রেটিনোপ্যাথি

তসলিমা নাসরিন

রেটিনোপ্যাথি

দুশ্চিন্তা কোরো না,
দুশ্চিন্তা করলে তোমার রক্তচাপ বেড়ে আকাশ ছোবে,
দুশ্চিন্তা করলে তুমি নির্ঘাত মরবে।
চিকিৎসক বারবারই সাবধানবাণী আওড়াচ্ছেন।

কিন্তু কী করে দুশ্চিন্তামুক্ত হবো এই অজ্ঞাতবাসে,
একটা স্বাধীনচেতা মানুষকে জন্তুর মতো তুলে এনে
আচমকা খাঁচায় বন্দি করলে কী করে দুশ্চিন্তামুক্ত হবে সে!
খাঁচা থেকে আদৌ কোনওদিন মুক্তি পাবে কি না,
মানুষের কোলাহলে মানুষের মতো কোনওদিন
জীবনখানি যাপন করতে পারবে কি না,
জানতে না পারলে দুশ্চিন্তামুক্ত কী করে হবে সে!
আলোর মানুষেরা কতদিন পারে অন্ধকারে
অন্ধের মতো সাঁতরাতে!

আমার শরীরে তীরের মতো বিঁধে রয়েছে দুশ্চিন্তা,
যতক্ষণ ওই খাঁচা থেকে মুক্তি নেই, ততক্ষণ তীর থেকেও নেই।
চিকিৎসক আজ গম্ভীর মুখে বলে দিলেন,
দুশ্চিন্তা থাবা দিয়ে ধরেছে আমার দৃষ্টিশক্তি,
দুশ্চিন্তা আমাকে উপহার দিয়েছে দূরারোগ্য রেটিনোপ্যাথি।

তীরন্দাজদের উদ্দেশেবলি,
তোমাদের কালো কুৎসিত অন্ধকার আমার আলো কেড়ে নিয়েছে,
আমার চোখদুটো ফেরত দাও বাবুরা,
আশ্রয় চেয়ে কেঁদেছিলাম বাবুরা, আমি আশ্রয় চাই না,
দেশ ছিনিয়ে নিতে চাও আমার হৃদয় থেকে, নাও।

আমার আলোটুকু আমাকে ফেরত দাও বাবুরা।

১৩.০৩.০৮

সকল অধ্যায়

১. দুঃখবতী মা
২. মৃত্যু
৩. মাটি
৪. ঘাস
৫. শিউলি
৬. ঝরাপাতা
৭. অতলে অন্তরিন
৮. অজ্ঞাতবাস
৯. কয়েক বছর
১০. কোনও কবিকে কি কখনও গৃহবন্দি করেছিলো কেউ?
১১. সময়
১২. আমার শহর নয়
১৩. অন্তরিন
১৪. দেশ বলে কি কিছু থাকতে নেই আমার
১৫. ওরাই তাহলে পৃথিবী শাসন করুক
১৬. বাঁচো
১৭. মানুষ
১৮. সিসিইউ থেকে সিসিইউ
১৯. নো ম্যানস ল্যান্ড
২০. ভারতবর্ষ
২১. এমন দেশটি…
২২. মুক্তি
২৩. আমরা
২৪. ছোটখাটো জিনিস
২৫. আমার বাংলা
২৬. প্রশ্ন
২৭. নিরাপত্তা
২৮. নিরাপদ বাড়ি
২৯. কন্যাটির কথা
৩০. দুঃসময়
৩১. সাফ কথা
৩২. নিষিদ্ধ বস্তু
৩৩. আমার কলকাতার বাড়ি
৩৪. আশা দিও
৩৫. সাত মাসের শোকগাঁথা
৩৬. বাঁচা
৩৭. খুব উঁচু মানুষ
৩৮. মাসি
৩৯. আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো প্রিয় কলকাতা
৪০. ওই গোলাপ, ওই জল
৪১. বইমেলা
৪২. আজ যদি গান্ধিজী বেঁচে থাকতেন
৪৩. বাঙালি
৪৪. ভয়ংকর
৪৫. গুডবাই ইন্ডিয়া
৪৬. তারা কারা
৪৭. সেইসব দিন ১
৪৮. সেইসব দিন ২
৪৯. দিক-দর্শন
৫০. দূর-দৃষ্টিহীন
৫১. ছি!
৫২. স্বাধীনতা
৫৩. নাম
৫৪. রেটিনোপ্যাথি
৫৫. ভারতবর্ষের উপহার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন