চেহারার পর্দার ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের দলিলসমূহ

চেহারার পর্দার ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের দলিলসমূহ

প্রথম দলিল

পর্দা সম্পর্কীত আয়াত। যেখানে নারীদেরকে বড় চাদর দ্বারা চেহারা ঢেকে নেয়ার হুকুম দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলার বাণী–

یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَ بَنٰتِکَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চারদরের কিয়দাংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)

এই আয়াতে সকল নারীদের কথাই উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূন্যাত্মা স্ত্রীগণসহ অন্যান্য মুসলিম নারীগণও এ হুকুমের আওতাভূক্ত। এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মুসলিম নারীদের জন্য চেহারার পর্দা করা জরুরী। আরো আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য পরপুরুষ থেকে আড়াল রাখে। আলোচ্য আয়াত থেকে মহিলা সাহাবীগণও এ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন যে, জালবাব তথা বড় চাদর দ্বারা পুরো শরীর ঢাকার পাশাপাশি চেহারাও আবৃত রাখতে হবে।

সেমতে ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ হযরত উম্মে সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর আনসারী নারীরা কালো চাদর পরিধান করে ঘর থেকে বের হতো। (সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪১০১)

দ্বিতীয় দলিল

ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি আনসারী নারীদের থেকে উত্তম আর কোনো নারী দেখিনি। কিতাবুল্লাহর সত্যায়ন ও তার উপর ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে অগ্রগামীও কাউকে দেখিনি। সূরা নূরে পর্দা সংক্রান্ত আয়াত তথা –

ولا يبدين زينتهن إلا ما ظهر منها وليضربن بخمرهن على

তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো।

পুরুষেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা শুনে ঘরে গিয়ে নিজেদের স্ত্রী-কন্যা ও মা, বোনদেরকে শোনালো। নারীদের প্রত্যেকেই তখন আল্লাহর সেই বিধান পালনে সচেষ্ট হলো। তারা বড় চাদরে তাদের মাথা আবৃত করল। কতেক নারী তাদের তাহমদকে ছিঁড়ে উড়না বানিয়ে নিলো। সকালে যখন নারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসল তখন তাদের মাথা চাদরে ঢাকা ছিল। আর তারা এতটাই নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। (তাফসীরে ইবনে আবি হাতিম : ৮/২৫৭৫ এবং সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪১০০)

তৃতীয় দলিল

উম্মে আতিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নারীদেরকেও ঈদের নামাযে আসার আদেশ দিলেন, তখন তাঁর কাছে আরজ করা হলো,

হে আল্লাহর রাসূল! যদি কোনো নারীর কাছে বড় চাদর না থাকে, তাহলে? তিনি বললেন,

ليشها أختها من جلبابها

অর্থাৎ, সে যেন তার বোনের চাদরের কিছু অংশ জড়িয়ে নেয়। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-৩৫১)

এ বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায় যে, নারীরা নিজেদেরকে পর্দাবৃত না করে পরপুরুষের সামনে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।

চতুর্থ দলিল

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–

قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ

‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

নারীরা তাদের চেহারা পর্দামুক্ত রাখার অর্থই হলো তারা যেন পুরুষদেরকে তাদেরকে দেখার প্রতি আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আর একজন বিবেকবান মানুষের পক্ষে এটা বুঝতে কোনো কাঠখড় পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না।

পরবর্তী আয়াতেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–

وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ

‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে’। (সূরা নূর, আয়াত ৩১)

অর্থাৎ, নারীদের জন্য তাদের রূপ-সৌন্দর্য ঢেকে রাখা উচিত, কেননা তা পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সাহায্য করবে।

পঞ্চম দলিল

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে–

وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ

‘তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।’ (সূরা নূর, আয়াত : ৩১)

অর্থাৎ, নারীদের জন্য পায়েল বা নুপুর পরে ঘর থেকে বের হওয়া হারাম। কারণ, পায়েল, নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ পুরুষের মনে ফেতনার উদ্রেক ঘটাতে পারে। নারীদের জন্য যেহেতু এতটুকুর বৈধতাও নেই, তাহলে চেহারা খোলা রাখা জায়েয হবে কিভাবে?

আচ্ছা, পায়েলের রিনিঝিনি শব্দে যদি পুরুষের মনে ফেতনার উদ্রেক হতে পারে তবে কি নারীর মোহনীয় রূপ-মাধুরী তাকে উম্মাদ করে তুলবে না?

ষষ্ট দলিল

অতিশয় বৃদ্ধা নারীদের ক্ষেত্রে পর্দা না করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা রোখসত রেখেছেন। অতিশয় বৃদ্ধা নারীদের যৌবন ও কামপ্রবৃত্তির অবিদ্যমানতা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তারা যদি পর্দা অবলম্বন করে তবে সেটা তাদের জন্য খুবই উত্তম।

ইরশাদ করেছেন–

وَ الۡقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَآءِ الّٰتِیۡ لَا یَرۡجُوۡنَ نِکَاحًا فَلَیۡسَ عَلَیۡہِنَّ جُنَاحٌ اَنۡ یَّضَعۡنَ ثِیَابَہُنَّ غَیۡرَ مُتَبَرِّجٰتٍۭ بِزِیۡنَۃٍ ؕ وَ اَنۡ یَّسۡتَعۡفِفۡنَ خَیۡرٌ لَّہُنَّ ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

‘বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে। তবে তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা নূর, আয়াত : ৬০)

সপ্তম দলিল

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে–

وَ اِذَا سَاَلۡتُمُوۡہُنَّ مَتَاعًا فَسۡـَٔلُوۡہُنَّ مِنۡ وَّرَآءِ حِجَابٍ ؕ ذٰلِکُمۡ اَطۡہَرُ لِقُلُوۡبِکُمۡ وَ قُلُوۡبِہِنَّ

‘তোমরা তার পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৩)

চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার ব্যাপারে এ আয়াতটি সুস্পষ্ট দলিল। বর্ণিত এ বিধানটিতে বিশেষভাবে নবী-পত্নীগণের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্যে ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য।

অর্থাৎ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূণ্যাত্মা স্ত্রীগণের নিকট (এবং তোমাদের স্ত্রী ব্যতিত অন্য কোনো নারীর নিকট) কোনো কিছু নেয়ার প্রয়োজন হলে সামনে এসে নেবে না; বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা এবং শয়তানের প্ররোচণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে।

অষ্টম দলিল

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–

وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاہِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیُذۡہِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَہِّرَکُمۡ تَطۡہِیۡرًا

‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পুত-পবিত্র রাখতে।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৩)

আলোচ্য আয়াতে মুসলিম নারীদেরকে ইসলামপূর্ব অজ্ঞতার যুগের নারীদের ন্যায় দেহ সৌষ্ঠব ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রাচীনকালের আরব-পুরুষেরা অতিশয় আত্মমর্যাদাশীল ছিল। তাদের নারীদের দিকে কেউ লালসার চোখে তাকালে কিংবা তাদেরকে নিয়ে কোনোরূপ উপহাস করলে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বেঁধে যেতো। তুমি কি ভাবছ? জাহেলী যুগের নারীরা অধুনা বিশ্বের নারীদের মতো বাহু, কাঁধ, বক্ষ, পিঠ, উরু উন্মুক্ত করে চলতো। না, তারা কেবল চেহারা খোলা রাখত কিংবা বড়জোর তাদের চুল নজরে পড়তো। তদুপরি অজ্ঞতার যুগের অধিকাংশ নারীরাই চেহারা পর্দাবৃত রাখত। সেকালের কাব্য সাহিত্য থেকে এমনটিই জানা যায়। তদুপরি আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন–

ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولى.

‘অজ্ঞতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। (প্রাগুক্ত)

নবম দলিল

হজ ও ওমরা আদায়কালে নারীদেরকে তাদের চেহারা খোলা রাখতে হয়–একথা সবারই জানা। এ ব্যাপারে মহিলা সাহাবীদের আমল এমন ছিল যে, হজ ও ওমরার সময় তারা যখন তাবুর ভেতরে থাকতেন তখন চেহারা খোলা রাখতেন। কিন্তু যখনই কোনো অচেনা মুসাফির তাদের পাশ দিয়ে যেত, হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা এর বক্তব্য মতে– তখন তারা মাথা থেকে চাদর টেনে মুখ ঢেকে ফেলতেন। মুসাফির চলে যাওয়ার পর তারা চেহারা থেকে পর্দা সরাতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-১৮৩৩)

এহরাম অবস্থায় কৃত তাদের এই আমল থেকে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখার আবশ্যিকতার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।

দশম দলিল

হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন– আমরা পরপুরুষের সামনে নিজেদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। (আল-মুসতাদরিক লিল হাকিম, ১/৪৫৪)

একাদশ দলিল

ইফকের ঘটনা : ষষ্ঠ হিজরীতে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী মুস্তালিক নামান্তরে মুরায়সী যুদ্ধে গমন করেন, তখন হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা তার সাথে ছিলেন। ইতিপূর্বে পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়েছিল। তাই হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা এর উটের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনের ব্যবস্থা করা হয়। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা প্রথমে উটের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনে সওয়ার হতেন। এরপর লোকেরা আসনটিকে উটের পিঠে বসিয়ে দিতো। এটাই ছিলো নিত্যকার অভ্যাস। যুদ্ধ সমাপ্তির পর মদীনায় ফেরার পথে একটি ঘটনা ঘটল। এক মনযিলে কাফেলা অবস্থান করার পর শেষ রাত্রে প্রস্থানের কিছু পূর্বে ঘোষণা করা হলো যে, কাফেলা কিছুক্ষণের মধ্যে এখান থেকে রওয়ানা হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ প্রয়োজন সেরে প্রস্তুত হয়। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা এর টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল; তিনি জঙ্গলের দিকে চলে গেলেন। সেখানে ঘটনাক্রমে তাঁর গলার হার ছিঁড়ে হারিয়ে গেলো। তিনি সেখানে তার হার খুঁজতে লাগলেন। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো।

স্বস্থানে ফিরে এসে দেখলেন যে, কাফেলা চলে গেছে। রওয়ানা হওয়ার সময় হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা এর পর্দাবিশিষ্ট আসনটিকে যথারীতি উটের পিঠে সওয়ার করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বাহকেরা ভেবেছে যে, তিনি ভেতরেই আছেন। উঠানোর সময়ও সন্দেহ হলো না। কারণ, তিনি তখন অল্পবয়স্কা ক্ষীণাঙ্গিণী ছিলেন। ফলে আসনটি যে শূণ্য– এরূপ ধারণাও কারও মনে উদয় হলো না। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা ফিরে এসে যখন কাফেলাকে পেলেন না, তখন তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও স্থিরচিত্ততার পরিচয় দিলেন এবং কাফেলার পশ্চাতে দৌড়াদৌড়ি করা কিংবা এদিক-সেদিক খোঁজ করার পরিবর্তে গায়ে চাদর জড়িয়ে স্বস্থানে বসে রইলেন। সময় তখন শেষরাত্রি। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। অপরদিকে সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তালকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন যে, তিনি কাফেলার পশ্চাতে সফর করবেন এবং কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর কোন কিছু পড়ে থাকলে তা কুড়িয়ে নেবেন। তিনি ভোর বেলায় এখানে এসে পৌঁছলেন। প্রভাতের আলো তখন পুরোপুরি উজ্জ্বল হয়নি। তিনি শুধু একজন মানুষকে ঘুমন্ত দেখতে পেলেন। কাছে এসে হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে চিনে ফেললেন। কারণ, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে তিনি তাকে দেখেছিলেন। চেনার পর নেহায়েত বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলেন ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাক্যটি হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর কানে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি জেগে গেলেন এবং তৎক্ষণাৎ চাদর দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেললেন। হযরত সাফওয়ান নিজের উট কাছে এনে বসিয়ে দিলেন। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা তাতে সওয়ার হলেন এবং সফওয়ান উটের নাকের রশি ধরে কাফেলার তালাশে দ্রুতপদে হেঁটে চলতে লাগলেন। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ৪১৪১)

দ্বাদশ দলিল

হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা এরই বর্ণনা, তিনি বলেন- মুসলিম নারীরা নিজেদেরকে বড় চাদরে ঢেকে ফজরের নামাযে উপস্থিত হতো। নামায পড়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় আঁধারের কারণে কেউ তাদেরকে চিনতে পারত না। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ৫৭৮ এবং মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৬৪৫)

ত্রয়োদশ দলিল

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–

من جر ثوبه خيلاء لله ينظر الله إليه يوم القيامة

যে কেউ অহংকার বশত তার কাপড় কে মাটিতে হেঁচড়িয়ে চলবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে তাকবেন না। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ৫৭৮৪ এবং মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-২০৮৫)

অর্থাৎ, টাখনুর নিচে বস্ত্র পরিধান করা জায়েয নেই। উম্মুল মুমেনিন হযরত সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা এই হাদিস শোনার পর ভাবলেন যে, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা বোধহয় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই হারাম। তদানিন্তন নারীরা পা ঢাকার জন্য নিজেদের বস্ত্রকে টাখনুর নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিতো। দারিদ্রের কারণে অধিকাংশ নারীরাই মোজা পরিধাণের সামর্থ্য রাখত না।

তাই হযরত উম্মে সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে নারীরা তাদের আঁচলকে কি করবে?

ইরশাদ করলেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে দেবে।

উম্মে সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা বললেন, এভাবে তো তাদের পা দেখা যাবে।

তিনি বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে দেবে। এর চেয়ে বেশি নয়। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং৫৩৩৮)

সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু নারীদের পায়ের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন, তাহলে চেহারা প্রদর্শনের বৈধতার কথা কল্পনা করা যায় কিভাবে?

চতুর্দশ দলিল

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,

لا تنقب الحرم ولا تلي القفازين.

‘ইহরাম অবস্থায় নারীগণ নেকাব বা উড়না পরিধান করবে না।’ (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-১৮৩৮)

এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সে যুগের নারীরা সাধারণত নেকাব বা উড়না পরিধান করতো। এজন্যে ইহরাম অবস্থায় তা বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

পঞ্চদশ দলিল

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–

لا تباشر المرأة التزا فتنتها لزوجها كأنه ينظر إليها

নারীরা নারীদের সাথে (এক কাপড়ে) শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে শোবে না। কারণ, সে স্বামীর কাছে গিয়ে তার গঠন-আকৃতির বিবরণ এভাবে দেবে যে, যেন সে তাকে দেখছে। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-৫২৪০)

এই হাদিস প্রমাণ বহন করে যে, নবী-যুগের নারীরা চেহারা ঢেকে ঘর থেকে বের হতো। সে কারণেই পুরুষের জন্য অন্য নারীর চেহারার বিবরণ জানতে তার স্ত্রীর সাহায্য নিতে হতো।

ষষ্টদশ দলিল

হযরত মুগিরা বিন শু’বা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি এক নারীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে সম্পর্কে বললাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন–

তুমি কি তাকে দেখেছ?

আমি বললাম, না।

তিনি বললেন, তাকে দেখে আসো। তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।

আমি দেখতে গেলাম। তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন। আর মেয়েটি ছিল পর্দার অন্তরালে।

আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাকে দেখার আদেশ দিয়েছেন। তারা দুজন নিশ্চুপ রইলেন। পর্দার আড়াল থেকে মেয়েটি বলল– আমি আপনাকে কসম দিচ্ছি। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আদেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই দেখবেন। আর যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন না।

অতঃপর আমি তাকে দেখলাম। তাকে বিবাহ করলাম। আমার মনে এই মেয়েটির জন্য যতটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল, অন্য কোনো নারীর জন্য তা ছিল না। (কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-৪৫৬১৯ এবং সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, ১/১৭১)

সেকালের নারীরা যদি মুখ খোলা রেখে চলাফেরা করত, তাহলে তাকে দেখার ব্যাপারে হযরত মুগিরা বিন শু’বা রাযিয়াল্লাহু আনহু এর এতটা দ্বিধাগ্রস্থ হওয়ার প্রয়োজন পড়ত না।

এ পর্যন্ত পড়ার পর সারা কিতাব থেকে মাথা তুলল। উরাইয মিহার দিকে তাকিয়ে দেখল তার চোখে অশ্রু টলমল করছে। মিহা তুমি কাঁদছ কেন?

না, না কিছু না। চোখ মুছতে মুছতে বলল মিহা। আল্লাহ আমাদের প্রতি রহম করুন। নারী সাহাবীগণ কেমন আল্লাহভীরু ছিলেন। সাহাবীকে শপথ দিচ্ছেন– আল্লাহর রাসূল অনুমতি দিলেই সে তার চেহারা দেখাবে নয়তো নয়। অথচ আমি ঝলমলে পোষাক পরে পথে-ঘাটে, বাজারে, হাসপাতালে ঘোরাফেরা করছি। সেই নারী সাহাবীটি তার জন্য বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসা একজন সৎ, পরহেযগার সাহাবীর সামনে একবার খোলা চেহারায় আসতে কতো সংকোচ করেছে। অথচ আমি চেহারা অনাবৃত রেখে, নকশি বোরকা গায়ে জড়িয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছি আর পুরুষের কুদৃষ্টির শিকার হচ্ছি। এতটুকু বলার পর মিহা আবার চোখ মুছল।

মিহাকে কাঁদতে দেখে এবং আলোচনায় প্রভাবিত হতে দেখে সারা শুকরিয়া আদায় করল। এবং বলল, মিহা, এখন থেকে তুমি পরিপূর্ণ। শরঈ পর্দা অবলম্বন করে চলো। আল্লাহ তোমাকে উত্তমরূপে কবুল করুন। একটা সত্য ঘটনা শোনাচ্ছি–

এক সতী-সাধ্বী, পুণ্যাত্মা নারী ছিল। পঞ্চাশ বছর ধরে সে বাকশক্তিহীনা– বোবা। তার দিন কাটতো রোজা রেখে আর রাত নামাজে দাঁড়িয়ে। বোবা হওয়াতে তার রাতের নামাজ আদায়ের কোনো শব্দ স্বামীর কানে আসত না।

এক রাতের কথা। তার স্বামী ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেল। সে শুনতে পেল তার বোবা স্ত্রী সশব্দে, সঠিক উচ্চারণে নামায আদায় করছে। সে যারপর নাই অবাক হলো এবং আনন্দে তার দুচোখে অশ্রু নেমে এল। সে কানপেতে শুনল স্ত্রী তার প্রভুর নাম জপছে। প্রার্থনায় কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। সবশেষে সে দেখল তার স্ত্রী সুস্পষ্টস্বরে কালেমা পড়তে পড়তে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছে এবং সে অবস্থাতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এরূপ উত্তম মৃত্যু দান করুন।

ঘটনাটি মিহা ও উরাইযকে ভীষণ প্রভাবিত করল। তাদের চোখে-মুখে সারা সেই ছাপ দেখতে পেল। অতঃপর উরাইয বলল। আচ্ছা, এবার সামনে পড় সারা।

সারা পুনরায় পড়া শুরু করল।

সপ্তদশ দলিল

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–

তোমাদের মধ্য হতে যখন কেউ কোনো নারীকে বিবাহের পয়গাম পাঠাও, তখন সম্ভব হলে তার অবাক করা সৌন্দর্যের কিছু দেখে নাও, যা সেই নারীকে বিবাহ করতে উদ্বুদ্ধ করে। (যদি সম্ভব হয়)।

হযরত জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বনি সালামার এক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠালাম। খেজুর গাছের পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে আমি তাকে দেখতাম। পরিশেষে আমি তাকে বিবাহ করতে আগ্রহী হলাম এবং তাকে বিবাহ করলাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৮২)

ভেবে দেখার বিষয় হলো, সেকালের নারীরা যদি চেহারা খোলা রেখে চলাফেরা করতো, তাহলে হযরত জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার প্রয়োজন পড়ত না।

অষ্টদশ দলিল

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক মৃত ব্যক্তির দাফন কার্য শেষ করে ফিরছিলাম। মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গের পাশ দিয়ে যাবার সময় এক নারীকে দেখতে পেলাম। আমরা ভাবতে পারিনি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ফাতেমা! কোথা থেকে এসেছ? হযরত ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আমি মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে এসেছি। আমি মৃতের জন্য দোআ ও তা’জিয়া (শোক প্রকাশ) করেছি। (আল-মুসতাদরাক লিল হাকিম, ১/৩৭৪)

সাহাবায়ে কেরাম ভেবেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমাকে চিনতে পারেননি।

কারণ, তিনি পরিপূর্ণ পর্দাবৃতা ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চালচলন দেখে নিজ মেয়েকে চিনে ফেলেছিলেন।

হযরত ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা যদি চেহারা খোলা রাখতেন, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চেনা না চেনার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম দ্বিধাগ্রস্থ হতেন না।

দলিল নং ১৯

ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ তার কিতাব সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

عن أبي هريرة نبي الله تعالى عنه قال: كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم فأتاه رجل فأخبره أنه افراد من الأنمار، فقال له رسول اللہ صلی الله عليه وسلم أنكرت اليها ؛ قال : لا. قال : از قاذهب فانظر إليها فإن في أمين الحمار شا يغياي غرة)..

তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরবারে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি আসল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাল যে, সে আনসারের এক মেয়েকে বিবাহ করতে চায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ?

সে বলল, না।

তিনি বললেন, যাও তাকে দেখে নাও। কারণ, আনসারদের চোখে কিছু (ক্ষুদ্রতা) থাকে। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-১৪২৪)

এবার উরাইয মুখ খুলল, সম্ভবত তিনি তাকে চেহারা ও দুহাতের তালু ব্যতিত অন্য কিছু দেখতে বলেছেন।

সারা বলল, না। তোমার ধারণা ঠিক নয়। কারণ তিনি তাকে পাত্রির চোখ দেখে নিতে বলেছেন। আর চোখ তো চেহারাতেই থাকে, তাই না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চেহারা দেখার কথাই বলেছেন।

দলিল নং ২০

এটি যৌক্তিক দলিল। একজন নিরপেক্ষ বিবেকবান মানুষ মাত্রই একথা স্বীকার করবে যে, শরিয়ত পরপুরুষের সামনে কোনো নারীকে চেহারা খোলার অনুমতি দিতে পারে না। কারণ, চেহারাই সৌন্দর্য-শোভার আসল কেন্দ্র এবং রূপ-মাধুরীর প্রকাশস্থল। বিশেষকরে নারী সুন্দরী হলে এবং তার আকর্ষণীয় চেহারার দিকে পুরুষের চোখ পড়লে পুরুষের কামভাব জেগে ওঠা এবং ফেতনা-ফাসাদের প্রাদুর্ভাব ঘটা অবশ্যম্ভাবী।

উচ্চস্বরে বিশ নং দলিলটি পড়ার পর সারা কিতাব থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে বলল, লেখক এ সংক্রান্ত যেসব প্রমাণ পেশ করেছেন, তা শেষ হয়ে গেছে। আমি ভেবে অবাক হচ্ছি যে, আমরা নারীদেরকে পুরুষের ফেতনা থেকে বাঁচাবার জন্য তাদের হাত, পা, কান, কাঁধ ঢেকে রাখতে বলি। অথচ সেই আমরাই আবার ফতোয়া দিই যে, মনোহরী মেকাপে রাঙানো চেহারাখানা খুলে রাখো। ভাবটা এমন যে, নারীদের চরণই যেন পুরুষের হৃদয় হরণ করে নেবে। তারা কঠিন ফেতনার শিকার হবে। আর নারীর সুশোভিত ওষ্ঠযুগল, কমনীয় কপোল ও মোহনীয় নয়ন দেখে পুরুষের কুপ্রবৃত্তি জেগে উঠবে না।

উরাইয বলল, এটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতাই বা কম কিসে। যদিও আমি মেকাপ নেই না। তবু বোরকা পরে, চেহারা খোলা রেখে যখন রাস্তায় বেরুই, তখন পুরুষের দৃষ্টির বৃষ্টিতে সিক্ত হতেই হয়।

হ্যাঁ, হ্যাঁ। উরাইয ঠিকই বলেছে। আল্লাহ তাকে হেদায়াত দিন। মাথা দোলাতে দোলাতে বলল মিহা।

মিহার কথা শুনে উরাইয রেগে গেল। দৃষ্টিকে কঠোর করে তার দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা, আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দিন! একবার আয়নায় নিজের মুখখানা দেখো দেখি।

না, উরাইয! আসলে আমি এটা বোঝাতে চাইনি। মিহার কণ্ঠে বিনয়।

মুহুর্তেই দু’ বোনের খুনসুটি প্রায় ঝগড়ায় রূপ নিচ্ছিল। কিন্তু মাঝখানে সারা এসে বাধা হয়ে দাঁড়াল। সে বলল, আচ্ছা, এবার তোমরা থামো। চলো, আমি তোমাদেরকে পর্দা সম্পর্কে আমাদের চার ইমাম (আবু হানিফা, মালেক, শাফেঈ এবং আহমদ রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য পড়ে শোনাচ্ছি। এর দ্বারা যে সকল মুফতিরা বলে যে, চার ইমামের মতেও নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়েয আছে–তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়ে যাবে।

চমৎকার। জলদি পড়ে শোনাও। উরাইয সারাকে তাড়া দিল।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন