৩৩. ছিনের মরার কথা ছিল না

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

৩৩

ছিনের মরার কথা ছিল না। রাতের শেষ বনগাঁ লোকাল চলে যাওয়ার পর স্টেশন চত্বরের একটু বাইরে তাকে রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে চারটে লোক কচাকচ কেটে ফেলল। রক্তে ভাসাভাসি হয়ে গেল জায়গাটা। এটা হল মঙ্গলবারের কথা। শুক্রবার রাতে মরল দিলীপ। বীণাপাণির বাড়ির কাছাকাছিই ক্ষেতের মধ্যে শনিবার সকালে মাঠ-যাউন্তি লোকেরা তার লাশ দেখতে পায়। তিন টুকরো হয়ে পড়ে আছে। মাথাটা আলের ওপর আলগোছে বসানো। মুখে বীভৎস একখানা ভ্যাংচানি স্থির হয়ে আছে।

দুজনেই কাকার লোক। ছিনের বয়স উনিশ-কুড়ি। ডাকাবুকো। একটু বেশী মস্তানি করত। দিলীপের বয়স চৌত্রিশ-পঁয়ত্রিশ। ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। কাকার টাকাপয়সার হিসেব রাখত। বিশ্বাসী। যেখানে খুন হল, তার একটু দূরেই তার বাড়ি। বাড়িতে বউ আর একটা বাচ্চা।

দুটো লাশই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখে এল নিমাই। এরা সব কাকার স্মাগলিং-এর লোক। যাত্রাদলের নয়। পাপা সিং-ই করাচ্ছে, সবাই জানে। পাপা সিং-এর একটা লোক খুন হয়েছিল, তার বদলে দুটো লাশ নামিয়ে দিল। কিন্তু এতেও শোধবোধ হল কিনা সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।

নিমাই ভাবিত হয়ে পড়ল। তার চোখের সামনে সর্বদা দু-দুটো লাশের দৃশ্য ভাসে। খাওয়ায় বড় অরুচি হল। ঘুমটাও হতে চায় না। ছিনের লাশটা তাকে বেশী ঘাবড়ে দেয়। ছেলেটার গলা, পেট, বুক সব ফাঁক। আলো হাওয়া ঢুকে পড়ছে শরীরের ফুটো দিয়ে।

এ সব বুঝে উঠতে নিমাইয়ের ভারি কষ্ট হয়। মারকাট ব্যাপারটাই তার বুঝ-সমঝে আসতে চায় না। ঝগড়া কাজিয়া, দু’ চার ঘা চড়-চাপড় অবধি ঠিক আছে। গালাগাল দাও, তাও না হয় সওয়া গেল। কিন্তু খুন জিনিসটা তার বোধবুদ্ধির চৌহদ্দিতে আসে না।

ছিনের বাবার একখানা ছোট দোকান আছে। বাজারের পিছন দিকটায়। ভাঙা কুঁড়ো ডাল, সস্তা চাল, খোল ভুসি, চিটে গুড়, নারকোলের দড়ি, তামাক, কিছু দশকর্মের জিনিস এইসব নিয়ে দোকান। গরিবগুর্বো সব খদ্দের তার। বিহারের লোক। নামটি রামপ্রসাদ। মাথায় একটু টাক আছে, রোগা পাকানো চেহারা। রামুর দোকানে মাঝে মাঝে গিয়ে বসে নিমাই। রামু বেশ খাতিরও করে তাকে। বসায়, নানারকম কথা হয় দু’জনে। বাড়ি থেকে ঠেকুয়া বা ছাতুর লাড়ু এনে খাওয়ায় ছট্‌ পরবে বা জন্মাষ্টমীতে। ভুট্টার খই খাইয়েছিল একদিন। কিন্তু আসল কথা হল, রামু লোকটা ভাল। নিমাইয়ের গান শুনে ভারি খুশি হয়, ভাবে বিভোর হয়ে যায়। বাঙালী না হলেও বাংলা ভালই জানে। ছিনে তার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। মাঝে মাঝে বলে, আমার এই তিন নম্বর ছেলেটাই হারামি। ভক্ত গোছের, সরলসোজা রামুর সঙ্গে ইদানীং বড় ভাব হচ্ছিল নিমাইয়ের। বড় দুই ছেলের একজন দেশে, ক্ষেতি গেরস্থী দেখে, আর একজন তিনটে মোষ নিয়ে দুধের কারবার ফেঁদেছে এখানেই। এক বউ দেশে, আর একজন এখানে। ছিনেকে স্বভাবের জন্য কয়েকবার বাড়ি থেকে তাড়িয়েছে রামু। ইদানীং ছিনে আর বাড়ি আসছিল না। পয়সা হচ্ছিল, তালেবর হচ্ছিল। একটু-আধটু নেশাভাঙও শুরু করেছিল বোধ হয়। রামু দুশ্চিন্তা করত।

যা যুগটা পড়েছে, ছেলেপুলে হয়ে কোনও সুখ নেই। কোনটা পড়ল, কোনটা মরল, কোনটা গোল্লায় গেল এই নিয়ে সারাক্ষণ বুকের মধ্যে ডুগডুগি বাজে। তবু রামুর একটেরে দোকানটায় গিয়ে বসলে ছায়া-ছায়া অন্ধকার কাঁচা ঘরে নানা গন্ধের মিশেল দেওয়া বাতাস শাসে টেনে একটা আরাম বোধ করে নিমাই। সব জায়গা সমান নয়। এক এক জায়গা যেন অন্যরকম। মনটা যেন বেশ স্থির হয়, ভাল হয়।

ছিনের জন্য বড় কেঁদেছে রামু। বড্ড কেঁদেছে। সেটা না হয় বোঝা গেল, বাপ হয়ে ছেলের জন্য কাঁদবে না তো কী! কিন্তু নিমাইয়ের নিজের ঘরেও কান্নার একটা ঢেউ উঠেছে। বীণাপাণি দুটো খবরেই কেঁদে ভাসাল। নিমাই যতদূর জানে, ছিনে বা দিলীপের সঙ্গে বীণার তেমন ভাবসাব থাকার কথাই নয়। মেয়েরা এমনিতেই একটু কাঁদে। কিন্তু সেটা একটুই। এতটা নয়।

দিলীপের খুন হওয়ার দিনটায় নিমাই বলে ফেলল, অত কাঁদছো কেন বলো তো! দিলীপের সঙ্গে মুখচেনা ছিল বই তো নয়! ছিনের বেলাতেও বড় কাঁদলে। হঠাৎ এত কান্নায় পেল কেন তোমায়?

বীণা গম্ভীর মুখে বলে, চেনা ছিল তো!

তা থাকলেই বা!

বীণা জবাব দিতে পারল না। গুম হয়ে বসে রইল।

আর কিছু বলতে তেমন সাহস হয়নি নিমাইয়ের। ইদানীং বীণার মেজাজটা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে, তা নিমাই শত ভেবেও বের করতে পারে না। সেই যে লালনের একখানা গান আছে, সে আর লালন একখানে রয় লক্ষ যোজন ফাঁক, এ হল সেই বৃত্তান্ত। এক ঘরে বসবাস, এক বিছানায় শোয়া, মন্ত্র-পড়া বউ, তবু যেন বনগাঁয়ে থেকেও বীণা বিলেতের মতো দূরে। সব সময়ে নয়। এক এক সময়ে তাকে বেশ চেনা মেয়ে বলে মনে হয়। হাসি-ঠাট্টাও করে, তরল কথাটথা হয়। আদর-সোহাগও যে হয় না, তা নয়।

খুন দুটো নিমাইয়ের মাথাতেও চেপে আছে গন্ধমাদন হয়ে। তবে তার শোক নয়, ভারি দুশ্চিন্তা হয়। ভয় হয়। অস্বস্তি হয়। সে খুনের ব্যাপারটা বোঝে না। ভগবানের দেওয়া মানুষের এই শরীরখানা, এখানার ওপর ছোরাছুরি চালায় আর একজন একইরকম শরীরওয়ালা লোক—এটা ভাবতেই তার ভারি অবাক লাগে।

সে বোকা বটে, কিন্তু যতটা লোকে তাকে ভাবে, ততটা নয়। এই যে খুনখারাপি হচ্ছে এতে কাকার পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে। এটা সে বোঝে। সে বোঝে কাকা যদি দাঁড়িয়ে থাকতে না পারে তবে আর কারও না হোক, তাদের কপালে কষ্ট আছে। লোকটা দিলদরিয়া, টাকাকে খোলামকুচির সমান বিবেচনা করে। পালা যখন থাকে না তখনও দলের লোকদের দু’পাঁচশো করে মাইনে দেয়। টাকাটা বড় কম লাগে না তাতে। কলকাতার পেশাদার দলের মতোই বিশ্ববিজয়কে দাঁড় করানোর ইচ্ছে তার। কিন্তু এ যা শুরু হয়েছে, কাকার অবস্থা বিশেষ ভাল ঠেকছে না নিমাইয়ের।

কথাটা কাকাও বলে ফেলল রোববার বিকেলে। নিমাই গিয়ে বসেছিল কাকার বাজারের কাছের ঘরখানায়। ঘরে মেলা ভিড়, খুন দুটো নিয়েই নানা কথা হচ্ছিল। কাকা গুম মেরে ছিল সারাক্ষণ। বাজারে নানারকম কথা ওড়াউড়ি করছে। সবাই নানারকম বলে যাচ্ছে।

লোকজন সব গত হওয়ার পর কাকা আর সে রাত দশটা নাগাদ একসঙ্গে খানিকদূর এল। আর কেউ ছিল না সঙ্গে। কাকা হঠাৎ বলল, দলটা তুলে দিয়ে এবার বোধ হয় কলকাতাতেই সটকাতে হবে।

কাকার দুটো দল। একটা ষণ্ডা গুণ্ডাদের। আর একটা নটনটীদের। কোনটার কথা বলছে তা অবশ্য বুঝতে পারল না নিমাই। কলকাতায় সটকালে দুটো দলই উঠে যাবে। সে চুপ করে রইল।

কাকা বলল, শুধু নাটক আর পালা নিয়ে থাকব বলেই এখানে আসা। আর যত পাপতাপ সবই এর জন্য। কথাটা তুমি ভাল বুঝবে বলেই বলা।

নিমাই বলল, বুঝেছি।

একটা ভুল থেকে কত ফেঁসো বেরোলো দেখ। পগাকে খুন করাটাই মস্ত ভুল হয়েছে। তার পর থেকেই অশান্তি।

আপনার সময়টা খারাপ যাচ্ছে।

সময় ভাল আর পড়ল কবে? বরাবরই খারাপ।

নিমাই সন্তর্পণে বলল, পুলিশ কিছু করবে না?

পুলিশ! বলে কাকা একটু চুপ করে থেকে বলল, ওইজন্যই তো বলি, তুমি বড় ভালমানুষ। কোন রাজ্যে থাকো? পুলিশকে তো আমি এ বেলা কিনি তো ওরা ওবেলা কেনে। এ দেশে থানা পুলিশ নিলাম হয়, বুঝলে? যার দর যত বেশী ওঠে, পুলিশ গিয়ে তার কাছে স্বয়ংবরা হয়।

নিমাইকে যতটা বোকা ভাবে লোকে, সে ততটা নয়। পুলিশ সম্পর্কেও নিমাইয়ের কিছু জানা আছে। কথাটা এমনি বলার জন্যই বলে ফেলেছিল। এবার বলল, আপনি তাহলে কীই বা করতে পারেন।

বনগাঁ সেই আগের মতো তো আর নেই! পাল্টেছে। পাপা সিং টাকা ঢালছে। ছেলেছোকরাদের ভিড়িয়ে নিচ্ছে দলে। খুনটা যা দেখলে তার চেয়েও খারাপ জিনিস আছে। এরপর দলের ছেলেরা ভাগবে। তখন আরও বিপদ।

আপনি আর কিছু করতে পারেন না, না?

দুনিয়াতে আমি একটা জিনিসই পারি। তা হল যাত্রা-থিয়েটার আর অভিনয়। ওটাই আমার কাজ। আর যা করি তার খানিকটা পেটের দায়ে, খানিকটা যাত্রাদলের স্বার্থে।

এসব নিমাইয়ের শোনা। সে একখানা ভাওয়াইয়া গান শুনেছিল, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে। কাকার অবস্থা এখন তাই। এ লোকটার জন্য মায়া হয় তার।

একখানা তত্ত্বকথা বলব কাকা?

বলো না! তোমার কথা আমার ভালই লাগে।

মনে রাখতে হয়, দুনিয়ার সবটুকুই আমার নয়, অন্যেরও ভাগ আছে। তেমনটাই ধরে নিন না।

ওটা কেমন কথা হল!

সোজা কথাই। এই যেমন আপনি আছেন, তেমনি পাপা সিংও আছে। সবাই ভাল হোক মন্দ হোক কিছু করে বাঁচবে। তাই না? তা ধরে নিন, সব লড়াইতে কিছু হার কিছু জিত আছেই। এক এক সময়ে হারটাকেও জিত বলে ধরতে হয়। নইলে কঠিন হবে।

কথাটা বড্ড ধোঁয়াটে হয়ে গেল।

আজ্ঞে, আমি কথাগুলোকে তেমন গুছিয়ে বলতে পারি না। ওইটেই আমার দোষ। থাক, ভেবেচিন্তে পরে একসময়ে বলবখন।

তা বোলো। তোমাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিতে বলি না। সে সব বিষয়বুদ্ধি তোমার ঘটে নেই, জানি। তবে তোমার লাইনের কথাই যদি বলে যাও আমার খারাপ লাগবে না।

তা জানি। আপনিও ভাল লোক। কিছুদিন গা-ঢাকা দিলে হয় না!

হয়। সেইজন্যই কলকাতায় যাওয়ার কথা ভাবছি।

সেটা ভাল বিবেচনা করলে যাবেন।

আমাকে চিৎপুরের দল সবসময়েই ডাকে। মোটা মাইনে, খাতির-যত্ন সব পাই। কিন্তু তাতে আর মন লাগে না। আমি হলাম একটা যাত্রাদলের মালিক, এর স্বাদই আলাদা।

আজ্ঞে।

দিলীপের বিয়ে হল এই সেদিন। আমার ভরসায় বিয়ে করেছিল। সে ঠাণ্ডা লোক। নিজে কোনও বিপদের কাজে যেতে সাহস পেত না। তবে বিশ্বাসী ছিল খুব। দু’ পাঁচ লাখ টাকা ফেলে দিয়েও নিশ্চিন্ত। দিলীপ গিয়ে আমার অনেক ক্ষতি হল। একটা কাজ করতে চাও?

কী বলুন না!

তুমি তো ধার্মিক মানুষ!

নিমাই লজ্জা পেয়ে বলে, কী যে বলেন আজ্ঞে। ধর্মটা করতে দেখলেন কখন!

দেখতে হয় না। মুখ দেখেই বোঝা যায়।

কাজটা কী?

দিলীপের কাজটা করবে?

বাপ রে!

ভয় পেলে নাকি?

ওটা পেরে উঠব না।

হাজার টাকা মাইনে পাবে। কাজ শুধু হিসেব রাখা আর বখরাটা গুনে ভাগ করে দেওয়া।

ওটি পারব না। মাপ করতে হচ্ছে।

পাপের টাকা বলে আপত্তি হচ্ছে তো! নিমাইচাঁদ, পাপের টাকাতেই জগৎসংসার চলছে।

নিমাই ভারি সংকুচিত হয়ে পড়ল। কথাটা বড় খাঁটি। কলিযুগে পাপের টাকার ছোঁয়াচ বাঁচানো শক্ত। ও শালা কলেরার মতো সবাইকে ধরে ফেলে। সে একটু সংকোচের সঙ্গে বলে, কথাটা কি জানেন! আমার ইচ্ছে হয় একটু আলগোছ হয়ে থাকি। সব কাজে মনটা সায় দেয় না। নইলে আমিই কি একটা খুব সাধু? আপনারা আমাকে ভাল দেখেন সে আপনাদের গুণ। আমার নয়।

বুঝেছি। তুমি ভাল।

নিমাই সবেগে মাথা নেড়ে বলে, ভাল কথাটা বলবেন না। বরং বলুন বোকা। আমি বোকা লোক। আজকাল ভাল হতে চাইলেই বোকা। বউয়ের পয়সায় খাই, বনের মোষ তাড়াই। মাঝে মধ্যে আবার ভাবি, বউ পয়সা পাচ্ছে কোত্থেকে? না যাত্রা থেকে। তা যাত্রায় পয়সা আসছে কোথেকে? না স্মাগলিং থেকে। তাহলে হরেদরে কাশ্যপ গোত্রই দাঁড়ায়। ও যদি পাপ হয়, তবে আমিও পাপের পয়সাতেই প্রতিপালন হচ্ছি। তাই না?

অন্ধকারে ভাল বোঝা গেল না, তবে কাকা বোধ হয় একটু হাসল। বলল, এই হচ্ছে তোমার লাইনের কথা। কাজের নয়, তবে শুনতে ভাল।

আজ্ঞে।

একটা কথা বলি নিমাই।

বলুন না!

তুমি না করো, কাজটা বীণা করুক। ওর হিসেব নিকেশের মাথা আছে। তোমার আপত্তি নেই তো?

বীণা কি আমার কথামতো চলে নাকি? তার ইচ্ছে হলে করবে।

তুমি একবার বলে দেখো।

আজ্ঞে বললেই রাজী হবে। তার অত শুচিবায়ু নেই।

ওকে আমার বেশ বিশ্বাস হয়। তেমন কিছু করতে হবে না। টাকাটা হেফাজতে রাখবে। প্রয়োজনমত দেবে একে ওকে। যেমন আমি বলব।

মেলা টাকা নাকি?

তা একটু বেশী তো বটেই।

আমার তো ভাঙা ঘর। চোরের লাথিতে বেড়া ভেঙে পড়বে।

টাকা আমার সিন্দুকে থাকবে। হিসেব রাখাটাই ওর কাজ।

বলব’খন।

কাকাকে বাড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে একা যখন আঁধার পথে বাড়ি ফিরছিল নিমাই তখনই ঠিক করেছিল, বীণাকে প্রস্তাবটা দিয়ে দরকার নেই। বীণার সব ভাল, কিন্তু দুর্বলচিত্ত। লোভ সামলাতে পারবে না।

বীণা সম্পর্কে কথাটা হঠাৎ কেন মনে হল, তা ঠিকঠাক বলতে পারবে না নিমাই। বীণাকে সে কখনও সেরকম কিছু করতে দেখেনি। তবু কথাটা মনে হল। সে প্রস্তাবটা বীণাকে না দিলেও কিছু নয়। কাকা হয়তো কালই বীণাকে নিজে থেকেই চাকরির প্রস্তাব দেবে। তখন?

বাড়ি ফিরে রাতে শোওয়ার সময় সে বলেই ফেলল, কাকা তোমাকে একটা কাজের কথা বলতে পারে। কাজটা নিও না।

কী কাজ?

যে কাজটা দিলীপ করত।

বলো কী! আমাকে কাকার অত বিশ্বাস হবে?

নিমাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, কাজটা আমাকে দিতে চেয়েছিল। আমি রাজী হইনি। ও কাজ ভাল নয়।

কত মাইনে দেবে?

নিমাই নিস্তেজ গলায় বলে, তুমি কাজটা নেবে বলে ভাবছো নাকি?

তবে কি হাত-পা কোলে করে বসে থাকব? পুজোয় মোটে তিনটে না চাবটে বায়না হয়েছে। অপেরার অবস্থা তো ভাল নয়। পেট চলবে কি করে?

তা বটে।

মাইনের কথা কিছু বলেনি?

বলেছে। হাজার টাকা।

ও বাবা! তা হলে তো চমৎকার প্রস্তাব। হ্যাঁ গো, এতেও তোমার গোমড়া মুখে হাসি ফুটছে না?

বড় ভয় পাই যে।

তুমি ধর্মভীরু মানুষ, বেশ কথা। কিন্তু ভেবে দেখ তো, আমি কি স্মাগলিং করতে যাচ্ছি? আমি তো শুধু হিসেব রাখব। টাকা পয়সা গুনে-গেঁথে তুলে রাখা এ তো আর কোনও পাপের কাজ নয়!

ও কথাটা ঠিক.হল না। যত সাদামাটা ভাবা যাচ্ছে ততটা সাদামাটা নয়। এতে করে তুমি কাকার স্মাগলিং-এর দলের লোক হয়ে যাচ্ছো। ওদের সঙ্গেই ওঠাবসা করতে হবে।

তা তো এমনিতেও হয়। কাকার দলের গুণ্ডারা কি আর ঘোমটা দিয়ে থাকে নাকি? পাগলু, বিশ্বনাথ, চারু ওরা তো স্মাগলিং করে আবার যাত্রাও করে।

তবু একটু ভেবে দেখো। ঠাণ্ডা মাথায় ভাবো।

শোনো গো যুধিষ্ঠির, আমাদের টাকার দরকার। টাকার গায়ে পাপ-পুণ্য ছাপ মারা থাকে না। আর যদি পাপ হয় তো আমার হবে, তোমার তো হবে না! তুমি আমার শালগ্রাম শিলাটি হয়ে থেকো। উঃ, হাজার টাকা মাইনে, শুনেই আমার গায়ের রোঁয়া দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

লোভে পড়লে বীণাপাণি! একটু ভাবো।

অনেক ভেবেছি। ভেবে ভেবে মাথা ঝাঁঝরা হয়ে গেল।

পাপ ছাড়াও কথা আছে। সেটা হল বিপদ-আপদ। পাপা সিং কাকার পিছনে লেগেছে দেখছো তো! দু-দুটো মার্ডার হয়ে গেল। এ সব মনে রেখে তবে কাজটা নেবে কিনা ঠিক কোরো।

বিপদের কথা বলছো! বিপদ তো আমাদের বন্ধু মানুষ। কবে বিপদ ছিল না আমাদের? তুমি এত ভগবান মানো আর এটা জানো না, আমাদের ভাল মন্দ যাই হোক ভগবান ভরসা। বিপদ হলে তিনি দেখবেন। জেনেশুনে তো আর পাপ করতে যাচ্ছি না।

তা বটে। তবে পাপের কাছ ঘেঁষেই বাস করতে হবে। আমার বড় ভয় করে।

বীণাপাণি তাকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে বলে, তোমাকে আমার এইজন্যই মাঝে মাঝে বড় কতে ইচ্ছে হয়। তুমি এমনধারা কেন গো! সব সময়ে পাপের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকো, জড়োসড়ো হয়ে থাকো! আচ্ছা একটু পাপ-টাপ না করলে পুণ্যির জোরটাই বুঝবে কি করে?

কত পাপ আপসে মাপ হয়ে যাচ্ছে। পায়ের তলায় পিঁপড়েও তো কত মরে। মশা মারতে ইচ্ছে যায় না, তবু দেখ, চুলকোতে গেলুম, আঙুলে লেগে পুচ করে একটা রক্তে টুপটুপে মশা মরে গেল। এরকম তো কত হয়।

উঃ, তোমাকে নিয়ে আর পারি না আমি। পাপ-পাপ করতে করতে মাথাটা না খারাপ হয়ে যায়। ওগো, সেই কিসে যেন আছে না, একবার কৃষ্ণনামে যত পাপ হরে, মানুষের সাধ্য নাই তত পাপ করে।

আছে। বোধহয় চৈতন্যচরিতামৃতে।

তাহলে? তুমি তো সারাদিনে কতবার হরির নাম করো, কৃষ্ণের নাম করো। তোমার কি আর পাপ থাকে? তুমি হলে গঙ্গাজল। যতই ময়লা ফেল গঙ্গাকে কি অপবিত্র করতে পারবে?

ও শুনলেও পাপ হয়। আমাকে সবাই সাধু ভাবে কেন বুঝি না! অত সাধু তো আমি নই।

নিমাইয়ের নাকটা আদর করে টিপে ধরে বীণাপাণি বলে, সাধু না, তুমি হলে একটি বিচ্ছু। তবে বিষ নেই।

তা বটে।

আমি যখন পাপ করব তখন তুমি কৃষ্ণনাম কোরো। তাহলে আমার পাপও কেটে যাবে। সাধুর বউয়ের পাপ হয় না।

নিমাই অন্ধকারে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

বীণাপাণি বলল, ও কি? অত বড় দীর্ঘশ্বাসটা ফেললে কেন শুনি? কী এমন খারাপ কথাটা বললাম?

চাকরিটা কি সত্যিই নেবে বীণাপাণি?

তুমি ওরকম কোরো না তো। হাজারটা টাকা মাসে মাসে যদি হাতে আসে তাহলে কত কী করা যাবে! এবার তোমার দোকানটার কথাও ভাবতে হবে। একদিন যদি দোকানটা দাঁড়ায় তাহলে সব ছেড়েছুড়ে দেবো, দেখো।

কথাটা শুনতে সুন্দর, কিন্তু সত্য নয়। নিমাই জানে, বীণাপাণি ঘর গেরস্থালির মধ্যে নিজেকে আর আঁটিয়ে নিতে পারবে না। তা সেও সইবে নিমাইয়ের। কিন্তু কাকা যে চাকরির কথা বলছে তা যে বড় যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে।

নিমাই খুব মৃদুস্বরে বলে, কি জানো বীণাপাণি, বেকার লোকদের কোনও মতামত থাকে না। সে হল খাঁচায় পোষা পাখি। যে দানাপানি দেয়, সে যা শেখাবে তাই বলতে হবে।

বীণাপাণি একটু চুপ করে থেকে ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে, বলতে পারলে তুমি কথাটা? মুখে এল? তোমার জন্য এত করার পরও এই তার প্রতিদান?

নিমাই খুব করুণ গলায় বলে, রাগ কোরো না বীণাপাণি। তোমার রাগকে আমি বড় ভয় পাই। আমার অবস্থাটা কি তুমি বোঝো না?

খুব বুঝি। কিন্তু তুমি আহাম্মক বলেই তোমার সব কথা মেনে চলি না। কাকার তো স্যাঙাতের অভাব নেই। সবাইকে ছেড়ে কেন আমাকেই চাকরিটা দিতে চাইছে বলল! এটাকে ভগবানের আশীর্বাদ বলে ধরে নিতে পারছো না?

চাকরিটা কাকা আমাকেই দিতে চেয়েছিল প্রথমে। আমি রাজী হইনি বলে তোমার কথা তুলল।

ওই একই কথা।

কাকার ধারণা, আমি ধর্মভীরু লোক, টাকা এদিক ওদিক করব না।

আমিই কি তা করব?

তা বলিনি। আমি বলছি কাজটার বিপদ আছে, লোভ আছে, বিশ্বাস-অবিশ্বাস আছে।

থাকুক। বিপদের কাজগুলোও তো মানুষকেই করতে হয়, নাকি?

তা হয়। বলে নিমাই চুপ মেরে গেল।

দিন সাতেক বাদে এক সকালে নিমাই রামপ্রসাদের দোকানে বসে ছিল। দুনিয়াটা খুব অদ্ভুত। কত কী ঘটে যায়, কিন্তু জলে দাগ কাটার মতো মিলিয়েও যায়। রামপ্রসাদ একটু রোগা হয়েছে হয়তো, কিন্তু আর সবই ঠিক আছে। তাকে দেখে হাতজোড় করে বলল, রাম রাম নিমাইবাবু। বসুন।

মুখবাঁধা একটা ডালের বস্তার ওপর বসে পড়ল নিমাই। তেমনি ছায়া-ছায়া দোকানখানা, ভারি নিরিবিলি, তেমনই সব গন্ধের মিশেল দেওয়া বাতাস। নিমাই একখানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কেমন আছেন রামপ্রসাদদাদা?

ছিনেটা চলে গিয়ে মনটা ভাল নেই দাদা। কাজ কারবারে মন ভি লাগে না।

সে তো ঠিক কথা। সময় লাগে। সময়ে সব ঠিক হয়ে যায়।

ওই শালা কাকা এক নম্বর বদমাশ লোক। কত ছেলেছোকরার সর্বনাশ করল। এখুন পাপা সিং যদি ওর কলিজাটা উখরে লেয় তো আমি খুশি হই।

নিমাই জানে বাজারে কাকার তত সুনাম নেই। সে মৃদুস্বরে বলে, পাপের ঠিকানা পাপই নিয়ে নেবে। আপনি আমি তো পেরে উঠব না।

ওটা ঠিক কথা। কিন্তু পাপা সিং কাকাকে ভি লিবে। দেখবেন।

নিমাই বসে বসে খানিকক্ষণ ভাবল। বীণাপাণি কাকার চাকরি এখনও শুরু করেনি। তবে এইবার করবে। কথা পাকা হয়ে গেছে। কাকা অবশ্য তাকে বলেছে, কাজটা তুমি নিলেই আমি বেশী খুশি হতাম নিমাই।

একটা লোক দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাল। তারপর রামপ্রসাদকে একটা ঠিকানা জিজ্ঞেস করল। নামটা শুনেই নিমাই একটু সচকিত হল। লোকটা তারই নাম বলছে যে!

নিমাই বস্তা থেকে নেমে এসে একটু আগু হতেই চিনতে পারল। মস্ত কুটুম। বীণাপাণির সেজদা রামজীবন।

আরে দাদা যে!

রামজীবন নিশ্চিন্তির শ্বাস ফেলে বলে, বাঁচা গেল। ভাবছিলাম কত না জানি খুঁজতে হবে!

চলুন, বাড়ি চলুন। রিকশা ডাকি।

বাড়ি আসতেই রামজীবনকে দেখে একদফা কেঁদে ভাসাল বীণা। এতদিনে মনে পড়ল আমাকে? আমি যে বেঁচে আছি তা জানিস তোরা?

রামজীবন যখন মদ খায় তখন একরকম, কিন্তু যখন খায় না তখন তার মতো ভালমানুষ নেই। বীণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, কাঁদিস না! তোকে কি কেউ ভুলতে পারে? কত আদরের ছিলি। বড়দা এই কাপড় দিয়ে গেছে। দেখ খুলে।

বীণা হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা বুকে জড়িয়ে ধরল, বড়দা দিয়েছে?

এসেছিল হঠাৎ করে। সকলকে অনেক দিয়ে-থুয়ে গেল।

শাড়িটা খুলে মুখখানা আলো হয়ে গেল বীণাপাণির।

সকল অধ্যায়

১. ১. বাদামতলায় রামজীবনের পাকা ঘর
২. ২. এয়ারলাইনস্ অফিসের কাছাকাছি
৩. ৩. নতুন কেনা সুটকেসটা
৪. ৪. একটা ন্যাকা বৃষ্টি
৫. ৫. দোকানটায় ঢুকতে একটু লজ্জা করছে
৬. ৬. নপাড়ার ছেলেরা
৭. ৭. পৃথিবী কি দাড়ি কামায়
৮. ৮. মেঘলা দিনের কালো আলো
৯. ৯. আই সি এস ই পরীক্ষায়
১০. ১০. কামিনী-কাঞ্চন থেকে তফাত
১১. ১১. কাল রাতে বামাচরণে আর রামজীবনে
১২. ১৩. যেমন ভ্যাতভ্যাতে বর্ষা তেমনি গুমসোনো গরম
১৩. ১৪. মায়ের সঙ্গে ঝুমকির বোঝাপড়ার অভাব
১৪. ১৫. দুদুটো প্রেমে পড়ে গেল হেমাঙ্গ
১৫. ১৬. বিষ্ণুপদর পেটটা একটু নেমেছে
১৬. ১৭. জানালা দুরকম হয়
১৭. ১৮. বীণাপাণির বিপদের কথা
১৮. ১২. লিফটবাহিত হয়ে
১৯. ১৯. এনি সার্জারি অন মাই হার্ট
২০. ২০. নতুন আফটার শেভ লোশন
২১. ২১. পুলিন ডাক্তার সব বিদ্যেই জানে
২২. ২২. প্লেন চলেছে ভোরের দিকে
২৩. ২৩. বনগাঁয়ের জমাটি অঞ্চলে নয়
২৪. ২৪. কাউকে কোনও উপলক্ষে ফুল দেওয়া
২৫. ২৫. খোঁচাখুঁচি করা হেমাঙ্গর একটা বদ অভ্যাস
২৬. ২৬. মেঘ দেখলে আনন্দ হয়
২৭. ২৭. শরীর ছাড়া মানুষের আর কী আছে
২৮. ২৮. বিড়ির গন্ধটা নিমাইয়ের সহ্য হচ্ছিল না
২৯. ২৯. ছেলেটাকে ধরেছিল আপা
৩০. ৩০. গাঁয়ের স্কুলের অডিট
৩১. ৩১. জলকাদায় বৃষ্টিতে গাঁ-গঞ্জের কাঁচা-পাকা রাস্তায়
৩২. ৩২. মোহিনী অনেকদিন ধরে তাকে বলছে
৩৩. ৩৩. ছিনের মরার কথা ছিল না
৩৪. ৩৪. প্রিয় ঋতু
৩৫. ৩৫. পোড়া মাংসের স্বাদ
৩৬. ৩৬. ভূতুরে ভয়
৩৭. ৩৭. কনফারেন্স, সেমিনার এবং বক্তৃতা
৩৮. ৩৮. নিমাইচরণ আছো নাকি
৩৯. ৩৯. কল্পনায় শহরটাকে ঠিকমতো সাজিয়ে গুছিয়ে
৪০. ৪০. গত সাত দিন ধরে হেমাঙ্গ ভাবছে
৪১. ৪১. তৰ্পণের দিন
৪২. ৪২. হেঁচকির শব্দ
৪৩. ৪৩. আজকাল বড্ড ভ্রম হয়ে যাচ্ছে
৪৪. ৪৪. লিভিং রুমের ঠিক মাঝখানটায়
৪৫. ৪৫. হেমাঙ্গর কোনও ওয়ারিশন থাকবে না
৪৬. ৪৬. সন্তৰ্পণে দরজাটি খুলল
৪৭. ৪৭. প্রফেসর শর্মা
৪৮. ৪৮. দুনিয়াটা চারদিকে হাঁ-হাঁ করা খোলা
৪৯. ৪৯. বড় মেয়ের বয়স
৫০. ৫০. ভাঙনে নদীর ধারে বাড়িঘর
৫১. ৫১. নিমকহারাম শব্দটা
৫২. ৫২. চিলেকোঠাটা এত ছোটো
৫৩. ৫৩. কাকা ডেকে পাঠিয়েছিলেন
৫৪. ৫৪. স্কুল-টুলেও বক্তৃতা
৫৫. ৫৫. সারা রাত ঘরের কাছে জলের ঢেউ
৫৬. ৫৬. এক-একটা দিন আসে
৫৭. ৫৭. চয়ন যখন পড়ায়
৫৮. ৫৮. ঘটনাটা ঘটল সন্ধেবেলায়
৫৯. ৫৯. বাড়ির প্ল্যান পাল্টাতে হল
৬০. ৬০. নদীর ধারে বাস করতে
৬১. ৬১. পড়াতে পড়াতে সব মনে পড়ে যাচ্ছে
৬২. ৬২. একটা নদী কত কী করতে পারে
৬৩. ৬৩. এরা মাটি ভাগ করতে চায়
৬৪. ৬৪. নিরঞ্জনবাবুর কাছে বসে থাকলে
৬৫. ৬৫. জ্যোৎস্না রাতে ছাদের রেলিং-এর ধারে
৬৬. ৬৬. একটা গুণ্ডার দল
৬৭. ৬৭. হেমাঙ্গর দাড়ি ক্ৰমে বেড়ে যাচ্ছে
৬৮. ৬৮. নিজেকে মুক্ত রাখা কি সোজা কথা
৬৯. ৬৯. চারুশীলা যে কেন তাকে এয়ারপোর্টে ধরে এনেছে
৭০. ৭০. টাকা আসছে
৭১. ৭১. অপর্ণার ইদানীংকালের জীবনে
৭২. ৭২. রশ্মি চলে যাওয়ার দিন
৭৩. ৭৩. শ্যামলীকে শাসিয়ে গেল
৭৪. ৭৪. যারা টিউশনি করে
৭৫. ৭৫. পনেরো দিন জ্বরে পড়েছিল বীণা
৭৬. ৭৬. পার্কের মধ্যে ঘাপটি মেরে
৭৭. ৭৭. ডারলিং আৰ্থ বইটা
৭৮. ৭৮. স্ট্রোক জিনিসটা কি
৭৯. ৭৯. দাদার সঙ্গে সম্পর্কটা
৮০. ৮০. চিঠিটা এল দুপুরে
৮১. ৮১. আপার মা আর বাবা
৮২. ৮২. দাড়ি আর গোঁফের কতগুলো অসুবিধের দিক
৮৩. ৮৩. বামাচরণকে প্রথমটায় চিনতেই পারেনি বিষ্ণুপদ
৮৪. ৮৪. লিফটে একাই ছিল চয়ন
৮৫. ৮৫. বীণা এত অবাক হল
৮৬. ৮৬. গ্যারেজের ওপর একখানা ঘর
৮৭. ৮৭. আর কী বাকি রাখলেন
৮৮. ৮৮. টাকা জিনিসটার যে কী মহিমা
৮৯. ৮৯. তার ভিজিটিং কার্ড নেই
৯০. ৯০. বুকের মধ্যে যেন একটা শাঁখ বেজে ওঠে
৯১. ৯১. আপাতত একতলা
৯২. ৯২. একটা মধ্যযুগীয় শাসনতন্ত্র
৯৩. ৯৩. পুত্রকন্যা শব্দগুলির অর্থ
৯৪. ৯৪. হেমন্তের স্নিগ্ধ বিকেল
৯৫. ৯৫. পালপাড়ায় গিয়ে একদিন
৯৬. ৯৬. মণীশের বাক্যহীন চেয়ে-থাকাটা
৯৭. ৯৭. পৃথিবীর রূপের জগৎ
৯৮. ৯৮. বিনীতভাবে নমস্কার
৯৯. ৯৯. একটু ফাঁকা লাগছিল চয়নের
১০০. ১০০. এত আনন্দ হল বাড়িতে
১০১. ১০১. কত সামান্য হলেই চলে যায়
১০২. ১০২. কাকা তাকে ডাকল না
১০৩. ১০৩. রবিবারের এক সকালে
১০৪. ১০৪. ছোট ফিয়াট গাড়ির মধ্যে
১০৫. ১০৫. চারদিকে সুখ
১০৬. ১০৬. মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় অরণ্যে
১০৭. ১০৭. মাসে মাসে পাঁচশো করে টাকা
১০৮. ১০৮. চারদিকে কত গাছ
১০৯. ১০৯. বডন স্ট্রিটের বাড়িতে
১১০. ১১০. বাংলাদেশে যাওয়ার আগে
১১১. ১১১. শোকের এমন প্রকাশ
১১২. ১১২. এইভাবেই দান উল্টে যায় পৃথিবীর
১১৩. ১১৩. মণীশের শরীর খারাপ হয়েছিল
১১৪. ১১৪. রাওয়াত নামে এক বন্ধু
১১৫. ১১৫. বিষ্ণুপদর শ্রাদ্ধাদি মিটে যাওয়ার এক মাস পর
১১৬. ১১৬. শীতের শুরুতেই দাদা-বউদি বেড়াতে গেল
১১৭. ১১৭. নিমাইয়ের পাঠানো টাকা
১১৮. ১১৮. একবিংশ শতকে কেমন হবে নর-নারীর সম্পর্ক
১১৯. ১১৯. ক্রাচে ভর দিয়ে
১২০. ১২০. একাকার হয়ে যাই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন