দুই ডিটেকটিভ, দুই রহস্য – পরিমল গোস্বামী

রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়

দুই ডিটেকটিভ, দুই রহস্য – পরিমল গোস্বামী

আমি একটি যুবককে অনুসরণ করছি, পাঠক, তুমি আমাকে অনুসরণ কর। ওই যে গান্ধী-টুপি পরা যুবকটি চলেছে, ওর নাম বেণীমাধব। ওর একটি ইতিহাস আছে, আমি সেই ইতিহাসটিই অনুসরণ করছি। ওর সেই আশ্চর্য কাহিনীটি আমি শুনেছি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে, এবং সে তারও বন্ধু।

বেণীমাধব ছিল কলেজের ছাত্র এবং ঘোর বাবু। স্বাস্থ্য তার ভাল, বয়সোচিত উদ্দীপনা আর উৎসাহের অভাব ছিল না, পড়াশোনায় ছিল প্রখর। বৃত্তি পাওয়া ছেলে। কিন্তু উৎকৃষ্ট কুসুমেও যেমন কীট প্রবেশ করে, এই যুবকটির মধ্যে তেমনি এক ব্যাধির প্রবেশ-লক্ষণ ফুটে উঠতে লাগল। লক্ষণ যেটি সব চেয়ে প্রবল বোধ হল, সে হচ্ছে পারিবারিক আকর্ষণে শৈথিল্য, ঘরের প্রতি ঔদাসীন্য। এ লক্ষণটি তার মায়ের চোখে আগে ধরা পড়ল। তিনি মনে মনে নানা কল্পনা করতে লাগলেন, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না। কিন্তু মনে হয় কিছু বুঝতে পারলেন একদিন। বুঝে বড়ই ভাবনায় পড়লেন। তিনি ছেলের ঘরে গিয়ে একদিন আবিষ্কার করলেন তার টেবিলে যে ক’খানা পড়ার বই ছিল, তার সংখ্যা অকারণ অনেক বেড়ে গেছে। তিনি ইংরেজী বই পড়া শেখেননি কখনো, কিন্তু বইয়ের মলাটে যে চিহ্ন ছিল, তা থেকে তিনি চকিতে বুঝতে পেরেছিলেন অবস্থা খুব সুবিধের নয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনে পড়ল, ছেলের প্রসাধনেও বেশ বদল ঘটেছে। অর্থাৎ এদিকেও তার ঔদাসীন্য দেখা দিয়েছে। একটি চুল বেঁকে দাঁড়ালে যে ছেলে তাকে প্রাণপণে সোজা করতে বসত, সেই ছেলের দু-তিনটি চুল কিছু কাল ধরে খাড়া থাকতে দেখেছেন, এখন স্পষ্ট মনে পড়ছে। কেমন যেন উদ্‌ভ্রান্ত, উদাস এবং স্বপ্ন স্বপ্ন ভাব। সব মিলিয়ে মায়ের প্রাণ থেকে থেকে কেঁপে উঠতে লাগল। একটা অজানা আশঙ্কা, অথচ মুখ ফুটে কাউকে তা বলবার উপায় নেই ; অশুভ কথাটা উচ্চারণ করতে তাঁর মুখে আটকায়।

বাড়িতে বেশিক্ষণ থাকে না। তার ছোট বোনকে সে ডেকে ডেকে পড়াত, এখন আর পড়ায় না। সে জন্য তার মন ভার। তার বাবা লক্ষ্য করেও লক্ষ্য করলেন না, ভাবলেন ও বয়সে তিনিও ওই রকম হয়েছেন, কোনো আদর্শবাদ মাথায় ঢুকে থাকবে, কিন্তু সে আর কত দিন।

কিন্তু তাঁর অনুমান ঠিক হল না। ক’দিন নয়, বছর খানেকের মখ্যে ব্যাধির লক্ষণ এমন বেড়ে গেল যে তাঁর পক্ষেও আর চুপ করে থাকা চলল না।

কিন্তু রহস্য ভেদ করার কাজ হচ্ছে ডিটেকটিভদের, আপন ছেলের বিষয়ে কোনো রহস্য বাপ ভেদ করতে স্বভাবতই সঙ্কোচ বোধ করে, এ ক্ষেত্রেও তাই হল ; রাধামাধব সে রকম চেষ্টা করলেন না, শুধু স্ত্রীকে বললেন, কৌশলে মেয়েটার পরিচয় নাও, এবং নিতান্ত অসম্ভব না হলে সব ঠিক করে ফেলো। কিন্তু স্ত্রী তো ভিতরের খবর সবই জানেন, কাজেই তাঁর ভয় আরো বেড়ে গেল। তিনি আরও জানেন ছেলের যে ব্যাধি তিনি অনুমান করেছেন, তার বিষয় কিছুই না জেনে যদি প্রেসক্রিপশনে কোনো বিয়ের কনের ব্যবস্থা করতে হয়, তা হলে হিতে বিপরীত হবে। তিনি একটা অজানা ভয়ে অত্যন্ত মুষড়ে পড়লেন, অথচ মনের মধ্যে যে কথাটি কাঁটার মত বিঁধে আছে, তা কতবার তিনি বলতে গিয়েও মুখে আটকে গেছে, বলতে পারেননি।

পাঠক, তুমি কি কিছু অনুমান করতে পার? না, কি করে পারবে, তুমি তো ডিটেকটিভ নও। আধা ডিটেকটিভ হতে গিয়ে যিনি পিছিয়ে এসেছেন, তাঁর কথাই তো এতক্ষণ বলছিলাম, তিনি বেণীমাধবের মা। তিনি মনের সব কথা সম্পূর্ণ গোপন করে স্বামীকে ভারী গলায় বললেন, দেখ চেষ্টা করে, আমি এর মধ্যে নেই। কিন্তু রাধামাধব প্রিন্‌সিপল-ওয়ালা লোক, তিনি নিজে এ দায়িত্ব নিতে চান না। এবং আসল কথা না জেনে কনে দেখতেও রাজী নন। মস্ত বড় সঙ্কট! তিনি একটি সম্পূর্ণ রাত শারলক হোমস-এর অনুকরণে বসে বসে তামাক খেলেন, এবং সামান্য কয়েকটি সূত্র ধরে ইনডাকটিভ এবং ডিডাকটিভ উভয়বিধ পদ্ধতিতে চিন্তা করেও কিছুই কিনারা করতে পারলেন না। সকাল বেলা শুধু তাঁর মাথা দপদপ করতে লাগল, চোখ দুটি রক্তবর্ণ ধারণ করল, এবং মেজাজ বিগড়ে গেল। তিনি মনে মনে একটি শপথ করে বসলেন, এবং যে বিষয়ে এতদিন তিনি প্রায় উদাসীন ছিলেন, সেই বিষয়ে অত্যন্ত উৎসাহী হয়ে উঠলেন। তবে ছেলের ব্যাপারে নিজে ব্যক্তিগত ভাবে হস্তক্ষেপ করবেন না, এ নীতিটি তিনি তখনও বজায় রাখলেন।

পাঠক, তুমি কি ডিটেকটিভ ব্রজবিলাস সরকারের কথা ভুলে গিয়েছ? অবশ্যই ভুলতে পার না। সে সামান্য চার পাঁচটা রহস্য ভেদ করেই তো ভারত বিখ্যাত হয়েছিল, সে কথা কে না জানে? তবে তাকে আমরা বহু দিন দেখিনি। কিন্তু দেখিনি বলেই যে সে লাম্বার রুমে পড়ে পড়ে গায়ে মরচে ধরাচ্ছে, তা মনে করার কোন হেতু নেই। সে আজ কয়েক বছর ধরে ইউরোপের নানা জায়গায় মেক-আপ বিদ্যা, ছদ্মবেশ ধারণের নতুন নতুন কৌশল শিখে বেড়িয়েছে। ছদ্মবেশ ধারণে তার তুল্য এখন ভারতবর্ষে আর দ্বিতীয় কেউ নেই। শুধু ছদ্মবেশ নয়, সে এখন অসাধ্য সাধন করতে পারে। খাড়া ভাবে পোঁতা গ্রীজ-পোলের মাথায় সে শুধু দু-খানা পায়ের সাহায্যে, দেহটিকে পোলের সমকোণ অবস্থায় রেখে উঠতে পারে। ওঠবার সময় দু হাতে তার প্রিয় যে-কোন একখানা বই পড়ে। অথবা নোট লেখে। বেণীমাধবের বাবা এই ব্রজবিলাসকেই নিযুক্ত করলেন পুত্রের রহস্য ভেদের কাজে। কিন্তু ফী হাজার টাকার নিচে সে কিছুতেই নিতে রাজী হল না। এই রকমই হয়। আগে সে পাঁচ টাকা বা সাড়ে সাত টাকায় যে কোন রহস্য ভেদ করত, এখন বিদেশ ঘুরে এসে তার দাম বেড়ে গেছে। বাধামাধব কৃপণ নামে খ্যাত, তাঁর পক্ষে এত টাকা এক সঙ্গে দেওয়া প্রাণান্তকর। অথচ ব্রজবিলাস সব টাকা অগ্রিম না নিয়ে কাজ করবে না। শেষে তিন দিনের কচলা-কচলির পরে ব্রজবিলাস দুটি কিস্তিতে টাকা নিতে রাজি হল, এবং পাঁচশ টাকা অগ্রিম নিয়ে টাকার রসিদ এবং রহস্য ভেদের গ্যারান্টি পত্র লিখে দিয়ে বিদায় নিল।

পাঠক, ওই যে দেখতে পাচ্ছ রাজপথে বেণীমাধবের থেকে দশ-বারো হাত দূরত্ব বজায় রেখে একটি শুকনো নোংরা কুকুর তাকে অনুসরণ করে চলেছে, এটি আসলে কুকুর নয়। ওই হচ্ছে ডিটেকটিভ ব্রজবিলাস সরকার। কিন্তু সে খুব নিশ্চিন্ত মনে চলছে না, ছদ্মবেশ ধরা পড়ার ভয়ে নয়, তার ভয় কর্পোরেশন থেকে তাকে ধরে নিয়ে না যায়। কর্পোরেশন থেকে কুকুর ধরার হিড়িক চলছিল তখন। অবশ্য সে অন্য যে-কোন ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারত, কিন্তু তাতে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হত না, এই বিশেষ কেস্‌টিতে কুকুর সাজাই নিতান্ত প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন হলে সে পাখি সাজতেও পারে, এমনি তার বিদ্যা। এই তো এক বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সে লন্ডনে একটি কেস্ হাতে নিয়ে ভারতীয় ময়না সেজে অপরাধীর বাড়িতে গিয়ে ধরা দিল, এবং সেখানে খাঁচায় অতি আদরে পালিত হয়ে তাদের সমস্ত গোপন তথ্য জেনে নিল এবং খাঁচা থেকে পালিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে এসে সব জানিয়ে দিল। ব্লেকও এই কেস হাতে নিয়েছিল, কিন্তু ব্লেক ছুটে আসার আগেই ব্রজবিলাসের সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। ব্লেক পরাজিত হয়ে ফিরে গেল, বলল এ সব ভারতীয় ম্যাজিক। কিন্তু ইয়ার্ডের পুলিশ কমিশনার ব্রজবিলাসের অপ্রত্যাশিত সাফল্যে মুগ্ধ এবং গদগদ হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এমন চুমো খেয়েছিলেন যে সে দাগ তার মুখ থেকে এখনও মেলায়নি। কমিশনার স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ব্রজবিলাসকে প্রশংসা-পত্র দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্রজবিলাস তা নিতে অস্বীকার করে হেসে বলেছিল, আর ওসব কেন, এই দাগ রইল, এটাই বড় সার্টিফিকেট।

ব্রজবিলাস পুরো একটি সপ্তাহ বেণীমাধবকে অনুসরণ করে তার ডায়ারির খাতা বিচিত্র তথ্যে বোঝাই করে ফেলল এবং অতি সহজেই রহস্যের তলদেশে গিয়ে পৌঁছল। কিন্তু তখনই তা রাধামাধবকে জানাল না, কারণ মাত্র সাত দিনে কাজ উদ্ধার হয়েছে দেখলে রাধামাধব ভাববে এমন সহজ কাজের জন্য এতগুলো টাকা জলে গেল। তাই সে পনেরো দিন পরে আরও একবার বেণীমাধবকে শেষবারের জন্য (এর প্রয়োজন ছিল না, তবু ডবল নিশ্চিত হওয়ার জন্য) অনুসরণ করে কুকুরের বেশেই রাধামাধবের সঙ্গে দেখা করতে গেল। রাধামাধববাবু প্রতিদিনই ব্রজবিলাসের অপেক্ষা করছিলেন এবং তাকে না দেখে ভয়ানক চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন, এমন সময় ব্রজবিলাসের পরিবর্তে দরজায় এক শুকনো কুকুর দেখে ভীষণ বিরক্ত হয়ে লাঠি নিয়ে তাকে তাড়া করতে গেলেন। কুকুরবেশী ব্রজবিলাস মানুষের ভঙ্গিতে দুপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি চিনতে পারেননি, তাতে আমি খুশিই হয়েছি ; শুনুন, আপনার পুত্র কমিউনিস্ট হয়েছে, আর কোন ভাইস্‌ তার নেই। তাকে আমি দু ভাবে বিচার করেছি—কুকুর সেজে তাকে অনুসরণ করে দেখেছি কোথায় কোথায় সে যায়, এবং নিজে মার্কসবাদী সেজে তার সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি, তার বিশ্বাসকে কারো নাড়া দেবার সাধ্য নেই। আমি অবশ্য প্রায় ছাত্ররূপে দীক্ষিত হতেই গিয়েছিলাম, তর্কও করেছিলাম, কিন্তু পরাজিত হয়েছি। অবশ্য জোর করে বিশ্বাসকে নাড়া দিতে গেলে সে অবিশ্বাস করত, আমাকে সন্দেহ করত। কিন্তু এ বিষয়ে তার জ্ঞান দেখে অবাক হয়েছি, আমাকে সে অনেক কিছু শেখাতে পারে। যাই হোক, তার সম্পর্কে আমাকে যা জানতে দিয়েছিলেন, তা জানিয়েছি, এবারে বাকি টাকাটা দিয়ে দিন।

রাধামাধব সব শুনে ক্ষেপে গেলেন। বললেন, আমি এর একটা কথা বিশ্বাস করি না, তুমি ভুল লোককে অনুসরণ করেছ।

আসন্ন বিপদ বুঝে তাঁর স্ত্রী ছুটে এলেন সেখানে এবং বললেন উনি মিথ্যা বলেননি, আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম সব, কানেও এসেছে অনেক কথা।

রাধামাধববাবু এবারে আরও ক্ষিপ্ত হলেন, বলেন, তুমি—তুমি জানতে, বলনি? হাজার টাকা খরচ করালে এ জন্য?

স্ত্রী তাঁকে বললেন, তুমি এখন একটু থাম তো, কেন বলিনি সে কথা তোমাকে পরে বলব, আপাতত তুমি ওঁর সঙ্গে কথা মিটিয়ে ফেললা। আর ব্রজবিলাসবাবু, আপনি ওই কুকুরের ছদ্মবেশ ছাড়ুন, একটা কুকুরকে আপনি বলতে আটকাচ্ছে।

রাধামাধব এতক্ষণে অনেকটা প্রকৃতিস্থ হয়েছেন, এবং অপরিচিত লোকের সামনে দাম্পত্য কলহ শুরু করে কিছু লজ্জিতও হয়ে পড়েছেন। তিনি স্ত্রীর কথার প্রতিধ্বনি করে অনেকটা শান্ত সুরে ব্রজবিলাসকে বললেন, আপনি বলতে আমারও আটকাচ্ছে, আমি আগে তুমি বলে ফেলেছি, কিছু মনে করবেন না।

ব্রজবিলাস বলল, স্নানের ঘরটা দেখিয়ে দিন।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে বজ্রবিলাস নিজ মূর্তিতে বেরিয়ে এল, কুকুরের ছালটা তার হাতে ব্যাগের মতো ঝুলছে।

কিন্তু রাধামাধববাবুর উদ্বেগ কমল না। তিনি উত্তেজিতভাবে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলেন এবং হঠাৎ ব্রজবিলাসের দিকে ফিরে বললেন, ওকে ফেরাবার উপায় কি?

ব্রজবিলাস বলল, সে কাজ আমার নয়। আমার কাজ আমি করেছি, টাকাটা দিয়ে দিন। রাধামাধববাবু ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে ব্রজবিলাসের প্রাপ্য বাকি টাকাটা দিয়ে দিলেন।

পাঠক, শুনে দুঃখিত হবে, রাধামাধব পুত্রকে ফেরাতে পারলেন না। ফেরানোর উপায় চিন্তা করতে না করতে শোনা গেল ছেলে কোন্‌ এক আইন অমান্য দলে ধরা পড়েছে এবং ইনকিলাব জিন্দাবাদ করতে করতে জেলে গিয়েছে। জেল হয়েছে এক বছরের। এ সংবাদে বেণীমাধবের বাবা ও মায়ের কি অবস্থা হল তা আমাদের জানবার দরকার কি? কোনো নায়কের বাপ মাকে নিয়ে পাঠকদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু পাঠক, তোমার পুত্র কখনো জেলে গিয়েছে কি? যদি না গিয়ে থাকে, তবে আর ওদের দুঃখ কল্পনা করতে চেষ্টা করো না, দরকারও নেই। মাত্র একটি বছর। কিন্তু তা কত দীর্ঘ—তা নির্ভর করে বছরটা কার, তার উপর। পাঠকের কাছে এই এক বছর দশ বছর মনে হতে পারে যদি বলতে আরম্ভ করি। কিন্তু নাঃ, বলব না। বেণীমাধবের বাপ-মায়ের কাছে এই এক বছর অবশ্যই একটা যুগ মনে হল, কিন্তু সব যুগেরই পার আছে, এবং সে পার শুধু ক্যালেন্ডারের বছরেই হয় না, মানুষের মনের বছরেও পার হয়। কিন্তু পাঠক, তত্ত্বকথা শুনতে চেয়ো না, ঘটনা অনুধাবন করার চেষ্টা কর। বেণীমাধবের মুক্তির আর সাত দিন মাত্র বাকি, এমনি সময় সে তার বাবাকে জানাল তাকে অবিলম্বে খদ্দরের ধুতি পাঞ্জাবি এবং একটি গান্ধী টুপি পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এই অদ্ভুত এবং অপ্রত্যাশিত খবর পেয়ে রাধামাধববাবু প্রায় নাচতে শুরু করলেন। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, পুলিশকে এ জন্য তিনি পুরস্কার দেবেন। এত বড় মহৎ কাজ আর কারও দ্বারা সম্ভব হত না। অবশেষে এল মুক্তি দিবস। বেণীমাধব চমৎকার কংগ্রেসী পোশাকে সেজে, গান্ধী টুপি মাথায়, বন্দেমাতরম্ ধ্বনিতে জেলখানা মুখরিত করে বাইরে বেরিয়ে এল। কংগ্রেসের এক বিরাট দল তাকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে চলল, এ দলের পুরোভাগে রাধামাধব। তিনি কোন দলেই ছিলেন না, কিন্তু ছেলে খদ্দর-পোশাক চাওয়ার পরই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।

কংগ্রেসী পাঠক, তোমার কোন কমিউনিস্ট ছেলে হঠাৎ কখনও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে কি? না দিলে বুঝতে পারবে না রাধামাধব ও তাঁর স্ত্রীর মনে আজ কি আনন্দ। বিশেষ করে তাঁরা এখন কংগ্রেসী হওয়াতে আনন্দের পরিমাণ শতকরা অন্তত পঁচিশ গুণ বেড়ে গেছে, এই বৃদ্ধিটাও তোমার মনে কোন আলোড়ন জাগাবে না। কিন্তু না জাগায় যদি বয়েই গেল। অতএব সে কথা থাক। পরবর্তী সমস্যা তাঁদের নয়, বেণীমাধবের বন্ধুদের। কারণ সে গান্ধীটুপির পরার পর থেকে আর তাদের সঙ্গে মেশে না। পথের ছেলেরা বেণীমাধবের মাথার দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলে, বেণীমাধবের ধ্বজা দেখে যা। বেণীমাধব অবশ্য এতে বিচলিত হয় না। বেণীমাধব কাউকে কিছুই বলে না, মনটা তার কিছু বিষন্ন, অথচ তার কোন হেতু খুঁজে পায় না কেউ। অতএব কানা-ঘুষো চলতে থাকে নানারকম। অনেক জাগতিক ঘটনার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না একথা সত্য, এমন কি অনেক মানসিক ঘটনার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না এ কথাও সত্য, কিন্তু তাই বলে কেউ চুপ করে বসে থাকে কি? থাকে না। বেণীমাধবের বন্ধুরাও চুপ করে বসে রইল না।

পাঠক, এইবার বেণীমাধবের এক অভূতপূর্ব বন্ধু ধনঞ্জয় গুপ্তকে (কঃ পাঃ) অনুকরণ করি এস। ওই যে সে বসে আছে ডিটেকটিভ ব্রজবিলাসের মুখোমুখি। ব্রজবিলাস বলছে, হাজার টাকার নিচে আমি কোনো কেস নিই না। ধনঞ্জয় প্রাণপণে বোঝাচ্ছে এ কোন লাভের ব্যাপার নয়, একটি বিশুদ্ধ রহস্য, এ রহস্য আদৌ ভেদ করা যায় কি না তা দেখতে কি আপনার কৌতূহল নেই? থাকা তো উচিত। ব্রজবিলাস নিবিষ্ট মনে পাইপ টানতে টানতে বলল, রহস্যের জন্য রহস্য—আর্ট ফর আর্টস সেক—কথাটা শুনতে মন্দ নয়। কিন্তু আমি সে অবস্থা পার হয়ে এসেছি। আপনি বরং আমার ভূতপূর্ব সাকরেদ শম্ভুর কাছে যান, সেও খুব ওস্তাদ ডিটেকটিভ এবং শস্তাও বটে। তার ফী মাত্র আড়াই টাকা, এখনও দর বাড়ায়নি। কি কষ্টে যে সংসার চালায়, কিন্তু লোকটা খাঁটি। তাকে আমি আমার সহকারী করে নেব কিছু দিনের মধ্যেই। যাবেন তার কাছে? এই নিন তার কার্ড।

আড়াই টাকার কথা মন্ত্রের কাজ করল। ধনঞ্জয় তৎক্ষণাৎ শম্ভুর কাছে চলে গেল।

১০

পাঠক। শেষ অধ্যায়টি বড়ই জটিল, বড়ই করুণ এবং নিরাশায় ভরা, কিন্তু শম্ভুর অসাধারণ কৃতিত্বের কথায় এ সবের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। শম্ভু কেসটি হাতে নিয়েই বেণীমাধব যে জেলে ছিল সেখানে চলে গেল। তার পরিচয় পুলিশ মহলে জানা, অতএব কোন অসুবিধে হল না। সে প্রথমে বেণীমাধব যে ঘরটিতে ছিল সেখানে গিয়ে বসল। তারপর গুরুর অনুকরণে এক পাইপ তামাক খেলো বসে বসে। এক ঘণ্টা লাগল। এক ঘণ্টার ধোঁয়ায় ঘর আচ্ছন্ন হল, কিন্তু তার আচ্ছন্ন বুদ্ধিও অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেল। বেণীমাধবকে একখানা চেয়ার ও টেবিল দেওয়া হয়েছিল, তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে শম্ভু আবার তামাকের ধোঁয়া এবং চিন্তার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হল। হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটি কাগজ, ছোট্ট এবং দুমড়ানো, টেবিলের নিচে দেয়ালের অন্ধকার কোণে পড়ে আছে। সেখানা খুলে তার লিখন পাঠ করতেই তার চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এবং সে অবিলম্বে তার হাত-ব্যাগ থেকে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস বার করে টেবিলের উপর অদৃশ্য কোন বস্তু খুঁজতে লাগল। লিখনটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অত্যন্ত অর্থপূর্ণ। বাঞ্ছিত জিনিস তাকে পেতেই হবে টেবিলে। দুই আর দুই চার এই অমোঘ বিধান আজও কেউ বদলাতে পারেনি, ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকতেই হবে, এ কথাও তো সকলের জানা। কিন্তু ডিটেকটিভের কাজ ঠিক এর উল্টো দিক থেকে শুরু করতে হয়। অর্থাৎ আগুন যখন আছে, তখন কোন কালে ধোঁয়া অবশ্যই ছিল, অতএব তার চিহ্ন তাকে আবিষ্কার করতে হয়।

শম্ভু অল্পক্ষণের সন্ধানেই প্রচুর চিহ্ন পেয়ে গেল, এবং তা খুব যত্ন করে একখানা ছুরির সাহায্যে জড়ো করে প্লাস্টিকের একটি কৌটোয় সংগ্রহ করে রাখল। তারপর সে গেল জেল-ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকে সে গেল ওষুধ তৈরির ঘরে। কম্পাউন্ডারের কাছ থেকে সে অনেক কিছু জেনে নিল।

পাঠক ভাবছ, শম্ভু যদি সবটা আগেই বুঝে থাকে, তাহলে এত কাণ্ড করার দরকার কি। কিন্তু এরকম ভাবা ঠিক নয়। সব জানলেও, সব মিলিয়ে না দেখলে ডিটেকটিভ কখনো তৃপ্ত হয় না, গল্পেরও সাসপেন্স নষ্ট হয়ে যায়।

কিন্তু পাঠক, ওই দেখ, শম্ভু বাড়িতে এসে তার গবেষণা ঘরে বসে জেল থেকে সংগৃহীত এক শিশি ক্লু মাইক্রোস্কোপের নিচে ফেলে দেখছে আর শিস্‌ দিচ্ছে। শম্ভু বড় ডিটেকটিভ হবার জন্য নিজে কয়েক বছর মেডিক্যাল কলেজে পাঠ নিয়েছিল।

১১

পাঠক, আর দেরি নয়, এবারে রহস্য ভেদ! ওই যে ধনঞ্জয় বসে আছে শম্ভুর সামনে। শম্ভু অগ্রিম এক টাকা নিয়েছিল, বাকি দেড় টাকা নিয়ে তার অদ্ভুত রহস্যভেদের কথা বলতে আরম্ভ করল:দেখুন ধনঞ্জয়বাবু, এটি বিশুদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক কেস্‌। বেণীমাধব চেহারা বিষয়ে ছিল অত্যন্ত মনোযোগী এবং সে কথা আপনি যেদিন আমাকে কেস্‌ দেন, সেইদিন বলেছেন। আরও বলেছেন, সে তার চুল বিষয়ে আগে অত্যন্ত বিলাসী ছিল, কিন্তু কমিউনিস্ট হওয়ার পর চেহারা চুল এবং পোশাক, সব বিষয়েই উদাসীন হয়ে পড়েছিল, এবং আমি সে কথা বিশ্বাস করেছি। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন, মনের কোন বাসনা দমিত থাকলে ভবিষ্যতে যে-কোন সময় তা আবার জাগতে পারে। বেণীমাধবেরও তাই হয়েছিল, সে কিছু দিন জেল বাসের পরেই চুল সম্পর্কে অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দৈব ছিল প্রতিকূল, হঠাৎ তার মাথায় অতি মারাত্মক রকমের এক্‌জিমা দেখা দেয়, এবং তার ফলে সে অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়ে। পাঠক, তুমি কখনো কারও মাথায় একজিমা হতে দেখেছ? না দেখলে বুঝতে পারবে না তা কি ভয়ঙ্কর হতে পারে। বেণীমাধবেরও অবস্থা তাই হল, এবং ক্রমে তার চুল উঠে যেতে লাগল। এই চুল উঠে যাওয়ার মধ্যে কোন শৃঙ্খলা ছিল না, এলোমেলোভাবে এক এক জায়গা থেকে এক এক গোছা উঠে গেল। তাই জেল থেকে তার মুক্তির দিন যত এগিয়ে আসতে লাগল, ততই লজ্জায় ক্ষোভে সে অস্থির হতে লাগল। শেষে এক দিন স্থির করল, সে আত্মহত্যা করবে। সমস্ত রাত সে চিন্তা করল, কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব, তা তার মাথায় এল না। শেষে হঠাৎ এক সময় সে কর্তব্য স্থির করে ফেলল। এখন ওটাই তার একমাত্র পথ। সে স্থির করল, কংগ্রেসে যোগ দেবে। তার পরের ঘটনা পাঠকের জানা আছে। লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য গান্ধী টুপি পরা ভিন্ন সত্যিই তার আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু হাজার টাকা খরচ করলেও সে রহস্য ভেদ করা কঠিন ছিল, শম্ভু আড়াই টাকা ফী নিয়ে গান্ধী-টুপির নিচে মাত্র পাঁচ ইঞ্চি জায়গার মধ্যে এত বড় একটা রহস্যের সন্ধান পেল, এ জন্য আমি তার সঙ্গে দেখা করে তাকে চুমো খেয়ে এসেছি। আশা করি পাঠক আমার অনুসরণ করবে না, তুমি নিজ রুচিতে যা বলে, তাই করবে।

সকল অধ্যায়

১. এই এক নূতন! – সুকুমার সেন
২. হরিদাসের গুপ্তকথা – ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
৩. চুরি না বাহাদুরি – নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত
৪. হত্যাকারী কে? – হরিসাধন মুখোপাধ্যায়
৫. কৃত্রিম মুদ্রা – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
৬. হত্যারহস্য – দীনেন্দ্রকুমার রায়
৭. দিনে ডাকাতি
৮. বহুরূপী (বাঁকাউল্লার দপ্তর) – কালীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়
৯. চিঠিচুরি – পাঁচকড়ি দে
১০. বঙ্গের গুপ্তকথা – অম্বিকাচরণ গুপ্ত
১১. শোণিত-লেখা – অমূল্যচরণ সেন
১২. অদ্ভুত হত্যা – রজনীচন্দ্র দত্ত
১৩. গহনার বাক্স – জগদানন্দ রায়
১৪. ঘড়িচুরি – সরলাবালা দাসী (সরকার)
১৫. সখের ডিটেকটিভ – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
১৬. শঠে শাঠ্যং – চারু বন্দ্যোপাধ্যায়
১৭. অগাধ জলের রুই-কাতলা – হেমেন্দ্রকুমার রায়
১৮. চণ্ডেশ্বরপুরের রহস্য – মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য
১৯. কল্কেকাশির কাণ্ড – শিবরাম চক্রবর্তী
২০. সবুজ রঙের গাড়ি – মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়
২১. অচিন পাখি – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
২২. শেষ দৃশ্য – প্রণব রায়
২৩. জরাসন্ধ-বধ – মণি বর্মা
২৪. সার্জেন্ট মুখার্জি – হেমেন্দ্র মল্লিক
২৫. একটি চলে যাওয়া দিনের গুরুতর কাহিনী – সুকুমার দে সরকার
২৬. সঙ্কেত – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
২৭. রহস্যভেদ – আশালতা সিংহ
২৮. সন্দেহ – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
২৯. ভয়ঙ্কর ভাড়াটে ও পরাশর বর্মা – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩০. স্বামীজী আর অনুকূল বর্মা – কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
৩১. একটি খুন – বিধায়ক ভট্টাচার্য
৩২. ষড়যন্ত্র – গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৩. ঝাউবীথি—বেলা তিনটে – যজ্ঞেশ্বর রায়
৩৪. নীল তারা – পরশুরাম
৩৫. দুই ডিটেকটিভ, দুই রহস্য – পরিমল গোস্বামী
৩৬. নিরুদ্দিষ্ট – সুধাংশুকুমার গুপ্ত
৩৭. আর এক ছায়া – সমরেশ বসু
৩৮. আমার প্রিয়সখী – সন্তোষকুমার ঘোষ
৩৯. প্রেমলতার হাসি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
৪০. ভোম্বলদাস অ্যান্ড কোম্পানি – মোহিতমোহন চট্টোপাধ্যায়
৪১. চিহ্ন – শ্রীধর সেনাপতি
৪২. নিহত একজন – আনন্দ বাগচী
৪৩. ছিপ – অদ্রীশ বর্ধন
৪৪. লাজ আবরণ – কৃশানু বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫. হাওয়াই চটির সন্ধানে – হিমানীশ গোস্বামী
৪৬. গোলোকধাম রহস্য – সত্যজিৎ রায়
৪৭. তদন্ত – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
৪৮. একটি লক্ষ্য, তিনটি খুন – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
৪৯. অন্তর্ধান – অমিত চট্টোপাধ্যায়
৫০. গুরুদাস খাসনবিশের মৃত্যু – তারাপদ রায়
৫১. আক্কেল দাঁত – গুরণেক সিং
৫২. গোয়েন্দা ও প্রেতাত্মা – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
৫৩. তিন খণ্ড হাড় – বীরু চট্টোপাধ্যায়
৫৪. মাণিকজোড় – শোভন সোম
৫৫. ত্রিশূলে রক্তের দাগ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৫৬. রত্নাকরের রক্ত চাই – প্রবীরগোপাল রায়
৫৭. কুয়াংকারের মৃত্যু – মিহির দাশগুপ্ত
৫৮. রিপুসংহার – হীরেন চট্টোপাধ্যায়
৫৯. রহস্যভেদী সদাশিব – মঞ্জিল সেন
৬০. গুরুবিদায় – নারায়ণ সান্যাল
৬১. প্রেম – মনোজ সেন
৬২. ডেডবডি – ইন্দ্রজিৎ রায়
৬৩. জানোয়ার – অমল রায়
৬৪. বিরাট ধোঁকা – কালীকিঙ্কর কর্মকার
৬৫. জগদ্দলের জগাপিসি – প্রদীপ্ত রায়
৬৬. খণ্ডপানা – সুকুমার সেন
৬৭. সদুঠাকুমার পিস্তল – প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত
৬৮. ছারপোকা – হিমাংশু সরকার
৬৯. বাঘের ঘরে – শেখর বসু
৭০. গোয়েন্দা বরদাচরণ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৭১. অনিন্দ্যসুন্দরের অপমৃত্যু – অনীশ দেব
৭২. পোড়া মোমবাতির রহস্য – সুভদ্রকুমার সেন
৭৩. হাবুল দারোগার গল্প – অত্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
৭৪. দরজার ওপারে মৃত্যু – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৭৫. রীতিমত নাটক – রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন