৩.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – কে ধরা পড়িল?

পাঁচকড়ি দে

এমন সময়ে মজিদ খাঁ দুগ্ধপূর্ণ একটা বড় কাচের পেয়ালা হস্তে কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিলেন। দুগ্ধ হইতে ধুঁয়া উড়িতেছে। মজিদ দুঃখিত ভাবে কহিলেন, “বড় কষ্ট হইতেছে-না?”
শ্রীশ রোদনের সুরে কহিল, ” বড় কষ্ট-পেট জ্ব’লে গেল-বুক পর্য্যন্ত শুকিয়ে গেছে-হুজুর-আমি আর বাঁচব না!”
“ভয় কি!” বলিয়া জানুতে ভর দিয়া মজিদ শ্রীশের মাথার কাছে বসিলেন। বসিয়া বলিলেন, “এই দুধটুকু খেয়ে ফেল দেখি; গায়ে এখনই জোর পাবে।”
শ্রীশ অনেক কষ্টে (?) উঠিল। এবং দুধের পেয়ালা নিজের হাতে লইয়া পান করিতে আরম্ভ করিয়া দিল।
মজিদ নিকটস্থ একখানা চেয়ারে বসিয়া, একটা চুরুটে অগ্নিসংযোগ করিয়া টানিতে আরম্ভ করিয়া দিলেন, এবং প্রসন্ননেত্রে বালক শ্রীশের দুগ্ধ পান দেখিতে লাগিলেন।
হায়, হতভাগ্য মজিদ! তুমি এখনও বুঝিতে পার নাই-কালসর্পকে দুগ্ধ দিয়া পোষণ করিতেছ-এখনই একটা সুযোগ পাইলে সে তোমাকেই দংশন করিবে। দুগ্ধপান শেষ করিয়া শ্রীশ ভাবভঙ্গিতে জানাইল, সে অনেকটা সুস্থ হইতে পারিয়াছে। সুস্থ হইবার কথা-এক সেরের অধিক দুগ্ধ তাহাকে দেওয়া হইয়াছিল।
মজিদ জিজ্ঞাসা করিলেন, ” আর কিছু খাবে?”
শ্রীশ বলিল, ” আর কিছু না-হুজুরের দয়ায় এ যাত্রা বেঁচে গেলাম-আপনি না দয়া কর্লে এতক্ষণে জাহান্নমে যেতে হ’ত।”
মজিদ তাহাকে কিছু পয়সা দিলেন। বলিলেন, “এই পয়সা নিয়ে যাও, এখনও খাবারের দোকান খোলা আছে, কিছু খাবার কিনে খাও গিয়ে।”
শ্রীশ ছাড়িবার পাত্র নহে-অনেকগুলি পয়সা ট্যাঁকে গুঁজিয়া বাহির হইয়া পড়িল।
মজিদ খাঁ নিজের ঘরের দ্বার বন্ধ করিলেন। তখন ঝড়-বৃষ্টি থামিয়া গিয়াছিল। আকাশ পরিষ্কার-মজিদ খাঁ সমুদয় গবাক্ষগুলি খুলিয়া দিলেন। গবাক্ষপথে চাহিয়া দেখিলেন, সেই অনাহারক্লিষ্ট বালক, এক্ষণে পার্শ্বস্থ গলিপথে দিয়া উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া চলিয়াছে। আপনমনে বলিলেন, “পরোপকারে মনের তৃপ্তি হয়-ফলও আছে।”
বলিতে কি, মজিদ এই পরোপকারে যে ফলপ্রাপ্ত হইলেন, তাহা পাঠক নিম্নলিখিত কয়েকটি পংক্তি পাঠে বুঝিতে পারিবেন।
পরদিন অপরাহ্নে মজিদ নিজের ঘরে বসিয়া মনিরুদ্দীনের জমিদারী সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ ঠিক করিতেছিলেন।
এমন সময়ে দুই ব্যক্তি আসিয়া তাঁহার পার্শ্বে দাঁড়াইলেন তন্মধ্যে একজন দেবেন্দ্রবিজয়, একজন স্থানীয় থানার জমাদার। মজিদ খাঁ দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখের দিকে চকিতে চাহিয়া বলিলেন, “মহাশয়, আবার কি মনে ক’রে?”
দেবেন্দ্রবিজয় পকেট হইতে একখানি ওয়ারেন্ট বাহির করিয়া দেখাইলেন। মজিদ আরও চমকিত হইয়া, মহা ভয় পাইয়া কহিলেন, ” কি সর্ব্বনাশ! এ ওয়ারেন্ট যে আমারই নামে! আমি কি করিয়াছি?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “আপনি দিলজানকে হত্যা করিয়াছেন। সেই হত্যাপরাধে মহারাণীর নাম লইয়া আপনাকে এখন বন্দী করিলাম।”
তখনই মজিদ খাঁর হাতে সশব্দে হাতকড়ি পড়িল। মজিদ খাঁ বন্দী হইলেন।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১. প্রথম পরিচ্ছেদ – আলোকে
২. ১.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – অন্ধকারে
৩. ১.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – নারীহত্যা
৪. ১.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সংবাদ-পত্রের মন্তব্য
৫. ১.০৫. পঞ্চম পরিচ্ছেদ – দেবেন্দ্রবিজয়
৬. ১.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – মা ও মেয়ে
৭. ১.০৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ – লতিমন
৮. ১.০৮. অষ্টম পরিচ্ছেদ – নুতন রহস্য
৯. ১.০৯. নবম পরিচ্ছেদ – বেনামী পত্র
১০. ১.১০. দশম পরিচ্ছেদ – অনুসন্ধান
১১. ১.১১. একাদশ পরিচ্ছেদ – দারুণ সন্দেহ
১২. ১.১২. দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – ছুরি – বিষাক্ত
১৩. ২.০১. প্রথম পরিচ্ছেদ – পরিচয়
১৪. ২.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – আর এক রহস্য
১৫. ২.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – আত্মসংযম
১৬. ২.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ প্রবল হইল
১৭. ২.০৫. পঞ্চম পরিছেদ – বালক শ্রীশচন্দ্র
১৮. ২.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – দ্বিতীয় পত্র
১৯. ২.০৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ – জোহেরা
২০. ২.০৮. অষ্টম পরিছেদ – উদ্যানে
২১. ২.০৯. নবম পরিচ্ছেদ – বিশ্রম্ভালাপে
২২. ২.১০. দশম পরিচ্ছেদ – ঘটনা-সূত্র
২৩. ২.১১. একাদশ পরিচ্ছেদ – বিপদে
২৪. ২.১২. দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – সংজ্ঞালাভে
২৫. ৩.০১ – প্রথম পরিচ্ছেদ – আর এক উদ্যম
২৬. ৩.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – উদ্যমের ফল
২৭. ৩.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – কে ধরা পড়িল?
২৮. ৩.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – মনে মনে নানা ভাবের প্রাবল্য
২৯. ৩.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – সাখিয়া
৩০. ৩.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – রহস্য ক্রমেই গভীর হইতেছে
৩১. ৩.০৭ সপ্তম পরিচ্ছেদ – তিতুরাম
৩২. ৩.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – পারিবারিক
৩৩. ৩.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – পূর্ব্বকথা
৩৪. ৩.১০ দশম পরিচ্ছেদ – উকীল-হরিপ্রসন্ন
৩৫. ৩.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – মুখ বন্ধ
৩৬. ৩.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – মুখবন্ধের কারণ কি?
৩৭. ৩.১৩ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ – কারণ – দুর্জ্ঞেয়
৩৮. ৩.১৪ – চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ – স্বপক্ষে
৩৯. ৩.১৫ পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ-বৈষম্য
৪০. ৪.০১ প্রথম পরিচ্ছেদ – স্বপক্ষে না বিপক্ষে?
৪১. ৪.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – পট-পরিবর্ত্তন
৪২. ৪.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – ভ্রম-নিরাস
৪৩. ৪.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – দিলজানের কথা
৪৪. ৪.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – ঘটনা-বৈষম্য
৪৫. ৪.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – প্রত্যাগমন
৪৬. ৪.০৭ – সপ্তম পরিচ্ছেদ – দোষক্ষালনের জন্য কি?
৪৭. ৪.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – তাহার পর কি হইল?
৪৮. ৪.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ইহা কি সম্ভব?
৪৯. ৪.১০ দশম পরিচ্ছেদ – রোগশয্যায় অরিন্দম
৫০. ৪.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – উপদেশ
৫১. ৪.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – গুরু ও শিষ্য
৫২. ৪.১৩ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ – কাজের কথা
৫৩. ৪.১৪ চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ – ভ্রম-সংশোধন
৫৪. ৫.০১ প্রথম পরিচ্ছেদ – কারাকক্ষে
৫৫. ৫.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – রহস্য-দুর্ভেদ্য
৫৬. ৫.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – রহস্য-বৈষম্য
৫৭. ৫.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – ঝটিকা ভিন্নদিকে বহিল
৫৮. ৫.০৫ পঞ্চম পরিচ্ছেদ – তদন্তে
৫৯. ৫.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – কণ্ঠহার
৬০. ৫.০৭ সপ্তম পরিচ্ছেদ – মেঘ-ঘনীভূত
৬১. ৫.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – মহা বিপদ্
৬২. ৫.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ধরা পড়িল
৬৩. ৫.১০ দশম পরিচ্ছেদ – নিজের বিষে
৬৪. ৫.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – নিজে মরিল
৬৫. ৫.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – শেষ
৬৬. ৫.১৩ উপসংহার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন