১.২৬ কঠিন পাত্র মোহিত করণ

রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র

ষড়বিংশ পাঠ
কঠিন পাত্র মোহিত করণ

উপযুক্ত সংবেদনার অভাবে সকল লোক মোহিত হয়না বলিয়া সময় সময় কাষের বড় অসুবিধা হয়। এই অসুবিধা বিশেষতঃ সন্মোহন চিকিৎসার সময়ই তীব্রভাবে অনুভূত হইয়া থাকে। অবশ্য কোন রোগীকে সম্মোহন নিদ্রায় নিদ্রিত না করিয়াও চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু সে নিদ্রিত হইলে যেমন শীঘ্র ফল লাভ হয়; নিদ্রিত না হইলে তেমন হয়না। যাহাদের সংবেদনা অল্প এবং যাহাদিগকে সাধারণ নিয়মে নিদ্রিত করা যায়না, তাহাদিগকে “কঠিন পাত্র” (difficult subjects) বলে। এই শ্রেণীর লোকদিগকে মোহিত করার জন্য সম্মোহন বিদ্যাবিৎ চিকিৎসকগণ নানা প্রকার ভেষজের সাহায্য গ্রহণ করিতে উপদেশ দিয়াছেন। উহাদের সাহায্যে সকল প্রকৃতির লোককে মোহিত করিতে পারা না গেলেও, অনেকের উপর উহাদের প্রয়োগ বেশ কার্যকর হইয়া থাকে।

প্রথম নিয়ম :–উক্ত প্রকৃতির কোন পাত্রকে নিদ্রিত করিবার জন্য তাহাকে সাধারণ নিয়মে চেয়ারে বসাইবে। তাহার সমস্ত শরীরের উপর প্রায় পনর মিনিট কাল স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস ও তৎসঙ্গে ঘুমের আদেশ দিবে। তৎপরে একখানা পরিষ্কার রুমালে কয়েক ফোটা ক্লোরোফরম (Chloroform) ঢালিয়া দিয়া, পাত্র উহার গন্ধ শুকিতে পায়, এরূপ ভাবে উহা তাহার নাকের সম্মুখে ধরিয়া রাখিবে এবং তৎসঙ্গে নিম্নোক্তরূপ আদেশ প্রদান করিবে। বলিবে—“এখন তুমি ক্লোরোফরমের গন্ধ শুকিতে পাইতেছ,-এই ক্লোরফরম তোমাকে শীঘ্রই গভীর নিদ্রায় অভিভূত করিয়া ফেলিবে,-তুমি গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত হইয়া পড়িবে, তুমি কিছুতেই আর অধিকক্ষণ জাগিয়া থাকিতে পারিবেনা,এখনই তোমার গভীর নিদ্রা হইবে,খুব শান্তিজনক নিদ্রা হইবে। তুমি আর কিছুতেই ক্লোরোফরমের শক্তি বোধ করিতে পারিবেনা;-ক্লোরোফরম তোমার শরীরে প্রবিষ্ট হইয়া কোনরূপ ক্ষতি করিবে না, তোমার পাকস্থলীরও কোনরূপ অনিষ্ট হইবেনা,-তোমার কোন প্রকার অসুখই হইবেনা। ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; শান্তিজনক নিদ্রা” ইত্যাদি। যতক্ষণ পাত্র নিদ্রিত না হয়, ততক্ষণ উক্তরূপ আদেশ দিবে। পাত্র নিদ্রিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হইলে, তাহার নাকের সম্মুখ হইতে ক্লোরোফরম মাখান রুমালখানা সরাইয়া লইবে।

দ্বিতীয় নিয়ম -সুরাসারের (Alchohol) সহিত ঝালগন্ধযুক্ত কোন তরল পদার্থ মিশ্রিত করতঃ উহাকে ক্লোরোফরম হইতে প্রস্তুত বিশেষ ঔষধ বলিয়া পাত্রের মনে পূর্বে বিশ্বাস জন্মাইয়া রাখিবে। পরে একখানা পরিষ্কার রুমালে উহার তিন চার ফোটা ঔষধ পাত্রের সম্মুখে (অর্থাৎ পাত্র দেখিতে পায় এরূপ ভাবে) ঢালিয়া কাৰ্যকারক রুমালখানা নিজের কাছে রাখিবে। তৎপরে পাত্রকে বিছানায় শোওয়াইয়া বা চেয়ারে বসাইয়া, পূর্বোক্ত নিয়মে পনর মিনিট কাল পাস ও ঘুমের আদেশ দিবে। উহার পর ঐ রুমালখান তাহার নাকের সম্মুখে ধরিয়া পূর্বের ন্যায় আদেশ প্রদান করিবে। বলা বাহুল্য যে, ঐ রুমালে মিশ্রিত গন্ধযুক্ত পদার্থ যে ক্লোরোফরমে প্রস্তুত বিশেষ ঔষধ এবং পাত্র কয়েকবার উহা শুকিলেই যে গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িবে, একথা তাহার মনে খুব দৃঢ়ভাবে অঙ্কিত করিয়া দিতে হইবে। ঐ ঔষধ-গন্ধযুক্ত রুমালখানা পাত্রকে শুকাইবার সঙ্গে কিছুক্ষণ ঘুমের আদেশ দিলেই পাত্র গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িবে।

তৃতীয় নিয়ম—এক মাত্রা সাফোনে (Sulfonal) বা ভেরোনে (Veronal) ঠাণ্ডা জলের সহিত মিশ্রিত করিয়া পত্রিকে খাইতে দিবে। সে উহা পান করিবার পর, দেড় ঘণ্টা হইতে তিন ঘণ্টার মধ্যে, গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত হইয়া পড়িবে। এই ঔষধ সেবন করাইবার এক বা দেড় ঘণ্টা পর, পাত্রকে ঘুমের আদেশ ও তৎসঙ্গে পাস দিবে। পর হইতে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত পাস ও আদেশ দিলে, পাত্র গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িবে। পরিণত বয়স্ক ব্যক্তিদিগের জন্য এই ঔষধ দুইটির মাত্রা ১০ হইতে ৩০ শ্রেণ; কিন্তু ডাক্তারদিগের উপদেশ ব্যতীত ২০ গ্রেণের উপর এক সময়ে ব্যবহার করিবে না। প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়মে যে ঔষধের কথা বলা হইয়াছে, উহাদিগকেও ডাক্তারদিগের পরামর্শানুসারে প্রয়োগ করিবে।

চতুর্থ নিয়ম :—উপযুক্ত মাত্রায় হাইওসি হাইড্রোব্রোমাইড় (Hyoscine Hydrobromide) জল, দুধ, চা বা সরবৎ ইত্যাদি পানীয়ের সহিত মিশ্রিত করিয়া খাওয়াইলে ১০ হইতে ১৫ মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুম হয়। এই ঔষধের মাত্রা খুব অল্প এবং ইহা কোন পানীয়ের সহিত মিশ্রিত হইলেও উহার স্বাদ বিকৃত হয়না বলিয়া পাত্রের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারেও উহা তাহাকে খাওয়া যায়। বড় বড় ঔষধের দোকানে (Chemist and Druggist Hall) ইহা কিনিতে পাওয়া যায়; উহার দামও বেশী নহে।

নিদ্রাকর্ষক ভেষক মাত্রই অল্প বিস্তর হৃদযন্ত্রের পক্ষে অনিষ্টকর। এজন্য কাহারও উপর এই সকল ঔষধ প্রয়োগ করিতে সর্বদাই ডাক্তারগণের উপদেশ মত কাৰ্য্য করিবে। এই সকল ভেষজকে ইংরাজীতে হিপ্নোটিকস্ (hypnotics) বলে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ সংজ্ঞা ও পরিভাষা
২. ১.০২ সিদ্ধির মূল কারণ
৩. ১.০৩ আহার-বিহার
৪. ১.০৪ মনের দ্বিত্বভাব
৫. ১.০৫ সম্মোহন আদেশ
৬. ১.০৬ চক্ষুর মোহিনী শক্তি
৭. ১.০৭ পাস করণ বা হাত বুলান
৮. ১.০৮ শরীরে শিথিলতা উৎপাদন
৯. ১.০৯ শিক্ষার প্রণালী
১০. ১.১০ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করণ
১১. ১.১১ জাগ্ৰদবস্থায় সম্মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
১২. ১.১২ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৩. ১.১৩ মোহিতাবস্থা কাহাকে বলে?
১৪. ১.১৪ পাত্রের মনের সংবেদনা
১৫. ১.১৫ পাত্রকে সম্মোহিত করিবার প্রাথমিক উপদেশ
১৬. ১.১৬ পাত্রকে নিদ্রিত করণ
১৭. ১.১৭ পাত্রকে নিদ্রিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৮. ১.১৮ মোহিতাবস্থা পরীক্ষা করণ
১৯. ১.১৯ মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া জন্মান
২০. ১.২০ মোহিত ব্যক্তির মনে ভ্ৰম জন্মান
২১. ১.২১ মায়া ও ভ্রম উৎপাদনার্থ বিশেষ উপদেশ
২২. ১.২২ মোহিত ব্যক্তিকে প্রকৃতিস্থ করণ
২৩. ১.২৩ পাত্রের শরীরে ক্যাটালেপ্‌সী উৎপাদন
২৪. ১.২৪ পাত্রের শরীরে বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন
২৫. ১.২৫ আদেশের প্রতি মোহিত ব্যক্তিগণের সাড়া
২৬. ১.২৬ কঠিন পাত্র মোহিত করণ
২৭. ১.২৭ স্বাভাবিক নিদ্রা মোহিতাবস্থায় পরিবর্তিত করণ
২৮. ১.২৮ আত্ম-সম্মোহন
২৯. ১.২৯ পত্র দ্বারা বা টেলিফোণে মোহিত করণ
৩০. ১.৩০ দেখামাত্র মোহিত করণ
৩১. ১.৩১ পরবর্তী সম্মোহন আদেশ
৩২. ১.৩২ কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ
৩৩. ১.৩৩ অপরের মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
৩৪. ১.৩৪ সম্মোহন ক্রীড়া
৩৫. ২.০১ মেসমেরিজম্ বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা
৩৬. ২.০২ আহার-বিহার, মানসিক গুণাগুণ ইত্যাদি
৩৭. ২.০৩ কিরূপ লোক মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়
৩৮. ২.০৪ মেস্‌মেরিজমে ব্যবহৃত বিশেষ পাস
৩৯. ২.০৫ মোহ নিদ্রার বিভিন্ন স্তর
৪০. ২.০৬ মেসমেরাইজ করা সম্বন্ধে প্রাথমিক উপদেশ
৪১. ২.০৭ পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় মেস্‌মেরাইজ করণ
৪২. ২.০৭ পাত্রের মোহ নিদ্রা উৎপাদন
৪৩. ২.০৯ মোহ নিদ্রায় মায়া ও ভ্রম উৎপাদন
৪৪. ২.১০ পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ
৪৫. ২.১১ মোহ নিদ্রা দূরীভূত করণ
৪৬. ৩.০১ আত্মিক চিকিৎসা
৪৭. ৩.০২ মন্ত্রপূত জল বা জল-পড়া
৪৮. ৩.০৩ মনুষ্যেতর প্রাণী মোহিত করণ
৪৯. ৩.০৪ ক্রিষ্টেল গেইজিং
৫০. ৩.০৫ সম্মোহন-শক্তির আরোপিত অনিষ্টকারিতা
৫১. ৩.০৬ উপসংহার ও পরিশিষ্ট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন