মাতার আহ্বান

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বারেক তোমার দুয়ারে দাঁড়ায়ে
  ফুকারিয়া ডাকো জননী!
প্রান্তরে তব সন্ধ্যা নামিছে,
  আঁধারে ঘেরিছে ধরণী।
ডাকো, ‘চলে আয়, তোরা কোলে আয়।’
ডাকো সকরুণ আপন ভাষায়;
সে বাণী হৃদয়ে করুণা জাগায়,
  বেজে ওঠে শিরা ধমনী—
হেলায় খেলায় যে আছে যেথায়
  সচকিয়া উঠে অমনি।

আমরা প্রভাতে নদী পার হনু,
  ফিরিনু কিসের দুরাশে।
পরের উঞ্ছ অঞ্চলে লয়ে
  ঢালিনু জঠরহুতাশে।
খেয়া বহে নাকো, চাহি ফিরিবারে,
তোমার তরণী পাঠাও এ পারে,
আপনার খেত গ্রামের কিনারে
  পড়িয়া রহিল কোথা সে!
বিজন বিরাট শূন্য সে মাঠ
  কাঁদিছে উতলা বাতাসে!
 
কাঁপিয়া কাঁপিয়া দীপখানি তব
  নিবু‐নিবু করে পবনে—
জননী, তাহারে করিয়ো রক্ষা
  আপন বক্ষোবসনে।
তুলি ধরো তারে দক্ষিণ করে—
তোমার ললাটে যেন আলো পড়ে,
চিনি দূর হতে, ফিরে আসি ঘরে
  না ভুলি আলেয়া‐ছলনে।
এ পারে দুয়ার রুদ্ধ, জননী,
  এ পরপুরীর ভবনে।
 
তোমার বনের ফুলের গন্ধ
  আসিছে সন্ধ্যাসমীরে।
শেষ গান গাহে তোমার কোকিল
  সুদূরকুঞ্জতিমিরে।
পথে কোনো লোক নাহি আর বাকি,
গহন কাননে জ্বলিছে জোনাকি,
আকুল অশ্রু ভরি দুই আঁখি
  উচ্ছ্বসি উঠে অধীরে।
‘তোরা যে আমার’ ডাকো একবার
  দাঁড়ায়ে দুয়ারবাহিরে।

নাগর-নদী। আত্রাই পথে
৭ আষাঢ় ১৩০৫

সকল অধ্যায়

১. দুঃসময়
২. বর্ষামঙ্গল
৩. চৌরপঞ্চাশিকা
৪. স্বপ্ন
৫. মদনভস্মের পূর্বে
৬. মদনভস্মের পর
৭. মার্জনা
৮. চৈত্ররজনী
৯. স্পর্ধা
১০. পিয়াসী
১১. পসারিনী
১২. ভ্রষ্ট লগ্ন
১৩. প্রণয়প্রশ্ন
১৪. আশা
১৫. বঙ্গলক্ষ্মী
১৬. শরত্‍‌
১৭. মাতার আহ্বান
১৮. ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ
১৯. হতভাগ্যের গান
২০. জুতা-আবিষ্কার
২১. সে আমার জননী রে
২২. জগদীশচন্দ্র বসু
২৩. ভিখারি
২৪. যাচনা
২৫. বিদায়
২৬. লীলা
২৭. নববিরহ
২৮. লজ্জিতা
২৯. কাল্পনিক
৩০. মানসপ্রতিমা
৩১. সংকোচ
৩২. প্রার্থী
৩৩. সকরুণা
৩৪. বিবাহমঙ্গল
৩৫. ভারতলক্ষ্মী
৩৬. প্রকাশ
৩৭. উন্নতিলক্ষণ
৩৮. অশেষ
৩৯. বিদায়
৪০. বর্ষশেষ
৪১. ঝড়ের দিনে
৪২. অসময়
৪৩. বসন্ত
৪৪. ভগ্ন মন্দির
৪৫. বৈশাখ
৪৬. রাত্রি
৪৭. অনবচ্ছিন্ন আমি
৪৮. জন্মদিনের গান
৪৯. পূর্ণকাম
৫০. পরিণাম
৫১. কৃতঘ্ন শোক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন