১.০৩ আহার-বিহার

রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র

তৃতীয় পাঠ
আহারবিহার

সম্মোহন বিদ্যা দুই রকমে শিক্ষা করা যাইতে পারে? প্রথম প্রকার উপযুক্ত সাধনা বলে মনঃশক্তির বিকাশ ও তৎসঙ্গে সম্মোহন করিবার কৌশল শিক্ষা করিয়া, আর দ্বিতীয় প্রকার কেবল উক্ত কৌশল আয়ত্তের দ্বারা। মানুষকে মোহিত করিবার কৌশল সহজেই আয় করা যায়, কিন্তু উপযুক্ত পরিমাণে মনঃ শক্তি লাভ সাধনা সাপেক্ষ। যিনি এই দুই বিষয়ই সুন্দর রূপে আয়ত্ত করিতে পারিয়াছেন,তিনিই যথার্থ সম্মোহনবিৎ

পদ বাচ্য। বাস্তবিক উচ্চশ্রেণীর সম্মোহনবিদের সংখ্যা নিতান্ত বিরল; কারণ অধিকাংশ লোকই উপযুক্ত সাধনা না করিয়া বা উহাতে অপারগ হইয়া, কেবল কৌশল আয়ত্তের দ্বারা আংশিক ভাবে এই বিদ্যা শিক্ষা করিয়া থাকে।

যাহারা উচ্চশ্রেণীর সম্মোহনবিৎ হইবার অভিলাষী, তাহাদিগকে শক্তি লাভের নিমিত্ত উপযুক্ত যত্ন, চেষ্টা ও পরিশ্রম করিতে হইবে। আর যাহাদের তোপ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নাই, তাহারা কেবল সম্মোহনের কৌশল আয়ত্তের দ্বারা ইহা শিক্ষা করিতে পারে। মনের অন্তর্নিহিত যে শক্তি দ্বারা অপ্রতিহতভাবে, জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে স্ত্রীপুরুষের মনের উপর আধিপত্য এবং নিজের শারীরিক, মানসিক, বৈষয়িক ইত্যাদি বিষয়ের উন্নতি সাধন করিতে পারা যায়, শিক্ষার্থী সেই শক্তি লাভের প্রয়াসী হইলে তাহাকে বিশেষরূপে সংযমী হইয়া শিক্ষায় প্রবৃত্ত হইতে হইবে। অনিষ্টকর মনোবৃত্তি সমূহের সংষত প্রয়োগ, সৎবৃত্তি নিচয়ের বিকাশ, ব্রহ্মচর্য্য, সাত্বিকাহার, শারীরিক পরিচ্ছন্নতা ও সাধুভাবে জীবন যাপন এই শক্তি সাধনার প্রধান অঙ্গ। আর যাহারা কেবল কৌশল শিক্ষা দ্বারা এই বিদ্যা আয়ত্ত করিবার অভিলাষী তাহাদের আহার-বিহার, চলা-ফেলা ইত্যাদি সম্বন্ধে বাধাবাধি কোন নিয়ম নাই। সুতরাং তাহারা স্বভাবতঃ যেরূপ ভাবে চলা-ফেরা ও সাধারণতঃ যে সকল দ্রব্যাদি আহার করিয়া থাকে, তাহারা সে সমস্তই করিতে পারিবে। আর যাহারা মনঃশক্তি লাভ করিয়া উচ্চশ্রেণীর সম্মোহনবিৎ হইতে ইচ্ছুক, তাহাদের জন্য সংযম-সাধনা, আহার-বিহার, চলা-ফেরা ইত্যাদি বিষয়ে দ্বিতীয় খণ্ডে বিস্তৃত উপদেশ প্রদত্ত হইল; তাহারা তদনুযায়ী শিক্ষা বা সাধনায় প্রবৃত্ত হইবে।

উচ্চ শ্রেণীর সম্মোহনবিদগণের শক্তি যথার্থই অসাধারণ। তাহারা সংখ্যায় যেমন অধিক পরিমাণে লোক সম্মোহিত করিতে পারেন, সম্মোহন চিকিৎসা (hypnotic or mesmeric treatment) দ্বারাও তেমন নানা প্রকার কঠিন রোগ সকল সহজে আরোগ্য করিতে সমর্থ হয়েন। উপযুক্ত পরিমাণে সংবেদ্য (susceptible) পাত্রগণের দিব্যদৃষ্টি, চিন্তা-পঠন, দিব্যানুভূতি ইত্যাদি শক্তি কেবল তাহারাই বিকাশ করিতে সমর্থ হইয়া থাকেন। তাহাদের ব্যক্তিত্ব এমন আকর্ষণী শক্তি বিশিষ্ট বা বিশেষত্ব পূর্ণ যে, উহা দ্বারা সহজেই লোক আকৃষ্ট হইয়া তাহাদের প্রতি বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, ভালবাসা ইত্যাদি স্থাপন করিতে বাধ্য হইয়া থাকে। এতদ্ব্যতীত তঁাহারা বর্ধিত মন শক্তি বলে শারীরিক, মানসিক, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক বিষয়েরও প্রভূত উন্নতি সাধন করিতে পারেন। আর যাহারা শেষোক্ত প্রণালীতে ইহা শিক্ষা করে, তাহারা সাধারণ ভাবে কেবল অল্প সংখ্যক লোক মোহিত করিয়া সম্মোহন ক্রীড়াদি প্রদর্শন করিতে সমর্থ হয়; ইহা ভিন্ন অপরাপর বিষয়ে তাহারা তেমন সাফল্য লাভ করিতে পারে না। মিঃ র‍্যাডে (Mr. Randall) প্রথমোক্ত সম্মোহনবিদের শক্তিকে “প্রকৃত” (real) আর শেষোক্ত ব্যক্তির শক্তি “কৃত্রিম” (artificial) বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। সুতরাং এতদুভয়ের মধ্যে যে পথ শিক্ষার্থীর বাঞ্ছিত হয়, সে উহারই অনুসরণ করিবে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ সংজ্ঞা ও পরিভাষা
২. ১.০২ সিদ্ধির মূল কারণ
৩. ১.০৩ আহার-বিহার
৪. ১.০৪ মনের দ্বিত্বভাব
৫. ১.০৫ সম্মোহন আদেশ
৬. ১.০৬ চক্ষুর মোহিনী শক্তি
৭. ১.০৭ পাস করণ বা হাত বুলান
৮. ১.০৮ শরীরে শিথিলতা উৎপাদন
৯. ১.০৯ শিক্ষার প্রণালী
১০. ১.১০ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করণ
১১. ১.১১ জাগ্ৰদবস্থায় সম্মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
১২. ১.১২ জাগ্ৰদবস্থায় মোহিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৩. ১.১৩ মোহিতাবস্থা কাহাকে বলে?
১৪. ১.১৪ পাত্রের মনের সংবেদনা
১৫. ১.১৫ পাত্রকে সম্মোহিত করিবার প্রাথমিক উপদেশ
১৬. ১.১৬ পাত্রকে নিদ্রিত করণ
১৭. ১.১৭ পাত্রকে নিদ্রিত করা সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
১৮. ১.১৮ মোহিতাবস্থা পরীক্ষা করণ
১৯. ১.১৯ মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া জন্মান
২০. ১.২০ মোহিত ব্যক্তির মনে ভ্ৰম জন্মান
২১. ১.২১ মায়া ও ভ্রম উৎপাদনার্থ বিশেষ উপদেশ
২২. ১.২২ মোহিত ব্যক্তিকে প্রকৃতিস্থ করণ
২৩. ১.২৩ পাত্রের শরীরে ক্যাটালেপ্‌সী উৎপাদন
২৪. ১.২৪ পাত্রের শরীরে বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন
২৫. ১.২৫ আদেশের প্রতি মোহিত ব্যক্তিগণের সাড়া
২৬. ১.২৬ কঠিন পাত্র মোহিত করণ
২৭. ১.২৭ স্বাভাবিক নিদ্রা মোহিতাবস্থায় পরিবর্তিত করণ
২৮. ১.২৮ আত্ম-সম্মোহন
২৯. ১.২৯ পত্র দ্বারা বা টেলিফোণে মোহিত করণ
৩০. ১.৩০ দেখামাত্র মোহিত করণ
৩১. ১.৩১ পরবর্তী সম্মোহন আদেশ
৩২. ১.৩২ কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ
৩৩. ১.৩৩ অপরের মোহিত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
৩৪. ১.৩৪ সম্মোহন ক্রীড়া
৩৫. ২.০১ মেসমেরিজম্ বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা
৩৬. ২.০২ আহার-বিহার, মানসিক গুণাগুণ ইত্যাদি
৩৭. ২.০৩ কিরূপ লোক মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়
৩৮. ২.০৪ মেস্‌মেরিজমে ব্যবহৃত বিশেষ পাস
৩৯. ২.০৫ মোহ নিদ্রার বিভিন্ন স্তর
৪০. ২.০৬ মেসমেরাইজ করা সম্বন্ধে প্রাথমিক উপদেশ
৪১. ২.০৭ পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় মেস্‌মেরাইজ করণ
৪২. ২.০৭ পাত্রের মোহ নিদ্রা উৎপাদন
৪৩. ২.০৯ মোহ নিদ্রায় মায়া ও ভ্রম উৎপাদন
৪৪. ২.১০ পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ
৪৫. ২.১১ মোহ নিদ্রা দূরীভূত করণ
৪৬. ৩.০১ আত্মিক চিকিৎসা
৪৭. ৩.০২ মন্ত্রপূত জল বা জল-পড়া
৪৮. ৩.০৩ মনুষ্যেতর প্রাণী মোহিত করণ
৪৯. ৩.০৪ ক্রিষ্টেল গেইজিং
৫০. ৩.০৫ সম্মোহন-শক্তির আরোপিত অনিষ্টকারিতা
৫১. ৩.০৬ উপসংহার ও পরিশিষ্ট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন