সরোজনলিনী দত্ত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অর্থভাণ্ডারে মূল্যবান সামগ্রী লইয়া মানুষ গর্ব করে। কিন্তু তাহার চেয়ে বড়ো কথা স্মৃতিভাণ্ডারের সম্পদ। সেই মানুষই একান্ত দরিদ্র যাহার স্মৃতিসঞ্চয়ের মধ্যে অক্ষয় গৌরবের ধন বেশি কিছু নাই।

তাই সরোজনলিনীর জীবনী পড়িয়া বুঝিলাম জীবনীলেখক তাঁহার স্বামী শ্রীযুক্ত গুরুসদয় দত্ত যথার্থই ভাগ্যবান। কারণ এরূপ স্ত্রীকে মৃত্যুর মধ্যে হারাইয়াও হারানো সম্ভব নহে; শুভাদৃষ্টক্রমে যিনি তাঁহাকে নিকটে পাইয়াছেন তাঁহার জীবনের মধ্যেই তিনি চিরদিন জীবিত থাকিবেন। বইখানি পড়িয়া আমার মনে এই খেদ হইল যে, তাঁহার সঙ্গে একবার ক্ষণকালের জন্য আমার দেখা হইয়াছিল, তাঁহার সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ আমার ঘটে নাই।

সাধারণত আমরা যখন খাঁটি বাঙালির মেয়ের আদর্শ খুঁজি তখন গৃহকোণচারিণীর ‘পরেই আমাদের দৃষ্টি পড়ে। গৃহসীমানার মধ্যে আবদ্ধ যে সংকুচিত জীবন তাহারই সংকীর্ণ আদর্শের বহুবেষ্টনরক্ষিত উৎকর্ষ দুর্লভ পদার্থ নহে। তাহার উপাদান অথবা, তাহার ক্ষেত্র অপ্রশস্ত, তাহার পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত অকঠোর।

সরোজনলিনী বাহির সংসারের ভিড়ের মধ্যেই অধিকাংশ জীবন কাটাইয়াছেন, অনেক সময় বিদেশী সমাজের অতিথি বন্ধুদের লইয়া তাঁহাকে সামাজিকতা করিতে হইয়াছে, তাঁহার কর্মজীবনের পরিধি আত্মীয়স্বজন বন্ধুমণ্ডলীর মধ্যেই অবরুদ্ধ ছিল না; তাঁহার সংসার আত্মীয় অনাত্মীয়, স্বদেশী বিদেশী, পরিচিত অপরিচিত অনেক লোককে লইয়া। এই তাঁর বড়ো সংসারের মধ্যে সকলের সঙ্গে সম্বন্ধকে তিনি মাধুর্যের দ্বারা শোভন ও ত্যাগের দ্বারা কল্যাণময় করিয়াছিলেন। এইরূপ ক্ষেত্রেই নারী জীবনের যথার্থ পরিচয় ও পরীক্ষা। তাঁহার কাছে বাহিরের দ্বারা ঘর ও ঘরের দ্বারা বাহির পরাহত হয় নাই। এই উভয়ের সুন্দর সমন্বয়েই তাঁহার মহিমা প্রকাশিত হইয়াছে। আজকালকার দিনে নারী একান্তভাবেই গৃহিণী তিনি আমাদের আদর্শ নহেন, ঘরে বাহিরে সর্বত্রই যিনি কল্যাণী তিনিই আদর্শ, যাঁহার জীবন কেবলমাত্র চিরাগত প্রাদেশিক প্রথা ও সংস্কারের ছাঁচে ঢালা তিনি আদর্শ নহেন কিন্তু যাঁহার মধ্যে বৃহৎ বিশ্বের জ্ঞান ও ভাবের বিচিত্র ধারা গভীর ও সুন্দরভাবে সংগতি লাভ করিতে বাধা না পায় তিনিই আদর্শ।

সরোজনলিনীর জীবনী পড়িয়া আমরা এই আদর্শের পরিচয় পাইলাম।

২০ অগ্রহায়ণ, ১৩৩২

সকল অধ্যায়

১. সাম্রাজ্যেশ্বরী
২. আচার্য জগদীশের জয়বার্তা
৩. জগদীশচন্দ্র বসু
৪. জগদীশচন্দ্র
৫. সতীশচন্দ্র রায়
৬. মোহিতচন্দ্র সেন
৭. রমেশচন্দ্র দত্ত
৮. সুহৃত্তম শ্রীযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
৯. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
১০. দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
১১. শান্তিনিকেতনের মুলু
১২. ছাত্র মুলু
১৩. শিবনাথ শাস্ত্রী
১৪. বিদ্যাসাগর
১৫. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
১৬. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর – ০২
১৭. সুকুমার রায়
১৮. সুকুমার রায় – ০২
১৯. উইলিয়াম পিয়ার্সন
২০. পরলোকগত পিয়র্সন
২১. মনোমোহন ঘোষ
২২. সরোজনলিনী দত্ত
২৩. জগদিন্দ্র-বিয়োগে
২৪. লর্ড সিংহ
২৫. উমা দেবী
২৬. অরবিন্দ ঘোষ
২৭. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
২৮. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (সংবর্ধনা উপলক্ষে পত্র : ৩)
২৯. মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী
৩০. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
৩১. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী – ০২
৩২. প্রফুল্লচন্দ্র রায়
৩৩. আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
৩৪. শ্যামকান্ত সর্দেশাই
৩৫. প্রিয়নাথ সেন
৩৬. জগদানন্দ রায়
৩৭. উদয়শঙ্কর
৩৮. স্বামী শিবানন্দ
৩৯. নন্দলাল বসু
৪০. খান আবদুল গফ্‌ফর খান
৪১. দিনেন্দ্রনাথ
৪২. দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪৩. কমলা নেহরু
৪৪. বীরেশ্বর
৪৫. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৪৬. মৌলানা জিয়াউদ্দিন
৪৭. লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া
৪৮. কামাল আতাতুর্ক
৪৯. কেশবচন্দ্র সেন
৫০. বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্য
৫১. ঈ. বী. হ্যাভেল
৫২. দীনবন্ধু অ্যাণ্ডরুজ
৫৩. রাধাকিশোর মাণিক্য
৫৪. প্রমথ চৌধুরী
৫৫. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন