১৩. ম্যাড–আই মুডি

জে. কে. রাওলিং

১৩. ম্যাড–আই মুডি

সকালে ঝড়–বৃষ্টি থেমেছে। তাহলেও গ্রেট হলে এসে দেখলো তখনও স্কটিক ছাদের উপর আকাশ গভীর কালো মেঘে ঢাকা। ওরা সকালের নাস্তা খেতে খেতে দেখল অদূরে ফ্রেড, জর্জ আর লী জোড়ান তিন মাথা এক করে ফিস ফিস করে আলোচনা করছে। খুব সম্ভব সতের বছরের বেশি তারা কেমন করে হবে, এই নিয়ে ওদের আলাপ। কেমন করে কি করে ওরা ট্রাই–উইজার্ড টুর্নামেন্টে যোগ দেবে।

রন বলল–আজকের দিনটা খুব সুন্দর… বৃষ্টি পড়ছে না, মাঝে মাঝে রোদ উঠছে।… খেতে খেতে টাইম টেবিল দেখতে লাগল।

হারমিওন নরম টোস্টে মনের সুখে মাখন লাগাতে থাকে। রন বলল–আবার তুমি খাচ্ছ। দেখল হারমিওন মাখন ছেড়ে টোস্টে জ্যাম মাখাচ্ছে।

হারমিওন বলল–ভাবছি বেচারা এলফদের জন্য কিছু করা দরকার।

রন হেসে বলল–মনে হচ্ছে তুমি ক্ষুধার্ত।

হঠাৎ অনেকগুলো পাখা ঝাপটার শব্দ শোনা গেল। একটা নয় প্রায় একশটা প্যাঁচা ওর জানালা দিয়ে খাবার ঘরে ঢুকল। ওদের পায়ে চিঠির বান্ডিল। হ্যারি ওদের দিকে এগোল। সবই ধূসর আর বাদামী। একটাও সাদা লক্ষ্মী পেঁচা নেই। পেঁচারা সব টেবিলের চারপাশে ঘুরতে লাগল। খুঁজতে লাগল চিঠি আর প্যাকেটের প্রাপকদের। একটা বিরাট তামাটে পেঁচা প্রায় গোত্তা মেরে নেভিলে লংবটমকে ওর কোলের ওপর একটা প্যাকেট ফেলে দিল। ওধারে ম্যালফয়ের টেবিলে একটা পেঁচা টফি, কেক, মেঠাই-এর প্যাকেট ফেলে দিল। হ্যারির কিছু আসেনি। ওর মনটা বিষণ্ণ হলো। বিষণ্ণতা কাটাতে পরিজ খেতে লাগল। ভাবল হেড উইগের দেখা নেই কেন? তাহলে ওর কী বিপদ–আপদ হয়েছে?

সিরিয়স কী তাহলে ওর চিঠি পায়নি? হরেক রকম–মন আরও বিষণ্ণ হওয়ার মতো যতোসব চিন্তা।

ও প্রফেসর উটের সঙ্গে দল বেঁধে চলল গ্রীন হাউজের দিকে। ওখানে স্প্রাউট ওদের কদাকার গুল্ম দেখালেন। হ্যারি জীবনে কখনও ওই রকম গাছ গাছড়া গুল্ম দেখেনি। খোঁচা খোঁচা হয়ে মাটি থেকে ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। সেই গাছ–গাছড়ায় ছোট ঘোট গোটা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় জলীয় পদার্থে পরিপূর্ণ।

প্রফেসর স্প্রাউট গাছগুলোকে দেখিয়ে বললেন, বুবোটিউবার্স! ওদের গোটা চিপে কষ বের করতে হয়।

–কী বার করতে হয়?

–কষ–দারুণ প্রয়োজনীয়।… অতএব অযথা নষ্ট করবে না। একটা পাত্রে রাখলেন। কষ বের করার সময় হাতে অবশ্যই গ্লাভস পরে নেবে। ড্রাগনের চামড়া দিয়ে বানানো গ্লাভস। হাতে লাগলে অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস মনে হতে পারে। মানে টাটকা কষ। গাঢ় অতরলীকৃত।

কষের রঙ হলুদ। দারুণ পঁচা গন্ধ! ওরা ফল থেকে টিপে টিপে কষ বার করে বোতলে ভরল।… অনেকগুলো পাইট।

প্রফেসর স্প্রাউট বোতল ভর্তি কষ দেখে বললেন, ম্যাডাম পমফ্রে দেখে খুব খুশি হবেন। বোতলগুলোতে খুব সাবধানতার সঙ্গে ছিপি দিলেন।… দূরারোগ্য একনির জন্য ওষুধ বুবোটিউবার্স। মুখের ব্রণেও খুব কাজে লাগে।

হান্না অ্যাবট বলল–তাহলে তো ইলোইজ মিডজেন এটা ব্যবহার করতে পারে। ও হাফপাফের ছাত্রী।

ওরা কাজ করতে করতে গুম গুম ঘণ্টাধ্বণি শুনতে পেল। ক্লাস শেষ হবার সংকেত! বিভিন্ন আবাসের ছাত্র–ছাত্রীরা তাদের গন্তব্যের দিকে ছুটল। হাফলোফ ট্রান্সফিগাবেসনের আর গ্রিফিন্ডর হ্যাগ্রিডের কটেজের দিকে। ঠিক নিষিদ্ধ বনের মুখে হ্যাগ্রিডের কাঠ দিয়ে বানান কটেজ।

হ্যাগ্রিড দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। একহাতে তার কাল বোর হাউন্ড, ফ্যাংগের কলার ধরা। ওর পায়ের কাছে অনেক কাঠের বাক্স পড়ে আছে। ফ্যাংগ ছাড়া পাবার জন্য টানাহেঁচরা করছে। ও বোধহয় খালি বাক্সে কি আছে জানতে চায়। ছেলে–মেয়েদের পদশব্দে হ্যাগ্রিড ওদের দিকে তাকালেন। বালের কাছে আসার পর শুনতে পেল বিস্ফোরণের শব্দ। যেন একটা ছোট বোমা ফাটার শব্দ যেন।

মর্নিং! হ্যাগ্রিড হ্যারি, রন ও হারমিওনের দিকে তাকিয়ে বললেন। হ্যাগ্রিড বললেন বিয়ার চলবে?

রন বলল–আজ নয়।

হ্যাগ্রিড ওদের ঢাকনা খোলা ক্রেটের দিকে আঙ্গুল দেখালেন–ইউরাগ… সকুইলড ল্যাভেন্ডার ব্রাউন, পিছনে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।

ইউরাগ!… কোথায় যেন নামটা শুনেছে হ্যারি। কেমন যেন বিচ্ছিরি দেখতে। অনেকটা গায়ের খোসা ছাড়ান চিংড়ির মতো। দেখলেই গা ঘিন ঘিন করে। প্রতিটি কেটে প্রায় একশটা রয়েছে। ওদের শরীর থেকে পচা মাছের গন্ধ বেরোচ্ছে। প্রতি মিনিট অন্তর ওদের পেছন থেকে জোনাকির মত স্পার্ক দিচ্ছে… ঘোট ঘোট বুদবুদ তৈরি হয়ে শব্দ করে ফেটে যাচ্ছে।

হ্যাগ্রিড বললেন-এদের খুব যত্ন করে রাখতে হয়। ভাবছি, এদের নিয়ে একটা প্রোজেক্ট করলে কেমন হবে।

–কী লাভ হবে? একটা শীতল কণ্ঠ পেছন থেকে বলল।

স্লিদারিনরা তখন এসে গেছে। সকলে পেছনে তাকালেই ম্যালফয়কে দেখতে পেল।

হ্যাগ্রিড সামান্য সময় নীরব থেকে কর্কশ স্বরে বললেন–ম্যালফয় এটা তোমাদের শিক্ষণীয় বিষয়। ওরা দেখতে আকর্ষণীয় নয় বলে ওদের দিয়ে কোনও উপকার হবে না ভাবছ, তা নয়।

রন, হ্যারি, হারমিওন ও আরো অনেককে যারা যারা জানতে ইচ্ছুক তাদের হ্যাগ্রিড অদ্ভুত ক্রিয়েচার সম্বন্ধে বোঝালেন।

তারপর আবার বো বো শব্দের গর্জন। হ্যাগ্রিডের ক্লাশ শেষ হয়েছে।

গুড ডে, হ্যারি চমকে লাফিয়ে উঠলো পেছন থেকে আসা শব্দটি শুনে। ট্রেলাওয়েনের সামনে বসেছিল হ্যারি। পেছনে তাকাতেই সে প্রফেসর ট্রেলাওয়েনকে দেখতে পেল।

ট্রেলাওয়েন রোগা লম্বাটে চেহারা। দৃষ্টিশক্তি কম তাই চোখে মোটা গ্লাসের চশমা পরাতে চোখ দুটো ড্যাবড্যাবে দেখায়। ট্রেলা, হ্যারির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন। যখনই হ্যারি তার সামনে দাঁড়ায় ট্রেলা তার কেমন যেন দুঃখ ভরা দৃষ্টি! দেন হ্যারির দিকে। ট্রেলা সব সময় গলায় মোটা মোটা কাঁচের বলের মত গোল মালা পরেন। গলায় সরু চেন, হতে বালা। সবই সোনার আলো পরলে চকচক করে।

হ্যারিকে ট্রেলা দুঃখ ভরা কণ্ঠে বললেন–মনে হয়, তুমি মনকে সম্পূর্ণভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছ। আমার অন্তরের চোখ দিয়ে সব উপলব্ধি করতে পারি স্নেহের হ্যারি। তোমার সাহসী মুখ, আজ কেন এত বিষ তা আমি বুঝতে পারি। আমি জানি তোমার মনের দুশ্চিন্তা অকারণে নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার সামনে অনেক বিপদের দিন অপেক্ষা করছে।–দুঃখের সঙ্গে বলছি খুবই বিপদের। তবে কোনো বিপদের সম্মুখীন হলেও তোমার কোনো ক্ষতি হবে না, তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।

কথাগুলো বলতে বলতে তার কণ্ঠ আরও বেশি অস্পষ্ট হয়ে গেল… খুবই তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠবে। রন হ্যারির দিকে তাকাল। ওকে দেখে মনে হয় না ট্রেলার ভবিষ্যদ্বাণীতে চিন্তিত। ট্রেলা একটা বড় হাতার আর্ম চেয়ার ফায়ারপ্লেসের কাছে টেনে এনে বসলেন। তারপর ছাত্র–ছাত্রীদের দিকে তাকালেন। লেভেন্ডর ব্রাউন আর পার্বতী প্যাটেল ট্রেলার খুব প্রিয় ছাত্রী। ওরাও ট্রেলার কাছে চেয়ার টেনে নিয়ে হাসি হাসি মুখে বসল।

–আমার প্রিয় ছাত্র–ছাত্রীরা এখন আমাদের বিভিন্ন তারকা গ্রহদের গতিবিধি সম্বন্ধে জানতে হবে। তাদের অশুভ–পূর্বলক্ষণ সম্বন্ধেও বেশি করে জানা দরকার। এটা তারাই বোঝে যারা তাদের গতির গাগনিক নৃত্য সম্বন্ধে জানে। মানুষের ভূত ভবিষ্যৎ তাদের প্রদত্ত রশ্মিতে নিয়ন্ত্রি হয়।

কিন্তু হ্যারি এসব ভাবনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফায়ার প্লেসের সুগন্ধে ওর ঘুম আসছে। প্রফেসর ট্রেলার ভবিষ্যদ্বাণী কখনও তাকে মুগ্ধ করে রাখে না… আবার উড়িয়ে দিতে পারে না। আমার মনে হয়, হ্যারি নিজেকে বলে তুমি যা ভয় পাও তা সত্যি সত্যি ঘটে যেতে পারে।

কিন্তু হারমিওন ঠিক কথা বলে… হ্যারি বড় বেশি চিন্তা করে, প্রফেসর ট্রেলার সব ভবিষ্যদ্বাণী শঠতা ছাড়া আর কিছু নয়। হ্যারি সেই সময় কোনও স্বপ্ন দেখছে না। সিরিয়স ধরা পড়েছে… তা ট্রেলা জানবে কেমন করে? তবে ট্রেলার একটা কথা একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না, গত টার্ম শেষ হবার সময় যখন তিনি ভোল্ডেমর্ট আবার আসতে পারে এমন এক সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন… এবং ডাম্বলডোর নিজেও বলেছেন, যা যা তিনি ভেবেছিলেন তা সত্য হতে পারে… হ্যারিও যখন তাকে বলেছিল…।

হ্যারি! বন আস্তে আস্তে বলল।

–কী…? হ্যারির তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল। সে সোজা হয়ে বসে সকলের দিকে তাকাল।

প্রফেসর ট্রেলা বললেন–আমি নিশ্চিত যে, তুমি শনির অমঙ্গলপূর্ণ প্রভাবে জন্মগ্রহণ করেছ। তার কথার মধ্যে কেমন যেন একটা শঙ্কার ভাব ফুটে উঠেছে।

হ্যারি বলল–শনি গ্রহ প্রভাবে জন্ম! মানে ঠিক বুঝলাম না। শয়তান শনির প্রভাবে।

–আমি বলতে চাচ্ছি তুমি যখন জন্মেছ তখন শনি তুঙ্গে ছিল। তাতে তোমার কালো চুল, তোমার খর্বকায় চেহারা… অকালে দুঃখজনক পরিস্থিতি… সেই দিক দেখে আমি একরকম নিশ্চিত হয়ে এই কথাটা বলতে পারি আমার অতি প্রিয় হ্যারি, তুমি মধ্যশীতে জন্ম গ্রহণ করেছ তাই না?

–না, আমি জুলাই মাসে জন্মগ্রহণ করেছি।

রন হাসি চাপতে গিয়ে খুক খুক করে কাসে।

আধঘণ্টা পর ট্রেলা সকলকে একটা গোলাকৃতি চার্ট দিয়ে বললেন–তোমাদের জন্ম তারিখ এবং সেই গ্রহের অবস্থা চার্টে পরিষ্কারভাবে লেখ। কাজটা একদম নিরস, অনেক হিসাব করতে হয়, টাইম টেবিল প্রয়োজন।

–আমি দুটি নেপচুন পেয়েছি… ট্রেলারের দেওয়া পার্চমেন্টের দিকে তাকিয়ে হ্যারি বলল।

–আ… আ… আহ, রন প্রফেসর ট্রেলার অস্পষ্ট কথা বলার ভঙ্গি নকল করে।

ল্যাভেন্ডার ব্রাউন বলল–ওহ্ প্রফেসর, দেখুন… আমার জন্মের প্রভাব এক অদ্ভুত গ্রহের প্রভাবে! এই গ্রহটা কী প্রফেসর?

–উরেনাস। প্রফেসর ট্রেলার চার্টটা দেখে বললেন।

রন মহামাতব্বর। সব সময় ফাজলামী করে। বলল–লেভেন্ডার তোমার ওই উরানাস গ্রহের অবস্থান কি দেখতে পারি?

দুর্ভাগ্যক্রমে ট্রেলা রনের কথা শুনতে পেলেন।… আর এজন্যই বোধ হয় ক্লাসের ছাত্র–ছাত্রীদের অনেক হোমওয়ার্ক দিলেন।

হারমিওন বলল-এত হোমওয়ার্ক? প্রফেসর ভেক্টর কখনো এত হোম ওয়ার্ক দিতেন না।

ক্লাশ শেষ হলে সকলে ডিনার খাবার জন্য লাইনে দাঁড়াল। হ্যারি, রন, হারমিওন সকলের পেছনে যেয়ে দাঁড়াল। এমন সময় কে যেন উচ্চস্বরে ডাকল উইসলি… আরে উইসলি! ওরা তিনজনে তাকাল।

দেখল ম্যালফয় ক্রাব আর গোয়েলে লাইনে দাঁড়িয়ে। ওদের মুখ দেখে মনে হয় ওরা খুব খুশি।

রন বলল–হ্যাঁ বল। খুবই সংক্ষিপ্ত জবাব।

ডেইলি প্রফেট কি লিখেছে দেখ বলে ম্যালফয় জোরে জোরে পড়তে লাগল।

ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে আবারো ভুল
রিটা স্কীটার, বিশেষ সংবাদদাতা জানাচ্ছেন–মনে হয় ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের সমস্যা এখনও দূরীভূত হয়নি। সম্প্রতি কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপে সঠিকভাবে জনতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য ম্যাজিক মন্ত্রণালয় আবারো তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন। মন্ত্রণালয়ের এক জাদুকারিনীর নিখোঁজ হওয়ার বেশ কয়েকদিন পার হলেও তার সন্ধান দিতে না পারায় আর্নল্ড উইসলি গংরা তোপের মুখে পড়েছেন।

ম্যালফয় মুখ তুলে সকলের দিকে তাকাল।

এনট্রেন্স হলে সকলে শুনছে ও কি পড়ছে। ম্যালফয় বাকি অংশটা পড়ল—

দু বছর পূর্বে আর্নল্ড উইসলি উড়ন্ত গাড়ি কাছে রাখার অপরাধে অভিযুক্ত হন এবং গতকাল কতগুলো নোংরা ডাস্টবিনস রাখার জন্য মাগল পুলিশের সঙ্গে তার বচসা হয়। জানা যায় যে, মি. উইসলি ম্যাডআই মুডিকে সাহায্য করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ অরোর মন্ত্রণালয়ের কাজ থেকে অব্যাহতি পান যখন খুনের অভিপ্রায় ও করমর্দনের মধ্যে পার্থক্য কতখানি তা বলার মতো জ্ঞান যখন ছিল না। আশ্চর্যজনকভাবে উইসলিকে তার সুরক্ষিত বাড়িতে বাড়িতে গেলে তিনি দেখতে পান মুডি আবারো বিপদ ঘন্টা বাজিয়েছেন। মি. উইসলি পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নানাবিধভাবে মুডির সঙ্গে তার পরিচয় ও আলাপের প্রসঙ্গ আনেন। কিন্তু ডেইলি প্রফেটকে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তিনি কেন ম্যাজিক মন্ত্রণালয়কে ঐদিন এই অমর্যাদাকর কাজে ব্যবহার করেছিলেন।

ম্যালফয় একটা প্রায় ভাঙা বাড়ির ফটো দেখিয়ে বলল-এটা যদি বাসস্থান বলা হয়, তাহলে কী মানুষের উপযোগী বাসস্থান? তোমার বাবা-মায়ের একটি ছবিও রয়েছে দেখছি।

রন রাগে ঠক ঠক করে কাঁপছে, সকলে ওরদিকে তাকিয়ে আছে।

হ্যারি বলল–ম্যালফয় সংযত হয়ে কথা বল।… এস রন–ও ভুলেই গেছি, এবার গরম কালে তুমি তো ওদের বাড়িতে ছিলে, তাই না পটার? ম্যালফয় নাক সিঁটকাল-এবার বল মহিলা সত্যিই কি ওর মা, না এমনি একটা ছবি? বলত, ওর মা কী শুয়রের মত মোটা না ছবিতে ওই রকম উঠেছে?

হ্যারি বলল–তুমি তো তোমার মাকে চেন ম্যালফয়? ওদিকে হারমিওন ও হ্যারি রনকে চেপে ধরে রেখেছে। না হলে রন লাফিয়ে ম্যালফয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছিলো প্রায়।

–গোবরের মত মুখ যেমন নাকও তেমন। ম্যালফয় তোমার নাকের গোবরছাপটি কী তোমার মায়ের সূত্রে পেয়েছে?

ম্যালফয়ের বিবর্ণ মুখ আরও বিবর্ণ হয়ে গেল। বলল–পটার তুমি আমার মাকে অপমান করবে না।

হ্যারি বলল–তাহলে তুমি তোমার হাঁড়ির মত মুখটা বন্ধ করে রাখ।

ব্যাংগ। তীব্র শব্দ।

অনেকেই চিৎকার জুড়ে দিল। হ্যারি ওর গালের এক পাশে সাদা গরম কিছু অনুভব করল। তৎক্ষণাৎ ও রোবের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে জাদুদণ্ডটা বার করতে যাবে তখনই আবার সেই তীব্র শব্দ ব্যাংগ! তারই সঙ্গে প্রতিধ্বনি! সমগ্র হলটা কাঁপিয়ে দিল শব্দ ও তার ভয়ঙ্কর প্রতিধ্বনিতে।

ও না। এ কাজ করবে না মেয়ে?

হ্যারি ফিরে তাকাল। দেখল প্রফেসর মুডি খোঁড়াতে খোঁড়াতে এনট্রেন্স হলের করিডোর ধরে আসছেন। তার হাতে জাদুদণ্ড ও সেটা একটা সাদা জিনিসের দিকে তাক করে রয়েছে।…. সেই সাদা প্রাণীটি মাটিতে পড়ে কাঁপছে… ঠিক ম্যালফয় সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেই খানে।

এনট্রেন্স হল নীরব, কারও মুখে একটি শব্দ নেই। কিন্তু মুডি বড় অশান্ত। কিছু করা দরকার মুখের ভাবে প্রকট।… মুডি হ্যারির দিকে তাকালেন–অস্বাভাবিক নয়, স্বাভাবিক চোখটা দিয়ে তাকালেন, অস্বাভাবিক চোখের দৃষ্টি মাথার পিছন দিয়ে।

–তোমাকে কি আঘাত হানতে পেরেছিল, হ্যারি। তার গলার স্বর গম্ভীর হলেও গর্জনের মত।

–না, হ্যারি বলল–হানতে পারিনি।

–তাহলে ছেড়ে দাও, মুডি চিৎকার করে বললেন।

–হ্যারি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বলল–ছাড়ব–কি?

–তুমি না, ওই ছেলেটাকে! মুডি ওর একটা হাত ক্রাবের কাঁধে রাখলেন। ওর দেহ হিম হয়ে গেছে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা অদ্ভুত সাদা জিনিসটা তুলতে গিয়ে পারলো না।

মুডি একটু একটু করে ক্লাবকে ছেড়ে সামনের ঐ সাদা প্রাণীটির দিকে এগুলেন। সাদা প্রাণীটি হঠাৎ অসম্ভব চীৎকার করে উঠল… তারপর ডানগিয়নের দিকে এগোতে লাগলো।

–আমি তা মনে করি না! মুডি গর্জন করে উঠল। আবার ওর দণ্ডটা সাদা বস্তুটার ওপর ছোঁয়াল। ছোঁয়াবার সাথে সাথে ওটা প্রায় সাত ফুট উঁচুতে লাফ দিয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে গেল। তারপর ধেই ধেই করে উঠতে ও নামতে লাগল। আমি সেসব লোকদের পছন্দ করি না, যারা পেছন থেকে আক্রমণ করে, মুডি প্রতিটি শব্দ থেমে থেমে বললেন। তখন সাদা প্রাণীটি লাফাচ্ছিল। মুডি আবার সাবধান করলেন, আর কখনো… কখনো এ কাজ করবে না।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ধীরে–সুস্থে আসছেন। বগলে তার এক গাদা বই।

মুডি শান্তভাবে হাত প্রসারিত করে বললেন–হ্যালো প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

–কী নিয়ে ব্যস্ত মুডি? প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন…. বলার সময় চোখে পড়ল নাচন কুঁদন সাদা প্রাণীটির প্রতি।

–শিক্ষা দান করছি, মুডি বললেন

–শিক্ষা? মুডি ওটা কী আপনার ছাত্র?

ম্যাকগোনাগলের হাত থেকে বইগুলো পড়ে গেল।

–হা, মুডি বললেন।

–না! প্রফেসর ম্যাকগোনাগল চিৎকার করে উঠলেন। দৌড়ে গেলেন সিঁড়ি পর্যন্ত। তার পর মুহূর্তে নিজের জাদুদণ্ডটা বার করলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিকট এক শব্দ হতেই দেখা গেল ড্র্যাকো ম্যালফয় ভূলুষ্ঠিত হয়ে পড়ে রয়েছে… ওর মাথার এক ঝাঁক চুল ছড়িয়ে রয়েছে ওর গোলাপি মুখের ওপর। তারপর কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়াল।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন–মুডি শাস্তি দিতে গিয়ে কখনই আমরা চেহারা পাল্টে দেই না… নিশ্চয়ই তোমাকে ডাম্বলডোর বলেছেন?

–মনে নেই, বলতে পারেন, মুডি গাল চুলকোতে চুলকোতে বলল। তবে ও যা অপরাধ করেছে তার জন্য শাস্তির প্রয়োজন ছিল।

–মুডি, আমরা ছুটির পর আটক করে রেখে শাস্তি দেই। অথবা হাউজের প্রধানকে অপরাধের ব্যাপারটা জানাই।

–ঠিক আছে, এরপরে আপনারা তাই করবেন, মুডি কথাটা বলে ঘৃণা ভরে ম্যালফয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

ম্যালফয় অশ্রুভরা দুই চোখে তাকিয়ে রইল। অপমানে, যন্ত্রণায় ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। বিড় বিড় করে কিছু বলতে চাইল, কিন্তু বলতে পারলো না। শুধু শোনা গেল আমার বাবা।

মুডি ওর কাঠের এক পা নিয়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে চললেন। পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হল।–ভাল, ভাল তাই বলে তোমার বাবাকে। আমি তোমার বাবাকে তো জানি। তুমি তোমার বাবাকে ব্যাপারটা বলবে, অবশ্যই বলবে।

বলবে তোমার বাবাকে এই সম্বন্ধে। আমার মুখ থেকে শোনো–তোমাদের হেড অফ দি হাউজ হবে স্নেইপ।

–হ্যাঁ। ম্যালফয় একটু বিকৃত স্বরে বলল

–আরও একটি পুরনো বন্ধু, মুডি হুংকার দিয়ে বলল–আমি তার সঙ্গে কথা বলব। মুডি ওর ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে গেল ভূগর্ভস্থ অন্ধকার এক ঘরের দিকে।

রন অসম্ভব অসম্মানিত ও ভীষণ রেগে আছে।

হ্যারি–হারমিওন ওর দিকে তাকালে রন বলল–আমার সঙ্গে তোমরা কথা বলবে না বলে দিলাম।

তারপর ওরা গ্রিফিন্ডরের টেবিলে বসলে বন্ধু–বান্ধবরা ওকে হেঁকে ধরল আসল ব্যাপারটা জানার জন্য।

–কেন নয়? হারমিওন একটু আশ্চর্য হয়ে বলল।

–আজকের অপমান আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনে রাখব! রন বলল… ড্র্যাকো ম্যালফয়, নোংরা, কুৎসিত পোকা।

ওর কথা শুনে হ্যারি, হারমিওন দুজনেই হেসে উঠল।

 হারমিওন বলল, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল না এলে ও ব্যাটা অক্কা পেত।

–হারমিওন! রন অসম্ভব রেগে বলল–তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করে দিচ্ছ!

দুএকটা কথা বলার পর হারমিওন ওর খাওয়া শেষ করে ঘর থেকে চলে গেল।

হারমিওন চলে গেলে ফ্রেড উইসলি বলল–মুডী কত শান্ত দেখলে?

জর্জ বলল-একটু বেশি।

জর্জের পাশে লী জোর্ডান বসেছিল–বলল–সুপার কুল। আজ আমরা তার সঙ্গে কথা বলব… উনি মানুষ চেনেন।

রন একটু ঝুঁকে পড়ে বলল–কী চেনেন?

–জানেন কখন কি করতে হয়।

–কি করতে হয় মানে? হ্যারি বলল।

–ডার্ক আর্টের সঙ্গে মোকাবিলা, ফ্রেড বলল।

রন ওর টাইম টেবিল খুঁজতে খুঁজতে বলল–বৃহস্পতিবারের আগে তো ওকে পাওয়া যাবে না। ওর গলায় হতাশার সুর।

সকল অধ্যায়

১. ০১. দ্য রিডল হাউজ
২. ০২. দ্য স্কার
৩. ০৩. ইনভিটেসন
৪. ০৪. ব্যাক টু দ্য বারও
৫. ০৫. উইসলি’র উইজার্ড হুইজেস
৬. ০৬. দ্য পোর্টকি
৭. ০৭. বেগম্যান এবং ক্রাউচ
৮. ০৮. দ্য কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ
৯. ০৯. দ্য ডার্ক মার্ক
১০. ১০. মেহেম অ্যাট দ্য মিনিস্ট্রি
১১. ১১. অ্যাবোর্ড দ্য হোগার্টস এক্সপ্রেস
১২. ১২. দ্য ট্রিউইজার্ড টুর্নামেন্ট
১৩. ১৩. ম্যাড–আই মুডি
১৪. ১৪. আনফরগিভেবল কার্সেস
১৫. ১৫. বক্সবেটন এবং ডার্মস্ট্র্যাংগ
১৬. ১৬. দ্য গবলেট অব ফায়ার
১৭. ১৭. দ্য ফোর চ্যাম্পিয়নস
১৮. ১৮. দ্য ওয়েইং অব দ্য ওয়ান্ডস
১৯. ১৯. দ্য হাংগেরিয়ান হর্নটেল
২০. ২০. দ্য ফার্স্ট টাস্ক
২১. ২১. দ্য হাউজ-এলফ লিবারেশন ফ্রন্ট
২২. ২২. দ্য আনএক্সপেকটেড টাস্ক
২৩. ২৩. ইউল বল
২৪. ২৪. রিটা স্কীটারের স্কুপ
২৫. ২৫. দ্য এগ অ্যান্ড দ্য আই
২৬. ২৬. দ্য সেকেন্ড টাস্ক
২৭. ২৭. প্যাডফুট রিটার্নস
২৮. ২৮. দ্য ম্যাডনেস্ অব মিস্টার ক্রাউচ
২৯. ২৯. দ্য ড্রিম
৩০. ৩০. দ্য পেনসিভ
৩১. ৩১. দি থার্ড টাস্ক
৩২. ৩২. ফ্লেশ, ব্লাড অ্যান্ড বোন
৩৩. ৩৩. দ্য ডেথ ইটারস
৩৪. ৩৪. প্রিওরি ইনক্যানটাটেম
৩৫. ৩৫. ভেরিটাসেরাম
৩৬. ৩৬. দ্য পার্টিং অব দ্য ওয়েজ
৩৭. ৩৭. দ্য বিগিনিং

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন