ভ্রষ্ট লগ্ন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শয়নশিয়রে প্রদীপ নিবেছে সবে,
জাগিয়া উঠেছি ভোরের কোকিলরবে।
অলসচরণে বসি বাতায়নে এসে
নূতন মালিকা পরেছি শিথিল কেশে।
এমন সময়ে অরুণধূসর পথে
তরুণ পথিক দেখা দিল রাজরথে।
সোনার মুকুটে পড়েছে উষার আলো,
মুকুতার মালা গলায় সেজেছে ভালো।
শুধালো কাতরে ‘সে কোথায়’ ‘সে কোথায়’
     ব্যগ্রচরণে আমারি দুয়ারে নামি—
শরমে মরিয়া বলিতে নারিনু হায়,
     ‘নবীন পথিক, সে যে আমি, সেই আমি।’

গোধূলিবেলায় তখনো জ্বলে নি দীপ,
পরিতেছিলাম কপালে সোনার টিপ,
কনকমুকুর হাতে লয়ে বাতায়নে
বাঁধিতেছিলাম কবরী আপনমনে।
হেনকালে এল সন্ধ্যাধূসর পথে
করুণনয়ন তরুণ পথিক রথে।
ফেনায় ঘর্মে আকুল অশ্বগুলি,
বসনে ভূষণে ভরিয়া গিয়াছে ধূলি।
শুধালো কাতরে ‘সে কোথায়’ ‘সে কোথায়’
     ক্লান্তচরণে আমারি দুয়ারে নামি—
শরমে মরিয়া বলিতে নারিনু হায়,
     ‘শ্রান্ত পথিক, সে যে আমি, সেই আমি।’
 
ফাগুনযামিনী, প্রদীপ জ্বলিছে ঘরে,
দখিন‐বাতাস মরিছে বুকের’পরে।
সোনার খাঁচায় ঘুমায় মুখরা সারী,
দুয়ারসমুখে ঘুমায়ে পড়েছে দ্বারী।
ধূপের ধোঁয়ায় ধূসর বাসরগেহ,
অগুরুগন্ধে আকুল সকল দেহ।
ময়ূরকণ্ঠী পরেছি কাঁচলখানি
দূর্বাশ্যামল আঁচল বক্ষে টানি।
রয়েছি বিজন রাজপথপানে চাহি,
     বাতায়নতলে বসেছি ধূলায় নামি—
ত্রিযামা যামিনী একা বসে গান গাহি,
     ‘হতাশ পথিক, সে যে আমি, সেই আমি।’

বোলপুর
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৪

সকল অধ্যায়

১. দুঃসময়
২. বর্ষামঙ্গল
৩. চৌরপঞ্চাশিকা
৪. স্বপ্ন
৫. মদনভস্মের পূর্বে
৬. মদনভস্মের পর
৭. মার্জনা
৮. চৈত্ররজনী
৯. স্পর্ধা
১০. পিয়াসী
১১. পসারিনী
১২. ভ্রষ্ট লগ্ন
১৩. প্রণয়প্রশ্ন
১৪. আশা
১৫. বঙ্গলক্ষ্মী
১৬. শরত্‍‌
১৭. মাতার আহ্বান
১৮. ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ
১৯. হতভাগ্যের গান
২০. জুতা-আবিষ্কার
২১. সে আমার জননী রে
২২. জগদীশচন্দ্র বসু
২৩. ভিখারি
২৪. যাচনা
২৫. বিদায়
২৬. লীলা
২৭. নববিরহ
২৮. লজ্জিতা
২৯. কাল্পনিক
৩০. মানসপ্রতিমা
৩১. সংকোচ
৩২. প্রার্থী
৩৩. সকরুণা
৩৪. বিবাহমঙ্গল
৩৫. ভারতলক্ষ্মী
৩৬. প্রকাশ
৩৭. উন্নতিলক্ষণ
৩৮. অশেষ
৩৯. বিদায়
৪০. বর্ষশেষ
৪১. ঝড়ের দিনে
৪২. অসময়
৪৩. বসন্ত
৪৪. ভগ্ন মন্দির
৪৫. বৈশাখ
৪৬. রাত্রি
৪৭. অনবচ্ছিন্ন আমি
৪৮. জন্মদিনের গান
৪৯. পূর্ণকাম
৫০. পরিণাম
৫১. কৃতঘ্ন শোক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন