৪.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – ঘটনা-বৈষম্য

পাঁচকড়ি দে

দেবেন্দ্রবিজয় দিলজানকে বলিলেন, “তোমার কথায় অনেক গুপ্তরহস্য ভেদ হইল বটে; কিন্তু তোমার ভগিনীর হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদে সুবিধা হইতে পারে, এমন কোন কথাই পাওয়া গেল না। তোমার কথায় বুঝিতে পারিলাম, মজিদ খাঁ সেই ছুরি সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, মিথ্যা নহে। আর তাঁহার সহিত মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে যে স্ত্রীলোকের দেখা হইয়াছিল, যাহার নাম তিনি এমন বিপদে পড়িয়াও অদ্যাপি প্রকাশ করেন নাই-আমরা মনে করিয়াছিলাম, তুমিই সেই স্ত্রীলোক। এখন বুঝিলাম, তোমার বেশ ধরিয়া তোমার ভগিনীই সেখানে গিয়াছিল। একমুহূর্ত্তে সকলই উল্টাইয়া-পাল্টাইয়া গেল। যাহা হউক, এখন যাহাতে যোমার ভগিনীর হত্যাকারী ধরা পড়ে, তাহা করিতে হইবে; এ পর্য্যন্ত হত্যাকারীকে ধরিবার কোন সূত্রই পাওয়া যায় নাই। তুমি কি ইহার সম্বন্ধে কিছুই জান না?”
দিল। না।
দেবেন্দ্র। তোমার ভগিনী খুন হইয়াছে, তাহা কি মল্লিক সাহেব জানিতেন? সে সম্বন্ধে তিনি তোমাকে কিছু বলিয়াছেন?
দিল। না, তিনি কিরূপে জানিতে পারিবেন?
দে। কিরূপে জানিতে পারিবেন, তা’ আমি তোমাকে কি বলিল? তিনি তোমার ভগিনীর না হউক-যে কোন একটা খুন সম্বন্ধে কিছু বলিয়াছেন কি?
দিল। না।
মুন্সী সাহেব দেবেন্দ্রবিজয়কে বলিলেন, “এখনকার কাজ ত সব মিটিয়া গেল; মেহেদী-বাগানের সেই নিহত স্ত্রীলোক যে আমারই স্ত্রী, সে সম্বন্ধে আর কোন সন্দেহ নাই। এখন কি করিবেন, স্থির করিয়াছেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “এখন কলিকাতায় গিয়া একবার মনিরুদ্দীনের সহিত দেখা করিতে হইবে। তিনি সেদিন রাত বারটার পর হইতে কোথায় ছিলেন, কি করিয়াছিলেন-তাঁহার গতিবিধি সম্বন্ধে সমুদয় কথা জানা এখন আমাদের বিশেষ দরকার হইতেছে।”
ব্যাঘ্রীর মত সবেগে মাথা তুলিয়া দিলজান দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল, “কি ভয়ানক! আপনি কি শেষে তাঁহাকেই সন্দেহ করিলেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “কই-সন্দেহের কোন কথা ত আমি বলি নাই। তিনি সেদিন রাত বারটার পর কোন্ কাজে কোথায় ছিলেন, কোথায় গিয়াছিলেন, তাঁহারই গতিবিধির সন্তোষজনক উত্তর আমাদিগকে দিবেন মাত্র। ইহাতে ক্ষতি কি?”
“ক্ষতি কিছুই না,” বলিয়া দিলজান সহসা উঠিয়া দাঁড়াইল। তাহার পর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিল, “যাহা ভাল বুঝিবেন, তাহাই করিবেন। আমি যাহা কিছু জানিতাম, সমুদয় বলিয়াছি।” তৎক্ষণাৎ দিলজান পর্দ্দা তুলিয়া, সেই দ্বারপথে কক্ষের বাহির হইয়া গেল।
হরিপ্রসন্ন বাবু দেবেন্দ্রবিজয়কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সত্যই কি আপনি এখন অনুমান করিতেছেন, মনিরুদ্দীন সৃজানকে খুন করিয়াছে? সে সৃজানকে কেন খুন করিতে যাইবে?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “তা’ সৃজানকে সে কেন খুন করিতে যাইবে? সৃজানকে খুন করিবার কোন কারণই নাই; তা’ না থকিলেও সে খুন করিতে পারে আর তাহার কারণেরও কোন অভাব নাই।”
মুন্সী সাহেব চকিত হইয়া বলিলেন, “তবে কি মনিরুদ্দীন দিলজানকে খুন করিতে গিয়া ভ্রমক্রমে আমার স্ত্রীকে খুন করিয়াছেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “তাহাই ঠিক।”

সকল অধ্যায়

১. ১.০১. প্রথম পরিচ্ছেদ – আলোকে
২. ১.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – অন্ধকারে
৩. ১.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – নারীহত্যা
৪. ১.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সংবাদ-পত্রের মন্তব্য
৫. ১.০৫. পঞ্চম পরিচ্ছেদ – দেবেন্দ্রবিজয়
৬. ১.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – মা ও মেয়ে
৭. ১.০৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ – লতিমন
৮. ১.০৮. অষ্টম পরিচ্ছেদ – নুতন রহস্য
৯. ১.০৯. নবম পরিচ্ছেদ – বেনামী পত্র
১০. ১.১০. দশম পরিচ্ছেদ – অনুসন্ধান
১১. ১.১১. একাদশ পরিচ্ছেদ – দারুণ সন্দেহ
১২. ১.১২. দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – ছুরি – বিষাক্ত
১৩. ২.০১. প্রথম পরিচ্ছেদ – পরিচয়
১৪. ২.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – আর এক রহস্য
১৫. ২.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – আত্মসংযম
১৬. ২.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ প্রবল হইল
১৭. ২.০৫. পঞ্চম পরিছেদ – বালক শ্রীশচন্দ্র
১৮. ২.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – দ্বিতীয় পত্র
১৯. ২.০৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ – জোহেরা
২০. ২.০৮. অষ্টম পরিছেদ – উদ্যানে
২১. ২.০৯. নবম পরিচ্ছেদ – বিশ্রম্ভালাপে
২২. ২.১০. দশম পরিচ্ছেদ – ঘটনা-সূত্র
২৩. ২.১১. একাদশ পরিচ্ছেদ – বিপদে
২৪. ২.১২. দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – সংজ্ঞালাভে
২৫. ৩.০১ – প্রথম পরিচ্ছেদ – আর এক উদ্যম
২৬. ৩.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – উদ্যমের ফল
২৭. ৩.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – কে ধরা পড়িল?
২৮. ৩.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – মনে মনে নানা ভাবের প্রাবল্য
২৯. ৩.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – সাখিয়া
৩০. ৩.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – রহস্য ক্রমেই গভীর হইতেছে
৩১. ৩.০৭ সপ্তম পরিচ্ছেদ – তিতুরাম
৩২. ৩.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – পারিবারিক
৩৩. ৩.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – পূর্ব্বকথা
৩৪. ৩.১০ দশম পরিচ্ছেদ – উকীল-হরিপ্রসন্ন
৩৫. ৩.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – মুখ বন্ধ
৩৬. ৩.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – মুখবন্ধের কারণ কি?
৩৭. ৩.১৩ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ – কারণ – দুর্জ্ঞেয়
৩৮. ৩.১৪ – চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ – স্বপক্ষে
৩৯. ৩.১৫ পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ-বৈষম্য
৪০. ৪.০১ প্রথম পরিচ্ছেদ – স্বপক্ষে না বিপক্ষে?
৪১. ৪.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – পট-পরিবর্ত্তন
৪২. ৪.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – ভ্রম-নিরাস
৪৩. ৪.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – দিলজানের কথা
৪৪. ৪.০৫ পঞ্চম পরিছেদ – ঘটনা-বৈষম্য
৪৫. ৪.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – প্রত্যাগমন
৪৬. ৪.০৭ – সপ্তম পরিচ্ছেদ – দোষক্ষালনের জন্য কি?
৪৭. ৪.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – তাহার পর কি হইল?
৪৮. ৪.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ইহা কি সম্ভব?
৪৯. ৪.১০ দশম পরিচ্ছেদ – রোগশয্যায় অরিন্দম
৫০. ৪.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – উপদেশ
৫১. ৪.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – গুরু ও শিষ্য
৫২. ৪.১৩ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ – কাজের কথা
৫৩. ৪.১৪ চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ – ভ্রম-সংশোধন
৫৪. ৫.০১ প্রথম পরিচ্ছেদ – কারাকক্ষে
৫৫. ৫.০২ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – রহস্য-দুর্ভেদ্য
৫৬. ৫.০৩ তৃতীয় পরিচ্ছেদ – রহস্য-বৈষম্য
৫৭. ৫.০৪ চতুর্থ পরিচ্ছেদ – ঝটিকা ভিন্নদিকে বহিল
৫৮. ৫.০৫ পঞ্চম পরিচ্ছেদ – তদন্তে
৫৯. ৫.০৬ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – কণ্ঠহার
৬০. ৫.০৭ সপ্তম পরিচ্ছেদ – মেঘ-ঘনীভূত
৬১. ৫.০৮ অষ্টম পরিচ্ছেদ – মহা বিপদ্
৬২. ৫.০৯ নবম পরিচ্ছেদ – ধরা পড়িল
৬৩. ৫.১০ দশম পরিচ্ছেদ – নিজের বিষে
৬৪. ৫.১১ একাদশ পরিচ্ছেদ – নিজে মরিল
৬৫. ৫.১২ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – শেষ
৬৬. ৫.১৩ উপসংহার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন