অন্তর্ধান – অমিত চট্টোপাধ্যায়

রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়

অন্তর্ধান – অমিত চট্টোপাধ্যায়

আজকের দিনে মানুষ ‘অন্তর্হিত’ হয় না। প্রদীপ্ত রায়ের ভাষায় ‘উবে যেতে’ পারে না। অথচ দিন কয়েক আগে সংবাদপত্রের প্রথম পাতাতেই বড় বড় হরফে ছিল:

‘ব্যাঙ্কার কেদারনাথ চট্টরাজের

রহস্যজনক অন্তর্ধান!

সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে বেড়াতে বেরোন। তারপর আর ফিরে আসেননি, বা তাঁর কোন সন্ধানও পাওয়া যায়নি।’

গোয়েন্দা মেঘনাদ গুপ্ত সত্যশঙ্কর চক্রবর্তীর পাশে বসে পুলিশ রিপোর্ট শুনছিল। ফিরে তাকিয়ে সহকারী প্রদীপ্তকে বলল, উবে যাওয়া বলতে কি ‘মীন’ করছিস তুই?

এক গাল হেসে প্রদীপ্ত জবাব দিল, তাহলে কি সব উবে যাওয়ার গায়ে এখন থেকে শ্রেণীবিভাগের লেভেল এঁটে রাখতে হবে?

নিশ্চয়ই। প্রত্যেক মানুষকে যেমন মুণ্ড, ধড় আর পা —এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়, সব অন্তর্ধানকেও তেমনি মাত্র তিনটি শ্রেণীতে পড়তেই হবে। প্রথমটা হচ্ছে: স্বেচ্ছায় অন্তর্ধান—যেটা সচরাচর ঘটে থাকে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে: ‘বিস্মৃতি’ ঘটিত। ক্বচিৎ কখনো সেটা ঘটলেও, প্রায়ই নির্ভেজাল। আর তৃতীয়টা হচ্ছে: খুব নিপুণভাবে যে কোন মানুষের মরদেহটা গায়েব করে দেওয়া। অর্থাৎ খুন করে লাশ পাচার করা। তুই কি সব ক’টাকেই অসম্ভব বলতে চাস?

প্রদীপ্ত জেদের সুরে বলল, হ্যাঁ, চাই। স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে গেলেও কেদার চট্টরাজের মত লোককে কেউ না কেউ চিনতে পারবেই। কোথায় লুকোবেন তিনি? বিস্মৃতির বেলাতেও তাই। আর খুন করে তাঁর মত লোকের লাশ গায়েব করা আজকের এই সভ্যযুগে যে কতখানি হাস্যকর—

ইত্যবসরে মেঘনাদ তাব পাইপে অগ্নি-সংযোগ করছিল। একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলল, প্রদীপ্ত বন্ধুবর, একটা ভুল করছ যে। যে লোকটা আর একজনকে সরিয়ে ফেলতে চায় বা নিজেকেই সরাতে চায়, সে ‘কমপিউটারে’র মতই পাকা হিসেবী। নির্ভুলও বলতে পারিস। তার পক্ষে পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া আর এমন কি শক্ত কাজ?

সত্যশঙ্কর চক্রবর্তীর বোধ করি আত্মাভিমানে আঘাত লাগল। তিনিও পাল্টা সুরে বললেন, পুলিশের চোখে না হলেও, আপনার চোখে শক্ত বোধ হয়?

মস্তিষ্কে আমার ঘিলুটা একটু বেশিই তো।

সত্যশঙ্কর কিন্তু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, জানেন, গোয়েন্দা বিভাগের ইন্দ্রজিৎ রায় কেসটার তদন্ত করছেন। এমন কোন সূত্র তিনি এখনও আবিষ্কার করতে পারেননি—

বাধা দিয়ে মেঘনাদ বলল, যাতে কেসটা আরও জটিল হয়ে ওঠে।

আরও চটলেন সত্যশঙ্কর। বললেন, এতদিন পরে আপনি কি বলতে চান, সূত্রের কোন দাম নেই?

তা তো বলছি না। বলছি, সত্যটাকে খুঁজতে হবে মস্তিষ্ক দিয়ে, বাইরের হাজার গণ্ডা সূত্র দিয়ে নয়।

আপনি কি তাহলে এটাই প্রমাণ করতে চান যে, বাইরে গিয়ে তদন্ত না করে, ঘরের ভেতর চেয়ারে বসে বসেই রহস্যটা আবিষ্কার করতে পারেন?

ঠিক তাই। হাসল মেঘনাদ: অবশ্য যদি বিশদ বিবরণটা আমায় দেওয়া হয়।

আমি পাঁচশ টাকা বাজি রাখতে পারি, দশ দিনের ভেতর কেদার চট্টরাজের মামলার কোন কিনারাই করতে পারবেন না। রাজী?

রাজী।

বেশ। সত্যশঙ্কর অন্তর্ধানের বিশদ বিবরণ দিলেন। সোমবার দিন যথাসময়েই মিস্টার চট্টরাজ ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর শহরতলির বাড়ি শান্তি কুটিরে ফিরে যান। নিয়মমাফিক বাগানে খানিকক্ষণ পায়চারি করেন। সকলেই সাক্ষী দিয়েছে তিনি তখন সম্পূর্ণ সুস্থ আর স্বাভাবিক। তারপর স্নান করে সন্ধ্যার খাবার খান। স্ত্রীকে বলেন, চন্দ্রকুমার শ্রীমলের আড়ত থেকে তিনি একটু ঘুরে আসছেন। মিঃ চৌধুরী বলে এক ভদ্রলোকের আসবার কথা আছে। তিনি ফেরার আগেই যদি ভদ্রলোক এসে পড়েন, তাহলে তাঁকে যেন খাতির করে বসানো হয়। এরপর ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে তিনি ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান। সেই যাত্রাই তাঁর অগস্ত্য যাত্রা।

মেঘনাদ গুপ্ত মাথা দোলাতে দোলাতে বলল, এখনো পর্যন্ত খুবই সরল। এহ বাহ্যঃ।

এর পনেরো কুড়ি মিনিট পরে লম্বা মতন একজন ভদ্রলোক বাড়িতে এসে হাজির হন। মুখে গোঁফ-দাড়ি। চোখে চশমা। নিজের পরিচয় দেন তিনি মিস্টার চৌধুরী বলে। কেদার চট্টরাজের সঙ্গে তাঁর দেখা করবার কথা আছে। তাঁকে বাইরের ঘরে বসানো হল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, কিন্তু কেদারবাবু আর ফেরেন না। শেষ পর্যন্ত মিস্টার চৌধুরী আর অপেক্ষা করতে পারলেন না। মিসেস নূপুর চট্টরাজকে বলে বিদায় নিলেন।

সারা রাত কেদারবাবু না ফিরতে সম্ভবপর সব জায়গায় তাঁর খোঁজ করা হল। পুলিশেও খবর গেল। কিন্তু মাথামুণ্ড কেউই কিছু বুঝতে পারল না। শ্ৰীমলের ওখানে তিনি যাননি, স্টেশনে নয়, লাইব্রেরিতে নয়। কেউ তাঁকে দেখতেও পায়নি।

বুধবার সকালে পুলিশ একটা চমকপ্রদ ঘটনা আবিষ্কার করল। মিস্টার চট্টরাজের নিজস্ব বসবার ঘরের পেছনে ছোট একটা ‘স্ট্রংরুমে’র মতন আছে। সেই স্ট্রংরুমে থাকে ওঁর লোহার সিন্দুকটা। সেটা দেখা গেল ভাঙা। ভেতরের টাকাকড়ি অপহৃত। জানলাটা ভেতর থেকে বন্ধ, কাজেই বাইরের কোন চোরের কাজ হতে পারে না। অবশ্য বাড়ির কোন লোকের সঙ্গে যোগসাজস যদি না থাকে। মনে হয়, সোমবার রাত্রেই সিন্দুকটা ভাঙা হয়েছে। তবে কেদারবাবুর অন্তর্ধানের জন্যে কেউ আর সেটা লক্ষ্য করে উঠতে পারেনি।

মেঘনাদ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, মিস্টার চৌধুরীকে কি গ্রেপ্তার করা হয়েছে?

এখনও নয়। তবে নজর রাখা হচ্ছে।

মেঘনাদ মাথা দোলাল। বলল, সিন্দুক থেকে কি ধরণের জিনিস চুরি হয়েছে বলে মনে হয়?

সত্যশঙ্কর গর্বের হাসি হেসে জবাব দিলেন, মিস্টার চট্টরাজের অংশীদার সেন সাহেবের সঙ্গে পুলিশ দেখা করে। তাঁর মতে বেশ মোটা অঙ্কের কাঁচা টাকা আর সহজ কিস্তির বন্ড ছিল সিন্দুকে। তাছাড়া হীরে মুক্তো ইত্যাদি তো বটেই। মিসেস চট্টরাজের মণি মুক্তো জড়োয়াও ওই সিন্দুকেই থাকত। হালফিল হীরে জহরত কেনাটা মিস্টার চট্টরাজের একটা নেশায় দাঁড়িয়ে গেছিল।

মেঘনাদ গম্ভীরভাবে বলল, হুঁ! লুটি তো ভাণ্ডার তাহলে। মিস্টার চৌধুরী কেন এসেছিলেন কেদারবাবুর কাছে পুলিশ কিছু জানতে পেরেছে?

বম্বের কতকগুলো শেয়ারের ব্যাপারে। তবে দুজনের সম্বন্ধ ছিল অনেকটা খাদ্য-খাদকের।

হুঁ! তাহলে পশ্চিম ঘাটেও কেদারবাবুর স্বার্থ ছিল?

ছিল মানে? পুরোপুরিই ছিল। গত শীতকালটা বম্বের ওদিকেই কাটিয়ে এসেছেন।

মেঘনাদ কতক্ষণ কি ভাবল। তারপর হঠাৎ প্রশ্ন করল, স্বামী-স্ত্রীর ভাব-ভালবাসাটা কি রকম জেনেছেন কিছু?

জেনেছি। সম্বন্ধে কোন চিড় খায়নি। মিসেস চট্টরাজ নিতান্ত নিরীহ প্রকৃতির মহিলা।

ওদিকটা তাহলে পরিষ্কার। কেদারবাবুর শত্রু কেউ ছিল?

বড়লোকদের কিছু থাকবে বৈকি। তবে আক্রোশে খুন করার মতন পরম শত্র তাঁদের কেউই নন! হ্যাঁ, একটা খবর আপনাকে বলা দরকার মিস্টার গুপ্ত। একজন মালী বলছিল, সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ সে একজন লোককে বকুলতলার পাশ দিয়ে বাড়ির দিকে যেতে দেখে। ওদিকটায় যে দরজা আছে, সেটা দিয়ে মাঝে-মধ্যে কেদারবাবু যাতায়াত করতেন। অনেকটা দূর বলে লোকটাকে সে অবশ্য ঠিক চিনতে পারেনি।

কেদারবাবু নিশ্চয়ই তার আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন?

হ্যাঁ, প্রায় আধ ঘণ্টাটাক আগে।

বকুলতলার ওপাশে কি আছে?

ঝিল।

ঝিলের পাড়ে নৌকো রাখার ঘর?

একটু বিস্মিত হলেন সত্যশঙ্কর। বললেন, ধরেছেন ঠিকই।

মেঘনাদ গম্ভীর হয়ে কাগজে ছাপানো কেদারনাথ চট্টরাজের ছবিখানার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। কতকটা আত্মগতভাবে বিড়বিড় করতে লাগল, মাথার চুল ঢেউ খেলানো—একটু বেশিই বড় বড়। মুখে ভারিক্কি গোঁফ। জোড়া ভ্রূ, ছুঁচলো দাড়ি। আচ্ছা সত্যশঙ্করবাবু, কেদারবাবুর চোখের দৃষ্টি কি খুব কালো আর গভীর?

হ্যাঁ।

দাড়ি-চুল সবে সাদা হতে শুরু হয়েছে?

হ্যাঁ, তাই। মনে হচ্ছে, এরপর আপনার কাছে সব জলের মতই পরিষ্কার?

ঠিক উল্টোটা। ধোঁয়ার মতই ঘোলাটে।

সত্যশঙ্কর মনে মনে বোধ করি খুশিই হয়ে উঠছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে মুখ তুলে মেঘনাদ জ্বলজ্বলে চোখে বলল, তাতেই মনে হচ্ছে রহস্যের সমাধানটা করতে পারব। জলের মত পরিষ্কার হলেই আমার মন বলে, ওটা সাজানো ব্যাপার।

সত্যশঙ্কর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, আচ্ছা, আপনি তাহলে ধোঁয়ার রাজ্যেই বিচরণ করুন। যথেষ্ট সময় তো রইল।

মেঘনাদ সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, নতুন যদি কোন খবর পান, দয়া করে জানাতে ভুলবেন না।

সত্যশঙ্কর চলে যেতেই মেঘনাদ চোখ মিটমিট করতে করতে বন্ধুকে বলল, কিরে, আমার ঘিলু সম্বন্ধে তোর শ্রদ্ধা কমে গেল নাকি?

কিছু মাত্র না।—প্রদীপ্ত জবাব দিল।

—তাহলে আয়, আলোচনাটা করা যাক—

প্রদীপ্ত বলল, ওই ঝিল নিয়ে তো?

উঁহু, নৌকো-ঘর নিয়ে।

তারপর?

তারপর যে কি, বার বার প্রশ্ন করেও প্রদীপ্ত তার আর উত্তর পেল না।

পরদিন সন্ধ্যার দিকে সত্যশঙ্করের জীপখানা এসে মেঘনাদ গুপ্তের বাড়ির সামনে থামতেই লম্বা লম্বা পা ফেলে তিনি ভেতরে ঢুকে পড়লেন। তাঁর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল জরুরী খবর কিছু দেবার আছে।

মেঘনাদ বলল, দোহাই সত্যশঙ্করবাবু, ঝিলের জলে চট্টরাজের লাশটা পাওয়া গেছে বলবেন না যেন। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারব না।

এক সময় চেয়ারে বসে পড়ে সত্যশঙ্কর উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, লাশ নয়, কেদারবাবুর প্যান্ট-শার্ট—যেগুলো পরে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, সেগুলো নৌকো-ঘরে পাওয়া গেছে।

তাঁর আর কোন কাপড়-চোপড় কি বাড়ি থেকে অদৃশ্য হয়েছে?

না। তাঁর স্ত্রী, খাস চাকর নিতাই সব হলফ করে বলেছেন। তার ওপর চৌধুরীকে আমরা অ্যারেস্ট করেছি। বাড়ির ঝি শান্তি শপথ গেলে বলেছে যে চৌধুরীকে সে বকুলতলার পাশ দিয়ে আসতে দেখেছে। বাড়ি থেকে চলে যাবার মিনিট দশেক আগেই।

মেঘনাদ গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করল, চৌধুরী নিজে কি বলেন?

প্রথমে তো অস্বীকারই করেছিলেন ড্রইংরুম ছেড়ে বেরিয়েছেন বলে। কিন্তু ঝি শান্তি যখন হলফ করল, তখন স্বীকার করেছেন তিনি। গোটা কয়েক বকুল ফুল কুড়োতে যে একবার বেরিয়েছিলেন ড্রইংরুম থেকে, সেটা খেয়ালই ছিল না। এ সাফাই অবশ্য ধোপে টিকবে না। তাছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটা প্রমাণ পাওয়া গেছে। কেদারবাবু বাঁ হাতের অনামিকাতে সব সময় একটা দামী হীরের আংটি পরে থাকতেন। সেটা সোমবার রাত্রে ফকিরচাঁদ দলুই বলে একজন লোক কলকাতার এক দোকানে বন্ধক দেয়। লোকটা পুরোন পাপী। আমাদের খাতায় তার নাম আছে। বন্ধক দিয়ে যে টাকা সে পায়, তাই দিয়ে প্রচুর মদ গেলে। কিন্তু সামলাতে পারেনি। বেহেড অবস্থায় একজন কনস্টেবলকে মারধোর করে। ফলে গারদ-বাস। আমি আর ইন্দ্রজিৎ আজই তার কাছে গেছলুম। গারদে ঢুকে ব্যাটা সিধে হয়ে গেছে। এখন দিব্যি শান্তশিষ্ট গোবেচারাটি!

লোকটা ভবঘুরে। কেদারবাবুর বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা গাছতলায় বসে বসে মুড়ি-তেলেভাজা খাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে দেখতে পেলো কালো পুরুষ্ট গোঁফওলা একজন লম্বা লোক আসছে।

গাছের আড়ালে ছিল বলে ফকিরচাঁদকে লোকটা দেখতে পায়নি। তার কাছাকাছি এসে সে চারদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে কি একটা জিনিস যেন ঝোপের ভেতর ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর হনহন করে হাঁটা দিল স্টেশনের দিকে।

ফকিরচাঁদ তখন উঠে ঝোপ হাতড়াতে লাগল। একটু পরেই আবিষ্কার করল আংটিটাকে। মিস্টার চৌধুরী অবশ্য ফকিরচাঁদের জবানবন্দিটাকে ঝেড়ে অস্বীকার করেছেন! আর ফকিরচাঁদের কথা বিশ্বাসযোগ্যও নয়। হয়তো কেদারবাবুকে খুন করেই সে আংটিটা পেয়েছে—

মাথা নাড়তে নাড়তে মেঘনাদ বলল, সম্ভব নয় সত্যশঙ্করবাবু। লাশটাকে সে সরাবে কি করে? এতদিনে নিশ্চয়ই আবিষ্কৃত হত। দ্বিতীয়ত, খুন করলে এমন প্রকাশ্যভাবে আংটিটা ফকিরচাঁদ বাঁধা দিতে যেতে সাহসই করত না। তৃতীয়ত, আপনাদের শাস্ত্রেই বলে চোর-ছ্যাঁচোররা কদাচিৎ খুনে হয়। মোটমাট এইটেই মনে হয়, বাড়ির কাছাকাছি সত্যিই যদি আংটিটা ফকিরচাঁদ পেয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে কেদারবাবুই সেটা ফেলেছেন।

প্রদীপ্ত আর থাকতে না পেরে বলে উঠল, কিন্তু তিনিই বা শুধু শুধু খুলে ফেলতে যাবেন কেন?

সত্যশঙ্কর বললেন, একটা কারণ থাকতে পারে। কেদারবাবুর বাড়ির কাছাকাছি ভরতরাম বলে একজনের চুনের গোলা আছে। মানুষের রক্তমাংসের দেহটা চুনের ঝাঁঝে জ্বলে যেতে পারে। কিন্তু সোনা হীরে মুক্তো অবিকৃতই থাকে।

প্রদীপ্ত বলল, সবই বোঝা গেল এখন। কি নৃশংস কাণ্ড!

মেঘনাদ গুপ্ত এতক্ষণ গভীর ভাবে চিন্তা করছিল। এইবার ফিরে তাকিয়ে সত্যশঙ্করকে জিজ্ঞেস করল, কেদারবাবু আর তাঁর স্ত্রী এক ঘরেই শুতেন কি না জানেন?

সত্যশঙ্কর হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, এতক্ষণ গভীর চিন্তার পর এই প্রশ্ন? এ যে পর্বতের মূষিক প্রসব, মিস্টার গুপ্ত। অবশ্য আপনার প্রশ্নের সঠিক জবাব আমি জানি না।

জানাতে পারবেন? যদি পারেন, তাহলে বিশেষ উপকৃত হব।

সত্যশঙ্কর কতক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থেকে এক সময় বিদায় নিলেন।

মেঘনাদ উঠে পাশের ঘরে চলে যেতেই প্রদীপ্ত একটুকরা কাগজ টেনে নিয়ে খসখস করে লিখে চলল।

অকস্মাৎ পেছন থেকে মেঘনাদ গুপ্তর গলা ভেসে এল: এত মন দিয়ে কি লিখছিস রে?

প্রদীপ্ত মুখ তুলে তাকিয়ে উৎসাহভরে বলল, কেসটার দরকারী সূত্রগুলো। শুনবি নাকি?

নিশ্চয়। তোর মাথা তো আজকাল খুলে গেছে—

বন্ধুর মন্তব্যটুকু গায়ে না মেখে প্রদীপ্ত পড়ে চলল:

এক নম্বর: মিস্টার চৌধুরীই যে লোহার সিন্দুক খুলেছেন, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দু’ নম্বর: কেদার চট্টরাজের ওপর তাঁর আক্রোশ ছিল।

তিন নম্বর: প্রথমে তিনি কোন সময়ের জন্যে ড্রইংরুম ছেড়ে যাননি বলে যে জবানবন্দি দেন, সেটা মিথ্যা।

চার নম্বর: ফকিরচাঁদের উক্তি সত্যি হলে হত্যা-ব্যাপারে মিস্টার চৌধুরী অবশ্যই জড়িত।

মেঘনাদ গুপ্তের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠতে দেখে প্রদীপ্ত কেমন যেন মিইয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল, তুই কি তাহলে বলছিস—

বাধা দিয়ে মেঘনাদ মৃদুস্বরে বলল, তোর যুক্তিগুলো যে কতখানি খোঁড়া, সেটাও বুঝতে পারিসনি। ধর—

এক নম্বর: মিস্টার চৌধুরী হাত গুণে জানেননি যে সিন্দুক খোলার সুযোগ তিনি পাবেন। ব্যবসা সংক্রান্ত কথা বলতে তিনি এসেছিলেন। কাজেই কেদারবাবু যে বাড়িতে না থেকে শ্রীমলের আড়তে যাবেন, সেটা জানা সম্ভব নয়।

প্রদীপ্ত তর্কচ্ছলে বলল, সুযোগ পেতেই তিনি তার সদ্‌ব্যবহার করেছেন হয়তো?

ভদ্রলোকরা কি লোহার সিন্দুক খোলার যন্ত্রপাতি পকেটে করে নিয়ে ঘোরেন?

আচ্ছা, আমার দু’নম্বর বিশ্লেষণ কর—

মেঘনাদ বলল, তুই লিখেছিস মিস্টার চৌধুরীর আক্রোশ ছিল কেদারবাবুর ওপর। ব্যবসায় তিনি কেদারবাবুকে দু-একবার হার মানিয়েছেন। যে জেতে, তার তত আক্রোশ থাকবার কথা নয়। বরং যে হারে, তার থাকাই স্বাভাবিক।

কিন্তু কোন সময়ের জন্যে তিনি ড্রইংরুমের বাইরে যাননি— কথাটা যে মিথ্যা, সেটা অস্বীকার করতে পারিস না—

হয়তো ভয় পেয়েই মিথ্যেটা বলেছেন। কারণ কেদারবাবুর পরনের পোশাকগুলো যে পাওয়া গেছে, সেটা ভুলে যাসনি।

না হয় নাই গেলুম। এবার চতুর্থ যুক্তিটা?

মেঘনাদ গুপ্ত হেসে বলল, ফকিরচাঁদের উক্তি যদি সত্যি হয়, তাহলে মিস্টার চৌধুরী জড়িত বৈকি। কিন্তু কথা হচ্ছে, সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে রইল প্রদীপ্ত। কথা বলল না।

এবার মেঘনাদ গম্ভীর হয়ে গেল। বলল, দুটো সত্যিকার দরকারী সূত্রই তুই বাদ দিয়ে গেছিস। প্রথম হচ্ছে, কেদারবাবুর হঠাৎ এই হীরে-মুক্তো কেনার বাতিক। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, গত শীতে তাঁর বম্বে এলাকায় পাড়ি দেওয়াটা—

প্রদীপ্ত কি একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই টেলিফোনটা বেজে উঠল। ওপার থেকে সত্যশঙ্কর সংবাদ দিলেন, কেদারবাবু আর তাঁর স্ত্রী আলাদা ঘরেই শুতেন।

আনন্দে মেঘনাদ প্রায় লাফিয়ে উঠল: প্রদীপ্ত রে, বাজি জিতেছি।

প্রদীপ্তর মুখখানা ঝুলে পড়ল।

মেঘনাদ সেটা লক্ষ্য করে তাগিদ দিল, আমাদের চেনাশোনা কোন লোকের ওঁর ব্যাঙ্কে টাকা নেই তো? সব্বাইকে খবর দে। আজকালের ভেতরই কিন্তু চট্টরাজের ব্যাঙ্ক ধূলিস্যাৎ হবে। কথাটা সত্যশঙ্করবাবুকেও জানিয়ে দিস?

প্রদীপ্তর অবস্থা তখন প্রায় পাগলের মত। হাসবে কি কাঁদবে বুঝতে পারল না। বন্ধুর একটি কথাও সে না পারল বিশ্বাস করতে, না পারল উড়িয়ে দিতে।

কিন্তু মেঘনাদের ভবিষ্যদ্বাণী যে কতখানি সত্য, সেটা পরদিন কাগজ খুলতেই জানা গেল। প্রথম পাতাতেই বড় বড় হরফে ছাপা চট্টরাজের ব্যাঙ্ক ফেল হওয়ার সংবাদ।

প্রদীপ্ত মুগ্ধ চিত্তে মেঘনাদকে বোধ করি অভিনন্দন জানাতে যাচ্ছিল, তার আগেই সত্যশঙ্কর হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে ঢুকলেন। হাতে সেদিনকার একখানা দৈনিকপত্র। চিৎকার করে বলে উঠলেন, কি করে জানলেন মিস্টার গুপ্ত? কাল আপনার টেলিফোন পেয়ে তো আমরা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলুম।

বসুন, বসুন। আগে এক কাপ কফি হোক। মেঘনাদ বলল, গোড়াতেই যেটা আমায় সন্দিগ্ধ করে তোলে, সেটা হচ্ছে সিন্দুক খোলার ব্যাপারটা। নোটের বাণ্ডিল, হীরে মুক্তো জহরত, সহজ কিস্তির বণ্ড সব থরে থরে তার ভেতর সাজানো। কার জন্যে? নিশ্চয় চোরের জন্যে নয়। তাহলে দাঁড়ায় কেদারবাবুর নিজের জন্যেই। তারপর ওঁর হীরে মুক্তো কেনার হালফিল বাতিকটা। ব্যাঙ্কের যে টাকা উনি ভাঙছেন, সেটা দিয়েই ওগুলো কিনে উনি অপর জায়গায়, অপর নামে রাখবার ব্যবস্থা করছেন। তারপর মামলা মোকদ্দমার ঝড়-ঝাপ্টা কেটে গেলেই গ্রাস করে ফেলবেন—এই ইচ্ছে ছিল। মিস্টার চৌধুরী তাঁর মতলবের কিছু জানতেন না বলেই শেয়ারের ব্যাপারে দেখা করতে এসেছিলেন। সেই সুযোগটা নিয়ে আগে থাকতেই সিন্দুকটা ভাঙার ব্যবস্থা করে রাখেন কেদারবাবু। তারপর স্ত্রীকে মিস্টার চৌধুরী বলে একজন ভদ্রলোক দেখা করতে আসবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন।

সত্যশঙ্কর রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠলেন, কিন্তু গেলেন কোথায়?

কোথায় বলে মনে হয়?

প্রদীপ্ত বলে উঠল, নিশ্চয় কলকাতার মতন কোন বড় শহরে। গা-ঢাকা দেবার এত ভাল জায়গা তো আর নেই।

মেঘনাদ মুচকি হেসে বলল, আমি হলে কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিতে কোথায় থাকতুম জানিস? জেলে।

জেলে! সত্যশঙ্কর প্রায় চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন। তার মানে?

মিসেস চট্টরাজকে একবার জেলে নিয়ে গিয়ে ফকিরচাঁদের সামনে দাঁড় করালেই রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে। যতই দাড়ি গোঁফ কামিয়ে ফেলুন আর ভুরু ছাঁটুন, স্ত্রী স্বামীকে নিশ্চয় চিনতে পারবেন—জগতের আর কেউ না পারলেও।

সত্যশঙ্কর অবিশ্বাসের সুরে বলে উঠলেন, কিন্তু ফকিরচাঁদ তো আগে একবার জেল খেটেছে। পুলিশের খাতায় তার নাম আছে।

সেইখানেই তো কেদারনাথের অসাধারণ প্রতিভা। সমস্ত প্ল্যানটা আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন তিনি। গত শীতে বম্বে অঞ্চলে ব্যবসা উপলক্ষে তিনি মোটেই যাননি। ফকিরচাঁদ সেজে তিন মাস জেল খেটেছেন—যাতে পুলিশ ঘুণাক্ষরেও তাঁকে সন্দেহ করতে না পারে। প্রায় কোটি টাকার ব্যাপার যেখানে, সেখানে একটু অসুবিধা সহ্য করতে হয়। শুধু একটা মুস্কিল দেখা দিল—

যথা?

যথা আবার কেদার চট্টরাজ সাজতে গিয়ে তাকে নকল দাড়ি গোঁফ চুল পরতে হল। দিনের বেলা চললেও, রাত্রেও ওসব নিয়ে ঘুমোননা সম্ভব নয়, তাই স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা ঘরে শোবার ব্যবস্থা করলেন তিনি। বাগানের মালীটি তাঁকে ঠিকই দেখেছিল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি নৌকো-ঘরে যান। পরনের প্যান্ট-শার্ট সেখানে ছেড়ে তিনি ফকিরচাঁদ সাজলেন। তারপর আংটি বাঁধা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে ইচ্ছে করে মারামারি ঘটালেন। ফলে, থানা, হাজত, শ্রীঘর বাস—সেখানে তাঁর খোঁজ করতে কেউ কোনদিন যাবে না।

সত্যশঙ্কর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, অসম্ভব! গল্প কথা।

মেঘনাদ মুচকি হেসে বলল, কাল একবার মিসেস চট্টরাজকে শ্রীঘর দর্শন করিয়ে আনুন না। হাতে পাঁজি মঙ্গলবারে কাজ কি?

পরদিন সত্যশঙ্কর আর এলেন না। শুধু একজন কনস্টেবলের হাতে বাজি হারার পাঁচশ টাকা পাঠিয়ে দিলেন।

মেঘনাদ অবশ্য সেটা নিল না। একটুকরো চিঠি লিখে ফেরৎ পাঠাল। ‘আপনি ঘুষ নেন না। সুতরাং পুরো মাসের মাইনেটা হারালে ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করা হবে না কি?’

সকল অধ্যায়

১. এই এক নূতন! – সুকুমার সেন
২. হরিদাসের গুপ্তকথা – ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
৩. চুরি না বাহাদুরি – নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত
৪. হত্যাকারী কে? – হরিসাধন মুখোপাধ্যায়
৫. কৃত্রিম মুদ্রা – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
৬. হত্যারহস্য – দীনেন্দ্রকুমার রায়
৭. দিনে ডাকাতি
৮. বহুরূপী (বাঁকাউল্লার দপ্তর) – কালীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়
৯. চিঠিচুরি – পাঁচকড়ি দে
১০. বঙ্গের গুপ্তকথা – অম্বিকাচরণ গুপ্ত
১১. শোণিত-লেখা – অমূল্যচরণ সেন
১২. অদ্ভুত হত্যা – রজনীচন্দ্র দত্ত
১৩. গহনার বাক্স – জগদানন্দ রায়
১৪. ঘড়িচুরি – সরলাবালা দাসী (সরকার)
১৫. সখের ডিটেকটিভ – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
১৬. শঠে শাঠ্যং – চারু বন্দ্যোপাধ্যায়
১৭. অগাধ জলের রুই-কাতলা – হেমেন্দ্রকুমার রায়
১৮. চণ্ডেশ্বরপুরের রহস্য – মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য
১৯. কল্কেকাশির কাণ্ড – শিবরাম চক্রবর্তী
২০. সবুজ রঙের গাড়ি – মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়
২১. অচিন পাখি – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
২২. শেষ দৃশ্য – প্রণব রায়
২৩. জরাসন্ধ-বধ – মণি বর্মা
২৪. সার্জেন্ট মুখার্জি – হেমেন্দ্র মল্লিক
২৫. একটি চলে যাওয়া দিনের গুরুতর কাহিনী – সুকুমার দে সরকার
২৬. সঙ্কেত – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
২৭. রহস্যভেদ – আশালতা সিংহ
২৮. সন্দেহ – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
২৯. ভয়ঙ্কর ভাড়াটে ও পরাশর বর্মা – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩০. স্বামীজী আর অনুকূল বর্মা – কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
৩১. একটি খুন – বিধায়ক ভট্টাচার্য
৩২. ষড়যন্ত্র – গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৩. ঝাউবীথি—বেলা তিনটে – যজ্ঞেশ্বর রায়
৩৪. নীল তারা – পরশুরাম
৩৫. দুই ডিটেকটিভ, দুই রহস্য – পরিমল গোস্বামী
৩৬. নিরুদ্দিষ্ট – সুধাংশুকুমার গুপ্ত
৩৭. আর এক ছায়া – সমরেশ বসু
৩৮. আমার প্রিয়সখী – সন্তোষকুমার ঘোষ
৩৯. প্রেমলতার হাসি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
৪০. ভোম্বলদাস অ্যান্ড কোম্পানি – মোহিতমোহন চট্টোপাধ্যায়
৪১. চিহ্ন – শ্রীধর সেনাপতি
৪২. নিহত একজন – আনন্দ বাগচী
৪৩. ছিপ – অদ্রীশ বর্ধন
৪৪. লাজ আবরণ – কৃশানু বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫. হাওয়াই চটির সন্ধানে – হিমানীশ গোস্বামী
৪৬. গোলোকধাম রহস্য – সত্যজিৎ রায়
৪৭. তদন্ত – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
৪৮. একটি লক্ষ্য, তিনটি খুন – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
৪৯. অন্তর্ধান – অমিত চট্টোপাধ্যায়
৫০. গুরুদাস খাসনবিশের মৃত্যু – তারাপদ রায়
৫১. আক্কেল দাঁত – গুরণেক সিং
৫২. গোয়েন্দা ও প্রেতাত্মা – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
৫৩. তিন খণ্ড হাড় – বীরু চট্টোপাধ্যায়
৫৪. মাণিকজোড় – শোভন সোম
৫৫. ত্রিশূলে রক্তের দাগ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৫৬. রত্নাকরের রক্ত চাই – প্রবীরগোপাল রায়
৫৭. কুয়াংকারের মৃত্যু – মিহির দাশগুপ্ত
৫৮. রিপুসংহার – হীরেন চট্টোপাধ্যায়
৫৯. রহস্যভেদী সদাশিব – মঞ্জিল সেন
৬০. গুরুবিদায় – নারায়ণ সান্যাল
৬১. প্রেম – মনোজ সেন
৬২. ডেডবডি – ইন্দ্রজিৎ রায়
৬৩. জানোয়ার – অমল রায়
৬৪. বিরাট ধোঁকা – কালীকিঙ্কর কর্মকার
৬৫. জগদ্দলের জগাপিসি – প্রদীপ্ত রায়
৬৬. খণ্ডপানা – সুকুমার সেন
৬৭. সদুঠাকুমার পিস্তল – প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত
৬৮. ছারপোকা – হিমাংশু সরকার
৬৯. বাঘের ঘরে – শেখর বসু
৭০. গোয়েন্দা বরদাচরণ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৭১. অনিন্দ্যসুন্দরের অপমৃত্যু – অনীশ দেব
৭২. পোড়া মোমবাতির রহস্য – সুভদ্রকুমার সেন
৭৩. হাবুল দারোগার গল্প – অত্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
৭৪. দরজার ওপারে মৃত্যু – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৭৫. রীতিমত নাটক – রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন