দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দিনেন্দ্রনাথের কণ্ঠে আমার গান শুনেছি, কিন্তু কোনোদিন তার নিজের গান শুনি নি। কখনো কখনো কোনো কবিতায় তাকে সুর বসাতে অনুরোধ করেছি, কথাটাকে একেবারেই অসাধ্য ব’লে সে উড়িয়ে দিয়েছে। গান নিয়ে যারা তার সঙ্গে ব্যবহার করেছে, তারা জানে সুরের জ্ঞান তার ছিল অসামান্য। আমার বিশ্বাস গান সৃষ্টি করা এবং সেটা প্রচার করার সম্বন্ধে তার কুণ্ঠার কারণই ছিল তাই। পাছে তার যোগ্যতা তার আদর্শ পর্যন্ত না পৌঁছয়, বোধ করি এই ছিল তার আশঙ্কা। কবিতা সম্বন্ধেও সেই একই কথা; কাব্যরসে তার মতো দরদী অল্পই দেখা গেছে। তা ছাড়া কবিতা আবৃত্তি করবার নৈপুণ্যও ছিল তার স্বাভাবিক। বিশেষ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের ছাত্রদেরকে আবৃত্তি শিক্ষা দেবার প্রয়োজন ঘটলে, তাকেই অনুরোধ করতে হয়েছে। অথচ কবিতা সে যে নিজে লেখে, এ কথা প্রায় গোপন ছিল বললেই হয়। অনেকদিন পূর্বে কয়েকটি ছোটো ছোটো কবিতা সে বই আকারে ছাপিয়েছিল। ছাপা হয়েছিল মাত্র, কিন্তু পাঠকসমাজে সেটা প্রচার করবার জন্যে সে লেশমাত্র উদ্যোগ করে নি। আমার মনে হয় কোনো একজনের উদ্দেশে তার রচনা নিবেদন করাতেই পেয়েছে সে তৃপ্তি, পাঠকসাধারণের স্বীকৃতির দিকে সে লক্ষ্যই করে নি। চিরজীবন অন্যকেই সে প্রকাশ করেছে, নিজেকে করে নি। তার চেষ্টা না থাকলে আমার গানের অধিকাংশই বিলুপ্ত হত। কেননা, নিজের রচনা সম্বন্ধে আমার বিস্মরণশক্তি অসাধারণ। আমার সুরগুলিকে রক্ষা করা এবং যোগ্য এমন-কি অযোগ্য পাত্রকেও সমর্পণ করা তার যেন একাগ্র সাধনার বিষয় ছিল। তাতে তার কোনোদিন ক্লান্তি বা ধৈর্যচ্যুতি হতে দেখি নি। আমার সৃষ্টিকে নিয়েই সে আপনার সৃষ্টির আনন্দকে সম্পূর্ণ করেছিল। আজ স্পষ্টই অনুভব করছি, তার স্বকীয় রচনাচর্চার বাধাই ছিলেম আমি। কিন্তু তাতে তার আনন্দ যে ক্ষুণ্ন হয় নি, সে কথা তার অক্লান্ত অধ্যবসায় থেকেই বোঝা যায়। আজ এতেই আমি সুখ বোধ করি যে, তার জীবনের একটি প্রধান পরিতুষ্টির উপকরণ আমিই তাকে জোগাতে পেরেছিলুম।

দিনেন্দ্রের যে পরিচয় আচ্ছন্ন ছিল, যে পরিচয় শেষপর্যন্ত সম্পূর্ণ বিকাশ পাবার অবসর পায় নি, আমাদের কাছে সেইটিরই প্রতিষ্ঠা হল তার এই স্বল্পসঞ্চিত গানে ও কবিতায়। রচনা নিয়ে খ্যাতিলাভের আকাঙক্ষা তার কিছুমাত্র ছিল না, তার প্রমাণ হয়ে গেছে। তার নিজের ইচ্ছায় এতকাল এর অধিকাংশই সে প্রকাশ করে নি এবং বেঁচে থাকলে আজও করত না। সেইজন্যে এই বইটি সম্বন্ধে মনে কোনো সংকোচ নেই যে, তা বলতে পারি নে। কিন্তু তার বন্ধু ছিল অনেক, তার ছাত্রেরও অভাব ছিল না, এদের সম্মুখে এবং আমাদের মতো স্নিগ্ধজনের কাছে এই লেখাগুলি নিয়ে তার একটি মানসমূর্তির আবরণ উদ্‌ঘাটিত হল– এই আমাদের লাভ।

১ ভাদ্র, ১৩৪৩

সকল অধ্যায়

১. সাম্রাজ্যেশ্বরী
২. আচার্য জগদীশের জয়বার্তা
৩. জগদীশচন্দ্র বসু
৪. জগদীশচন্দ্র
৫. সতীশচন্দ্র রায়
৬. মোহিতচন্দ্র সেন
৭. রমেশচন্দ্র দত্ত
৮. সুহৃত্তম শ্রীযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
৯. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
১০. দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
১১. শান্তিনিকেতনের মুলু
১২. ছাত্র মুলু
১৩. শিবনাথ শাস্ত্রী
১৪. বিদ্যাসাগর
১৫. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
১৬. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর – ০২
১৭. সুকুমার রায়
১৮. সুকুমার রায় – ০২
১৯. উইলিয়াম পিয়ার্সন
২০. পরলোকগত পিয়র্সন
২১. মনোমোহন ঘোষ
২২. সরোজনলিনী দত্ত
২৩. জগদিন্দ্র-বিয়োগে
২৪. লর্ড সিংহ
২৫. উমা দেবী
২৬. অরবিন্দ ঘোষ
২৭. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
২৮. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (সংবর্ধনা উপলক্ষে পত্র : ৩)
২৯. মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী
৩০. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
৩১. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী – ০২
৩২. প্রফুল্লচন্দ্র রায়
৩৩. আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
৩৪. শ্যামকান্ত সর্দেশাই
৩৫. প্রিয়নাথ সেন
৩৬. জগদানন্দ রায়
৩৭. উদয়শঙ্কর
৩৮. স্বামী শিবানন্দ
৩৯. নন্দলাল বসু
৪০. খান আবদুল গফ্‌ফর খান
৪১. দিনেন্দ্রনাথ
৪২. দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪৩. কমলা নেহরু
৪৪. বীরেশ্বর
৪৫. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৪৬. মৌলানা জিয়াউদ্দিন
৪৭. লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া
৪৮. কামাল আতাতুর্ক
৪৯. কেশবচন্দ্র সেন
৫০. বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্য
৫১. ঈ. বী. হ্যাভেল
৫২. দীনবন্ধু অ্যাণ্ডরুজ
৫৩. রাধাকিশোর মাণিক্য
৫৪. প্রমথ চৌধুরী
৫৫. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন