চেহারার পর্দার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের আলেমগণের অভিমত
আল্লামা আমীর সানআনী (ইয়ামেন)
আল্লামা আমীর সানআনী তার লিখিত –
“الأدلةالجليةفي تحريمنظر الأجنبية” নামক কিতাবে নারীদের চেহারা খোলা রাখার পক্ষে মত দানকারী আলেমদের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (পাকিস্তান)
মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী পর্দা বিষয়ক একটি কিতাব লিখেছেন। যেখানে তিনি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত পর্দার আয়াতের বিশ্লেষণে লিখেছেন– যদি কেউ এ আয়াতের শব্দাবলি, প্রত্যেক যুগের মুফাচ্ছিরীনদের ব্যাখ্যা এবং নবী-যুগের মানুষদের আমল নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে, তাহলে সে নির্দ্বিধায় একথা মেনে নেবে যে, ইসলামী শরিয়ত পরপুরুষের সামনে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলের যুগ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে উম্মতের কর্মধারাও অনুরূপ।
শায়খ মুহাম্মাদ আলী সাবূনী (সিরিয়া)
শায়খ মুহাম্মাদ আলী সাবুনী তার “روائع البيان في تفسير ايات الأحكام من القران” নামক তাফসীর গ্রন্থে “ايات الحجاب والنظر” শীর্ষক একটি অধ্যায়ের শেষাংশে তিনি লিখেছেন, নারীদের চেহারা খোলা রাখার কু-প্রথাটি আজকাল হরহামেশা পরিদৃষ্ট হচ্ছে। নারীদেরকে বলা হচ্ছে মুখের পর্দা সরিয়ে ফেলো। প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হচ্ছে– শরঈ হিজাবের সাথে নেকাবের কোনো সম্পর্ক নেই। আর চেহারা পর্দাবশ্যক অঙ্গের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আমার বোধগম্য নয় যে, চেহারা ঢেকে রাখাটা কি এমন ঘোরতর অপরাধ– যা থেকে তারা নারীদেরকে মুক্তি দিতে চায়। যে সমাজ ব্যবস্থায় চেহারা খোলা রাখার কালচার ব্যাপকতা পেয়েছে, তাদের অবস্থা কি? তারা তো আজ প্রতিনিয়ত কামনা-বাসনার অগ্নিতে পুড়ছে। বেহায়পনা ও নির্লজ্জতার চর্চায় সর্বদা লিপ্ত থাকছে।
শায়েখ আবু বকর আল জাযায়েরী (আলজেরিয়া)
শায়খ আবু বকর আল-জাযায়েরী তার রচিত “فصل الخطاب في المر أة والحجاب” নামক কিতাবে চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার ব্যাপারে প্রমাণাদি পেশ করার পর বিরোধী পক্ষের আপত্তিসমূহের জবাবও দিয়েছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ আমীন শানকিতী (মুরিতানিয়াহ)
আল্লামা মুহাম্মদ আমীন শানকিতী তার তাফসীর গ্রন্থ “أضواء البيان”–এ পর্দার আয়াতের ব্যাখ্যায় সুদৃঢ় দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে, নারীদের জন্য মুখমণ্ডলের পর্দা করা ওয়াজিব।
শায়খ মুহাম্মাদ ইউসুফ কাফি (তিউনিস)
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ কাফি তদীয় কিতাব–
“المسائل الكافيت في بيان وجو ب صدق خبر رب البرية” তে চেহারা খোলার রাখার প্রবক্তাদের এক হাত নিয়েছেন। হুমুদ তাওযিরী তার রচিত “الصارم المشهور” নামক কিতাবে তা উল্লেখ করেছেন।
মাওলানা আব্দুল কাদের হাবীবুল্লাহ সিন্দী (সিন্দ, পাকিস্তান)
মাওলানা আব্দুল কাদের হাবীবুল্লাহ সিন্দী পর্দার ব্যাপারে দুটি কিতাব লিখেছেন।
১. “رسالة الحجاب في الکتاب والسنة”
২. “رفع الجنة أمام جلباب المر أة المسلمة في الکتاب و السنة”
উভয়টিতেই তিনি চেহারার পর্দার অবশ্যিকতার বিষয়টি সপ্রমাণ উল্লেখ করেছেন।
শায়খ মুস্তফা সবরী (তুরস্ক)
তুরস্কের প্রধান মুফতি শায়খ মুস্তফা সবরী তার কিতাব “قو لي في المر أة” –তে নারীদের চেহারা অবমুক্ত রাখার পক্ষে মত দানকারীদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করেছেন।
শায়খ আব্দুর রশীদ বিন মুহাম্মাদ সখি (নাইজেরিয়া)
চেহারা খোলা রাখার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা হেজাজের অধিবাসীদের নিজস্ব রীতি’– বলে একদল আলেম মত প্রকাশ করেছেন। শায়খ আব্দুর রশীদ বিন মুহাম্মাদ সখি তার লিখিত “السيب القا طع للنذ اع في حکم الحجاب والنقاب”–নামক কিতাবে তাদের সে উক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং চেহারা ঢেকে রাখার আবশ্যিকতার পক্ষে স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
অধ্যাপিকা ই’তিসাম আহমদ সার্রাফ (মিসর)
অধ্যাপিকা ই’তিসাম আহমদ সাররাফ একটি কিতাব লিখেছেন। কিতাবটির নাম– “أختي المسلمة : سبيلك إلى الجنة” এই কিতাবের ২০ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন :
চেহারার পর্দা নারীদের এক সহজাত আমল। ইসলামী শরিয়ত এর প্রতি অনেক গুরুত্বারোপ করেছে।
অধ্যাপিকা ইয়াসরিয়া মুহাম্মাদ আনওয়ার (মিসর)
অধ্যাপিকা ইয়াসরিয়া তার কিতাব “مهلا يا صا حبة القو ارير”-এ লিখেছেন :
ইসলাম যেহেতু নারীদের চরণ ঢেকে রাখার আদেশ দিয়েছে এবং জমিনে সজোরে পা ফেলে চলতে নিষেধ করেছেন যেন পায়েলের ঝনঝনানি শোনা না যায়। তাহলে চেহারা ঢেকে রাখার হুকুম তো আরো অগ্রগামী। কারণ, চেহারাই তো রূপ-সৌন্দর্য প্রকাশের কেন্দ্রবিন্দু।
শায়খ আহমদ বিন হাজার আলে আবু তামী (কাতার)
শায়খ আহমদ বিন হাজার আলে আবু তামীও আলোচ্য বিষয়ে “الأ دلة من السنة والکتاب في حکم الخمار والنقاب” নামক একটি কিতাব লিখেছেন।
শায়খ মুহাম্মাদ যমযমী বিন সিদ্দীক (মরক্কো)
শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল তার কিতাব عو دة الحجاب –এ মুহাম্মাদ যমযমীকে সেসকল আলেমদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন যাদের মতে নারীদের মুখমন্ডলের পর্দা ওয়াজিব।
শায়খ আল-আযহার আব্দুল হালীম মাহমুদ (মিসর)
শায়খ আল-আযহার লেবাননের রাজধানী বায়রুত থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত পত্রিকা ‘সাওতুল আরব’-এ “مظهر المر أة” এর শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন:
নারীদের পক্ষ থেকে ফেতনার দুয়ার রুদ্ধ করতে হলে তাদের জন্য চেহারা ও হস্তদ্বয়ের পর্দা করা জরুরী।
শায়খ হাসানুল বান্না (মিসর)
ইখওয়ানুল মুসলেমীনের প্রধান শায়খ হাসানুল বান্না তার কিতাব “المر أة المسلة” এর ১৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন– ইসলাম নারীদের বেপর্দা চলাফেরাকে হারাম ঘোষণা করেছে।
শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাসান হুজুমী (মরক্কো)
শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাসান হুজুমী স্বীয় কিতাব “الد فاع عن الصحيحين” এর ১২৯-১৩০ নং পৃষ্ঠায় জনৈক ডক্টরের বক্তব্যকে প্রত্যাখান করেছেন; যিনি নারীদের চেহারা খোলা রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ডক্টর মুহাম্মাদ সাঈদ রমযান বুতী (সিরিয়া)
ডক্টর বূতী তদীয় কিতাব “إلي کل فتا ة تؤ من با لله”-এর ৫০ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন–
এ ব্যাপারে সব মাযহাবের ইমামগণ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন যে, যদি ফেতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ার ভয় হয় এবং পুরুষেরা কামুক দৃষ্টিতে নারীদের দিকে তাকায়, তাহলে নারীদের জন্য চেহারার পর্দা করা ফরয। বর্তমানে কে বলতে পারবে যে, নারীদের পক্ষ থেকে ফেতনা-ফাসাদ ছড়াচ্ছে না এবং পুরুষেরা নারীদের দিকে কু-বাসনা নিয়ে তাকাচ্ছে না।
শায়খ আয়াদাহ কুবাইসী (ইরাক)
শায়খ আয়াদাহ কুবাইসী তার কিতাব “لباس التقوى”- তে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার আবশ্যিকতার বিষয়টি সমর্থন করেছেন।
শায়খ মুহাম্মাদ যাহেদ আল-কাউসারী (তুরস্ক)
শায়খ মুহাম্মাদ যাহেদ আল-কাউসারী তার লিখিত “حجاب المر أة” শীর্ষক প্রবন্ধে মুখমণ্ডলের পর্দার সপক্ষে মত দিয়েছেন।
মাওলানা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (ভারত)
যেসকল আলেম নারীদের চেহারা খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তাদের জবাবে মাওলানা সফিউর রহমান মোবারকপুরী একটি কিতাব লিখেছেন। কিতাবটির নাম–
” إبراز الحق والصواب في مسألة السفور والحجاب”
এ কিতাবের ১০ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন : পর্দার বিধান অবতীর্ণের মূল হেকমতের দাবি সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা। বিশেষ করে চেহারা। কেননা চেহারাই নারীর মুগ্ধ করা রূপ-সৌন্দর্য প্রকাশের কেন্দ্রস্থল।
অধ্যাপিকা ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ যাহরা (ইয়ামেন)
অধ্যাপিকা ফাতেমা তার রচিত “المتبر جات” নামক কিতাবে পর্দার শর্তাবলি বর্ণনা করেছেন এবং নারীদের মুখমণ্ডলের পর্দার আবশ্যিকতার বিষয়টি বিস্তারিত প্রমাণাদিসহ তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপিকা কাউসার মিনাবী (মিসর)
অধ্যাপিকা কাউসার তার কিতাব “حقوق المر أة في الإ سلام” এর ১২৮ নং পৃষ্ঠায় يايها النبى قل لاز واجك এই আয়াতটি উল্লেখ করে লিখেছেন– এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম নারীদেরকে বড় চাদরে নিজেদের চুল ও চেহারা ঢেকে রাখার আদেশ দিয়েছেন।
শায়খ আল-আযহার মুহাম্মাদ আবুল ফযল (মিসর)
শায়খ আল-আযহার মুহাম্মাদ আবুল ফযল একটি সুদীর্ঘ ফতোয়া দিয়েছিলেন যেটি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। তিনি তাতে নারীদের চেহারার পর্দার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন।
মাওলানা আব্দুর রব করশী (পাকিস্তান)
মাওলানা আব্দুর রব করশী তার কিতাব “الأ بحاث الفقهية القيمة” তে এ বিষয়ে কলম ধরেছেন এবং নারীদের মুখমণ্ডলের পর্দার আবশ্যিকতাকে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেছেন।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন