৯৮. কৃষ্ণকান্ত নিজের বাইরের ঘরটায় এসে

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

॥ ৯৮ ॥

কৃষ্ণকান্ত নিজের বাইরের ঘরটায় এসে বসবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশব্দে জগা এসে দাঁড়াল। মুখ গম্ভীর এবং কঠিন।

কৃষ্ণকান্ত একবার তার মুখের দিকে চেয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললেন, বল কী হয়েছে।

দেশের বাড়ির পুরুত বিনোদচন্দ্রের নাতনীকে আপনার মনে আছে?

কে বল তো!

দাদাবাবুর সঙ্গে যার সম্বন্ধ এসেছিল বলে আপনি খুব রাগ করেছিলেন।

তার কী হয়েছে?

সে এখন কল গার্ল। সিনেমা থিয়েটারও করে বেড়ায়।

বটে!

দাদাবাবু ফের তার খপ্পরে পড়েছে।

ফের বলতে? আগে কিছু ছিল নাকি?

না। তবে বিয়ের একটা কথা হয়েছিল তো! ওর মা খুব হন্যে হয়ে পড়েছিল।

ঘটনাটা কী?

দাদাবাবুকে ক’দিন আগে অফিস থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেদিনটার বিশেষ খবর জানি না। অফিসের অনেকেই দেখেছে। একজন বেয়ারা আমাকে খবরটা দেয়।

তারপর?

মেয়েটা টালিগঞ্জের দিকে একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। দাদাবাবুকে মাঝে মাঝে ওখানে নিয়ে যায়।

কৃষ্ণকান্ত ভ্রূকুটিকুটিল মখে জগার দিকে তাকালেন, এটা নিয়ে কাটা হল?

বেশী নয়। কিন্তু দাদাবাবুর আর যাই দোষ থাক মেয়েমানুষের কারবারটা ছিল না।

কৃষ্ণকান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ছিল না বলতে কী বোঝাতে চাস? বরাবর মেয়েরা ওর পিছনে ঘুরত। ও পাত্তা দিত না। এই তো!

হ্যাঁ তাই।

আজকাল দিচ্ছে তো!

মনে হচ্ছে। ধারা নামে সল্ট লেকের সেই মেয়েটা তো পুলিশ অবধি ডেকেছিল।

কৃষ্ণকান্ত মাথা নাড়লেন। তারপর খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। স্বগতোক্তির মতো বললেন, রুচিটা নেমে যাচ্ছে।

রুচি?

কৃষ্ণকান্ত জগার দিকে কঠিন চোখে চেয়ে বললেন, এসব থার্ড ক্লাস মেয়ে ওর নাগাল পাচ্ছে কী করে?

সব খবর তো পাওয়া যায় না।

এ মেয়েটার নাম কি জানিস?

নোটন ভট্টাচার্য।

খুব খারাপ?

বললাম তে কল গার্ল।

বামুনের মেয়ে হয়ে এত নিচে নামে কী করে?

বামুন কায়েত শুদ্দুর সব আজকাল আর আলাদা করা যাচ্ছে না, একাক্কার!

ভদ্রলোক ছোটলোকও আজকাল আর আলাদা করা যাচ্ছে না, না?

জগা মাথা নিচু করল।

কৃষ্ণকান্ত সামান্য একটু হাসলেন। বললেন, নোটন না কি যেন নাম বললি!

নোটন।

এর ফ্ল্যাটে ওর মা ভাই থাকে না?

না। তারা আলাদা বাসায় থাকে।

মেয়েটা একা?

হ্যাঁ।

মেলামেশাটা কতদূর তা খবর নে।

কিছু করতে হবে?

না। এখন হাত দেওয়ার দরকার নেই।

যদি বলেন তো মেয়েটাকে একটু শাসিয়ে দিতে পারি।

কৃষ্ণকান্ত একটা ধমক দিলেন, নাঃ। একবারের বেশী দুবার বলতে হয় কেন?

ঠিক আছে।

এখন যা।

জগা চলে গেল।

কৃষ্ণকান্ত ফাঁকা ঘরেও ভ্রূকুটি কার বসে রইলন কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎ আপন মনেই হেসে উঠলেন।

তোকে কে রেখেছে বল তো!

রাখছে? নোটন ভ্রূ কুঁচকে ধ্রুবর দিকে তাকায়, তার মানে?

এই যে চকচকে নতুন ফ্ল্যাট, ভাল সব ফার্নিচার, টিভি, তোর নিশ্চয়ই এত রোজগার নয়। কে দিচ্ছে এত?

তার মানেই কি রাখা?

রাখা কথাটা যদি অপছন্দ হয় তবে আধুনিক একটা শব্দ আছে। স্পনসরশিপ। তোকে কে স্পনসর করছে বল তো! বেশ এলেমদার আদমী মনে হচ্ছে।

নোটন হাসল না। ভ্রূ কুঁচকে রেখেই বলল, তোমার মন বড্ড নোংরা।

এতদিনে বুঝলি? নোংরা না হলে তোর মতো মেয়ের খপ্পরে এত সহজে পড়ে যাই?

এই রূঢ়তায় নোটন অভ্যস্ত হয়ে গেছে গত কয়েকদিনে। তবু মুখখানায় ক্লিষ্ট একটা ভাব দেখা দিল। তারপর বলল, খুব সহজে হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে তোমাকে পেয়েছি। আমি কিরকম মেয়ে বলে তো!

ওসব নিয়ে আর কথা তুলিন না। যা বলছি তার জবাব দে। লোকটা কে?

তা জেনে তোমার কী হবে?

ধ্রুব স্থির চোখে নোটনের দিকে চেয়ে রইল। নোটন জানালার কাছে একটা টেবিলের ওপর বসে আছে। মুখ বাইরের দিকে ফেরানো। ধ্রুবর দিকে ইচ্ছে করেই চাইছে না তা ধ্রুব জানে।

একটু আগেই তারা বিছানায় ছিল। বাইরে মরে আসছিল বিকেল। ধ্রুবর সেই শারীরিক যুদ্ধ মোটেই ভাল লাগছিল না। নোটন তাকে জোর করে নামিয়েছে এই যুদ্ধে। অকারণ। সে জানে নোটনের মতো মেয়ের বিশেষ একজনের প্রতি অত টান থাকার কথা নয়। উপরন্তু ধ্রুব এও জানে, এই ফ্ল্যাট, এই বিছানা, এই সাজসজ্জা এত সব আয়োজক অলক্ষ্যে কেউ করেছিল নোটনের সঙ্গে ফুর্তি করবে বলেই। নোটন সম্ভবত তার প্রতি বিশ্বস্ত থাকছে না। রাখা মেয়েমানুষেরও একটা এথিকস থাকা উচিত।

ধ্রুব বলল, তার নাম জেনে আমার লাভ নেই ঠিকই। কিন্তু কেউ যে একজন তোকে স্পনসর করছে এটা তো ঠিক!

হ্যাঁ।

সে এই ফ্ল্যাটে আসে?

এখনো আসেনি।

আসবে তো?

সে এখন দেশের বাইরে আছে।

বিদেশে?

হ্যাঁ।

আর সেই সুযোগে তুই আমাকে ফাউ জুটিয়েছিস!

নোটন চুপ করে রইল। তারপর স্নান গলায় বলল, ফাউ কেন হবে? তুমি ফাউ একথা কে বলল?

ফাউ নই তো কি?

ওসব কথা থাক। তুমি আজ আমাকে সহ্য করতে পারছে না।

পারছি না তো বটেই। সব কথা তুই কখনো আমাকে খুলে বলিসনি।

নোটন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতেই অস্পষ্ট গলায় বলল, নতুন কোনো কথা তো আর নয়। আমি কেমন তা তো তুমি জানোই।

আমাকে জুটিয়েছিস কেন? আমাকে দিয়ে তোর কী হবে? বিয়ে করে ঘর করতে চাস? সেটা আকাশ-কুসুম কল্পনা। তোকে আমি কোনোদিনই বিয়ে করব না। তারপর তোর নিজের মক্কেল আছে। বিদেশ থেকে সে একদিন ফিরবে। তখন তাকে রিফিউজ করার মতো জোর তোর থাকবে না। তাহলে এসব কেন করছিস? আমি এসব এনজয় করছি না নোটন, আমার ভাল লাগছে না।

এত বকছো কেন গো? একটু চুপ করো না!

চুপ করছি নোটন। আজ উঠি।

চকিতে নোটক উঠে কাছে আসে। সামনে দাঁড়িয়ে সজল দুখানা চোখ তুলে চোখে রেখে বলে, কাল আসবে না?

না। আমার তোকে আর ভাল লাগে না।

ধ্রুব এই কথা বলে আর দাঁড়াল না। দরজা খুলে বেরিয়ে এল। তীব্র এক পরাজয়ের গ্লানি তার সমস্ত শরীরে অবসাদের মতো জড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে নিজেকে ভীষণ ঘেন্না হয় তার।

আজ অবধি, নোটনের আগে অবধি কোনো মেয়ের সঙ্গে এতদূর নামেনি ধ্রুব। ইচ্ছে হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো শুচিতাবোধ বা সংস্কার নেই তার, কিন্তু মেয়েমানুষের শরীর ভিক্ষার মধ্যে পৌরুষের একটা অবনমন ঘটে বলে তার ধারণা। তার বোধ তাকে অহরহ মেয়েমানুষ থেকে দূরে রেখেছে। কিন্তু পা কাটল পচা শামুকে। নোটন। হায় নোটুনের মতো সহজলভ্যার কাছে তাকে হার মানতে হল।

কেন? এ প্রশ্নের জবাব সে নিজের মধ্যে খুঁজে পায় না। সম্ভবত নোটনের মধ্যে একটা করুণ আত্মসমর্পণ তাকে নরম করে ফেলেছিল। কিংবা ওদের যে একসময়ে খুব অপমান করা হয়েছিল তার প্রতিক্রিয়া কাজ করেছে ভিতরে ভিতরে। যাই হোক, পরাজয় ঘটেছে। আর ঘটেছে বলেই নোটনকে আর একটুও সহ্য করতে পারছে না ধ্রুব।

তিনতলা থেকে ঝড়ের বেগে নিচে নামছিল ধ্রুব। সিঁড়ির নিচে একটা লোক দারোয়ানের টুলের পাশে দাঁড়ানো। ঊর্ধ্বমুখ।

ধ্রুব থমকাল। ফ্যাতন না!

ফ্যাতনই। ধ্রুবকে দেখে একটু হাসল, কী গুরু, এখানে?

ধ্রুব একটু হাঁফাচ্ছিল। উত্তেজনায়, পরিশ্রমে। মুখোমুখি হয়ে বলল, তুই এখানে কেন?

এ বাড়িতে কার কাছে গুরু?

আছে একজন।

এটা আমার এলাকা, জানো তো!

না জানার কী?

সব দিকে নজর রাখতে হয়। তোমার চিড়িয়াটা কে?

বললাম তো চিনবি না।

নোটন নাকি?

ধ্রুব একটু রোষ কশায়িত চোখে চেয়ে বলল, তাতে তোর কী?

কিছু নয় বস। রাগছো কেন? শুনলাম মাল খাওয়া ছেড়ে বৈরাগী হওযার ফিকির খুঁজছো!

কে বলছে এসব কথা?

তোমার দোস্ত প্রশান্ত।

না, মাল খাচ্ছি না। পেটে ব্যথা হয়।

ব্যাথা ফের কমেও যায়। চলো, আজ আমি খাওয়াবো।

না ফ্যাতন। আমার তাড়া আছে।

নোটনের সঙ্গে তোমার কবে থেকে?

তুই ওকে চিনিস?

বহুৎ খুব। মালটা ভাল।

তোর সার্টিফিকেটের দরকার নেই।

আছে গুরু, আছে।

ধ্রুব বিরক্ত হয়। কিন্তু সেটা তেমন ঝাঁঝের সঙ্গে প্রকাশ করতে পারে না। ভিতরে ভিতরে একটা অবসাদ একটা অপরাধবোধ কুরে কুরে খাচ্ছে। একটা শ্বাস ফেলে বলল, ফ্যাতন, আমাকে বেশী বকাস না! আজ মেজাজ ভাল নেই।

কেন, নাটনের সঙ্গে কিচাইন হয়েছে নাকি?

না।

হলে বোলো, মাল ফিট করে দেবো।

তোর মতলবটা কী বল তো ফ্যাতন।

ফ্যাতন হাসল। প্রশান্ত হাসি। তার বেঁটেখাটো মজবুত চেহারাটা এবং চোখের দৃষ্টিতেই পরিষ্কার ছাপ আছে মানুষটার। শুণ্ডামি, লোচ্চামি, খচরামি সবই ফুটে আছে চোখে আর চেহারায়।

ধ্রুব একটু চেয়ে রইল। তারপর চাপা গলায় বলল, মেয়েটাকে ট্রাবল দিস না। ও কিছু করেনি।

কে বলল ট্রাবল দেবো?

তোর মতলব ভাল মনে হচ্ছে না।

ফ্যাতন মাথা নেড়ে বলল, ওসব নয়। জগাদা এসেছিল।

জগাদা! কবে?

পরশু। বলে গেল নজর রাখতে।

জানে নাকি কিছু?

সব জানে।

কী বলে গেছে? উদ্বিগ্ন ধ্রুব জিজ্ঞেস করে।

বলে গেছে, নজর রাঁখতে। মেয়েটা সুবিধের নয়। তোমাকে বিপদে ফেলতে পারে।

বাবার কানে গেছে?

তা আমি জানি না। আমার কাজ আমি করছি।

তোকে কিছু করতে হবে না। লিভ হার অ্যালোন। মেয়েটা এমনিতে যাই করে বেড়াক, আসলে দুঃখী। ওকে ছেড়ে দে।

ধরবার কথাও তো কিছু হয়নি বস। আমি কিছু করব না। ভয় নেই।

তাহলে আজ তুই এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি কেন?

ফ্যাতন হেসে বলল, তোমাকে অভয় দেওয়ার জন্য।

তার মানে?

তার মানে, চালিয়ে যাও বস, লাইন ক্লিয়ার।

জগানা কি তোকে এই কথা বলে গেছে?

ফ্যাতন মাথা নাভুল। বলল, জগাদা বলে গেছে, দাদাবাবু এখানে নোটন নামে একটা মেয়ের কাছে আসে। তুই একটু নজর রাখিস।

ব্যাস! আর কিছু বলেনি?

না।

তীব্র একটা ঘেন্না হচ্ছিল ধ্রুবর। নিজের ওপর। নিজের চারপাশটার ওপর। ফ্যাতন তার সঙ্গে বাইরে এল। একটা ট্যাক্সি ধরে দিয়ে বলল, যখন খুশি চলে এসো। লাইন ক্লিয়ার থাকবে। কেউ হুজ্জেতি করবে না।

কথাটার জবাব দিল না ধ্রুব। ট্যাকসিতে পাথরের মতো বসে রইল।

বাড়ি ফিরেই সে জগাকে ডাকল নিজের ঘরে।

কী ব্যাপার বলো তো জগাদা?

জাগা একটু তটস্থ হয়ে বলে, কিসের ব্যাপার?

তুমি নোটনের খবর পেলে কি করে?

জগা কঠিন মুখ করে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে, কেন?

জানলে কি করে বলো আগে।

সেটা জেনে কি হবে?

নোটনের কথা তুমি বাবাকে বলেছো?

বলেছি।

সব?

সব আমি জানি না। যেটুকু জানি বলেছি।

বাবা কী বলল?

কিছুই না।

তার মানে?

কর্তাবাবু তোমাকে ধর্মের নামে ছেড়ে দিয়েছে।

বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল জগা।

ধ্রুব বলল, আমার ওপর এখনো তোমরা নজর রাখো?

রাখতে হয়। না রাখলে তুমি বিপদে পড়বে।

আমার বিপদ নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে কে বলেছে?

জগা এবার ধ্রুবর দিকে তাকায়। চোখে আগুন। চাপা কিন্তু সাঙ্ঘাতিক আক্রোশের গলায় বলে, তোমার বংশে এরকম বেলেল্লাপনা কেউ কখনো করেনি দাদাবাবু। বুঝলে! আমাদের মতো ছোটো ঘরে যদি জন্মাতে আর এসব করে বেড়াতে হবে কবে তোমার গলা টিপে ভূত ছাড়িয়ে দিতাম।

ধ্রুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, সাব্‌বাস জগাদা। আর তুমি তোমার কর্তাবাবুর হয়ে যা সব করে বেড়াও সেগুলো সব পুণ্যের কাজ, না?

পলিটিকসে ওসব লাগে। কিন্তু বলো তো কার্তাবাবুর কখনো কোনো চরিত্রের দোষ ছিল?

ধ্রুব হেসে ফেলল। তারপর বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, মদ আর মেয়েমানুষ বাদ দিলে আর কোনো কাজেই বোধহয় চরিত্র নষ্ট হয় না, না!

কর্তাবাবু পলিটিকস করেন, আর কিছু নয়। ওরকম মানুষ বেশী নেই বুঝলে দাদাবাবু।

ধ্রুব অপলক চোখে এই সম্মোহিত লোকটিকে দেখছিল। কৃষ্ণকান্ত একে যে গভীর হিপ্নটিজমে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তা থেকে এক মুক্তি নেই। এর পাপ পুণ্যের ধারণাও রাহুগ্রস্ত। একে কিছুই বোঝানো যাবে না।

ধ্রুব বলল, নোটনকে কী করতে চাও তোমরা?

জগা একটা চাপা গর্জনের স্বরে বলল, কিছুই না।

কেন, ওর ওপর এত দয়া কেন?

কর্তাবাবু চাইলে ওর লাশ আদি গঙ্গায় ভাসত। কিন্তু—

কিন্তু কী জগাদা?

কর্তাবাবু তোমাকে ধর্মের নামে ছেড়ে দিয়েছেন, বললাম তো!

আমিও তো তাই জানতে চাই, হঠাৎ তোমাদের নোটনের ওপর এত দয়া কেন?

শুনবে?

শুনি।

কর্তাবাবু প্রথম দিন শুনে রেগে গিয়েছিলেন। পরদিন সকালে আমাকে ডেকে বললেন, ধ্রুবর তো কখনো মেয়েমানুষের দোষ ছিল না। এ মেয়েটার সঙ্গে যদি তেমন মেলামেশা করেই থাকে তো করতে দে! পুরুষমানুষের বোধহয় একটু স্বাধীনতা দরকার। বেশী আঁটবাঁধ দিলে বিগড়ে যায়।

ধ্রুবর চোখ থেকে যেন একটা ঠুলি খুলে পড়ল। কৃষ্ণকান্ত একথা বলেছেন! কৃষ্ণকান্ত।

তুমি যাও জগাদা।

বলে ধ্রুব বিছানায় এলিয়ে চোখ বুজে রইল । এর চেয়ে বড় পরাজয় জীবনে তাকে ভোগ করতে হয়নি। অবসাদ ছিলই। এখন যেন এক জড়তা তাকে পাকে পাকে জড়িয়ে ধরল । সবাই সব জানে। সবাই সব খবর রাখে। শুধু তাই নয়, নোটনের সঙ্গে যাতে সে নিরাপদে মেলামেশা চালিয়ে যেতে পারে তারও সুষ্ঠু ব্যবস্থা হয়ে আছে।

এর চেয়ে মৃত্যু কি ভাল ছিল না ?

কতক্ষণ শুয়ে ছিল ধ্রুব তার হিসেব নেই। দরজায় ঠুকঠুক শব্দ শুনে উঠে বসল।

কে ?

আমি । বলে রেমি এসে ঘরে ঢোকে । কেমন অস্বাভাবিক ঝলমল করছে মুখ । লালচে একটু আভা। ঠোঁটে অস্বাভাবিক হাসি।

তুমি! ধ্রুব একটু নির্জীব হয়ে যায়।

কখন এলে ?

অনেকক্ষণ ।

আমি তোমার কাছে একটু বসব ?

বোসো।

রেমি কাছে এসে বসল। পা গুটিয়ে, জড়োসড়ো হয়ে ।

কী চাও রেমি ?

কী যে চাই কিছু বুঝতে পারছি না। হ্যাঁ গো, আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি ?

সকল অধ্যায়

১. ১. ১৯২৯ সালের শীতকালের এক ভোরে
২. ২. টহলদার একটা কালো পুলিশ ভ্যান
৩. ৩. কিশোরী রঙ্গময়ি
৪. ৪. ধ্রুব
৫. ৫. ধনীর বাড়িতে শোক
৬. ৬. নার্সিংহোমে রক্তের অভাব নেই
৭. ৭. ভাই হেমকান্ত
৮. ৮. হানিমুন
৯. ৯. সন্ধের কুয়াশামাখা অন্ধকার
১০. ১০. রেমি
১১. ১১. পিতার বাৎসরিক কাজ
১২. ১২. সারারাত পুলিশ হোটেল ঘিরে রইল
১৩. ১৩. ভাই সচ্চিদানন্দ
১৪. ১৪. ভোটে জিতে কৃষ্ণকান্ত মন্ত্রী হয়েছেন
১৫. ১৫. ঝিমঝিম করে ভরা দুপুর
১৬. ১৬. অচেনা গলা
১৭. ১৭. তরল মন্তব্য
১৮. ১৮. ছন্দাকে নিয়ে আসা হল
১৯. ১৯. নতুন এক আনন্দ
২০. ২০. রেমি কিছুতেই বুঝতে পারছিল না
২১. ২১. রাজেন মোক্তারের ছেলে শচীন
২২. ২২. কূট সন্দেহ
২৩. ২৩. গভীর রাত্রি পর্যন্ত হেমকান্তর ঘুম হল না
২৪. ২৪. রেমি মাথা ঠান্ডা রেখে
২৫. ২৫. মুখখানা অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন
২৬. ২৬. আচমকা একদিন দুপুরে
২৭. ২৭. শচীন অনেকক্ষণ কাজ করল
২৮. ২৮. বেলুন দিয়ে সাজানো একটা জিপগাড়ি
২৯. ২৯. বিশাখা
৩০. ৩০. শ্বশুর আর জামাইয়ের সাক্ষাৎকার
৩১. ৩১. হেমকান্ত জীবনে অনেক সৌন্দর্য দেখেছেন
৩২. ৩২. থানায় যাওয়ার আগে ধ্রুব
৩৩. ৩৩. পুজো আর আম-কাঁঠালের সময়
৩৪. ৩৪. ঢেউয়ের সঙ্গে ভাব হয়ে গেল রেমির
৩৫. ৩৫. চপলার বাবা মস্ত শিকারি
৩৬. ৩৬. বিস্ময়টাকে চট করে লুকিয়ে
৩৭. ৩৭. চপলা বাড়িতে পা দেওয়ার পর
৩৮. ৩৮. ঘর-বার করতে করতে
৩৯. ৩৯. এত কলকব্জা কখনও দেখেনি সুবলভাই
৪০. ৪০. অপারেশন থিয়েটারের চোখ-ধাঁধানো আলো
৪১. ৪১. বৈশাখ মাসে কোকাবাবুদের একটা মহাল
৪২. ৪২. রেমি যে মারা যাচ্ছে
৪৩. ৪৩. অনাথ ডাক্তারের মেলা টাকা
৪৪. ৪৪. সেই একটা দিন কেটেছিল
৪৫. ৪৫. কয়েকদিন যাবৎ অনেক ভাবলেন হেমকান্ত
৪৬. ৪৬. ভিড়ের ভিতর দাঁড়িয়ে
৪৭. ৪৭. মামুদ সাহেব
৪৮. ৪৮. মানুষেরা ভীষণ অবুঝ
৪৯. ৪৯. এক তীব্র, যন্ত্রণাময় অশ্বখুরধ্বনি
৫০. ৫০. এত ভয় রেমি জীবনেও পায়নি
৫১. ৫১. কুঞ্জবনে আর এসো না
৫২. ৫২. খুব নরম খুব সবুজ ঘাস
৫৩. ৫৩. একটা পঙক্তি
৫৪. ৫৪. একটু মায়া কি অবশিষ্ট ছিল
৫৫. ৫৫. স্ত্রী চরিত্র কতদূর রহস্যময়
৫৬. ৫৬. হাতে-পায়ে খিল ধরল রেমির
৫৭. ৫৭. এরকম বৃষ্টির রূপ
৫৮. ৫৮. মাথার ঠিক ছিল না রেমির
৫৯. ৫৯. চপলা খুব ধীরে ধীরে
৬০. ৬০. রাজার ফ্ল্যাট
৬১. ৬১. বাবা, আমি কাল যাব না
৬২. ৬২. গায়ে নাড়া দিয়ে
৬৩. ৬৩. ইরফান নামে যে লোকটা
৬৪. ৬৪. আজ আর নেই
৬৫. ৬৫. শশিভূষণের মামলা
৬৬. ৬৬. যে সময়টায় রেমির পেটে ছেলেটা এল
৬৭. ৬৭. আজ শচীনের চেহারার মধ্যে
৬৮. ৬৮. মেয়েটির হাসিটি অদ্ভুত সুন্দর
৬৯. ৬৯. শচীন কাশী রওনা হওয়ার আগের দিন
৭০. ৭০. গাড়ির ব্যাকসিটে বসে ধ্রুব
৭১. ৭১. বরিশালের জেলে সতীন্দ্রনাথ সেনের অনশন
৭২. ৭২. একটি লোকও নার্সিংহোম ছেড়ে যায়নি
৭৩. ৭৩. কৃষ্ণকান্ত এক জ্বালাভরা চোখে সূর্যোদয় দেখছিল
৭৪. ৭৪. ধ্রুবর যে একটা কিছু হয়েছে
৭৫. ৭৫. এক সাহেব ডাক্তার আনানো হল
৭৬. ৭৬. ধ্রুব রঙ্গময়ির দিকে চেয়ে
৭৭. ৭৭. লোকটা কী বলছে
৭৮. ৭৮. একটা হত্যাকাণ্ড এবং মৃত্যু
৭৯. ৭৯. আবার সেই কিশোরী
৮০. ৮০. সে আর সে
৮১. ৮১. প্রদোষের আলো
৮২. ৮২. ধ্রুব, বাপ হয়েছিস শুনলাম
৮৩. ৮৩. সংজ্ঞা যখন ফিরল
৮৪. ৮৪. প্রশান্ত ধ্রুবকে লক্ষ করছিল
৮৫. ৮৫. ফেরার পথে ঘোড়ার গাড়ি
৮৬. ৮৬. নোটন
৮৭. ৮৭. বজ্রনির্ঘোষের মতো কণ্ঠস্বর
৮৮. ৮৮. ধ্রুব আর নোটন
৮৯. ৮৯. রামকান্ত রায় খুন
৯০. ৯০. মরবি কেন
৯১. ৯১. হেমকান্ত একটু সামলে উঠেছেন
৯২. ৯২. বাথরুমের দরজা খুলে
৯৩. ৯৩. প্রস্তাবটা দ্বিতীয়বার তুলতে
৯৪. ৯৪. স্বচ্ছ গোলাপি মশারির মধ্যে
৯৫. ৯৫. ইহা কী হইতে চলিয়াছে
৯৬. ৯৬. কৃষ্ণকান্তকে দেখে জীমূতকান্তি
৯৭. ৯৭. আজ এই দিনপঞ্জীতে যাহা লিখিতেছি
৯৮. ৯৮. কৃষ্ণকান্ত নিজের বাইরের ঘরটায় এসে
৯৯. ৯৯. নীল আকাশের প্রতিবিম্বে নীলাভ জল
১০০. ১০০. ধ্রুব খুবই মনোযোগ দিয়ে
১০১. ১০১. যখন বাড়ি ফিরিলাম
১০২. ১০২. দরজা খুলে বৃদ্ধা
১০৩. ১০৩. বিশাখার বিবাহ
১০৪. ১০৪. গুজবটা কী করে ছড়াল কে জানে
১০৫. ১০৫. কাশী আসিবার পর
১০৬. ১০৬. বাবা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন