১৬. দ্য গবলেট অব ফায়ার

জে. কে. রাওলিং

১৬. দ্য গবলেট অব ফায়ার

আমি বিশ্বাস করি না! রন বলল। গলার স্বর ওর অবিশ্বাসের। হোগার্টের ছাত্র ছাত্রীরা ডারমস্ট্রংগের ছাত্র–ছাত্রীদের পেছনে দাঁড়াল। ক্রাম, সত্যিই ভিক্টর ক্রাম।

হারমিওন বলল–ও একজন কিডি প্লেয়ার। রন তুমি এইটুকু শুধু জেনো।

রন যে কথাগুলো শুনল যেন সত্যিই নয়। ও হারমিওনের দিকে তাকাল হারমিওন তুমি কী জান, পৃথিবীর মধ্যে ও একজন সবচেয়ে ভাল সীকার। আমার কোনও আইডিয়া নেই ও এখনও স্কুলে পড়ে।

একদল হোগার্ট স্কুলের ছাত্রদের পিছু পিছু তারা এনট্রেন্স হল যখন অতিক্রম করে গ্রেট হলের দিকে যাচ্ছিলো হ্যারি দেখল লী জোর্ডান লাফালাফি করছে ক্রামকে দেখার জন্য। কয়েকজন সিক্সথ ইয়ারের ছাত্রী পাগলের মত তাদের পকেটে কিছু খুঁজছে–না না আমি বিশ্বাস করি না, ইস আমার কাছে একটা কলম নেই…। তোমরা কি জান ও একবার আমার হ্যাটে লিপস্টিক দিয়ে সই করেছিল?

মেয়েগুলো হারমিওনের পাশ দিয়ে যাবার সময় বলল–সত্যি! এখন তাহলে লিপস্টিক নিয়ে ঝগড়া কর।

রন বলল–আমি ওর অটোগ্রাফ আনতে পারি, তোমার কাছে কলম আছে হ্যারি?

হ্যারি বলল–না, ওপরে আমার ব্যাগে আছে।

ওরা গ্রিফিন্ডর টেবিলের কাছে গিয়ে বসল। রন এমন একটা জায়গায় বসল যেখান থেকে ক্রাম আর ডারমস্ট্রংগ থেকে যেসব ছেলেরা এসেছে তাদের ভালভাবে দেখতে পায়। কিন্তু দেখলে কি হবে, ওদের বসার কোথায় জায়গা করা হয়েছে জানে না। বক্সটেন থেকে যারা এসেছে তারা র‍্যাভেনর পাশে বসেছে। ওরা অবাক হয়ে গ্রেট হল দেখছে। ওদের মধ্যে তিনজন তখনও মাথায় স্কার্ফ আর শাল চাপিয়ে রেখেছে।

হারমিওন ওদের লক্ষ্য করছিল। বলল-এমন কিছু ঠাণ্ডা নয়, আশ্চর্য আসার সময় ঠাণ্ডা এড়ানোর জন্য ওভারকোট নিয়ে আসলেই তো পারত?

রন হিস হিস করে বলল-এদিকে এস, হারমিওন একটা বসার জায়গা করে দাও।

–কী বললে? রন তিক্ততার সঙ্গে বলল–অনেক দেরি হয়ে গেছে।

ভিক্টর ক্রাম আর তার বন্ধুরা (ডারস্ট্রাংগ) স্লিদারিন গ্রুপের পাশে বসেছে। হ্যারি দেখল ম্যালফয় ক্যারি আর গোয়েল, ভিক্টর কামরা ওদের পাশে বসার জন্য যেন গর্বে ফেটে পড়ছে। আরও দেখল ম্যালফয় একটু এগিয়ে গেল ক্রামের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

রন মুখ বেঁকিয়ে বলল–ওহ্ ঠিক আছে, ঠিক আছে ওকে তেল মারো। আমি বাজি ধরতে পারি ক্রাম ওর মতলব ঠিক ধরে ফেলবে। ও জানে লোকেরা সব সময় ওকে ঘিরে রাখে… কিন্তু ওদের থাকার কোথায় ব্যবস্থা করা হয়েছে জান? হ্যারি, আমরা তো ওকে আমাদের ডরমেটরিতে শুতে অনুরোধ করতে পারি? আমার রেডটা ওকে দিতে একটুও আপত্তি নেই। আমি একটা ক্যাম্প–খাটে শুতে পারি।

কথাটা শুনে হারমিওন ব্যাঙ্গ করল।

হ্যারি বলল–ওদের দেখে মনে হয় বকস বেটনদের চেয়ে ওরা খুশি।

ডারামস্ট্র্যাংগের ছেলেরা তখন গায়ে ফারকোট খুলে ফেলে তন্ময় হয়ে হলের কালো সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। সবকিছু খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। দুএকজন তো সোনার থালা আর গবলেট হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

ওরা স্টাফ টেবিলের দিকে তাকাল। দেখল ডাম্বলডোরের পাশে তিনটে চেয়ার কেয়ারটেকার এনে রাখল।… ডাম্বলডোরের পাশে তিনজন কে বসবে?

রনের সেদিকে খেয়াল নেই। ও তখনও ক্রামের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে।

দেখতে দেখতে গ্রেটহল পূর্ণ হয়ে গেল। সকলে যে যার সিটে বসলে ডাম্বলডোর, কারকারফ ও মাদাম ম্যাকসিম বসলেন। বক্সটেনের প্রধান শিক্ষিকা ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীরা উঠে দাঁড়াল। দুএকজন হোগার্ট স্কুলের ছাত্ররা হেসে উঠল। তাই ওরা একটু হকচকিয়ে গেল। মাদাম ম্যাকসিম না বসা পর্যন্ত ওরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। উনি ডাম্বলডোরের বাঁ পাশে বসলেন। ডাম্বলডোর তখনও দাঁড়িয়ে।… সারা গ্রেট হল তখন নীরব নিস্তব্ধ।

সমবেত মহোদয়, মহিলা, ভূত এবং বিশেষ করে অতিথিবৃন্দ, ডালডোর কথাটা বলে বহিরাগত ছাত্র–ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বললেন–হোগার্টে আপনাদের উপস্থিতির জন্য আমাদের স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীরা শুধু আনন্দিত নয়, অতিশয় গর্বিত। আমি স্কুলের তরফ থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশাকরি ও বিশ্বাস করি হোগার্টে থাকার দিনগুলো আনন্দ–উৎসাহে ভরে উঠবে।

বোজটেনের, মাথায় মাফলার বাধা একটি মেয়ে অদ্ভুতভাবে হেসে উঠল। হাসিটা তাচ্ছিল্যের সন্দেহ নেই।

হারমিওন মেয়েটির দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চাপা গলায় বলল–কেউই তো তোমাকে এখানে জোর করে বসিয়ে রাখেনি। চলে গেলেই তো পার।

ডাম্বলডোর একটু থেমে বললেন–ফিস্টের পর টুর্নামেন্ট অফিসিয়ালি শুরুর বিষয় ঘোষিত হবে, আমি এখন সকলকে ভোজের নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা খাওয়া–দাওয়া করন, আনন্দ করন। কোনও রকম বিধিনিষেধ নেই।

কথাগুলো বলে ডাম্বলডোর বসতেই হ্যারি দেখল কারকারফ ডাম্বলডোরের সঙ্গে গভীর আলোচনায় লিপ্ত হলেন।

প্রচুর খাদ্যসামগ্রী। এর আগে হ্যারির কোনদিনও চোখে পড়েনি। হাউজ এলফরা মুখ বুজে তাদের কাজ করে যেতে লাগল। প্রচুর দেশী–বিদেশী খাবার, পানীয়।

ডিস থেকে খাবার মুখে দেবার আগে এত খাবার হ্যারি নাম জেনে নিতে লাগল হারমিওনের কাছে। হারমিওন যতটা জানে ওকে বলে যেতে লাগল।

ভোজন পর্ব শেষ হলে ডাম্বলডোর আবার উঠে দাঁড়ালেন। সমস্ত হলটা একটা নতুন কিছু শোনার প্রতীক্ষা করতে লাগল। টেনসন সন্দেহ নেই। হ্যারি শোনার জন্য দারুণ উত্তেজনায় ছটফট করতে লাগল। জীবনে নতুন এক অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছে ও। অদূরে ফ্রেড জর্জ বসেছিল। ওরা ঝুঁকে পড়ে ডাম্বলডোরের প্রশান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল দারুণ মনোযোগের সঙ্গে।

–সেই প্রতিক্ষিত শুভ সময়টি এসেছে, ডাম্বলডোর অগণিত চেনা–অচেনা মুখের দিকে হাসিহাসি মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন–কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাই ইউজার্ড টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। ছোট কৌটাটি (কাসকেট) আনার আগে আমি কিছু বলতে চাই

–কী বলতে চান? হ্যারি বলল।

রন না জানার ভঙ্গিতে কাঁধ নাচাল।

–ব্যাপারটা… পদ্ধতি… মানে এই বছরে কি মেনে চলব তারই কার্য প্রণালী সম্বন্ধে। কিন্তু প্রথমত কিছু ব্যক্তিদের সঙ্গে আপনার পরিচয় করে দিতে চাই, মি. বাৰ্টিমিয়স ক্রাউচ হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক্যাল কো অপারেশন, কলরব শোনা গেল এবং মি. লুডো হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাজিক্যাল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস। বেগম্যানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর করতালি একটু বেশি হল মনে হয়। হয়ত তিনি বিটার হিসেবে সকলে জানে অথবা সুন্দর চেহারার অধিকারী বলে। উনি হাত তুলে সকলের ভালবাসা গ্রহণ করলেন। কিন্তু ক্রাউচ তার নাম ঘোষণার পর হাসলেন না বা হাত তুললেন না। কিডিচ ম্যাচ দেখার সময় ক্রাউচকে জাদুকরের পোশাক পরা দেখে হ্যারির কেমন যেন অদ্ভুত মনে হয়েছিল। ডাম্বলডোরের শুভ্র দাড়ি–গোঁফের কাছে ক্লাউচের টুথ ব্রাশের মত গোঁফ সম্পূর্ণ বেমানান! হ্যারির চোখে অদ্ভুত লাগল।

মি. বেগম্যান আর মি. ক্রাউচ ট্রাই–উইজার্ড টুর্নামেন্টের ব্যবস্থার জন্য গত কয়েকমাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।… প্রফেসর কারকারফ ও মাদাম ম্যাক্সিম প্যানেল অব জাজেস থাকছেন অবশ্য আমিও আছি। আমরা চ্যাম্পিয়ন প্রচেষ্টা বিচার করব।

চ্যাম্পিয়ন শব্দটা উল্লেখ করার সাথে সাথে ছাত্রদের একাগ্রতা আরও তীক্ষ্ম হয়ে উঠল। খুব সম্ভব ওদের মধ্যে একটু যেন সক্রিয়তা অনুভব করলেন, তাই হেসে বললেন–মি. ফ্লিচ অনুগ্রহ করে কৌটাটি…।

ফ্লিচ সভাগৃহের একান্তে সকলের দৃষ্টির অন্তরালে বসেছিলেন, ডাম্বলডোরের কথা শুনে হাতে একটা বড় কাঠের সিন্দুক নিয়ে ডাম্বলডোরের কাছে এলেন। সিন্দুকটার গায়ে মণিমুক্তার কাজ করা। দেখলেই মনে হয় বহু পুরনো দিনের। যেসব ছাত্ররা বসেছিল তাদের ওটা দেখার সাথে সাথে উত্তেজনা বেড়ে গেল। ডেনিস ক্রিভে সিন্দুকটা দেখার জন্য যে চেয়ারটায় বসেছিল তার ওপর দাঁড়াল। কিন্তু বেঁটে হওয়ার জন্য কিছুই দেখতে পেল না। মি. ক্রাউচ আর মি. বেগম্যান চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে কি করতে হবে না করতে হবে তা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা করেছেন। ফ্লিচ সিন্দুকটা অতি সাবধানে টেবিলে রাখার সময় ডাম্বলডোর বললেন।… শুধু তাই নয়–প্রতিটি প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করেছেন। তিনটি করণীয় কাজ যারা স্কুল বছরে ভাগে ভাগে দেওয়া হবে। এবং তারা চ্যাম্পিয়নদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করবেন। যেমন তাদের জাদুবিদ্যা সম্বন্ধীয় সাহস–নির্ভীকতা–সিদ্ধান্ত নেবার মানসিকতা… এবং অবশ্যই তাদের সম্মুখ বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করবার দূর্বার সাহস ও ক্ষমতা। কথাগুলো শোনার পর ছাত্রদের গুঞ্জন শুধু শেষ হলো না সমগ্র সভাগৃহ হেঁয়ে গেল নীরবতায়। এত বেশি নীরবতা যে, কারও শ্বাস পড়ছে না।

ডাম্বলডোর বলে চললেন–টুর্নামেন্টে জয়ী হতে শুধু তিনজন চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার আসরে থাকবে। একজন করে প্রতিটি পার্টিসিপেটিং স্কুলের। তারা নির্বাচিত হবে তাদের কাছে দেয়া কাজের সাফল্যের ওপর। বলাবাহুল্য যে বেশি নম্বর পাবে। সেই তিনজনের মধ্যে একজন প্রথম হয়ে ট্রাই উইজার্ড কাপ পাবে। বিচার করবেন একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি। কাপ হচ্ছে দ্য গবলেট অব ফায়ার।

ডাম্বলডোর তারপর নিজের জাদুদণ্ড বার করে সেই সিন্দুকের ঢাকনায় তিনবার ছোঁয়াতেই ঢাকনা ক্ল্যাক শব্দ করে ধীরে ধীরে খুলে গেল। ডাম্বলডোর মুখ নামিয়ে তার ভেতরে হাত পুরে একটা কাঠের তৈরি কাপ বার করলেন। অদ্ভুত সেই কাপ! এদো খেদো অমসৃণভাবে তৈরি। কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত কিছু নয়। অদ্ভুত সেই গবলেট (কাপ)! তার ভেতর থেকে নীল সাদা অগ্নিশিখা ধ্বক ধ্বক করে বেরোচ্ছে কানা পর্যন্ত। কখনও বেশি কখনও কম।

ডাম্বলডোর তারপর সিন্দুকের মুখটা বন্ধ করে তার ওপরে গবলেট (যেটাকে কাপ বলা হচ্ছে)টা অতি সাবধানে রাখলেন। এমনভাবে রাখলেন যাতে সকলে দেখতে পায়।

–স্কুলের ছাত্ররা তোমাদের মধ্যে যারা চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় নাম দিতে চাও তাহলে তারা তাদের নাম, স্কুল একটা পার্টমেন্টে পরিষ্কারভাবে লিখে গবলেটে ফেলে দেবে… চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে। আগামীকাল রাতে হ্যালোইন–গবলেট তিনজন, যারা তাদের স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য বিবেচিত হবে তাদের নাম জানিয়ে দেবে।

গবলেট আজ রাতে এনট্রেন্স হলে রাখা হবে। সেখানে কারও যেতে বাধা থাকবে না। বিশেষ করে যারা প্রতিযোগিতা করতে চাও।

–দেখতে হবে কোনও নির্ধারিত বয়সের কম বয়সের ছাত্ররা যেন লোভের বশবর্তি হয়ে নাম না দেয়, ডাম্বলডোর বললেন–আমি গবলেটের চারপাশে বয়সসীমার লাইন টেনে দেব। দেখতে হবে সতের বছরের কম বয়সের কেউ যেন সেই লাইনের ভেতরে ঢুকতে না পারে।

–সব শেষে বলতে চাই… যারা প্রতিযোগিতায় নাম দিতে চাও তারা যেন এলে বেলে মনে না কর, গবলেট অব ফায়ার একবার যাকে চ্যাম্পিয়ন সিলেক্ট করবে তাকে গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে থাকতে হবে। গবলেট নাম দাখিল করা বলতে পার এক প্রকার জাদুর চুক্তি। একবার তুমি নির্বাচিত হলে মত পরিবর্তন করতে পারবে না। অতএব গবলেটে নাম দেবার আগে ভেবেচিন্তে দেবে। নাম দেবার আগে চিন্তা করবে, মানে খেলার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এখন অনেক রাত হল–শোবার সময় হয়েছে… শুভরাত্রি সকলকে।

এনট্রেন্স হলের দিকে যেতে যেতে ফ্রেড বলল–ঠিক আছে, এজিং পোসান ব্যবহার করে সকলকে বোকা বানাবো। তাই না? আরে তুমি হাসছ?–গবলেট কিছুতেই তোমার বয়স সতের নয় ধরতে পারবে না।

হারমিওন বলল–তুমি যতই চেষ্টা কর গবলেট অব ফায়ার তোমার বয়স ধরে ফেলবেই ফেলবে। কোনও আশা নেই।

জর্জ বলল–আরে হ্যারি তুমি চেষ্টা কর… দেখবে তুমি সিলেকট হয়ে গেছ।

হ্যারির মাথায় এখন দুটো চিন্তা। এক সতের বছরের কম ছেলে–মেয়ে গবলেট অব ফায়ারে নাম দেবে না, দুই : ও টুর্নামেন্টে কাপ পেয়েছে তারই বর্ণাঢ্য স্বপ্ন! আবার ভাবল–ডাম্বলডোর যদি জানতে পারেন সতের বছরের কম বয়সের কোনও ছেলে–মেয়ে এজলাইন পেরিয়ে নাম দাখিল করে ফাঁকতালে নির্বাচিত হয়েছে। তাহলে কী হবে? হ্যারি ভয়ে কুঁচকে গেল।

রনের নাম দেবার কোনও ইচ্ছে নেই। ওর মাথায় ঘুরছে শুধু ক্রাম। কাম গেল কোথায়? রন বলল–ডাম্বলডোর তো বলেননি ডামাংগ ছেলেদের কোথায় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বলেছেন কী? রনের মনে দারুণ অস্থিরতা।

ওর প্রশ্নের জবাবে পেয়ে গেল। ওরা তো স্লিদারিন টেবিলে জটলা করছে। ওদিকে কারকারফ তার স্কুলের ছেলেদের শুতে যাবার জন্য তাড়া দিচ্ছেন।

–যাও তোমরা সব জাহাজে গিয়ে শুয়ে পড়। ভিক্টর এখন তোমার শরীর কেমন? ঠিকমত খেয়েছ তো? কিচেনকে বলে দেব তোমাকে মাফলড ওয়াইন পাঠাতে? কারকারফ বললেন।

রন লক্ষ্য করল ক্রাম ওর ফারকোট পরতে পরতে মাথা নাড়ল।

–প্রফেসর আমার জন্য একটু ওয়াইন পাওয়া যাবে না? ওদের স্কুলের অন্য একটি ছেলে বলল।

–আমি তো তোমায় জিজ্ঞেস করছি না পোলিয়াকফ, কারকারফ বললেন কথা বলার সময় বাবার স্নেহ কোথায় ভেসে গেল।–আমি দেখেছি তুমি আলখেল্লার সামনে দিয়ে আবার খাবার ফেলে দিয়েছ। সত্যি তুমি… লজ্জাজনক ব্যবহার করেছ। অতি অভদ্র ছেলে!

কথাটা বলে প্রফেসর কারকারফ তার স্কুলের ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে গেটের দিকে চললেন। ঠিক সেই সময় দরজার কাছে হ্যারি–রন–হারমিওন দাঁড়িয়েছিল। হ্যারি প্রফেসরের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিল।

কারকারফ হ্যারিকে বললেন, ধন্যবাদ।

তারপরই কারকারফ হ্যারির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন। যেন উনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার স্কুলের ছাত্ররা, হেডমাস্টার থামতেই তারাও থেমে গেল। কারকারফ হ্যারির মুখের দিকে ভাল করে তাকালেন। চোখ পড়ল কপালের কাটা দাগে। ডারমস্ট্রাংগের ছেলেরাও হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হ্যারি অনুভব করলো, তারা তাকে তাদের থেকে পৃথক একজন হিসেবে দেখে। যে ছেলেটি মাটিতে ইচ্ছে করে খাবার ফেলে দিয়েছিল–কনুইয়ের ধাক্কা দিয়ে ইশারায় পাশের মেয়েটিকে হ্যারির কপালের কাটা দাগটা দেখাল। কে যেন ভিড়ের ভেতর থেকে বলল–আরে ওতো হ্যারি পটার! প্রফেসর কথাটা শুনে পিছনে তাকালেন। দেখলেন–ম্যাড–আই মুডি তার কাঠের একটা পায়ে ভড় দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ওর জাদু চোখ ডারমাংগ হেডমাস্টারের মুখের দিকে বন বন করে ঘুরছে।

হ্যারি লক্ষ্য করল কারকারফের মুখের চেহারা পাল্টে গেল। এক অব্যক্ত ভয় আর উত্তেজনায় সারা মুখ ছেয়ে গেল।

–তুমি! কারকারফ বললেন–মুডির দিকে তাকালেন… এমন একটা ভাব, সত্যি যে মুডি না অন্য কেউ!

–চিনতে পারছ না? মুডি দাঁত বার করে হেসে বলল…. তোমার যদি পটারকে কিছু বলার থাকে তো বলতে পার, তা না হলে রাস্তা আটকে রেখো না–আমাদের পথ ছাড়।

মুডি ঠিকই বলেছেন, কারকারফ গেটের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য অনেকেই যেতে পারছে না। ভিড় হয়ে গেছে।

আর একটি বাক্য ব্যয় না করে কারকারফ তার স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীদের নিয়ে চলে গেলেন। মুডি যতক্ষণ পারলো ওর দিকে তাকিয়ে রইল। বিকৃত মুখে এক বিরক্তিকর গভীর অপছন্দের ছাপ।

.

পরেরদিন শনিবার। স্কুল বন্ধ তাই বেশিরভাগ ছাত্র–ছাত্রী দেরি করে উঠবে, ব্রেকফাস্ট খেতে দেরি করে আসবে। হ্যারি, রন, হারমিওন সপ্তাহের সাতদিন যথারীতি ওঠে, সবকিছুই মোটামুটি ঘড়ির কাটার মত করে। ওরা এনট্রেন্স হলে গিয়ে দেখল গোটা কুড়ি ছেলে–মেয়ে এধার–ওধার ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ টোস্ট খাচ্ছে, বাকি সকলে গবলেট অব ফায়ার দেখছে। সাধারণত হলের মাঝে যেখানে বাছাই টুপি থাকে সেখানে একটা স্ট্যান্ডে গবলেট অব ফায়ার রাখা। তার চারপাশে দশ ফিট গোল অতিসূক্ষ্ম একটা সোনালী রেখা যার কথা ডাম্বলডোর বলেছিলেন, সতের বছরের কম ছেলে–মেয়েরা যাতে গবলেট অব ফায়ারে নাম ফেলতে পারে।

তৃতীয় বর্ষের একজন মেয়েকে রন জিজ্ঞেস করল–কজন নাম দিয়েছে?

–যারা দিয়েছে তারা সবাই ডারমস্ট্রংগের ছেলে–মেয়ে। আমাদের কাউকে নাম দিতে আমি অন্তত দেখিনি মেয়েটি বলল।

হ্যারি বলল–কাল আমরা যখন শুতে গেলাম তখন কেউ কেউ নাম দিয়েছে।… আমি অবশ্য দিতাম না। ধরা পড়ে যেতাম। গবলেট যদি মিথ্যে লেখার জন্য গর্ব করে গিলে ফেলে আবার উগরে দিত? ফ্রেড হ্যারির কানে কানে জয় উল্লাসে বলল–কেল্লাফতে, আমি নাম দিয়েছি। রন, হারিমিওনের কানে ওর গর্ব করে বলা কথাটা শুনতে পেল।

রন চমকে উঠে বলল–আরে করেছ কি?

ফ্রেড বলল–বয়স কারচুপি পোসান (নির্মাণ); গোবরের মগজ!

জর্জ দাঁত বার করে হাসতে হাসতে বলল–মাত্র এক ড্রপ… দুজনের আলাদা আলাদা।… আমাদের বয়স কয়েক মাস বাড়ান, তার বেশি তো কিছু নয়।

–লী হি হি হি করে হাসতে হাসতে বলল, হাজার গ্যালিওনস আমরা তিনজনে ভাগ করে নেব।

হারমিওন বিপদের সংকেত দিয়ে বলল–আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা সফল হবে না, ভেব না ডাম্বলডোর না ভেবেচিন্তে এসব ব্যবস্থা করেছেন। কারচুপি হতে পারে জানেন।

ফ্রেড, জর্জ আর লী হারমিওনের কথায় গা করল না।

ফ্রেড, জর্জ আর লীকে বলল–প্রস্তুত? বেশ তাহলে এসো। আমি প্রথমে যাব। ওর কথা শুনে জর্জ আর লী কাঁপতে লাগল।

হ্যারি দেখল, ফ্রেড, একটা পার্টমেন্টের ছোট্ট স্লিপ ওর পকেট থেকে বার করল, তাতে লেখা ফ্রেড উইসলি–হোগার্ট! ফ্রেড সীমারেখা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেল, ডুবুরি যেমন পঞ্চাশ ফিট উঁচু থেকে জলে ঝাঁপ দেয় তেমনিভাবে শরীরটাকে নাচাতে লাগল। তারপর হলের সকলের চোখের সামনে খুব বড় দেখে একটা শ্বাস নিয়ে লাইনের ওপারে গেল।

হ্যারি ভাবল ফ্রেড কৃতকার্য হয়েছে–জর্জও অবশ্য ভাবল, বিজয়ী দলের মত ও ফ্রেডের পর সীমারেখা অতিক্রম করল। কিন্তু পর মুহূর্তে প্রচণ্ড হিস হিস শব্দ শোনা গেল, তখন দুই যমজ ভাই বৃত্ত রেখার বাইরে বেরিয়ে এল। ঠিক যেন কোনও এক অদৃশ্য শট–পুটার (যারা স্পোর্টসে লোহার বল ছোঁড়ে) ওদের ধরে বাইরে ফেলে দিল। ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া পাথরের তৈরি মেঝেতে পড়ে ব্যথায় ছটফট করতে লাগল দুভাই। অপমানে জর্জরিত হল চতুর্দিকে হাসি ও বিদ্রুপের শব্দে। আর মুহূর্তেই দুজনেরই লম্বা সাদা দাড়ি হয়ে গেছে। যারা এনট্রেন্স হলে ছিল তারা ফ্রেড আর জর্জকে দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ হয়ে যেতে দেখে হাসিতে ফেটে পড়ল। শুধু ওরা কেন ফ্রেড আর জর্জও হাসতে লাগল… নিজেদের দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ হতে দেখে।

–আমি তোমাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম–প্রফেসর ডাম্বলডোর গ্রেট হল থেকে আসতে আসতে বললেন। ফ্রেড জর্জকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে ডাম্বলডোরের চোখ দুটো চিক চিক করে উঠল।–তোমরা দুজনে মাদাম পমফের কাছে যাও। তিনি ইতোমধ্যে রেভেন ক্লর মিস ফসেট আর হাফপাফের মি. সামার্সের চিকিৎসা করেছেন। দুজনেই ঠিক করেছিলেন তাদের বয়স সামান্য বাড়িয়ে দিতে, তাহলেও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি তাদের দাড়ি তোমাদের মত এত সুন্দর নয়।

লী হাসিতে ফেটে পড়ল ওদের দেখে। ওরা দুজনে হাসপাতালের দিকে যেতেই হ্যারি, রন, হারমিওন ব্রেকফাস্ট খাবার জন্য টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসল।

সকালে গ্রেট হলের সাজ একটু পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন হ্যালোউইন, ছাদের সিলিং-এ একগাদা বাদুড় ছেড়েছে, প্রতিটি কোণে কুমড়ো কেটে রেখেছে। হ্যারি, ডিন আর সিমাসের কাছে দাঁড়াল। ওরা হোগার্টের সতের বছর বা তারও বেশি বয়সের ছাত্রদের (যারা নাম দিতে পারে) সম্বন্ধে আলোচনা করছিল।

ডিন, হ্যারিকে বলল–শুনেছ ওয়ারিংটন অনেক ভোরে উঠে নাম দিয়েছে? আরে সেই স্লিদারিনের ছেলেটা খুব কুঁড়ে!

হ্যারি ওর বিরুদ্ধে কিডিচ খেলেছে। পাত্তা না দেয়ার মতো মাথা নাড়ল। ভেবেছিস স্নিদারিনের ছেলে চ্যাম্পিয়ন হবে?

হাফপাফের ছেলেরা ডিগরির কথা বলছে। সিমাস ঘেন্নায় নাক সিটকে বলল… তবে আমি ভাবি না ও সুন্দর চেহারাটা নষ্ট করতে ঝুঁকি নেবে কিনা।

কথার মাঝে হঠাৎ হারমিওন বলল–শোনো!

এনট্রেন্স হলে ছেলেরা জয়ধ্বনী করে চলেছে। ওরা আপন আপন চেয়ারে বসেছিল–দেখল অ্যাঞ্জেলিয়া জনসন হলে আসছে। মুখে অদ্ভুত ধরনের হাসি। লম্বা কালো মেয়ে। ও গ্রিফিন্ডর কিডিচ টিমে চেজার হয়ে খেলেছিল। ওদের দেখতে পেয়ে অ্যাঞ্জেলিয়া ওদের কাছে বসে বলল

আমি আমার নাম দিয়েছি! এই মাত্র দিলাম।

রন ওর দিকে তাকিয়ে বলল–বোকা বানাচ্ছ?

হ্যারি বলল–তাহলে তোমার বয়স সতের!

রন বলল–বেশ বলেছো! সতের না হলে তো ওর দাড়ি গজিয়ে যেত!

অ্যাঞ্জেলিনা বলল–গত সপ্তাহে আমার জন্মদিন ছিল।

হারমিওন বলল–গ্রিফিন্ডর থেকে কেউ নাম দিয়েছে শুনে খুব খুশি হলাম আমি বলছি অ্যাঞ্জেলিনা তুমি নিশ্চয়ই থাকবে।

অ্যাঞ্জেলিনা বলল–ধন্যবাদ হারমিওন।

 সিমাস বলল–ওই সুন্দর নাদুস দেখতে ডিগরির চেয়ে তুমি বেটার।

ব্রেকফাস্টের পর ওরা সকলে বলল–চল আমরা হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা করে আসি।

রন বলল–সেই ভাল।

হারমিওন বলল–সত্যি আমার ভীষণ ভুল হয়ে গেছে। আমি হ্যাগ্রিডকে যোগ দিতে বলিনি। দাঁড়াও ওপর থেকে আমি ব্যাজ নিয়ে আসছি।

 বকসবেটনের ছেলে মেয়েরা মাঠ থেকে ফ্রন্ট দরজার দিকে আসছে। ওদের মধ্যে রয়েছে ভীলা। ওরা গবলেট অব ফায়ারের দিকে পেছন করে ওদের পথ ছেড়ে দিল।

মাদাম ম্যাক্সিম ওর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এলেন। কেউ এখানে ওখানে নয়… লাইন বেঁধে। ওরা এক এক করে লাল দাগ পার হয়ে স্লিপে তাদের নাম লিখে নীল–সাদা আগুনের শিখাতে পার্চমেন্ট ফেলে দিল। এক একটি নাম গবলেটে পড়ে… কুঁকড়ে লাল হয়ে যায় তারপরই আগুনের পার্ক দেয়।

ভিলা গার্ল ওর নামের পার্চমেন্ট গবলেট অব ফায়ারে ফেলতে রন হ্যারিকে বলল–আচ্ছা যারা সিলেক্ট হবে না তারা কী করবে? শেষ পর্যন্ত থাকবে না ফিরে যাবে?

হ্যারি বলল–তাতো জানি না। মাদাম ম্যাক্সিম যখন বাছাইয়ের একজন বিচারক তখন একটা কিছু হবেই।

নাম দেবার পর বসবেটনের ছেলে মেয়েরা মাদাম ম্যাক্সিমের সঙ্গে মাঠে ফিরে গেল।

রন ফ্রন্টডোরের দিকে তাকিয়ে বলল–গতরাতে ওরা কোথায় শুয়েছিল জান?

তখনই শুনতে পেল হারমিওনের পদশব্দ ও অনেকগুলো s.P.E.w. ব্যাজ নিয়ে আসছে।

রন লাফ দিয়ে বলল, চল চল দেরি হয়ে গেছে।

নিষিদ্ধ বনের সীমানায় যেখানে হ্যাগ্রিড ওর কেবিন বানিয়ে বাস করে তার কাছাকাছি পৌঁছতেই বল্পবেটনের ছেলে–মেয়েরা কোথায় শুয়েছিল সেই রহস্য ভেদ হয়ে যায়। ওরা দেখল যে বিরাট ক্যারেজটা করে এসেছিল সেটা হ্যাগ্রিডের সদর দরজা থেকে প্রায় দুশ গজ দূরে পার্ক করা রয়েছে। তার ভেতরে বেটনের ছেলে–মেয়েরা এক এক করে ঢুকে যাচ্ছে।

হ্যারি হ্যাগ্রিডের দরজায় ঘা দিতেই ওর কুকুর ফ্যাংগ খুব জোরে ডাকতে লাগল।

হ্যাগ্রিড দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বলল-এসো এসো, তোমরা তো আমাকে ভুলেই গেছ!

ওরা দেখল হ্যাগ্রিড ওর সবচেয়ে পছন্দের পোশাক (ওদের কাছে বীভৎস!) পরেছে। বাদামী স্যুট, চেক চেক কমলা–হলুদ টাই। ওগুলো মোটেই বীভৎস্য নয়। ওর মাথার লম্বা লম্বা চুলে গ্রিজ মাখিয়েছে। গ্রিজ দেবার পর সিথি থেকে লম্বা চুল দুভাগে ভাগ করেছে। খুব সম্ভব বিলের মত পনিটেল করার বাসনা ছিল। কিন্তু মাথা ভর্তি চুলের জন্য তা সম্ভব হয়নি। হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হলেও চেপে রাখল।… খুব সপ্রতিভভাবে বলল, উেটসরা কোথায়

–কোথায় আবার যাবে–কুমরো খেতে গেছে। হ্যাগ্রিড খুব খুশিতে ভরপুর হয়ে বলল। মুস্কিল হয়েছে ওরা নিজেদের মধ্যে অসম্ভব লড়াই করে। একটাতো মেরেও ফেলছে।

রন তখন হ্যাগ্রিডের তেল চুকচুকে চুলের দিকে তাকিয়েছিল। হারমিওন রনকে ইশারা করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে বলে বলল–না না তা কি করে সম্ভব।

–না সত্যি বলছি, হ্যাগ্রিড দুঃখিত স্বরে বলল। যদিও আমি ওদের আলাদা আলাদা বাক্সে রাখি। ওদের সংখ্যা এখন কুড়িটা।

হ্যাগ্রিডের বাসা বলতে একটি কাঠের ঘর। তার এক কোণে একটা বিরাট খাট… চকরাবকরা লেপ। খাটের মতই বিরাট টেবিল, চেয়ার–ফায়ার প্লেসের সামনে রাখা। পাশেই কিছু বেকড হ্যাম। মৃত পাখি ছাদের সিলিং থেকে ঝুলছে। হ্যাগ্রিড বললেন-এবারে চা খাওয়া যাক। হ্যাগ্রিড চা বানাতে বানাতে দারুণ উত্তেজিত হয়ে টুর্নামেন্টের কথাবার্তা বলতে লাগলেন।

–দাঁড়াও তোমাদের একটা জিনিস দেখাই। আগে কখনও দেখনি। তবে এই সম্বন্ধে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।

–বলুন, বলুন হ্যাগ্রিড। ওরা বলার জন্য চেপে ধরল।

–থাকগে, আমি খেলাটা বরবাদ করতে চাই না। তবে মনে হয় দারুণ জমবে। কে জানে এর পরের টুর্নামেন্টে থাকি কি না থাকি!

ওরা খুব বেশি কিছু না খেলেও হ্যাগ্রিডের সঙ্গে লাঞ্চ খেল।

তারপর ওরা হ্যাগ্রিডকে প্রথম কাজ কি হবে তা জানার জন্য সামান্য আভাস দিতে বলল। তারপর মাথায় চিন্তা–ফ্রেড আর জর্জের দাড়ি কি এখনো আছে!

দুপুরের দিকে টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। ওরা আগুনের ধারে বসে আগুন পোয়াতে লাগল। হ্যাগ্রিড ওর ভিজে মোজা আগুনের ধারে শুকোতে দিলেন।… হারমিওনের সঙ্গে আবার হাউজ এলফরদের নিয়ে তর্ক শুরু হয়ে গেল। হ্যাগ্রিড এলফদের পারিশ্রমিক দেয়ার বিরুদ্ধে। বললেন, পৃথিবীতে এসেছে ওরা মানুষদের সেবা করতে। পারিশ্রমিকের কথা বললে ওরা অপমানিত বোধ করে।

হারমিওন ব্যাজগুলো রেখে দিয়ে বলল–হ্যারি ডব্বিকে মুক্তি দিয়েছে… এখন ও কাজ করছে, কাজের পারিশ্রমিকও নিচ্ছে।

সাড়ে পাঁচটা বাজতে বাজতে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। ওদের তাড়াতাড়ি ক্যাসেলে ফিরতে হবে হ্যালউইন ফিস্টের জন্য। তাছাড়া কারা কারা সিলেক্ট হল তাদের নাম ঘোষণা হবে।

হ্যাগ্রিড বললেন–আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।

তারপর হ্যাগ্রিড ওর খাটের পাশে রাখা আলমারি থেকে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন। নাকে ওদের বিশ্রি একটা গন্ধ ধক করে লাগল। বিকট গন্ধে গা বমি বমি করতে লাগল।

রন কাশতে কাশতে বলল–হ্যাগ্রিড ওটা কি? কিসের গন্ধ?

হ্যাগ্রিডের হাতে বিরাট একটা বোতল! দেখতে খুব ভাল নয়। হারমিওন রুদ্ধ কণ্ঠে বলল–ওটা কী আপনার আফটার শেভিং ক্রিম।

হে, হে, ওডিকোলন, হ্যাগ্রিড বিড়বিড় করে বললেন–গন্ধটা একটু উগ্র, গন্ধটা যখন তোমাদের ভাল লাগছে না সরিয়ে রাখছি। হঠাৎ ও স্বভাবের বিপরীতভাবে বলল। যাকে বলা যায় ভদ্রভাবে… যেতে দাও।

হ্যাগ্রিড ওর কেবিনের বাইরে গিয়ে জানালার ধারে জলের কলে অনেকটা সময় ঘষে ঘষে হাত ধুলেন।

–গন্ধতো গেল, এখন চুল আর পোশাক? হ্যারি খাটো গলায় বলল।

–ওই দেখুন রন হঠাৎ জানালাটা দেখিয়ে বলল।

হ্যাগ্রিড হাত ধোয়া বন্ধ করে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।

হারমিওন, রন দেখল মাদাম ম্যাক্সিমের সঙ্গে তার স্কুলের ছেলে–মেয়েরা ক্যারেজ থেকে লাইন বেঁধে টাওয়ারের দিকে চলেছে। পোশাক দেখে বলার অপেক্ষা রাখে না ফলাফল শুধু জানতে নয়, ওরা ভোজ খেতে চলেছে।

ওরা দেখল হ্যাগ্রিড আর মাদাম ম্যাক্সিম কথা বলছেন, কিন্তু কি বলছেন শুনতে পেলো না। হ্যাগ্রিডের চোখে বিস্ময়, খুব মোহিত হয়ে শুনছেন–ড্রাগন শিশুর দিকে তাকিয়ে নাটের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

হারমিওন বলল–হ্যাগ্রিড খুব সম্ভব আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

হ্যারি ওদের অন্তরঙ্গের মত কথা বলতে দেখে বলল–খুব সম্ভব ওদের আগে থেকে খুব বন্ধুত্ব। গার্লফ্রেডও হতে পারে। ওরা সকলে হাসল।

মাদাম ম্যাকসিমের স্কুলের ছেলে–মেয়েরা তখন এনট্রেন্স হলের দিকে দল বেঁধে চলেছে।

ওরা তিনজন আর সময় নষ্ট না করে হ্যাগ্রিডের কেবিনের বাইরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। বাইরে তখন বেশ অন্ধকার। ঠাণ্ডাও বেশ। ওরা আলখেল্লা টেনে টেনে চলল। চতুর্দিক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে।

লেক থেকে ডারমস্ট্রংগের দল দেখল ক্যাসেলের দিকে চলেছে। কারকারফের পাশে ভিক্টর ক্রাম। ক্রাম কারও দিকে না তাকিয়ে সোজা চলেছে। ও হ্যারি, হারমিওন ও রনের আগেই সামনের দরজার কাছে পৌঁছেছে।

ওরা যখন মোমবাতি জ্বালানো গ্রেট হলে পৌঁছল তখন বেশ ভিড়। বলতে গেলে একটুও ফাঁকা নেই। গবলেট অব ফায়ার যেখানে রাখা ছিল সেখান থেকে ডাম্বলডোরের পাশের শূন্য চেয়ারের পাশে রাখা হয়েছে। ফ্রেড আর জর্জ ইতোমধ্যে পরিষ্কার করে দাঁড়ি গোঁফ কামিয়েছে। মুখ দেখেই মনে হয় দারুণ হতাশ।

হ্যারি, রন, হারমিওন তাদের চেয়ারে বসলে ফ্রেড বলল–মনে হয় অ্যাঞ্জেলিনা পাবে।

হারমিওন বলল–আমারও তাই মনে হয়।….. একটু পর জানা যাবে।

হ্যালোওয়েন ফিস্ট অন্য ভোজের চেয়ে একটু বেশি সময় নিল। এই নিয়ে এক সপ্তাহে দুবার ফিস্ট। হ্যারির ফিস্টে অনাবশ্যক বেশি পদ একটুও পছন্দ হয় না। অপচয় মনে হয়।

খেতে খেতে সকলে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ডাম্বলডোরের দিকে। প্রতীক্ষা কখন তিনি খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াবেন।

সকলের চেটেপুটে খাওয়া শেষ হল। সোনার থালা আগের মত আবার চকচকে হয়ে গেল। হলের কলরব হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল। ডাম্বলডোর উঠে দাঁড়ালেন। তার এক পাশে মাদাম ম্যাক্সিম, অন্যপাশে কারকারফ। দুজনের মুখ দেখে বোঝা যায় দারুণ চাপা উত্তেজনা। লাডো ব্যাগম্যানের মুখে অবশ্য কোনও উত্তেজনার ছাপ নেই। মাঝে মাঝে ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে হাসছেন, চোখ পিটপিট করছেন। ওদিকে কাউকে দেখে মনে হয় তারও কোন ব্যাপারেই উৎসাহ, আগ্রহ নেই।

ডাম্বলডোর বললেন, ওয়েল, গবলেট অব ফায়ার তার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছে।… আরও মিনিট খানেক সময় নিতে পারে।

একটা কথা বলা আবশ্যক–যাদের বাছাই করা হবে তারা যেন তাদের জায়গা ছেড়ে হলের পাশের ঘরে চলে যায়–ডাম্বলডোর স্টাফ টেবিলের পেছনে দরজাটা দেখালেন। সেখানে যাবার পর তাদের প্রথমে কি করতে হবে জানানো হবে। এক কথায় প্রথম নির্দেশ!

কথাটা বলে ডাম্বলডোর তার হাতের জাদুদণ্ডটা প্রবলভাবে ঝাড়ু দেবার মত দোলালেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বাতি নিভে গেল, শুধু কুমড়োর খোলের ফাঁকে ফাঁকে বাতিগুলো জ্বলতে লাগল। সমস্ত হলঘরটা আধা অন্ধকার হয়ে গেল। গবলেট অব ফায়ারের আগুন আরও তীব্রভাবে জ্বলতে লাগল। সাদা–নীল অগ্নি শিখা! এত তীব্র যে চোখ ধাধিয়ে দেয় সেই শিখা। সকলেই অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছে। কেউ কেউ ঘড়িতে সময় দেখছে।

লী–জোর্ডান ফিস ফিস করে বলল–যেকোনও মুহূর্তে খবর জানা যাবে। ও হ্যারির সামনে দুটো সিট ছেড়ে বসেছিল।

গবলেটের ভিতরের আগুন হঠাৎ লাল হয়ে গেল। তার মধ্যে থেকে স্ফুলিঙ্গ ছিটকোতে শুরু করল। তারপরই অগ্নিশিখার একটা লম্বা জিব বেরিয়ে এল। একটা পোড়া পার্চমেন্ট ফর ফর করে জিবের মধ্য থেকে বেরিয়ে এল। সমস্ত ঘরটা যেন হাঁফাতে লাগল।

ডাম্বলডোর পার্চমেন্টের টুকরোটা ধরে ফেললেন। সেটাকে ভাল করে পড়ার জন্য সামনে ধরলেন যাতে আগুনের শিখার আলোতে লেখা পড়তে পারেন। সেই শিখা আবার রূপ বদলেছে। লাল থেকে নীল–সাদা।

–ডারমস্ট্রংগের চ্যাম্পিয়ন ভিক্টর ক্রাম। পরিষ্কার কণ্ঠে ডাম্বলডোর বললেন।

রন বলল–আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। খুবই স্বাভাবিক। হ্যারি দেখল ক্রাম চেয়ার ছেড়ে ধীরে ধীরে ডাম্বলডোরের কাছে গিয়ে মাথানত করল, তারপর নির্দেশমত অন্য ঘরে চলে গেল।

কারকারফ হাততালি দিয়ে বললেন–ব্রেভো, ভিক্টর। আমি জানতাম তুমি হবেই। এত জোরে বললেন যে সমস্ত হলটা যেন কেঁপে উঠল।

হাততালি–অভিনন্দন ধীরে ধীরে থেমে গেল। আবার সকলের দৃষ্টি গবলেটের দিকে। আবার সেটার আগুন লাল হয়ে গেল।… দ্বিতীয় পার্চমেন্টটা বেরিয়ে এল।

ডাম্বলডোর বললেন, চ্যাম্পিয়ন বক্সটেন। ফ্লিউর ডেলাকৌর।

হ্যারি খুব জোরে জোরে বলে উঠল, রন ও সিলেক্ট হয়েছে। ডেলাকৌর অনেকটা ভীলার মত দেখতে। নাম শুনে শান্তভাবে উঠে দাঁড়াল। মাথার রূপালী চুলে ঝাঁকুনি দিল। র‍্যাভেন ক্ল আর হাফপাফদের পাশকাটিয়ে ডাম্বলডোরের কাছে দাঁড়ালো।

গোলমালের মধ্যে হারমিওন বলল–ওহ দেখ, কেউ কেউ খুব হতাশ হয়েছে। হতাশা মানে ছোট করে দেখা, হ্যারি বলল। যে দুটো মেয়ে নির্বাচিত হয়নি, তাদের চোখে অশ্রু।

ডেলাকৌর নির্দেশমত অন্য ঘরে চলে গেলে হলে আবার আগের নিস্তব্ধতা।

আবার গবলেট অব ফায়ার লাল হয়ে গেল। অগ্নিশিখা থেকে স্ফুলিংগ ছিটকোতে লাগল। এবারে যেন অগ্নিশিখা আরও ওপরে উঠে গেল। ডাম্বলডোর আগের মতই পার্চমেন্ট ধরলেন।

হোগার্টের চ্যাম্পিয়ন : সেডরিক ডিগরি।

না রন চিৎকার করে বলে উঠল। হ্যারি ছাড়া আর কেউ ওর প্রতিবাদ শুনতে পেলো না। হাফপাফের প্রতিটি ছাত্র–ছাত্রী আনন্দে নৃত্য করতে লাগল। সেডরিকের নির্বাচনের অভিনন্দন আর করতালি যেন শেষ হয় না। ও হাসতে হাসতে টিচারস টেবিলের পিছনের চেম্বারে চলে গেল।

অতি চমৎকার–ডাম্বলডোর বললেন। সোরগোল থেমে গেলে ডাম্বলডোর বললেন–তাহলে আমাদের তিনজন চ্যাম্পিয়ন বাছাই হল।… তোমাদের সকলের অভিব্যক্তি, আনন্দ, করতালি আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে।

তোমাদের এই বাছাই প্রতিযোগিতায় অবদান কম নয়। সত্যিই তোমরা আন্ত রিকভাবে আমাদের সাহায্য করেছ…।

বলতে বলতে ডাম্বলডোর হঠাৎ থেমে গেলেন। সকলেই পরক্ষণেই বুঝতে পারলো কেন থেমে গেলেন।

হঠাৎ ফায়ার অব গবলেট লাল হয়ে গেল। আবার স্ফুলিঙ্গ বেরোতে লাগল।… আবার একটি পার্চমেন্ট অগ্নি শিখা থেকে বেরিয়ে এল।

ডাম্বলডোর হাত বাড়িয়ে সেই পার্চমেন্টটা খপ করে ধরলেন। সামনে খুললেন। যে নামটা লেখা সেটা বেশ কয়েকবার পড়লেন মনে মনে। অনেকটা সময়, তিনি শুধু নয় হলের সবাই নীরব। সকলেই একদৃষ্টে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে… প্রতীক্ষা! ডাম্বলডোর গলাটা পরিষ্কার করে পড়লেন

হ্যারি পটার।

সকল অধ্যায়

১. ০১. দ্য রিডল হাউজ
২. ০২. দ্য স্কার
৩. ০৩. ইনভিটেসন
৪. ০৪. ব্যাক টু দ্য বারও
৫. ০৫. উইসলি’র উইজার্ড হুইজেস
৬. ০৬. দ্য পোর্টকি
৭. ০৭. বেগম্যান এবং ক্রাউচ
৮. ০৮. দ্য কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ
৯. ০৯. দ্য ডার্ক মার্ক
১০. ১০. মেহেম অ্যাট দ্য মিনিস্ট্রি
১১. ১১. অ্যাবোর্ড দ্য হোগার্টস এক্সপ্রেস
১২. ১২. দ্য ট্রিউইজার্ড টুর্নামেন্ট
১৩. ১৩. ম্যাড–আই মুডি
১৪. ১৪. আনফরগিভেবল কার্সেস
১৫. ১৫. বক্সবেটন এবং ডার্মস্ট্র্যাংগ
১৬. ১৬. দ্য গবলেট অব ফায়ার
১৭. ১৭. দ্য ফোর চ্যাম্পিয়নস
১৮. ১৮. দ্য ওয়েইং অব দ্য ওয়ান্ডস
১৯. ১৯. দ্য হাংগেরিয়ান হর্নটেল
২০. ২০. দ্য ফার্স্ট টাস্ক
২১. ২১. দ্য হাউজ-এলফ লিবারেশন ফ্রন্ট
২২. ২২. দ্য আনএক্সপেকটেড টাস্ক
২৩. ২৩. ইউল বল
২৪. ২৪. রিটা স্কীটারের স্কুপ
২৫. ২৫. দ্য এগ অ্যান্ড দ্য আই
২৬. ২৬. দ্য সেকেন্ড টাস্ক
২৭. ২৭. প্যাডফুট রিটার্নস
২৮. ২৮. দ্য ম্যাডনেস্ অব মিস্টার ক্রাউচ
২৯. ২৯. দ্য ড্রিম
৩০. ৩০. দ্য পেনসিভ
৩১. ৩১. দি থার্ড টাস্ক
৩২. ৩২. ফ্লেশ, ব্লাড অ্যান্ড বোন
৩৩. ৩৩. দ্য ডেথ ইটারস
৩৪. ৩৪. প্রিওরি ইনক্যানটাটেম
৩৫. ৩৫. ভেরিটাসেরাম
৩৬. ৩৬. দ্য পার্টিং অব দ্য ওয়েজ
৩৭. ৩৭. দ্য বিগিনিং

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন