২.০১ মেসমেরিজম্ বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা

রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র

দ্বিতীয় খণ্ড
প্রথম
পাঠ
মেসমেরিজম্
বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা (Animal Magnetism or Mesmerism)

ডাক্তার মেমার যে বিজ্ঞানকে “জৈব আকর্ষণী বিদ্যা” বলিয়া অভি হিত করিতেন, উহাই তাহার সময় হইতে তাহার শিষ্য ও অনুসরণকারিগণ কর্তৃক “মেস্‌মেরিজম্” নামে আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছিল; সুতরাং যানিমেল ম্যাগ্নেটিজম ও মেস্‌মেরিজম্ প্রকৃত রূপে একই বিষয়। হিপ্নোটিজম্” অপেক্ষাকৃত আধুনিক জিনিষ। এই বিদ্যা আপাত দৃষ্টিতে অ্যানিমেল ম্যাগ্নেটিজ বা মেস্‌মেরিজমের সদৃশ বলিয়া বোধ হইলেও উহার সহিত ইহার অনেক পার্থক্য আছে।

মেসমার চিকিৎসক, জোতির্বিদ ও দার্শনিক ছিলেন। তিনি ফলিত জ্যোতিষের চর্চায় জানিতে পারিয়াছিলেন যে, আকাশ-বক্ষ বিহারী গ্রহনক্ষত্রগণ কোটি কোটি যোজন দূরে থাকিয়াও পৃথিবীস্থ প্রাণীপুঞ্জের উপর অপ্রতিহতভাবে আধিপত্য করিয়া থাকে এবং চুম্বককেও লৌহ আকর্ষণ করিতে দেখা যায়। তিনি এই আকর্ষণী শক্তির ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করিয়াই বোধ হয় সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, যখন চুম্বক এক খণ্ড লৌহকে আকর্ষণ করিতে পারে, তখন উহার অন্তর্নিহিত আকর্ষণী শক্তি প্রভাবে মানুষও অল্পাধিক পরিমাণে আকৃষ্ট হওয়া সম্ভব। তিনি এই সিদ্ধান্তানুযায়ী এক খণ্ড চুম্বক লইয়া প্রথম তাহার বোগীদিগকের উপর পরীক্ষায় প্রবৃত্ত হন, অর্থাৎ চুম্বক খানাকে তাহাদের শরীরের উপর বুলাইতে আরম্ভ করেন এবং তাহাতেই তাহারা মোহ নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়ে। তৎপরে তিনি আরও কতকগুলি পরীক্ষা দ্বারা ইহা দেখিতে পাইলেন যে, চুম্বক ব্যতিরেকে কেবল হাত বুলাইয়াও তাহাদের উপর মোহ নিদ্রা উৎপাদন করা যায়; এবং এমন কি, দেহস্থ আকর্ষণী শক্তিকে হস্তদ্বারা চালনা পূর্বক কোন পদার্থের মধ্যে স্থানান্তরিত করিলেও তাহা উক্ত শক্তি সম্পন্ন হয়। এবং তাহা বুলাইয়া দিলেও উত্তাবস্থা উৎপাদিত হইয়া থাকে।

 

য়ানিমেল ম্যাগ্নেটিজম্ সম্বন্ধে মেসমারের মতবাদ

“আমাদের এই পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ সমুহ ও সজীব প্রকৃতির মধ্যে একটি পারম্পরিক আদান-প্রদানের নিয়ম বর্তমান আছে।”

“যাবতীয় পদার্থের মধ্যে প্রবেশ করিতে সমর্থ এক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বাষ্প বিশেষের দ্বারা এই আদান-প্রদান সংঘটিত হইয়া থাকে।

“কোন প্রাকৃতিক, আধিভৌতিক ও যান্ত্রিক নিয়মেই এই ব্যাপার ঘটিয়া থাকে, কিন্তু তাহা এ পর্যন্ত অজ্ঞাত বলিতে হইবে।”

“এই আদান-প্রদান জোয়ার-ভাটার সদৃশ।”

“জড় বস্তুর গুণ সকল ও সংঘটন ব্যাপার আদান-প্রদানের উপরই নির্ভর করে। অয়স্কান্তমণি বা চুম্বক যে সকল ব্যাপার ঘটাইয়া থাকে, এই বাষ্প শরীরস্থ স্নায়ু সমুহের উপর কাৰ্যকর হইয়া ও তাহাদের সহিত মিশিয়া মানব-শরীরে সেই প্রকার কাৰ্য সকল প্রকাশ করে। এজন্যই আমরা “জৈব আকর্ষণী শক্তি”র কথা বলিয়া থাকি।”

“এই বাষ্প অতি দ্রুতবেগে এক শরীর হইতে অন্য শরীরাভ্যন্তরে প্রবেশ করে, দুর হইতে কাৰ্য্য করিতে পারে, আলোকের ন্যায় প্রতি বিম্বিত হয়, এবং শব্দ দ্বারা দৃঢ়ীভূত ও সঞ্চারিত হইয়া থাকে। কিন্তু আবার এমন কতকগুলি জীব বর্তমান আছে, যাহারা এই জৈব আকর্ষণী শক্তির তাবৎ ফল সমূহ নাশের কারণ। ইহাদের শক্তিও স্বভাবরূপ (positive) বুঝিতে হইবে।”

“জৈব আকর্ষণী শক্তি দ্বারা আমরা স্নায়বিক রোগ সকলের সত্বর আরোগ্য বিধান করিতে পারি এবং এই অতি সত্বর সংঘটিত স্নায়বিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়া যাবতীয় রোগ আরোগ্য করিতে সমর্থ হই। ইহা বলিলে অত্যুক্তি হইবেনা যে, ভেষজ সমূহের কাৰ্যও এই শক্তিই ঘটাইয়া থাকে ও রোগ চরমাবস্থায় আনয়ন করে।”

“চিকিৎসক এই আকর্ষণী শক্তি দ্বারাই অতি জটিল রোগ সমূহের কাৰ্যকলাপ জানিতে সমর্থ ছিলেন।”

 

হিপ্নোটিজমের সহিত মেস্‌মেরিজুমের বিভিন্নতা

সিদ্ধান্ত, অভ্যাস বা কাৰ্যপ্রণালী এবং উৎপাদিত অবস্থার কাৰ্য্যকারিতা সম্বন্ধে হিপ্নোটিজমের সহিত মেস্‌মেরিজমের স্বভাবগত বিশেষ পার্থক্য আছে। তাহা সংক্ষেপে এই :

মেস্‌মেরিষ্টরা মোহিতাবস্থাকে আকর্ষণী শক্তির সদ্য ফল (direct effect) বলিয়া অভিহিত করেন, আর হিপ্নোটিষ্টরা উহাকে কাৰ্যকারকের আদেশ এবং সেই আদেশানুযায়ী পাত্রের চিন্তা বা কল্পনার ফল বলিয়া আরোপ করেন। মোহ নিদ্রা উৎপাদনাৰ্থ মেসমেরিষ্টরা পাস, আকর্ষণী স্পর্শ ও মোহিনী দৃষ্টি অত্যাবশ্যকীয় বলিয়া মনে করেন, আর হিপ্নোটিষ্টরা মোহিত করার সময় মোহিনী দৃষ্টি ও পাস ব্যবহার করিলেও আদেশই অধিক প্রয়োজনীয় বলিয়া বিবেচনা করেন। তাহারা উভয়েই পাত্রকে ইচ্ছাশক্তি পূর্ণ আদেশ প্রদান করিয়া থাকেন। তন্মধ্যে হিপ্নোটিষ্টরা মানসিক অপেক্ষা মৌখিক আদেশ, আর মেস্‌মেরিষ্টরা মৌখিক অপেক্ষা মানসিক আদেশই অধিক পরিমাণে প্রয়োগ করেন। হিপ্নোটিজমের প্রণালীতে উৎপন্ন নিদ্রাকে কৃত্রিম নিদ্রা’ (artificial sleep), আর মেসমেরিজমের দ্বারা উৎপাদিত অবস্থাকে “মোহ নিদ্রা” (coma or trance) বলে। পূর্বোক্ত নিদ্ৰাপেক্ষা শেষোক্ত নিদ্রা অনেক বেশী গভীর হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে হিপ্নোটি নিদ্রার স্তর তিনটি* আর মেসমেরিক্‌ নিদ্রার স্তর পাঁচটি (কাহারও মতে ছয়টি)। মেস্‌মেরিক নিদ্ৰাপেক্ষা হিপ্নোটি নিদ্রা পাতলা হয় বলিয়া, এই অবস্থায়ই পাত্র মায়া ও ভ্রমের আদেশ অধিক তৎপরতার সহিত পালন করিয়া থাকে। উভয় নিদ্রার সাহায্যে বা মধ্যবর্তিতায়ই রোগ চিকিৎসা হইতে পারে। এই সম্বন্ধে মেস্‌মেরিষ্ট রা দাবী করেন যে, রোগীকে মোহ নিদ্রায় নিদ্রিত না করিয়া কেবল পাসের সাহায্যেও তাহাকে আরোগ্য করা যায়; পক্ষান্তরে হিপ্নোটিষ্টরা বলেন, রোগী মোহিত না হইলেও অর্যেগ্য হইতে পারে বটে, কিন্তু তজ্জন্য তাহাকে উপযুক্ত আদেশ দেওয়া একান্ত আবশ্যক। মোহ নিদ্রায় পাত্রের অভ্যন্তরীণ জাগরণ হয়, যাহা হিপ্নোটি নিদ্রায় কখনও হয়না, এজন্য পাত্রের আত্মিক শক্তি সমূহের বিকাশ কেবল মেস্‌মেরি নিদ্রার মধ্যবর্তিতায়ই সম্ভব হইয়া থাকে। যাহাদের খুব আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় সংকল্প ও অধ্যবসায় আছে, তাহারা প্রত্যেকেই হিপ্নোটিষ্ট, হইতে পারে, কিন্তু সংযম বা সাধনা দ্বারা আবশ্যকীয় গুণ ও শক্তি লাভ না করিয়া কেহই উচ্চশ্রেণীর মেসমেরিষ্ট হইতে সমর্থ হয়না। এজন্য হিপ্নোটিজম্ অপেক্ষা মেসুমেরিজম কঠিনতর ও উন্নততর সম্মোহন বিদ্যা বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকে।

————–
* ডাক্তার ব্রেইড, হিডেনহেইন, চারকো, রিসার প্রভৃতি বিশেষজ্ঞদের মতে হিপ্নোটিজম্ এর স্তর তিনটি, যথা—ক্যাটালেপটিক (Cataleptic), লেখাজেটিক (Lethargetic) এবং সোম্‌নাম্‌বুলিস্টিক (Somnumbulistic)

প্রথম স্তর–ক্যাটালেটিক্ অবস্থা। এই স্তরে পাত্রের ইচ্ছা বা প্রবৃত্তি থাকেন এবং সে মানসিক কিম্বা মৌখিক আদেশের সাড়া দেয়না। তাহার মাংসপেশী সমূহের স্নায়বিক উত্তেজনার সাহিত্য প্রতীয়মান হইয়া থাকে এবং তাহার শরীরের বিভিন্ন অংশ সকলকে যে অবস্থায় স্থাপন করা যায়, উহারা সেই ভাবেই অবস্থিত থাকে।

দ্বিতীয় স্তর–লেথারূজেটিক বা অবসাদাবস্থা। এই স্তরে পাত্র অসার জড়বৎ অবস্থা প্রাপ্ত হয়; তাহার মাংসপেশী সকল নমনীয়, শিথিল ও আলগা এবং চক্ষু দুইটি বন্ধ থাকে ও শরীরটি সৰ্বাংশে স্পন্দহীন মূৰ্ছায় ন্যায় অথবা প্রায় মদের বিঘোর। নেশার ন্যায় অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই দুইয়ের যে কোন অবস্থায় পাত্রের শরীরে প্রকৃত বা বাহ্য যন্ত্রণা ব্যতিরেকে অস্ত্র চিকিৎসা করা যাইতে পারে।

তৃতীয় স্তর – সোম্‌নাম্‌বুলিস্টিক বা স্বপ্নভ্রমণাবস্থা ইহা মেস্‌মেরিজমের চতুর্থ স্তরের প্রায় সমকক্ষ। ইহাতে পাত্র সম্মোহনবিদের ইঙ্গিতানুসারে স্বপ্নাবিষ্টের ন্যায় কাৰ্য্য সকল সম্পাদন করিয়া থাকে। এই অবস্থায় পাত্রের প্রকৃতি অনুসারে যে সকল ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ব্যাপায় সংঘটিত হয়, তাহা জটিল রকমের। যদি পাত্র উত্তম শ্রেণীর হয়; তবে সম্মোহনবিৎ ইচ্ছা করিলে তাহার স্মৃতি, চিন্তা, এবং কল্পনা প্রখর ও বর্ধিত করিতে পারে এবং অতীত কালের কোন বস্তু, বিষয় বা ঘটনার স্মৃতি তাহার মনে জাগাইয়া দিতে পারে এবং উক্ত সময়ে তাহার সম্পাদিত কাৰ্য সকল তাহার দ্বারা স্বীকার করাইতে পারে। মেসমেরিজমের ন্যায় এই অবস্থা গুলি পাত্রের উপর একটি একটি করিয়া বিকাশ করা যাইতে পারে। অধিকাংশ পাত্ৰই বাহ্যতঃ মধ্যবর্তী স্তরে উপনীত না হইয়াই প্রথম স্তর হইতে তৃতীয় স্তরে পৌঁছিয়া থাকে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ সংজ্ঞা ও পরিভাষা
২. ১.০২ সিদ্ধির মূল কারণ
৩. ১.০৩ আহার-বিহার
৪. ১.০৪ মনের দ্বিত্বভাব
৫. ১.০৫ সম্মোহন আদেশ
৬. ১.০৬ চক্ষুর মোহিনী শক্তি
৭. ১.০৭ পাস করণ বা হাত বুলান
৮. ১.০৮ শরীরে শিথিলতা উৎপাদন
৯. ১.০৯ শিক্ষার প্রণালী
১০. ১.১০ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করণ
১১. ১.১১ জাগ্ৰদবস্থায় সম্মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
১২. ১.১২ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৩. ১.১৩ মোহিতাবস্থা কাহাকে বলে?
১৪. ১.১৪ পাত্রের মনের সংবেদনা
১৫. ১.১৫ পাত্রকে সম্মোহিত করিবার প্রাথমিক উপদেশ
১৬. ১.১৬ পাত্রকে নিদ্রিত করণ
১৭. ১.১৭ পাত্রকে নিদ্রিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৮. ১.১৮ মোহিতাবস্থা পরীক্ষা করণ
১৯. ১.১৯ মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া জন্মান
২০. ১.২০ মোহিত ব্যক্তির মনে ভ্ৰম জন্মান
২১. ১.২১ মায়া ও ভ্রম উৎপাদনার্থ বিশেষ উপদেশ
২২. ১.২২ মোহিত ব্যক্তিকে প্রকৃতিস্থ করণ
২৩. ১.২৩ পাত্রের শরীরে ক্যাটালেপ্‌সী উৎপাদন
২৪. ১.২৪ পাত্রের শরীরে বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন
২৫. ১.২৫ আদেশের প্রতি মোহিত ব্যক্তিগণের সাড়া
২৬. ১.২৬ কঠিন পাত্র মোহিত করণ
২৭. ১.২৭ স্বাভাবিক নিদ্রা মোহিতাবস্থায় পরিবর্তিত করণ
২৮. ১.২৮ আত্ম-সম্মোহন
২৯. ১.২৯ পত্র দ্বারা বা টেলিফোণে মোহিত করণ
৩০. ১.৩০ দেখামাত্র মোহিত করণ
৩১. ১.৩১ পরবর্তী সম্মোহন আদেশ
৩২. ১.৩২ কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ
৩৩. ১.৩৩ অপরের মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
৩৪. ১.৩৪ সম্মোহন ক্রীড়া
৩৫. ২.০১ মেসমেরিজম্ বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা
৩৬. ২.০২ আহার-বিহার, মানসিক গুণাগুণ ইত্যাদি
৩৭. ২.০৩ কিরূপ লোক মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়
৩৮. ২.০৪ মেস্‌মেরিজমে ব্যবহৃত বিশেষ পাস
৩৯. ২.০৫ মোহ নিদ্রার বিভিন্ন স্তর
৪০. ২.০৬ মেসমেরাইজ করা সম্বন্ধে প্রাথমিক উপদেশ
৪১. ২.০৭ পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় মেস্‌মেরাইজ করণ
৪২. ২.০৭ পাত্রের মোহ নিদ্রা উৎপাদন
৪৩. ২.০৯ মোহ নিদ্রায় মায়া ও ভ্রম উৎপাদন
৪৪. ২.১০ পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ
৪৫. ২.১১ মোহ নিদ্রা দূরীভূত করণ
৪৬. ৩.০১ আত্মিক চিকিৎসা
৪৭. ৩.০২ মন্ত্রপূত জল বা জল-পড়া
৪৮. ৩.০৩ মনুষ্যেতর প্রাণী মোহিত করণ
৪৯. ৩.০৪ ক্রিষ্টেল গেইজিং
৫০. ৩.০৫ সম্মোহন-শক্তির আরোপিত অনিষ্টকারিতা
৫১. ৩.০৬ উপসংহার ও পরিশিষ্ট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন