৩৫. ভেরিটাসেরাম

জে. কে. রাওলিং

৩৫. ভেরিটাসেরাম

হ্যারি মাটির ওপর মুখ থুবড়ে পড়ল। ঘাসে ওর মুখ চেপ্টে হয়ে গেলো। কচি কচি সবুজ ঘাসের গন্ধে মন তাজা হয়ে গেল। পোর্ট কিতে চেপে উড়ে আসার সময় দূরন্ত বাতাস চোখে–মুখে ঝাপটা মারার জন্য ও চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছিলো। মাটিতে নেমে ও তেমনই বন্ধ করে রাখল। ওর শরীরের ভেতর যত বাতাস–নিশ্বাস ছিল দূরন্ত বাতাস সেগুলো যেন শুষে নিয়েছে। মাথাটা বন বন করে ঘুরছে, পায়ের তলার মাটি সমুদ্রে ভাসমান জাহাজের মতো দুলছে। ও ট্রাই উইজার্ড কাপ আর সেডরিকের মৃতদেহ দুহাতে শক্ত করে ধরে রইল!… কিছুতেই হাত দুটো সরিয়ে নিতে পারছে না। মাথার ভেতরটা ফাঁকা। ক্লান্তি আর ধকলে ওকে নিদারুণ অচল করে রেখেছে। তাই বিশ্রাম নেবার জন্য হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগলো।… অপেক্ষা… কেউ এসে ওকে সাহায্য করুক তারই অপেক্ষা। মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে… কপালের কাটা দাগটা ব্যথা বেদনায় দপদপ করতে লাগলো। জ্বালা–যন্ত্রণা কমছে না।

হঠাৎ নানারকম অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ ওর কানে আসতে লাগলো… চিৎকার, হুংকার, পদশব্দ।… হ্যারিকে সেসব শব্দ শুধু বধির নয় কিংকর্তব্যবিমূঢ় করেছিলো। ও মুখ না তুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রইলো। মাঝে মধ্যে ওর মনে হচ্ছে যেন ঘুমতে ঘুমতে এক বীভৎস স্বপ্ন দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে বসেছে।

তারপর কে যেন ওকে তুলে ধরলো।

হ্যারি… হ্যারি!

পরিচিত কণ্ঠস্বর… হ্যারি ধীরে ধীরে চোখ খুললো। ও দেখল তারাভরা আকাশের নিচে ও শুয়ে রয়েছে, আলবস ডাম্বলডোর ওর মুখের পানে ঝুঁকে রয়েছেন। তার পাশে অনেক মানুষের ছায়া। তবু মনে হল যেন ওর মাথার ভেতরে সেসব অদেখা মানুষের পদশব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

ও গোলকধাঁধার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে। ওর চোখের সামনে বিশাল এক খেলা দেখার মানুষের ছায়া… ছায়াগুলো চকচকে বেদিতে পড়ছে আর নিমেষে সরে যাচ্ছে।

হ্যারি কাপের হাতলটা ছেড়ে দিয়ে সেডরিককে আরও জোরে আঁকড়ে রইল। অন্য হাতটা তুলে ডাম্বলডোরের কব্জিটা ধরল।… কিন্তু ডাম্বলডোরকে ও আর দেখতে পাচ্ছে না, ডাম্বলডোর যেন ঝাপসা হয়ে গেছেন।

হ্যারি অস্পষ্ট স্বরে বলল, ও ফিরে এসেছে, ভোল্ডেমর্ট আবার ফিরে এসেছে।

কি হয়েছে…?

কর্নেলিয়স ফাজের মুখটা মনে হল কথাটা শুনে বেঁকে গেছে। মুখটা ফ্যাকাসে, আতঙ্কের ছাপ।

হায় ঈশ্বর… ডিগরি! ফাজ ফিসফিস করে বললেন, ডাম্বলডোর ডিগরি আর নেই… মারা গেছে!

ফাজ কথাটা দুবার বললেন।… দর্শক, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা সব দেখছে… ফাজের কথা শুনেছে। ওরা রাতের অন্ধকার ভেদ করে হায় হায় করে উঠল–ও মৃত! ও মারা গেছে! সেডরিক ডিগরি! মৃত! আর নেই?

–হ্যারি, এবার ওকে তুমি মুক্ত কর। হ্যারি ফাজের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। ও অবসাদগ্রস্ত দেহে সেডরিককে সরিয়ে নেবার আঙ্গুলের স্পর্শ পেল। কিন্তু হ্যারি ওকে ছেড়ে দিতে চায় না।

তারপর ও দেখতে পেল ডাম্বলডোরের আবছা আবছা মুখ। এবার দূরে নয় অনেক সামনে, হ্যারি, তুমি এখন আর ওকে কোনও সাহায্য করতে পারবে না। সবশেষ, ওকে ছেড়ে দাও।

ও আমাকে মৃত্যুর পর বলেছে, ও বলেছে, ওকে যেন ওর মা-বাবার কাছে দিয়ে আসি।

ঠিকই বলেছে হ্যারি… এখন ওকে ছেড়ে দাও।

ডাম্বলডোরের মতো এক শক্তিহীন বৃদ্ধ হ্যারিকে মাটি থেকে টেনে তুলে দাঁড় করালেন। হ্যারি টলতে লাগল, মাথাটা দপ দপ করতে লাগল। ওর আঘাত প্রাপ্ত পা আর ওকে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারছে না যেন। আশপাশে সকলেই ঠেলাঠেলি করে হ্যারির কাছে এসে জানতে ব্যাঘ–কী হয়েছিল? কিভাবে… ডিগরি মারা গেছে?

ফাজ বললেন, তোমরা ভিড় করো না, ওকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাব, ও অসুস্থ, অনেক আঘাত পেয়েছে। ডাম্বলডোর, ডিগরির বাবা-মা তারাও আছেন, অপেক্ষা করছেন স্ট্যান্ডে বসে।

ডাম্বলডোর আমি হ্যারিকে নিয়ে যাই, আমি নিয়ে যাই।

–না, আমি নিয়ে গেলেই ভাল হবে।

–ডাম্বলডোর, আমোস ডিগরি দৌড়াচ্ছে… ও আসছে… আপনি ওকে কিছু বলবেন না… অন্তত ও দেখার আগে…?

তুমি নড়বে না একটুও, চুপ করে এখানে বসে থাক।

মেয়েরা কাঁদছে, ফুঁপিয়ে কাঁদছে… পাগলের মতো হাত–পা ছুঁড়ছে। হ্যারির সেই দৃশ্য ভাল লাগে না।

সব ঠিক হয়ে যাবে… আমরা তোমাকে ফিরে পেয়েছি… নাও চল হাসপাতালে যেতে হবে।

হ্যারি থুথু জড়ানো কণ্ঠে, ডাম্বলডোর বলছেন থাকতে, ওর কাটা দাগটা দপদপ করেই চলেছে… মনে হচ্ছে ও যেন ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। চোখেও ভাল দেখতে পাচ্ছে না… সবই ভাসা ভাসা।

তুমি চুপটি করে শুয়ে থাক, এটাই তোমার দরকার, চল যাওয়া যাক।

একজন মোটাসোটা লোক, সে ভিড়ের মধ্য থেকে এসে হ্যারিকে তুলল। হ্যারি শুনতে পেল বহু মানুষের চিৎকার, কান্না। ওকে সেই লোকটা ক্যাসেলে নিয়ে চলল। হ্যারি আর কিছু শুনতে পাচ্ছে না। যে লোকটা ওকে তুলে নিয়ে চলেছে, শুনতে পাচ্ছে তারই নিশ্বাস।

পাথরের সিঁড়ির কাছে সেই লোকটি জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছিল হ্যারি? হ্যারি একটু পর ক্লাঙ্ক, ক্লাঙ্ক, ক্লাঙ্ক শব্দ শুনে বুঝল লোকটি আর কেউ নয়… ম্যাড আই মুডি।

এনট্রেন্স হল পার হবার সময় হ্যারি বলল, কাপটায় ফিট করা ছিল পোর্ট কী।… আমাকে আর সেডরিককে একটা কবরস্থানে নিয়ে গেলো… সেখানে ভোল্ডেমর্ট ছিল… লর্ড ভোল্ডেমর্ট।

ক্লাঙ্ক… ক্লাঙ্ক… ক্লাঙ্ক… সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় মুডির কাঠের পায়ের শব্দ।

ডার্ক লর্ড সেখানে ছিল? তারপর…?

সেডরিককে হত্যা করল… ওরা ধরে বেঁধে সেডরিককে হত্যা করল।

–তারপর?

করিডোর দিয়ে যাবার সময় আবার জোরে জোরে শব্দ হতে লাগল… ক্লাঙ্ক… ক্লাঙ্ক… ক্লাঙ্ক…।

পোসান তৈরি করে… আবার ভোল্ডেমর্ট ওর দেহ ফিরে পেয়েছে…।

ডার্ক লর্ড ওর দেহ ফিরে পেয়েছে? ও আবার ফিরে এসেছে?

ডেথইটাররাও এসেছিল… তারপর আমরা দ্বন্দ্বযুদ্ধ করি।

তুমি ডার্ক লর্ডের সঙ্গে ডুয়েল লড়েছিলে…?

হা… আমার জাদুদণ্ড ফিরে পেয়েছিলাম… অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস দেখেছি, করেছি।… মাকে, বাবাকে দেখেছি… ওরা ভোল্টেমর্টের জাদুদণ্ডের সরু ছিদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন…।

ঠিক আছে হ্যারি… এখানে… এখানে তুমি বস… এটা খেলেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে।…চট করে খেয়ে নাও হ্যারি, আসলে যা তুমি দেখেছ সেগুলো আমার জানা দরকার। ঠিক যা যা ঘটেছিল…।

মুডি একরকম জোর করে একটা হ্যারির গলায় কাপে করে ওষুধ ঢেলে দিলেন। হ্যারি মুখ বিকৃত করল। ওইরকম তেঁতো আর ঝাঁঝাল ওষুধ ও জীবনে খায়নি। হ্যারি দেখল মুডির মুখটা ফাজের মতই ফ্যাকাসে। কিছু জানার জন্য আগ্রহভরা স্বাভাবিক চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

–তুমি নিশ্চিত জান ভোল্ডেমর্ট ফিরে এসেছে হ্যারি?… তা, কেমন করে ফিরল?

–ও আমার, ওর বাবার কবর থেকে আর ওয়ার্মটেলের কাছ থেকে কিছু খেয়েছে, হ্যারি বলল। এখন হ্যারির অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক মাথায় ব্যথা নেই, কপালে কাটা দাগ চুলকোচ্ছে না, অফিসের ঘরটা অন্ধকার, মুডিকে তাও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। কানে ভেসে আসছে কিডিচ পিচ থেকে লোকজনের কথাবার্তা, চিৎকার চেঁচামেচি।

–ডার্ক লর্ড তোমার কাছ থেকে কী নিয়েছিল হ্যারি? মুডি বললেন। হ্যারি ওর একটা হাত তুলে বলল–রক্ত।… ও কব্জির কাছে কাটা দাগটা দেখাল মুডিকে।

মুডি খুব ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেললেন। আর ডেথইটারস? তারাও ফিরে এসেছে?

হ্যারি বলল–হ্যা… অনেক।

–তা ওদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিল ভোল্ডেমর্ট? ওদের কী ক্ষমা করেছেন? মুডি শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন।

কিন্তু হ্যারির একটা কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। ওর আগেই সেটা ডাম্বলডোরকে বলা উচিত ছিল।–, হোগার্টে একজন ডেথইটার আছে… ও গবলেট অব ফায়ারে আমার নাম দিয়েছিল, ওরা চেয়েছিল যেন আমার মৃত্যু হয়।

হ্যারি উঠে বসার চেষ্টা করতেই মুডি ওকে চেপে ধরে শুইয়ে দিলেন।

মুডি উত্তাপহীন কণ্ঠে বললেন–ডেথইটারটি কে আমি জানি।

–কারকারফ, হ্যারি উত্তেজিত স্বরে বলল। ও এখন কোথায়? আপনারা কী ওকে ধরেছেন, ওকে কী বন্দি করে রেখেছেন।

মুডি অদ্ভুতভাবে হেসে বললেন–কে কারকারফ? ওতো আজ রাতেই পালিয়েছে, সবকিছু জানতে পেরে পালিয়েছে। ও ডার্কলর্ডের অনেক বিশ্বস্ত অনুগামীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তবে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে ও পালাতে পারবে না শত্রুদের ধরবার ডার্কলর্ডের অনেক পন্থা আছে।

–কারকারফ পালিয়েছেন… পালিয়ে গেছেন? উনিই তো আমার নাম গবলেট অব ফায়ারে কাপের জন্য দিয়েছিলেন, দেন নি?

–না, মুডি বললেন–না উনি দেননি… নাম আমি দিয়েছিলাম।

 হ্যারি কথাটা শুনেও বিশ্বাস করতে পারলো না।

–না… না… আপনি দেননি, হ্যারি বলল–আপনি তা করতে পারেন না আপনি কখনই না।

–তুমি বিশ্বাস করতে পার আমি দিয়েছিলাম। কথাটা বলার পর মুডির জাদু চোখ ঘুরতে ঘুরতে দরজার কাছে থমকে দাঁড়াল। হ্যারি বুঝতে পারলো–বাইরে যে কেউ দাঁড়িয়ে নেই সেটা জানতে চান।… একই সময় মুডি তার জাদুদণ্ডটা বের করে হ্যারির দিকে বাড়ালেন।

–উনি বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করেছেন… তারপর? সেই সব ডেথইটার যারা মুক্তি পেয়েছিলো? আর যে আজকাবান থেকে পালিয়েছে সে?

–কী বললেন? হ্যারি বলল।

মুডির দিকে, ওর দিকে প্রসারিত দণ্ডের দিকে হ্যারি তাকিয়ে ভাবল মজা করছেন। বোকা বোকা জোক সন্দেহ নেই।

–আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, মুডি শান্তভাবে বললেন–যারা তার খোঁজখবর নেয়নি তাদের কী করেছেন? অবিশ্বস্ত, নোংরা জঞ্জাল, ভীতু যারা কিডিচ কাপের ফাইনালে মুখোশ নিয়েছিল, তারাও আকাশে আমার ডাকমার্ক নিক্ষেপ দেখে… পালিয়ে গেলো।

–কী বলছেন? ডার্কমার্ক আপনি ছুঁড়ে ছিলেন?

–হ্যারি, তোমাকে আমি বহুবার বলেছি, আজ আবার বলছি… আমি যা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি সেটা হচ্ছে ডেথইটারদের ছেড়ে দেওয়া। তারা আমার মাস্টারের দিক থেকে সরে গিয়েছিল যখন তার সবচেয়ে বেশি ওদের প্রয়োজন ছিল। আমি আশা করেছিলাম তিনি ঠিকমত সাজা দেবেন… তাদের নির্যাতন করবেন। আমাকে বল, তিনি কি তাদের আঘাত করেছেন, বল হ্যারি। মুডির চোখমুখ অদ্ভুত এক হাসিতে ছেয়ে গেল।

তিনি কি বলেছেন… একমাত্র আমি একমাত্র… যে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। প্রস্তুত থাক সবকিছু তুচ্ছ করে তোমাকে তার হাতে তুলে দেবার জন্য।

না… তা হতে পারে না… আপনি হতে পারেন না।

অন্য এক স্কুলের হয়ে কে তোমার নাম গবলেট অব ফায়ারে দিয়েছিল? আমি যারা তোমার ক্ষতি করতে পারে তাদের কে ভয় পাইয়ে ছিল, তুমি যাতে টুর্নামেন্ট জিততে পার তার ব্যবস্থাকে করেছিল? আমি করেছিলাম। কে তোমাকে ড্রাগনদের পরাজিত করাবর সাহায্য করেছিল? আমি করেছিলাম।

মুডির ম্যাজিক চোখের দৃষ্টি দরজা থেকে সরে এসে হ্যারির ওপর পড়ল। ওর মুখের হা আরও বড় হয়ে গেল। মনে করবে না ব্যাপারটা খুব সহজ ছিল হ্যারি। বিভিন্ন টাকে অন্যের দৃষ্টি এড়িয়ে তোমাকে গাইড করতে চেয়েছিলাম। আমি আমার ধূর্তোমীর প্রতিটি কণা আমি ব্যবহার করেছিলাম। যাতে তোমার জেতার পেছনে আমার হাত আছে কেউ যেন জানতে না পারে। দ্বিতীয় টাস্কের সময় আমি ভয় পেয়েছিলাম তুমি হয়ত পারবে না।… আমি তোমার ওপর সজাগ–দৃষ্টি রেখে চলেছিলাম, পটার। আমি জানতাম তুমি এগ কু ঠিকমত চর্চা করোনি, তো আমি তোমাকে একটি হিন্ট দিয়েছিলাম।

–না, আপনি দেননি… সেডরিক আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছিল, হ্যারি কর্কশ গলায় বলল।

কে সেডরিককে জলের তলায় ওটা খুলতে বলেছিল? আমি। আমি বিশ্বাস করেছিলাম ও ঠিকমত কাজ করবে এবং তোমাকে ইনফরমেশন ঠিকমত দেবে… বুঝলে পটার, দ্ৰ ভালমানুষদের সহজেই নিপুণভাবে যেকোন কাজে ব্যবহার করা যায়। আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি তুমি সেডরিককে ড্রাগন সম্বন্ধে অগ্রিম খবর দিয়েছিলে বলেই ও তোমার প্রতিদান দিয়েছিল। তাহলেও, মনে হয়েছিল সম্ভবত তুমি অকৃতকার্য হবে। তুমি যতক্ষণ লাইব্রেরিতে থাকতে, আমি তোমাকে নজরে রাখতাম। তুমি কি জানতে না যে বইটি তোমার প্রয়োজন হয়েছিল, সেই বইটি লাইব্রেরিতে নয়, তোমার ডরমেটরিতে ছিল, তোমার মনে নেই আমি ওটা লংবটম ছেলের হাতে দিয়েছিলাম, ম্যাজিক্যাল মেডিটামেনিয়ন ওয়াটার প্ল্যান্টস অ্যান্ড দ্যা প্রপারটিজ। আমি বলেছিলাম জিল্লিউইড সম্বন্ধে বইটি থেকে সব জানতে পারবে, আমি আশা করেছিলাম সাহায্যের জন্য তুমি যাকে মনে করবে তার কাছে যাবে। তুমি জানতে চাইলে লংবটম তোমাকে এক মুহূর্তের মধ্যে বলতে পারত। তোমার অহংকার, তোমার স্বাধীনতাবোধ… তোমাকে নিরস্ত করেছিল।

তো আমি কি করতে পারি বল? অন্য একটি নগণ্য পথে তোমাকে তথ্য জোগান দিলাম। ইউলবলের দিন তুমি আমাকে বলেছিলে ডব্বি নামে এক হাউজ এলফ তোমাকে একটা বড়দিনের উপহার দিয়েছে। আমি ওই এলফকে ডেকে একদিন আমার রোবস কাঁচার জন্য ওকে স্টাফরুমে ডেকেছিলাম। আমি ম্যাকগোনাগলের সঙ্গে খুব জোরে জোরে হোস্টেজদের আর পটার জিল্লিউইড ব্যবহার করতে পারে কি না সেই সম্বন্ধে কথাবার্তা বলছিলাম এবং তোমার হোট বন্ধু এলফটি সব শুনে এক দৌড়ে স্নেইপের আলমারির দিকে ছুটে যায়… তারপর  তোমাকে খুজতে যায়।

মুডির জাদুদণ্ড তখনও হ্যারির বুকের ওপর ন্যস্ত ছিল।–তুমি অনেকটা সময় লেকে ছিলে পটার। আমি ভেবেছিলাম তুমি ডুবে গেছ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত ডাম্বলডোর তোমার মুখতাকে বিরাট একটি মহৎ কাজ ধরে নিয়েছিলেন… তারজন্য বেশি নম্বর দিয়েছিলেন। আমি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলেছিলাম।

অবশ্য আজকের রাতের গোলকধাঁধার ব্যাপারটা তোমার কাছে খুব কঠিন ব্যাপার হয়নি; মুডি বললেন। তার প্রধান কারণ তোমার যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তারজন্য মাঠের চারপাশে আমি পাহারা দিচ্ছিলাম। বাইরে থেকে নজর রাখছিলাম। তোমার পথের বাধা সরাতে আমি অনেক জাদুমন্ত্র প্রয়োগ করেছিলাম। আমি ফ্লেউর ডেলাকৌরকে দাবিয়ে দিয়েছি, ক্রামের ওপর ইমপেরিয়স কার্স নিক্ষেপ করেছিলাম যাতে ও ডিগরিকে শেষ করে দিতে পারে এবং তোমার কাপে পৌঁছানোর রাস্তা সহজ ও বাধাহীন হয়।

হ্যারি অবাক হয়ে ম্যাড আই মুডির দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবতে পারছে না মুডি কি সব বলছেন–ডাম্বলডোরের বন্ধু বিখ্যাত অরর, যে অনেক ডেথইটারদের ধরেছেন, কি সব বাজে বাজে কথা বলছেন-এর কোন মানে… মানে হয় না।

হ্যারি ঝাপসা শক্র আয়না পরিষ্কার হতে দেখল। হ্যারি দেখল মুডির পেছনে আবছা তিনজন লোক একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। কিন্তু মুডি সেগুলো লক্ষ্য করছেন না। তার ম্যাজিক্যাল আই শুধু হ্যারির ওপর নিবন্ধ।

ডার্কলর্ড ঠিক তোমাকে হত্যা করতে সমর্থ হয়নি পটার… ও চেয়েছিল হত্যা করতে মুডি বললেন।–কল্পনা করতে পারো আমি তোমাকে হত্যা করলে কিভাবে তিনি আমাকে পুরস্কৃত করতেন। …তার পুনরুথ্যানের জন্য আমি তোমাকে তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম… তিনি তোমাকে হত্যা করতে পারেনি। কল্পনা করতে পার, তোমাকে আমি হত্যা করার পর তার কাছ থেকে কত ভালবাসা ও সম্মান পাব… সেই সম্মানের কথা ডেথইটাররা কল্পনাই করতে পারে না। আমি হব তার সবচেয়ে বড় বন্ধু ও সমর্থক।… পুত্রের চেয়েও নিকট সম্পর্কের।

কথা বলতে বলতে মুডির স্বাভাবিক চোখ ফুলে উঠতে লাগলো, ম্যাজিক্যাল আই হ্যারির ওপর স্থির। দরজাটা বন্ধ, হ্যারি জানে শত চেষ্টা করেও সময়মত নিজস্ব দণ্ড হাতের কাছে পাবে না।

মুডি বলে চললেন, ডার্কলর্ড আর আমি…। তখন ওকে সম্পূর্ণ উম্মাদ মনে হতে লাগল… হ্যারির ওপর চড়াও হয়ে খুব কাছে মুখ এনে, আমাদের দুজনের খুব মিল আছে।… দুজনেরই ভাগ্যে অপদার্থ পিতা… খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দুজনেই প্রচুর অসম্মান বোধ করেছি হ্যারি।… দুজনেই আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি… পিতার হত্যাকারী।… হত্যা করেছি ডার্ক অর্ডারের ক্রমবিকাশের জন্য!

হ্যারি নিজেকে সংযত করে রাখতে পারলো না বলল–আপনি পাগল, পাগল হয়ে গেছেন।

আমি পাগল? খুব উঁচু গলায় মুডি বললেন।–বেশ তাহলে দেখ, তাহলে দেখ কে পাগল…, এখন ডার্কলর্ড ফিরে এসেছে, আমি তার পাশে রয়েছি। ফিরে এসেছেন হ্যারি পটার, তুমি তাকে পরাজিত করতে পারনি… এখন দেখ আমি তোমাকে পরাজিত করব!

মুডি হাতের দণ্ডটা তুললেন, মুখটা হাঁ করলেন, হ্যারি ওর হাতটা আলখেল্লার মধ্যে ঢোকালেন।

স্টিপিফাই!… ঘরের মধ্যে লাল আলোর ঝলকানি, সঙ্গে আগুনের ফুলকি আর তীব্ৰশব্দ!… কিছু যেন ভেঙ্গে পড়ছে।… মুডির ঘরের দরজার শব্দ খুলে গেলো।

মুডি মেঝের ওপর ছিটকে পড়লেন। হ্যারি স্লোগ্লাম দিয়ে দেখল ঘরে ঢুকেছেন অ্যালবাম ডাম্বলডোর, প্রফেসর স্নেইপ আর প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।…

হ্যারি, ম্যাড আই মুডির দিকে তাকাল… প্রায় অচেতন। হ্যারি আবার ডাম্বলডোরের দিকে তাকাল। বুঝতে পারলো ভোল্ডেমর্ট কেন ডাম্বলডোরকে ভয় পায়। মুডি যে এত ভয়ঙ্কর হ্যারি বুঝতে পারেনি শুধু নয় কল্পনাও করতে পারেনি। ডাম্বলডোর গম্ভীর, মুখে হাসির রেশ মাত্র নেই, চশমার কাঁচের পেছনে দুই চোখের একটি পলকও নড়ছে না। তার বৃদ্ধ মুখের প্রতিটি রেখা উম্মা… মুখ লাল… মনে হয় গরম অতি গরম হাওয়া বিকীর্ণ করছেন।

মুডি পড়ে যাবার সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। মুখটা দেখার জন্য ডাম্বলডোর ওর পেছনে একটা লাথি মারতেই মুডি চিৎ হয়ে পড়লেন। মুখটা সকলেই দেখতে পেল। স্নেইপ আয়না দিয়ে মুডিকে দেখলেন। আয়নাতে তারও প্রতিবিম্ব।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল সোজা হ্যারির কাছে গেলেন।

বললেন; চল পটার। প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের মুখটা থম থমে। অনেক কষ্টে কান্না রোধ করে আছেন দেখে মনে হয়।–হ্যারি চল… আমরা হাসপাতালে যাই।

ডাম্বলডোর ধীরস্থির কণ্ঠে বললেন–মিনার্ভা ও থাকুক। হ্যারির এখন সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন বিষয়টা জানা, সমগ্র ব্যাপারটা বোঝা। কোনও জিনিস গ্রহণের আগে সেটা বুঝতে পারা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং সবচেয়ে বেশি দরকার। সেই গ্রহণযোগ্য, অ্যাকসেপটেন্স ওকে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে প্রকৃত সাহায্য করবে। ওর জানা দরকার আজকাবানের দূর্ভাগ্যজনক ঘটনা ওকে এই অগ্নিপরীক্ষায় ঠেলে ফেলেছে… এবং কেমন করে, কেন ফেলেছে।

–মুডি, হ্যারি বলল। হ্যারি বিভ্রান্তে, কিছুই যেন ওর মাথায় ঢুকছে না। মুডি কেমন করে?

ডাম্বলডোর সেই রকম ধীরস্থিরভাবে বললেন–যে মেঝেতে পড়ে রয়েছে সে অ্যালস্টর মুভি–নয়। তুমি মুডিকে ঠিক চিনতে পারনি। আজকের রাতের ঘটনার পর আসল মুডি–কিছুতেই আমার সামনে থেকে তোমাকে নিয়ে যেতেন না। যে মুহূর্তে ও তোমাকে নিয়েছে, আমিও পিছু পিছু নিয়েছি।

ডাম্বলডোর মুডির কাছে গিয়ে ওর রোবস থেকে হিপ–ফ্লাস্ক আর এক গুচ্ছ চাবি বের করলেন, তারপর প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আর স্নেইপের দিকে তাকালেন।

সেভেরস দয়া করে আপনার সবচাইতে স্ট্রং টুথ টুথ পোসান আমাকে দিতে পারবেন এবং নিচে কিচেনে গিয়ে দয়া করে হাউজ এলফ উইঙ্কীকে ডেকে আনবেন। মিনার্ভা আপনি যদি হ্যাগ্রিডের কটেজে যান তো ভাল হয়। ওখানে দেখবেন কুমরোর থলে একটা প্রকান্ড বড় কাল কুকুর পাহারা দিচ্ছে। কুকুরটাকে আমার অফিসে নিয়ে যান, হ্যাগ্রিডকে বলবেন, শীঘই ওর সঙ্গে কথা হবে, তারপর এখানে ফিরে আসুন।

স্নেইপ, ম্যাগগোনাগল… দুজনেরই মনে হল ডাম্বলডোরের নির্দেশ অদ্ভুত। ব্যাপারটা কেমন যেন বোয়াটে মনে হল। ওরা দুজনেই ঘর ছেড়ে চলে গেলে ডাম্বলডোর সাতটা তালা লাগান ট্রাঙ্কের কাছে গিয়ে প্রথম তালাটা খুললেন। দেখলেন তার ভেতরে রয়েছে একগাদা জাদুমন্ত্রের বই। ট্রাঙ্কটা বন্ধ করে দ্বিতীয় চাবি দিয়ে দ্বিতীয় তালাটা খুলে ট্রাঙ্কটা দেখলেন। জাদুমন্ত্রের বই নেই… তার মধ্যে রয়েছে নানা রকমের ভাঙা ভাঙা স্নিকস্কোপ, কিছু পার্চমেন্ট, কুইল (পালকের কলম)… আর একটা রূপালী অদৃশ্য হয়ে যাবার আলখেল্লা। হ্যারি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইল ডাম্বলডোরকে বাকি ট্রাঙ্কগুলো এক এক করে চাবি দিয়ে তালা খুলতে দেখে। সাত নম্বর চাবি দিয়ে ট্রাঙ্কের তালাটা খুলতেই হ্যারি বিস্ময়াভিভূত হয়ে চিৎকার করে উঠল।

ট্রাঙ্কের মধ্যে দেখল একটা গর্ত, প্রায় দশ ফিট হবে এমন এক ছোট ঘর, তার মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছেন ম্যাড আই মুডি। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। একটু রোগা ও অভুক্ত মনে হয়। কাঠের পাটা নেই… ম্যাজিক্যাল আই নেই, রয়েছে চোখের কোটরটা। মাথার অনেক জায়গায় চুল গোছ গোছ ছিন্ন। হ্যারি ঘুমন্ত মুডি আর মেঝেতে পড়ে থাকা মুভির দিকে বজ্রাহতের মতো তাকাল। ডাম্বলডোর ট্রাঙ্কের ভেতরে ঢুকে… তারপর লাফিয়ে তলায় পড়ে থাকা মুডির দিকে ঝুঁকলেন।

ডাম্বলডোর বললেন, ইমপেরিয়স কার্স, তবে খুবই দুর্বল। অবশ্য ওরা মুডিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছো হ্যারি গা থেকে ঐ হারামি ইস্পসটারের এখানে ফেল অ্যালেস্টরের অবস্থা ভাল নয়, ম্যাডাম পমফ্রেকে ডাকতে হবে… তবে খুব গুরুতর নয় বলে মনে হচ্ছে।

হ্যারির ডাম্বলডোরের কথামত কাজ করল। ডাম্বলডোর ওভারকোট দিয়ে অচৈতন্য মুডিকে ঢেকে, ট্রাঙ্ক থেকে অতি কষ্টে বেরিয়ে এলেন। তারপর টেবিলের ওপর রাখা হিপ ফ্লাস্কটা নিয়ে ঢাকনা খুলে উল্টে দিলেন। গাঢ় আঠাল কিছু তরল পদার্থ অফিসের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল।

ডাম্বলডোর বললেন, পলি জুস পোসান হ্যারি। দেখ কেমন বৈশিষ্ট্যহীন আর দীপ্তিমান। তুমি তো জান নিজের হিপ ফ্লাস্কের পানীয় ছাড়া অন্য কোন পানীয়তে মুখ ঠেকান না একথা সবাই জানে। ইমপস্টারের আসল মুডিকে গুপ্তভাবে রাখার দরকার হয়েছিল… যাতে ও নিরিবিলিতে বসে পোসান বানাতে পারে। দেখ তার চুল…।

ডাম্বলডোর একটা চেয়ার টেনে এনে নকল মুডির কাছে বসলেন। তারপর হ্যারি এক অদ্ভুত জিনিস দেখল। মেঝেতে অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকা নকল মুডি একটু একটু করে পরিবর্তিত হতে থাকল। মুখের কাটা দাগ, কুঁচকানো মুখের চামড়া আর নেই। মসৃণ হয়ে গেল। কাটাছেঁড়া নাক স্বাভাবিক নাকের মতো লম্বা লম্বা পাকা চুল উধাও, সেগুলো হয়ে গেল খড় রংয়ের চুল। তারপর হঠাৎ শব্দ করে নকল মুডির কাঠের পা খসে পড়ল। সেখানে হয়ে গেল স্বাভাবিক পা… তারপর দুচোখ সাধারণ মানুষের মতো। কাঠের পা, ম্যাজিক আই মাটিতে গড়াগড়ি যেতে লাগল।

নকল মুডি তাহলে কে?

হ্যারির ক্রাউচের ছেলেকে চিনতে দেরি হল না। মাথায় ডেলা ডেলা চুল আর গায়ের চামড়া ঈষৎ হলদে ফুটকি চিহ্ন। ডাম্বলডোরের পেনসিভ ওকে দেখেছে, মনে আছে ডেমেন্টররা ওকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ওর আকুল ক্রন্দন… নির্দোষ প্রতিপন্ন করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা…। তবে তার চোখের চার পাশে দাগ পড়েছে… এবং বয়স্ক লাগছে।

ঠিক সেই সময় হ্যারি ঘরের বাইরে করিডলরে পদশব্দ শুনতে পেল। দরজা খুলে ঢুকলেন স্নেইপ, সঙ্গে উইঙ্কি। ম্যাকগোনাগল ওদের পেছনে।

স্নেইপ ক্রাউচকে দেখে বিস্ফোরিত চোখে বললেন, ক্রাউচ! বার্টি ক্রাউচ?

প্রফেসর মিনার্ভা ম্যাকগোনাগল বললেন, হ্যাঁ ঈশ্বর!

উসখুখুসখু চেহারা ময়লা জামাকাপড় পরা উইঞ্চি প্লেইপের দুপায়ে ফাঁক থেকে ক্রাউচকে দেখে হাঁ হয়ে গেল। বিকট এক চিৎকার করে বলল, মাস্টার বার্টি, মাস্টার বার্টি… তুমি এখানে কেমন করে এলে? কথাটা বলে ও ক্রাউচের ছেলের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।–, আপনারা একে মেরে ফেলেছেন… আপনারা আমার মাস্টারের ছেলেকে মেরে ফেলেছেন। আমার মাস্টার বার্টি এখানে কেন?

ডাম্বলডোর সংযত কণ্ঠে বললেন, ওকে সম্মোহিত (স্টানড) করা হয়েছে, উইঙ্কী।… সরে দাঁড়াও। সিভেরস, তোমার কাছে পোসান আছে?

স্নেইপ ডাম্বলডোরের হাতে পরিষ্কার তরল পদার্থের একটা শিশি দিলেন। ভেরিটেসিরাম… যেটা দিয়ে হ্যারিকে ক্লাসরুমে ভয় দেখিয়েছিলেন। ডাম্বলডোর নিচু হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটাকে তুলে ধরে দেয়ালের দিকে বসিয়ে দিলেন। ঠিক মাথার ওপর শক্র আয়না তাতে ঘরের সকলের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। উইঙ্কী ওর শীর্ণ দুহাত মুখে চাপা দিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে রইল। ওর সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপছে। ডাম্বলডোর নকল মুডির মুখটা জোর করে ফাঁক করে শিশির তরল পদার্থটা ওর মুখে ঢেলে দিলেন। তারপর দণ্ডটা ওর বুকে ঠেকিয়ে বললেন, এনারভেট!

ক্রাউচের ছেলে ধীরে ধীরে চোখ খুলল। ওর মুখটা ঝুলে পড়েছে, দৃষ্টি বিক্ষিপ্ত। ডাম্বলডোর ওর মাথার কাছে হাঁটু গেড়ে বসলেন।

তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? ডাম্বলডোর খুব শান্তভাবে বললেন।

ছেলেটির চোখের পাতা পড়ল।–হ্যাঁ, বিড়বিড় করে বলল।

ডাম্বলডোর খুবই নরমভাবে বললেন, কয়েকটা কথা আমরা জানতে চাই… আমাদের বল। তুমি এখানে কেমন করে এলে, আজকাবান থেকে কেমন করে পালিয়ে এলে?

ক্রাউচ খুব বড় করে এক নিশ্বাস নিল। নিশ্বাস নেবার সময় ওর সমস্ত শরীরটা প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দিল। তারপর ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল, আমার মা আমাকে রক্ষা করেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার মৃত্যু আসন্ন। তার শেষ ভিক্ষা বাবার কাছে ছিল, আমাকে আজকাবান থেকে মুক্ত করার। মাকে বাবা খুবই ভালবাসতেন; কিন্তু আমাকে কেন জানি না দেখতে পারতেন না… শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। তারপর ওরা আমার কাছে আসে। ওরা আমাকে আমার মায়ের মাথার চুল মেশান পলিজুস পোসান খেতে দিল। মা আমার মাথার চুল মিশ্রিত এক টোক পলিজুস পোসান খেয়েছিলেন। তখন আমার চেহারা আর মায়ের চেহারা বদলাবদলি হয়ে গেল।

উইঙ্কী তখন কাঁপছে, মাথা নেড়ে চলেছে। আর কিছু বলল না মাস্টার ক্রাউচ, বললে তোমার বাবা বিপদে পড়বেন!

কিন্তু ক্রাউচের ছেলে উইঙ্কীর কথায় কান না দিয়ে বলতে লাগল,–ডিমেন্টররা দেখতে পায়নি কিন্তু বুঝতে পেরেছিল জেলে একজন স্বাস্থ্যবান, একজন মৃত্যুপথযাত্রী আসছে। বিপরীতটাও বুঝতে পেরেছিল। আমার বাবা আমার মায়ের ছদ্মবেশে আমাকে জেলের বাইরে নিয়ে এলেন। আমার রূপ ধরে। মা আজকাবানে রয়ে গেলেন। তারপর আজকাবানেই মারা গেলেন। তার চেহারা তখন আমার মতো। সকলে ভাবল আমি মরে গেছি।

ক্রাউচের ছেলের চোখের পাতা আবার নেচে উঠল।

তারপর তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে কি করলেন, ডালডোর প্রশ্ন করলেন।

আমার মায়ের সাজানো মৃত্যু হলো আজকাবানের বাইরে। কবরও দেওয়া হলো। তবে কবরটা খালি। বাড়িতে আমাদের এলফ অনেক সেবাশুশ্রষা করে আমাকে চা করে তুলল। তারপর আমাকে আত্মগোপন করতে হল। আমাকে সংযত হয়ে থাকতে হল। বাবা নানারকম আমার ওপর স্পেল করে প্রশমিত করে রাখলেন। আমি পুরনো শক্তি ফিরে পেলে, আমি খুঁজতে লাগলাম আমার লর্ডকে, তার কাছে ফিরে যাবার জন্যে।

ডাম্বলডোর বললেন, তোমার বাবা তোমাকে দমন করলেন কেমন করে?

ছোট ক্রাউচ বলল, ইমপেরিয়স কার্স। তখন থেকে আমি আমার বাবার সম্পূর্ণ কন্ট্রোলে রইলাম। দিনরাত অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পরে থাকতাম। হাউজ এলফ সর্বদা আমাকে পাহারা দিত। ও আমার রক্ষক ও দেখানার দায়িত্বে রইল। ও সত্যই আমাকে করুণা করত। বাবাকে অনুরোধ করত মাঝে মধ্যে আমাকে ভালমন্দ খেতে দিতে… আর ভাল ছেলে হয়ে থাকার জন্য পুরস্কার দিতে।

উইঙ্কি মুখে দুহাত চেপে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, মাস্টার বার্টি… ওদের সব কথা… বললে আমরা বিপদে পড়বে।

–কেউ কি আঁচ করতে পেরেছিল তুমি বেঁচে আছ? তোমার বাবা ও হাউজ এলফ ছাড়া?

হ্যাঁ, ছোট ক্রাউচ বলল।

ওর চোখের পাতা আর নাচতে লাগল। আমার বাবার অফিসের এক ডাইনি (জাদুকরি) বার্থা জোরকিনস। একদিন বাবার একটা কাগজে দস্তখত করানোর জন্যে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন না। উইল্কি ওকে ঘরে বসিয়ে কিচেনে চলে গিয়েছিল। সেখানে আমিও ছিলাম। কিন্তু বার্থা জোরকিনস আমাদের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছিল। ওর সন্দেহ হল, অনেক খোঁজ খবর করে জানতে পারলো আমি বেঁচে এবং আত্মগোপন করে আছি, কেউ যাতে আমাকে দেখতে না পায় তার জন্য অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পরে থাকি। আমার বাবা বাড়ি ফিরে এসে বার্থা জোরকিনসের সঙ্গে দুচারটে কথা বলার পর বুঝতে পারলেন বার্থা আমার ব্যাপারে সব জানতে পেরেছে। বাবা তখন ওর ওপর অতি শক্তিশালী মেমরি চার্ম প্রয়োগ করলেন যাতে ও সব ভুলে যায়। বাবা বলেছিলেন, ওর স্মৃতিশক্তি চিরতরে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন।

উইঞ্চি প্যান প্যান করে বলল, আমার মাস্টারের বাড়ির ব্যাপারে ওর নাক গলাবার কোনও অধিকার নেই। ওর মাথা ব্যথা কিসের?

ডাম্বলডোর বললেন, কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ সম্বন্ধে কিছু বলতে পার?

ছোট ক্রাউচ বলতে লাগল, উইঙ্কি আমাকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছে, আমাকে খুবই ভালবাসে। আমার একঘেয়ে জীবন দেখে ওর খুব কষ্ট হত। আমি কিডিচ খেলতে পারি, খেলা ভালবাসি অথচ আন্তর্জাতিক খেলা দেখতে পাবো না বলে ওর খুব দুঃখ হল। বারবার বাবাকে অনুরোধ করতে লাগল আমাকে যেতে দেবার জন্য। বলল, ও তো আলখেল্লা পরে থাকে, কেউ ওকে দেখতে পাবে না। আরও বলল, মা আমাকে কিডিচ খেলতে দিতেন… তাছাড়া একটু তাজা হাওয়া পেলে ওর শরীর মন ভাল হবে।… এইসব অনেক ভাবে বাবাকে রাজি করাবার চেষ্টা করতে লাগল। বাবা শেষ পর্যন্ত মায়ের নাম করাতে রাজি হলেন।

সবকিছুই সতর্কতার সঙ্গে ও প্ল্যান অনুযায়ী করা হল। বাবা আমাকে আর উইস্কিকে সকাল সকাল স্টেডিয়ামের টপবক্সে বসতে বললেন। উইঙ্কির পাশে আমার সিট; কিন্তু আমি তো অদৃশ্য। উইঙ্কিকে বলেছিলেন, কেউ খালি সিটে বসতে চাইলে যেন বলে ওটা মি. ক্রাউচের সিট। খেলার শেষে সকলে চলে যাবার পর আমরা স্টেডিয়াম থেকে চলে আসবো। আমি অদৃশ্য… লোকেরা শুধু উইঙ্কিকে দেখতে পাবে।

কিন্তু উইল্কি কেমন করে জানবে আমি শক্তিশালী হয়ে উঠছি। আমি বাবার ইমপেরিয়স কার্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যেই তার কার্স থেকে মুক্ত হতাম। সেদিন তা-ই হল। উপবক্সে বসে থাকতে থাকতে খুব আনন্দ হলো। মনে হতে লাগলো গভীর এক ঘুম থেকে উঠেছি, শরীর মন হালকা ঝরঝরে। আবার আমি সকলের মাঝে বসে রয়েছি, হঠাৎ নজরে পড়লো আমার সামনে এক ছোট ছেলের ওপর। ওর পকেটে একটা জাদুদণ্ড বেরিয়ে আছে। আজকাবানে যাবার সময়ে আমার জাদুদণ্ড নিয়ে নিয়েছিলো। লোভ সামলাতে পারলাম না। ওর পকেট থেকে জাদুদণ্ড চুরি করলাম। উইঙ্কি দুহাতে মুখ ঢেকে বসেছিল… ও দেখতে পেলো না।

উইল্কি কথাটা শুনে বলল, মাস্টার ক্রাউচ দুই লোক, আপনি চুরি করেছিলেন…।

তাহলে তুমি পটারের জাদুদণ্ড চুরি করেছিলে?… তারপর কি করলে?

–তারপর আমরা আমাদের তাবুতে ফিরে গেলাম, ক্রাউচ বলল।

তারপর কয়েকজন ডেথইটারসদের কথাবার্তা কানে এলো, ওরা কেউ আজকাবানে যায়নি… ওদের মধ্যে কেউ লর্ডের জন্য কষ্ট–যন্ত্রণা ভোগ করেনি। অবস্থা বেগতিক দেখে পিছুটান দিয়েছে। ওরা আমার মতো কখনো বন্দি ছিলো না। ওরা ইচ্ছে করলে লর্ডের জন্য অনেক কিছু করতে পারতো। কিন্তু ওরা তা করেনি। নিয়ে ওরা তখন মাগলদের মজা করেছিলো। তাদের কথাবার্তা আমাকে জাগ্রত করলো আমার মন তখন মুক্ত। বাবা টেন্টে নেই মাগলদের মুক্ত করতে গেছেন। ওদের কথাবার্তা শুনে অসম্ভব ক্রুদ্ধ হয়ে ওদের শাস্তি দিতে চাইলাম। উইঙ্কি আমার ক্রোধ দেখে ভীষণ ভয় পেল। ওর নিজস্ব ম্যাজিক প্রয়োগ করে আমাকে টেন্ট থেকে সামনের অরণ্যে নিয়ে ডেথ ইটারদের থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করলো। আমি উইঙ্কিকে থামাবার এবং ক্যাম্পের দিকে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমি ওদের দেখাতে চেয়েছিলাম, ডার্কলর্ড আমার কাছে কত প্রিয়। আর ওদের শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তা ছিলো না বলে। তাদের শাস্তি দেবার জন্য আকাশে ডার্কমার্ক ছুঁড়লাম…।

তারপর মন্ত্রণালয়ের জাদুকররা এসে এলোপাতাড়ি স্টানিং স্পেল ছুঁড়তে লাগলো। একটা স্পেল গাছের ফাঁক দিয়ে আমাদের ওপর পড়তেই আমরা দুজন বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম… দুজনেই স্তব্ধ হলাম।

উইঙ্কি জানতে পারলো বাবা সব জানতে পেরেছেন এবং জেনেছেন আমরা কাছাকাছি কোথায় রয়েছি… খুঁজতে খুঁজতে আমাকে ঝোপঝাড়ের তলায় পেয়ে গেলেন। ইমপেরিয়স কার্স করে আমাকে নিশ্চল করে বাড়িতে নিয়ে গেলেন, রেগে গিয়ে বাবা উইস্কিকে বরখাস্ত করলেন। তার ওপর অভিযোগ: ও আমাকে ঠিকমত চালিত করেনি, আমাকে দণ্ড চুরি করতে দেখেও কিছু বলেনি, আমাকে একরকম পালাতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।

এখন বাড়িতে শুধু আমি আর বাবা। কথাটা বলার পর ক্রাউচের মাথাটা দুলতে লাগল, মুখে পাগলের মতো হাসি। বলল, আমার মাস্টার একবার আমার জন্য এসেছিলেন।

একদিন গভীর রাতে তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন তার ভৃত্য ওয়ার্মটেলের হাত ধরে। মাস্টার আমার প্রভু জানতে পেরেছেন আমি মরিনি, বেঁচে আছি। আমার প্রভু বার্থা জোরকিনসকে আলবেনিয়াতে ধরেছেন, ওকে অনেক নির্যাতন করেছেন। ও প্রভুকে ট্রাই–উইজার্ড টুর্নামেন্টের কথা বলে। আরও জানায়, বৃদ্ধ মুডি… অতীতের এক অরর, হোগার্টে শিক্ষকতা করে। নির্যাতন করতে করতে… শেষ পর্যন্ত তার ওপর আমার বাবার প্রয়োগ মেমরি চার্ম বিনষ্ট করলেন। বার্থা তাকে খবর দেয় আমি আজকাবান থেকে পালিয়ে এসেছি। আরও বলে, আমি লর্ডের সঙ্গে যাতে দেখা না করি তার জন্য বাবা আটকে রেখেছেন। তো লর্ড জানতে পারেন আমি তার একান্ত অনুগত। বস্তুত সকলের থেকে বেশি। বার্থার খবরের ভিত্তিতে লর্ড একটা পরিকল্পনা করলেন। কারণ, আমাকে তার বিশেষ প্রয়োজন। তাই একদিন গভীর রাতে আমাদের বাড়ি এলেন। দরজাতে বেল বাজতে বাবা দরজা খুলেছিলেন।

জীবনে ওর সবচাইতে মধুর স্মৃতি বলতে পেরেছে এমন এক আনন্দে উল্লাসে ছোট ক্রাউচের মুখে অপরিসীম হাসি ফুটে উঠল।

বাবাকে দেখেই আমার লর্ড ইমপেরিয়স কার্স প্রয়োগ করলেন। বাবার আর কিছু করার রইলো না। সম্পূর্ণভাবে লর্ডের আয়ত্তে। আমার লর্ড বাবাকে তার দৈনন্দিন কাজে যেতে বাধ্য করলেন, আমি যেন হঠাৎ আমার পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরে পেলাম। যেন ঘুম থেকে জেগে উঠলাম… আমি মুক্ত হলাম।

তো ভন্ডেমর্ট তোমাকে কি কাজ করতে বলল? ডাম্বলডোর প্রশ্ন করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন আমি কী তার জন্য সবরকম ঝুঁকি নিতে পারি? আমার জীবনের স্বপ্ন… আমার জীবনের আকাক্ষা… তার কাছে কাজের ডাক পেয়ে ধন্য হয়ে গেলাম। উনি বললেন, হোগার্টে তার একজন বিশ্বস্ত দাস চাই। গোপনে আড়ালে থেকে হ্যারি পটারকে ট্রাইউইজার্ড কাপে গাইড করবে। ট্রাই–উইজার্ড কাপকে তিনি পোর্ট–কী বানালেন সেই ম্যাজিক বাহনে চেপে ও প্রথম আমার লর্ডের চরণ স্পর্শ করবে।

আর তার জন্য তোমাদের এলস্টর মুডির প্রয়োজন ছিল, ডাম্বলডোর বললেন। গলার স্বর সংযত হলেও চোখেমুখে তার আগুন ছুটতে লাগল।

ওয়ার্মটেল আর আমি কাজটি করেছিলাম। আগেই আমরা পলিজুস পোসান বানিয়ে রেখেছিলাম। আমরা ওর বাড়ি গিয়েছিলাম। মুডি খুবই আমাদের বাধা দিয়েছিল… নানা চেঁচামেচি, গোলমাল… হুলুস্থুল কাণ্ডকারখানা হয়েছিল… আমরা সময়মত ওকে কাবু করি। ওকে ম্যাজিক্যাল ট্রাঙ্কে জোর করে পুরে দিয়েছিলাম। ওর মাথা থেকে কিছু চুল নিয়ে পোসানে মিশিয়ে। আমি সেটা খাবার পর মুডির ডুপ্লিকেট হয়ে গেলাম। তারপর আমি ওর পা ও চোখ নিয়ে নিলাম। আরথার উইসলি মাগলদের কাছ থেকে হইচইয়ের খবর শুনে এসেছিল, তার জন্যও প্রস্তুত ছিলাম। উঠানের কাছে ডাস্টবিনটা নিয়ে গেলাম… আমি আর্থার উইসলিকে বললাম, চোর–টোর এসে ডাস্টবিন নাড়াচাড়া করেছিল… তাদেরই গোলমাল হবে। তারপর আমি চটপট মুডির পোশাক আর ডার্ক ডিটেক্টরস প্যাক করে নিয়ে ট্রাঙ্কে মুডির সঙ্গে রেখে দিয়ে হোগার্টের দিকে চললাম। ইমপেরিটাস কার্স প্রয়োগ করে মুডিকে বাঁচিয়ে রাখলাম। এ কারণে যে তাকে যেন প্রয়োজনে কিছু প্রশ্ন করতে পারি। যেমন তার অতীত, তার পছন্দ–অপছন্দ স্বভাব জানা–যাতে নকল মুডি হয়ে ডাম্বলডোরকে বোকা বানাতে পারি… তাছাড়া ওর চুলেরও প্রয়োজন ছিল পলিজুস পোসান বানানোর জন্য। পোসান মাস্টার আমাকে তার অফিসে দেখে কেন এসেছি জিজ্ঞেস করাতে বললাম, আমাকে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে।

মুডিকে আক্রমণ করার পরে ওয়ার্মটেলের কি হয়েছিল? ডাম্বলডোর বললেন–

ও আমার বাবার বাড়িতে আমার মাস্টারকে দেখাশুনা করতে গেল… আর বাবাকেও নজরে রাখতে থাকল।

কিন্তু তোমার বাবা তো পালিয়েছিলেন, ডাম্বলডোর বললেন।

হ্যাঁ, কিছুক্ষণ পরে আমার মতই ইমপেরিয়স কার্সের সঙ্গে লড়াই করতে শুরু করেছিলেন। আমার প্রভু ঠিক করলেন ওই বাড়িতে বাবার বেশিদিন থাকাটা ঠিক হবে না। উনি জোর করে বাবাকে দিয়ে মিনিস্ট্রিতে চিঠি লেখালেন। লিখতে বললেন, আমি অসুস্থ। কিন্তু ওয়ার্মটেল কাজে অবহেলা করেছিলেন… আমার বাবা পালালেন। লর্ড বুঝতে পারলেন বাবা হোগার্টে… সেখানে গিয়ে বাবা হয়ত ডাম্বলডোরকে সব গোপন খবর বলে দেবে। আজকাবান থেকে আমাকে বের করে নিয়ে এসেছেন তাও বলতে পারেন।

লর্ড, মানে আমার মাস্টার, বাবা পালিয়ে গেছেন খবরটা আমাকে জানিয়েছিলেন। তাকে যেমন করেই হোক নিরস্ত্র করতে আমাকে বলেছিলেন। তাই আমি সতর্কভাবে চোখ রেখে প্রতীক্ষা করছিলাম। হ্যারি পটারের যে ম্যাপটা নিয়েছিলাম সেটা কাজে লাগালাম। এই ম্যাপটাই সবকিছু সর্বনাশের পথে ঠেলে দিয়েছে।

ম্যাপ? কথাটা শোনা মাত্র ডাম্বলডোর বললেন।–কিসের ম্যাপ? পটারের হোগার্টের ম্যাপ। সেই ম্যাপে পটার আমাকে দেখেছিল একদিন রাতে স্নেইপের অফিস থেকে আমি পলিজুস পোসানের উপকরণ চুরি করছি। ও আমাকে আমার বাবার সঙ্গে ঘুলিয়ে ফেলেছিল। সেই রাতেই আমি পটারের কাছ থেকে ম্যাপটা হাতে আর্নি। আমি ওকে বলেছিলাম, আমার বাবা কালো জাদুকরদের (ডার্ক উইজার্ড) ঘেন্না করেন। পটার বিশ্বাস করেছিল আমার বাবা স্নেইপের বিরুদ্ধে।

বাবার হোগার্টে আসার অপেক্ষায় আমি সাতদিন অপেক্ষা করেছিলাম। শেষমেষ একদিন সন্ধ্যাবেলা ম্যাপে দেখা গেল বাবা হোপার্টের মাঠে ঢুকছেন। আমি অদৃশ্য হয়ে যাবার আলখেল্লাটা গায়ে চড়িয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। দেখলাম বাবা অরণ্যের প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দেখলাম পটার আর ক্রামকে সেখানে আসতে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি পটারের কোনও ক্ষতি করলাম না কারণ জানি মাস্টারের তাকে প্রয়োজন। পটার ডাম্বলডোরের কাছে দেখা করবার জন্য ছুটল। আমি ক্রামকে শুধু স্টানড করলাম না…. বাবাকে হত্যা করলাম।

না… মাস্টার বাটি এসব কথা তুমি কী বলছ? উইল্কি ক্রুদ্ধ হয়ে বলল।

ডাম্বলডোর নরম গলায় বললেন, তুমি বাবাকে হত্যা করলে?… তো মৃতদেহটার কি করলে?

অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা দিয়ে মুড়ে অরণ্যে নিয়ে গেলাম। তখন ম্যাপে পটারকে ক্যাসেলের দিকে ছুটে যেতে দেখলাম। স্নেইপের সঙ্গে ওর দেখা হল। পরে ডাম্বলডোরের সঙ্গে। দেখলাম পটার ডাম্বলডোরকে নিয়ে ক্যাসেলের বাইরে আসছে। আমি আবার দৌড়তে দৌড়তে অরণ্যে এলাম… তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমি ডাম্বলডোরকে বললাম… স্নেইপ আমাকে এখানে আসতে বলেছে।

ডাম্বলডোর আমাকে অরণ্যে গিয়ে বাবার খোঁজ করতে বললেন। বাবার মৃতদেহের কাছে গেলাম। ম্যাপটা দেখতে লাগলাম। যখন দেখলাম সকলেই চলে গেছে… আমি বাবার দেহের পরিবর্তন করলাম… এখন বাবার দেহ নয় শুধু কংকাল, অদৃশ্য আলখেল্লা পরে সেই হাড়গুলো আমি কবর দিলাম… ঠিক হ্যাগ্রিডের কেবিনের সামনে।

উইঙ্কীর ক্ষেপে ক্ষেপে কান্না ছাড়া সকলেই নীরব।

তারপর ডাম্বলডোর বললেন, আজ রাতে…।

আমি ডিনারের আগে ট্রাইউইজার্ড কাপ গোলকধাঁধায় নিয়ে যাবার প্রস্তাব করেছিলাম, বার্টি ক্রাউচ নিচু গলায় বলল। কাপটাকে পোর্ট–কীতে পরিবর্তিত করায় আমার মাস্টারের পরিকল্পনা কার্যকরী হল। আবার তিনি ক্ষমতায় ফিরে এলেন এবং নিশ্চয়ই তিনি আমাকে সম্মানিত করবেন জাদুকর–জাদুকরিদের কল্পনার বাইরে।

আবার ওর মুখে পাগলের মতো হাসি ফুটে উঠল… মাথাটা ঝুলে পড়ল… উইঙ্কী ওর পাশে বসে ফোপাতে লাগল।

সকল অধ্যায়

১. ০১. দ্য রিডল হাউজ
২. ০২. দ্য স্কার
৩. ০৩. ইনভিটেসন
৪. ০৪. ব্যাক টু দ্য বারও
৫. ০৫. উইসলি’র উইজার্ড হুইজেস
৬. ০৬. দ্য পোর্টকি
৭. ০৭. বেগম্যান এবং ক্রাউচ
৮. ০৮. দ্য কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ
৯. ০৯. দ্য ডার্ক মার্ক
১০. ১০. মেহেম অ্যাট দ্য মিনিস্ট্রি
১১. ১১. অ্যাবোর্ড দ্য হোগার্টস এক্সপ্রেস
১২. ১২. দ্য ট্রিউইজার্ড টুর্নামেন্ট
১৩. ১৩. ম্যাড–আই মুডি
১৪. ১৪. আনফরগিভেবল কার্সেস
১৫. ১৫. বক্সবেটন এবং ডার্মস্ট্র্যাংগ
১৬. ১৬. দ্য গবলেট অব ফায়ার
১৭. ১৭. দ্য ফোর চ্যাম্পিয়নস
১৮. ১৮. দ্য ওয়েইং অব দ্য ওয়ান্ডস
১৯. ১৯. দ্য হাংগেরিয়ান হর্নটেল
২০. ২০. দ্য ফার্স্ট টাস্ক
২১. ২১. দ্য হাউজ-এলফ লিবারেশন ফ্রন্ট
২২. ২২. দ্য আনএক্সপেকটেড টাস্ক
২৩. ২৩. ইউল বল
২৪. ২৪. রিটা স্কীটারের স্কুপ
২৫. ২৫. দ্য এগ অ্যান্ড দ্য আই
২৬. ২৬. দ্য সেকেন্ড টাস্ক
২৭. ২৭. প্যাডফুট রিটার্নস
২৮. ২৮. দ্য ম্যাডনেস্ অব মিস্টার ক্রাউচ
২৯. ২৯. দ্য ড্রিম
৩০. ৩০. দ্য পেনসিভ
৩১. ৩১. দি থার্ড টাস্ক
৩২. ৩২. ফ্লেশ, ব্লাড অ্যান্ড বোন
৩৩. ৩৩. দ্য ডেথ ইটারস
৩৪. ৩৪. প্রিওরি ইনক্যানটাটেম
৩৫. ৩৫. ভেরিটাসেরাম
৩৬. ৩৬. দ্য পার্টিং অব দ্য ওয়েজ
৩৭. ৩৭. দ্য বিগিনিং

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন