় জ্ঞান করতেন। ফলে নীরবে

আমার ভাব গতিক লক্ষ্য করা ছাড়া মুখে টু-শব্দটিই করতেন না।

আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল, অশুভ লক্ষণ বিশ্বাসে। আমার জ্ঞানের সে অধ্যায়টাতে আমিনিজে ছিলাম সে বিশ্বাসের একজন বড় সমর্থক। সে অশুভ লক্ষণের প্রতি আস্থাভাজন আমার চেয়ে বড় কেউ থাকতে পারে কি না আমার অন্তত জানা নেই।

আমরা একটু সময়-সুযোগ পেলেই অশুভ লক্ষণ বিষয়বস্তুর প্রসঙ্গে দীর্ঘ উত্তপ্ত আলোচনায় লিপ্ত হতাম।

আমাদের গৃহকর্তা ভদ্রলোক সবকিছু শুনে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে জোরালো মন্তব্য করতেন–এরকম বিশ্বাস নিতান্তই ভিত্তিহীন। মনের দুর্বলতা থেকে এরকম বিশ্বাস জন্মায়। তারপর তা অন্তরের অন্তঃস্থলে জগদ্দল পাথরের মতো স্থায়ী আসন পেতে বসে।

তার বক্তব্যকে সমর্থন করা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না। মুচকি হেসে প্রতিবাদের স্বরে বলে উঠলাম–দেখুন, যে কোনো স্বাভাবিক ও প্রচলিত বিশ্বাসের মধ্যে কিছু না কিছু অবশ্য-সত্য থাকেই থাকে। আর সে কারণেই তো তা যথেষ্ট শ্রদ্ধা লাভ করার যোগ্য বিবেচিত হয়।

এবার শুনুন, প্রকৃত ঘটনাটা আপনাদের সামনে ব্যক্ত করছি। আমি এখানে, বিশেষ করে এ বাড়িটায় আশ্রয় নেবার পরমুহূর্ত থেকেই আমাকে কেন্দ্র করে এমন এক অত্যাশ্চর্য ও অবর্ণনীয় ঘটনা ঘটে যেতে লাগল, যার একটা বড় ভগ্নাংশই ছিল ভাবী অমঙ্গলসূচক। তাই তো আমি সেটাকে অশুভ লক্ষণ বলেই ধরে নিয়েছিলাম। আর ক্রমে তা আমার মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে স্থায়ী আসন পেতে নিল। তাতে আমি কেবল ভয়ই পেলাম না, যাকে বলে ভয়ে একেবারে মুষড়ে পড়লাম। আকস্মিক ভয়-ভীতিতে আমার বুদ্ধি যেন লোপ পেয়ে গেল।

আমি ব্যাপারটায় এমনই বিচলিত ও জ্ঞান-বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে পড়লাম যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমার আশ্রয়দাতা বন্ধুবরের কাছে ঘটনাটা সম্বন্ধে কিছু বলতে উৎসাহি হলাম না, বললামও না কিছুই। কয়েকবার চেষ্টা করেও আমাকে থমকে যেতে হলো, একটা কথাও বা সম্ভব হলো না।

সেদিনটায় ছিল খুবই গরম। দিনের শেষে একটা বই হাতে করে আমি খোলা জানালার ধারে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। আমার চোখের সামনে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত নদীর তীর দুটো বিরাজ করছিল। আর চোখে পড়ছিল বহু দূরবর্তী। পাহাড়ের চূড়া আর পাহাড়ের গায়ের দৃশ্যাবলী। আমার কাছাকাছি সবচেয়ে কাছের। একটা জায়গার বনভূমির আকাশ-ছোঁয়া গাছগুলো পাহাড়ের ধস নামার ফলে গাছগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়ায় জায়গাটাকে একেবারে ন্যাড়া ন্যাড়া মনে হচ্ছিল।

আমার কিন্তু হাতের বইটার দিকে আদৌ নজর ছিল না। অনেকক্ষণ আগে থেকেই আমার মন বইটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শহরের জ্বলন্ত দুঃখ-দুর্দশা আর জনমানব শূন্যতার মধ্যে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিল। অপলক চোখে বাইরের নিকট ও দূরবর্তী। দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে শহরের চরম দুর্দশার কথাই নিরবচ্ছিন্নভাবে বইটার পাতা থেকে আমি যখন চোখ দুটোকে তুলে নিয়েছিলাম ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার দৃষ্টি গিয়ে পড়ল পাহাড়ের ওই ন্যাড়া স্থানটার ওপর। হ্যাঁ, ন্যাড়া স্থানটার ওপর দৃষ্টি পড়লেও মুহূর্তের মধ্যেই আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল তারই বিশেষ একটা কিছুর ওপর। কি সেটা তাই না? সেটা এমন বিকৃত আর ভয়ালদর্শন একটা জীবন্তু দৈত্য যে বিদ্যুগতিতে পাহাড়টার শীর্ষদেশ থেকে চোখের পলকে নিচে নেমে এলো।

ভয়ালদর্শন সে দৈত্য নিচে নেমে তেমনই দ্রুতগতিতে পাশের গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেল। ব্যস, মুহূর্তের মধ্যেই সেটা চোখের আড়ালে চলে গেল।

অতিকায় বিকৃত আর ভয়ালদর্শন জীবটা সে মুহূর্তে আমার নজরে পড়ল তখন আমার পরিস্থিতি এমনই সঙ্কটজনক হয়ে পড়ল যে, আমার মানসিক সুস্থতা সম্বন্ধে আমার নিজের মনেই যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক ঘটল। আর যা-ই হোক, আমার চোখের ওপর অন্তত আমি যে পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলাম, কিছুমাত্র ভুল নয়।

দীর্ঘসময় ধরে আমি নিজের সম্বন্ধে, আমার আকস্মিক মানসিক পরিবর্তন সম্বন্ধে নীরবে গভীর ভাবনায় তলিয়ে রইলাম। শেষপর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারলাম, আর যা-ই হোক আমি অন্তত পাগল হয়ে যাইনি আর জেগে স্বপ্নও দেখিনি।

এতকিছু সত্ত্বেও আমি যখন, যার কাছেই ওই দৈত্যটা সম্বন্ধে বিবরণ দিয়েছি, সব ক্ষেত্রেই বলেছি, আমি তাকে স্বচক্ষে স্পষ্ট দেখেছি আর লক্ষ্যও করেছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আমার পাঠক-পাঠিকারা তখন কিন্তু এ ব্যাপার দুটো সম্বন্ধে অবশ্যই আমার মতো এতখানি নিশ্চিত, এতখানি নিঃসন্দেহ হতে পারেননি। অন্তরের অন্তঃস্থলে কিছু না-কিছু দ্বিধা তাদের থাকারই কথা।

জঙ্গলের সে কয়টা সুদীর্ঘ, আকাশছোঁয়া গাছ ধ্বংসের কবল থেকে অব্যাহতি পেয়েছিল। তাদের মধ্যে দীর্ঘতম সে গাছটার গা-ঘেঁষে অতিকাল বিকৃতদর্শন প্রাণিটা চলে গেল তার ব্যাসের সঙ্গে প্রাণিটার তুলনা করার পর আমার মধ্যে ধারণা জন্মাল যে, এখনকার জলপথ-বেয়ে যে সব জাহাজ যাতায়াত করে তাদের যে কোনোটা থেকে সেটা আকারে বড়, অবশ্যই বড়।

এতকিছু থাকতে আমি কেন জাহাজটার কথা উল্লেখ করলাম, তাই না? আসলে। প্রাণীটার অতিকায়ত্ব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে জাহাজ ছাড়া অন্য কোনো জুতসই উপমা আমার মনে আসেনি।

আমাদের চুয়াত্তর টনের জাহাজের খোলে কথা বিবেচনা করলেই প্রাণিটার দেহটা সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধঅরণা করে নেওয়া সম্ভব।

বিকৃতদর্শন অতিকায় প্রাণিটার ষাট-সত্তর ফুট লম্বা আর সে অনুপাতে মোটা শুড়টার একেবারে শেষপ্রান্তে ইয়া পেল্লাই মুখটার অবস্থান। আর যে জায়গাটা এ শুড়টার উৎস সে জায়গায় লম্বা-লম্বা কালো লোমে ঢাকা। সেগুলো এতই ঘন যে, এক বিশ মোষও তাদের দেহ থেকে এত লোম সরবরাহ করতে পারবে না। সে ঘন-কালো লোমের জঙ্গল থেকে দুদিকে দুটো ইয়া মোটা ও লম্বা লম্বা দুটো দাঁত বেরিয়ে এসেছে। যারা বুনো শুয়োরের দাঁতের চেয়েও অনেক, অনেক বেশি বড় ধবধবে সাদা আর রীতিমত চকচকে ঝকঝকে। আর তাদের পরিধিও সে বুনো শুয়োরের দাঁতের চেয়ে কতগুণ বেশি, তার হিসাব করা বাস্তবিকই বড়ই সমস্যার ব্যাপার।

আরও আছে, সুবিশাল গুঁড়টার দুদিক থেকে সমান্তরালভাবে একটা লম্বা দাঁত সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। লম্বা ত্রিশ বা চল্লিশফুট। আর এক ঝলক দেখলেই মনে হয় সেটা বুঝি লক্ষ কোটি ত্রিভুজাকৃতি স্বচ্ছ স্ফটিকের সমন্বয়ে গঠিত। বিদায়ী সূর্যের শেষ রক্তিম আভা পড়ে সেটা রীতিমত ঝিমি করছে। দাঁতের গঠনও বিচিত্র। মাটির দিকে মুখ করা একটা কীলককে যেমন দেখায় ঠিক সে রকমই তার গঠন। সেখান থেকে দুজোড়া ডানা বেরিয়েছে। পেখম-মেলা ডানার মতোই দেখতে। সবগুলো পাখাই ঘন ধাতব আঁশ দিয়ে ঢাকা। আর এক একটা আঁশের ব্যাস দশ বারো ফুট তো হবেই। আর পাখাসমেত পেখম-মেলা ডানাগুলোর দৈর্ঘ্য কম করেও একশো গজ তো হবেই। এক জোড়ার ওপর তার এক জোড়া ডানা চমৎকারভাবে অবস্থান করছে।

বিকৃত আর ভয়ালদর্শন ভয়ঙ্কর সে প্রাণীটাকে, বিশেষ করে তার বুকের ওপর আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে এমন জমাট বাঁধা ভীতির সঞ্চার হলো যার ফলে একটা নিশ্চিত বিপদের অনুভূতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বহু চেষ্টা করে, কোনো যুক্তি দিয়েও আমি জগদ্দল পাথরের মতো বুকে চেপে-বসা অনুভূতি দূর করে নিজেকে হালকা করে পারলাম না, কিছুতেই না।

আমি যখননিদারুণ আতঙ্ক-জ্বরের শিকার হয়ে রীতিমত কুঁকড়ে গিয়েছিলাম ঠিক তখনই আমার নজরে পড়ল, ভয়ঙ্কর সে জানোয়ারটা দুটো চোয়াল অস্বাভাবিক রকম ফাঁক হয়ে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে বেরিয়ে এলো বুকের রক্ত হিম করে দেওয়া কর্কশ, একেবারেই ভয়ঙ্কর একটা স্বর, যেটা আমার স্নায়ুগুলোর গায়ে আচমকা মরণ-ঘণ্টার মতো কঠিনভাবে আঘাত হানল।

ভয়ালদর্শন দৈত্যটা পাহাড়ের পাদদেশের গভীর জঙ্গলে ঢুকে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পরই সংজ্ঞা হারিয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়ে গেলাম। কতক্ষণ যে সেখানে সংজ্ঞাহীনভাবে এলিয়ে পড়েছিলাম বলতে পারব না।

একসময় আমার মধ্যে ধীরে ধীরে সংজ্ঞা ফিরে এলো। চোখ মেলে তাকালাম। ধীরে ধীরে উঠে বসলাম।

সংজ্ঞা ফিরে পাবার পর মেঝেতেই কিছুক্ষণ অথর্বের মতো বিষণ্ণ মনে বসে রইলাম। সেখানে বসেই আমার মনে প্রথম ইচ্ছা জাগল। একটু আগে আমি যা-কিছু দেখলাম, যা-কিছু শুনলাম সবই, কিছুমাত্রও গোপন না করে হুবহু বন্ধুর কাছে বলব।

শেষপর্যন্ত কিন্তু আমার সে ইচ্ছাটা মনেই রয়ে গেল, বন্ধুর কাছে ঘটনাটা ব্যক্ত করতে পারলাম না। আসলে মনের গোপন করে এমন একটা বিতৃষ্ণা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল যার ফলে সে ইচ্ছাটাকে আমার পক্ষে আর বাস্তবায়িত করা সম্ভব হলো না। তাই যা দেখেছি, যা শুনেছি সবই আমার অন্তরের অন্তঃস্থলেই চাপা পড়ে রইল।

এ ঘটনার তিন-চার দিন পর এক সন্ধ্যায় বন্ধুবর আর আমি যে ঘরটার জানালা দিয়ে আমি যে লোমহর্ষক ঘটনাটা, যে অলৌকিক দৃশ্যটা চাক্ষুষ করেছিলাম ঠিক সে ঘরটাতেই বসেছিলাম।

সে জানালাটা দিয়ে আমি সে ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা চাক্ষুষ করেছিলাম আমি ঠিক সেখানে, সে চেয়ারটায় বসে অদূরবর্তী পাহাড় আর পার্বত্য জঙ্গলটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিলাম। আর আমার বন্ধুবর? সে আমার অদূরে একটা আরাম-কেদারায় শরীর। এলিয়ে দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় ছিল। আসলে আমার উৎসাহ আগ্রহে সাড়া দিতে গিয়ে সে আমার সঙ্গে অবস্থান করলেও আমাদের উভয়ের উৎসাহের মধ্যে ফারাক যে বিস্তরই ছিল তা তো আর অস্বীকার করার জো নেই।

আমি বন্ধুকে আগেই অলৌকিক ঘটনাটা সম্বন্ধে সামান্য আভাস দিয়ে রেখেছিলাম। তবে তা খুবই সামান্য। এমন স্থান ও কালের এ-মিলনের ফলেই যেন আমার মধ্যে সে দিনের সে ভয়ঙ্কর ঘটনাটা তার কাছে সবিস্তারে ব্যক্ত করতে আমি অতিমাত্রায় উৎসাহি হয়েছিলাম।

আমি কিছুমাত্র গোপন না করেই বন্ধুর কাছে সেদিনের সে অলৌকিক ঘটনাটা সবিস্তারে বর্ণনা করলাম। সে অত্যুগ্র আগ্রহের সঙ্গে সবকিছু ধৈর্য ধরে শুনল।

গোড়ার দিকে সে আমার কথা শুনে সরবে হেসে উঠল। যেন পুরো ব্যাপারটাই হেসে উড়িয়েই দিল। কিন্তু সে আর কতক্ষণ? পরমুহূর্তেই তার সে প্রাণখোলা হাসি যেন কপুরের মতো নিঃশেষে মিলিয়ে গিয়ে চকের মতো মিলিয়ে গেল। চোখ-মুখে এমন একটা গভীর ভাব ফুটে উঠতে আরম্ভ করল যেন আমার মানসিক অসুস্থতা সম্বন্ধে সে নিঃসন্দেহ হয়ে পড়েছে।

আমি বন্ধুর ওপর থেকে দৃষ্টি তুলে নিয়ে সে বিশেষ জানালার পাশে পাহাড় আর জঙ্গলটার ওপর চোখের মণি দুটোকে বুলাতে লাগলাম। একেবারে হঠাৎই আমার দৃষ্টি এক জায়গায় থমকে গেল। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল বিকৃত অতিকায় ভয়ালদর্শন দৈত্যটা। আমি সঙ্গে সঙ্গে বিকট স্বরে আর্তনাদ করে উঠলাম। আর্তনাদ করতে করতেই আমি জঙ্গলের সে বিশেষ স্থানটার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলাম।

আমার আর্তস্বর কানে যেতেই বন্ধুবর যন্ত্রচালিতের মতো চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার কাছে গিয়ে আমার প্রায় গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল।

সে আমার অঙ্গুলি-নির্দেশিত পথে অত্যুগ্র আগ্রহের সঙ্গে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার। মুহূর্তে তার চোখে-মুখে অবিশ্বাস আর সন্দেহের ছাপ ফুটে উঠল। সে কিছু দেখতে পেল না, কিছুই না। শেষপর্যন্ত হতাশ হয়ে আমার মুখের দিকে এমন চাপা ক্রোধপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল যে, যেন আমাকে কাঁচাই গিলে খেয়ে ফেলবে। তবে সে অতিকায় প্রাণীটা যে ভাবে আর যে পথে ন্যাড়া পাহাড়টা থেকে নিচের দিকে দুলকি। চালে, জঙ্গলটার দিকে নেমে গেছে তার বিস্তারিত বিবরণ, কিছুমাত্রও বাদ না দিয়ে তার কাছে ব্যক্ত করলাম।

আমি ব্যাপারটা সম্বন্ধে আগেই কিছু না কিছু ভিত ছিলাম বটে। এবার জমাটবাধা ভীতি আমার বুকের সবটুকু স্থান জুড়ে বসল। যেন আমার মনে হচ্ছে, এ দৃশ্য নির্ঘাৎ আমার মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ। আর তা যদি নেহাৎ না-ই হয় তবে উন্মাদদশা প্রাপ্ত হওয়ার সূচনা তো বটেই।

চেয়ারে বসা-অবস্থায়ই যন্ত্রচালিতের মতো দ্রুত তুলে নিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। বুকের ভেতরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ধুকপুকানি হয়েই চলেছে।

কয়েকমুহূর্ত আতঙ্কের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে আমি আবার যখন চোখ মেলে তাকালাম তখন কিন্তু ভয়ঙ্কর সে ছায়ামূর্তিটা আর নজরে পড়ল না। চোখের সামনে কেবলমাত্র পাহাড় আর পাহাড়ে জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই দেখা গেল না।

আমার বন্ধুবর তখনও চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে নীরবে বসেছিল। চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ লক্ষিত হলেও আগের মতো তেমন প্রকট নয়। আর মনের প্রশান্তিও অনেকাংশে কেটে যাওয়ায় অন্তত কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।

স্বাভাবিকতা ফিরে পাওয়ার পর সে ভৌতিক জানোয়ারটা সম্বন্ধে আমাকে বিভিন্ন ধরনের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করতে লাগল।

আমিও তার প্রতিটা প্রশ্নের যথাযথ উত্তরদানে তাকে সাধ্যমত খুশি করতে লাগলাম। আমার বক্তব্য শেষপর্যন্ত শোনার পর খুশি হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরমুহূর্তেই তার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠল। তার চোখ মুখের ভাব দেখে আমার স্পষ্টই মনে হলো যেন বুকের ওপর থেকে ভারী একটা পাথর হঠাৎ নেমে গেছে। ব্যস এ পর্যন্তই। তারপরই যে সে প্রসঙ্গটা থেকে সরে গিয়ে দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করল। অচিরেই সে আলোচনায় রীতিমত মজে গেল। আমি নীরব-শ্রোতার ভূমিকা পালনে ব্রতী হলাম।

কিছুক্ষণ একনাগাড়ে আলোচনা চালাবার পর আমার বন্ধুবর নীরব হলো। এবার সে দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে বইয়ের তাকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর। বইয়ের সারি ঘাটাঘাটি করে প্রাণীবিজ্ঞানের একটা বই টেনে বের করে আনল। সেটাকে হাতে নিয়ে ফিরে এসে আবার নিজের চেয়ারটায় ধপাস করে বসে পড়ল।

হাতের বইটা খুলেই সে থমকে গেল। আমার দিকে মুখ তুলে তাকাল। বইয়ের পাতাটার দিকে চোখ পড়তেই আমার দিকে তার তাকানোর উদ্দেশ্যটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। বইয়ের অক্ষরগুলো এতই ছোট যে, চেয়ারে বসে সেগুলো পাঠোদ্ধার করা তার পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই উপায়ান্তর না দেখে আমরা চেয়ার পাল্টাপাল্টি করে নিলাম। এবার সে জানালার গায়ে আমার সে হাতলওয়ালা চেয়ারটায় বসল। স্বাভাবিকভাবেই আমি তার আরাম চেয়ারটা দখল করলাম। সে এবার বইটার একটা বিশেষ পাতা খুলে জোরে জোরে উচ্চারণ করে পড়তে আরম্ভ করল।

এক সময় বইয়ের পাতাটা থেকে চোখ তুলে আমাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল– শোন, ভয়ঙ্কর দৈত্যটার বর্ণনা দিতে গিয়ে তুমি সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়গুলোর ওপর এত বেশি গুরুত্ব না দিতে তবে সেটা যে প্রকৃতপক্ষেই কোনোদিনই তোমার মধ্যে সম্যক ধারণা জন্মানো আমার পক্ষে সম্ভব হতো না, খুবই সত্য কথা।

আমি প্রায় অস্ফুট উচ্চারণ করলাম–হুম!

সে বলে চলল–হ্যাঁ বন্ধু, যা বলছি শতকরা একশো ভাগই সত্য।

আমি নীরবে মুচকি হাসলাম।

সে বলেই চলল–গোড়াতেই তোমাকে একটা স্কুল পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ পড়ে শোনাচ্ছি। ধৈর্য ধরে শোন। আমি এখন পড়ছি, ইনসেক্টা অর্থাৎ পতঙ্গ শ্রেণির অন্তর্গত বহু প্রাণি সমন্বিত জাতির অন্তর্গত। ক্রিপাসকুলারিয়া পরিবারভুক্ত–স্ফিংস প্রজাতির কথা।

এই বইটায় স্ফিংস প্রজাতির যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা হল–

ধাতুর মতো ঝিল্লা দেয় এমন ছোট ছোট রঙিন আঁশে মোড়া চারটি ডানা। মুখটা চোয়াল থেকে নিচের দিকে ঝুলে-পড়া এবং লম্বা নাক ওয়ালা। মুখের দুধারে ইয়া বড় বড় গোছা গোছা লোম থাকে। আর নিচের দিকের ডানা দুটো শক্ত ও লম্বা লোমের সাহায্যে ওপরের চোয়ালের সঙ্গে শক্তভাবে আটকানো। আর শুয়োগুলো লম্বা-লম্বা লাঠির মতো আর স্কটিকের মতো স্বচ্ছ। তলপেটটা বেশ তীক্ষ্ণ।

মাথার খুলিওয়ালা স্ফিংস অতীতে করুণ কান্নার মতো আওয়াজ করে সাধারণ মানুষের মনে রীতিমত আতঙ্কের সঞ্চার করত। এর পরও মড়ার খুলির কুল-চিহ্ন দেহের ওপর লক্ষিত হয়। বাস্তবিকই বিচিত্র এক বিশেষ প্রজাতির প্রাণী স্ফিংস।

বন্ধুবর এ পর্যন্ত পড়ে থামল। এবার বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে আমার মুখের দিকে তাকর।

আমার চোখে-মুখে তখন কৌতূহলের ছাপ। ভয়ালদর্শন দৈত্যটাকে দেখামাত্র সামনের দিকে ঝুঁকে সে ভঙ্গিতে আমি বলেছিলাম ঠিক সে ভঙ্গিতে সে এবার বলল। তারপর সে বলতে লাগল–আরে আরে, ওই তা–সে লম্বা পায়ে পাহাড়ের ওপর উঠে যাচ্ছে। ওই যে! ও দিকে!

আমি তার অঙ্গুলি-নির্দেশিত পথে পাহাড়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলাম।

বন্ধুবর পূর্বপ্রসঙ্গের জের টেনে এবার বলল–দেখ বন্ধু আমি কিন্তু এখন আর সে জানোয়ারটাকে অদ্ভুতদর্শন জানোয়ার বলে স্বীকার করে না নিয়ে পারছি না। তবে এ-কথা না বলে পারছি না, তুমি কল্পনার মাধ্যমে সেটাকে যেমন দেখেছিলে আসলে কিন্তু অতটা বৃহদাকার নয়, আবার ততটা দূরেও অবস্থান করছে না।

আমি বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখে তার মুখের দিকে নীরবে তাকালাম। সে বলে চলল–আসল ব্যাপারটা কি জান বন্ধু? আমি বলে উঠলাম–আসল ব্যাপার? তোমার আসল ব্যাপারটা কি, বলবে কী?

অবশ্যই। ব্যাপারটা হচ্ছে, জানালার শার্সির সোজা মাকড়শা যে জাল বুনেছে সেটা বেয়ে প্রাণীটা যখন শরীরটাকে বার বার অদ্ভুতভাবে এদিক ওদিক বাঁকিয়ে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে তখন আমি সেটাকে এক ইঞ্চির ষোল ভাগের এক ভাগ দেখতে পাচ্ছি। আর আমার চোখের মণি দুটো থেকে তার দূরত্ব একই, বুঝলে?

সকল অধ্যায়

১. দ্য আনপ্যারালালড অ্যাডভেঞ্চার অব ওয়ান হ্যান্স ফাল
২. ন্যারেটিভ আর্থার গর্ডন পাম (উপন্যাস)
৩. দ্য মাস্ক অব দ্য রেড ডেথ
৪. ফোর বিস্টস্ ইন ওয়ান দ্য হোম–কেমলোপার্ড
৫. বেরোনিস
৬. দ্য পারলয়েন্ড লেটার
৭. দ্য ডেভিল ইন দ্য বেলফ্রাই
৮. দ্য গোল্ড-বাগ
৯. লিজিয়া
১০. দ্য ফল অব দ্য হাউস অব আশার
১১. শ্যাডো–এ প্যারাবল
১২. দ্য ডোম্যাইন অব আর্নহিস
১৩. দ্য আর্ট দ্য ম্যান
১৪. ইলিওনোরা
১৫. দ্য ওভাল পর্ট্রেইট
১৬. ভন কেমপেলেন অ্যান্ড হিস ডিসকভারি
১৭. নেভার বেট দ্য ডেভিল ইয়োর হেড
১৮. এ টেল অব দ্য র‍্যাগড মাউন্টেইনস
১৯. দ্য প্রিম্যাচিওর বেরিয়াল
২০. দ্য কাস্ক অব অ্যামন্টিলাডো
২১. মেজেংগারস্টিন
২২. মাইলেন্সে ফেবল
২৩. থ্রী সানডেস ইন এ উইক
২৪. দ্য ওবলঙ বক্স
২৫. উইলিয়াম উইলসন
২৬. দ্য টেল-ট্যালি হাট
২৭. মেনাস্ক্রিপ্ট সাউন্ড ইন এ বটল
২৮. দ্য অ্যাসাইনমেন্ট
২৯. এ ডিসেন্ট ইন টু দ্য ম্যায়েস্ট্রোম্
৩০. দ্য পাওয়ার অব ওয়ার্ডস
৩১. দ্য মার্ডার্স ইন দ্য রু মার্গ
৩২. দ্য অ্যাঞ্জেল অব দ্য অড
৩৩. লিওনাইসিং
৩৪. মোরেল্লা
৩৫. হপ ফ্রগ
৩৬. দ্য স্ফিংস
৩৭. এ টেল অব জেরুজালেম
৩৮. দ্য বেলুন-হোয়্যাক্স
৩৯. সেই বেলুনের কাহিনী
৪০. ডাইরির পাতা থেকে
৪১. ফোর বীস্টস ইন ওয়ান
৪২. দ্য কনভারসেসন অব ইরোজ অ্যান্ড চারমিয়ান
৪৩. দ্য ফ্যাকটস ইন দ্য কেস অব মি. ভালডিমার
৪৪. ইম্প অফ দ্য পারভাস
৪৫. লন্ডস কটেজ
৪৬. ডিডলিং
৪৭. দ্য সিস্টেম অব ডক্টর টার অ্যান্ড প্রফেসর ফেদার
৪৮. লস অব ব্রিদ
৪৯. দ্য স্পেকট্যাকল
৫০. মেসমেরিক রেভেল্যেশন
৫১. দ্য কোয়াকস অব হেলিকন–এ স্যাটায়ার
৫২. ম্যাগাজিন রাইটিং পিটার স্নক
৫৩. দ্য ডিউক ভিলা ওমলেট
৫৪. দ্য ম্যান অব দ্য ক্রাউড
৫৫. সাইলেন্স-এ ফেল
৫৬. দ্য ম্যান দ্যাট ওয়াজ ইউজড আপ
৫৭. ফিলজফি অব ফার্নিচার
৫৮. দ্য লিটারারি লাইফ অব থিংগাস বব এসকোয়ার
৫৯. দ্য আয়ারল্যান্ড অব দ্য কে
৬০. অ্যাসটোরিয়া
৬১. শ্যাডো-এ প্যারেবল
৬২. এ টেল অব জেরুসালেম
৬৩. রিভিউ অব স্টিফেন্স অ্যারেবিয়া ট্রো
৬৪. বিজনেসম্যান
৬৫. বন-বন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন