৯৬. কৃষ্ণকান্তকে দেখে জীমূতকান্তি

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

॥ ৯৬ ॥

কৃষ্ণকান্তকে দেখে জীমূতকান্তি বিছানায় উঠে বসলেন। প্রকাণ্ড পালঙ্ক, পুরোনো আমলের ফুল লতাপাতার নকশা। তাতে পুরু গদির বিছানা। জীমূতকান্তির চেহারায় প্রাচীনতার ছাপ থাকলেও বার্ধক্য নেই। এখনো টকটকে ফর্সা রং,অসাধারণ মুখশ্রী, শরীরের গঠনও চমৎকার। গলায় বাঘা আওয়াজ খেলে।

সেই গলাতেই বললেন, আয়। বোস।

কৃষ্ণকান্ত বিছানার পাশেই একটা চেয়ারে বসলেন। বললেন, কেমন আছেন?

বয়স হলে মানুষ একটু রোগভোগের কথা বলতে ভালবাসে। জীমূতকান্তিরও তাই। বললেন, আছি তো কোনোরকম। প্রেশারটাই বড্ড গোলমাল করে। কিছুই তেমন খাই না, তবু পেটে মাঝে মাঝে এমন গ্যাস হয় যে দম নিতে কষ্ট হয়। তখনই বুকে ব্যথা, প্রেশার।

কৃষ্ণকান্ত মন দিয়ে শুনলেন সবটুকু। বাধা দিলেন না। তাঁর এই দাদা ইতিপূর্বে দু-দুবার যমের মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। এখনো যে বেঁচে আছেন সেটাই সৌভাগ্যের বিষয়। বরাবর পশ্চিমে ছিলেন। প্রথমদিকে তাঁর সন্তানাদি হয়নি। একটু বেশী বয়সে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে পর পর জন্মায়। যখন তারা জন্মায় তখন কৃষ্ণকান্ত জেল-এ। জেল থেকে বেরিয়েই ফের স্বদেশী আন্দোলনে নামলেন। আবার জেল-এ গেলেন। সেই সময়েই খবর পেয়েছিলেন কাশীবাসী হওয়ার আগে হেমকান্ত তাঁর অন্যান্য পুত্রদের বঞ্চিত করে নিরুদ্দেশ নাবালক কনিষ্ঠ পুত্রকেই যাবতীয় বিষয়সম্পত্তি উইল করে দিয়ে গেছেন। অছি হিসেবে নিযুক্ত হয় শচীন, রাজেন মোক্তার এবং স্থানীয় বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি।

কিন্তু স্বদেশী আন্দোলনের সেই যুগে কৃষ্ণকান্ত বিষয়সম্পত্তির চিন্তা আদপেই করতেন না। খবরটা পেয়েও তাঁর কোনো ভাবান্তর হয়নি। তবে তাঁর মনে হয়েছিল, হেমকান্ত তাঁর জ্যেষ্ঠ দুই পুত্রকে বঞ্চিত করে অন্যায় করেছেন।

কনককান্তি কলকাতায় যে ব্যবসা করতেন তা শেষ অবধি ডোবে। পয়সাকড়ির টানাটানির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। কৃষ্ণকান্ত যখন শেষ অবধি বিষয়সম্পত্তির দখল নিলেন তখন বড়দার অবস্থা বেশ খারাপ। কলকাতার বাড়িতেও তিনি থাকতে চাইছিলেন না, প্রেস্টিজে লাগছিল। কৃষ্ণকান্ত তখন কনককান্তিকে বালিগঞ্জে একখানা ছোটো বাড়ি করে দেন।

জীমূতকান্তি চাকরি করতেন। তাঁর অভাব ছিল না, প্রাচুর্য না থাক। অবসর নেওয়ার পর কলকাতায় ফিরে এসে কিন্তু তিনি সরাসরি কৃষ্ণকান্তকে বললেন, বাবার বিষয়সম্পত্তি থেকে আমরা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত। তুই দাদাকে যেমন বাড়ি করে দিয়েছিস তেমন আমাকেও দে।

কৃষ্ণকান্ত সেই দাবি মেনে নিয়ে জীমূতকান্তিকেও এই বাড়িখানা করে দেন টালিগঞ্জে।

এক সময় বিষয়সম্পত্তি সম্পর্কে নির্লোভ ও উদাসীন ছিলেন কৃষ্ণকান্ত। তারপর বিষয়সম্পত্তি হাতে পাওয়ার পর তিনি উদার হাতে দানধ্যান করেছেন। বহু বিপ্লবীর সংসার টেনেছেন তিনি। দেশ ভাগের সময় নগদে, গয়নায় তিনি প্রচুর টাকা নিয়ে চলে আসেন। এ ব্যাপারে তাঁকে অত্যন্ত সুচিন্তিত পরামর্শ দিয়েছিল তাঁর ছোটো জামাইবাবু শচীন।

কিন্তু এখন কৃষ্ণকান্ত বিষয়সম্পত্তি সম্পর্কে তেমন উদাসীন নন। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে বড়টি প্রায় ত্যাজ্যপুত্র, ছোটোটি এখনো পড়াশুনো করছে। মেজোটি অদ্ভুত এবং কিস্তৃত। তিনি জানেন তাঁর কোনো পুত্ৰই বৈষয়িক ব্যাপারে তেমন দড় নয়। বিশেষ করে ধ্রুব। এদের জন্য একটা পাকা ব্যবস্থা তিনি করে যেতে চান। সেই জন্যই এনিমি প্রপার্টির ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

মুশকিল হল, মানুষ স্বভাবত অকৃতজ্ঞ। কনককান্তি মারা গেছেন, কিন্তু তাঁর ছেলেরা লায়েক হয়েছে। জীমূতকান্তির ছেলেরাও কম যায় না। এখন সকলেই বলতে চায়, হেমকান্তর উইল সিদ্ধ নয়, তা বে-আইনী। তারা এখন এনিমি প্রপার্টির টাকার ভাগ চাইছে।

কৃষ্ণকান্ত তাই চিন্তিত। উদ্বিগ্ন। ভাগ চাইলেই পাবে, এমন নয়, কিন্তু কেউ একটা অবজেকশন দিয়ে বসলে টাকা পেতে গণ্ডগোল হবে।

কৃষ্ণকান্ত এ বাড়িতে ঢোকার পরই চারদিকে একটা তটস্থ, সম্ভ্রমাত্মক এবং সম্ভবত খানিকটা ভীত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বউমারা সামনে আসছেন না, বাচ্চারা চেঁচামেচি করছে না।

কৃষ্ণকান্ত জানেন, এখনো তাঁকে এরা সবাই ভয় পায়, সম্ভ্রম করে। এখনো মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিবাদ করার মতো বুকের পাটা কারো নেই। কিন্তু এরকম চিরদিন থাকবে না। তিনি বুড়ো হয়েছেন, আগের দাপুটে ভাবটা একটু মিইয়ে গেছে। রাজনীতিতেও প্রভাব কমেছে। এখন হয়তো এরা ক্রমে ক্রমে সাহসী হয়ে উঠবে। অবাধ্যতা করবে। আর তাঁর মৃত্যুর পর যে কী হবে তা বেশ ভাবনার বিষয়।

কৃষ্ণকান্ত আত্মীয়স্বজনদের প্রতি অত্যধিক স্নেহশীল। তাদের দায়ে দফায় বরাবর গিয়ে পড়েছেন। নিজের গোষ্ঠীর প্রতি তাঁর সীমাহীন আসক্তির ফলেই দাদাদের এবং দিদিদের ছেলেরা ভাল চাকরি পেয়েছে, মেয়েদের বিয়েও হয়েছে চমৎকার সব ঘরে-বরে। কিন্তু তবু তাঁর আত্মীয়েরা এতে খুশি নয়। তারা আরো কিছু চায়। কৃষ্ণকান্ত তাদের দোষ দেন না। মানুষের তো চাওয়ার শেষ নেই। কিন্তু এনিমি প্রপার্টির টাকা তাদের পাওনা হয় না।

কৃষ্ণকান্ত মেজদাদার দিকে চেয়ে ছিলেন। বুঝবার চেষ্টা করছিলেন, ওঁর মনোভাবটা কী। তাঁকে দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে। লক্ষ করে বুঝলেন, মেজদা অস্বস্তিতে পড়েছেন। মানুষটা কোনোদিনই শক্তপোক্ত ছিলেন না।

কৃষ্ণকান্ত খুব শান্ত গলায় হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, মেজদা, আমি শুনতে পাচ্ছি আপনি এনিমি প্রপার্টি ক্লেম করবেন!

জীমূতকান্তি এত সরাসরি প্রশ্নটা আশা করেননি। ভারী অস্বস্তি বোধ করে বললেন, আমি তো এসব কিছু জানি না। তবে ছেলেরা কী সব যেন বলে।

কী বলে?

ওদের সঙ্গে একটু কথা-টথা বলে দেখ।

কৃষ্ণকান্ত ভ্রূকুটিগম্ভীর মুখে বললেন, আপনি বেঁচে থাকতে আমি ওদের সঙ্গে কথা বলব কেন?

জীমূতকান্তি ফর্সা গালে অসহায় হাতখানা বুলিয়ে বললেন, উইলের কথা আমরা কেউ জানি না। বাবা আমাদের জানাননি। শচীনের কাছে গচ্ছিত ছিল।

তাতে কী হল? উইলটা কি সিদ্ধ নয়?

তা বলছি না।

আর কথাটা এতকাল পরেই বা উঠছে কেন?

আমি বুড়ো হয়েছি, যে কোনোদিন রওনা দেব। আমার ওসব দিয়ে কী হবে? ছেলেরা এখন সাবালক হয়েছে, ওদের নিজস্ব মতামত হয়েছে।

নিজস্ব মতামতের কোনো দাম নেই, যদি তা অন্যায্য হয়।

তুই বরং ওদের সঙ্গে কথা বল।

কৃষ্ণকান্ত মাথা নাড়লেন, ওরা আমার সমান সমান নয়, ওদের সঙ্গে বিষয় সম্পত্তি নিয়ে কথা বলা সম্ভব হবে না। আর আপনি বেঁচে থাকতে ওদের কোনো দাবী দাওয়া থাকতে পারে না।

আমি কী করব বল।

আপনি ওদের বলুন, দেশের বিষয় সম্পত্তিতে ওদের কোনো হিস্যা নেই। ওরা সেটা বুঝুক।

যদি বুঝতে না চায়?

তাহলেই বা সুবিধে হবে কিসের? অবজেকশন দিলে ক্লেম পেতে একটু দেরী হবে ঠিকই। কিন্তু আইন মোতাবেক আমিই তা পাবো। তখন?

ওরা তো অবজেকশন এখনো দেয়নি!

না। তবে দেওয়ার তোড়জোড় করছে। কিন্তু আমি পলিটিকসের লোক, ক্লেম পেতে আমার অসুবিধে হবে না। তবু অবজেকশন দিতে বারণ করছি একটা কথা ভেবে।

জীমূতকান্তি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমার আর এসব ভাল লাগে না রে কৃষ্ণ।

তা হলেও বিষয়টা আপনার জানা উচিত। আজকাল যৌথ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, পারিবারিক ঝগড়াঝাঁটি প্রায় প্রত্যেক পরিবারে।

সে তো ঠিকই।

আমাদের পরিবার বেড়ে যাওয়ায় হাঁড়ি আলাদা হয়েছে ঠিকই কিন্তু কোনো পারিবারিক কোন্দলের কথা কেউ জানে না। আপনার ছেলেরা যদি অবজেকশন দেয় তবে চৌধুরী পরিবারের ভিতরকার সম্পর্কের কথা সবাই জানবে।

জীমূতকান্তি মাথা নেড়ে বললেন, সে তো ঠিকই। তুই আমাকে কী করতে বলিস?

আমি জানি আপনার বাড়িতে এবং বড়দার বাড়িতে আমার ভাইপোরা প্রায়ই মিটিং করে। তাতে বোধহয় আমার মুণ্ডপাত হয়। তা হোক। আপনাকে বলি, এইসব অস্বাস্থ্যকর মিটিং আপনি ওদের বন্ধ করতে বলুন।

জীমূতকান্তি অন্যদিকে চেয়ে দুর্বল গলায় বললেন, মিটিং ঠিক নয়। একদিন বুঝি ছেলেরা বসে কী সব কথা বলেছে।

কৃষ্ণকান্ত মাথা নেড়ে দৃঢ় গলায় বললেন, মিটিং হয়েছে এই ঘরে এবং তাতে আপনিও পার্টিসিপেট করেছিলেন। আমি সব খবরই রাখি।

জীমূতকান্তির মুখটা একটু রাঙা হল উত্তেজনায়। কিন্তু নিজের কনিষ্ঠ ভাইটিকে তিনি চেনেন। এর সঙ্গে ঝগড়া করা যায় না, একে অপমান করা বিপজ্জনক। শুধু কৃষ্ণকান্তর সামাজিক মর্যাদা ও মেজাজের জন্যই নয়, আসল কথা হল তাঁরা সবাই কৃষ্ণকান্তর দ্বারা নানাভাবে উপকৃত। তাই এর চোখের দিকে তাকালে একটু অস্বস্তি সকলেরই হয়। জীমূতকান্তি রাগলেও সেই ভাব গোপন করে বলেন, তোর ডিসিশনটা কী?

আমার ডিসিশন জানাতেই আজ আসা। আপনার বা বড়দার ছেলেরা যদি মেনে নেয় তো ভাল, সেক্ষেত্রে এনিমি প্রপার্টির টাকা থেকে ওদের কিছু আমি দেবো। অবশ্যই সেটা সমান সমান ভাগ হবে না। আর যদি অবজেকশন দেয় তাহলে কেউ একটাও পয়সা পাবে না।

জীমূতকান্তির মুখটায় একটু ভ্যাবাচ্যাকা ভাব দেখা দিল। শুধু বললেন, কিছু বলতে কত দিবি?

সেটা নির্ভর করছে কত টাকা ক্ষতিপূরণ ওরা দেয় তার ওপর। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনার ছেলেরা টাকাটা সমান তিন ভাগে ভাগ করে হিস্যা নিতে চায়। সেটা অন্যায্য আব্দার।

কথাটা শেষ হতেই লালটুর বউ কৃষ্ণা এসে ঘরে ঢুকল। বেশ লম্বা, সুশ্রী চেহারা। খুব সাহেবী কেতার মেয়ে। বয়কাট চুল রাখে, দারুণ সব মড পোশাক পরে এবং সিগারেট মদও নাকি খায় বলে কৃষ্ণকান্ত শুনেছেন। এখন অবশ্য মাথায় বেশ বড় ঘোমটা, ভারী লাজুক ভাব। হাতে চা, প্লেটে খাবার। সেগুলো টেবিলে রেখে একটা প্রণাম করল কৃষ্ণকান্তকে, তারপর নিজের শ্বশুরকেও।

কৃষ্ণকান্ত সবই লক্ষ করলেন। মেয়েটা সহবৎ জানে।

কৃষ্ণা মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করল, ভাল আছেন কাকা?

তুমি কেমন আছো মা?

ভাল। চায়ে চিনি দিয়েছি কিন্তু।

দেবে না কেন? আমার চিনি বারণ নয়। তবে ওসব খাবার-টাবার নিয়ে যাও। আমি যখন-তখন খাই না।

একটুও না?

না মা। যখন-তখন খাই না বলেই এখনো ভাল আছি। তা আজ ছুটির দিন লালটুটা কোথায় গেল?

কোথায় বেরিয়েছে।

কৃষ্ণা সম্ভ্রমসূচক দূরত্বে ঘোমটা মাথায় দাঁড়িয়ে রইল। দৃশ্যটা জীমূতকান্তি অবাক হয়ে দেখলেন। তিনি নিজে তাঁর পুত্রবধূর কাছ থেকে বিশেষ সমীহ পান না। আজকালকার স্বাধীনচেতা মেয়েরা মানবেই বা কেন? কিন্তু প্রশ্ন হল, তাহলে কৃষ্ণকে মানে কেন?

চায়ের কাপ নিয়ে কৃষ্ণা চলে যাওয়ার পর জীমূতকান্তি বললেন, তোর ওপর তো কথা বলার সাহস কারো নেই। তাই আমি বলি, তুই নিজেই ভাইপোদের সঙ্গে কথা বললে পারিস। তোর কথা ওরা ঠিক মেনে নেবে।

আপনি আমাকে বার বার একথাটা বলছেন। আমার আত্মমর্যাদাজ্ঞান একটু বেশী। ছোটোদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলাতে আমার রুচিতে বাঁধে।

তাহলে আমি এক কাজ করি। ওদের বলি, তুই এই চাস।

বলবেন। একটা কথা। কারো জন্য কিছু করে সে বিষয়ে পরে উল্লেখ করতে বা তার জন্য উল্টো কিছু দাবী করতে আমি ঘৃণা বোধ করি।

তোকে আমরা জানি।

ওদের একথাটা বুঝিয়ে দেবেন যে, ছোটো কাকা নিজের পরিবারের, নিজের বংশের ভাল ছাড়া মন্দ কখনো দেখেনি। এটা যদি সত্য হয় তবে ভবিষ্যতেও তাই করব। কিন্তু আমি যদি দেখি আমার বংশের ছেলেরা, আমার নিজের ভাইপোরাই পিছন থেকে নানা ষড়যন্ত্র করছে তাহলে বাধ্য হয়েই তাদের সংশ্রব আমাকে বর্জন করতে হবে। সেটা ওদের পক্ষে ভাল হবে না মন্দ হবে তা ওদের ভেবে দেখতে বলবেন।

জীমূতকান্তি আবার রক্তাভ হলেন। কৃষ্ণকান্ত যে স্পষ্টই হুমকি দিচ্ছেন সেটা বুঝতে অসুবিধে নেই। তিনি এও জানেন, কৃষ্ণকান্ত কখনো ফাঁকা আওয়াজ করেন না। জীমূতকান্তি তাই বললেন, না না, তুই অত বাড়িয়ে ভাবছিস কেন। ওদের কার ঘাড়ে কটা মাথা যে তোর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়?

কৃষ্ণকান্ত উঠলেন। চিন্তিত বিরক্ত মুখভাব। জীমূতকান্তিকে একটা প্রণাম করলেন।

জীমূতকান্তি বললেন, ধ্রুবর ছেলেকে নিয়ে একদিন ওরা যেন আসে। আমি তো কোথাও যেতে পারি না।

আসবেখন। বউমার শরীরটা ভাল নেই।

কী হয়েছে?

মাঝে মাঝে স্মৃতিভ্রংশের মতো হচ্ছে। অনেকদিন রোগটা লুকিয়ে রেখেছিল। এখন গড়িয়ে গেছে খানিকটা।

সেটা কিরকম রোগ? পাগলামি নাকি?

না। মনে হয় সাময়িক।

ডাক্তার দেখছে তো!

রোজ।

কৃষ্ণকান্ত বেরিয়ে এলেন। দরজার বাইরে ছোটো বউমা আর বাচ্চারা বশংবদ দাঁড়িয়ে ছিল।

কৃষ্ণকান্ত বেরোতেই চিব ঢিব প্রণাম। কৃষ্ণকান্ত বাচ্চাদের কারো মাথায় হাত রাখলেন,কারো গালটা টিপে দিলেন একটু। মায়াভরে একটু তাকিয়ে রইলেন। চৌধুরিদের রক্তবীজ। বাড়ছে। ছড়িয়ে পড়ছে। নিজের বংশ, নিজের গোষ্ঠীর প্রতি তাঁর অসীম মমতা। অসীম স্নেহ। শুধু বেয়াদবি আর বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর সহ্য হয় না।

নাতি হওয়ার পর কৃষ্ণকান্তর বাইরে যাওয়া একটু কমেছে।

বিকেলে একটা দলীয় মিটিং সেরে একটু তাড়াতাড়িই ফিরে এলেন। বৈঠকখানার মুখেই জগা দাঁড়িয়ে।

কি রে, কিছু বলবি?

একটু কথা ছিল।

দামড়াটাকে নিয়ে নাকি?

হ্যাঁ।

কথাটা কী?

আপনি জামাকাপড় ছেড়ে অবসর হয়ে বসুন। তারপর বলছি। তেমন জরুরী কিছু নয়।

কৃষ্ণকান্ত খুব একটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন না। ধ্রুব সম্পর্কে খারাপ খবর পেয়ে পেয়ে এখন ভোঁতা হয়ে গেছেন।

ওপরে এসে জামাকাপড় বদল করে সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নাতি দেখতে গেলেন।

হাম হয়েছিল বলে ছেলেটা একটু রোগা হয়ে গেছে। পিট পিট করে তাকিয়ে আছে ঝি-এর কোল থেকে।

কৃষ্ণকান্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, সবসময়ে কোলে রাখিস কেন? বিছানায় ছেড়ে দিয়ে নজর রাখবি শুধু। ওই হাত পা ছুঁড়বে, চেঁচাবে ওইতে ব্যায়াম হয়। বউমা কোথায়?

একটু বেরোলেন।

সঙ্গে কেউ গেছে?

গেছে। মোক্ষদা।

বেশীদূর যায়নি তো!

না, বোধহয় কাটারা অবধি।

কাটারা! সেখানে কেন?

জানি না।

বউমা এলে আমাকে একটা খবর দিবি তো!

নিজের ঘরে এসে চুপচাপ বসে কিছু কাগজপত্র দেখতে লাগলেন কৃষ্ণকান্ত।

সকল অধ্যায়

১. ১. ১৯২৯ সালের শীতকালের এক ভোরে
২. ২. টহলদার একটা কালো পুলিশ ভ্যান
৩. ৩. কিশোরী রঙ্গময়ি
৪. ৪. ধ্রুব
৫. ৫. ধনীর বাড়িতে শোক
৬. ৬. নার্সিংহোমে রক্তের অভাব নেই
৭. ৭. ভাই হেমকান্ত
৮. ৮. হানিমুন
৯. ৯. সন্ধের কুয়াশামাখা অন্ধকার
১০. ১০. রেমি
১১. ১১. পিতার বাৎসরিক কাজ
১২. ১২. সারারাত পুলিশ হোটেল ঘিরে রইল
১৩. ১৩. ভাই সচ্চিদানন্দ
১৪. ১৪. ভোটে জিতে কৃষ্ণকান্ত মন্ত্রী হয়েছেন
১৫. ১৫. ঝিমঝিম করে ভরা দুপুর
১৬. ১৬. অচেনা গলা
১৭. ১৭. তরল মন্তব্য
১৮. ১৮. ছন্দাকে নিয়ে আসা হল
১৯. ১৯. নতুন এক আনন্দ
২০. ২০. রেমি কিছুতেই বুঝতে পারছিল না
২১. ২১. রাজেন মোক্তারের ছেলে শচীন
২২. ২২. কূট সন্দেহ
২৩. ২৩. গভীর রাত্রি পর্যন্ত হেমকান্তর ঘুম হল না
২৪. ২৪. রেমি মাথা ঠান্ডা রেখে
২৫. ২৫. মুখখানা অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন
২৬. ২৬. আচমকা একদিন দুপুরে
২৭. ২৭. শচীন অনেকক্ষণ কাজ করল
২৮. ২৮. বেলুন দিয়ে সাজানো একটা জিপগাড়ি
২৯. ২৯. বিশাখা
৩০. ৩০. শ্বশুর আর জামাইয়ের সাক্ষাৎকার
৩১. ৩১. হেমকান্ত জীবনে অনেক সৌন্দর্য দেখেছেন
৩২. ৩২. থানায় যাওয়ার আগে ধ্রুব
৩৩. ৩৩. পুজো আর আম-কাঁঠালের সময়
৩৪. ৩৪. ঢেউয়ের সঙ্গে ভাব হয়ে গেল রেমির
৩৫. ৩৫. চপলার বাবা মস্ত শিকারি
৩৬. ৩৬. বিস্ময়টাকে চট করে লুকিয়ে
৩৭. ৩৭. চপলা বাড়িতে পা দেওয়ার পর
৩৮. ৩৮. ঘর-বার করতে করতে
৩৯. ৩৯. এত কলকব্জা কখনও দেখেনি সুবলভাই
৪০. ৪০. অপারেশন থিয়েটারের চোখ-ধাঁধানো আলো
৪১. ৪১. বৈশাখ মাসে কোকাবাবুদের একটা মহাল
৪২. ৪২. রেমি যে মারা যাচ্ছে
৪৩. ৪৩. অনাথ ডাক্তারের মেলা টাকা
৪৪. ৪৪. সেই একটা দিন কেটেছিল
৪৫. ৪৫. কয়েকদিন যাবৎ অনেক ভাবলেন হেমকান্ত
৪৬. ৪৬. ভিড়ের ভিতর দাঁড়িয়ে
৪৭. ৪৭. মামুদ সাহেব
৪৮. ৪৮. মানুষেরা ভীষণ অবুঝ
৪৯. ৪৯. এক তীব্র, যন্ত্রণাময় অশ্বখুরধ্বনি
৫০. ৫০. এত ভয় রেমি জীবনেও পায়নি
৫১. ৫১. কুঞ্জবনে আর এসো না
৫২. ৫২. খুব নরম খুব সবুজ ঘাস
৫৩. ৫৩. একটা পঙক্তি
৫৪. ৫৪. একটু মায়া কি অবশিষ্ট ছিল
৫৫. ৫৫. স্ত্রী চরিত্র কতদূর রহস্যময়
৫৬. ৫৬. হাতে-পায়ে খিল ধরল রেমির
৫৭. ৫৭. এরকম বৃষ্টির রূপ
৫৮. ৫৮. মাথার ঠিক ছিল না রেমির
৫৯. ৫৯. চপলা খুব ধীরে ধীরে
৬০. ৬০. রাজার ফ্ল্যাট
৬১. ৬১. বাবা, আমি কাল যাব না
৬২. ৬২. গায়ে নাড়া দিয়ে
৬৩. ৬৩. ইরফান নামে যে লোকটা
৬৪. ৬৪. আজ আর নেই
৬৫. ৬৫. শশিভূষণের মামলা
৬৬. ৬৬. যে সময়টায় রেমির পেটে ছেলেটা এল
৬৭. ৬৭. আজ শচীনের চেহারার মধ্যে
৬৮. ৬৮. মেয়েটির হাসিটি অদ্ভুত সুন্দর
৬৯. ৬৯. শচীন কাশী রওনা হওয়ার আগের দিন
৭০. ৭০. গাড়ির ব্যাকসিটে বসে ধ্রুব
৭১. ৭১. বরিশালের জেলে সতীন্দ্রনাথ সেনের অনশন
৭২. ৭২. একটি লোকও নার্সিংহোম ছেড়ে যায়নি
৭৩. ৭৩. কৃষ্ণকান্ত এক জ্বালাভরা চোখে সূর্যোদয় দেখছিল
৭৪. ৭৪. ধ্রুবর যে একটা কিছু হয়েছে
৭৫. ৭৫. এক সাহেব ডাক্তার আনানো হল
৭৬. ৭৬. ধ্রুব রঙ্গময়ির দিকে চেয়ে
৭৭. ৭৭. লোকটা কী বলছে
৭৮. ৭৮. একটা হত্যাকাণ্ড এবং মৃত্যু
৭৯. ৭৯. আবার সেই কিশোরী
৮০. ৮০. সে আর সে
৮১. ৮১. প্রদোষের আলো
৮২. ৮২. ধ্রুব, বাপ হয়েছিস শুনলাম
৮৩. ৮৩. সংজ্ঞা যখন ফিরল
৮৪. ৮৪. প্রশান্ত ধ্রুবকে লক্ষ করছিল
৮৫. ৮৫. ফেরার পথে ঘোড়ার গাড়ি
৮৬. ৮৬. নোটন
৮৭. ৮৭. বজ্রনির্ঘোষের মতো কণ্ঠস্বর
৮৮. ৮৮. ধ্রুব আর নোটন
৮৯. ৮৯. রামকান্ত রায় খুন
৯০. ৯০. মরবি কেন
৯১. ৯১. হেমকান্ত একটু সামলে উঠেছেন
৯২. ৯২. বাথরুমের দরজা খুলে
৯৩. ৯৩. প্রস্তাবটা দ্বিতীয়বার তুলতে
৯৪. ৯৪. স্বচ্ছ গোলাপি মশারির মধ্যে
৯৫. ৯৫. ইহা কী হইতে চলিয়াছে
৯৬. ৯৬. কৃষ্ণকান্তকে দেখে জীমূতকান্তি
৯৭. ৯৭. আজ এই দিনপঞ্জীতে যাহা লিখিতেছি
৯৮. ৯৮. কৃষ্ণকান্ত নিজের বাইরের ঘরটায় এসে
৯৯. ৯৯. নীল আকাশের প্রতিবিম্বে নীলাভ জল
১০০. ১০০. ধ্রুব খুবই মনোযোগ দিয়ে
১০১. ১০১. যখন বাড়ি ফিরিলাম
১০২. ১০২. দরজা খুলে বৃদ্ধা
১০৩. ১০৩. বিশাখার বিবাহ
১০৪. ১০৪. গুজবটা কী করে ছড়াল কে জানে
১০৫. ১০৫. কাশী আসিবার পর
১০৬. ১০৬. বাবা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন