৪.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ইহা কি সম্ভব?

পাঁচকড়ি দে

পশ্চাৎ হইতে কে উত্তর করিল, কি আশ্চর্য্য! স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর না? দেবেন্দ্রবিজয় ও মনিরুদ্দীন উভয়েই মহা বিস্মিত হইয়া মাথা তুলিয়া ফিরিয়া দেখিলেন, মুক্ত কক্ষদ্বারে দাঁড়াইয়া মুক্তকেশা দিলজান| তাহার কৃষ্ণচক্ষুঃ জ্বলিতেছে, -সুকৃষ্ণকেশপাশ আলুলায়িত-কতকগুলা চোখে মুখে আসিয়া পড়িয়াছে-কি এক তীব্র উত্তেজনায় তাহার আপাদমস্তক কম্পিত হইতেছে! তাহার দক্ষিণ হস্তে একখানি সুদীর্ঘ শাণিতা ছুরিকা-তাহাও ভয়ানক বেগে কাঁপিয়া কাঁপিয়া উঠিতেছে-দৃষ্টি উন্মাদের; কিন্তু স্বর অত্যন্ত কঠিন ও দৃঢ়-দৃঢ়স্বরেই দিলজান বলিল, “আর কেহ নহে, এই দিলজান নিজে| আমার জন্য একজন নির্দ্দোষীকে দণ্ডিত করিবার চেষ্টা করিয়ো না| আমি অন্তরালে থাকিয়া সমুদয় শুনিয়াছি-কাহারও কোন দোষ নাই-আমি শয়তানীই সকল অনর্থের মূল| তোমরা যে আমার অপরাধ একজন নির্দ্দোষীর উপরে ফেলিবে, তা’ আমি তোমাদের কথার ভাবে ফরিদপুরের সেই বাগানেই বুঝিতে পারিয়াছিলাম| যত শীঘ্র পারিয়াছি, এখানে চলিয়া আসিয়াছি| আরও শীঘ্র পৌঁছতে পারিলে ভাল হইত-মল্লিক সাহেবকে সকল কথা বলিয়া সাবধান করিয়া দিতে পারিতাম| ঠিক সময়ে আসিতে পারি নাই-যাহা মনে করিয়াছিলাম, তাহা হইল না| তাহা না হইলেও এখানে অসিয়া তোমাদের হাত হইতে এখন একজন নির্দ্দোষীকে যে রক্ষা করিতে পারিলাম, ইহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট| কে আমার ভগিনীকে খুন করিয়াছে, শুনিতে চাও? আমি নিজে-নিজের হাতে নিজের ভগিনীকে খুন করিয়াছি-রোষে, দ্বেষে, প্রাণের জ্বালায়, দারুণ ঈর্ষায় উন্মাদিনী হইয়া ভগিনী ভগিনীর বুকে ছুরি বসাইতেও কুণ্ঠিত হয় নাই| সৃজান যেমন আমাকে অপেক্ষা করিতে বলিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইল, আমিও তখনই গোপনে তাহার অনুসরণ করিলাম| সৃজান এখানে আসিলে আমি পথে গোপনে তাহার অপেক্ষা করিোতে লাগিলাম| এখান হইতে সে বাহির হইলে আবার আমি তাহার অনুসরণ করিয়া মেহেদীবাগানে তাহাকে ধরিলাম| সে কিছুতেই মল্লিক সাহেবকে ত্যাগ করিতে চাহিল না| আমি তাহাকে বুঝাইতে চেষ্টা করিলাম| সে না বুঝিয়া মর্ম্মভেদী কটুক্তি বর্ষণ করিয়া আমার রাগ বাড়াইয়া দিল| আমি আর সহিতে না পরিয়া এই ছুরিতে তাহাকে খুন করিলাম|” হস্তস্থিত রৌপ্যমণ্ডিত সুদীর্ঘ ছুরিকা দেবেন্দ্রবিজয়ের পায়ের কাছে সজোরে নিক্ষেপ করিল| শারীরিক ও মানষিক উভয়বিধ দারুণ উত্তেজনায় তখনই দিলজানের সংজ্ঞা লুপ্ত হইয়া গেল| সে সেইখানে মৃতবৎ লুটায়া পড়িল|
দেবেন্দ্রবিজয় ছুরিখানি তাড়াতাড়ি কুড়াইয়া লইলেন| এবং মনিরুদ্দীন স্তম্ভিতভাবে দাঁড়াইলেন| পরক্ষণে মনিরুদ্দীন ছুটিয়া গিয়া দিলজানের মাথার কাছে ভূলগ্নজানু হইয়া বসিয়া ব্যাকুলভাবে বলিলেন, “একি ভয়ানক ব্যাপার!”
দে| সত্য হইলে খুব ভয়ানক বৈ কি!
ম| আপনি কি বিশ্বাস করেন না?
দে| একটি বর্ণও না|

সকল অধ্যায়

১. ১.০১. প্রথম পরিচ্ছেদ – আলোকে
২. ১.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – অন্ধকারে
৩. ১.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – নারীহত্যা
৪. ১.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সংবাদ-পত্রের মন্তব্য
৫. ১.০৫. পঞ্চম পরিচ্ছেদ – দেবেন্দ্রবিজয়
৬. ১.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – মা ও মেয়ে
৭. ১.০৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ – লতিমন
৮. ১.০৮. অষ্টম পরিচ্ছেদ – নুতন রহস্য
৯. ১.০৯. নবম পরিচ্ছেদ – বেনামী পত্র
১০. ১.১০. দশম পরিচ্ছেদ – অনুসন্ধান
১১. ১.১১. একাদশ পরিচ্ছেদ – দারুণ সন্দেহ
১২. ১.১২. দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – ছুরি – বিষাক্ত
১৩. ২.০১. প্রথম পরিচ্ছেদ – পরিচয়
১৪. ২.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – আর এক রহস্য
১৫. ২.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – আত্মসংযম
১৬. ২.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ প্রবল হইল
১৭. ২.০৫. পঞ্চম পরিছেদ – বালক শ্রীশচন্দ্র
১৮. ২.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – দ্বিতীয় পত্র
১৯. ২.০৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ – জোহেরা
২০. ২.০৮. অষ্টম পরিছেদ – উদ্যানে
২১. ২.০৯. নবম পরিচ্ছেদ – বিশ্রম্ভালাপে
২২. ২.১০. দশম পরিচ্ছেদ – ঘটনা-সূত্র
২৩. ২.১১. একাদশ পরিচ্ছেদ – বিপদে
২৪. ২.১২. দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – সংজ্ঞালাভে
২৫. ৩.০১ – প্রথম পরিচ্ছেদ – আর এক উদ্যম
২৬. ৩.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – উদ্যমের ফল
২৭. ৩.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – কে ধরা পড়িল?
২৮. ৩.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – মনে মনে নানা ভাবের প্রাবল্য
২৯. ৩.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – সাখিয়া
৩০. ৩.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – রহস্য ক্রমেই গভীর হইতেছে
৩১. ৩.০৭ সপ্তম পরিচ্ছেদ – তিতুরাম
৩২. ৩.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – পারিবারিক
৩৩. ৩.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – পূর্ব্বকথা
৩৪. ৩.১০ দশম পরিচ্ছেদ – উকীল-হরিপ্রসন্ন
৩৫. ৩.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – মুখ বন্ধ
৩৬. ৩.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – মুখবন্ধের কারণ কি?
৩৭. ৩.১৩ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ – কারণ – দুর্জ্ঞেয়
৩৮. ৩.১৪ – চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ – স্বপক্ষে
৩৯. ৩.১৫ পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ-বৈষম্য
৪০. ৪.০১ প্রথম পরিচ্ছেদ – স্বপক্ষে না বিপক্ষে?
৪১. ৪.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – পট-পরিবর্ত্তন
৪২. ৪.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – ভ্রম-নিরাস
৪৩. ৪.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – দিলজানের কথা
৪৪. ৪.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – ঘটনা-বৈষম্য
৪৫. ৪.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – প্রত্যাগমন
৪৬. ৪.০৭ – সপ্তম পরিচ্ছেদ – দোষক্ষালনের জন্য কি?
৪৭. ৪.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – তাহার পর কি হইল?
৪৮. ৪.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ইহা কি সম্ভব?
৪৯. ৪.১০ দশম পরিচ্ছেদ – রোগশয্যায় অরিন্দম
৫০. ৪.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – উপদেশ
৫১. ৪.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – গুরু ও শিষ্য
৫২. ৪.১৩ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ – কাজের কথা
৫৩. ৪.১৪ চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ – ভ্রম-সংশোধন
৫৪. ৫.০১ প্রথম পরিচ্ছেদ – কারাকক্ষে
৫৫. ৫.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – রহস্য-দুর্ভেদ্য
৫৬. ৫.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – রহস্য-বৈষম্য
৫৭. ৫.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – ঝটিকা ভিন্নদিকে বহিল
৫৮. ৫.০৫ পঞ্চম পরিচ্ছেদ – তদন্তে
৫৯. ৫.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – কণ্ঠহার
৬০. ৫.০৭ সপ্তম পরিচ্ছেদ – মেঘ-ঘনীভূত
৬১. ৫.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – মহা বিপদ্
৬২. ৫.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ধরা পড়িল
৬৩. ৫.১০ দশম পরিচ্ছেদ – নিজের বিষে
৬৪. ৫.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – নিজে মরিল
৬৫. ৫.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – শেষ
৬৬. ৫.১৩ উপসংহার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন