অসুর-কাহানি

The Agaria গ্রন্থে অসুর উপজাতির প্রায় সমস্ত লোককথা একত্রিত ও বিশ্লেষণ করে ভেরিয়ের এল্যুইন বলেন, তাঁর ধারণা, “প্রাচীন অসুর উপজাতি বিহারে মুন্ডা রাজ্য আক্রমণ করে। মুন্ডারা তাদের প্রতিহত করে দেবতা সিঙ্গা-বোঙ্গা-র সাহায্যে এবং বিহার থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন অসুররা পশ্চিম ও উত্তরে ছড়িয়ে পড়ে—সরগুজা, উদয়পুর হয়ে বিলাসপুরের উত্তরে। একটি দুর্বল শাখা রাইপুর পেরিয়ে মৈকাল পাহাড়ে পৌঁছে অপর্যাপ্ত আকরিক লোহার সন্ধান পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে।” লোককথাগুলিতে হুদুড় দুর্গার কোনো উল্লেখ নেই, আছে লোগুন্তি রাজার হৃত রাজ্য চাইচম্পানগর-এর কথা। কে কে লুভা The Asur গ্রন্থে লোহার অসুরদের লোককথা ‘অসুর কাহানি’ পর্যালোচনা করে একই সিদ্ধান্তে এসেছেন। অসুর- কাহানি বা অসুরদের পুরাকাহিনিটির মধ্যে অসুর ও মুন্ডাদের মধ্যে বিরোধের ঘটনা পাওয়া যাবে, কিন্তু মুন্ডা, ওঁরাও, বীরহর বা অন্যান্য উপজাতিও যখন গল্পটি বলে, তখন দেখা যায় হিন্দু পুরাণের মতোই মুন্ডাদের সর্বোচ্চ দেবতা সিঙ্গা-বোঙ্গাও অসুরদের হত্যা করতে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছেন! অসুরদের জবানিতে সিঙ্গা-বোঙ্গার বদলে ধরম রাজা কাণ্ডটি ঘটান, এবং শেষে চাষাবাদের বিদ্যা শিখিয়ে যান। গল্পটা সম্পূর্ণ পাওয়া যাবে Encyclopaedia Mundarica ফার্স্ট ভলুমে, আর শরৎচন্দ্র রায়-এর The Mundas and Their Country নামক বইতে। অতি-সংক্ষেপে ‘অসুর কাহানি’টি এইরকম—আদিকালে সিঙ্গা-বোঙ্গা তার বউয়ের সঙ্গে স্বর্গে সোনার সিংহাসনে বসে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর খুব গরম লাগল আর তখনই অনেক পশুপাখি এসে নালিশ করল অসুরদের চুল্লির গরমে পৃথিবী এত গরম হয়ে গেছে যে তারা আর টিকতে পারছে না, খাবার নেই জল শুকিয়ে গেছে। সিঙ্গা-বোঙ্গা রেগে গিয়ে তরোয়াল বার করে বললেন, এক্ষুনি অসুরদের মেরে ফেলব। তার বউ বলল, তুমি একা কিছুতেই ওদের সঙ্গে পারবে না, তার চাইতে রাজনীতি আর চাতুরি করো। তখন সিঙ্গা-বোঙ্গা দাঁড়কাক আর চিলকে অসুরদের কাছে দূত করে পাঠালেন। তারা গিয়ে অসুরদের বলল সিঙ্গা- বোঙ্গা বলেছেন, তারা যদি দিনের বেলা চুল্লি জ্বালায় তাহলে যেন রাতের বেলা বন্ধ রাখে, আর রাতে জ্বালালে দিনের বেলা। পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে। তাই শুনে অসুররা হেসে বলল, আমরা নিজেরাই সিঙ্গা-বোঙ্গা, আমরা কারো আদেশ মানি না, আমাদের চেয়ে বড়ো কেউ নেই, এই বলে তারা দাঁড়কাক আর চিলের দিকে গরম কাঠ-কয়লা ছুঁড়ে দিল। তারপর সিঙ্গা-বোঙ্গা সোনাদিদি আর রূপাদিদি দুই শকুনকে পাঠাল, তাদের কথাও অসুররা শুনল না, মেরে তাড়িয়ে দিল। অসুররা যখন ভরতপাখি, কাক, বেনেবউ, কারোর কথাই শুনল না, সিঙ্গা-বোঙ্গা তখন নিজে এক সোনালি বাজের পিঠে চড়ে ‘একাশিপিরি-তেরাশিবাড়ি’-তে এল, চালাকি করে জেতার জন্য। সেখানে এসে দেখল একটা ছেলে তোরো- কোরা, যার গোটা গায়ে চুলকানি। সিঙ্গা-বোঙ্গা ছেলেটার চুলের মুঠি ধরে এমন ঝাঁকাল যে তার চামড়া খুলে চলে এল, নিজের গায়ে সেই চামড়া চাপিয়ে সিঙ্গা-বোঙ্গা অসুরদের কাছে গেল। অসুরদের কাছে এসে সে দোরে দোরে ঘুরে বেড়ায়, চাকর হওয়ার জন্য, থাকা খাওয়া দিলেই হবে, তবু কেউ তাকে জায়গা দিল না। তখন দুই মুন্ডা বুড়োবুড়ি লুটকুম হারাম আর লুটকুম বুড়িয়া ছেলেটাকে তাদের কাছে রাখল। অসুর বাচ্চাদের সঙ্গে তোরো-কোরা একদিন ডিম নিয়ে গুলি খেলতে গেল, সবাই ভাবল ডিমগুলো ভেঙে যাবে কিন্তু উলটে অসুরদের লোহার গুলি ভেঙে গেল, তখন অসুর ছেলেরা লুটকুম হারাম আর লুটকুম বুড়িয়াকে বলল তাদের চাকর ছেলেটা ধানখেত পাখি আর শুয়োরদের জন্য ছেড়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে খেলছে। কিন্তু যখন তোরো-কোরা কতগুলো ধান নিয়ে মাদুরে, ঢেঁকির গর্তে, আর ঝুড়িতে রাখল, তারা এসে দেখল সবই চালে ভরে গেছে, লুটকুম হারাম আর লুটকুম বুড়িয়া ভাবল সে বুঝি অন্য কারো চাল চুরি করেছে। তখন ছেলেটা বলল ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সিঙ্গা-বোঙ্গা তাদের এই সব দিয়েছে। তারপরে একদিন অসুর ছেলেদের লোহার গুলিগুলো সে ভাতের গুলি দিয়ে ভেঙে দিল। এর কিছুদিন পরে অসুরদের লোহার জোগান ফুরিয়ে গেল, তারা তোরো-কোরা ছেলেটার আজব কেরামতির কথা শুনেছিল, তাই তাকে জিজ্ঞেস করল যে কী চুল্লিতে আহুতি দেওয়া যায়? সে তখন বলল একটা সাদা মুরগিকে আহুতি দিতে। তখন আবার তারা লোহা পেল। তারপরে যখন আবার লোহা শেষ হোল সে বলল একটা সাদা মাদি ছাগলকে চুল্লিতে দিতে, তারপরে আরও একবার বলল সাদা ভেড়া আহুতি দিতে। কিন্তু আবার যখন লোহা পাওয়া গেল না, তখন তোরো-কোরা বলল একটা মানুষ আহুতি দিতে হবে। অসুররা তাদের নিজেদের কাউকে চুল্লিতে ঢোকাতে রাজি হল না। তখন সে বলল মুন্ডাদের গ্রামে গিয়ে একটা মানুষ আনতে। কিন্তু সেখানে তারা কাউকে দিতে রাজি হল না। তখন ওই তোরো-কোরা বলল, তাহলে আমাকেই তোমরা চুল্লিতে ঢুকিয়ে দাও। লুটকুম হারাম আর লুটকুম বুড়িয়া আপত্তি করলে তাদের বুঝিয়ে সে অসুরদের সঙ্গে চলে গেল। তারপর সে বলল নতুন করে বড়ো চুল্লি বানাতে, নতুন হাপর জুড়তে। চুল্লি জ্বালাতে বলে নিজে চুল্লির ভেতর ঢুকে গেল। তিনদিন পর চুল্লি নিভে গেলে, সে বেরিয়ে এল। তার চুলকুনি ভরা চামড়া ঝরে গেছে, হাতে অনেক সোনা আর মনিমুক্তো। লোভী অসুররা বলল, এসব কী আর আছে ভেতরে? সে বলল, অনেক-অনেক, চুল্লির ভেতরে গেলে তারাও পেতে পারে। তখন ছলনায় ভুলে সব অসুর পুরুষেরা চুল্লির ভেতর ঢুকে পড়ল, সিঙ্গা-বোঙ্গা মেয়েদের বলল চুল্লিটা চারদিক থেকে বন্ধ করে দিতে। তারপরে যখন ভেতর থেকে খুব চিৎকার-চেঁচামেচি আসতে শুরু করল, মেয়েরা জিজ্ঞেস করলে সিঙ্গা-বোঙ্গা বলল, ও কিছু না, ওরা সোনাদানা পেয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি লাগিয়েছে, আরও জোরে হাপর টানো। কিন্তু একটু পরেই চুল্লি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগল, তখন বলল, ও কিছু-না বোকা মেয়ে, ওরা পান খেয়ে পিক ফেলছে, আরও জোরে হাপর টান। তারপরে যখন চুল্লি খুলে মেয়েরা দেখল শুধু পোড়া ছাই আর কিছু হাড়গোড় পড়ে আছে, খুব কাঁদতে কাঁদতে চুল ছিঁড়ে বুক চাপড়ে মেয়েরা সিঙ্গা-বোঙ্গাকে অভিশাপ দিতে লাগল। তখন সে গর্জন করে বলল, এত করে তোদের বারণ করলাম কথা শুনলি না, এবার থেকে আমায় মানবি। তখন মেয়েরা বলল মানব। আগে বল আমরা কী করে বাঁচব? তখন সিঙ্গা- বোঙ্গা বলল একটা গাছের নীচে গ্রামে এক মুন্ডা আর তার চেলা আছে, ওকে ডাক, ডেকে তোদের হয়ে পুজো করতে বল। এই বলে যখন সিঙ্গা-বোঙ্গা স্বর্গে উড়ে যাচ্ছিল অসুর মেয়েরা তাকে যেতে দেবে না বলে জামাকাপড় ধরে ঝুলে পড়ল। সিঙ্গা-বোঙ্গা ঝাঁকানি দিয়ে তাদের সারাদেশে ছড়িয়ে ফেলল। সব জায়গায় পড়ে তাদের আত্মারা ভূত বোঙ্গা হয়ে গেল। যারা টিলায় গিয়ে পড়ল তারা হল বুরু বোঙ্গা, যারা গভীর জলে পড়লো তারা হোল ইকির বোঙ্গা, যারা উঁচু পর্বতে গিয়ে পড়ল সে হল মারাং- বুরু বোঙ্গা, যারা উঁচু জমিতে পড়ল তারা হল নাগে বোঙ্গা, যারা সুন্দর বনে পড়ল তারা হোল দাসুলি বোঙ্গা। যারা ফাঁকা মাঠে বা ছায়াঘেরা ঝোপেঝাড়ে পড়ল তারা হল চণ্ডী বোঙ্গা। এই ‘চণ্ডী বোঙ্গা’ নামটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত, কেননা আমরা বহুবিধ চণ্ডী-র দেখা পাই দেবী দুর্গাকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে।

নবগঠিত অসুর উৎসবের পুরাণেরও এখনই অনেক ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে। যতদূর জানা আছে ২০১১ থেকে উৎসব শুরু হয়েছে, পঁচিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যেই এটিও ‘বিশাল প্রাচীনত্ব’ (!) লাভ করবে, আমাদের জাতিচরিত্র অনুযায়ী ‘যুগ-যুগ’ ধরে প্রচলিত তাই প্রামাণ্য হয়ে উঠবে। সাধারণভাবে ‘প্রাচীনত্ব’ সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা কত অসার, দুর্গাপুজোর প্রাচীনত্ব প্রসঙ্গে সাধারণ আলোচনায় বোঝা যায়। আমাদের প্রাচীনত্বের দাবি করার স্বভাব এমনই যে বর্তমানের প্রচলিত দুর্গোৎসবকে ঐতিহাসিক কালবিচারে অর্বাচীন বললে অধিকাংশের প্রবল গোঁসা হয়। ফেসবুকে অনির্দিষ্ট গালাগালির বন্যা বয়ে যায় কোনো প্রমাণ ছাড়াই অথবা বড়োজোর মহিষ- মর্দিনীর পাথরের মূর্তি (চতুর্ভুজা বা অষ্টভুজা) দেখিয়ে পাল- সেন যুগ থেকেই প্রচলিত দাবি করা হয়ে থাকে। তাঁরা ভুলে যান বাঙালির দুর্গোৎসবের দেবী দশভুজা, পুত্র কন্যা পরিবেষ্টিত হয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসেন কাত্যায়নী মূর্তিতে, লক্ষ্মী সরস্বতী কীভাবে দুর্গার মেয়ে হয়ে গেলেন সে প্রশ্ন পুরাণের বদলে সিকেয় তুলে রাখলেও এটুকু বোঝা যায়, তিনি মহিষাসুর বধ করতে আসেন না, তিনিই যে অন্যরূপে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন তারই প্রতীক হিসেবে এই মূর্তি গঠিত হয়েছিল। পুরোনো মহিষমর্দিনী মূর্তির ধারায় মহিষাসুরমর্দিনী পুজো আজও ভিন্ন তিথিতে এই বঙ্গের নানা অঞ্চলে বহাল আছে, কৃষ্ণনগর কালনা ইত্যাদি তার প্রমাণ। সেইসব পুজোর বয়সও নেহাত কম নয়। একই দেবতার ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি বিভিন্ন নামে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে পূজিত হয়। মন্ত্রের মাধ্যমে সেগুলির কিছুটা সমন্বয় সাধন করা হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। পুজোর প্রাচীনত্ব নির্ণয় করতে পূজাপদ্ধতি বিচারে আনা উচিত। আমাদের বর্তমানের দুর্গোৎসবের দুর্গার সপরিবার মূর্তি ও পূজাপদ্ধতির সৃষ্টিকাল কোনোভাবেই সপ্তদশ শতাব্দীর আগে নিয়ে যাওয়া যায় না এবং সেটুকুও জনশ্রুতি ও কিছু পারিবারিক দাবির ভিত্তিতে। বর্তমান মূর্তির অনুরূপ খুঁজতে গেলে উনিশ শতকের আগের কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। দেবী বা চণ্ডী বা বকলমে মাতৃ আরাধনা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই পৃথিবীর সর্বত্র প্রচলিত ছিল, ভারতবর্ষে যে সেটা অবিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে এই কথায় অবিশ্বাস করবার কোনো কারণ নেই। মনে হয় না এরকম বুরবক খুঁজেও পাওয়া যাবে এদেশে, বেদ যদি উলটো কথা বলে তাহলেও না। কিন্তু আমাদের বর্তমানের দুর্গোৎসবকে ঠেলেঠুলে পালযুগে পাঠাবার কোন অর্থ নেই। পুরনো হলেই সেটা উচ্চমানের হয়ে যায় এই অদ্ভুতুড়ে ইউটোপিক ধারণার কোনো যুক্তি নেই (বোকা বোকা হিন্দুত্বের ধারণা যার মূল এবং মুসলমান শাসনকালকে অস্বীকার করবার মৌলবাদী প্রকাশ)। আর মূর্তির আদল দেখে বয়স নির্ণয় এক প্রবল গোলমেলে শিল্পবোধের পরিচয়, অর্বাচীনকালে ‘পাল-সেন’ যুগের মূর্তির আদল অনুসরণ করা যাবে না, শিল্পীদের এরকম ‘মায়ের দিব্যি’ বা ফতোয়া দেবার মতো সাহসী বা মহান শিল্পবোধওয়ালা রাশি রাশি সোশ্যাল মিডিয়া ঐতিহাসিক ১৮-১৯ শতকে ছিল না। এখনো দুর্গা লক্ষ্মী সরস্বতীরা শাড়ি পরিহিতা হয়ে বঙ্গদেশে আসেন। তাই বলে ভারতের সর্বত্র তাই হবে বা ১০০ বছর পর এখানেও সেটাই তাঁদের পোশাক থাকবে এরকম কথা কোন দেবভক্তি থেকে আসে আমার বোঝবার সাধ্য নেই, কারণ সেরকম হলে মৃন্ময় মূর্তি বানিয়ে পূজা করার পদ্ধতিটাই তৈরি হত না। আর গঠনশৈলীর গড় ধারণা ছাড়া এখনো মন্দিরে নিত্য পুজো হচ্ছে বা পুকুরে প্রাপ্ত দেড়-দুহাত পাথরের মূর্তির যুগ বা বয়স নির্ণয়ের কোন্ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে সে তেনারাই জানেন। যদি থাকে তাহলে পাথরের বয়স তো পৃথিবীর প্রায় সমান বের হবে, মিউজিয়ামে থাকা প্রত্ন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গঠনশৈলী ছাড়াও কী ধরনের tool ব্যবহার হয়েছে, মাটির কোন স্তরে পাওয়া গেছে অন্যান্য প্রাপ্ত বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে সম্ভাব্য বয়সকাল অনুমান করা হয় মাত্র।

আমার মনে হয় কোনো কিছুর ইতিহাস লেখার সূচনা তার বর্তমান কালেই শুরু করা সংগত। নইলে পঞ্চাশ বছর পেরলেই সবকিছু ‘ক্লাসিক’ হয়ে যায়, যেমন অখাদ্য স্বপনকুমারের চটি বই যা ছুঁলে আমাদের স্কুলে জাত যেত, তা নিয়েও এখন পণ্ডিতি গবেষণার আদিখ্যেতা সহ্য করতে হয় এবং তস্যবাল ব্লকে-ছাপা মলাট নিয়ে আহা-উহুহু অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়! যাক্ সে কথা দুর্গা-মূর্তির বিবর্তন নিয়ে এই লেখা নয়, অসুর কাহিনিতে ফিরে আসি।

সুহৃদকুমার ভৌমিকের আর্য রহস্য পুস্তিকাটি প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, তিনি এই পুস্তিকার ‘অসুর সভ্যতা’ নামক প্রবন্ধে বলেছেন— “বিশাল ভারতীয় সভ্যতা একটি মাত্র জাতি বা গোষ্ঠীর দ্বারা গড়ে ওঠেনি। খুব কম করে হলেও চারটি মৌলিক গোষ্ঠীর সমবায়ে গড়ে উঠেছে ভারত সভ্যতা। তারা হল আর্য নামে পরিচিত যাযাবর গোষ্ঠী, কোল বা অস্ট্রো-এশিয়াটিক, দ্রাবিড় ও ভোটচিনা। আমাদের সাংস্কৃতিক উপাদানে, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-আচরণে কোল ও দ্রাবিড় গোষ্ঠীর প্রভাব সর্বাধিক। মনে হয় দ্রাবিড় গোষ্ঠীর লোকেরা অসুরদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। ভোটচিনীয় প্রভাব সৰ্ব্ব্যাপক হতে পারেনি। বরং যাযাবর বেদে বা বেদিয়ারা ভিন্ন-ভিন্ন দলে বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল, তাদের ভাষা বিস্তার লাভ করেছিল, কিন্তু চিন্তাভাবনা সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচরণে স্থায়ী নরগোষ্ঠীরই প্রভাব ছিল বেশি।”

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন