৬০. নদীর ধারে বাস করতে

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

৬০

নদীর ধারে বাস করতে হেমাঙ্গর কি নেশা ধরে গেল? গত শুক্রবার এসেছে। কলকাতায় বিস্তর বকেয়া কাজ পড়ে থাকা সত্ত্বেও আজ আর এক শুক্রবার অবধি রয়ে গেছে এখানে। কোনও খবরও দেয়নি কোথাও। না বাড়িতে, না অফিসে, না রশ্মিকে। দায়হীন জীবন কি এরকমই হয়? গত সাত দিন সে নৌকোয় নৌকোয়, হেঁটে হেঁটে নানা গাঁয়ে ঘুরেছে, বাঁকা মিঞার সঙ্গে বাঘের জঙ্গল অবধি। দাড়ি কামায়নি, শহুরে পোশাক পারেনি। ধুতি আর শার্ট। তাও ময়লা হয়েছে যথেষ্ট।

বাঁকা মিঞা না বলে পারল না, বাবু, কাণ্ডটা কী? এসব হচ্ছেটা কি? আপনি যে আর বাড়িমুখো হচ্ছেন না!

একটু হেসে হেমাঙ্গ বলে, কী হবে বাড়িমুখো হয়ে? কী আছে বলো তো সেখানে!

এখানেই বা কোন মধুটা পাচ্ছেন আপনি? এখানে কী আছে?

এখানে আর যাই হোক, দায় তো নেই। এটা করতে হবে, সেটা করতে হবে বলে তো আর কেউ শাসাচ্ছে না।

সেদিন যে লোকটা এসেছিল কী বলে গেল আপনাকে?

চয়ন! সে তো চারুদিদির গুপ্তচর। ছেলেটা ভাল। জানতে এসেছিল।

বাঁকা মিঞা মাথা নেড়ে বলে, কিছু একটা পাকিয়ে তুলেছেন বলে মনে হচ্ছে। একটু খোলসা হবেন কি?

হেমাঙ্গ চুপ করে থাকে। তারপর বলে, খোলসা হতে বলছো? কিন্তু নিজেই তো জানি না তোমাকে কী বলব!

মাঝে মাঝে এমন এক একটা সংকটের সময় আসে যখন মানুষ সত্যিই বুঝতে পারে না, সে কী চায়। যেটা চায় না, সেটাই হয়তো চায়, যেটা চায় সেটা হয়তো তার সত্যিই প্রয়োজন নেই। এরকম সব সংকটের মুহূর্তে একজন প্রম্পটারের অভাব বড় বেশী বোধ করে হেমাঙ্গ। কে বুঝিয়ে দেবে, কে বলে দেবে?

বাঁধ ধরে সকালে অনেক দূর হাঁটে হেমাঙ্গ। সূর্যোদয় দেখে। মাঠঘাট, নদী নিয়ে বিশাল বিস্তার জেগে ওঠে চোখের সামনে। মনে হয়, কোনও পিছুটান আর নেই। নোঙর ছেড়ে সে এখন অনির্দিষ্ট বার দরিয়ায়। যেন সে আর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নয়, যেন তাকে আর পয়সা রোজগার করতে হবে না, আর বিষয়-চিন্তা করতে হবে না, যেন তার কোনও দায়ভারই নেই পৃথিবীতে।

কিন্তু তিষ্ঠোতে দেয় না বাঁকা মিঞা। প্রায়ই এসে তাড়া দেয়, একবার কলকাতা ঘুরে আসেন গিয়ে। কাজকর্ম যে সব রসাতলে যাবে।

আমাকে চাষবাস শেখাবে বাঁকা?

সে সব হবে’খন। শখের শেখা শিখতে বেশী সময় লাগবে না। কিন্তু আপনার যা বিদ্যে তা তো এ কাজের জন্য নয়, সবাই চাষ করলে দুনিয়াটা চলবে কি করে?

দিন দুয়েক আগে সে রশ্মিকে একটা চিঠি দিয়েছে। তাতে লিখেছে, নিজের সঙ্গে কিছু বোঝাপড়া আছে। তাই ক’দিনের ছুটি নিয়েছি। তুমি কিছু মনে কোরো না। এই ছুটিটার বড় দরকার ছিল আমার। বোধ হয় মানসিক ক্লান্তিই হবে। আমার ঠিকানা চারুদি জানে। সুতরাং নিরুদ্দেশ হইনি। তুমি বোধ হয় দিল্লি গেছ। সেরকমই শুনেছিলাম তোমার মুখে। এসে এ চিঠি পাবে। পাওয়ার পর একটু অপেক্ষা কোরো। আমি গিয়ে বুঝিয়ে বলব। এমনই কপাল, বাংলায় গুছিয়ে একটা চিঠিও লিখতে পারি না। লেখার দোষে ভুল বুঝো না।

চিঠিটা পৌঁছে থাকবে। নাও পৌঁছোতে পারে। চিঠিটা দেওয়া উচিত হল কিনা তা বুঝতে পারে না হেমাঙ্গ। উচিত হল কি? এই অজ্ঞাতবাসের জবাবদিহিই বা সে কেন করল?

গত চার দিন বাঁকা মিঞার ঘাড়ে আর খাচ্ছে না হেমাঙ্গ। সে আজকাল রান্না করছে। প্রথম প্রথম পুড়ে বা গলে যেত তরকারি বা ভাত। আজকাল মোটামুটি হয়। তবে এত খারাপ রান্না জীবনে খায়নি হেমাঙ্গ। খিদের মুখে খাওয়া যায়, এই মাত্র।

বাঁকা মিঞা যথেষ্ট আপত্তি তুলে বলেছে, আমি যতদিন আছি ততদিন রাঁধবেন কেন? আমি মরলে না হয়—

হেমাঙ্গ বলে, না বাঁকা, তোমার ঘাড়ে বসে খেলে আমার এই অজ্ঞাতবাসটাই অর্থহীন হয়ে যাবে। কোনও মানে থাকবে না। নিজের ওপর নির্ভর না করলে মজাও থাকে না।

সাত দিনে সে বুঝতে পারছে, ব্যাপারটা একটু বোরিং। সাতটা দিন কাটছে খুব ঢিমে তেতালে। সে হিসেব করে দেখেছে এখানে এক ঘণ্টা কাটে কলকাতার আড়াই ঘণ্টার মাপে। এখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তে অনেক বেশী সময় লেগে যায়। গত সাত দিনে এখানে সে যত হেঁটেছে, গত দশ বছরেও সে এত হাঁটেনি। হাঁটা জিনিসটাও তার কাছে ক্লান্তিকর। কারণ এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে পথ যেন ফুরোয় না।

এসব না ধরলে তার কিছু খারাপ লাগছে না। গাঁয়ের অনেক মানুষজনের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে। দু-চারজন ডেকে নিয়ে চা-টা খাইয়েছে তাদের বাড়িতে। কিন্তু এটাও ঠিক জীবন নয়। অনেক ফাঁক, অনেক ফোকর।

শীত এসেছে। এখানে জাঁকিয়ে শীত পড়ে গেছে। নদীর ধারে তার আড়ালহীন ঘরখানা সারা রাত হিমেল হাওয়ার ঝাপটা খায়। এত শীত করে ভোরের দিকে যে ঘুম ভেঙে সে উঠে বসে থাকে। অন্ধকার রাতে বাতাসের হু-হু বিরহের শব্দে এসে মেশে নদীর অবিরল ঢেউ ভাঙার ছলাৎছল। শেষ যামের শেয়াল ডাক দিয়ে যায়। শেষ রাতে সে মাঝে মাঝে বাইরে এসে দাঁড়ায়। কখনও বড্ড কুয়াশায় সব আবছা হয়ে থাকে। কখনও পাতলা কুয়াশার ভিতর দিয়ে জ্যোৎস্নারাতে এক অপার্থিব প্রেক্ষাপট দেখে সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকে।

না, সে কোনও বোঝাপড়াই করে উঠতে পারেনি নিজের সঙ্গে। সে নিজের মনকে বুঝতে পারছে না। সে নিজেকে চিনে উঠতে পারছে না। নদী বা প্রকৃতি তাকে কোনও পথের সন্ধান দিল না। শুধু মুক্ত বায়ু তার ময়লা ফুসফুস পরিষ্কার করে দিল, একটু নেশা ধরিয়ে দিল।

বাঁকা, ভাবছি রোববারে কলকাতায় ফিরে যাবো।

যাবেন! তাই যান। এ বড় বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। খবরও তো দিয়ে আসেননি।

কিন্তু আমি আবার শিগগিরই এসে কিছুদিন থাকব।

থাকবেন। তবে ওদিকটা সামাল দিয়ে আসবেন।

বিষয়ী বাঁকা তার সমস্যা বোঝে না। কিন্তু বাঁকা যা বলে তা বাস্তববাদীর কথাই। বাঁকা তার এই একাকী বাস করাটা পছন্দ করছে না। কিছু একটা সন্দেহ করছে। সেটা অমূলকও নয়।

দাড়িতে আমাকে কেমন লাগছে বাঁকা?

বাঁকা হাসল। বলল, কিছু খারাপ লাগছে না। তবে রাখার দরকারটাই বা কী?

দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে হেমাঙ্গ বলল, রেখে দেখাই যাক না। শুনেছি দাড়িতে রেডিয়েশন আটকায়, চোখ ভাল থাকে। তাছাড়া কেন কে জানে, দাড়ি কামাতে আমার বড্ড আলিস্যি।

কী যে বলেন!

শনিবার দুপুরে রান্না চাপানোর আয়োজন করছিল হেমাঙ্গ। উনুন ধরাতে, বাসন মাজতে, ঘর ঝাঁটপাট দিতে একটা মেয়ে আসে। তার নাম বাসন্তী। বয়স সতেরো-আঠারো এবং ভীষণ ফচকে। মোটেই লজ্জাবতী লতা নয়। বয়সটা বিপজ্জনক, তবে বাঁকা সার্টিফিকেট দিয়েছে, মেয়েটা ভাল। ঢলাঢলি করার মতো মেয়ে নয়।

বাসন্তী একটু বেশী কথা কয় বটে, কিন্তু সময়টা খারাপ কাটে না হেমাঙ্গর। আগে বাবু বলে ডাকত, আজকাল দাদা ডাকে।

ও দাদা, আজ কী রাঁধবে গো? যজ্ঞিবাড়ির আয়োজন দেখছি।

এটা অবশ্য ঠাট্টা। যজ্ঞিবাড়ির আয়োজন কিছুই নেই। কিছু আলু, কয়েকটা মূলো আর একটু বেগুন মাত্র আছে। হেমাঙ্গ একটা ঝোল আর ভাত রাঁধে। কখনও একটু সেদ্ধ। এই-ই যথেষ্ট।

হেমাঙ্গ মৃদু একটু হেসে বলে, এতেই হবে।

তোমার তো সবতাতেই হয়। ঝোল রাঁধবে তো? এই ঝোলে কী দিতে হয় জানো? ডালের বড়ি।

ওসব লাগবে না।

বলো তো এনে দিই। শম্ভুর মা বড়ি বিক্রি করে, এই তো কাছেই বাড়ি।

বড়িফড়ির অনেক ঝামেলা।

তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। সারাদিন হাঁ করে গালে হাত দিয়ে কী ভাবছো আর সেদ্ধপোড়া অখাদ্য সব সোনামুখ করে খেয়ে নিচ্ছে। আমার হাতে খাবে? বলো তো রেঁধে দিয়ে যাই।

তোর হাতে খেলে আমার মজাটাই মাটি।

উঃ, খুব তত মজা। কাল না গরম তেলের ছিটে লেগেছিল হাতে!

রাঁধতে গেলে ওরকম হয়।

তোমাকে বলেছে! আমরা বুঝি রাঁধি না? তুমি যে কড়াইতে তরকারি ছাড়ার সময় ভয়ে সিঁটিয়ে থাকো, আর দূর থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দাও। ওতেই তো ছিটে লাগে।

হেমাঙ্গ লজ্জার হাসি হেসে বলে, কি জানিস, গরম তেলে তরকারি দিলেই যে প্রথমে ঝম করে ওঠে বা চিড়বিড় করে ওটাকে আমি একটু ভয় পাই।

বাসন্তী হি-হি করে হাসল। বলল, তাহলেই বোঝে কেমন রাঁধুনী হয়েছো। আমার হাতে যদি খাও তো কম তেল কম মশলায় ভাল করে বেঁধে দেবো। আমাদের গরিব ঘরে ওসব শিখতে হয়। তুমি গুচ্ছের তেল মশলা নষ্ট করছে রোজ। অত লাগে না।

শিখব রে, আস্তে আস্তে শিখব সব।

তোমার শেখারই বা কি দরকার? বাঁকা চাচা বলে, তুমি নাকি বড় বড়লোক। তাহলে শিখবে কেন? রাঁধার তো লোক আছে।

তবু শেখা ভাল। সব শেখা ভাল। তাতে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না।

ই বাবা, সব যদি তুমিই করে নাও তবে আমাদের কে আর ঘরের কাজ করতে ডাকবে? খাবো কি তবে?

তুই বরের জন্য রাঁধবি।

আহা, আমাদের আবার বিয়ে, তার আবার বর। তোমাদের মতো নাকি? বর তো আজ আছে, কাল নেই। ছেড়ে চলে যায়।

তোরটা গেছে নাকি?

একবার নয় গো, এই নিয়ে দুবার হল। আমাদের তো আর তোমাদের মতো বিয়ে রেজিস্টারি হয় না, ডিভোর্স করতে কেউ আদালতেও যায় না। ধরলেই হল, ছাড়লেই হল।

সেটা তো ভালই। সম্পর্কে ধরাবাঁধা ব্যাপার নেই।

তোমার এরকম ভাল লাগে বুঝি? পেটের চিন্তা থাকলে বুঝতে। তার ওপর যদি বাচ্চাকাচ্চা হয়। মরদের তো দায় নেই, যত দায় আমাদের। মরদ তোত ছেড়ে দিয়ে আর একটাকে ধরে।

আর মেয়েগুলো বুঝি বরকে ছাড়ে না?

বাসন্তী হি-হি করে হেসে বলে, তাও ছাড়ে। তবে কম।

তোর বয়স কত?

ঠোঁট উল্টে বাসন্তী বলে, কে জানে কত! তবে খুব কম নয়।

সতেরো-আঠেরোর বেশী হবে না।

তাই ধরে নাও, হি-হি।

এই বয়সে দু-দুটো মরদ তোকে ছাড়ল? হ্যাঁ রে বাসন্তী, তুই যে তাজ্জব করলি!

আমার দোষ বুঝি! দেখ গে আমাকে ছেড়ে আর একজনকে নিয়ে ঘর করছে। ফের তাকেও ছাড়বে। সবই আমাদের কপাল।

তা ভাল দেখে একটা মানুষকে বিয়ে করতে পারিস না?

বিয়ে কি আর খোলামকুচি? ইচ্ছে করলেই ভাল পাব কোথায়? কপালে যা জোটে। আমাদের ওরকমই সব হয়।

এ তো অরাজকতা রে!

তা যা বলল। তুমিই তো এক্ষুনি প্রশংসা করছিলে। বললে তো যে, ব্যাপারটা বেশ, ধরাবাঁধা থাকে না কেউ।

হেমাঙ্গ একটু হাসল, একদিক দিয়ে তো ভালই। কিন্তু সমাজবন্ধন বলে একটা কথা আছে, সেটা তুই বুঝবি না। তবে সমাজটাকে একটা খুঁটে বেঁধে না রাখলে মুশকিল। এরকম ভেসে বেড়ালে সমাজটাই তো গড়ে ওঠে না। পরিবার একটা মস্ত কথা। সমাজের নিউক্লিয়াস।

বড্ড শক্ত শক্ত কথা বললা তুমি। হ্যাঁ দাদা, আজ মশলাটা কী হবে বল তো! জিরে হলুদ বেটে দিই?

দে। আমার একটা হলেই হল।

শোনো, জিরে ফোড়ন দিও, একটা তেজপাতা দিও তার সঙ্গে। তুমি মাছ-টাছ খাও না?

ক’দিন খাচ্ছি না।

কেন খাচ্ছো না? ঝামেলার ভয়ে? আমি কেটেকুটে দিয়ে যাবোখন।

হেমাঙ্গ একটু ম্লান হেসে বলে, আসলে, আমি মাছ রাঁধলে কেমন একটা আঁশটে গন্ধ থেকে যায়। খেতে পারি না।

হি-হি করে খুব হাসে বাসন্তী। বলে, সাঁতলাও না?

সবই করি। তবু হয় না।

হি-হি। তুমি কিছু পারো না। শুধু লেখাপড়া আর বসে বসে ভাবা।

এরকমই ভাল। বেশী হাঙ্গামা করতে নেই। যত সহজ সরল থাকা যায়।

আমি মাছ বেঁধে দিয়ে যাবো কাল থেকে।

না রে। নিরামিষ তত খারাপ লাগছে না। ভাবছি এবার থেকে এখানে এলে নিরামিষই খাবো।

তোমার যে কী বুদ্ধি! এখানে তো একটা জিনিসই ভাল। মাছ। এত টাটকা মাছ কি কলকাতায় পাবে? নগেনকে বলে দিলে সে একেবারে জ্যান্ত মাছ ঘরে পৌঁছে দিয়ে যাবে। কানকো উল্টে দেখার দরকার নেই। দাপানো মাছ।

হোক গে। আমার মাছ ভাল লাগছে না।

ধনেপাতা খাও?

খাই। কেন?

আমাদের উঠোনে হয়েছে। কাল নিয়ে আসবো। ঝোলে একটু দিও। স্বাদ হবে।

আচ্ছা।

এইভাবেই সম্পর্ক রচিত হয় বুঝি। কোথায় ছিল সে, কোথায় বাসন্তী বা বাঁকা মিঞা বা এ গাঁয়ের আর সবাই। কত তফাত তাদের জীবনযাত্রায়। এ গাঁয়ে এই অজ্ঞাতবাস করতে এসেই না চেনা হল! এটা কি কম! মানুষের যা আয়ু তাতে জীবৎকালে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের প্রত্যেককে একবার হ্যালো বলে যাওয়ারও সময় নেই। কত দূর দূরান্তে শহরে গাঁয়ে পাহাড়ে জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে মানুষ। এত মানুষের কত জনকে চেনে হেমাঙ্গ? এই যে চেনাজানা হচ্ছে, পরিচয় বিস্তারলাভ করছে, এটাই হেমাঙ্গর মস্ত প্রাপ্তি বলে মনে হয়।

উঠোন ঝাড় দিতে দিতে হঠাৎ বাসন্তী চেঁচাল, উঃ মা গো!

সাপে কামড়েছে ভেবে ভয় খেয়ে হেমাঙ্গ ঘর থেকে তার কোম্পানি ট্যাক্সের বইখানা হাতে নিয়েই দৌড়ে বেরিয়ে এল, কী হল রে? কী কামড়েছে?

ওমা, কী সুন্দরমতো একটা মেয়ে ঘাটে নেমেছে দেখ? এ হয় তোমার কাছে এসেছে, নয়তো ফিল্ম স্টার। শুটিং করতে এসেছে। সঙ্গে লোক আছে। দেখবে এসো না!

হেমাঙ্গর বুকটা ধক করে উঠল।

এক সেকেন্ড বাদেই বাসন্তী আর একটা আর্তনাদ করল, ওমা গো, আর একটা সুন্দরমতো মেয়ে যে গো! কী শাড়িটা! ওঃ, ময়ূরের মতো দেখাচ্ছে দুজনকে।

হেমাঙ্গ উঠোনে নামল এবং দেখল। চারুদি, রশ্মি, চয়ন। আর কে আছে দেখল না হেমাঙ্গ। হঠাৎ তার এত লজ্জা করতে লাগল যে, পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হল।

বাসন্তী সম্মোহিতের মতো চেয়ে থেকে বলে, ও দাদা, এসব কি তোমার লোক? নাকি শুটিং?

হেমাঙ্গ আস্তে করে বলে, আমারই লোক। তুই নগেনের কাছে যা। মাছ নিয়ে আয়।

তোমার লোক! বলে খুশিতে হি-হি করে হাসল বাসন্তী, কী মজা বলো তো!

তোর কথা মিথ্যেও নয়। সামনের জন আমার এক দিদি। একসময়ে ফিল্ম স্টার ছিল।

চোখ গোল করে বাসন্তী বলে, সত্যি? যাবো? গিয়ে নিয়ে আসবো ওদের?

আনতে হবে না। নিজেরাই চিনে আসবে। ওরা আমাকে খুঁজতেই এসেছে।

পিছনের মেয়েটা কে বলল তো?

ও আর একজন। বলে হেমাঙ্গ অপ্রস্তুত ভাবে চুপ করে গেল।

হি-হি করে বাসন্তী হাসল।

হাসছিস কেন?

ও তোমার কে হয় বলব?

বলতে হবে না। নগেনের কাছে যা।

যাচ্ছি। আসুক না, একটু দেখে যাই। আর, মাছটা কিন্তু আমি রাঁধব।

রাঁধিস। আজ সবই তোকেই রাঁধতে হবে বোধ হয়।

সত্যি?

আমার রান্না আমি ছাড়া আর কেউ খেতে পারবে বলে মনে হয় না।

তুমি যে বড় দাঁড়িয়ে আছে? ফটক পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াও। ওঁরা তোমাকে দেখতে পেলে তো ইদিকে আসবে। তুমি যেন বাপু কেমনধারা!

বাসন্তীর দিকে চেয়ে হঠাৎ মনে মনে একটু প্রমাদ গুনল হেমাঙ্গ। টগবগে সপ্তদশী গেঁয়ো যুবতীটিকে তার বাড়িতে দেখে ওদের কিছু সন্দেহ হবে না তো! বিশেষ করে চারুদিদি একটু সন্দেহবাতিকগ্রস্ত। তার একবার ইচ্ছে হল, বাসন্তীকে গা-ঢাকা দিতে বলে। তারপর ভাবল, থাকগে, যা হওয়ার হবে।

আশ্চর্যের বিষয়, ওদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এল বাঁকা মিঞা। মুখে একটু পাজি হাসি লেগে আছে। হঠাৎ এ সময়ে সে কেন ঘাটে হাজির ছিল, তা বুঝল না হেমাঙ্গ। কিন্তু সন্দেহ হতে লাগল, এ ব্যাপারে বাঁকা মিঞার কিছু যোগসাজস থাকতেও পারে।

আগড় ঠেলে যখন উঠোনে ঢুকছিল ওরা তখন হেমাঙ্গ একটু আড়ালে সরে ছিল ইচ্ছে করেই। চট করে মুখখামুখি হতে বড্ড সংকোচ হচ্ছে। বুকটা টিপটিপ করছে বড়। দরজার আড়াল থেকেই দেখতে পেল, শুধু চারুশীলা, চয়ন, রশ্মিই নয়, পিছনে আরও দুজন। চারুশীলার বর সুব্রত আর…আশ্চর্যের বিষয় আর একজন হল ঝুমকি।

চারুশীলা উঠোনে পা দেওয়ার আগে থেকেই বকবক করছিল, এই নাকি হাইড আউট বাঁকা মিঞা? এ তো ভীষণ বিচ্ছিরি অ্যারেঞ্জমেন্ট! ও বাঁকা, ভূতটা এখানে থাকে কি করে? ও যে বরাবর ভীষণ শৌখিন।

বাঁকা হাসি-হাসি মুখ করে বলে, সেটাই তো বুঝে উঠতে পারি না। কেন যে আছেন পড়ে এখানে। জমি জায়গাও কিনতে চাইছেন। ঘোরতর পাগলামি।

কী যে মুশকিলে পড়েছি ওকে নিয়ে! এরকম বিচ্ছিরি জায়গায় লোকে থাকে?

সুব্রত একটু পিছনে ছিল। সে মৃদুভাষী। কখনও অন্যের ওপর নিজের মত চাপানোর চেষ্টা করে না। কিন্তু এখন হঠাৎ অনুচ্চ স্বরে সে বলে উঠলো, না চারু, জায়গাটা খারাপ নয় তো।

চারু স্বামীর দিকে এক ঝলক চেয়ে বলল, ভাল বলতে তো সিনিক বিউটি! সেটা তো বড় কথা নয়। আর কী আছে এখানে বলো! কিন্তু হাঁদা গঙ্গারামটা কোথায় গেল?

ধারেকাছেই আছেন। যাবেন আর কোথায়? এখানে যাওয়ার জায়গাটাই বা কই? বাঁকা মিঞা হেসে হেসে বলে।

চারু আচমকাই বাসন্তীকে দেখে থমকে যায়, ওমা! এ মেয়েটা কে বাঁকা?

এ হল বাসন্তী। খুব ভাল মেয়ে, দুঃখী মেয়ে। ঘরের কাজটাজ করে দিয়ে যায়।

বাসন্তী হঠাৎ গিয়ে ঢিপ করে একটা প্রণাম করে ফেলল চারুশীলাকে। তারপর পাইকারি হারে সবাইকে। সুন্দরী মেয়েদের দেখে তার চোখে পলক পড়ছে না। মুখ ফেটে পড়ছে খুশিতে।

যতখানি ক্যাজুয়াল হওয়া সম্ভব ততখানি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দরজা দিয়ে খুব ধীরে নিজেকে প্রকাশ করল হেমাঙ্গ। খুব বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, আরে তোরা!

এই অলম্বুশ! বাঃ বাঃ, চেহারার কী ছিরি হয়েছে।

হেমাঙ্গ অপ্রতিভ একটু হাসল।

চারুশীলা বেশ চেচিয়েই বলল, ‘রশ্মি, দেখে নাও, এর গলায় মালা দিতে তোমার ইচ্ছে হবে তো!

রশ্মি একটু পিছনে। তার মুখে হাসি নেই, কিন্তু যেন একটা হাসির আভাস রয়েছে। এই সেটআপকে সে হয়তো অপছন্দ করছে না। চারদিকে চেয়ে দেখছিল। সবার শেষে তাকাল তার দিকে।

এসো রশ্মি। এসো, আসুন, আপনারা।

চারু বলল, থাক আর আহ্বান করতে হবে না। আমরা আসবো বলেই এসেছি।

ঘরে ঢুকে চারদিকটা খুব ক্রিটিক্যাল চোখে দেখছিল চারুশীলা। বলল, তোর টয়লেট নেই? না থাকলে তো সর্বনাশ!

হেমাঙ্গ হাসে, আছে। ভয় নেই।

তাড়াতাড়ি সে বসবার জন্য জায়গা তৈরি করছিল। জায়গা অবশ্য বিশেষ নেই। বিছানা, একটা চেয়ার, গোটা দুই মোড়া সম্বল।

বাঁকা মিঞা বলল, থাক থাক। কষ্ট করতে হবে না। ফজল চেয়ার নিয়ে এসে গেছে। আর খাবার বন্দোবস্তও আজ আমিই করেছি। আপনি ব্যস্ত হবেন না।

বাস্তবিকই ফজল আর তার কয়েক বন্ধু গুটিকয়েক চেয়ার নিয়ে এসে ফেলল। একটা ফোল্ডিং টেবিলও এনে রাখল বারান্দায়। বোধ হয় খাওয়ার সময় লাগবে।

হেমাঙ্গ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, বাঁকা, এসব তুমিই তাহলে করেছো!

বাঁকা হাসল, আপনার ভাবগতিক ভাল বুঝছিলাম না, তাই।

সবাই বসল।

মুখোমুখি একা হেমাঙ্গ। যেন সামনে জুরিরা। সে আসামীর কাঠগড়ায়।

সকল অধ্যায়

১. ১. বাদামতলায় রামজীবনের পাকা ঘর
২. ২. এয়ারলাইনস্ অফিসের কাছাকাছি
৩. ৩. নতুন কেনা সুটকেসটা
৪. ৪. একটা ন্যাকা বৃষ্টি
৫. ৫. দোকানটায় ঢুকতে একটু লজ্জা করছে
৬. ৬. নপাড়ার ছেলেরা
৭. ৭. পৃথিবী কি দাড়ি কামায়
৮. ৮. মেঘলা দিনের কালো আলো
৯. ৯. আই সি এস ই পরীক্ষায়
১০. ১০. কামিনী-কাঞ্চন থেকে তফাত
১১. ১১. কাল রাতে বামাচরণে আর রামজীবনে
১২. ১৩. যেমন ভ্যাতভ্যাতে বর্ষা তেমনি গুমসোনো গরম
১৩. ১৪. মায়ের সঙ্গে ঝুমকির বোঝাপড়ার অভাব
১৪. ১৫. দুদুটো প্রেমে পড়ে গেল হেমাঙ্গ
১৫. ১৬. বিষ্ণুপদর পেটটা একটু নেমেছে
১৬. ১৭. জানালা দুরকম হয়
১৭. ১৮. বীণাপাণির বিপদের কথা
১৮. ১২. লিফটবাহিত হয়ে
১৯. ১৯. এনি সার্জারি অন মাই হার্ট
২০. ২০. নতুন আফটার শেভ লোশন
২১. ২১. পুলিন ডাক্তার সব বিদ্যেই জানে
২২. ২২. প্লেন চলেছে ভোরের দিকে
২৩. ২৩. বনগাঁয়ের জমাটি অঞ্চলে নয়
২৪. ২৪. কাউকে কোনও উপলক্ষে ফুল দেওয়া
২৫. ২৫. খোঁচাখুঁচি করা হেমাঙ্গর একটা বদ অভ্যাস
২৬. ২৬. মেঘ দেখলে আনন্দ হয়
২৭. ২৭. শরীর ছাড়া মানুষের আর কী আছে
২৮. ২৮. বিড়ির গন্ধটা নিমাইয়ের সহ্য হচ্ছিল না
২৯. ২৯. ছেলেটাকে ধরেছিল আপা
৩০. ৩০. গাঁয়ের স্কুলের অডিট
৩১. ৩১. জলকাদায় বৃষ্টিতে গাঁ-গঞ্জের কাঁচা-পাকা রাস্তায়
৩২. ৩২. মোহিনী অনেকদিন ধরে তাকে বলছে
৩৩. ৩৩. ছিনের মরার কথা ছিল না
৩৪. ৩৪. প্রিয় ঋতু
৩৫. ৩৫. পোড়া মাংসের স্বাদ
৩৬. ৩৬. ভূতুরে ভয়
৩৭. ৩৭. কনফারেন্স, সেমিনার এবং বক্তৃতা
৩৮. ৩৮. নিমাইচরণ আছো নাকি
৩৯. ৩৯. কল্পনায় শহরটাকে ঠিকমতো সাজিয়ে গুছিয়ে
৪০. ৪০. গত সাত দিন ধরে হেমাঙ্গ ভাবছে
৪১. ৪১. তৰ্পণের দিন
৪২. ৪২. হেঁচকির শব্দ
৪৩. ৪৩. আজকাল বড্ড ভ্রম হয়ে যাচ্ছে
৪৪. ৪৪. লিভিং রুমের ঠিক মাঝখানটায়
৪৫. ৪৫. হেমাঙ্গর কোনও ওয়ারিশন থাকবে না
৪৬. ৪৬. সন্তৰ্পণে দরজাটি খুলল
৪৭. ৪৭. প্রফেসর শর্মা
৪৮. ৪৮. দুনিয়াটা চারদিকে হাঁ-হাঁ করা খোলা
৪৯. ৪৯. বড় মেয়ের বয়স
৫০. ৫০. ভাঙনে নদীর ধারে বাড়িঘর
৫১. ৫১. নিমকহারাম শব্দটা
৫২. ৫২. চিলেকোঠাটা এত ছোটো
৫৩. ৫৩. কাকা ডেকে পাঠিয়েছিলেন
৫৪. ৫৪. স্কুল-টুলেও বক্তৃতা
৫৫. ৫৫. সারা রাত ঘরের কাছে জলের ঢেউ
৫৬. ৫৬. এক-একটা দিন আসে
৫৭. ৫৭. চয়ন যখন পড়ায়
৫৮. ৫৮. ঘটনাটা ঘটল সন্ধেবেলায়
৫৯. ৫৯. বাড়ির প্ল্যান পাল্টাতে হল
৬০. ৬০. নদীর ধারে বাস করতে
৬১. ৬১. পড়াতে পড়াতে সব মনে পড়ে যাচ্ছে
৬২. ৬২. একটা নদী কত কী করতে পারে
৬৩. ৬৩. এরা মাটি ভাগ করতে চায়
৬৪. ৬৪. নিরঞ্জনবাবুর কাছে বসে থাকলে
৬৫. ৬৫. জ্যোৎস্না রাতে ছাদের রেলিং-এর ধারে
৬৬. ৬৬. একটা গুণ্ডার দল
৬৭. ৬৭. হেমাঙ্গর দাড়ি ক্ৰমে বেড়ে যাচ্ছে
৬৮. ৬৮. নিজেকে মুক্ত রাখা কি সোজা কথা
৬৯. ৬৯. চারুশীলা যে কেন তাকে এয়ারপোর্টে ধরে এনেছে
৭০. ৭০. টাকা আসছে
৭১. ৭১. অপর্ণার ইদানীংকালের জীবনে
৭২. ৭২. রশ্মি চলে যাওয়ার দিন
৭৩. ৭৩. শ্যামলীকে শাসিয়ে গেল
৭৪. ৭৪. যারা টিউশনি করে
৭৫. ৭৫. পনেরো দিন জ্বরে পড়েছিল বীণা
৭৬. ৭৬. পার্কের মধ্যে ঘাপটি মেরে
৭৭. ৭৭. ডারলিং আৰ্থ বইটা
৭৮. ৭৮. স্ট্রোক জিনিসটা কি
৭৯. ৭৯. দাদার সঙ্গে সম্পর্কটা
৮০. ৮০. চিঠিটা এল দুপুরে
৮১. ৮১. আপার মা আর বাবা
৮২. ৮২. দাড়ি আর গোঁফের কতগুলো অসুবিধের দিক
৮৩. ৮৩. বামাচরণকে প্রথমটায় চিনতেই পারেনি বিষ্ণুপদ
৮৪. ৮৪. লিফটে একাই ছিল চয়ন
৮৫. ৮৫. বীণা এত অবাক হল
৮৬. ৮৬. গ্যারেজের ওপর একখানা ঘর
৮৭. ৮৭. আর কী বাকি রাখলেন
৮৮. ৮৮. টাকা জিনিসটার যে কী মহিমা
৮৯. ৮৯. তার ভিজিটিং কার্ড নেই
৯০. ৯০. বুকের মধ্যে যেন একটা শাঁখ বেজে ওঠে
৯১. ৯১. আপাতত একতলা
৯২. ৯২. একটা মধ্যযুগীয় শাসনতন্ত্র
৯৩. ৯৩. পুত্রকন্যা শব্দগুলির অর্থ
৯৪. ৯৪. হেমন্তের স্নিগ্ধ বিকেল
৯৫. ৯৫. পালপাড়ায় গিয়ে একদিন
৯৬. ৯৬. মণীশের বাক্যহীন চেয়ে-থাকাটা
৯৭. ৯৭. পৃথিবীর রূপের জগৎ
৯৮. ৯৮. বিনীতভাবে নমস্কার
৯৯. ৯৯. একটু ফাঁকা লাগছিল চয়নের
১০০. ১০০. এত আনন্দ হল বাড়িতে
১০১. ১০১. কত সামান্য হলেই চলে যায়
১০২. ১০২. কাকা তাকে ডাকল না
১০৩. ১০৩. রবিবারের এক সকালে
১০৪. ১০৪. ছোট ফিয়াট গাড়ির মধ্যে
১০৫. ১০৫. চারদিকে সুখ
১০৬. ১০৬. মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় অরণ্যে
১০৭. ১০৭. মাসে মাসে পাঁচশো করে টাকা
১০৮. ১০৮. চারদিকে কত গাছ
১০৯. ১০৯. বডন স্ট্রিটের বাড়িতে
১১০. ১১০. বাংলাদেশে যাওয়ার আগে
১১১. ১১১. শোকের এমন প্রকাশ
১১২. ১১২. এইভাবেই দান উল্টে যায় পৃথিবীর
১১৩. ১১৩. মণীশের শরীর খারাপ হয়েছিল
১১৪. ১১৪. রাওয়াত নামে এক বন্ধু
১১৫. ১১৫. বিষ্ণুপদর শ্রাদ্ধাদি মিটে যাওয়ার এক মাস পর
১১৬. ১১৬. শীতের শুরুতেই দাদা-বউদি বেড়াতে গেল
১১৭. ১১৭. নিমাইয়ের পাঠানো টাকা
১১৮. ১১৮. একবিংশ শতকে কেমন হবে নর-নারীর সম্পর্ক
১১৯. ১১৯. ক্রাচে ভর দিয়ে
১২০. ১২০. একাকার হয়ে যাই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন