বিচিত্র সাধ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি যখন পাঠশালাতে যাই আমাদের এই বাড়ির গলি দিয়ে, দশটা বেলায় রোজ দেখতে পাই ফেরিওলা যাচ্ছে ফেরি নিয়ে। ‘চুড়ি চা— ই, চুড়ি চাই' সে হাঁকে, চীনের পুতুল ঝুড়িতে তার থাকে, যায় সে চলে যে পথে তার খুশি, যখন খুশি খায় সে বাড়ি গিয়ে। দশটা বাজে, সাড়ে দশটা বাজে, নাইকো তাড়া হয় বা পাছে দেরি। ইচ্ছে করে সেলেট ফেলে দিয়ে অম্‌নি করে বেড়াই নিয়ে ফেরি। আমি যখন হাতে মেখে কালি ঘরে ফিরি, সাড়ে চারটে বাজে, কোদাল নিয়ে মাটি কোপায় মালী বাবুদের ওই ফুল-বাগানের মাঝে। কেউ তো তারে মানা নাহি করে কোদাল পাছে পড়ে পায়ের ‘পরে। গায়ে মাথায় লাগছে কত ধুলো, কেউ তো এসে বকে না তার কাজে। মা তারে তো পরায় না সাফ জামা, ধুয়ে দিতে চায় না ধুলোবালি। ইচ্ছে করে আমি হতেম যদি বাবুদের ওই ফুল-বাগানের মালী। একটু বেশি রাত না হতে হতে মা আমারে ঘুম পাড়াতে চায়। জানলা দিয়ে দেখি চেয়ে পথে পাগড়ি পরে পাহারওলা যায়। আঁধার গলি, লোক বেশি না চলে, গ্যাসের আলো মিট্‌মিটিয়ে জ্বলে, লণ্ঠনটি ঝুলিয়ে নিয়ে হাতে দাঁড়িয়ে থাকে বাড়ির দরজায়। রাত হয়ে যায় দশটা এগারোটা কেউ তো কিছু বলে না তার লাগি। ইচ্ছে করে পাহারওলা হয়ে গলির ধারে আপন মনে জাগি। 

সকল অধ্যায়

১. জন্মকথা
২. খেলা
৩. খোকা
৪. ঘুমচোরা
৫. অপযশ
৬. বিচার
৭. চাতুরী
৮. নির্লিপ্ত
৯. কেন মধুর
১০. খোকার রাজ্য
১১. ভিতরে ও বাহিরে
১২. প্রশ্ন
১৩. সমব্যথী
১৪. বিচিত্র সাধ
১৫. মাস্টারবাবু
১৬. বিজ্ঞ
১৭. ব্যাকুল
১৮. ছোটোবড়ো
১৯. সমালোচক
২০. বীরপুরুষ
২১. রাজার বাড়ি
২২. মাঝি
২৩. নৌকাযাত্রা
২৪. ছুটির দিনে
২৫. বনবাস
২৬. জ্যোতিষ-শাস্ত্র
২৭. বৈজ্ঞানিক
২৮. মাতৃবৎসল
২৯. লুকোচুরি
৩০. দুঃখহারী
৩১. বিদায়
৩২. বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
৩৩. সাত ভাই চম্পা
৩৪. নবীন অতিথি
৩৫. অস্তসখী
৩৬. হাসিরাশি
৩৭. পরিচয়
৩৮. বিচ্ছেদ
৩৯. উপহার
৪০. পাখির পালক
৪১. পূজার সাজ
৪২. মা-লক্ষ্মী
৪৩. কাগজের নৌকা
৪৪. শীত
৪৫. শীতের বিদায়
৪৬. ফুলের ইতিহাস
৪৭. আকুল আহ্বান
৪৮. পুরোনো বট
৪৯. আশীর্বাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন