অ্যাসটোরিয়া

অ্যাডগার অ্যালান পো

ওয়ালডর্ফ।

জার্মানির এক অখ্যাত অজ্ঞাত গ্রাম ওয়ালডর্ফ। জন জ্যাকব অ্যাসর্টর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

জন জ্যাকব ধনকুবের হওয়ার অত্যুগ্র বাসনা নিয়ে যৌবনের প্রারম্ভেই আমেরিকায় আসেন।

আমেরিকার শহরে শহরে ঘুরে তিনি কারবারের ধান্ধা করতে লাগলেন। শেষপর্যন্ত বহু চিন্তা-ভাবনার পর তিনি চামরার কারবার ফেঁদে বসেন। এটা যে একটা কারবার হতে পারে, এতে নাম-যশ হওয়াও সম্ভব আর এ কারবারের মাধ্যমেই যে সরকারের সুনজরে আসা যেতে, পারে তা তিনি নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধি দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন।

জন জ্যাকব দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির রেড ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে পালা দিয়ে প্রেসিডেন্ট জেকারসমের সান্নিধ্যে এসে পশুচর্মের ব্যবসাকে রমরমা করে গড়ে তুলতে আগ্রহি হয়েছিলেন। আর এ-কাজের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, জনবসতিহীন জায়গায় বসতি গড়ে তোলা সম্ভব, সাম্রাজ্যের প্রসার ও সমৃদ্ধি ঘটতে পারে। দেশের অর্থকড়ি দেশেই চলে যাবে আর বিদেশি ব্যবসায়ীদের দৌলতে দেশের অর্থ বিদেশে পাড়ি দেবে না।

জন জ্যাকবের ধন সম্পদ প্রচুরই ছিল। টাকাই তার কাছে আসল নয়। একমাত্র টাকার জন্যই তিনি এরকম একটা দুঃসাহসিক কাজে নিজেকে লিপ্ত করেননি।

তবে জন জ্যাকবের কারবার ফাদার পিছনে কোন্ উদ্দেশ্য ছিল? তার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, আমেরিকার টাকাকড়ি যাতে দেশের বাইরে চলে না যায়।

আমেরিকাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে তিনি দেশের দুর্গমতম অঞ্চলেও অভিযান পাঠাতে দ্বিধা করেননি। আর এর জন্য তাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে যথেষ্টই। তিনি কেবলমাত্র স্থলপথেই নয়, পানিপথেও অভিযান পাঠিয়েছিলেন।

জন জ্যাকব নিজের টাকা খরচ করে কারবার স্থাপন করেছিলেন। সে টাকার পরিমাণ নেহাৎ কম নয়।

কারবার গড়ে তোলার জন্য সরকার অর্থ সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হননি। শুধু কি এই? এমনকি পাঁচ বছরে কারবার চালাতে গিয়ে কিছু লোকসান হয়। তবে সরকার তা বহন করাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কথাটাকে কেউ কেউ নিছকই গালগপ্প মনে করতে পারেন। যাগে যে যা-ই বলুক বা ভাবুক না কেন, তারই গাটের টাকায় খরিদ করা জাহাজের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা যখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তখন নৃশংস প্রকৃতির রেড ইন্ডিয়ানরা মওকা বুঝে জাহাজ আক্রমণ করে বসে। বেপরোয়া লুঠতরাজ চালায়। জাহাজের সব কর্মীকে খতম করে দেয়। এমনকি সব শেষে জাহাজটাকে ধ্বংস করে দিতেও তারা এতটুকু দ্বিধা করে না।

স্থলঅভিযাত্রীদের মন থেকে এ ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা মুহূর্তের জন্যও মুছে যায়নি।

স্থলঅভিযাত্রীরা একদিন খোলাখুলিভাবে রেড ইন্ডিয়ানদের দলপতিকে। বলেছিল–তোমরা কি ভুলে গেছ, গুটি বসন্ত যখন তোমাদের পল্লিতে মহামারীর রূপ নিয়েছিল তখন তোমাদের গ্রামকে গ্রাম উজার হয়ে গিয়েছিল? আজ তোমাদের পাখা গজিয়েছে দেখছি!

এবার একটা বেতাল তাদের দিকে এগিয়ে ধরে স্থলঅভিযাত্রীদের একজন। বলল–আমার হাতের এ বোতলটায় কী আছে তোমরা কেউ বলতে পার?

রেড ইন্ডিয়ানদের দলপতি বোতলটার দিকে নীরবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। স্থলঅভিযাত্রী লোকটা এবার অপেক্ষাকৃত গম্ভীর স্বরে বলল–এর মধ্যে আমি গুটি বসন্তকে পুরে রেখেছি।

গুটি বসন্তের কথা শোনামাত্র রেড ইন্ডিয়ানদের দলপতি রীতিমত আঁতকে উঠল।

স্থলঅভিযাত্রী লোকটা পূর্বস্বর অনুসরণ করেই বলে চলল–বোতলের ছিপি খোলামাত্র বোতল থেকে গুটি বসন্ত বেরিয়ে এসে তোমাদের সবাইকে সাবাড় করে দেবে? কথাটা মনে রেখো।

ব্যস, আর যাবে কোথায়! নরঘাতক রেড ইন্ডিয়ানরা কথাটা শোনামাত্র ফুটো বেলুনের মতো একেবারে চুপসে গেল। আর লুঠতরাজ ও নরহত্যা করতে উৎসাহি হয়নি।

জন জ্যাকবের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলো। তিনি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনি নতুন উদ্যমে আবার কারবার শুরু করলেন। অচিরেই তার কারবার রীতিমত রমরমা হয়ে উঠল। রেড ইন্ডিয়ানরা নিতান্ত অনুগত ভূত্যের মতো তাকে পশুচর্ম যোগান দিতে। আরম্ভ করল।

কারবারের সুবিদার্থে জন জ্যাকব নদীর পাড় ঘেঁষে কিছুদূর বাদ দিয়ে একটি করে কেন্দ্র স্থাপন করলেন, যেখান থেকে রেড ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে পশুচর্ম সংগ্রহ করা সহজতর হয়।

জন জ্যাবকবের কারবার ক্রমে ফুলে-ফেঁপে এমন বিশাল আয়তন ধারণ করতে লাগল যাতে ইংরেজ ব্যবসায়ীরা ভড়কে গেল। তিনি তাদের সঙ্গে পুরোদমে পাল্লা দিয়েই কারবার চালাতে লাগলেন।

এভাবে ইংরেজ টেক্কা দিয়ে কারবার চালাতে চালাতে দেশ জুড়ে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। শুরু হলো ভয়ঙ্কর যুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

জন জ্যাকবের পরিকল্পনা ছিল যথার্থই নিখুঁত। কিন্তু পরিকল্পনা নিখুঁত হওয়া সত্ত্বেও তাকে সফল করে তোলা তার পক্ষে সম্ভব হলো না, কিছুতেই পারলেন না।

তবে এও সত্যি যে, পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য তাকে দোষারোপ করা যাবে না। দোষ যে তার নয়, এটাই সত্যি। কেন তার ঘাড়ে দোষ চাপানো যাবে না? ব্যাপারটা হচ্ছে, আমেরিকার দুর্গমতম অঞ্চলে তিনি একের পর এক অভিযান চালিয়ে পশুচর্ম সংগ্রহ করছিলেন। তারপর সংগৃহীত পর্বত প্রমাণ পশুচর্ম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আর চীনে রপ্তানি করেন। উদ্দেশ্য যাতে আমেরিকার চোখ খুলে যায়।

তার মনোবল ছিল বাস্তবিকই সুদৃঢ়। অন্তরে অফুরন্ত উচ্চাশা পোষণ করত, নিজের ওপর আস্থাও ছিল যথেষ্টই আর দুঃসময়কে কিভাবে সুসময়ে পরিণত করা যায়। সে ফন্দিও অবশ্যই তার জানা ছিল।

১৮১২ খ্রিস্টাব্দে অ্যাসটোরিয়া নামক একটা অভিযানের বই ছাপা হয়ে বাজারে ছাড়া হয়। এর পাতায় পাতায় জন জ্যাকবের দুৎসাহসিক অভিযানের টুকরো টুকরো শ্বাসরোধকারী বিবরণ ছাপা হয়েছে। যারা পড়তে ও জানতে আগ্রহি তাদের জন্যই এ কথা বলা।

সকল অধ্যায়

১. দ্য আনপ্যারালালড অ্যাডভেঞ্চার অব ওয়ান হ্যান্স ফাল
২. ন্যারেটিভ আর্থার গর্ডন পাম (উপন্যাস)
৩. দ্য মাস্ক অব দ্য রেড ডেথ
৪. ফোর বিস্টস্ ইন ওয়ান দ্য হোম–কেমলোপার্ড
৫. বেরোনিস
৬. দ্য পারলয়েন্ড লেটার
৭. দ্য ডেভিল ইন দ্য বেলফ্রাই
৮. দ্য গোল্ড-বাগ
৯. লিজিয়া
১০. দ্য ফল অব দ্য হাউস অব আশার
১১. শ্যাডো–এ প্যারাবল
১২. দ্য ডোম্যাইন অব আর্নহিস
১৩. দ্য আর্ট দ্য ম্যান
১৪. ইলিওনোরা
১৫. দ্য ওভাল পর্ট্রেইট
১৬. ভন কেমপেলেন অ্যান্ড হিস ডিসকভারি
১৭. নেভার বেট দ্য ডেভিল ইয়োর হেড
১৮. এ টেল অব দ্য র‍্যাগড মাউন্টেইনস
১৯. দ্য প্রিম্যাচিওর বেরিয়াল
২০. দ্য কাস্ক অব অ্যামন্টিলাডো
২১. মেজেংগারস্টিন
২২. মাইলেন্সে ফেবল
২৩. থ্রী সানডেস ইন এ উইক
২৪. দ্য ওবলঙ বক্স
২৫. উইলিয়াম উইলসন
২৬. দ্য টেল-ট্যালি হাট
২৭. মেনাস্ক্রিপ্ট সাউন্ড ইন এ বটল
২৮. দ্য অ্যাসাইনমেন্ট
২৯. এ ডিসেন্ট ইন টু দ্য ম্যায়েস্ট্রোম্
৩০. দ্য পাওয়ার অব ওয়ার্ডস
৩১. দ্য মার্ডার্স ইন দ্য রু মার্গ
৩২. দ্য অ্যাঞ্জেল অব দ্য অড
৩৩. লিওনাইসিং
৩৪. মোরেল্লা
৩৫. হপ ফ্রগ
৩৬. দ্য স্ফিংস
৩৭. এ টেল অব জেরুজালেম
৩৮. দ্য বেলুন-হোয়্যাক্স
৩৯. সেই বেলুনের কাহিনী
৪০. ডাইরির পাতা থেকে
৪১. ফোর বীস্টস ইন ওয়ান
৪২. দ্য কনভারসেসন অব ইরোজ অ্যান্ড চারমিয়ান
৪৩. দ্য ফ্যাকটস ইন দ্য কেস অব মি. ভালডিমার
৪৪. ইম্প অফ দ্য পারভাস
৪৫. লন্ডস কটেজ
৪৬. ডিডলিং
৪৭. দ্য সিস্টেম অব ডক্টর টার অ্যান্ড প্রফেসর ফেদার
৪৮. লস অব ব্রিদ
৪৯. দ্য স্পেকট্যাকল
৫০. মেসমেরিক রেভেল্যেশন
৫১. দ্য কোয়াকস অব হেলিকন–এ স্যাটায়ার
৫২. ম্যাগাজিন রাইটিং পিটার স্নক
৫৩. দ্য ডিউক ভিলা ওমলেট
৫৪. দ্য ম্যান অব দ্য ক্রাউড
৫৫. সাইলেন্স-এ ফেল
৫৬. দ্য ম্যান দ্যাট ওয়াজ ইউজড আপ
৫৭. ফিলজফি অব ফার্নিচার
৫৮. দ্য লিটারারি লাইফ অব থিংগাস বব এসকোয়ার
৫৯. দ্য আয়ারল্যান্ড অব দ্য কে
৬০. অ্যাসটোরিয়া
৬১. শ্যাডো-এ প্যারেবল
৬২. এ টেল অব জেরুসালেম
৬৩. রিভিউ অব স্টিফেন্স অ্যারেবিয়া ট্রো
৬৪. বিজনেসম্যান
৬৫. বন-বন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন