দেবেশ রায়
ভোটের দিন অবিশ্যি গোলমাল ঠেকানো গেল না। যোগেন ঠিক করেছিল, সকালবেলাটা বরিশাল শহরে একটা ঘুরান দিয়ে গৌরনদীর দিকে যাবে। সকাল সাতটা বাজতে-না-বাজতেই বাটাজোড় থেকে একজন এসে যোগেনকে জানায়, দত্তবাবুর লোকজন নদীতে নৌকা নিয়ে পাহারা দিচ্ছে, যোগেনের ভোটারদের নিয়ে কোনো নৌকো এলে পাড়ে ভিড়তে দিচ্ছে না।
যোগেন ঠান্ডা গলাতেই বলে, ‘আমারে কি নদীর পাড় ঠাহর করছ? নৌকা আটকাইল গৌরনদীতে আর তুমি আইলা সদরে। তোমার নৌকা আটকাইবে না তো কারডা আটকাইব?’
‘এইডা তো ভোটের নৌকা—’
‘কোনডা?’
‘আমাগটা—’
‘আর অগটা? যারা আটকাইছে? অগ নৌকা নারদ ঠাউরের গানের নৌকা, নাকী? ‘তয়?’
‘অগও তো ভোটের নৌকা?’
‘না। কইছে তো ঐখান দত্তবাবুর ঘাট, আইজ নাকী কী পূজা হইব। কোনো নৌকা ভিড়াইনো নিষেধ।’
‘অ। তো নদীখান তো শুধু দত্তবাবুর ঘাটেই নাই। অন্য ঘাটে নামাও। ঝাম্লা পাকাইবা না।’
‘তার লগেই তো আপনার নিকট আসা। না-হয়, নৌকা আটকাইলে কী কইর্যা খুইলতে হয় তা কি আমরা জানি না?’
‘জানো তো করো গিয়্যা—আমার লগে আইল্যা ক্যান?’
‘এ তো ভোটের টাইম। অ্যাহন কি আমাগের আইন চইলবে তাই জিগানোর লগে। ‘জিগাইছ?’
‘হ, জিগাইল্যাম তো?’
‘জব কিছু পাইল্যা?’
‘পসন্দ হয়—পাইছি।’
‘কী পাইলা কও দেহি’।
‘নৌকার পথ যদি আমাগ আইনে খুইলব্যার চাই, আপনারে জিগাইব্যার কাম নাই। আর, যদি অন্য ঘাটে নৌকা লাগান যায় তাইলেও আপনারে জিগাইব্যার কাম নাই।’
‘সার বোঝা বুইঝছ। এতখান মূল্যবান মাথা নিয়্যা এতডা পথ আইল্যা ক্যামনে? চোরডাকাইতের ডর নাই?’
‘ভোটও তো আগে দেহি নাই। কী কইরতে কী করি, তাই। আপনি তো দত্তবাবুর কাছারির বুধ মাইন্যা নিলেন। তয়?’
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল—স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী জেলা কংগ্রেসের সভাপতি, বাটাজোড়ের জমিদার, অশ্বিনী দত্তের ভাইপো — সরলকুমার দত্ত। গ্রামে যে-কোনো কাজের জায়গাই তো জমিদারবাড়ি। বুথের তালিকা যখন বের হয়, তখন দেখা গেল, বাটাজোড়ের জমিদারবাড়িতেই একটা বুথ হবে। অথচ সেই জমিদারই তো একজন প্রার্থী। এ নিয়ে একটু আপত্তি শুরু হতেই রিটার্নিং অফিসার যোগেনকে জানান, এটা একেবারেই ‘ক্ল্যারিক্যাল মিসটেক’, ওঁরা নিশ্চয়ই ঐ বুথ ঐ বাড়ি থেকে সরিয়ে দেবেন।
রিটার্নিং অফিসার যেমন যোগেনকে প্রার্থী হিশেবে জানিয়েছিলেন, তেমনি সরল দত্তকেও জানিয়েছিলেন। এতে বাটাজোড়ের দত্তবাড়ির অহংকারে ঘা লাগে। তাঁরা তো বলেননি, তাঁদের বাড়িতে বুথ করতে। গ্রামের যে-কোনো উৎসব-অনুষ্ঠানই তাঁদের বাড়িতে হয়। ভোটবুথও তেমনি একটি ঘটনা মনে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু এখন এই বুথ তাঁদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নিলে তাঁদের দশ পুরুষের জমিদারি সম্মানে আঘাত লাগতেই পারে। তার ওপর এ থেকে এমন একটা ভুল ধারণাও তৈরি হতে পারে, যেন তারা সরকারের সঙ্গে গোপনে এই ব্যবস্থা করেছিল, এখন ধরা পড়ে যাওয়ায় বুথটা সরানো হচ্ছে।
এ নিয়ে যোগেন একটি কথাও বলেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বলতে হল। কারণ, পাশাপাশি যে তালুকদার-জমিদাররা আছেন, তারা জমিদারির অসম্মানের বিষয়টিকে বড় করে ধরলেন। যাঁরা এমন ধরলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যোগেনের সমর্থক। যেমন, কীর্তিপাশার জমিদার বাড়ির ছোট হিস্যার শীতাংশু রায়চৌধুরি বা তারপাশার রায় জমিদাররা, বাসণ্ডার সেনবাবুরা। এঁরা বললেন, ভোটের সঙ্গে জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য ও প্রতিপত্তিকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। যদি বাটাজোড়ের জমিদারবাড়িতে বুথ ঘোষণা করা না হত, তাহলে কোনো কথাই উঠত না। কিন্তু ঘোষণার পর বুথ সরিয়ে নিলে জমিদারি-ব্যবস্থার সামাজিক প্রতিপত্তির হানি ঘটবে। রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে বলা হল, জমিদার হলেও দত্তবাবু তো প্রার্থী। জমিদারদের পক্ষ থেকে বলা হল, দত্তবাবু প্রার্থী হলেও তো জমিদার। সে এই জমিদারবাড়ির পূর্বপুরুষদেরও প্রতিনিধি।
যোগেন বুঝল, ভোটের দিন আসতে-আসতে জমিদারদের এই কথা সরল দত্তের পক্ষে চলে যাবে, আর বুথ যদি সরানোই হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কিছু বর্ণহিন্দু ভোট নিয়ে তার যে আশা, তা আর ফলবে না। জমিদারবাড়ির সম্মান থেকে বর্ণহিন্দুর সম্মানের কথা উঠবেই আর তখন নিমিত্তের ভাগী হবে ‘ব্যাটা চাঁড়াল’—যোগেন।
যোগেন বাটাজোড়েই একটা মিটিং করল। যোগেনের মিটিঙে এমনিতেই ভিড় হয়, সে বলে খুব ভাল আর বলে রসিয়ে রসিয়ে। শুনতে দেখতে ভাল লাগে। বক্তৃতা তো সবাইই দেয় বরাবরই। যোগেনের বক্তৃতা আলাদা একটা ধরণই তৈরি করে তুলছিল যেন, ধীরে-ধীরে। বাটাজোড়ের এই মিটিঙে ভিড় এত হল যে, যোগেনকে একটা টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে হল। তখন মাইক আসেনি। গলার জোরটা একটা বড় জোর ছিল।
যোগেন বলল, ‘আমি এই একডা কথা কওয়ার জন্য বাটাজোড়ে আসছি। কথাডা খুব শাদাসিধা। কিন্তু জিভের দোষে কথাডা ব্যাঁকাচোরা, ছ্যাঁদাভরা হচ্ছে। আমাকে এই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার এক চিঠির দ্বারা জ্ঞাত করেন যে অতি তুচ্ছ একটি ক্ল্যারিক্যাল মিস্টেকের জন্য বাটাজোড়ের দত্ত জমিদারবাবুদের দালানে ভোটের বুথ খোলা হইবে বইল্যা নোটিস পাঠান হইছে। কিন্তু এই ‘মিসটেক’ অর্থাৎ কেরানিবাবুর ভুল, শুধরানো হইবে। আমি এই চিঠির কুনো জব দেই নাই। এই চিঠি পাওয়ার আগে আমি জাইনতামও না যে দত্ত জমিদারবাবুদের দালানে একটা বুথ খোলা হইবে। কোথায় বুথ বইসবে—এই নিয়্যা আমার কোনো মাথাব্যথা নাই। আমার মাথাব্যথা যদি কইরতেই হয় তাহাইলে ভোটের বাক্সের ভিতর থিক্যা কী বারায় তাই নিয়্যাই মাথাব্যথা কইরব। ভোটের বাক্স এমন কল, যেহানে শুধু ঘোড়ায় ডিম পাড়ে। যার বাক্স থিক্যা বার হব, তারে ঘোড়ার ডিমের উপর তা দেয়া লাগব। যদি আমার বাক্স থিক্যা বারায় তাইলে আমাক্ তাও দিবার লাগব। পক্ষীরাজ ঘোড়ার এড়া ডিম! চাইড্ডিনি কথা? যদি বারায় আমার বাক্স থিক্যা তাহাইলে তাওড়া দিব কখন? সারাদিন ওকালতি, সন্ধ্যাবেলা মক্কেলগ আরতি কইরব্যার টাইম। তাই আপনাগ কাছে অনুরোধ, আমারে এ বিপদে ফেলাবেন না। তার একডা মাত্র উপায় আপনারা যে ব্যালট কাগজখান পাইবেন ঐডা শুধু আমার বাক্সে ফেইলবেন। এই কথাডায় কোনো ফাঁক নাই। ভোটের বুথ দত্তবাবুদের দালানেই হোক আর ইশকুল ঘরের ভিতরেই হোক—ভোটটা দালানে বা চালে দিবেন না। দিবেন আমার বাক্সের ভিতরে।
‘আমি এই কথাডা আপনাগো জানাইব্যার চাই, বুথ নিয়্যা আমাগ কুনো আপত্তি ছিল না, নাইও। একবার যহন নুটিস করা হইছে, তখন নুটিস জারি থাউক। দত্তবাবুদের দালান থিক্যা বুথ উঠাইলে তাগ অসম্মান করা হয়। বরিশালের জমিদার-তালুকদারগ অসম্মান করা চলে না। কেন? না, তারা এই জঙ্গল-বরিশালকে সদর-বরিশাল তৈরি কইরছেন। এই ভোট আইজ আছে, কাইল নাই। কিন্তু বরিশাল তো ফর এভার। ক্যানডিডেট হিশাবে আমার কথাডা আপনাগ দশের সম্মুখে আমি কয়্যা দিচ্ছি। বুথ দত্তবাবুর দালানে। ভোট মণ্ডলের বাক্সে।’
যোগেন তার কর্মীকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাগো কি আজ সকালে ঘাট আটকানোর পর খেয়াল হইল, দত্তবাবুদের বাড়ির বুথ আমার মাইন্যা নেয়া ঠিক হয় নাই?’
‘হ। এইডা তো সোজা কথা। আপনি যদি কইতেন তাহালি বুধ সরতই। তা হাইলে দত্তবাবুগ ঘাটে নাও ভিড়াইব্যার দরকারই হইত না। তাছাড়া প্রার্থীর বাড়িতে বুধ হওয়াডা ন্যায্যও না।’
‘অ। তুমি তাইলে আর বাটাজোড় ফেরত যাইয়ো না। এইহানে দুগা খাইয়্যা একখান দিবানিদ্রা দ্যাও। নিদ্রাভঙ্গের পর জাইনতে পারবা তোমাগ প্রার্থী হাইর্যা গিছে। সেই সংবাদডার জইন্য আর দুপুরের নিদ্রা বাদ দিব্যা ক্যান?’
‘আমাগ প্রার্থী? সে তো আপনি! আপনি হাইর্যা যাবেন ক্যামনে?’
‘শুনো। ভোট তো কখনো দেখোও নাই, দ্যায়ও নাই। ভগবান করে, এমন আরো অনেক ভোট তোমরা সারাডা জীবন ভইরা দেইখ্যা যায়ো। ভোট হত্যাছে একখান ক্ষমতা। তবে তোমার প্রথম ভোটের আসল শিক্ষাডা আমার কাছে আইজ ন্যাও। আমারও তো আরো ভোটে খাড়াইব্যার লাগব। তোমাদের আরো ভোটে খাইটব্যার লাগব। শিক্ষাডা ন্যাও।’
‘নেয়ার বাদেই তো বইস্যা আছি। গুরুবাক্য তো বাহির হয় না।’
‘ভোটের আগেই যে-প্রার্থীর কর্মীরা কইব্যার ধরে, কী কী ভুল হইছে, সেই প্রার্থীড়া জিতার প্রার্থী না।’
লোকটি একটু সময় গালে হাত দিয়ে ভাবে। তার ডান হাতের কনুইটা ছিল ডান হাঁটুর ওপরে। ঠোঁটটা ছুঁচলো, যেন হাট থেকে ফেরার সময় হিশেব মেলাতে পারছে না।
তারপর হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ে গেলে হিশেবটা যেমন হঠাৎ মিলে যায় আর মুখটা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, এই লোকটির তাই হল। সে তার বাহুসংলগ্ন মুখটাতে একা-একা হাসি ফোটাল।
‘বুঝছি। তাইলে যা-ই।’
‘বুইঝছ্যা থাকলেই যে যাইতে হইব, তেমন কুনো শর্ত নাই।’
‘শর্ত আর কেডা দিবে? আমার শর্ত আমারই দিব্যার লাইগব। আমার কাজডা তো আমারেই কইরব্যার লাগব। কিন্তু যাওয়ার আগে ছোট মুখে একডা বড় কথা কব, আপনারে?
‘আরে, তুমি নিজের মুখকে ছোটমুখ কইছ আর তোমার কথাডাকে বড় কথা কইছ! তোমার বামুন-কায়েতরা আমার মুখডাকেই ছোট মুখ বলে, কয়, বেটা চাঁড়াল, যোগেন হেসে উঠে বলে, ‘আরে, যার প্যাটে যতডা জল, ততডাই তো পেচ্ছাপ হবে। যার মুখে যতড়া ধরে, ততড়াই তো কথা হবে। তোমার কথাখান কও রে ভাই। মুখের ছোটবড় দিয়্যা কি কথার ছোটবড় মাপা যায়?’
লোকটি বেরবার দরজায় দাঁড়িয়ে একগাল হেসে বলল, ‘এতদিনে আপনার মতন একখান লিডার পাইছি। আপনি য্যান লিডারি ছাইড়্যা দিবেন না। যা-ই।’
যোগেনের একটু চুপ করে থাকার ফাঁকে লোকটি বেরিয়ে যায়। তাকে ডাকার জন্যই যোগেন দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়। লোকটি এখন গলি থেকে বেরচ্ছে—ডাকলে শুনতে পাবে। হাঁ-ও করল যোগেন। কিন্তু ডাকল না।
তার কাজের সূচি বদলে ফেলে। আগে, এখনই, গৌরনদী যাবে। ফিরে এসে শহর। গৌরনদী মানে বাটাজোড়। বাটাজোড়ের উত্তরে আর যাবে না। ফিরে এসে শহরে একটা ‘ঘুরান’ দেবে।
বাটাজোড় থেকে খবর নিয়ে যে এসেছিল, তার সঙ্গে কথাবার্তার ফলে বা তার শেষ কথাতেই যে যোগেন তার কর্মসূচি বদলে ফেলল, তা নয়। তেমন কিছু নাটুকে ঘটনা ঘটেনি। লোকটি বেরিয়ে যাওয়ার পর যোগেন যে দরজায় দাঁড়িয়ে মুখ হাঁ করল অথচ ডেকে উঠল না—সেটাও কিছু নাটুকে নয়, তখনও মন ঠিক করে উঠতে পারেনি। যেন, যেমন ভেবে রেখেছিল তেমন করতে পারলেই তার মনে হত সব ঠিকঠাক আছে।
ছেলেটি গৌরনদীর পথে মোড় নিতে অদৃশ্য হয়ে গেলে যোগেন একা-একা বুঝে ফেলে, দরজা থেকে ঘরের মাঝখানে ফিরে আসতে-আসতেই বুঝে ফেলে—এইডা কি একডা কুনো কথা? গৌরনদীর ভোটে যদি গোলমাল বাধ্যাইয়্যা দেয়, তাহাইলে কি বরিশাল টাউন তারে জিত্যাইয়া দিবে? বরিশাল টাউনে যোগেন কাস্টহিন্দুগ ভোট কিছু পাইব। তবে, সে তো সরল দত্তের ভোট-খাওয়া। আর উলটাদিকে গৌরনদীতে যদি যোগেনের ভোট দত্তবাবু নষ্ট কইর্যা দিব্যার পারে—তাইলে যোগেনরে তো তুলসীগাছের সামনে খাড়াইয়্যা হরির লুট দিব্যার লাগব। সরল দত্তের খ্যামোতা আছে—গৌরনদীতে যোগেনের ভোট নষ্ট করার। যোগেনের কি তেমন খ্যামতা আছে, টাউনে সরল দত্তের ভোট নষ্ট করার?’ গৌরনদী তার নিজের জায়গা—তার- বাপঠাকুরদার ঘর, তার লেখাপড়া, তার কাজকর্ম। সেইখানেই তার ভোট উপড়ালে….। না, না। আগে বাটাজোড়ে যাওয়া দরকার, তাকে যারা ভোট দেবে তারা যাতে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ। তাড়াতাড়ি মিটে গেলে ফিরে এসে টাউনে ঘুরতে পারে। টাউনের যে-ভোটার ঠিক করেছে যোগেনকে ভোট দেবে, তারা ভেবেই ঠিক করেছে, যোগেনের মুখ দেখে তারা ঠিক করবে না। তেমন-তেমন জায়গায়, যেমন, মাঝিপাড়ায়, জেলেপাড়ায়, ব্যাপারীপাড়ায় ভোটারদের জড়ো করে বুথে নিয়ে আসার কাজ তো তাদেরই, যারা এদের মধ্যে যোগেনের হয়ে কাজ করেছে। সেরকম কোনো জায়গায় আজ যদি যোগেনকে দরকার হত, তাহলে তারা সেটা আগেভাগে জানিয়ে রাখত।
কিন্তু বাটাজোড়ে তাকে হাজির দেখলে, তার মুখ দেখলে, তার সঙ্গে কথা বললে অনেক ভোটার সাহস পাবে। দলবাঁধা ভোটাররাই আসল। তারাই ভোটের ফল ঠিক করবে। ওদিকে মুসলমান, নমশূদ্র, বাগরি, ধন্বন্তরী—জাতের ভোটার অনেক। দত্তবাবুদের সাবেক জমিদারি বাটাজোড়। অশ্বিনীকুমারের আদিবাড়ি। সেখানে যোগেনকে যারা ভোট দেবে, তাদের কাছে যাওয়া আগে দরকার। যোগেনের নিজের বাড়ি মৈস্তারকান্দি, সেখান থেকে আগৈলঝরা, বারথি, চাঁদসী, চন্দ্রহার, লক্ষ্মণকাঠি, শোলক, বাঁকাল—এই সবই বাটাজোড়ের উত্তরে, যোগেন যা বুঝেছে ও খবর পেয়েছে, তাতে তার শক্ত ঘাঁটি। তবে সেখানেও সাহস দেয়ার যাওয়াও যাবে না, যাওয়ার দরকারও নেই। বরং ওখানকার দু-একজন মাতব্বরকে বাটাজোড়ে এনে বসালে ভাল হত। মাস্টারমশাই, নিয়ামত চাচা বা জিরান, আলম।
যোগেন তার সাইকেলটা নিয়ে বেরল।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন