ওই গোলাপ, ওই জল

তসলিমা নাসরিন

ওই গোলাপ, ওই জল
(ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া অনিল দত্তকে–)

একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রতিদিন এক থোকা
গোলাপ পাঠাতেন আমার কলকাতার বাড়িতে।

তিনি এ-দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন,
গণতন্ত্রের জন্য করেছিলেন,
বাক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তিনি,
তাঁর কাছ থেকে আমি গোলাপ পেয়েছি প্রতিদিন।

ক্ষমতার চাবুক মেরে যারা আমার মনকে
রক্তাক্ত করছে,
জীবনকে, জীবনের সব স্বপ্নকে
প্রতিদিন রক্তাক্ত করছে,
তারা শুধু আমাকে নয়,
ওই স্বাধীনতা সংগ্রামীকেও রক্তাক্ত করছে চাবুক মেরে, প্রতিদিন।
তারা জানেনা স্বাধীনতা সংগ্রামীর ওই গোলাপের রঙ রক্তের চেয়েও লাল।

এখন আর গোলাপ নয়, এখন এক ঠিকানাহীন ঠিকানায়
প্রতিদিন আমার জন্য মনে মনে চোখের জল পাঠান তিনি,
এই জল দিয়ে আমার ক্ষতগুলোর শুশ্রূষা করি।
গোলাপের স্মৃতি থেকে বিশুদ্ধ সুগন্ধ বাতাস নিয়ে
এই শ্বাসরোধ করা পরিবেশে শ্বাস নিই।

এই স্বাধীন দেশের গোপন কুঠুরিতে
পরাধীনতার শক্ত–শেকলে বাঁধা
নির্বাসিত নিঃস্ব নারী,
তাকে আজ মুক্ত করার শক্তি নেই কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীরও।

স্বাধীনতা হয়তো এ জীবনে আমার দূরূহই হবে পাওয়া।
ওই গোলাপগুলোকে ডাকবো স্বাধীনতা বলে,
ওই চোখের জলগুলোই আমার স্বাধীনতা।

২৮.০২.০৮

সকল অধ্যায়

১. দুঃখবতী মা
২. মৃত্যু
৩. মাটি
৪. ঘাস
৫. শিউলি
৬. ঝরাপাতা
৭. অতলে অন্তরিন
৮. অজ্ঞাতবাস
৯. কয়েক বছর
১০. কোনও কবিকে কি কখনও গৃহবন্দি করেছিলো কেউ?
১১. সময়
১২. আমার শহর নয়
১৩. অন্তরিন
১৪. দেশ বলে কি কিছু থাকতে নেই আমার
১৫. ওরাই তাহলে পৃথিবী শাসন করুক
১৬. বাঁচো
১৭. মানুষ
১৮. সিসিইউ থেকে সিসিইউ
১৯. নো ম্যানস ল্যান্ড
২০. ভারতবর্ষ
২১. এমন দেশটি…
২২. মুক্তি
২৩. আমরা
২৪. ছোটখাটো জিনিস
২৫. আমার বাংলা
২৬. প্রশ্ন
২৭. নিরাপত্তা
২৮. নিরাপদ বাড়ি
২৯. কন্যাটির কথা
৩০. দুঃসময়
৩১. সাফ কথা
৩২. নিষিদ্ধ বস্তু
৩৩. আমার কলকাতার বাড়ি
৩৪. আশা দিও
৩৫. সাত মাসের শোকগাঁথা
৩৬. বাঁচা
৩৭. খুব উঁচু মানুষ
৩৮. মাসি
৩৯. আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো প্রিয় কলকাতা
৪০. ওই গোলাপ, ওই জল
৪১. বইমেলা
৪২. আজ যদি গান্ধিজী বেঁচে থাকতেন
৪৩. বাঙালি
৪৪. ভয়ংকর
৪৫. গুডবাই ইন্ডিয়া
৪৬. তারা কারা
৪৭. সেইসব দিন ১
৪৮. সেইসব দিন ২
৪৯. দিক-দর্শন
৫০. দূর-দৃষ্টিহীন
৫১. ছি!
৫২. স্বাধীনতা
৫৩. নাম
৫৪. রেটিনোপ্যাথি
৫৫. ভারতবর্ষের উপহার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন