২৮. দ্য ম্যাডনেস্ অব মিস্টার ক্রাউচ

জে. কে. রাওলিং

২৮. দ্য ম্যাডনেস্ অব মিস্টার ক্রাউচ

রবিবার হ্যারি, রন এবং হারমিওন ব্রেকফাস্ট খাবার পর পার্সিকে সিরিয়সের কথামতো, মি. ক্রাউচকে সম্প্রতি দেখেছে কিনা জানার জন্য একটা চিঠি দিতে প্যাচাঁদের আস্তানায় গেল। হেডউইগ বেশ কিছুদিন বেকার বসে আছে, তাই ওকে বাইরে পাঠানো দরকার। চিঠি নিয়ে আউলারির জানালা দিয়ে আকাশে উড়ে যাবার পর ডব্বিকে নতুন মোজা দেবার জন্য কিচেনে গেল।

ওদের দেখে হাউজ এলফরা দারুণ খুশি। খাতির করার জন্য সকলেই ব্যস্ত হয়ে উঠল। আবার চা–বানাতে লাগল। ডব্বি মোজা পেয়ে অসম্ভব খুশি।

ও বিনয় করে বলল–হ্যারি পটার ডব্বিকে খুব ভালবাসেন। কথাটা বলার পর ও আবেগে কাঁদতে লাগল। বড় বড় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে দুগাল ভেসে যেতে লাগল।

হ্যারি বলল–ওই জিল্লিউইড দিয়ে তুমি আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছ, ডব্বি। তোমার মতো আর কেউ নেই।

রন এধার–ওধার তাকাতে তাকাতে বলল–ডব্বি কেক–টেক পাবার আশা আছে? একলেয়ার কেকগুলো দারুণ বানিয়েছিলে সেদিন।

হারমিওন রেগে গিয়ে বলল–আরে এইমাত্র তো তুমি ব্রেকফাস্টে পেট ভরে খেয়ে এসেছ, আবারও খেতে চাইছ?

রন বলার সাথে সাথে, রূপোর প্লেটে চারজন এলফ কেক নিয়ে হাজির। হ্যারি নরম তুলতুলে তাজা কেক দেখে বলল–লাপাত্তাকে (সিরিয়স) আমাদের কিছু কেক পাঠালে ভাল হয়।

রন বলল–বাঃ চমৎকার, পিগকে পাঠাও।… শোন তোমাদের কিছু বেশি কেক আছে? দিতে পারবে?

এলফরা রনের কথা শুনে দারুণ খুশি হয়ে মাথানত করে কেক আনতে ছুটল।

হারমিওন এধার–ওধার তাকিয়ে বলল–ডব্বি, উইস্কীকে দেখতে পাচ্ছিনে? কোথায় গেছে?

–উইঙ্কী…? ওইতো আগুনের পাশে বসে আছে মিস। ডব্বি গলে পড়ে আঙ্গুল দিয়ে উইঙ্কীকে দেখাল।

–আরে তাইতো?… লক্ষীসোনা ওখানে বসে আছ কেন? হারমিওন উইঙ্কীর দিকে তাকিয়ে বলল।

হ্যারিও তাকাল। গতবার যেমন দেখেছিল তেমনই একটা টুলে বসে রয়েছে। অসম্ভব ময়লা স্কার্ট–ব্লাউজ, পেছনে থোয়া–কাল রং-এর দেয়ালের সঙ্গে মিশে গেছে। ওর হাতে এক বোতল বাটার বিয়র। টুলে বসে দুলছে। মাঝে মধ্যে আগুনের দিকে জলভরা চোখে তাকাচ্ছে। অতিরিক্ত বিয়র পানের জন্য হেঁচকি তুলছে। ওদের দেখে ঘনঘন হেঁচকি তুলতে লাগল।

ডবি হ্যারির কানের কাছে বলল–রোজ দু বোতল করে বিয়র খাচ্ছে।

–বাটার বিয়র তো তেমন কড়া নয়, হ্যারি বলল।

ডব্বি মাথা নেড়ে বলল–হাউজ এলফের কাছে স্ট্রং স্যার।

উইঙ্কী আবার খুব শব্দ করে হেঁচকি তুলল। যারা প্লেটে করে কেক নিয়ে এসেছিল উইঙ্কীকে দেখে খুব একটা খুশি হলো না। মুখ দেখে মনে হল খুবই তি।

–উইঙ্কী সব সময় প্যান প্যান করে চলেছে হ্যারি পটার, ডব্বি দুঃখভরা কণ্ঠে বলল–উইঙ্কী এখান থেকে চলে যেতে চাইছে হ্যারি পটার। উইঙ্কী এখনও মনে করে মি. ক্রাউচ ওর মাস্টার স্যার…. ডব্বি ওকে অনেক বুঝিয়ে বলেছে, এখন ক্রাউচ নয়, প্রফেসর ডাম্বলডোর ওর এখন মাস্টার।

–আরে উইঙ্কী, হ্যারি উফুল্ল হয়ে উইঙ্কীর কাছে গিয়ে বলল।… মি. ক্রাউচ এখন কোথায় আছেন কেউ জানে না–তুমি জান? টুর্নামেন্টে বিচারক হয়ে আসার কথা ছিল, তাও আসেন নি।

হ্যারির কথা শুনে উইঙ্কী হেঁচকি থামিয়ে নড়ে বসল। বড় বড় চোখে হ্যারির দিকে তাকিয়ে কাঁদাদ হয়ে বলল–মাস্টার…মাস্টার কোথায় আছেন কেউ জানে না? উইঙ্কী এখনো মনে করে মি. ক্রাউচ তার মাস্টার।

–হ্যাঁ, হ্যারি বলল।–খবরের কাগজ লিখছে মি. ক্রাউচ নাকি অসুস্থ। প্রথম টাস্কের পর আর আমাদের ওকে চোখে পড়েনি।

উইঙ্কী আরও বেশি দুলতে দুলতে হেঁচকি তুলে বলল–আমার মাস্টার অসুস্থ? ওর তলার ঠোঁট থর থর করে কাঁপতে লাগল।

হারমিওন সঙ্গে সঙ্গে বলল–আমরা শুনেছি সত্য–মিথ্যা জানি না।

–ও হো হো মাস্টারের এখন উইঙ্কীকে দরকার! উইঙ্কী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল–মাস্টার তো নিজে কিছুই করতে পারেন না।

হারমিওন বলল–অন্যেরা তাহলে কেমন করে?

উইঙ্কী আগের মতো কেঁদে কেঁদে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল–উইঙ্কী শুধু মাস্টার ক্রাউচের বাড়ির কাজ করে না। হাত থেকে বিয়রের বোতল ছিটকে মেঝেতে পড়ল। নোংরা ব্লাউজটা ভিজে গেল। মাস্টার উইঙ্কীকে বিশ্বাস করেন, আস্থা রাখেন… অনেক দরকারী, গোপনীয় কাজ–টাজ…।

হ্যারি কথাটা শুনে সচকিত হয়ে বলল–কী বললে?

উইঙ্কী তখন বিলাপ করে চলেছে। বিয়র বোতল থেকে বিয়র চলকে পড়ছে।

–উইঙ্কী তার মাস্টারের সব গোপন তথ্য ঠিক করে রাখে। কথাটা বলে উইঙ্কী আরও বেশি দুলতে আর হেঁচকি তুলতে লাগল। তুমি তার বিষয়ে কেন নাক গলাচ্ছ…?

ডব্বি রেগে গিয়ে বলল–উইঙ্কী, হ্যারি পটারের সঙ্গে ওই রকম ভাবে কথা বলবে না। হ্যারিপটার খুব সাহসী, মহৎ মানুষ। হ্যারিপটার অন্যের ব্যাপারে কখনও নাক গলায় না! এমন কথা বলা অন্যায়।

–হ্যাঁ গলায়, আমার মাস্টারের ব্যক্তিগত আর গোপন কথা জানতে চায় (হেঁচকি)… উইঙ্কী খুব ভাল, সৎ হাউজ এলফ… উইঙ্কী চুপ করে থাকে… লোকেরা উইঙ্কীকে অযথা উত্ত্যক্ত করছে (হেঁচকি)।… কথা বলতে বলতে আচমকা উইঙ্কী টুল থেকে মেঝেতে পড়ে গেল। তারপর সকলকে অবাক করে ভীষণ জোরে ও নাক ডাকতে থাকে। বিয়রের শূন্য বোতলগুলো কিচেনের শক্ত মেঝেতে গড়াগড়ি যায়।

প্রায় ছজন হাউজ এলফ উইস্কীকে পড়ে যেতে দেখে ছুটে এল। ওরা দারুণ বিরক্ত হয়েছে ঘটনায়। একজন এলফ মেঝে থেকে বোতলগুলো চটপট তুলে নিল, বাকিরা একটা চেক টেবিল ক্লথ এনে ওকে যাতে কেউ না দেখতে পায় তেমন ভাবে পর্দা ঝুলিয়ে দিল।

একজন এলফ মাথা দোলাতে দোলাতে লজ্জিত স্বরে বলল–আমরা খুবই লজ্জিত স্যার, উইঙ্কীকে দেখে দয়া করে আমাদের বিচার করবেন না।

হারমিওন বলল–ও মনে হয় বড় দুঃখী। ওকে এমনিভাবে ঢেকে না রেখে ওর সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর, উৎসাহ দাও।

হাউজ এলফ বলল–আমায় ক্ষমা করবেন মিস, হাউজ এলফদের দুঃখিত হবার কোনও অধিকার নেই, মাস্টারদের জন্য অনেক কাজ করতে হয়। দুঃখিত হবার সময় কোথায়?

–ঈশ্বরের দোহাই। আমার কথা মন দিয়ে শোন, হারমিওন রেগে গিয়ে বলল। তোমাদের জাদুকরদের মতই রাগ দুঃখের অধিকার আছে। পারিশ্রমিক, দুটিরও… তাছাড়া ভাল পোশাকেরও। মাস্টার যা বলবে… তা সব করতে হবে না। ডব্বিকে দেখ!

ডব্বি মুখ কাচুমাচু করে বলল–মিস আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না। হাউজ এলফদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেছে, কিচেনে হঠাৎ এক দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে। ওরা হারমিওনের মুখের দিকে স্তম্ভিত ও ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হারমিওন হয় পাগল, নয়তো মারাত্মক মেয়ে।

একজন এলফ হ্যারির হাতে অনেক হ্যাম, কেক, ফল দিয়ে বলল–আপনার খাবার।… গুড বাই।

ডব্বি উনুনের কাছে উইঙ্কীর পাশে দাঁড়িয়েছিল, কিচেনের সব ছোট–বড় এলফদের রন–হ্যারি–হারমিওনকে ঠেলে বাইরে পাঠাতে দেখে বলল–মোজার জন্য ধন্যবাদ হ্যারি পটার।

রন রেগে বলল–হারমিওন তুমি কী কথা না বলে থাকতে পার না? আমরাতো এলফদের কাছ থেকে মি, ক্রাউচ সম্পর্কে আর কিছু জানতে পারতাম।

এলফরা ইতোমধ্যে কিচেনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ওদের কাছ থেকে ক্রাউচের কোনও খবর পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। উইঙ্কীর কাছ থেকে অবশ্যই না।

–মনে হয় ক্রাউচের ব্যাপারে তুমি খুব চিন্তিত। তোমার শুধু একটাই ধান্দা সেটা হলো খাবার, হারমিওন রনের ওপর রেগে গিয়ে বলল।

সেদিনটা বড় অস্বস্তিকর মনে হতে লাগল হ্যারির। রন আর হারমিওন কমনরুমে হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত। ওর পড়ায় মন নেই।… সিরিয়সের জন্য রাখা খাবারগুলো ও বেঁধেছেদে আউলারিতে গিয়ে পাঠিয়ে দিল। পিগের পক্ষে একা একগাদা খাবার নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই আরও দুটো শিক্ষানবিশ পাচাকে সঙ্গে পাঠাল।… হ্যারির মন একেবারেই ভাল নেই। ও জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে রইল। বাইরেটা ঘুটঘুঁটে অন্ধকার, নিষিদ্ধ অরণ্য থেকে প্রবল ঠাণ্ডা বাতাস গাছের পাতা উড়িয়ে দিয়ে আসছে তারই শনশন শব্দ। লেকের জলের ছোটছোট ঢেউ ডারমাংগ জাহাজে ধাক্কা খেয়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হচ্ছে। হ্যাগ্রিডের কটেজের চিমনির ধোয়ার চারধারে একটা ঈগল ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্যাচাঁদের আয়, ক্যাসেলের কাছে এসে বিকটভাবে ডাক দিয়ে উঠছে। তারপরই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ঈগল পাখিটা। ও অস্পষ্টভাবে দেখল হ্যাগ্রিড ওর কেবিনের সামনে দারুণ বিক্রমে মাটি কোপাচ্ছে। মনে হয় কিচেন গার্ডেনের বেড তৈরি করছেন। একটু পর দেখল মাদাম ম্যাক্সিম বক্কবেটনস ক্যারেজ থেকে বেরিয়ে এসে হ্যাগ্রিডের কেবিনের সামনে দাঁড়ালেন। মনে হল হ্যাগ্রিডের সঙ্গে কিছু আলাপ–আলোচনা করছেন। হ্যাগ্রিড কোদালে ভড় দিয়ে দাঁড়িয়ে, হ্যারির মনে হলনা হ্যাগ্রিড মাদামের সঙ্গে বেশি কথা বলতে চান। দুএক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে মাদাম ম্যাক্সিম তার ক্যারেজে চলে গেলেন।

হ্যারির ইচ্ছে নেই গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে কমনরুমে গিয়ে রন আর হারমিওনের তর্কাতর্কি শোনার। হ্যারি উদাস নয়নে দেখল হ্যাগ্রিড মাটি কুপিয়ে যাচ্ছেন। একটু একটু করে আঁধার নেমে এল। হ্যারি আর কিছু দেখতে পেলো না। আউলারির পাচাগুলো তখন জেগে গেছে অন্ধকার রাতে ডেকে চলেছে ওদের কর্কশ গলায়।

***

পরদিন সকালে হ্যারি দেখল রন আর হারমিওনের খারাপ মেজাজ কেটে গেছে। দেখে ভাল লাগল, হ্যারি স্বস্তি পেল। হাউজ এলফরা রেগে রয়েছে তাই ভাল খাবার–দাবার দেবে না ভেবেছিল রন; কিন্তু ব্রেকফাস্টের বহর দেখে রনের ভুল ভাঙ্গল। যেমন প্রতিদিন সকালে খাবার পাঠায়, আজকেও তেমনই।

পাচা ফিরে এলে, হারমিওন তাকাল নিশ্চয়ই ভাল খবর এনেছে।

রন বলল–পার্সি বোধহয় কোনও জবাব দেয়নি। গতকালই তো হেডউইগকে পাঠিয়েছিলাম।

–চিঠি নয়, হারমিওন বলল–আমি ডেইলি ফেটের নতুন গ্রাহক হয়েছি, স্লিদারিনদের কাছে থেকে খবর শুনে শুনে আমি ক্লান্ত।

হ্যারি বলল–ভালই করেছ! তারপর প্যাঁচার দিকে তাকিয়ে উফুল্ল হয়ে বলল–ওহহ! হারমিওন মনে হয় তোমার ভাগ্য ভাল।

একটা ধূসর পাচা হারমিওনের কাছে পিঠে ঘুরছে।

ওকে দেখে হতাশ হয়ে বলল–আরে খবরের কাগজ তো আনেনি দেখছি।

ও আশ্চর্য হয়ে গেল। ধূসর পাঁচাটা ছাড়াও চারটে লক্ষ্মী প্যাঁচা ওর প্লেটের কাছে বসল। তাছাড়া আর একটা বাদামী রং-এর পাচা, তার সঙ্গে আবার একটি বাচ্চা।

হ্যারি বলল–আরে কটা কাগজের গ্রাহক হয়েছে? কথাটা বলে হারমিওনের সামনে রাখা গবলেটটা সরিয়ে রাখল।

সবকটা ছোট–বড় প্যাঁচা নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে কে আগে হারমিওনকে চিঠি দেবে।

হারমিওন এক এক করে সব কটা চিঠি ওদের পা থেকে খুলে নিয়ে প্রথমটা খুলে পড়তে পড়তে বলল–সত্যি!… মুখ লাল হয়ে গেল।

রন বলল–কে লিখেছে, কী লিখেছে?

হারমিওন চিঠিটা হ্যারির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল–পড়।

হ্যারি চিঠিটা দেখল। হাতে লেখা নয়… ছোট এক টুকরো ছাপা কাগজ। মনে হয় ডেইলি ফেটে থেকে কেঁটে কাগজে গাম দিয়ে আটকেছে।

তুমি একটি দুষ্টু মেয়ে। হ্যারি পটার তোমার চেয়ে ভাল মেয়ে পাবার যোগ্য। চলে যাও, যেখান থেকে তুমি এসেছ মাগল।

সবকটি চিঠির ভাষা বক্তব্য একই।… নানাভাবে হারমিওনকে উত্ত্যক্ত করেছে। সবই হ্যারি পটারের সঙ্গে ওর সম্পর্ক নিয়ে।

হারমিওন শেষ খামটি খুলল। খুলতেই পেট্ৰল, আঠা আরও কিছু মিশ্রিত জিনিসে ভরা ওর হাতে লাগতেই বিরাট হলুদ ফোস্কা পড়ে গেল। অনেকটা ফোড়ার মতো।

রন বলল–বাবোটিউবার পাস! খামটা শুকল।

যন্ত্রণায় হারমিওন কেঁদে ফেলল। একটা ন্যাপকিন দিয়ে আঠাল পদার্থটা হাত থেকে মুছতে গেলে আঙ্গুল গুলোতে অসহ্য ব্যথা আর জ্বালা শুরু হয়ে গেল। দেখে মনে হল দুহাতে মোটা দস্তানা পড়েছে।

হ্যারি বলল–তোমার এখনই হাসপাতালে যেতে হবে। চিঠি দিয়ে প্যাঁচাগুলো এক এক করে খোলা জানালা দিয়ে উড়ে গেল।

–ব্যাপারটা প্রফেসর স্প্রাউটকে জানাতে হবে।

হারমিওন যন্ত্রণাকাতর মুখে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রন বলল–আমি একবার নয়, অনেক বার রিটা স্কীটারের বিরুদ্ধে যেতে মানা করেছি। চিঠিটা দেখ… হারমিওনের ফেলে যাওয়া একটি চিঠি সে পড়ল

আমি উইচ উইকলী পড়েছি। দেখেছি তুমি হ্যারি পটারকে ল্যাজে খেলাচ্ছ। ছেলেটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে.. আর ধোকা দিও না। শীঘ্রই তোমাকে একটি বড় দেখে বড় খামের পুরে কার্স চিঠি পাঠাচ্ছি…।

হারমিওনকে হারবোলজির ক্লাস করার জন্য ফিরতে না দেখে রন–হ্যারি গ্রীন হাউজের দিকে চলল। ওখানে কেয়ার অব ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচারসের ক্লাস হয়। ওরা যেতে যেতে ম্যালফয়, হ্যারি আর গোয়েলকে পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখল। প্যানসি পারকিনসন্ ওর বখাটে স্লিদারিয়ন হাউজের বন্ধুদের সঙ্গে মুখ টিপে টিপে হাসছে। হ্যারিকে দেখে প্যানসি এগিয়ে এসে কিছু যেন জানে না এমন এক মুখের ভাব করে বলল–পটার তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক কী কাট হয়ে গেছে? সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ওকে খুব উতলা দেখলাম।

হ্যারি ওর দিকে তাকালো না, কথার জবাব দেওয়া দূরের কথা। জানতে দিতে চাইল না উইচ উইকলী নোংরা নোংরা বিরক্তিকর জিনিস ছাপিয়ে কতটা ওদের বিরক্ত করেছে।

হ্যাগ্রিড গতবারে ইউনিকর্ন সম্বন্ধে ক্লাস নিয়েছিলেন। আজ নতুন ক্লাস নেবেন। তাই কেবিনের সামনে পায়ের কাছে সদ্য আসা একটা কাঠের বাক্স খুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হ্যারি বাক্সটা দেখে দমে গেল। আবার নতুন কোনও ব্যাপার নয় তো? কাছে গিয়ে দেখল বাক্সের মধ্যে রয়েছে তুলোর মতো নরম নরম কয়েকটা কাল রং-এর ছোট ছোট প্রাণী। নাকগুলো শুয়োরের মতো লম্বা উঁচলা। সামনের পায়ের পাতাগুলো অদ্ভুত চ্যাপ্টা, অনেকটা তাসের ইস্কাপনের মতো। চোখ পিট পিট করছে। মনে হয় ক্লাসের ছাত্র–ছাত্রীদের ও দেখছে, দেখে অবাক হয়ে গেছে।

হ্যাগ্রিড বললেন-এদের বলা হয় নিফেলসি। খনির গর্তে এদের পাওয়া যায়। এরা চকমকে জিনিস পছন্দ করে। ওদের দিকে তাকিয়ে দেখ।

পার্সি পারকিনসন ঝুঁকে পড়ে নিরস দেখছিল, হঠাৎ ওদের মধ্যে একটা লাফিয়ে উঠে আর কিছু না পেয়ে পারকিনসনের হাতের ঘড়িটায় কামড় দিল। পারকিনসন ভয় পেয়ে চিৎকার করে পিছু হটে গেল।

খুব প্রয়োজনীয় সঞ্চিত সম্পদ আবিষ্কার, হ্যাগ্রিড খুশি মনে বলল। ভাবছিলাম এদের নিয়ে কিছু মজা করব। ও দিকে তাকাও? হ্যাগ্রিড সদ্য কোপান কিছু মাটি দেখালেন। হ্যারি তাহলে পাচাঁদের আস্তানার জানালা থেকে হ্যাগ্রিডকে মাটি কোপাতে দেখেছিল। আমি কিছু সোনার মুদ্রা এর মধ্যে পুঁতে রেখেছি। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ নিরসকে তুলে কোপান মাটির ওপর ছেড়ে দিয়ে সোনার কয়েন তুলে আনলে তাকে আমি প্রাইজ দেব, ও হ্যাঁ ধরবার আগে কিন্তু দামী জিনিস পত্র কাছে রাখলে চলবে না।… নাও একটা নিরস তুলে নিয়ে ছেড়ে দাও।

হ্যারি হাতঘড়ি খুলে পকেটে রেখে বাক্স থেকে একটা নিলারস তুলে নিল। জটা লম্বা নাক দিয়ে হ্যারিকে ঝুঁকতে লাগল। হ্যারি দেখে মনে হল ওরা জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকতে ভালবাসে।

–প্রত্যেকের জন্যে তো আমি আলাদা আলাদা করে নিলারস এনেছি। একটা বাকি রইল কেন? কে নেই? হারমিওনকে দেখছিনে!

রন বলল–ও হাসপাতালে গেছে।

হ্যারি বলল–পরে আপনাকে কারণ বলব। দেখল পার্সি পারকিনসন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

এর আগে ওরা এত মজার ব্যাপার দেখেনি।… প্রত্যেকটা নিলারস কোপান মাটির মধ্যে ঢুকে গেল (এমনিভাবে যেন জলের ভেতর ঢুকছে) তারপর মাটির ভেতর থেকে মুখে করে, এক একটা সোনার মুদ্রা নিয়ে এসে তাদের হাতে দিল। রনের নিফলারস সব চেয়ে বেশি সোনার মুদ্রা তুলে আনল। রনের পকেট সোনার কয়েনে ভরে উঠল।

রন বলল–দারুণ, আমরা কী এগুলো পোষার জন্য কিনতে পারি প্রফেসর?

–পার; কিন্তু তোমার মা পছন্দ করবেন না। এরা সম্পদ খুঁজতে গিয়ে বাড়ি ভেঙে ফেলতে পারে।

নিলারসগুলো তখনও মাটির ভেতর ঢুকছে আর মুখে সোনার মুদ্রা নিয়ে বেরিয়ে আসছে।

হ্যাগ্রিড বললেন–আমি মাত্র একশটা মুদ্রা রেখেছি। মনে হয় ওদের ভোলা শেষ হয়েছে।… ও ওই তো হারমিওন আসছে!

রন, হ্যারি দেখল হারমিওন ধীরে ধীরে মাঠ পেরিয়ে ওদের দিকে আসছে। দু হাতে মোটা ব্যান্ডেজ। মুখ অপ্রসন্ন। পার্সি পারকিনসন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

–দেখা যাক তোমরা কে কেমন করলে, হ্যাগ্রিড বললেন-এখন যে যার মুদ্রা গুনে দেখ।

দেখা গেল রনের নিলারস সবচেয়ে বেশি কৃতকার্য হয়েছে। হ্যাগ্রিড বললেন–কয়েনগুলো লেপরেচাউন সোনার। কয়েক ঘণ্টা পর উঠে যাবে।

প্রাইজ হিসেবে রন পেল প্রচুর হানিডিউক চকোলেট। লাঞ্চ খাবার ঘণ্টা বেজে যেতেই হ্যারি, রন, হারমিওন ছাড়া সকলেই ক্যাসেলে খেতে চলে গেল। ওরা হ্যাগ্রিডকে নিলারস বাক্সে রেখে দিতে সাহায্য করল। কাজ করতে করতে হ্যারির হঠাৎ চোখ পড়ে গেল ম্যাদাম ম্যাক্সিমের ক্যারেজের দিকে। দেখল মাদাম ম্যাক্সিম ক্যারেজের খোলা জানালা দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

হ্যাগ্রিড, হারমিওনের হাতে মোটা ব্যান্ডেজ দেখে বললেন,–তোমার হাতে কি হয়েছে হারমিওন।

হারমিওন সকালে পাওয়া হেট মেলের কথা গড় গড় করে বলে গেল। খামের মধ্যে বাবোটিউবার পাসের কথাও।

হ্যাগ্রিড, হারমিওনকে বললেন–চিন্তা করো না… আমিও তোমার মতো চিঠি পেয়েছি… সবই রিটা স্কীটারের ডেইলি মেলে লেখার পর। লিখেছে, তুমি রাক্ষস দানব, যত শীঘ্র পার এদেশে ছেড়ে চলে যাও। তোমার মা নিরীহ লোকেদের হত্যা করেছেন, দ্রতা জ্ঞান থাকলে লেকের জলে ডুবে মর, এই সব জঘন্য কথা।

–না, অবিশ্বাস্য, হারমিওন রেগেমেগে বলল।

হ্যাগ্রিড নিফলারসদের বাক্সে ভরে কেবিনের দেওয়ালের দিকে রাখতে রাখতে বললেন,–ওই রকম চিঠি যদি পাও তো খামের মুখ না খুলে আগুনে পুড়িয়ে দেবে।

হ্যারি, হারমিওনকে বলল–তুমি দারুণ একটা ক্লাস মিস করেছ। রন, নিফলারসগুলো দারুণ না!

রনের হ্যারির কথায় কান দেবার সময় নেই। যত তাড়াতাড়ি পারে হ্যাগ্রিডের দেওয়া চকলেট গবাগব খেতে লাগল।

রন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিল।

–কী ব্যাপার, চকলেটে কি অন্য রকম গন্ধ? হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

–না, তুমি আমাকে সোনার কথা আগে বলনি কেন? রন বলল।

–সোনা? হ্যারি বলল।

–আরে যে সোনাগুলো তোমাকে কিডিচ ওয়ার্ল্ডকাপের সময় দিয়েছিলাম, রন বলল–আমি তোমাকে লেপরেচৌয়ান সোনা দিয়েছিলাম দুরবীন কেনার জন্য, সেগুলো উবে গেছে কেন তুমি আমাকে আগে বলনি?

হ্যারির, রনের কথা বুঝতে সময় লাগে।

–ওহ্…, হ্যারি বলল। মনে পড়ে গেল সোনার কয়েনের কথা। ধ্যাৎ আমার কিছু মনে নেই। আমি লক্ষ্যই করিনি আছে কি নেই…, আমি আমার ম্যাজিক দণ্ডের ব্যাপারে চিন্তায় ছিলাম… মনে নেই?

এনট্রেন্স হল দিয়ে ওরা গ্রেটহলে লাঞ্চ খেতে ঢুকল।

রন বলল–খুব ভাল কথা। প্লেট ভর্তি রোস্টেড বিফ, ইয়র্কশায়ার পুডিং ওর সামনে–তোমার তখন এত টাকা যে তার মধ্যে পকেটভর্তি গ্যালিয়ন চলে গেলেও খেয়াল করে নি?

–শুনো সেদিন রাত্রে সোনার–দানা ভাববার কথা একবারও মনে আসেনি, হ্যারি বলল।

রন বলল–লেপরেচৌয়ান সোনা উবে যায় আমার জানা ছিলো না। আমি ভেবেছিলাম কেনার জন্য দাম নিচ্ছ। ক্রিস্টমাসে ছাজলে ক্যানন টুপি আমাকে দেওয়া তোমার ঠিক হয়নি।

–ওসব কথা বাদ দাও তো, হ্যারি বলল।

রন কাঁটা চামচে একটা সেদ্ধ আলু বিধিয়ে দেখতে দেখতে বলল–দারিদ্রকে আমি ঘৃণা করি।

রনের কথাশুনে হ্যারি, হারমিওনের মুখের দিকে তাকাল। রনের কথা শুনে কি বলবে ভেবে পায় না। হঠাৎ বলার উদ্দেশ্য কী?

রন বলল–চুলোয় যাক সবকিছু। কিছু বেশি অর্থ রোজগারের জন্য ফ্রেড জর্জ যা করছে, দোষ দিই না। আমারও ইচ্ছে করে তাই করতে, আমার কাছে নিলারস থাকলে ভাল হত।

রনকে গুম হয়ে বসে থাকতে দেখে হারমিওন বলল আসছে বছর ক্রিস্টমাসে তোমাকে ভাল উপহার দিতে হবে। এই রন মুখ গোমড়া করে একদম বসে থাকবে, শরীর খারাপ হবে। রনকে খুশি করার জন্য হারমিওন আবার বললেন, আর যাই হোক তোমার আঙ্গুল আমার মতো পূজে ভর্তি নয়। হারমিওনের ছুরি–কাঁটা চামচ নিয়ে খেতে খুব অসুবিধে হচ্ছে। আঙ্গুলগুলো ফুলে আছে, ব্যথা কমছে না। চুপ করে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ ও রাগে ফেটে পড়ে বলল–ওই স্কীটারটাকে আমি ঘেন্না করি!… আমি ওকে উচিত শিক্ষা দেব বলেছিলাম।

***

পরের সপ্তাহেও হারমিওনের কাছে নিয়ম করে হেট মেল আসতে লাগল। হ্যাগ্রিড ওগুলো পুড়িয়ে ফেলতে বলেছেন, হারমিওন হ্যাগ্রিডের উপদেশ মত তাই করতে লাগল। মাঝে মধ্যে ওর শুভাকাক্ষিরা হাউলার পাঠল, সেগুলো গ্রিফিন্ডার টেবিলে ফেটেও গেল। হলের ছেলে–মেয়েরা বিকট শব্দ শুনে ভয় পেয়ে ওর দিকে তাকাতেই হারমিওন লজ্জায় পড়েন। যারা উইচ উইকলি পড়ে না, তারাও হ্যারি ক্রাম–হারমিওনের ত্রিকোণ প্রেমের কথা জেনে গেল। হ্যারি আর কতজনকে, কতবার বলবে–হারমিওন ওর গার্ল ফ্রেড নয়, বন্ধু।

ও হারমিওনকে সান্ত্বনা দিল–সময়ে এই সব ব্যাপার–স্যাপার সকলে ভুলে যাবে। আমাদের ভ্রুক্ষেপ না করাই ভাল। ওদিকে পাঠকরাও রিটার আমাকে নিয়ে একঘেয়ে কচকচানি পড়তে পড়তে বোর হয়ে যাবে।

হারমিওন রাগে ফেটে পড়ে বলল–আশ্চর্য! ওর তো মাঠে ঢোকা বারণ, তা সত্ত্বেও, কি করে ও মাঠেতে কে কি ব্যক্তিগত কথা বলল, জানল কেমন করে!… সে যাক, রিটার কাছে তো অদৃশ্য হবার আলখেল্লা নেই যে স্কুল চত্ত্বরে ঢুকবে আর কেউ দেখতে পাবে না।

রন বিরক্ত হয়ে বলল–হারমিওন আমার কথা শোন, রিটাকে নিয়ে সময় নষ্ট করলেও চলবে।

–না! হারমিওন অনমনীয় স্বরে বলে উঠল। আমি জানতে চাই ভিক্টরের সঙ্গে আমি কি কথা বললাম, বা ও বলল–সেটা রিটা স্কীটার জানল কেমন করে? হ্যাগ্রিডের মার অতীত–বর্তমান জানল কেমন করে?

হ্যারি বলল–হয়ত তোমার কথা জানার জন্য বাগিং ডিভাইস লাগিয়ে জেনেছে।

রন কোনও তাপ–উত্তাপ না দেখিয়ে বলল–বাগিং ডিভাইস! সেটা আবার কী?

হ্যারি গোপনে লুকানো মাইক্রোফোন রেখে রেকর্ডিং সম্বন্ধে বুঝিয়ে বলল।

রন মুগ্ধ হয়ে শুনল, হারমিওন, রিটা স্কীটার সম্বন্ধে যবনিকাপাত করে বলল আচ্ছা তোমরা হোগার্টস অ্যা হিস্ট্রি পড়েছ?

–পড়ে কি হবে? রন বলল।–তুমি তো জান ওটা আমাদের মুখস্থ। আমরা জানতে চাই তুমি পড়েছ কি না।

–ও গুলো মাগলরা ম্যাজিকের পরিবর্তে ব্যবহার করে–ইলেকট্রিসিটি, কমপিউটার রাডার… ওই রকম সব জিনিসপত্র কিন্তু এভাবে হোগার্টের খবর নেওয়া সম্ভব নয়, কারণ এখানে ঘাসের তারের বাধা দেওয়া আছে। আর আকাশে–বাতাসে চতুর্দিকে ম্যাজিক। না রিটা আনাচে–কানাচে লুকিয়ে ঘুরে ঘুরে আড়িপেতে খবর সংগ্রহ করে। এতে কোনও সন্দেহ নেই, তবে কেমন করে করে আমি যদি জানতে পারি, ওই রকম করা সম্পূর্ণ বেআইনি…।

রন হারমিওনকে আবার বলল–রিটা আর তার লেখা বিরুদ্ধতা করা ছাড়া আমাদের আর কোনও কাজ নেই? কেমন করে রিটা স্কীটারের প্রতি নেওয়া যায় তা কি আমাদের ভাবতে হবে না?

হারমিওন একটু থেমে আবার বলল–আমি তোমাদের সাহায্য চাইনি–যা করার আমি নিজেই করব। তোমাদের মাথা ঘামাতে হবে না। ও গটগট করে পাথরের সিঁড়ির দিকে চলে গেল, একবারও পেছন ফিরে তাকাল না। হ্যারির কোনও সন্দেহ নেই হারমিওন লাইব্রেরিতে গেছে।

দ্রুত হেঁটে যাওয়া হারমিওনকে রন চিৎকার করে বলল–ফেরার সময় বাক্স ভর্তি স্টিকার নিয়ে আসবে আমি তোমাকে ঘৃণা করি রিটা স্কীটার।

হারমিওন অবশ্য হ্যারি বা রনকে রিটার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধ নেবার সাহায্য করতে অনুরোধ করল না। সামনে ইস্টারের ছুটি… অনেক হোমওয়ার্ক আর পড়াশুনা আছে। হ্যারি ভাবল হারমিওন তো আড়িপাতার মেথড সম্বন্ধে গবেষণা করতে পারে… তাছাড়া আরও অনেককিছু। হোমওয়ার্ক নিয়ে ও ল্যাজে–গোবড়ে। তার মধ্যেও নিয়ম করে সিরিয়সকে খাবার পাঠাতে লাগল। গত গ্রীষ্মে ডার্সলে পরিবারে থেকে, ক্ষিধের কষ্ট হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। খাবারের সঙ্গে নোট পাঠাতে লাগল আপাতত জানাবার কিছু নেই। ওরা পার্সির জবাবের আশায় ধৈর্য ধরে দিন কাটাতে লাগল।

ইষ্টার হলিডে শেষ হবার পর হেডউইগ ফিরে এল পার্সির সংবাদ নিয়ে। পার্সি ওর চিঠির সঙ্গে ইষ্টার এগ (ডিম) পাঠিয়েছে। অবশ্য মিসেস উইসলি পাঠাতে বলেছেন, বেশ বড় বড় ডিম, তাছাড়া বাড়িতে বানান টফি। হারমিওনকে বাড়ি থেকে ছোট মুরগির ডিম পাঠিয়েছে। পার্সির পাঠান ডিম আর টফি দেখে ওর মুখ ভার হয়ে গেল।

বলল–আমার মনে হয় তোমার মা ভুলেও উইচউইকলি পড়েন না, রন পড়েন কী?

রনের তখন মুখভর্তি টফি। বোধ হয় খাবার তৈরির রেসিপি পড়েন।

হারমিওন দুঃখভরা ক্লান্ত মনে ওকে পাঠান ছোট ডিমের দিকে তাকিয়ে থাকে।

হ্যারি উৎসাহিত হয়ে বলল–পার্সি কী লিখেছে তুমি পড়বে না হারমিওন।

পার্সি খুব ছোট করে লিখেছে পড়ে বিরক্তিকরও মনে হল।

আমি অনবরত ডেইলি প্রফেটকে বলে চলেছি মি. ক্রাউচ-এর বিশ্রামের খুবই প্রয়োজন তাই বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাড়ি থেকে নিয়মিত পাঁচা মারফৎ নানা নির্দেশও পাঠাচ্ছেন না, আমি কিন্তু তাকে স্বচক্ষে দেখিতে না। তা হলেও আমার উপরওয়ালার হাতের লেখা জানবো না এমন কথা নয়। ওই সব আজগুবি গুজব নিয়ে আমি মোটেই মাথা ঘামাই না। কোনও বিশেষ প্রয়োজন বা কাজ না হলে তুমি আমাকে অযথা বিরক্ত করবে না, শুড ইস্টার।

***

সামার টার্মে সাধারণত: হ্যারিকে কিডিচ খেলার কঠিন প্রশিক্ষণ নিতে হয়। হ্যারির তাই প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকতে হয়।

এই বছর অন্য ব্যাপার। ট্রাই–উইজার্ড টুর্নামেন্ট… শেষ টাস্ক, তার জন্য অনেক ভাবনা, চিন্তা–তৈরি হওয়া কিন্তু তার জন্য কি করতে হবে ও জানে না। শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষ সপ্তাহে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ট্রান্সফিগারেসন ক্লাসের পর হ্যারিকে যেতে দিলেন না। বললেন, আজ রাত নটার সময় তোমাকে কিডিচ পিচে যেতে হবে … মিস্টার বেগম্যান সেখানে থাকবেন। তোমাদের তৃতীয় টাস্কে কি করতে হবে না করতে হবে বুঝিয়ে দেবেন।

তো সেদিন সাড়ে আটটার সময় রন আর হারমিওনকে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে শুভরাত্রি জানিয়ে হ্যারি চলল ম্যাকগোনাগলের আদেশ মত। এনট্রেন্স হল পেরোবার সময় ওর সেডরিকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ও হাফপাফের কমনরুম থেকে আসছিল।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সেডরিক বলল–কি করতে হবে মনে হয়? কিছু আভাস পেয়েছ?

খুব ঠাণ্ডা আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।

–ফ্লেউর আন্ডারগ্রাউন্ড সুরঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে ভাবছে আমাদের গুপ্তধন বের করতে হবে।

–খুব একটা খারাপ হবে না, হ্যারি বলল। যদি তাই হয় তা হলে হ্যাগ্রিডকে বলবে একটা নিরস দিতে… ও কাজটা করে দেবে।

ওরা গল্প করতে করতে কিডিচ স্টেডিয়ামের অন্ধকার লনে পৌঁছল। তারপর দুটো স্ট্যান্ডের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে কিডিচ পিচে গেল।

যেতে যেতে হঠাৎ সেডরিক থেমে গিয়ে বলল–আমাদের এখানে ডেকেছেন কেন জান?

না; হ্যারি বলল।

আগের মতো কিডিচ পিচটা মসৃণ নয়। দেখে মনে হয় কেউ যেন পিচের ওপর যার যার ঘোট ঘোট লম্বা দেওয়াল তুলেছে। সোজা নয়, আঁকা–বাঁকা ও অপরিকল্পিত।

হ্যারি বলল–ওগুলো দেয়াল নয়, ছোট ছোট গাছ দিয়ে বেড়া বানান হয়েছে। হাতের কাছে বেড়াটা দেখতে দেখতে বলল। কে যেন হাসি হাসি গলায় বলল তোমরা কে?

ওরা দেখল লাডো বেগম্যান কাম আর ফ্লেউরকে নিয়ে পিচের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হ্যারি, সেডরিক শুল্মের বেড়া টপকে বেগম্যানের কাছে গেল। হ্যারিকে দেখে ফ্লেউর হাসল। ওর এখন আর হ্যারির ওপর বিরাগ নেই। হ্যারি লেকের জলের তলা থেকে ওর ছোট বোনকে তোলার পর ওর মনোভাব বদলে গেছে।

শেষ হেজটা বেড়া দেওয়ার গাছ পার হয়ে বেগম্যানের কাছে হ্যারি, সেডরিক এলে বেগম্যান খুশি হয়ে বললেন,–কী? কি মনে হচ্ছে? হেজগুলো খুব সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে, না? একমাসের মধ্যে হ্যাগ্রিড ঝোপগুলোকে হেজ কুড়িফুট লম্বা করে দেবেন।… চিন্তার কোনও কারণ নেই। তোমাদের কিডিচ পিচ, এই টাস্কটা হলে নতুন হয়ে যাবে। হাঃ হাঃ বলত এখন আমি কি ভাবছি?

সকলেই নীরব। তারপর

ক্রাম বলল–গোলক ধাঁধা!

বেগম্যান, বললেন–ঠিক ধরেছ। তৃতীয় টাস্ক খুবই সোজাসুজি ব্যাপার। গোলক ধাঁধার মাঝখানে ট্রাইউইজার্ড কাপটি রাখা হবে। আঁকাবাকা গুল্মের বেড়া পেরিয়ে, যেমন করেই হোক… লাফিয়ে দৌড়িয়ে… যে প্রথম কাপটি ছুঁতে পারবে সে পাবে ফুলমার্ক… মানে পঞ্চাশের মধ্যে পঞ্চাশ। ফ্লেউর বলল–তাহলে আমাদের এই হেজগুলো পার হতে হবে?

–খুব সোজা হবে না, মাঝে মধ্যে গতি ব্যাহত করার ব্যবস্থা থাকবে, মানে বাধা থাকবে। বেগম্যান হাতের বলটা পিচে বাউন্স করতে করতে বললেন। হ্যাগ্রিড নানারকম জন্তুটন্তু দিচ্ছেন, তাছাড়া জাদুমন্দ্র দিয়ে পথ আটকানো হবে সেটাও তোমাদের ব্যর্থ করতে হবে। এই নানারকমের বাধা দেওয়ার জিনিস থাকবে যাতে অবাধে দৌড়ে, টপকে এসে ছুঁতে না পার।… বেগম্যান সেড়রিক আর হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।… সবাই একসঙ্গে ঢুকবে। তোমাদের আগে পৌঁছনোর জন্য অবশ্য ধাক্কাধাক্কি করতে হবে… অবশ্য নির্ভর করছে তোমাদের সামনে নানারকম বাধার ওপর। দারুণ মজার ব্যাপার না?

হ্যারি, হ্যাগ্রিডের কাছে মাত্র দুটি জন্তু দেখেছে… সম্ভবত: তাই পাঠাবেন। খুব একটা মজাদার কিছু হবে বলে মনে হল না। ও বাকি তিন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে হাসল।

–তোমাদের যদি কোনও প্রশ্ন না থাকে তাহলে আমরা এখন টাওয়ারের ফিরে যেতে পারি কী বল? বড় ঠাণ্ডা লাগছে। হ্যারির পাশাপাশি বেগম্যান চললেন। যেতে যেতে হ্যারির মনে হল এবারেও যেন বেগম্যান ওকে সাহায্য করতে চান। ঠিক সেই সময় ক্রাম, হ্যারির পিঠে টোকা দিয়ে বলল

–তোমায় একটা কথা বলতে পারি?

হ্যারি সামান্য আশ্চর্য হয়ে বলল–হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই।

–চল একটু হেঁটে হেঁটে কথা বলি।

–অবশ্যই, হ্যারি বলল।

বেগম্যান মনে হয় বিরক্ত হয়েছেন। বললেন–আমি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করব হ্যারি?

–না, ধন্যবাদ মি, বেগম্যান… আমি ঠিক ক্যাসেলে পৌঁছে যাব।

ওরা দুজনে স্টেডিয়াম ছেড়ে মাঠে দাঁড়াল। কিন্তু ক্রাম ওদের জাহাজে যাবার পথটা ধরলো না।… ও অরণ্যের দিকে চলল।

–ও দিকে আমরা যাচ্ছি কেন? হ্যারি হ্যাগ্রিডের কেবিন পার হতে হতে বলল।

–ক্রাম বলল, জোরে জোরে কথা বলবে না, কেউ শুনতে পাবে।

ঘোড়ার আস্তাবল পার হয়ে ওরা অরণ্যের মুখে ঢালাও রাস্তায় দাঁড়াল। ক্রাম একটা বড় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে হ্যারির দিকে তাকাল।

বলল–আমি জানতে চাই, মানে তোমার সঙ্গে হারমিওনের সম্পর্কের বিষয়ে।

হ্যারি এই মুহূর্তে ক্রামের মুখ থেকে হারমিওন সম্বন্ধে প্রশ্ন আশা করেনি, ভেবেছিলো গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছু। ও একটু আশ্চর্য হয়ে ক্রামের মুখের দিকে তাকাল।

–তেমন বিশেষ কিছু না, হ্যারি বলল। কিন্তু ক্রাম ওর দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল। হ্যারির তখন ক্রামের লম্বা–চওড়া চেহারার দিকে তাকিয়ে থতমত খেয়ে গেল। ও আমার বন্ধু, আমি ওর পারিবারিক বন্ধু, মোটেই আমার গার্ল ফ্রেড নয়। কখনও হবেও না। সবই ওই স্কীটার মহিলার নোংরামি। যা ইচ্ছে তাই লিখে যাচ্ছে।

–হারমিওন দেখি সব সময় তোমার সঙ্গে সঙ্গে ঘোরেফেরে। ক্রাম এমনভাবে হ্যারির দিকে তাকাল যেন ও ধামাচাপা দিতে চাইছে আসল ব্যাপারটা–হ্যাঁ বললাম তো আমরা ছোটবেলাকার বন্ধু।

হ্যারি ভাবতে পারছেনা ভিক্টর ক্রাম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন কিডিচ প্লেয়ার ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওই সব কথা বলছে কেন! যেন ও আর হ্যারি সত্যি প্রতিবন্ধী!

–সত্যি বলছ? কখনই ও তোমার গার্লফ্রেড নয়?

–না, না। হ্যারি জোর দিয়ে বলল।

ক্রাম মনে হল খুশি হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড হ্যারির মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল–তুমি খুব ভাল ফ্লাই কর। প্রথম টাস্কে তোমায় লক্ষ্য করেছি।

হ্যারি হেসে বলল–ধন্যবাদ! তারপর ক্রামের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খাটো মনে হলনা। আমিও তোমাকে বিশ্বকাপে খেলতে দেখেছি। তুমি অসাধারণ কিডিচ প্লেয়ার।

কে যেন গাছের পেছন থেকে, ক্রামের পেছনে, বলতে গেলে কোনো রকম শব্দ না করে দাঁড়াল। হ্যারির ওই রকম শব্দ শোনা, অস্বাভাবিক কিছু দেখা অরণ্যের মধ্যে নতুন নয়। ও এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে কামের হাত ধরে টান দিল।

–কি করছ?

হ্যারি গাছের ওধারে যেখানে পদশব্দ শুনেছে সেদিকে তাকাল। ও রোবের মধ্যে একটা হাত ঢুকিয়ে জাদুদণ্ডটা বের করতে চাইল।

তারপরই বিরাট ওক গাছের পেছন থেকে বেশ লম্বা এক মানুষ ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। চট করে হ্যারি ওকে দেখে চিনতে পারলো না, তারপরই চিনতে পারলো, মি. ক্রাউচ।

ওকে দেখে মনে হল বহু পথ হেঁটে এসেছেন ও অতি ক্লান্ত, চলতে যেন আর পারছেন না। রোবটা জীর্ণ, বিশেষ করে হাঁটুর কাছে। ছেঁড়া রোব থেকে রক্তাক্ত দুটি হাঁটু দেখা যাচ্ছে! সারা রোবে ইতস্ততঃ রক্তে ভেজা, মুখে আঁচড়ের দাগ, দাড়ি গোঁফ কামান নয়, খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি। আপন মনে বক বক করছেন, হাত পা নাড়ছেন যেন সামনে কেউ দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলছেন। হ্যারির ক্রাউচকে দেখে মনে হল, অভুক্ত ময়লা জীর্ণ বেশভূষা পরা একজন অতি দারিদ্র ভবঘুরে যার থাকবার জায়গা নেই, আহার জোটে না। এই রকম এক ভবঘুরেকে ডাসলেদের সঙ্গে বাজারে গিয়ে দেখেছিল। সেই ভবঘুরে ক্রাউচের মতো নিজের মনে বকবক করছিল। অর্থহীন অসংলগ্ন কথা। আন্ট পেটুনিয়া ডাডলিকে টেনে নিয়ে অন্যদিকে চলে যান।

ক্রাম ক্রাউচের দিকে তাকিয়ে বলল–উনি একজন বিচারক ছিলেন না? তোমাদের এক মিনিস্ট্রিতে তো উনি ছিলেন…।

হ্যারি ঘাড় নাড়লো। কাউচের কাছে যাবে কি যাবে না ভেবে নিয়ে ক্রাউচের কাছে ধীরে ধীরে গেল। ক্রাউচ, হ্যারির দিকে তাকালেন না, সামনের গাছটার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে লাগলেন, হ্যাঁ কাজটা করার পর ওয়েদারবাই, ডাম্বলডোরের কাছে পাচা পাঠিয়ে জানিয়ে দিও কতজন ডারমট্রাংগ থেকে ছাত্র–ছাত্রী টুর্নামেন্টে আসবে। কারকারফ এইমাত্র জানিয়েছে, বার জন হবে।

হ্যারি খুব সতর্কতার সঙ্গে ধীরে ধীরে বলল–মি. ক্রাউচ।

তারপর আরেকটা প্যাঁচা মাদাম ম্যাক্সিমকে পাঠাবে, তাহলে কতজন ছাত্র ছাত্রী তিনি আনবেন জানতে পারবে। এখন কারকারফ বলছেন বার… তাই করো ওয়েদারবাই… করবে তো? হ্যারি দেখল ওই কথা বলতে বলতে ক্রাউচের চোখ দুটো যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ক্রাউচ গাছের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন… মাঝে মধ্যে বিড়বিড় করতে লাগলেন। তারপর টলমল করে কাঁপতে কাঁপতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন।

–মি: ক্রাউচ? হ্যারি এবার খুব জোরে জোরে বলল–আপনার শরীর ভাল আছে তো?

ক্রাউচের চোখ দুটো বনবন করে ঘুরতে লাগল। হ্যারি ক্রামের দিকে তাকাল… ও হ্যারির পেছনে পেছনে গাছের দিকে দাঁড়িয়েছিল। ক্রাউচের দিকে সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল।

–কী হয়েছে ওনার?

হ্যারি বলল–বুঝতে পারছি না। শোন, তুমি বরং এখন যাও… পারো তো সঙ্গে কাউকে নিয়ে এস–।

–ডাম্বলডোর! ক্রাউচ হাঁফাতে হাঁফাতে লাগলেন। হ্যারির নোটা হাত বাড়িয়ে ধরে কাছে টানলেন, চোখ হ্যারির কপালের দিকে আমার দরকার… ডাম্বলডোর…।

–ঠিক আছে, হ্যারি বলল। আপনি যদি দাঁড়াতে পারেন আমরা তাহলে ওদিকটায় যেতে পারি।

–আমি খুব বোকার মতো কাজ করেছি…. মি. ক্রাউচ দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন ওকে দেখে একেবারে উন্মাদ মনে হয়… চোখ দুটো বনবন করে ঘুরছে মনে হয় কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।

হ্যারি বলল–উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করন মি. ক্রাউচ, আমি আপনাকে ডাম্বলডোরের কাছে নিয়ে যাব।

মি. ক্রাউচ অবাক হয়ে হ্যারির দিকে তাকালেন। খুব অস্পষ্ট ভাবে বললেন তুমি কে?

–আমি স্কুলের একজন ছাত্র, হ্যারি বলল। ক্রামের সাহায্যের জন্যে ওর দিকে তাকাল। কাম দারুণ ভয় পেয়েছে ক্রাউচকে দেখে। ওর ভয়ার্ত মুখ।

–না তুমি নও…ওর? ক্রাউচ ফিস ফিস করে বললেন। কথা বলার সময় মুখ দিয়ে লালা বেরোতে লাগল।

–না, হ্যারি বলল। যদিও সে ক্রাউচ হযবরল পাগলের মতো কি বলছেন… এক বর্ণও বুঝতেও পারি নি।

–ডাম্বলডোর? হ্যা

রি বলল–হ্যাঁ তাই।

ক্রাউচ, হ্যারিকে জাপ্টে প্রায় ধরে ফেললেন। হ্যারি প্রাণপণ শক্তিতে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল; কিন্তু ক্রাউচের শক্তি অনেক বেশি।

–অমঙ্গলের সংকেত! ডাম্বলডোর…!

–আমি আপনাকে ডাম্বলডোরের কাছে নিয়ে যাব যদি যেতে চান, হ্যারি বলল।-এখনই চলুন মি. ক্রাউচ, আমি ডাম্বলডোরের কাছে নিয়ে যাব…। এবার হ্যারিকে ছেড়ে দিয়ে মি. ক্রাউচ বললেন।

–অশেষ ধন্যবাদ, ওয়েদারবাই। তুমি দেখা করিয়ে দেবার পর তোমাকে এককাপ চা খাওয়াবো। আমার স্ত্রী… ছেলে, এখনই এসে পড়বে, মি. আর মিসেস ফাজের সঙ্গে আজ রাতে আমরা কনসার্ট শুনতে যাব।

ক্রাউচ আবার সামনের গাছের সঙ্গে অনর্গল কথা বলতে লাগলেন… হ্যারি যে তার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। হ্যারি দারুণ আশ্চর্য হয়ে গেলো… কখন যে ক্রাউচ ওকে ছেড়ে দিয়েছেন বুঝতেই পারেনি। এমনই সব তালগোল পাকিয়ে গেছে।

–তুমি জানো আমার ছেলে বারোটা 0.WL পেয়েছে… এই কদিন আগে। খুব সন্তোষজনক। হাঁ। আপনাকে ধন্যবাদ, হ্যাঁ, হ্যাঁ খুব গর্বের ব্যাপার। হ্যাঁ, তুমি যদি অ্যানডোরান মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক থেকে মেমোটা আমার জন্য আনতে পার, ভাল হয়। আমি তাহলে একটা জবাবের মুসাবিদা করতে পারি। হ্যারি ভাবলো, আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না ডাম্বলডোরকে জানাতে হবে।

হ্যারি ক্রামকে বলল–তুমি এখানে ওনার সঙ্গে থাক, আমি ডাম্বলডোরকে এখনই ডেকে আনছি, আমার দেরি হবে না… খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। ডাম্বলডোরের অফিসটা আমি জানি।

ক্রাম ভয় পেয়ে বলল–উনি মনে হয় পাগল…। ক্রাউচ তখনও গাছের সঙ্গে আবোল–তাবোল বকে যাচ্ছেন।… ধরন দেখে মনে হল গাছ নয় এখন পার্সির সঙ্গে কথা বলছেন।

–আপনি এর সঙ্গে অপেক্ষা করন, হ্যারি ক্রাউচকে কথাটা বলে ও উঠতে যাবে, ক্রাউচ ওকে ছাড়লেন না। হ্যারিকে আবার জোর করে দু হাঁটুর মাঝে চেপে ধরে রাখলেন।

–আমায়…ছেড়ে… যেও না, কাউচের দুচোখ আবার ফুলে উঠল–সবদোষ আমার… বার্থা… মৃত… সব আমার দোষ… আমার ছেলে… আমার দোষ… ডাম্বলডোরকে বলবে… হ্যারিপটার… ডার্কলর্ড (ভোল্ডেমর্ট)… শক্তিশালী… হ্যারি পটার।

–আমায় ছাড়লে তবে তো আমি যাব, মি, ক্রাউচ, হ্যারি বলল। কথাটা বলে অসম্ভব উত্তেজিত হয়ে হ্যারি ক্রামের দিকে তাকাল–আমাকে একটু সাহায্য কর… দাঁড়িয়ে দেখছো কী?

ক্রামকে দেখে মনে হয় ও–কি করবে না করবে স্থির করতে পারছেনা।… ও পা টিপে টিপে এগিয়ে এসে কাউচের পাশে দাঁড়াল।

হ্যারি, ক্রাউচের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করে ক্রামকে বলল–মি. ক্রাউচকে এখানে আটকে রাখ। ডাম্বলডোরকে নিয়ে আমি যত তাড়াতাড়ি পারি ফিরে আসছি। ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে লাগছে।

ক্রাম অসহায়ের মতো বলল,–হ্যারি তুমি আমাকে একলা ফেলে যেও না। হ্যারি গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন অরণ্যের ভেতর থেকে বাইরে এসে ক্যাসেলের দিকে দৌড়তে লাগল। মাঠের কাছে এসে দেখল, বেগম্যান ফ্লেউর সেডরিক নেই, ওরা চলে গেছে।

হ্যারি পাথরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওক গাছের তৈরি সামনের দরজার সামনে দাঁড়াল, তারপর শ্বেত পাথরের সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠল।

–শের–শেরবেট লেমন, ও হাঁফাতে হাঁফাতে পাশওয়ার্ড বলল।

এটাই ডাম্বলডোরের অফিসে যাবার লুকনো সিঁড়ি। অন্তত দুবছর আগেও এই পাশওয়ার্ডটা ছিল।… দূর্ভাগ্য! পাশওয়ার্ড বদলেছে। দরজাটা খুললো না, কেঁপে কেঁপে উঠল। হ্যারি দরজার সামনে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

–খোলো! হ্যারি চিৎকার করে বলল–খোল শিগগিরি খোলা কিন্তু ওর চেঁচানো ব্যর্থ… দরজা খুললো না… ও হতাশ হয়ে অন্ধকার করিডলরে দাঁড়িয়ে রইল।… ডাম্বলডোর কী তা হলে স্টাফ রুমে আছেন?… ও সেই দিকে চোখ–কান বন্ধ করে ছুটল।

পটার!

হ্যারি থমকে দাঁড়িয়ে এপার–ওধার তাকাতে থাকে।

স্নেইপ ছাদের জল বেরিয়ে যাবার নলের কাছে গোপন সিঁড়ি বেয়ে হ্যারির সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখানে তুমি কি করছ পটার? হ্যারি স্নেইপের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল–প্রফেসর ডাম্বলডোরের সঙ্গে এখনই আমার দেখা করা দরকার। মি. ক্রাউচ অরণ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন… উনি চাইছেন… মনে হয় ওর শরীর ভাল নেই।

স্নেইপ অবাক হয়ে বললেন–কি সব আজেবাজে কথা বলছ? ওর কাল চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে উঠল।–যত সব বাজে কথা।

হ্যারি গলা ফাটিয়ে বলল–মি: ক্রাউচ! মন্ত্রণালয়ের… মনে হয় খুব অসুস্থ বা অন্য কিছু… অরণ্যে একা রয়েছেন… ডাম্বলডোরকে আসতে বলছেন! আমাকে পাশওয়ার্ডটা বলুন।

–পটার… হেডমাস্টার এখন খুব ব্যস্ত, স্নেইপ বললেন। ওর শুকনো চ্যাপ্টা মুখে তীর্যক হাসি!

–আমাকে ডাম্বলডোরকে জানাতেই হবে ব্যাপারটা।

–তুমি কী আমার কথা শুনতে পাওনি পটার?

হ্যারির স্নেইপের মুখ দেখে মনে হল ক্রাউচের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছেন, বেশ মজা পাচ্ছেন, তার কণামাত্র সহানুভূতি নেই হ্যারির কথায়।

–শুনুন, হ্যারি রেগে বলল।–ক্রাউচ এখন বিপদগ্রস্ত, ভারসাম্য হারিয়েছেন… বলছেন, ডাম্বলডোরকে কোনও একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে চান।

ঠিক সেই সময়েই স্নেইপের পেছনে পাথরের দেয়াল সরে গেল। দেখল ডাম্বলডোর দাঁড়িয়ে। পরনে সবুজ রং-এর বড় আলখেল্লা, মুখে অদ্ভুত এক হাসি।

–কোনও সমস্যা…? হ্যারি ও স্নেইপকে দেখতে দেখতে ডাম্বলডোর বললেন।

স্নেইপ কিছু বলার আগেই হ্যারি বলল–প্রফেসর… মি. ক্রাউচ এখন… অরণ্যে রয়েছেন… আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন।

হ্যারি ভেবেছিল ওর কথা শুনে ডাম্বলডোর অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। কিন্তু না, কোনও প্রশ্ন না করে বললেন–চল, আমার সঙ্গে চল।

ডাম্বলডোর স্নেইপের খোতা মুখ ভেঁতা করে করিডলর ধরে হ্যারির সঙ্গে চললেন। স্নেইপ জল নিষ্কাশনের পাইপের পাশে বোবার মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

মার্বেল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে ডাম্বলডোর বললেন–উনি কি বলছিলেন, হ্যারি এবার শান্ত হয়ে ভাল করে বল।

–বলছেন, কোনও একটা ব্যাপারে আগে থেকে আপনাকে সাবধান করে দিতে চান; হ্যারি একদমে বলে গেল।–বলছিলেন, তিনি নাকি সাংঘাতিক কিছু করেছেন… ছেলের কথা বললেন… বার্থা জোরকিনস্… আর আর ভোল্ডেমর্ট… বললেন, ভোল্ডেমর্ট আবার শক্তিশালী হয়েছেন…।  

–তাই বললেন, ডাম্বলডোর অন্ধকার মাঠের ভেতর হ্যারির সঙ্গে দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলেন।

–কেমন যেন এলোমেলো কথা বলছেন, সুস্থির নয়… বলতে পারছেন না কোথায় রয়েছেন, অরণ্যে কেমন করে এলেন। মনে হচ্ছিল আপন মনে পার্সি উইসলির সঙ্গে কথা বলছেন।… তারপরই আপনার কথা বললেন… আমি তাকে আগলাবার জন্যে ভিক্টর ক্রামকে রেখে এসেছি।

–তাই? ডাম্বলডোর তীক্ষ্ণস্বরে বললেন।… ডাম্বলডোর জোর কদমে হাঁটতে লাগলেন। এত জোরে যে তার সঙ্গে তাল রাখার জন্য হ্যারি এক রকম দৌড়াতে লাগল।–আর কেউ মি. ক্রাউচকে দেখেছে?

–না, হ্যারি বলল।–ক্রাম আর আমি গল্প করছিলাম… বেগম্যান আমাদের তৃতীয় টাস্কে কি করতে হবে বললেন… আমি আর ভিক্টর কাম রয়ে গেলাম… অরণ্যের দিকে যেতেই দেখলাম মি. ক্রাউচ আসছেন।

–ওরা কোথায়? ডাম্বলডোর জিজ্ঞেস করলেন, বক্সবেটনের ক্যারেজ অন্ধকারে আবছা দেখা যাচ্ছে। হ্যারি সেদিক তাক করে দেখালো, সেখানে…..।

–ও দিকটায়। হ্যারি, ডাম্বলডোরকে গাছপালার মধ্য দিয়ে পথ দেখিয়ে হাঁটতে লাগল।

–ভিক্টর! হ্যারি উচ্চস্বরে বলল।

কেউ কোন জবাব দিলো না।

–ওরা তো এখানেই ছিল, হ্যারি ডাম্বলডোরকে বলল।… কাছে পিঠে নিশ্চয়ই আছে।

–লুমোস, ডাম্বলডোর হাতের জাদুদণ্ডটা জ্বালিয়ে ওপরের তুলে বললেন।

তীক্ষ আলো… একটার পর একটা গাছের আড়ালে আলো ফেলতে লাগলেন ডাম্বলডোর। কোথাও ক্রাউচ বা ভিক্টরের চিহ্ন নেই। মাঝে মাঝে গাছের তলাতেও আলো ফেলছেন! চলতে চলতে এক জায়গায় থেমে গেলেন ডাম্বলডোর।… একটা গাছের তলায় কে যেন শুয়ে রয়েছে। হ্যারি সে দিকে দৌড়ে গেল, দেখল ক্রাম গাছতলায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে।

ক্রাউচের কোনও চিহ্ন নেই। ডাম্বলডোর হেঁট হয়ে অচৈতন্য ক্রামের বন্ধ দু চোখের পাতার একটা পাতা ধীরে ধীরে তুললেন।

–জ্ঞান হারিয়েছে! ডাম্বলডোর স্বভাবসিদ্ধ নরম সুরে বললেন। জাদুদণ্ডের আলো পড়ে ডাম্বলডোরের অর্ধচন্দ্রের মত চশমার কাঁচ ঝিক ঝিক করছে। ডাম্বলডোর আরও দুএকটা গাছের দিকে আলো ফেললেন।

–আমি কাউকে ডেকে আনতে পারি?… মাদাম পমফ্রে! হ্যারি বলল।

কোথাও যেতে হবে না, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাক।

ডাম্বলডোর জাদুদণ্ডটা উঁচু করে হ্যাগ্রিডের অন্ধকার কেবিনের দিকে ফেললেন। হ্যারি দেখল ডাম্বলডোরের জাদুদণ্ডের মুখ থেকে রূপোলি সরু আলো কি করে পড়ছে… মাঝে মধ্যে গাছের পাতায় ফেলছেন… মনে হয় যেন গাছের পাতায় পাতায় ভূতুড়ে পাখি বসে রয়েছে। তারপর ডাম্বলডোর আবার ক্রামের দিকে ঝুঁকে পড়ে তীব্র আলোটা ওর মুখে ফেললেন, তারপর বিড় বিড় করে বললেন, এনারভেট।

ক্রাম চোখ খুলল। অসম্ভব হতবুদ্ধি অবস্থা ওর। ডাম্বলডোরকে দেখে উঠে বসতে গেল। কিন্তু ডাম্বলডোর ওর পিঠে হাত রেখে ওকে শুইয়ে দিলেন। উঠতে দিলেন না।

-একজন আমাকে আক্রমণ করেছিল, অস্পষ্ট স্বরে ক্রাম বলল। কোথায় আঘাত করেছে দেখানোর জন্য একটা হাত মাথায় রাখল। ওই বুড়ো পাগলটা আমার মাথায় মেরেছে। পটার কোথায় গেছে দেখছিলাম ঠিক সেই সময় পেছন থেকে মারল।

–আরও একটু শুয়ে থাক, ডাম্বলডোর বললেন।

ওদের কানে এলো ভারি পায়ের চলার থপ থপ শব্দ। দেখল হ্যাগ্রিড হাতে তার ধনুক নিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে আসছেন।

–প্রফেসর ডাম্বলডোর! বড় বড় চোখে হ্যাগ্রিড বললেন। হ্যারি কি ব্যাপার…।

ডাম্বলডোর বললেন–হ্যাগ্রিড আপনি কি অনুগ্রহ করে প্রফেসর কারকারফকে এখানে আসতে বলবেন। ওনার ছাত্রকে আক্রমণ করা হয়েছে, এরপর আপনি দয়া করে প্রফেসর মুডিকে একটু সজাগ করে দেবেন…।

–কোনও প্রয়োজন নেই ডাম্বলডোর। বড় বড় নিশ্বাস ফেলে মুডি বললেন। আমি এসে গেছি। মুডি পা–টেনে টেনে ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। মুডি জাদুদণ্ডও ডাম্বলডোরের মতো প্রজ্জ্বলিত।

–চুলোয় যাক আমার ল্যাংড়া পা! আগে আসতে পারতাম… কী হয়েছে? স্নেইপ আমাকে ক্রাউচ সম্বন্ধে কিছু বলছিলেন।

–ক্রাউচ? হ্যাগ্রিড ভাবালো শূন্য কণ্ঠে বললেন।

–হ্যাগ্রিড অনুগ্রহ করে কারকারফকে খবর দিন।

–হাঁ, হ্যাঁ তাইতো। হ্যাগ্রিড অন্ধকারে বড় বড় গাছের ভেতর দিয়ে চলে গেলেন।

–কে জানে বার্টি ক্রাউচ কোথায় গেলেন। এখন তো আমাদের তাকে খুঁজে বের করা দরকার। ডাম্বলডোর মুডিকে বললেন।

–ও মুডি তার দন্ডের আলো জ্বেলে ঘন অরণ্যের মধ্যে পা টানতে টানতে চলে গেলেন।

হ্যাগ্রিড আর ফ্যাংগ ফিরে না–আসা পর্যন্ত ডাম্বলডোর আর হ্যারি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তাদের একটু দেখলেন কারকারফ হন্তদন্ত হয়ে আসছেন। গায়ে রূপালি ফার, খুব বিন্ন আর উত্তেজিত।

ক্রামকে গাছের তলায় পড়ে থাকতে দেখে বললেন–কী ব্যাপার?… কি সব কাণ্ডকারখানা…!

ক্রাম উঠে বসে বলল–আমায় কেউ পেছন থেকে মাথায় মেরে অজ্ঞান করে দিয়েছিল।… মি. ক্রাউচ, এই রকম নাম হবে।

–ট্রাইউইজার্ড জাজ তোমাকে আক্রমণ করেছিলেন?

–ইগর, ডাম্বলডোর বলতে শুরু করার আগেই কারকারফ তার গায়ের ফারটা ক্রামের গায়ে মুড়ে দিলেন। প্রচণ্ড ক্রুব্ধ কারকারফ।

ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বললেন–আপনি আর আপনার মিনিস্ট্রি বিশ্বাসঘাতক! আপনারা আমাদের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে এখানে আর্নিয়েছেন ডাম্বলডোর! কোনোরকমই এই প্রতিযোগিতাকে সমানে সমানে বা স্বচ্ছ বলা চলে না। প্রথমত: হ্যারি পটার কম বয়স্ক তাও ওকে ঢুকিয়েছেন। এখন দেখছি আপনার মিনিস্ট্রির বন্ধু–আমার চ্যাম্পিয়নকে সু–পরিকল্পিতভাবে বের করে দিতে চাইছে! ডাম্বলডোর আমি অন্যায়ের গন্ধ পাচ্ছি, সমগ্র ব্যাপারটায় দুর্নীতি! আপনি, আপনি ডাম্বলডোর… নানা মিষ্টিকথা বলে সকলকে বিভ্রান্ত করেছেন। আপনার বিবাদ মেটান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভাঁওতা। আপনি নিজেকে কি ভেবেছেন!

কথাগুলো একটানা বলে কারকারফ ডাম্বলডোরের পায়ের কাছে ঘ্যাক করে এক গাদা থুতু ফেললেন। হ্যাগ্রিড এক মুহূর্তে সময় নষ্ট না–করে কারকারফের ফারের কোটের একটা কোন ধরে ওকে তুলে ধরে সামনের গাছের দিকে ছুঁড়লেন।

কারকারফ আঘাত পেয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছেন। হ্যাগ্রিড বললেন–ক্ষমা চান কারকারফ! হ্যাগ্রিড পা দিয়ে চেপে ধরল কারকারফকে। ঘুষি মারত এগিয়ে যেতেই ডাম্বলডোর চিৎকার করে বললেন–না, না হ্যাগ্রিড, খবরদার মেরো না।

হ্যাগ্রিড হাত সরিয়ে নিতেই বড় একটা গাছের ডালের মতো গাছটার তলায় কারকারফ লুটিয়ে পড়লেন। কিছু গাছের পাতা আর শুকনো ছোট ছোট ডাল কারকারফের ওপর খসে পড়ল।

ডাম্বলডোর বললেন–হ্যাগ্রিড আপনি অনুগ্রহ করে হ্যারিকে সঙ্গে নিয়ে ওর ক্যাসেলে দিয়ে আসুন।

হ্যাগ্রিড ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল–আমার এখান থেকে যাওয়াটা ঠিক হবে না, আমি এখানে থাকি হেডমাস্টার।

ডাম্বলডোর আবার বললেন–ওকে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে সঙ্গে করে নিয়ে যান হ্যাগ্রিড।… হ্যারি আমি চাই তুমি সেখানেই থাকবে। কোন কাজ যদি তুমি করতে চাও, প্যাঁচা মারফত চিঠি পাঠাতে চাও–সেগুলো আগামীকাল সকাল পর্যন্ত মূলতুবি রাখবে। কি, আমার কথা বুঝতে পেরেছ?

হ্যারি বলল–হ্যাঁ স্যার। কিন্তু ভেবে পেলেন না এই মুহূর্তে প্রফেসর ডাম্বলডোর কেমন করে বুঝতে পারলেন–ও ঘরে ফিরে পিগউইগ মারফত সিরিয়সকে যা ঘটেছে সেটা সবিস্তারে জানাতে চাইছে।

হ্যাগ্রিড গাছের তলায় হতবাক হয়ে পড়ে থাকা কারকারফের দিকে ঘৃণামিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–হেডমাস্টার, আপনার কাছে ফ্যাংগকে রেখে গেলাম। ফ্যাংগ বেশি ঘেউ ঘেউ করবে না। শুভরাত্রি হেডমাস্টার।

হ্যাগ্রিড হ্যারিকে বলতে গেলে এক রকম বগলদাবা করে নিয়ে গেলেন।

বক্সবেটনের বিরাট ক্যারেজের কাছে পৌঁছে হ্যাগ্রিড বললেন, কারকারফের সাহস তো কম নয়। ও ডাম্বলডোরকে যা মুখে আসে তাই বলল। ডাম্বলডোর নাকি তোমাকে প্রথম করাতে চায়। খুবই চিন্তিত মনে হল। এর আগে আমি কখনও কোনও দিন হেডমাস্টারকে এত চিন্তিত দেখিনি।… আর তুমি..?

হ্যারি, হ্যাগ্রিডের গলার স্বর শুনে ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল।–বলি তুমি ওই দাম্ভিক ছেলেটার সঙ্গে ওখানে কেন এসেছিলে? হ্যারি ও এখানকার নয়, ডারমাংগ থেকে এসেছে হ্যারি। ওকে নিয়ে তো ম্যাগাজিন অভব্য কথা লিখছে। মুডি তোমায় কিছু বলেন নি?

এনট্রেন্স হলের মুখে এসে হ্যারি বলল–হ্যাগ্রিড, ক্রাম খুব ভাল ছেলে। আমাকে ও বিপদে ফেলতে চায়না। ও আমার সঙ্গে হারমিওন সম্বন্ধে নিভৃতে কথা বলতে এসেছিল। |

হ্যাগ্রিড সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে একটু গম্ভীর হয়ে বললেন-এ বিষয়ে আমি হারমিওনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ওই বিদেশীদের সঙ্গে যত কম কথা বলবে তত ভাল। ওদের আমি বিশ্বাস করি না।

হ্যারি বলল–মাদাম ম্যাক্সিম ও তো বিদেশী। তাহলে ওনার সঙ্গে কথা বলেন কেন?

–ওর সম্বন্ধে আমার কাছে কিছু বলবে না, হ্যাগ্রিড বললেন। আমি ওকেও পছন্দ করি না।…

ফ্যাটলেডির কাছে এসে পাশওয়ার্ড বলে হ্যারি কমনরুমে গিয়ে দেখল রন, হারমিওন উদ্বিগ্ন হয়ে বসে রয়েছে।

হ্যারি ওদের যা যা ঘটেছে সব বলল। অবশ্য ডাম্বলডোর আগামী কাল পর্যন্ত চিঠি পাঠানো মুলতুবি রাখতে বলেছেন। ও আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছে না।

সকল অধ্যায়

১. ০১. দ্য রিডল হাউজ
২. ০২. দ্য স্কার
৩. ০৩. ইনভিটেসন
৪. ০৪. ব্যাক টু দ্য বারও
৫. ০৫. উইসলি’র উইজার্ড হুইজেস
৬. ০৬. দ্য পোর্টকি
৭. ০৭. বেগম্যান এবং ক্রাউচ
৮. ০৮. দ্য কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ
৯. ০৯. দ্য ডার্ক মার্ক
১০. ১০. মেহেম অ্যাট দ্য মিনিস্ট্রি
১১. ১১. অ্যাবোর্ড দ্য হোগার্টস এক্সপ্রেস
১২. ১২. দ্য ট্রিউইজার্ড টুর্নামেন্ট
১৩. ১৩. ম্যাড–আই মুডি
১৪. ১৪. আনফরগিভেবল কার্সেস
১৫. ১৫. বক্সবেটন এবং ডার্মস্ট্র্যাংগ
১৬. ১৬. দ্য গবলেট অব ফায়ার
১৭. ১৭. দ্য ফোর চ্যাম্পিয়নস
১৮. ১৮. দ্য ওয়েইং অব দ্য ওয়ান্ডস
১৯. ১৯. দ্য হাংগেরিয়ান হর্নটেল
২০. ২০. দ্য ফার্স্ট টাস্ক
২১. ২১. দ্য হাউজ-এলফ লিবারেশন ফ্রন্ট
২২. ২২. দ্য আনএক্সপেকটেড টাস্ক
২৩. ২৩. ইউল বল
২৪. ২৪. রিটা স্কীটারের স্কুপ
২৫. ২৫. দ্য এগ অ্যান্ড দ্য আই
২৬. ২৬. দ্য সেকেন্ড টাস্ক
২৭. ২৭. প্যাডফুট রিটার্নস
২৮. ২৮. দ্য ম্যাডনেস্ অব মিস্টার ক্রাউচ
২৯. ২৯. দ্য ড্রিম
৩০. ৩০. দ্য পেনসিভ
৩১. ৩১. দি থার্ড টাস্ক
৩২. ৩২. ফ্লেশ, ব্লাড অ্যান্ড বোন
৩৩. ৩৩. দ্য ডেথ ইটারস
৩৪. ৩৪. প্রিওরি ইনক্যানটাটেম
৩৫. ৩৫. ভেরিটাসেরাম
৩৬. ৩৬. দ্য পার্টিং অব দ্য ওয়েজ
৩৭. ৩৭. দ্য বিগিনিং

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন