১.২২ মোহিত ব্যক্তিকে প্রকৃতিস্থ করণ

রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র

দ্বাবিংশ পাঠ
মোহিত
ব্যক্তিকে প্রকৃতিস্থ করণ

জাগ্ৰদবস্থায় ও অগভীর নিদ্রায় অভিভূত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করিতে গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে “জাগ—জাগ—জেগে উঠ-জেগে উঠ —জাগ-জাগ—জাগ” বলিবে। ইহাতে তাহার নিদ্রাভঙ্গ না হইলে তাহার শরীরের উপর কয়েকটি উৰ্দ্ধগামী দীর্ঘ পাস দিবে এবং সঙ্গে সঙ্গে

জাগ—জাগ—সেরে গেছে—সেরে গেছে-জাগ—জাগ”ইত্যাদি বলিবে। যদি ঐরূপ করার পর সে জাগ্রত না হয়, তথাপি শিক্ষার্থীর ভয়ের কোন কারণ নাই; কারণ সম্মোহন নিদ্রা বিপজ্জনক নহে। যে সকল ব্যক্তি স্বভাবতঃ অধিক নিদ্রালু কেবল তাহারাই শীঘ্র জাগ্রত হয়না। ঐরূপ প্রকৃতির পালকে তাড়াতাড়ি জাগ্রত করিবার জন্য অধিক চেষ্টা না পাইয়া, কিছুক্ষণের জন্য তাহাকে একটি নীরব স্থানে রাখিবে এবং তাহার নিকট কাহাকেও অবস্থান করিতে কিম্বা যাইতে দিবে না। উক্তাবস্থায় তাহাকে একাকী রাখিলে, দশ হইতে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে তাহার সম্মোহন নিদ্রা স্বতঃ স্বাভাবিক নিদ্রায় পরিবর্তিত হইবে। উক্ত সময়ের পর, শিক্ষার্থী তাহার নিকট যাইয়া একাগ্ৰমনে ও প্রভুত্বসূচক স্বরে নিম্নলিখিতরূপ আদেশ দিবে। বলিবে—জাগ—জাগজাগ; তুমি আর অধিকক্ষণ ঘুমাইবে না,-তোমার আর বেশীক্ষণ ঘুমাইবার আবশ্যকতা নাই,আমি তোমাকে আর বেশীক্ষণ ঘুমাইতে দিব না। জাগ—জাগ—জাগ; তুমি এখনই জাগিয়া উঠিবে;জাগ-জাগ—জেগে উঠ-জেগে উঠ-জাগ” ইত্যাদি। তৎপরে বলিবে—“এখন আমি এক’ হইতে ‘কুড়ি পর্যন্ত সংখ্যাগুলি গণিত; তুমি আমার ‘কুড়ি’ গণ শেষ হওয়ার পূর্বেই জাগিয়া উঠিবে এবং চেয়ার হইতে উঠিয়া দাঁড়াইবে। মনে রেখ, আমার ‘কুড়ি’ গণ শেষ হওয়ার পূর্বেই তোমাকে জাগিতে হইবে। প্রস্তুত হও-এক-দুই-তিন- চার; জাগ—জাগজেগে উঠ; পাঁচ-ছয়-সাত-আট-নয়-দশ-এগার বার; জাগ— জাগ—ঘুম ভেঙ্গে গেছে; তের-চৌদ্দ-পনর যোল-তর-আঠার-উনিশ-কুড়ি; জাগ-জাগ—জেগে উঠ-জাগ—ঘুম ভেঙ্গে গেছে- উঠে দাঁড়াও” ইত্যাদি। যথাযথরূপে এই নিয়মের অনুসরণ করিতে পারিলে মোহিত ব্যক্তি নিশ্চয় জাগ্রত ও প্রকৃতিস্থ হইয়া উঠিবে।

ক্রীড়া প্রদর্শকগণ রঙ্গালয়ে খেলা দেখাইবার সময় স্বাভাবিক বা জাগ্ৰদবস্থায় এবং সম্মোহন নিদ্রায় অভিভূত পাদিগকে আদেশ ও তৎসঙ্গে জোরে করতালি দিয়া হঠাৎ জাগ্রত করিয়া থাকে; উহা দ্বারা তাহাদের স্নায়ুমণ্ডলীতে অকস্মাৎ আঘাত (shock) লাগার সম্ভাবনা আছে বলিয়া উক্ত প্রণালীতে কোন পাত্রকে জাগ্রত না করাই সঙ্গত। মৌখিক আদেশ ও পাস দ্বারা জাগ্রত করিলে তাহাদের শরীর বা মনের কোনরূপ অনিষ্ট হইতে পারেনা। এজন্য কাৰ্যকারক সর্বদা এই নিয়মেরই অনুসরণ করিবে।

প্রকৃতিস্থ করিবার সময়, পাত্রকে নিম্নলিখিতরূপ আদেশ দিলে, সে জাগ্রত হইবার পর বেশ সুস্থতা বোধ করিবে। শারীরিক বা মানসিক রোগ চিকিৎসার উদ্দেশ্য ব্যতীত কাহাকেও মোহিত করিলে, কাৰ্যকারক তাহাকে সর্বদা এরূপ আদেশ প্রদান করিবে যে, সে জাগ্রত হইয়া শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারেই বেশ সুস্থ ও সবলতা বোধ করিবে; তাহার মাথা ও শরীর বেশ পাতলা বোধ হইবে এবং শরীর ও মনে খুব স্ফুর্তি ও স্বচ্ছতা অনুভূত হইবে। পাত্র জাগ্রত হইবার পর, শারীরিক কিম্বা মানসিক কোন প্রকার দুর্বলতা বা অবসন্নতা বোধ করিলে, সম্মোহনবিৎ তাহার নাসা-মূলে স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করিয়া গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে-“তোমার কোন প্রকার দুর্বলতা বা অবসন্নতা নাই, কোন প্রকার শ্রান্তি বা অবসাদ নাই,-তুমি এখন সম্পূর্ণরূপে সুস্থ ও সবল হইয়াছ” ইত্যাদি।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ সংজ্ঞা ও পরিভাষা
২. ১.০২ সিদ্ধির মূল কারণ
৩. ১.০৩ আহার-বিহার
৪. ১.০৪ মনের দ্বিত্বভাব
৫. ১.০৫ সম্মোহন আদেশ
৬. ১.০৬ চক্ষুর মোহিনী শক্তি
৭. ১.০৭ পাস করণ বা হাত বুলান
৮. ১.০৮ শরীরে শিথিলতা উৎপাদন
৯. ১.০৯ শিক্ষার প্রণালী
১০. ১.১০ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করণ
১১. ১.১১ জাগ্ৰদবস্থায় সম্মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
১২. ১.১২ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৩. ১.১৩ মোহিতাবস্থা কাহাকে বলে?
১৪. ১.১৪ পাত্রের মনের সংবেদনা
১৫. ১.১৫ পাত্রকে সম্মোহিত করিবার প্রাথমিক উপদেশ
১৬. ১.১৬ পাত্রকে নিদ্রিত করণ
১৭. ১.১৭ পাত্রকে নিদ্রিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৮. ১.১৮ মোহিতাবস্থা পরীক্ষা করণ
১৯. ১.১৯ মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া জন্মান
২০. ১.২০ মোহিত ব্যক্তির মনে ভ্ৰম জন্মান
২১. ১.২১ মায়া ও ভ্রম উৎপাদনার্থ বিশেষ উপদেশ
২২. ১.২২ মোহিত ব্যক্তিকে প্রকৃতিস্থ করণ
২৩. ১.২৩ পাত্রের শরীরে ক্যাটালেপ্‌সী উৎপাদন
২৪. ১.২৪ পাত্রের শরীরে বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন
২৫. ১.২৫ আদেশের প্রতি মোহিত ব্যক্তিগণের সাড়া
২৬. ১.২৬ কঠিন পাত্র মোহিত করণ
২৭. ১.২৭ স্বাভাবিক নিদ্রা মোহিতাবস্থায় পরিবর্তিত করণ
২৮. ১.২৮ আত্ম-সম্মোহন
২৯. ১.২৯ পত্র দ্বারা বা টেলিফোণে মোহিত করণ
৩০. ১.৩০ দেখামাত্র মোহিত করণ
৩১. ১.৩১ পরবর্তী সম্মোহন আদেশ
৩২. ১.৩২ কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ
৩৩. ১.৩৩ অপরের মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
৩৪. ১.৩৪ সম্মোহন ক্রীড়া
৩৫. ২.০১ মেসমেরিজম্ বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা
৩৬. ২.০২ আহার-বিহার, মানসিক গুণাগুণ ইত্যাদি
৩৭. ২.০৩ কিরূপ লোক মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়
৩৮. ২.০৪ মেস্‌মেরিজমে ব্যবহৃত বিশেষ পাস
৩৯. ২.০৫ মোহ নিদ্রার বিভিন্ন স্তর
৪০. ২.০৬ মেসমেরাইজ করা সম্বন্ধে প্রাথমিক উপদেশ
৪১. ২.০৭ পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় মেস্‌মেরাইজ করণ
৪২. ২.০৭ পাত্রের মোহ নিদ্রা উৎপাদন
৪৩. ২.০৯ মোহ নিদ্রায় মায়া ও ভ্রম উৎপাদন
৪৪. ২.১০ পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ
৪৫. ২.১১ মোহ নিদ্রা দূরীভূত করণ
৪৬. ৩.০১ আত্মিক চিকিৎসা
৪৭. ৩.০২ মন্ত্রপূত জল বা জল-পড়া
৪৮. ৩.০৩ মনুষ্যেতর প্রাণী মোহিত করণ
৪৯. ৩.০৪ ক্রিষ্টেল গেইজিং
৫০. ৩.০৫ সম্মোহন-শক্তির আরোপিত অনিষ্টকারিতা
৫১. ৩.০৬ উপসংহার ও পরিশিষ্ট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন