অধ্যায় ৩৩ : ঈশ্বরের মৃত্যু – ফ্রিয়েডরিখ নিচাহ

কাজী মাহবুব হাসান

অধ্যায় ৩৩ : ঈশ্বরের মৃত্যু – ফ্রিয়েডরিখ নিচাহ

‘ঈশ্বর মৃত’, জার্মান দার্শনিক ফ্রিয়েডরিখ নিচাহ’র (১৮৪৪–১৯০০) লেখা বিখ্যাত একটি বাক্য। কিন্তু কীভাবে ঈশ্বরের মৃত্যু হতে পারে? ঈশ্বরকে তো মনে করা হয় অমর, আর অমর কোনো সত্তার তো মৃত্যু নেই। যে সত্তা চিরন্তনভাবেই বেঁচে থাকেন। একটি অর্থে যদিও সেটাই মূল বিষয় ছিল এই ঘোষণার। সে-কারণে ঈশ্বরের মৃত্যুর কথা শুনলে এত অদ্ভুত মনে হয়: এর উদ্দেশ্যও তাই। নিচাহ খুব সুপরিকল্পিতভাবেই সেই ধারণাটি নিয়ে খেলেছিলেন যে, যে-ধারণা দাবি করে ঈশ্বরের মৃত্যু হতে পারেনা। তিনি আক্ষরিকভাবে এমন কিছু বলেননি যে, ঈশ্বর এতদিন বেঁচে ছিলেন কিন্তু এখন আর তিনি বেঁচে নেই। বরং তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করার বিষয়টি তার যৌক্তিকতা হারিয়েছে। ১৮৮২ সালে তার Joyful Wisdom বইয়ে নিচাহ এই বাক্যটি একটি চরিত্রের মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন, যিনি একটি লণ্ঠন হাতে ধরে সব জায়গায় ঈশ্বরকে খুঁজছিলেন, কিন্তু তাকে খুঁজে পাননি। গ্রামের মানুষরা ভেবেছিল লোকটি পাগল।

নিচাহ সম্বন্ধে কোনোকিছু জানা শুরু করার আগে প্রথম চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে তাঁর নামের উচ্চারণ কীভাবে হবে। Nietzsche প্রথম অংশটির উচ্চারণ, নি (Knee), পরের অংশটি চাহ (Cha); সুতরাং জার্মান Nietzsche-র উচ্চারণ হচ্ছে নিচাহ। ১৮৪৪ সালে জার্মানির পূর্বাঞ্চলের একটি ছোট শান্ত গ্রামে ফ্রিয়েডরিখ নিচাহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যেখানে বহু প্রজন্ম ধরে তাঁর পূর্বসূরিরা ধর্মযাজক ছিলেন। স্কুল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিচাহ তাঁর অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন, প্রাচীন গ্রিক বিষয়ে তাঁর দক্ষতা ছিল বিস্ময়কর (সেই সময়ে যা খুবই কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয় ছিল)। ধারাবাহিকভাবে তাকে বেশকয়েকজন রমণী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, বিষয়টি তাকে বেশ দুঃখ দিয়েছিল (তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার সুবিশাল পরিমাণে আত্মবিশ্বাসের অভাব’)। তাঁর পরিবারের কারো সাথেই তিনি মানিয়ে চলতে পারেননি (‘আমি আমার মাকে পছন্দ করিনা আর আমার বোনের কণ্ঠস্বর শোনা আমার জন্য রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।’) এবং তাঁর এই একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতার প্রত্যুত্তরে তিনি তাঁর বিখ্যাত গোঁফটি রেখেছিলেন এবং প্রায়শই পাহাড়ি গ্রামের পথে তিনি দীর্ঘসময় ধরে হাঁটতে বের হতেন। বহুবছর ধরেই তাঁর বইগুলো আদৌ বিক্রি হয়নি। যখন তার বয়স ৪৪, মানসিকভাবে তিনি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন, এর থেকে তিনি আর নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে পারেননি, এর ১১ বছর পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কোনো সন্দেহ নেই নিচাহ অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। যখন মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে তিনি সুইজারল্যান্ডে বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পান, শিক্ষাজগতে চমৎকার একটি পেশায় তিনি সফল হবেন এমন সম্ভাবনার কোনো কমতি ছিলনা তখন। কিন্তু খ্যাপাটে এবং খুবই মৌলিক একজন দার্শনিক হিসাবে প্রথাগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জগতে তিনি নিজেকে বেমানান হিসাবে আবিষ্কার করেছিলেন খুব শীঘ্রই, কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চিন্তা করা তাঁর পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিলনা, সুতরাং মনে হতেই পারে নিজের জীবনকে যতটা কঠিন করা সম্ভব এমন একটা নেশা তাঁর মধ্যে ছিল। ১৮৭৯ সালে তিনি অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পেশা ত্যাগ করেন, আংশিকভাবে এর কারণ অবশ্য ছিল তার ক্রমশ দূর্বল হতে থাকা স্বাস্থ্য। এরপর তিনি প্রথমে ইতালি, এরপর ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন, এই ভ্রমণের সময় তিনি বেশকিছু বই লিখেছিলেন, যে বইগুলো সেই সময় খুব কম মানুষই পড়েছিল, অথচ এখন তার প্রতিটি বই শুধুমাত্র দর্শন নয়, সাহিত্যেরও অনন্য নিদর্শন এবং সুবিখ্যাত। তার মানসিক অবস্থার অবনতি হলে জীবনের শেষ সময়টুকু তাকে আশ্রয়কেন্দ্রেই কাটাতে হয়।

ইমানুয়েল কান্টের ধারণাগুলোর সুশৃঙ্খল উপস্থাপনার পুরো বিপরীত, নিচাহর দর্শন আপনাকে সবদিক থেকেই আক্রমণ করবে। বেশিরভাগ লেখাই তার সংক্ষিপ্ত, খণ্ড খণ্ড অনুচ্ছেদ আর খুবই গোছানো এক বাক্যের মন্তব্য, যাদের কোনোটি তির্যক, শ্লেষাত্মক, কিছু আন্তরিক,বেশিরভাগই উদ্ধত এবং প্ররোচিত করার ক্ষমতায় দক্ষ। কখনো মনে হতে পারে যেন নিচাহ আপনার উদ্দেশ্যে চিৎকার করছেন, কখনো ফিসফিস করে আপনার কানে গভীর কোনো জ্ঞানের কথা উচ্চারণ করছেন। প্রায়শই তিনি চেয়েছেন যে তাঁর পাঠকরা তাঁর সাথে ষড়যন্ত্রে অংশ নিক, যেমন তিনি বলছেন, তিনি ও আপনি একমাত্র জানেন পরিস্থিতিটা আসলে কেমন, কিন্তু ঐযে সব নির্বোধ মানুষরা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে তারা সবাই বিভ্রান্তিতে আক্রান্ত। একটি বিষয় তিনি বারবার আলোচনা করেছিলেন সেটি হচ্ছে নৈতিকতার ভবিষ্যৎ। যদি ঈশ্বর মৃত হয়ে থাকেন, তাহলে এর পরের পদক্ষেপ কী? এই প্রশ্নটি নিচাহ নিজেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তাঁর উত্তর হচ্ছে, ঈশ্বরের মৃত্যুর কারণে নৈতিকতার কোনো ভিত্তি ছাড়া আমরা এখন পরিত্যক্ত। ভালো আর মন্দ বা শুভ আর অশুভ সংক্রান্ত আমাদের ধারণাগুলো অর্থবহ হয় এমন কোনো পৃথিবীতে যেখানে ঈশ্বর আছেন। ঈশ্বরহীন কোনো পৃথিবীতে এর কোনো মূল্য নেই। ঈশ্বরকে আপনি সরিয়ে ফেলেন, কীভাবে আমাদের বাঁচা উচিত, কোন্ জিনিসগুলোকে আমরা মূল্য দেব ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালাও আপনি সরিয়ে ফেলবেন। বেশ শক্তিশালী একটি বার্তা এটি, কিন্তু তার সমসাময়িকরা এমন কিছু শুনতে চাননি। তিনি নিজেকে বর্ণনা করেছিলেন immoralist হিসাবে, নৈতিকতা বর্জিত, তবে এমন কেউ নয় যিনি ইচ্ছা করে অশুভ কর্মে লিপ্ত, বরং এমন কেউ যিনি বিশ্বাস করতেন আমাদের সব নৈতিকতাকে অতিক্রম করে যেতে হবে, তাঁর একটি বিখ্যাত বইয়ের শিরোনাম, beyond good and evil; নিচাহ মনে করতেন, ঈশ্বরের মৃত্যু মানবতার জন্যে নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত করেছে, একই সাথে যা উত্তেজনাপূর্ণ ও ভীতিকর। এর নেতিবাচক দিকটি হচ্ছে কোনো ধরনের নিরাপত্তা চাদর আর নেই, কোনো নিয়ম নেই কীভাবে মানুষ বাঁচবে অথবা থাকবে। একসময় নৈতিক আচরণের অর্থ, উদ্দেশ্য আর সীমা বেঁধে দিয়েছিল ধর্ম, ঈশ্বরের অনুপস্থিতি সবকিছুই সম্ভাব্য করে তুলেছে এবং সব সীমারেখা সরিয়ে দিয়েছে। আর ভালো দিকটি হচ্ছে, অন্তত নিচাহর দৃষ্টিভঙ্গিতে,প্রতিটি মানুষই এখন তার নিজের জন্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারবে, তারা তাদের জীবনকে রূপান্তর করতে পারবে শিল্পকর্মের সমতুল্য বেঁচে থাকার নিজস্ব কোনো শৈলী উদ্ভাবন করে।

নিচাহ দেখেছিলেন একবার যখন আপনি মেনে নেবেন ঈশ্বর নেই, আপনি যেখানে-সেখানে আর ভালো-মন্দের সঠিক সংজ্ঞা খুঁজতে খ্রিস্টীয় চিন্তায় আর আবদ্ধ থাকবেন না, কারণ সেটি হবে আত্মপ্রবঞ্চনা। যে মূল্যবোধগুলো আমরা সংস্কৃতির উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি, যেমন সহমর্মিতা, দয়া, অন্য মানুষের প্রতি বিবেচনা, সবকিছুকেই চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। আর সেটি করার জন্য তার উপায় হচ্ছে অনুসন্ধান করা কীভাবে এইসব মূল্যবোধগুলো প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল। নিচাহ মনে করতেন. দুর্বল আর অসহায়দের সেবা করার খ্রিস্টীয় মূল্যবোধটির বিস্ময়কর একটি উৎস আছে। আপনি হয়তো ভাববেন সহমর্মিতা আর দয়া অবশ্যই ভালো, আপনি সম্ভবত প্রতিপালিত হয়েছেন দয়াকে প্রশংসা আর স্বার্থপরতাকে ঘৃণা করার শিক্ষা পেয়ে। নিচাহ যা দাবি করেছিলেন তাহচ্ছে চিন্তার রূপ আর অনুভূতি যা আমরা ঘটনাচক্রে ধারণ করি তার ইতিহাস আছে। একবার যখন আপনি এর ইতিহাস অথবা উৎপত্তি বা ‘জিনিয়ালজি’ জানতে পারবেন কীভাবে যে ধারণাগুলো আমরা পেয়েছি, তাহলে খুব কঠিন হবে চিন্তা করা যে তারা সবসময়ই অপরিবর্তনশীল ছিল এবং কোনো-না-কোনোভাবে কীভাবে আমাদের আচরণ করা উচিত তারা সেই নৈর্ব্যক্তিক বাস্তব সত্যের সংশ্লিষ্ট।

নিচাহ তাঁর Genealogy of Morality বইটিতে প্রাচীন গ্রিসের একটি পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছিলেন, যখন ক্ষমতাবান অভিজাতশ্রেণির বীরোচিত চরিত্ররা তাদের জীবন গড়ে তুলতেন সম্মান, মর্যাদা, লজ্জা ও যুদ্ধে বীরত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে; দয়াশীলতা, উদারতা এবং খারাপ কাজ করার অপরাধবোধ দিয়ে নয়। এটাই সেই জগৎ যা ব্যাখ্যা করেছিলেন হোমার, তার ইলিয়াড ও ওডিসি মহাকাব্যে। বীরদের এই জগতে যাদের ক্ষমতা নেই, ক্রীতদাস ও দুর্বলরা হিংসা করত শক্তিশালীদের। ক্রীতদাসরা শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ আর হিংসা পরিচালিত করত। এইসব নেতিবাচক অনুভূতিগুলোর মধ্যে থেকে তারা সুষ্টি করেছিল নতুন একগুচ্ছ মূল্যবোধ। তারা অভিজাতশ্রেণির বীরোচিত মূল্যবোধকে পুরোপুরি উল্টে দিয়েছিল। অভিজাতশ্রেণির মতো শক্তি আর ক্ষমতার গুণগান করার বদলে, ক্রীতদাসরা উদারতা আর দুর্বলদের সাহায্য করাটিকে রূপান্তর করে সদগুণ হিসাবে। এই ক্রীতদাসের নৈতিকতা, যেমন নিচাহ এটিকে বলতেন, ক্ষমতাবানদের কাজকে অশুভ আর তাদের নিজেদের সৌহার্দ্যপূর্ণ অনুভূতিকে ভালো হিসাবে চিহ্নিত করে। দয়াশীলতার নৈতিকতার জন্ম যে ঈর্ষার অনুভূতি থেকে, নিচাহর এমন ধারণাটি অবশ্যই গতানুগতিক নয়। নিচাহ নিজেই অভিজাতদের নৈতিকতার, দুর্বলদের প্রতি সহমর্মিতার চেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধপ্ৰিয় বীরদের খ্রিস্টীয় নৈতিকতার প্রতি নিজের পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন, খ্রিস্টীয় ধর্ম ও নৈতিকতা যার উৎস, এটি যা দাবি করে তাহলো প্রতিটি মানুষের মূল্য একই। নিচাহ মনে করতেন এটা খুব গুরুতর ভ্রান্তি। তাঁর শৈল্পিক বীর, যেমন বিটহোভেন ও শেক্সপিয়ার সাধারণ মানুষের চেয়ে বহু অগ্রসরবর্তী। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর বার্তাটিকে এখানে মনে হয় যে খ্রিস্টীয় মূল্যবোধ, যা প্রথমত ঈর্ষা থেকে উদ্ভূত, সেটি মানবতাকে পেছনের দিকে টেনে ধরেছে। এর মূল্য হয়তো হতে পারে যে দুর্বলরা নিষ্পেষিত হবে, কিন্তু এই মূল্য পরিশোধ করা নিচাহ মনে করতেন যুক্তিযুক্ত কারণ, শক্তিশালীদের জন্য এটি গৌরব আর অর্জনের পথ উন্মুক্ত করে দেবে। Thus Spake Zaruthustra বইটিতে তিনি Übermensch বা সুপারম্যান সম্বন্ধে লিখেছিলেন। এটি বর্ণনা করেছিল ভবিষ্যতের কাল্পনিক মানুষদের, যারা প্রথাগত কোনো নৈতিকতার নিয়মে আবদ্ধ নয় বরং তারা সেটি অতিক্রম করে, নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। হয়তো চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব সম্বন্ধে তার বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি দেখেছিলেন Übermensch হচ্ছে মানবজাতির উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ। এটি বেশ চিন্তার বিষয়, আংশিকভাবে এর কারণ আপাতদৃষ্টিতে এটি তাদের সহায়তা করেছিল যারা তাদের নিজেদের দেখেছে বীরোচিত হিসাবে এবং তারা তাদের ইচ্ছামতোই যা-কিছু করতে পারে অন্যদের কথা না-ভেবেই। আরো খারাপ পরিস্থিতিকে, এই ধারণাটি নাৎসিরা নিয়েছিল নিচাহর কাজ থেকে, এবং এটাকে ব্যবহার করেছিল একটি মাস্টার বা শ্রেষ্ঠ রেস বা বর্ণের সমর্থনে তাদের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিটির সমর্থনে, যদিও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করেন তারা বিকৃত করেছিল নিচাহ আসলে যা লিখেছিল সেটিকে নিচাহর দুর্ভাগ্য ছিল যখন তিনি তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন মূলত তাঁর বোন এলিজাবেথপরবর্তী সময়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, যেমন তাঁর সব কাজগুলো নিয়ে কী হবে এবং তার মৃত্যুর পরে আরো পঁয়ত্রিশটি বছর সব লেখাই ছিল তাঁর বোনের দখলে। এলিজাবেথ ছিলেন জার্মান জাতীয়তাবাদী, খুবই বাজে ধরনের ইহুদিবিদ্বেষীও। তিনি তাঁর ভাইয়ের নোটবুক ঘেঁটে, সেই লাইনগুলো বের করেছিলেন যার সাথে তিনি একমত ছিলেন, বাদ দিয়েছিলেন বাকি সবকিছু যা জার্মানিকে সমালোচনা করেছে অথবা তার বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেনি। নিচাহ-এর ধারণাগুলো নিয়ে তার এই কাট অ্যান্ড পেস্ট সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল The Will to Power নামে, যা তার লেখাকে রূপান্তরিত করেছিল নাৎসিদের প্রচারণার মুখপাত্র হিসাবে আর নিচাহ হিটলারের তৃতীয় রাইখে একজন স্বীকৃত লেখকের জায়গা পান। অবশ্যই এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল, যদি তিনি আরো কিছুটা সময় বেঁচে থাকতেন। এ সবকিছুর সাথে তাঁর কখনোই সংশ্লিষ্টতা থাকত না। তারপরও অস্বীকার করার উপায় নেই তার লেখা বহু পক্তি শক্তিশালীদের দুর্বলদের ধ্বংস করার অধিকারকে সমর্থন করেছে। বিষয়টি নিয়ে অবাক হবার কারণ নেই, কারণ তিনি আমাদের বলেন যে,’বাচ্চা ভেড়া বাজপাখিকে ঘৃণা করে, কিন্তু এর মানে এইনা যে আমরাও বাজপাখিদের ঘৃণা করব ছোট ভেড়ার বাচ্চাদের ছোঁ মেরে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের খাবার জন্য।’ নিচাহ সবসময়েই জোর দিয়েছেন কীভাবে আবেগ আর অযৌক্তিক শক্তি তাদের প্রভাব আরোপ করে মানবমূল্যবোধকে রূপ দেবার জন্য। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করেছিল বহু মানুষকে, যাদের একজন সিগমন্ড ফ্রয়েড, যিনি অবচেতন মনে শক্তি আর কামনার অনুসন্ধান করেছিলেন।

নিচাহ বিশ্বাস করতেন যে দর্শনের কেন্দ্রীয় যে দায়িত্ব সেটি হচ্ছে আমাদেরকে শেখানো কীভাবে, আমরা সত্যিকারভাবে যা, তা হয়ে উঠতে পারব (বা become we we are), অন্যার্থে, কীভাবে আমরা আমাদের সর্ব্বোচ্চ সম্ভাবনাকে আবিষ্কার ও তার প্রতি অনুগত থাকতে পারি। এই উদ্দেশ্যে তিনি চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা আমাদের উপহার দিয়েছিলেন :

এক. নিজের ঈর্ষাকে স্বীকার করুন: ঈর্ষা, নিচাহ যাকে শনাক্ত করেছিলেন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে। কিন্তু আমাদের সাধারণত শেখানো হয় ঈর্ষার অনুভূতিগুলো নিয়ে লজ্জা পাওয়ার জন্য। ভাবা হয় এটি অশুভ কোনোকিছুর ইঙ্গিতবাহী। সুতরাং আমরা এটি নিজেদের ও অন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখি, এবং সেটি মাত্রায় এতই বেশি যে আসলেই বহু মানুষ আছেন যারা মাঝে মাঝে পূর্ণ আন্তরিকতাসহ বলতে পারেন যে আসলেই কারো প্রতি তারা ঈর্ষা বোধ করেন না। যৌক্তিকভাবে বিষয়টি অসম্ভব, নিচাহ দাবি করেছিলেন, বিশেষ করে যদি আমরা আধুনিক বিশ্বে বসবাস করি (আধুনিক বিশ্ব বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়)। গণতন্ত্র, প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক- অভিজাতশ্রেণীর পরিসমাপ্তি, নিচাহর দৃষ্টিতে, সৃষ্টি করেছিল পরশ্রীকাতরতা আর ঈর্ষার অনুভূতির অত্যন্ত উর্বর প্রজনন ক্ষেত্রটির, কারণ এখন যে-কেউই প্ররোচিত হতে পারেন অনুভব করার জন্য যে তারা অন্য সবারই মতো, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সমান। সামন্তপ্রথার যুগে, কোনো একজন প্রজার কখনোই রাজপুত্রকে ঈর্ষা করার কথা মনে পড়ত না, কিন্তু এখন প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের বাকি সবার সাথে তুলনা করেন এবং ফলাফলে তারা উন্মুক্ত হন উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর নিজস্ব অপ্রতুলতার একটি বিস্ফোরক মিশ্রণের সম্মুখে। তবে, ঈর্ষার অনুভূতি নিয়ে কোনো অপরাধবোধ থাকার দরকার নেই, এর কোনোটাই অস্বাভাবিক নয়, নিচাহ প্রস্তাব করেছিলেন। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, কীভাবে আমরা সেই ঈর্ষা নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের ঈর্ষার কারণে সৃষ্ট সমস্যা থেকে, সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে আমরা কতটুকু শিখতে পেরেছি,তার উপর নির্ভর করেই মহত্ত্ব আসে। নিচাহ ঈর্ষাকে ভাবতেন সংশয়পূর্ণ, তবে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসাবে, যা আসে আমাদের নিজেদের গভীরতম সত্তা থেকে, যা আমাদের জানায় আসলেই আমরা কী চাইছি। যা-কিছু আমাদের ঈর্ষাকাতর করে তোলে তা আমাদের সত্যিকারের সম্ভাবনার খণ্ডিত অংশ, যাকে অস্বীকার করলে আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের শেখা উচিত কীভাবে নিজেদের ঈর্ষার ময়নাতদন্ত করতে হয়, ঈর্ষাকাতর মুহূর্তগুলোর একটি ডায়রি রেখে এবং এরপর এইসব পর্বগুলো যাচাই করে দেখার মাধ্যমে ভবিষ্যতের আমাদের উত্তম সত্তার রূপটি নির্ণয় করে। যে ঈর্ষা আমরা নিজেদের বলে স্বীকার করব না, নিচাহ মনে করতেন যে সেগুলো বেরিয়ে আসবে দুর্গন্ধ হিসাবে, নিচাহর ভাষায় গন্ধকের দুর্গন্ধ (sulfurous odours), ‘তিক্ততা হচ্ছে ঈর্ষা, যা নিজেকে বুঝতে পারেনা। এমন নয় যে নিচাহ বিশ্বাস করতেন, আমরা যা চাই তা আমরা সবসময়ই পাই (তাঁর নিজের জীবনেই এই শিক্ষাটি তিনি যথেষ্ট পরিমানে পেয়েছিলেন)। তিনি শুধুমাত্র দাবি করেছিলেন যে, আমাদের সত্যিকারের সম্ভাবনার ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হয়ে উঠতে হবে, এবং আমাদের আসলেই বীরের মতো যুদ্ধ করতে সেটিকে সম্মান করার জন্য, এবং শুধুমাত্র তারপরই আমাদের অধিকার আছে ব্যর্থতার জন্য শোক করার, ভাবগম্ভীর অকপটতা আর মর্যাদাপূর্ণ সততার সাথে।

দুই. খ্রিস্টান হবেন না: নিচাহ খ্রিস্টধর্ম নিয়ে বেশকিছু কঠোর মন্তব্য করেছিলেন, যেমন, ‘আমি খ্রিস্টধর্মকে বলব একটি বিশাল অভিশাপ, অন্ত নিহিতভাবে নৈতিক বিকৃতি ছড়িয়ে আছে পুরো নিউ টেস্টামেন্টে, একটিমাত্র মানুষ সেখানে শ্রদ্ধা পাবার যোগ্য তিনি হচ্ছেন, পিলাটে, রোমান তৎকালীন গভর্নর।’ বেশ শক্তিশালী বক্তব্য ছিল এটি, তবে তার সত্যিকারের নিশানা ছিল আরো সূক্ষ্ম এবং আরো বেশি কৌতূহলোদ্দীপক: তিনি খ্রিস্টধর্মকে অপছন্দ করতেন মানুষকে তাদের ঈর্ষা থেকে রক্ষা করার কারণে। নিচাহর বর্ণনায় খ্রিস্টধর্ম আবির্ভূত হয়েছিল রোম সাম্রাজ্যের শেষাংশে ভীরু ক্রীতদাসদের মনে, তাদের সেই সাহস ছিল না তারা যা সত্যিকারভাবে চাইছে সেটি অর্জন করার জন্যে (অথবা তারা ব্যর্থ হয়ে সেটিও স্বীকার করত না), সুতরাং তারা আঁকড়ে ধরে ছিল একটি দর্শনের যা তাদের ভীরুতা আর কাপুরুষতাকে রূপান্তর করেছিল একটি ভার্চু বা সদ্‌গুণে। এই ধর্মাবলম্বীরা চাইতেন পরিপূর্ণতার সত্যিকার স্বাদ পাবার জন্য (এই পৃথিবীতে সম্মানজনক একটি অবস্থান, যৌনতা, বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা, সৃজনশীলতা)। কিন্তু তারা সেটি অর্জন করার জন্য অদক্ষ ছিল। সেকারণেই তারা সৃষ্টি করেছে একটি ভণ্ডামিপূর্ণ মতবাদ যা নিন্দা করেছিল সেই সবকিছু যা তারা চাইতেন, তবে তারা সেটি অর্জন করতে যুদ্ধ করার জন্য ছিল খুবই দুর্বল, অন্যদিকে প্রশংসা করেছে সেই সবকিছুর তারা যা কিছু চায়না কিন্তু ঘটনাচক্রে তাদের আছে। সুতরাং, খ্রিস্টান মূলবোধের এই সিস্টেমে, যৌনতাহীনতা রূপান্তরিত হয়েছে বিশুদ্ধতায় বা purity-তে, দুর্বলতা রূপান্তরিত হয়েছে ভালোত্ব বা গুডনেসে, ঘৃণ্য কারো কাছে নতি স্বীকার করা হয়েছে আনুগত্য, নিচাহ’র ভাষায় not-being-able-to-take- revenge (প্রতিশোধ নিতে না পারার অক্ষমতায়) রূপান্তরিত হয়েছে ক্ষমাশীলতায়। খ্রিস্টধর্ম রূপান্তরিত হয়েছে নিষ্ক্রিয়তার একটি সুবিশাল যুক্তিযুক্ততা এবং জীবন থেকে এর সম্ভাবনা শুষে নেবার একটি পদ্ধতিতে।

তিন. কখনোই মদ্যপান করবেন নাঃ নিচাহ পানি ছাড়া আর কিছু পান করতেন না, শুধুমাত্র বিশেষ উপলক্ষে দুধ ছাড়া। এবং তিনি ভাবতেন আমাদেরও সেটাই করা উচিত। এখানে তিনি কিন্তু তুচ্ছ, খ্যাপাটে কোনো খাদ্যসংক্রান্ত উপদেশ দেবার চেষ্টা করেননি। এই ধারণাটি তার দর্শনের কেন্দ্র থেকেই এসেছে, যেমন আমরা তার ঘোষণায় দেখতে পাই : ইউরোপীয় সভ্যতায় দুটি প্রধান মাদক হচ্ছে : খ্রিস্টধর্ম ও অ্যালকোহল। তিনি অ্যালকোহল ঘৃণা করতেন ঠিক যে-কারণে খ্রিস্টধর্মকেও ঘৃণা করতেন। কারণ দুটোই কষ্টকে অবশ করে এবং দুটোই আমাদের আশ্বস্ত করে যে সবকিছু যেমন আছে ঠিকই আছে, আর এভাবেই আমাদের জীবনকে আরো উন্নত করার ইচ্ছাটি এটি শুষে নেয়। মদ্যপান সন্তুষ্টির একটি সাময়িক অনুভূতির সৃষ্টি করে, সেটি ভয়ানকভাবে ব্যাহত করে আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার প্রচেষ্টাকে। এমন নয় যে নিচাহ দুঃখকষ্টকে তাদের খাতিরেই শুধু প্রশংসা করছেন। বরং তিনি শনাক্ত করেছিলেন দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সত্য, জীবনের উন্নতি আর অর্জনের জন্য দরকার অনিবার্যভাবে যন্ত্রণাময় বিষয়: ‘কী হতে পারে যদি আনন্দ আর দুঃখ এত নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে, যে-কেউই এর একটি যতবেশি চাইবে তাকে অবশ্যই অন্যটাও যতটা সম্ভব বেশি গ্রহণ করতে হবে। জীবনে আপনার বেছে নেবার একটি সুযোগ আছে: হয় যতটা সম্ভব ততটা কম দুঃখ, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কষ্টহীনতা অথবা যতটা সম্ভব দুঃখ অনেক পরিমাণ সূক্ষ্ম সুখ আর আনন্দের মূল্য হিসাবে।’ নিচাহর চিন্তা কষ্টবোধকে নতুনভাবে পরিমাপ করেছিল। আমাদের জন্যে কিছু কঠিন অনুভূত হয়, অবশ্যই সেটি পরাজয় বা ব্যর্থতার চিহ্ন নয়, হতে পারে যে, কাজটি করার আমরা চেষ্টা করছি এটি শুধুমাত্র সেটির মহত্ত্ব আর কষ্টসাধ্যতার প্রমাণ।

চার. ঈশ্বর মৃত : ঈশ্বরের মৃত্যু সম্বন্ধে নিচাহর নাটকীয় এই দাবি, সাধারণত যেভাবে ভাবা হয়, আদৌ কোনো উচ্ছ্বাসময় মন্তব্য নয়। খ্রিস্টধর্ম সম্বন্ধে তার বিরূপদৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও নিচাহ কিন্তু মনে করেননি এই ধর্মবিশ্বাসের পরিণতি নিয়ে উচ্ছ্বাস করা যেতে পারে। তিনি জানতেন যে ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে মিথ্যা, কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেছিলেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস খুব উপকারী একটি সমাজের স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য। ধর্মকে বাদ দেয়া মানে মানুষের নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে যা তাদের দিকনির্দেশনা, সান্ত্বনা, নৈতিকতার ধারণা আর আধ্যাত্মিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে। বিষয়টি সহজ কোনো কাজ হবে না বলেই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। নিচাহ প্রস্তাব করেছিলেন যে ধর্মের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করা উচিত সংস্কৃতি দিয়ে (দর্শন, শিল্পকলা, সংগীত ও সাহিত্য); ধর্মগ্রন্থকে প্রতিস্থাপিত করা উচিত সংস্কৃতির। তবে নিচাহ তাঁর সেই সময়ে সংস্কৃতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছিল সেই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানবিক বিষয়গুলোকে হত্যা করছে, তাদেরকে রূপান্তরিত করছে শুষ্ক অ্যাকাডেমিক ও তাত্ত্বিক অনুশীলনে, আমরা ব্যর্থ হচ্ছি তাদের যেভাবে ব্যবহার করা উচিত সেভাবে ব্যবহার করতে: জীবনের পথনির্দেশক হিসাবে। তিনি বিশেষভাবে প্রশংসা করেছিলেন কীভাবে গ্রিকরা তাদের ট্রাজেডিগুলোকে ব্যবহার করেছে বাস্তবমুখী, প্রয়োগযোগ্য, চিকিৎসার একটি উপায় হিসাবে, বিশেষ করে ক্যাথারসিস কিংবা নৈতিক শিক্ষার বাহন হিসাবে। এবং তিনি তাঁর সময়কে চেয়েছিলেন তুলনামূলকভাবে আরো বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠার জন্যে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় আর মিউজিয়াম-নির্ভর শিক্ষা সংস্কৃতিকে অভিযুক্ত করেছেন জীবন-নির্দেশনাকারী, নৈতিকতার শিক্ষাদানকারী সংস্কৃতি থেকে সরে যাবার জন্য, বিশেষ করে ঠিক সেই সময় যখন ঈশ্বরের মৃত্যু এই বিষয়গুলোকে আরো বেশি আবশ্যক করে তুলেছে। তিনি সংস্কারের জন্য ডাক দিয়েছিলেন, যেখানে মানুষ তার বিশ্বাসের অবসানে সৃষ্ট সংকটে নতুন সচেতনতা সহ, ধর্মের অপসৃয়মানতা সৃষ্ট শূন্যস্থানগুলো পূরণ করবে প্রজ্ঞা আর সংস্কৃতির নিরাময়ী সৌন্দর্য। প্রতিটি যুগই মুখোমুখি হয়েছে বিশেষ ধরনের মনোজাগতিক চ্যালেঞ্জের, নিচাহ ভাবতেন দার্শনিকদের কাজ হলো সেটি শনাক্ত করা এবং এর সমাধানে সাহায্য করা। ঊনবিংশ শতকের দুটি বিশেষ ঘটনা নিচাহকে বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল, ব্যাপক গণতন্ত্রায়ন এবং নিরীশ্বরবাদিতা। প্রথমটি শঙ্কা জাগিয়েছিল অজীর্ণ ঈর্ষার এবং বিষাক্ত ক্ষোভের প্লাবন, দ্বিতীয়টি মানুষকে দাঁড় করিয়েছিল দিকনির্দেশনা অথবা নৈতিকতাবিহীন একটি শূন্যস্থানে। এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিচাহ বেশকিছু সমাধানও প্রস্তাব করেছিলেন, যেগুলো থেকে আমাদের সময়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রায়োগিক বিষয় শেখার সুযোগ আছে, যেমনটি তিনি সুস্পষ্টভাবে চেয়েছিলেন।

সকল অধ্যায়

১. অধ্যায় ১ : যে মানুষটি প্রশ্ন করেছিলেন – সক্রেটিস এবং প্লেটো
২. অধ্যায় ২ : ইউডাইমোনিয়া – আরেকটু প্লেটো
৩. অধ্যায় ৩ : প্ৰকৃত সুখ – অ্যারিস্টোটল
৪. অধ্যায় ৪ : দার্শনিকদের থেকে সাবধান – ডায়োজেনিস ও প্রাচীন সিনিক দর্শন
৫. অধ্যায় ৫ : তাৎক্ষণিক সুখ – আরিস্টিপপাস ও সাইরেনাইক দর্শন
৬. অধ্যায় ৬ : আমরা কিছু জানিনা – পিরো এবং প্রাচীন সংশয়বাদী দর্শন
৭. অধ্যায় ৭ : বাগানের পথ – এপিকিউরাস
৮. অধ্যায় ৮ : স্টয়িসিজম, কোনোকিছু গ্রাহ্য না করার শিক্ষা – এপিকটিটাস, সিসেরো, সেনেকা
৯. অধ্যায় ৯ : কার হাতের পুতুল আমরা? – অগাস্টিন
১০. অধ্যায় ১০ : দর্শনের সান্ত্বনা – বোয়েথিয়াস
১১. অধ্যায় ১১ : ত্রুটিহীন একটি দ্বীপ – আনসেল্ম ও অ্যাকোয়াইনাস
১২. অধ্যায় ১২ : শিয়াল এবং সিংহ – নিকোলো মাকিয়াভেলি
১৩. অধ্যায় ১৩ : সাধারণের দর্শন – মিশেল দো মনতাইন
১৪. অধ্যায় ১৪ : নোংরা, পাশবিক এবং সংক্ষিপ্ত – থমাস হবস
১৫. অধ্যায় ১৫ : প্রবচনে দর্শন – ফ্রাঁসোয়া দ্য লা রোশফুকো
১৬. অধ্যায় ১৬ : আপনি স্বপ্ন দেখছেন না তো? – রেনে দেকার্ত
১৭. অধ্যায় ১৭ : বাজির দান রাখুন – ব্লেইজ পাসকাল
১৮. অধ্যায় ১৮ : কাঁচ ঘষে লেন্স যিনি বানাতেন – বারুখ স্পিনোজা
১৯. অধ্যায় ১৯ : রাজকুমার ও মুচি – জন লক ও টমাস রিড
২০. অধ্যায় ২০ : ঘরের মধ্যে হাতি – জর্জ বার্কলি (এবং জন লক)
২১. অধ্যায় ২১ : সম্ভাব্য সব পৃথিবীর সেরা? – ভলতেয়ার এবং গটফ্রিয়েড লাইবনিজ
২২. অধ্যায় ২২ : কাল্পনিক ঘড়িনির্মাতা – ডেভিড হিউম
২৩. অধ্যায় ২৩ : জন্মগতভাবে স্বাধীন – জ্যাঁ-জাক রুসো
২৪. অধ্যায় ২৪ : রঙিন চশমায় দেখা বাস্তবতা – ইমানুয়েল কান্ট
২৫. অধ্যায় ২৫ : প্রায়োগিক সুখ – জেরেমি বেনথাম
২৬. অধ্যায় ২৬ : মিনার্ভার পেঁচা – জর্জ ডাবলিউ. এফ. হেগেল
২৭. অধ্যায় ২৭ : বাস্তবতার ক্ষণিক দর্শন – আর্থার শোপেনহাউয়ার
২৮. অধ্যায় ২৮ : বেড়ে ওঠার জন্যে পরিসর – জন স্টুয়ার্ট মিল
২৯. অধ্যায় ২৯ : অবুদ্ধিমত্তাপূর্ণ ডিজাইন – চার্লস ডারউইন
৩০. অধ্যায় ৩০ : জীবনের বিসর্জন – সোরেন কিয়ের্কেগার্ড
৩১. অধ্যায় ৩১ : দুনিয়ার মজদুর এক হও – কার্ল মার্ক্স
৩২. অধ্যায় ৩২ : তাতে কী এসে যায়? – সি. এস. পার্স ও উইলিয়াম জেমস
৩৩. অধ্যায় ৩৩ : ঈশ্বরের মৃত্যু – ফ্রিয়েডরিখ নিচাহ
৩৪. অধ্যায় ৩৪ : ছদ্মবেশী চিন্তা – সিগমন্ড ফ্রয়েড
৩৫. অধ্যায় ৩৫ : ফ্রান্সের বর্তমান রাজার মাথায় কি টাক আছে? – বার্ট্রান্ড রাসেল
৩৬. অধ্যায় ৩৬ : বুহ!/ হুররে! – আলফ্রেড জুল (ফ্রেডি) আয়ার
৩৭. অধ্যায় ৩৭ : স্বাধীনতার যন্ত্রণা – জ্যাঁ-পল সার্ত্র, সিমোন দ্য বুভোয়া, আলবেয়ার্ট কামু
৩৮. অধ্যায় ৩৮ : সিসিফাসের সুখ – আলবেয়ার্ট কামু
৩৯. অধ্যায় ৩৯ : অস্তিত্ববাদের ধাত্রী – সিমোন দ্য বুভোয়া
৪০. অধ্যায় ৪০ : ভাষার সম্মোহন – লুদভিগ ভিটগেনস্টাইন
৪১. অধ্যায় ৪১ : মনের দর্শন – এডমন্ড হুসেরেল
৪২. অধ্যায় ৪২ : বেঁচে থাকার রহস্যময়তা – মার্টিন হাইডেগার
৪৩. অধ্যায় ৪৩ : বিষণ্ণতার রাজপুত্র – এমিল চিওরান
৪৪. অধ্যায় ৪৪ : ইতিহাসের ময়নাতদন্ত – মিশেল ফুকো
৪৫. অধ্যায় ৪৫ : যেমন মানুষটি কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি – হানা আরেন্ট
৪৬. অধ্যায় ৪৬ : নতুন করে দেখা – জ্যাক ডেরিডা
৪৭. অধ্যায় ৪৭ : ভুল থেকে শেখা – কার্ল পপার ও থমাস কুন
৪৮. অধ্যায় ৪৮ : লাগামহীন রেলগাড়ি আর অনাকাঙ্ক্ষিত ভায়োলিনবাদক – ফিলিপ্পা রুথ ফুট আর জুডিথ জার্ভিস থমসন
৪৯. অধ্যায় ৪৯ : অজ্ঞতার মাধ্যমে ন্যায়বিচার – জন রলজ
৫০. অধ্যায় ৫০ : কম্পিউটার কি চিন্তা করতে পারে? – অ্যালান ট্যুরিং এবং জন সার্ল
৫১. অধ্যায় ৫১ : একজন আধুনিক গোমাছি – পিটার সিংগার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন